আইসিসের ভ্রান্ত ও সুযোগসন্ধানী তাকফির নীতির বাস্তবতাঃ কেন আইএস মুরতাদ সাব্যস্ত হবে না?
আপনারা জানেন আইসিস এবং তাঁদের সমর্থকরা শামের সব দলকে মুরতাদ মনে করে। বিভিন্ন সময় আইসিস তাদের ম্যাগাজিন দাবীক্বের মাধ্যমে বিভিন্ন দলের উপর তাকফির করেছে। এই তাকফির শুরু হয়েছিল এফএসএ-কে দিয়ে [জাইশ আল হুর/ফ্রি সিরিয়ান আর্মি]। তারপর তারা জাইশ আল ইসলাম, আহরার আস শাম এবং ইসলামিক ফ্রন্টকে (ফ্রন্টের সদস্য সব দলকে) তাকফির করে। তারপর তারা জাইশ আল ফাতেহকে তাকফির করে, এবং জাবহাতুন নুসরাকে তাকফির করে। আমি নিচে সংক্ষিপ্ত ভাবে তাদের তাকফিরের পক্ষে দেয়া যুক্তি তুলে ধরছি। এগুলোর মধ্যে অনেক ক্ষেত্রেই তথ্যগত ভুল আছে, বাস্তবতাকে উপেক্ষা করে ঢালাওভাবে মোটাদাগে বিচারের প্রবণতা আছে, এবং তীব্র গুলুহ আছে। এটা পরিস্কার হওয়া দরকার যে নিচের যুক্তিগুলো আইসিস এবং তাদের পক্ষালম্বনকারী, উভয়েরই দেয়া।
FSA – এই দল মুরতাদ-সাহওয়াত, কারণ তারা সেক্যুলারিসমের জন্য যুদ্ধ করে। শারীয়াহর জন্য না। এছাড়া তুর্কি-কাতারের মতো দেশের কাছ থেকে সহায়তা নেয়। এসব দেশের সরকার কাফির-মুরতাদ। তাই কাফির-মুরতাদের কাছ থেকে সাহায্য নেয়ার কারণে এরা মুরতাদ। FSA এর সাথে একই সময়ে অপারেশানে অংশ নেয়ার জন্য আইসিস বিভিন্ন সময়ে জাবহাতুন নুসরাকে মুনাফিক, মুরতাদ বিভিন্ন কিছু বলেছে।
জাইশ আল ইসলাম – এই দল মুরতাদ-সাহওয়াত, কারণ তারা আল সাউদ, কাতার ইত্যাদি তাগুতের কাছ থেকে সাহায্য নেয়। এরা শারীয়াহ প্রতিষ্ঠা করতে চায় না।এই দল বলেছে শামের জনগন যা চাইবে সেটা দিয়ে শাসন করা হবে, তাই এরা মুরতাদ-সাহওয়াত।
ইসলামি ফ্রন্ট – জাইশ আল ইসলামের মতো একই যুক্তি।
আহরার আস শাম – ইসলামিক ফ্রন্টের সদস্য হবার কারণে মুরতাদ। কাতার এবং তুর্কির তাগুতের কাছ থেকে সাহায্য নেয়ার কারণে মুরতাদ-সাহওয়ায়ত।
জাইশ আল ফাতেহ-র সদস্য অন্যান্য দল (যেমন জুন্দ আল আকসা): কারণ এরা মুরতাদ আহরার আস শামের সাথে মিলে যুদ্ধ করছে। এবং মুরতাদকে সাহায্য করছে, এবং তাকে কাফির বলছে না। তাই এরাও সবাই কাফির।
জাবহাতুন নুসরাঃ জাইশ আল ফাতেহ-র সদস্য হবার কারণে। আহরারকে তাকফির না করার কারণে। সব FSA দলকে ঢালাওভাবে তাকফির না করার কারণে; মুরতাদ-সাহওয়াত।
উল্লেখ্য সত্যিকারভাবে কি কারণে আইসিস জাবহাতুন নুসরা এবং অন্যান্য দলকে তাকফির করে, এটা আদনানীর রমযান মাসে দেয়া বক্তব্য থেকে সুস্পষ্ট। রমযানের ৫ তারিখ দেয়া বার্তায় আদনানী বলে-
“…তাই সাবধান, দাওলাতুল ইসলামের (‘ইসলামিক স্টেট) বিরুদ্ধে যুদ্ধর করার কারনে তুমি কুফরে পতিত হবে, তুমি তা উপলব্ধি করো আর না করো।”
তাই এটা পরিষ্কার যে আইসিস তাদের সমর্থন করা বা না করাকে ঈমান ও কুফরের একটি মানদন্ড হিসেবে গ্রহণ করেছে। এবং অন্যান্য দলগুলোকে তাকফির করার পেছনে তাদের মূল কারণ এটাই। এটা তাদের মানহাজ ও আক্বীদার এক জঘন্য ভ্রান্তি যে, তারা তাদের নিজেদের দলকে ইমান ও কুফরের মানদন্ড হিসেবে নিয়েছে। এই একই কারণে আইসিস লিবিয়ার মুজাহেদীনে তাকফির করেছে। শাইখ মুখতার বেল মুখতারের মতো মুজাহিদের ব্যাপারে হুলিয়া ঘোষনা করেছে। খুরাসানে ন্যাটোর বিরুদ্ধে যুদ্ধরত তালিবানকে হত্যা করেছে। কারণ তারা তাদের নিজেদের দলের প্রতি আনুগত্যকে ইমান ও কুফর, আল ওয়ালা আল বারার মান্দন্ড হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে। তাদের দল, তাদের এই কল্পিত “খিলাফাহ” তাদের জন্য এক উপাস্য মূর্তিতে, এক তাগুতে পরিণত হয়েছে। অন্যান্য যেসব কারণ তারা উপস্থাপন করেছে এগুলো গৌণ। মুখ্য কারণ হল এই দলগুলো তাদের বিরোধিতা করেছে, তাই আইসিসের দৃষ্টিতে তারা কাফির। আমরা দু’আ করি আল্লাহ্* যেন আমাদের মুরজি’আদের ইরজা আর গুলাতের গুলুহ থেকে রক্ষা করেন, এবং আমাদের সিরাতুল মুস্তাক্বীমে অটল রাখেন।
যাই হোক, তা সত্ত্বেও আমরা দেখাবো যে কারণে আইসিস, জাবহাতুন নুসরা এবং জুন্দ আল আকসার মতো দলগুলোকে তাকফির করেছে সেই একই কারণে তাদেরকেও তাকফির করা যায়। আমরা দেখাবো কিভাবে আইসিস সুবিধামতো তাদের তাকফিরের নীতি পরিবর্তন করে, এবং জঘন্য দ্বিমুখীনীতি অনুসরণ করে। তাদের তাকফিরের সাথে দ্বীন ইসলামের সম্পর্কের চেয়ে বেশী সম্পর্ক হল ক্ষমতার লোভ। প্রয়োজন অনুযায়ী তারা নীতি পালটে ফেলে। এবং তাদের নীতি অনুযায়ী তারা নিজেরাও মুরতাদ প্রমাণিত হয়, বিভিন্ন ভাবে। আমাদের এই লেখার উদ্দেশ্য আপনাদের সামনে তুলে ধরা কিভাবে এই দল দ্বীন ইসলামের বিকৃত ব্যাখ্যা করেছে এবং মুসলিম উম্মাহ-র সাথে ক্রমাগত মিথ্যাচার করেছে। হয়তো আল্লাহ্* এর মাধ্যমে কাউকে হেদায়েত করবেন।
প্রথমত, আসা যাক FSA এর কথায়। আইসিস জাবহাতুন নুসরাকে FSA এর সাথে একসাথে অপারেশানে অংশ নেয়ার জন্য তাকফির করেছে। FSA এর কাছ থেকে বায়াহ নেয়ার জন্য তারা জাবহাতুন নুসরার কমান্ডারদের মুরতাদ ফাতাওয়া দিয়েছে এবং হত্যা করেছে। শাইখ আবু ফিরাস আস সুরী হাফিযাহুল্লাহ, এই বিষয়ে বিস্তারিত বেশ কয়েক জায়গায় আলোচনা করেছেন। দেখা যাক, আইসিসের এই তাকফিরের নীতি তাদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যায় কি যায় না।
বাশারের সৈন্যদের কাছ থেকে মেনাঘ বিমানঘাঁটি মুক্ত করায় যেসব দল অংশ নিয়েছিল, তার মধ্যে আইসিসও ছিল। এই অপারেশানে লিওয়া আল ফাতেহ নামে একটি দলও অংশগ্রহণ করেছিল। আর লিওয়া আল ফাতেহ ছিল FSA-র একটি দল। শামে অবস্থিত যেকোন সাদিক এই কথার সত্যতার সাক্ষ্য দেবে। যদি আল নুসরা FSA-র সাথে অপারেশানে অংশ নেয়ার কারনে মুরতাদ হয়, তাহলে একই যুক্তিতে আইসিস ও মুরতাদ।
কেউ হয়তো বলতে পারেন, “কিন্তু তখন তো যুদ্ধ ছিল বাশারের বিরুদ্ধে, এটা জায়েজ আছে।“ কিন্তু আইসিস এই লিওয়া আল ফাতেহের সাথে একই সাথে ঈদের জামাত আয়োজন করেছিল। মেনাঘ বিমানঘাঁটির ভেতরে এই জামাত অনুষ্ঠিত হয়। FSA-র সব দল যদি মুরতাদ হয়, যদি FSA-র কাছ থেকে বায়াহ নেয়ার কারণে কেউ মুরতাদ হয়ে যায়, তাহলে মুরতাদের সাথে পাশাপাশি সালাত আদায় করলে মুরতাদ হয় না? এই নীতি অনুযায়ী অবশ্যই আইসিস মুরতাদ। এখন আমার ভাইরা, আপনারাই বলুন আপনারা কোনটা মেনে নেবেন। জাবহাতুন নুসরা মুরতাদ আর আইসিসও মুরতাদ? নাকি আপনারা এখন মানবেন যে সব FSA-দল মুরতাদ না, তাই যেসব দল মুসলিম তাদের সাথে অপারেশানে অংশগ্রহণ করা [যেরকম আইসিস মেনাঘ বিমানঘাঁটির ক্ষেত্রে করেছে] রিদ্দা না, এবং জাবহাতের উপর আইসিসের এই তাকফির ভুল।
হাসাকাহতে কুর্দি YPG এর বিরুদ্ধে আইসিস কাদের সাথে মিলিত হয়ে যুদ্ধ করেছিল? এই যুদ্ধে FSA, আহরার, জাবহাতুন নুসরা এবং আইসিস সহ আরও অনেক গ্রুপ অংশগ্রহণ করেছিল। এই সময় প্রতিটি দল যৌথ শারীয়াহ আদালত মেনে কাজ করেছিল। যুদ্ধলব্ধ গানীমাহ যৌথ শারীয়াহ আদালতের মাধ্যমে ভাগ করা হয়েছিল। শামে অবস্থিত যেকোন সাদিক এই কথার সত্যতার সাক্ষ্য দেবে। সব FSA দল যদি সেক্যুলার মুরতাদ হয়, তাহলে আইসিস কোন বিবেচনায় মুরতাদের সাথে গানীমাহ ভাগাভাগি করলো? কিভাবে মুরতাদের অংশগ্রহণ আছে এমন শারীয়াহ আদালত তারা মেনে নিলো? অথচ হাকীম আল উম্মাহ শাইখ আইমান হাফিযাহুল্লাহ যখন তাদের যৌথ শারীয়হ আদালতে আসতে বললেন, তখন আইসিস সেটা মানলো না। মুরতাদের সাথে তারা শারীয়াহ আদালতে যেতে রাজি, কিন্তু নিজেদের আমীরের আদেশ মেনে মুসলিমদের সাথে তারা শারীয়াহ আদালতে যেতে রাজি না। এই হল আইসিসের তাওহীদ?
আইসিস এবং তাদের সমর্থকরা বলে – “জাবহাহ কিভাবে মুজাহিদিন হয়, যখন জাবহাহ তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকার পাশে অবস্থিত FSA র এলাকায় হামলা চালায় না। FSA তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় শারীয়াহ প্রতিষ্ঠা করে না, সত্যিকার মুজাহিদিন হলে জাবহাহ তো FSA কে আক্রমণ করতো।“
অথচ আইসিসের সাথে শামের অন্যান্য দলগুলোর যুদ্ধ শুরু হবার আগে রাক্কা, আলেপ্পো, দেইর আয যুর, ইদলিব, হাসাকাহতে আইসিসের নিয়ন্ত্রিত এলাকার পাশেই FSA নিয়ন্ত্রিত এলাকা ছিল। অথচ আইসিস তখন তাদের আক্রমণ করে নি। তখনো কিন্তু FSA তাদের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে শারীয়াহ দিয়ে শাসন করতো না। শামে অবস্থিত যেকোন সাদিক এই কথার সত্যতার সাক্ষ্য দেবে। যদি FSA কে আক্রমণ না করার কারণে জাবহাহ মুরতাদীন হয়ে থাকে, তাহলে একই কারণে আইসিসও মুরতাদীন।
আইসিস, জাবহাতুন নুসরাকে এই বলে সমালোচনা করে যে সেক্যুলার FSA, জাবহাহ-র প্রশংসা করে। দেখা যাক, “মুরতাদ” FSA কমান্ডার আব্দেল জাব্বার আল আকিদি, যে মেনাঘ বিমানঘাঁটির অপারেশানে আইসিসের সাথে এক সাথে অংশ নিয়েছিল সে কি বলেঃ
১) FSA কমান্ডার আব্দেল জাব্বার আল আকিদিকে জিজ্ঞেস করা হয়, “আইসিসের সাথে আপনাদের [FSA] সম্পর্ক কেমন?তার জবাব- “খুব ভালো! তারা তাকফিরি বা চরম্পন্থী না। প্রতিদিন আমার সাথে তাদের নেতাদের দেখা সাক্ষাত হয়। তারা একেবারেই চরমপন্থী না!“
এছাড়া সে আরও বলে, “তাদের (আইসিস) এর ব্যাপারে মিডিয়া অনেক মিথ্যা প্রচারনা করে, তারা (আইসিস) তো আমাদের ভাই!”
চিন্তা করুন! মুরতাদ কমান্ডারের সাথে প্রতিদিন তাওহীদের চ্যাম্পিয়ন আইসিসের নেতারা দেখা করছে। আইসিস জানে এই দল সেক্যুলার, কিন্তু জানা সত্ত্বেও তাকফির করছে না! এই লোক নিজেই সেই সাক্ষী দিচ্ছে। আবার বলছে “আইসিস আমাদের ভাই”। জাবহাহকে যদি কোন FSA “ভাই” বলে তাহলে সেটাই আইসিসের চোখে জাবহাহ-র মুরতাদ হবার জন্য যথেষ্ট কারণ। অথচ এখানে FSA এর সাথে আইসিসের গলায় গলায় মিলমিশ। তাহলে জাবহাহ যদি মুরতাদ হয় তাহলে আইসিস কিভাবে মুওয়াহিদ হয়? এটা কি ধরণের নির্লজ্জ দ্বিমুখী নীতি?
এই ঘটনাটা ছিল শামে আইসিসের সাথে অন্যান্য দলগুলোর যুদ্ধ শুরু হবার আগের কথা। এই সময়েই শামে এবং শামের বাইরে সবাই কিন্তু জানতো FSA কাতার-তুর্কি ইত্যাদি তাগুতের কাছ থেকে সহায়ত পেতো। আইসিস এটা জানতো। অথচ আইসিস কিন্তু তখন বলে নি “FSA তাগুতের কাছ থেকে সাহায্য নেয়, তারা তাগুতের দালাল মুরতাদ”। তখন কাতার আর তুর্কি তাগুত ছিল না? নাকি তাকফিরের ক্ষেত্রে অন্য কোন ফিকহ অনুসরণ করা হচ্ছিলো?
প্রকৃত বাস্তবতা হল, আইসিস তখন তাই করছিল যা জাবহাহ এখন করছে এবং তখনো করছিল। তারা সকল মুসলিম দলের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেস্টা করছিল, ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাশারের পতনকে ত্বরান্বিত করার জন্য। আফগানিস্তানে রাশিয়ার বিরুদ্ধে শাইখ উসামা রাহিমাহুল্লাহ ও শাইখ আব্দুল্লাহ আযযাম রাহিমাহুল্লাহ-র পন্থাও এটাই ছিল। আজ হঠাৎ আইসিস এমন ভান করছে যেন এগুলো কিছুই ঘটে নি। যারা চিন্তাশীল, যারা আল্লাহ-র সন্তুষ্টির খোজেন, যারা তাক্বলীদ না করে কুর’আন সুন্নাহ-র আলোকে বাস্তবতাকে বিচার করেন, তাদের জন্য এখানে সুস্পষ্ট প্রমাণ ও নিদর্শন আছে। কিন্তু যাদের হৃদয়ে মোহর পড়ে গেছে, যারা “বাকিয়্যাহ-বাকিয়্যাহ” চিৎকার ছাড়া আর কিছু বোঝে না, তারা এই কথাগুলোরও মর্ম বুঝবে না।
আরেকটি উদাহরন দেখা যাক। আল উয়িআত সুকুর আল শাম হল কাতারের কাছ থেকে ফান্ড প্রাপ্ত একটা দল। আদর্শিকভাবে এরা অনেকটা ইখওয়ানুল মুসলিমীন ঘেঁষা। এখানে বলে রাখা ভালো, আইসিস ইখওয়ানের উপর তাকফির করে। আল উয়িআত সুকুর আল শাম, তুর্কিতে SNC [Syrian National Council] এবং SMC [Supreme Military Council] এর নেতাদের সাথে মিটিং করেছিল। আইসিস এই দলের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে যৌথ শারীয়াহ আদালত গঠন করেছিল! তাগুতের কাছ থেকে অর্থ পাওয়া “সাহওয়াতের” সাথে এক সাথে শারীয়াহ আদালত গঠন! মানে আইসিস যদি মুরতাদ সরকারদের কাছ থেকে অর্থ সাহায্য পাওয়া দলের সাথে একত্রে যৌথ শারীয়াহ আদালত গঠন করে, তবে সেটা হালাল? আইসিস যদি এমন দলের সাথে একত্রে যৌথ শারীয়াহ আদালত গঠন করে, যেই দলের নেতারা তুর্কি গিয়ে SNC আর SMC নেতাদের সাথে বৈঠক করে, তাহলে সেটা জায়েজ? আর অন্য কেউ একই কাজ করলে সেটা রিদ্দা? এটা কেমন শারীয়াহ??
আইসিস এবং সুকুর আল শামের পক্ষ সই করা যৌথ স্টেটমেন্টের লিঙ্ক নিচে দেয়া হল। নিজেই পরীক্ষা করে দেখুন।
এই বক্তব্যে বলা হয়েছে “ এই চুক্তি হল সুকুর আল শাম ও এর নেতা আবু ঈসা, এবং আইসিস ও এর নেতা আবু বাকর আল বাগদাদীর মধ্যে” আমি জানি, অনেক আইসিস সমর্থক নিশ্চয় এখন চোখ কচলানো শুরু করেছেন। এই হল আইসিস – তাওহীদের ঝান্ডাবাহী, যারা সবাইকে যেসব কাজের জন্য তাকফির করে, নিজেরাই সেসব কাজ করে বেড়ায়। আপনাদের যা বলা হয়েছে এই “খিলাফাহ” সম্পর্কে তা হলে মিথ্যার উপর মিথ্যা।
এবার আসা যাক জাইশ আল ইসলামের ব্যাপারে। আইসিসের ওয়ালিয়্যাত দিমাশক, এক সময় জাইশ আল ইসলামের সাথে একটি যৌথ শারীয়াহ আদালত প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দিয়েছিল। হ্যা, আইসিসের মতে “জাইশ আল সালুল”, “মুরতাদ” যাহরান আলুশের দলের সাথে, আইসিস নিজেই একটা যৌথ শারীয়াহ আদালত গঠন করতে চেয়েছিল! মুরতাদের সাথে শারীয়াহ আদালত!
হে “দাওলাতুল ইসলামিয়্যাহ” ! হে “দাউলাতুল তাওহীদ”! কোথায় গেল তোমাদের তাওহীদ? কোথায় গেল তোমাদের ইসলাম?
এই হল আইসিসের অবস্থা। আইসিসের নেতারা সুযোগ সন্ধানী রাজনীতিবিদের মতো তাকফিরকে একটা গুটির মতো ব্যবহার করে। তাদের সৈন্যদের বিভ্রান্ত করার জন্য এবং মিডিয়া ক্যাম্পেইনের জন্য, আর নিজেদের ন্যায়সঙ্গত দাবি করার জন্য। কিন্তু তাদের এই নিত্যপরিবর্তনীয় নিয়মের সাথে দ্বীন ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই। ইসলামের শুরু থেকেই ইরাকের লোকেরা ফিতনা সৃস্টি করেছে। তাদের স্বভাবের মধ্যেই মিথ্যাচার, নিফাক্ব এবং দ্বিমুখী নীতি বিদ্যামান। তারা সর্বদাই ফুলিয়ে-ফাপিয়ে, রঙ চড়িয়ে কথা বলতে ভালোবাসে। এবং তারা সব সময়ই উম্মাহ-র রুক্তক্ষরনের কারণ হয়েছে। আইসিস নামক দলটি এই অশুভ ইরাকি ধারার আরেকটি সংস্করণ মাত্র। এরা মুজাহিদীনের ভেতর ফিতনা সৃস্টি করেছে, তাদের রক্ত হালাল করেছে। আর কাফিররা যেসব মুজাহিদ নেতাদের ক্ষতি করতে পারে নি আইসিস তাদের হত্যা করেছে। আল্লাহু মুস্তা’আন।
***
আমরা জানি, আইসিসের ইস্যুতে কিছু মানুষের মনে আল্লাহ্* মোহর মেরে দিয়েছেন, তারা দেখেও দেখে না, শুনেও শোনে না, বুঝেও বোঝে না। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি অনেক মুখলেস ভাই সত্যিকারভাবে ইসলাম ও খিলাফাহ-র প্রতি ভালোবাসা এবং আইসিসের চকচকে প্রপাগ্যান্ডার কারণে বিভ্রান্ত হয়ে তাদের সমর্থক হয়েছেন, বা তাদের সাথে যোগ দিয়েছেন। এই মুখলেস ভাইদেরকে আমি একজন মুসলিম ভাই হিসেবে অনুরোধ করবো এই লেখায় উল্লেখিত তথ্যগুলোর সত্যতা যাচাই করার জন্য। আইসিসের তাকফিরের নীতি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করার জন্য। এই লেখায় উপস্থাপিত প্রমানের আলোকে আইসিসের অনুসৃত তাকফিরের নীতি অনুযায়ী আইসিস এর “কুফরের” [আইসিস এর নিজের তৈরি সংজ্ঞা অনুযায়ীই] অবস্থা নিয়ে চিন্তা করার জন্য। এবং সর্বোপরি বিশ্বব্যাপী মুজাহেদীন এবং জিহাদ আন্দোলনের উপর মিথ্যা খিলাফাতের দাবিদার এই দলের অশুভ প্রভাব নিয়ে গভীর ভাবে আবার চিন্তা করার জন্য। হেদায়েতের মালিক একমাত্র আল্লাহ্* সুবহানাহু ওয়া তা’আলা। তিনি যাকে হেদায়েত করেন, তাকে কেউ পথভ্রষ্ট করতে পারে না, তিনি যাকে বিভ্রান্ত করেন তাকে কেউ হেদায়েত করেতে পারে না।
[ভাই খালিদ আল শামীর লেখা অবলম্বনে]
আপনারা জানেন আইসিস এবং তাঁদের সমর্থকরা শামের সব দলকে মুরতাদ মনে করে। বিভিন্ন সময় আইসিস তাদের ম্যাগাজিন দাবীক্বের মাধ্যমে বিভিন্ন দলের উপর তাকফির করেছে। এই তাকফির শুরু হয়েছিল এফএসএ-কে দিয়ে [জাইশ আল হুর/ফ্রি সিরিয়ান আর্মি]। তারপর তারা জাইশ আল ইসলাম, আহরার আস শাম এবং ইসলামিক ফ্রন্টকে (ফ্রন্টের সদস্য সব দলকে) তাকফির করে। তারপর তারা জাইশ আল ফাতেহকে তাকফির করে, এবং জাবহাতুন নুসরাকে তাকফির করে। আমি নিচে সংক্ষিপ্ত ভাবে তাদের তাকফিরের পক্ষে দেয়া যুক্তি তুলে ধরছি। এগুলোর মধ্যে অনেক ক্ষেত্রেই তথ্যগত ভুল আছে, বাস্তবতাকে উপেক্ষা করে ঢালাওভাবে মোটাদাগে বিচারের প্রবণতা আছে, এবং তীব্র গুলুহ আছে। এটা পরিস্কার হওয়া দরকার যে নিচের যুক্তিগুলো আইসিস এবং তাদের পক্ষালম্বনকারী, উভয়েরই দেয়া।
FSA – এই দল মুরতাদ-সাহওয়াত, কারণ তারা সেক্যুলারিসমের জন্য যুদ্ধ করে। শারীয়াহর জন্য না। এছাড়া তুর্কি-কাতারের মতো দেশের কাছ থেকে সহায়তা নেয়। এসব দেশের সরকার কাফির-মুরতাদ। তাই কাফির-মুরতাদের কাছ থেকে সাহায্য নেয়ার কারণে এরা মুরতাদ। FSA এর সাথে একই সময়ে অপারেশানে অংশ নেয়ার জন্য আইসিস বিভিন্ন সময়ে জাবহাতুন নুসরাকে মুনাফিক, মুরতাদ বিভিন্ন কিছু বলেছে।
জাইশ আল ইসলাম – এই দল মুরতাদ-সাহওয়াত, কারণ তারা আল সাউদ, কাতার ইত্যাদি তাগুতের কাছ থেকে সাহায্য নেয়। এরা শারীয়াহ প্রতিষ্ঠা করতে চায় না।এই দল বলেছে শামের জনগন যা চাইবে সেটা দিয়ে শাসন করা হবে, তাই এরা মুরতাদ-সাহওয়াত।
ইসলামি ফ্রন্ট – জাইশ আল ইসলামের মতো একই যুক্তি।
আহরার আস শাম – ইসলামিক ফ্রন্টের সদস্য হবার কারণে মুরতাদ। কাতার এবং তুর্কির তাগুতের কাছ থেকে সাহায্য নেয়ার কারণে মুরতাদ-সাহওয়ায়ত।
জাইশ আল ফাতেহ-র সদস্য অন্যান্য দল (যেমন জুন্দ আল আকসা): কারণ এরা মুরতাদ আহরার আস শামের সাথে মিলে যুদ্ধ করছে। এবং মুরতাদকে সাহায্য করছে, এবং তাকে কাফির বলছে না। তাই এরাও সবাই কাফির।
জাবহাতুন নুসরাঃ জাইশ আল ফাতেহ-র সদস্য হবার কারণে। আহরারকে তাকফির না করার কারণে। সব FSA দলকে ঢালাওভাবে তাকফির না করার কারণে; মুরতাদ-সাহওয়াত।
উল্লেখ্য সত্যিকারভাবে কি কারণে আইসিস জাবহাতুন নুসরা এবং অন্যান্য দলকে তাকফির করে, এটা আদনানীর রমযান মাসে দেয়া বক্তব্য থেকে সুস্পষ্ট। রমযানের ৫ তারিখ দেয়া বার্তায় আদনানী বলে-
“…তাই সাবধান, দাওলাতুল ইসলামের (‘ইসলামিক স্টেট) বিরুদ্ধে যুদ্ধর করার কারনে তুমি কুফরে পতিত হবে, তুমি তা উপলব্ধি করো আর না করো।”
তাই এটা পরিষ্কার যে আইসিস তাদের সমর্থন করা বা না করাকে ঈমান ও কুফরের একটি মানদন্ড হিসেবে গ্রহণ করেছে। এবং অন্যান্য দলগুলোকে তাকফির করার পেছনে তাদের মূল কারণ এটাই। এটা তাদের মানহাজ ও আক্বীদার এক জঘন্য ভ্রান্তি যে, তারা তাদের নিজেদের দলকে ইমান ও কুফরের মানদন্ড হিসেবে নিয়েছে। এই একই কারণে আইসিস লিবিয়ার মুজাহেদীনে তাকফির করেছে। শাইখ মুখতার বেল মুখতারের মতো মুজাহিদের ব্যাপারে হুলিয়া ঘোষনা করেছে। খুরাসানে ন্যাটোর বিরুদ্ধে যুদ্ধরত তালিবানকে হত্যা করেছে। কারণ তারা তাদের নিজেদের দলের প্রতি আনুগত্যকে ইমান ও কুফর, আল ওয়ালা আল বারার মান্দন্ড হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে। তাদের দল, তাদের এই কল্পিত “খিলাফাহ” তাদের জন্য এক উপাস্য মূর্তিতে, এক তাগুতে পরিণত হয়েছে। অন্যান্য যেসব কারণ তারা উপস্থাপন করেছে এগুলো গৌণ। মুখ্য কারণ হল এই দলগুলো তাদের বিরোধিতা করেছে, তাই আইসিসের দৃষ্টিতে তারা কাফির। আমরা দু’আ করি আল্লাহ্* যেন আমাদের মুরজি’আদের ইরজা আর গুলাতের গুলুহ থেকে রক্ষা করেন, এবং আমাদের সিরাতুল মুস্তাক্বীমে অটল রাখেন।
যাই হোক, তা সত্ত্বেও আমরা দেখাবো যে কারণে আইসিস, জাবহাতুন নুসরা এবং জুন্দ আল আকসার মতো দলগুলোকে তাকফির করেছে সেই একই কারণে তাদেরকেও তাকফির করা যায়। আমরা দেখাবো কিভাবে আইসিস সুবিধামতো তাদের তাকফিরের নীতি পরিবর্তন করে, এবং জঘন্য দ্বিমুখীনীতি অনুসরণ করে। তাদের তাকফিরের সাথে দ্বীন ইসলামের সম্পর্কের চেয়ে বেশী সম্পর্ক হল ক্ষমতার লোভ। প্রয়োজন অনুযায়ী তারা নীতি পালটে ফেলে। এবং তাদের নীতি অনুযায়ী তারা নিজেরাও মুরতাদ প্রমাণিত হয়, বিভিন্ন ভাবে। আমাদের এই লেখার উদ্দেশ্য আপনাদের সামনে তুলে ধরা কিভাবে এই দল দ্বীন ইসলামের বিকৃত ব্যাখ্যা করেছে এবং মুসলিম উম্মাহ-র সাথে ক্রমাগত মিথ্যাচার করেছে। হয়তো আল্লাহ্* এর মাধ্যমে কাউকে হেদায়েত করবেন।
প্রথমত, আসা যাক FSA এর কথায়। আইসিস জাবহাতুন নুসরাকে FSA এর সাথে একসাথে অপারেশানে অংশ নেয়ার জন্য তাকফির করেছে। FSA এর কাছ থেকে বায়াহ নেয়ার জন্য তারা জাবহাতুন নুসরার কমান্ডারদের মুরতাদ ফাতাওয়া দিয়েছে এবং হত্যা করেছে। শাইখ আবু ফিরাস আস সুরী হাফিযাহুল্লাহ, এই বিষয়ে বিস্তারিত বেশ কয়েক জায়গায় আলোচনা করেছেন। দেখা যাক, আইসিসের এই তাকফিরের নীতি তাদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যায় কি যায় না।
বাশারের সৈন্যদের কাছ থেকে মেনাঘ বিমানঘাঁটি মুক্ত করায় যেসব দল অংশ নিয়েছিল, তার মধ্যে আইসিসও ছিল। এই অপারেশানে লিওয়া আল ফাতেহ নামে একটি দলও অংশগ্রহণ করেছিল। আর লিওয়া আল ফাতেহ ছিল FSA-র একটি দল। শামে অবস্থিত যেকোন সাদিক এই কথার সত্যতার সাক্ষ্য দেবে। যদি আল নুসরা FSA-র সাথে অপারেশানে অংশ নেয়ার কারনে মুরতাদ হয়, তাহলে একই যুক্তিতে আইসিস ও মুরতাদ।
কেউ হয়তো বলতে পারেন, “কিন্তু তখন তো যুদ্ধ ছিল বাশারের বিরুদ্ধে, এটা জায়েজ আছে।“ কিন্তু আইসিস এই লিওয়া আল ফাতেহের সাথে একই সাথে ঈদের জামাত আয়োজন করেছিল। মেনাঘ বিমানঘাঁটির ভেতরে এই জামাত অনুষ্ঠিত হয়। FSA-র সব দল যদি মুরতাদ হয়, যদি FSA-র কাছ থেকে বায়াহ নেয়ার কারণে কেউ মুরতাদ হয়ে যায়, তাহলে মুরতাদের সাথে পাশাপাশি সালাত আদায় করলে মুরতাদ হয় না? এই নীতি অনুযায়ী অবশ্যই আইসিস মুরতাদ। এখন আমার ভাইরা, আপনারাই বলুন আপনারা কোনটা মেনে নেবেন। জাবহাতুন নুসরা মুরতাদ আর আইসিসও মুরতাদ? নাকি আপনারা এখন মানবেন যে সব FSA-দল মুরতাদ না, তাই যেসব দল মুসলিম তাদের সাথে অপারেশানে অংশগ্রহণ করা [যেরকম আইসিস মেনাঘ বিমানঘাঁটির ক্ষেত্রে করেছে] রিদ্দা না, এবং জাবহাতের উপর আইসিসের এই তাকফির ভুল।
হাসাকাহতে কুর্দি YPG এর বিরুদ্ধে আইসিস কাদের সাথে মিলিত হয়ে যুদ্ধ করেছিল? এই যুদ্ধে FSA, আহরার, জাবহাতুন নুসরা এবং আইসিস সহ আরও অনেক গ্রুপ অংশগ্রহণ করেছিল। এই সময় প্রতিটি দল যৌথ শারীয়াহ আদালত মেনে কাজ করেছিল। যুদ্ধলব্ধ গানীমাহ যৌথ শারীয়াহ আদালতের মাধ্যমে ভাগ করা হয়েছিল। শামে অবস্থিত যেকোন সাদিক এই কথার সত্যতার সাক্ষ্য দেবে। সব FSA দল যদি সেক্যুলার মুরতাদ হয়, তাহলে আইসিস কোন বিবেচনায় মুরতাদের সাথে গানীমাহ ভাগাভাগি করলো? কিভাবে মুরতাদের অংশগ্রহণ আছে এমন শারীয়াহ আদালত তারা মেনে নিলো? অথচ হাকীম আল উম্মাহ শাইখ আইমান হাফিযাহুল্লাহ যখন তাদের যৌথ শারীয়হ আদালতে আসতে বললেন, তখন আইসিস সেটা মানলো না। মুরতাদের সাথে তারা শারীয়াহ আদালতে যেতে রাজি, কিন্তু নিজেদের আমীরের আদেশ মেনে মুসলিমদের সাথে তারা শারীয়াহ আদালতে যেতে রাজি না। এই হল আইসিসের তাওহীদ?
আইসিস এবং তাদের সমর্থকরা বলে – “জাবহাহ কিভাবে মুজাহিদিন হয়, যখন জাবহাহ তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকার পাশে অবস্থিত FSA র এলাকায় হামলা চালায় না। FSA তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় শারীয়াহ প্রতিষ্ঠা করে না, সত্যিকার মুজাহিদিন হলে জাবহাহ তো FSA কে আক্রমণ করতো।“
অথচ আইসিসের সাথে শামের অন্যান্য দলগুলোর যুদ্ধ শুরু হবার আগে রাক্কা, আলেপ্পো, দেইর আয যুর, ইদলিব, হাসাকাহতে আইসিসের নিয়ন্ত্রিত এলাকার পাশেই FSA নিয়ন্ত্রিত এলাকা ছিল। অথচ আইসিস তখন তাদের আক্রমণ করে নি। তখনো কিন্তু FSA তাদের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে শারীয়াহ দিয়ে শাসন করতো না। শামে অবস্থিত যেকোন সাদিক এই কথার সত্যতার সাক্ষ্য দেবে। যদি FSA কে আক্রমণ না করার কারণে জাবহাহ মুরতাদীন হয়ে থাকে, তাহলে একই কারণে আইসিসও মুরতাদীন।
আইসিস, জাবহাতুন নুসরাকে এই বলে সমালোচনা করে যে সেক্যুলার FSA, জাবহাহ-র প্রশংসা করে। দেখা যাক, “মুরতাদ” FSA কমান্ডার আব্দেল জাব্বার আল আকিদি, যে মেনাঘ বিমানঘাঁটির অপারেশানে আইসিসের সাথে এক সাথে অংশ নিয়েছিল সে কি বলেঃ
১) FSA কমান্ডার আব্দেল জাব্বার আল আকিদিকে জিজ্ঞেস করা হয়, “আইসিসের সাথে আপনাদের [FSA] সম্পর্ক কেমন?তার জবাব- “খুব ভালো! তারা তাকফিরি বা চরম্পন্থী না। প্রতিদিন আমার সাথে তাদের নেতাদের দেখা সাক্ষাত হয়। তারা একেবারেই চরমপন্থী না!“
এছাড়া সে আরও বলে, “তাদের (আইসিস) এর ব্যাপারে মিডিয়া অনেক মিথ্যা প্রচারনা করে, তারা (আইসিস) তো আমাদের ভাই!”
চিন্তা করুন! মুরতাদ কমান্ডারের সাথে প্রতিদিন তাওহীদের চ্যাম্পিয়ন আইসিসের নেতারা দেখা করছে। আইসিস জানে এই দল সেক্যুলার, কিন্তু জানা সত্ত্বেও তাকফির করছে না! এই লোক নিজেই সেই সাক্ষী দিচ্ছে। আবার বলছে “আইসিস আমাদের ভাই”। জাবহাহকে যদি কোন FSA “ভাই” বলে তাহলে সেটাই আইসিসের চোখে জাবহাহ-র মুরতাদ হবার জন্য যথেষ্ট কারণ। অথচ এখানে FSA এর সাথে আইসিসের গলায় গলায় মিলমিশ। তাহলে জাবহাহ যদি মুরতাদ হয় তাহলে আইসিস কিভাবে মুওয়াহিদ হয়? এটা কি ধরণের নির্লজ্জ দ্বিমুখী নীতি?
এই ঘটনাটা ছিল শামে আইসিসের সাথে অন্যান্য দলগুলোর যুদ্ধ শুরু হবার আগের কথা। এই সময়েই শামে এবং শামের বাইরে সবাই কিন্তু জানতো FSA কাতার-তুর্কি ইত্যাদি তাগুতের কাছ থেকে সহায়ত পেতো। আইসিস এটা জানতো। অথচ আইসিস কিন্তু তখন বলে নি “FSA তাগুতের কাছ থেকে সাহায্য নেয়, তারা তাগুতের দালাল মুরতাদ”। তখন কাতার আর তুর্কি তাগুত ছিল না? নাকি তাকফিরের ক্ষেত্রে অন্য কোন ফিকহ অনুসরণ করা হচ্ছিলো?
প্রকৃত বাস্তবতা হল, আইসিস তখন তাই করছিল যা জাবহাহ এখন করছে এবং তখনো করছিল। তারা সকল মুসলিম দলের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেস্টা করছিল, ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাশারের পতনকে ত্বরান্বিত করার জন্য। আফগানিস্তানে রাশিয়ার বিরুদ্ধে শাইখ উসামা রাহিমাহুল্লাহ ও শাইখ আব্দুল্লাহ আযযাম রাহিমাহুল্লাহ-র পন্থাও এটাই ছিল। আজ হঠাৎ আইসিস এমন ভান করছে যেন এগুলো কিছুই ঘটে নি। যারা চিন্তাশীল, যারা আল্লাহ-র সন্তুষ্টির খোজেন, যারা তাক্বলীদ না করে কুর’আন সুন্নাহ-র আলোকে বাস্তবতাকে বিচার করেন, তাদের জন্য এখানে সুস্পষ্ট প্রমাণ ও নিদর্শন আছে। কিন্তু যাদের হৃদয়ে মোহর পড়ে গেছে, যারা “বাকিয়্যাহ-বাকিয়্যাহ” চিৎকার ছাড়া আর কিছু বোঝে না, তারা এই কথাগুলোরও মর্ম বুঝবে না।
আরেকটি উদাহরন দেখা যাক। আল উয়িআত সুকুর আল শাম হল কাতারের কাছ থেকে ফান্ড প্রাপ্ত একটা দল। আদর্শিকভাবে এরা অনেকটা ইখওয়ানুল মুসলিমীন ঘেঁষা। এখানে বলে রাখা ভালো, আইসিস ইখওয়ানের উপর তাকফির করে। আল উয়িআত সুকুর আল শাম, তুর্কিতে SNC [Syrian National Council] এবং SMC [Supreme Military Council] এর নেতাদের সাথে মিটিং করেছিল। আইসিস এই দলের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে যৌথ শারীয়াহ আদালত গঠন করেছিল! তাগুতের কাছ থেকে অর্থ পাওয়া “সাহওয়াতের” সাথে এক সাথে শারীয়াহ আদালত গঠন! মানে আইসিস যদি মুরতাদ সরকারদের কাছ থেকে অর্থ সাহায্য পাওয়া দলের সাথে একত্রে যৌথ শারীয়াহ আদালত গঠন করে, তবে সেটা হালাল? আইসিস যদি এমন দলের সাথে একত্রে যৌথ শারীয়াহ আদালত গঠন করে, যেই দলের নেতারা তুর্কি গিয়ে SNC আর SMC নেতাদের সাথে বৈঠক করে, তাহলে সেটা জায়েজ? আর অন্য কেউ একই কাজ করলে সেটা রিদ্দা? এটা কেমন শারীয়াহ??
আইসিস এবং সুকুর আল শামের পক্ষ সই করা যৌথ স্টেটমেন্টের লিঙ্ক নিচে দেয়া হল। নিজেই পরীক্ষা করে দেখুন।
এই বক্তব্যে বলা হয়েছে “ এই চুক্তি হল সুকুর আল শাম ও এর নেতা আবু ঈসা, এবং আইসিস ও এর নেতা আবু বাকর আল বাগদাদীর মধ্যে” আমি জানি, অনেক আইসিস সমর্থক নিশ্চয় এখন চোখ কচলানো শুরু করেছেন। এই হল আইসিস – তাওহীদের ঝান্ডাবাহী, যারা সবাইকে যেসব কাজের জন্য তাকফির করে, নিজেরাই সেসব কাজ করে বেড়ায়। আপনাদের যা বলা হয়েছে এই “খিলাফাহ” সম্পর্কে তা হলে মিথ্যার উপর মিথ্যা।
এবার আসা যাক জাইশ আল ইসলামের ব্যাপারে। আইসিসের ওয়ালিয়্যাত দিমাশক, এক সময় জাইশ আল ইসলামের সাথে একটি যৌথ শারীয়াহ আদালত প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দিয়েছিল। হ্যা, আইসিসের মতে “জাইশ আল সালুল”, “মুরতাদ” যাহরান আলুশের দলের সাথে, আইসিস নিজেই একটা যৌথ শারীয়াহ আদালত গঠন করতে চেয়েছিল! মুরতাদের সাথে শারীয়াহ আদালত!
হে “দাওলাতুল ইসলামিয়্যাহ” ! হে “দাউলাতুল তাওহীদ”! কোথায় গেল তোমাদের তাওহীদ? কোথায় গেল তোমাদের ইসলাম?
এই হল আইসিসের অবস্থা। আইসিসের নেতারা সুযোগ সন্ধানী রাজনীতিবিদের মতো তাকফিরকে একটা গুটির মতো ব্যবহার করে। তাদের সৈন্যদের বিভ্রান্ত করার জন্য এবং মিডিয়া ক্যাম্পেইনের জন্য, আর নিজেদের ন্যায়সঙ্গত দাবি করার জন্য। কিন্তু তাদের এই নিত্যপরিবর্তনীয় নিয়মের সাথে দ্বীন ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই। ইসলামের শুরু থেকেই ইরাকের লোকেরা ফিতনা সৃস্টি করেছে। তাদের স্বভাবের মধ্যেই মিথ্যাচার, নিফাক্ব এবং দ্বিমুখী নীতি বিদ্যামান। তারা সর্বদাই ফুলিয়ে-ফাপিয়ে, রঙ চড়িয়ে কথা বলতে ভালোবাসে। এবং তারা সব সময়ই উম্মাহ-র রুক্তক্ষরনের কারণ হয়েছে। আইসিস নামক দলটি এই অশুভ ইরাকি ধারার আরেকটি সংস্করণ মাত্র। এরা মুজাহিদীনের ভেতর ফিতনা সৃস্টি করেছে, তাদের রক্ত হালাল করেছে। আর কাফিররা যেসব মুজাহিদ নেতাদের ক্ষতি করতে পারে নি আইসিস তাদের হত্যা করেছে। আল্লাহু মুস্তা’আন।
***
আমরা জানি, আইসিসের ইস্যুতে কিছু মানুষের মনে আল্লাহ্* মোহর মেরে দিয়েছেন, তারা দেখেও দেখে না, শুনেও শোনে না, বুঝেও বোঝে না। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি অনেক মুখলেস ভাই সত্যিকারভাবে ইসলাম ও খিলাফাহ-র প্রতি ভালোবাসা এবং আইসিসের চকচকে প্রপাগ্যান্ডার কারণে বিভ্রান্ত হয়ে তাদের সমর্থক হয়েছেন, বা তাদের সাথে যোগ দিয়েছেন। এই মুখলেস ভাইদেরকে আমি একজন মুসলিম ভাই হিসেবে অনুরোধ করবো এই লেখায় উল্লেখিত তথ্যগুলোর সত্যতা যাচাই করার জন্য। আইসিসের তাকফিরের নীতি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করার জন্য। এই লেখায় উপস্থাপিত প্রমানের আলোকে আইসিসের অনুসৃত তাকফিরের নীতি অনুযায়ী আইসিস এর “কুফরের” [আইসিস এর নিজের তৈরি সংজ্ঞা অনুযায়ীই] অবস্থা নিয়ে চিন্তা করার জন্য। এবং সর্বোপরি বিশ্বব্যাপী মুজাহেদীন এবং জিহাদ আন্দোলনের উপর মিথ্যা খিলাফাতের দাবিদার এই দলের অশুভ প্রভাব নিয়ে গভীর ভাবে আবার চিন্তা করার জন্য। হেদায়েতের মালিক একমাত্র আল্লাহ্* সুবহানাহু ওয়া তা’আলা। তিনি যাকে হেদায়েত করেন, তাকে কেউ পথভ্রষ্ট করতে পারে না, তিনি যাকে বিভ্রান্ত করেন তাকে কেউ হেদায়েত করেতে পারে না।
[ভাই খালিদ আল শামীর লেখা অবলম্বনে]
Comment