Announcement

Collapse
No announcement yet.

শবে বরাতের ফজীলত ও আমল

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • শবে বরাতের ফজীলত ও আমল

    শবে বরাতের ফজীলত ও আমল


    বছরের একটি ফজীলতপূর্ণ রাত হচ্ছে লাইলাতুন মিন নিসাফি শা’বান তথা লাইলাতুল বারাআত বা শবে বারাআত। এ লাইলাতুল বারাআতে নিহিত রয়েছে মুমিন-মুসলিমের মুক্তি ও কল্যাণের বিভিন্ন উপকরণ। তাই এ রাতকে বলা হয়েছে লাইলাতুল বারাআত বা মুক্তির রাত। অন্যদিকে পবিত্র মাহে রমজানের পূর্বের মাস হওয়ার কারণে শাবান মাসকে বলা হয়েছে রমজান শরীফের প্রস্তুতির মাস।

    লাইলাতুল বারাআতের অনেক তাৎপর্য, ফযীলত ও বরকত রয়েছে। মহানবী ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) এরশাদ করেনঃ*শাবান মাস হল আমার মাস আর পবিত্র রমজান মাস হল মহান আল্লাহ তাআলার মাস। তিনি আরও বলেন, তোমরা শাবানের চাঁদ সঠিকভাবে হিসাব রাখ।*কেননা শাবানের চাঁদের হিসাব ঠিক হলে, রমজানের চাঁদের হিসাব সঠিক হতে সহায়ক হবে।**( মিশকাত শরীফ-১১৫পৃ )

    শা’বান মাসের ১৪তম তারিখের দিবাগত রাত হচ্ছে- লাইলাতুল বারাআত বা শবে বারাআত। লাইলাতুল বারাআত হচ্ছে-গুনাহ থেকে মুক্তি লাভের রাত্রি। অর্থাৎ, এ রাত্রে ইবাদত-বন্দেগী করার মাধ্যমে মুমিন-মুসলামনদের গুনাহ মাফ হয়ে থাকে এবং মর্যাদা বৃদ্ধি হয়ে থেকে।

    শা’বান এবং শবে বারাআতের করণীয় সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) এরশাদ করেন,*শাবান মাসের রোযা আমার নিকট অন্য মাসের তুলনায় অধিক প্রিয়। যখন তোমাদের নিকট শাবানের রাত্রি ( শবে বারাআত ) উপস্থিত হবে, তখন তোমরা সেই রাতটি জাগ্রত থাক ( নামাজ পড়ে, কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করে, তাসবীহ পড়ে, যিকির করে, দুআ করে ) এবং দিনের বেলা রোযা রাখ। কারণ, এ রাতে মহান আল্লাহ সূর্যাস্তের পর থেকে ফজর পর্যন্ত দুনিয়ার আসমানে তাশরীফ আনেন এবং তিনি ঘোষণা করেন- আছে কি এমন কোন ব্যক্তি যে, তার গুনাহ মাফীর জন্য আমার নিকট প্রার্থনা করবে? আমি তার গুনাহ সমূহ মাফ করে দিব। আছে কি এমন কোন রিযিক প্রার্থনাকারী, যে আমার নিকট রিযিক প্রার্থনা*করবে? আমি তার রিযিকের ব্যবস্থা করে দিব। আছে কি এমন কোন বিপদগ্রস্ত, যে আমার নিকট বিপদ থেকে মুক্তি চাইবে? আমি তাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করব। এভাবে পূর্ণ রাত মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে ঘোষণা হতে থাকে এবং বান্দাদের উপর রহমত বৃষ্টির ন্যায় নাজিল হতে থাকে।

    ************************************************** *******************************( ইবনে মাজাহ শরীফ )

    হযরত আয়েশা সিদ্দীক ( রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহা ) বর্ণনা করেন, মহানবী ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) আমাকে উদ্দেশ্য করে বলেন,*হে আয়েশা! তুমি কি জান? আজ রাত ( নিসাফে শাবান ) কী? হযরত আয়েশা ( রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহা ) বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি তো জানি না, দয়া করে বলুন।*মহানবী ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) বললেন, আজ রাতে আগামী বছরে যে সমস্ত বনী আদম জমীনের বুকে জন্মগ্রহণ করবে এবং আরা মৃত্যুবরণ করবে, তাদের তালিকা লিপিবদ্ধ করা হয়। বিশেষ করে বান্দাদের আমলনামা মহান আল্লাহর নিকট প্রকাশ করা হয়।

    হযরত আয়েশা ( রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহা ) থেকে বর্ণিত অপর একটি হাদীসে মহানবী ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) বলেন,*আমি এক রাতে মহানবী ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ঔয়া সাল্লাম )-কে বিছানায় পেলাম না। তাই আমি অত্যন্ত পেরেশান হয়ে খোঁজাখুঁজি আরম্ভ করলাম। খুঁজতে খুঁজতে দেখি, তিনি জান্নাতুল বাকীর মধ্যে মহান আল্লাহর প্রার্থনায় মগ্ন। তখন তিনি আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আয়েশা! আমার নিকট হযরত জিবরাইল ( আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) উপস্থিত হয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, আজ রাত হল নিসফে শাবান ( অর্থাৎ, লাইলাতুল বারাআত )। এ রাতে আল্লাহ তাআলা অধিক পরিমাণে জাহান্নামবাসী লোকদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। এমনকি কালব বংশের বকরীগুলোর লোম সমপরিমাণ গুনাহগার বান্দা হলেও।**( মিশকাত শরীফ-১১৫ পৃ )

    হযরত মুআয ইবনে জাবাল ( রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু ) বলেন, রাসূলে করীম ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) এরশাদ করেছেন,*আল্লাহ তাআলা অর্ধ শাবানের রাতে ( শাবানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতে ) সৃষ্টির দিকে ( রহমতের ) দৃষ্টি দেন এবংগ মুশরীক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত সবাইকে ক্ষমা করে দেন।

    উক্ত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে যে, এ রাতে আল্লাহর তাআলার পক্ষ থেকে মাগফিরাতের দ্বার ব্যাপকভাবে উন্মুক্ত করা হয়। কিন্তু শিরকী কর্মকান্ডে লিপ্ত ব্যক্তি এবং অন্যের ব্যাপারে হিংসা বিদ্বেষ পোষণকারী মানুষ এই ব্যাপক রহমত, মাগফিরাত ও সাধারণ ক্ষমা থেকে বঞ্চিত থাকে।

    যদি শবে বরাতের ব্যাপারে অন্য কোন হাদীস নাও থাকত, তবুও এ হাদীসটিই এ রাতের ফজীলত ও মর্যাদা প্রমাণ করার জন্য এবং এ রাতে মাগফিরাতের উপযোগী নেক আমলের গুরুত্ব প্রমাণিত হওয়ার জন্য যথেষ্ট হত। তদুপরি দশজন সাহাবী থেকে শবে বরাতের ফজীলত, মর্যাদ ও আমল সম্পর্কে হাদীস বর্ণিত রয়েছে। অবশ্য এর কোন কোনটির সনদ দূর্বল। আর এই সনদগত দূর্বলতার কারণে কেউ কেউ বলে দিয়েছেন, এ রাতের ফজীলত ভিত্তিহীন। কিন্তু মুহাদ্দিসগণ ও ফকীহগণের ফয়সালা হল, কোন একটি হাদীস যদি সনদগতভাবে দূর্বল হয়, ত

  • #2
    ে। তারপর তারা এবং মহিলারা যা কিছু নফল পয়রার তা নিজ নিজ ঘরে একাকী পড়বেন। এসব নফল আমলের জন্য দলে দলে মসজিদে এসে সমবেত হওয়ার কোন প্রমাণ হাদীসে নেই। আর সাহাবায়ে কেরামের যুগেও এর রেওয়াজ ছিল না।*(ইকতিযাউস সিরাতুল মুস্তাকিম,২য় খন্ড-৬৩১পৃ, মারাকিল ফালাহ-২১৯পৃ )

    *তবে কোন ঘোষণা ও আহবান ছাড়া এমনিতেই কিছু লোক যদি মসজিদে এসে যান, তাহলে প্রত্যেকে নিজ নিজ আমলে মশগুল থাকবেন। একে অন্যের আমলে ব্যাঘাত সৃষ্টির কারণ হওয়া যাবে না।

    শাইখুল ইসলাম মুফতী তাকী উসিমানী ( দামাম বারকাতুম ) বলেন, ইমাম আযম আবু হানীফা ( রহমতুল্লাহি আলাইহি ) বলেছেন, নফল ইবাদত এমনভাবে করবে যে, সেখানে কেবল তুমি আছ, আর আছেন আল্লাহ। তৃতীয় কেউ নেই। সুতরাং, যে কোন নফল ইবাদতের ক্ষেত্রেই শরীয়তের অন্যতম মূলনীতি হল, তাতে জামাআত করা মাকরুহে তাহরীমী ও নিষিদ্ধ।*( ইসলাহী খুতুবাত, ৪র্থ খণ্ড-২৬৮পৃ )

    হযরত আশরাফ আলী থানভী ( রহমতুল্লাহি আলাইহি )-এর মতঃ

    তিনি বলেন হাদীসে শবে বরাতের তিনটি কাজ সুন্নত মত করাকে সওয়াব ও বরকত লাভের উপায় বলা হয়েছে। প্রথমতঃ পনেরো তারিখ রাতে কবরস্থানে গিয়ে মৃতদের জন্য দোয়া ও ইস্তেগফার করা। সাথে সাথে গরীব মিসকীনদের কিছু দান করে সে দানের সওয়াবটুকু ঐ মৃতদের নামে বখশে দিলে আরও ভাল হয়। সেই মুহূর্তে হাতে না থাকলে, অন্য সময় গোপনে কিছু দান করে দেওয়া উচিত। দ্বিতীয়তঃ রাত জেগে একা একা বা বিনা আমন্ত্রণে জড়ো হয়ে যাওয়া দু চারজনের সাথে ইবাদতে মশগুল থাকা। তৃতীয়তঃ শাবানের পনেরো তারিখ নফল রোযা রাখা।

    এ রাতের কিছু ভিত্তিহীন কাজকর্ম (মাসিক আদর্শ নারী থেকে সংগৃহীত )

    ইসলামে এ রাতের নামাজের বিশেষ কোন নিয়মনীতি নির্ধারিত নেই। কিন্তু কেউ কেউ শবে বরাতের জন্য আলাদ পদ্ধতির নামাজ আছে বলে মনে করেন। কিন্তু এ বিশেষ পদ্ধতির নামাজ সম্পর্কে যে রেওয়াতগুলো আছে, তা সবই অমূলক ও মওযু। হাদীস শরীফের কোন কিতাবে এসব রিওয়াতের নাম নিশানা পর্যন্ত নেই।

    এছাড়া, এ রাতে খিচুড়ি বন্টন, হালুয়া রুটি প্রথা, মসজিদ ইত্যাদি আলোকসজ্জা করা ইত্যাদি নাজায়িয ও বিদআত কাজ। এগুলো শয়তানের ধোঁকা। মানুষকে আসল কাজ থেকে বিরত রাখার জন্য শয়তান এসব অযথা কাজ-কর্মে মানুষকে লাগিয়ে দেয়। এসব থেকে আমাদেরকে দূরে থাকতে হবে।

    আর খেয়াল রাখতে হবে, এ রাতে জাগ্রত থাকতে গিয়ে ফজরের নামাজ ফওত না হয়ে যায়। কেননা, এ সারারাত বিশেষ আমলও ফজরের ফরজ নামাজের বিকল্প বা সমতুল্য হতে পারবে না। যেহেতু, ফজরের নামাজ হচ্ছে ফরজ আর এ রাতের বিশেষ ইবাদত বন্দেগী হচ্ছে নফল।

    সঠীক নিয়মে এ রাতে আমল করেই কেবল উপরোক্ত ফজীলতের অধিকারী হওয়া যাবে। আর বিশেষ ক্রে সারা জীবনের গুনাহ থেকে তওবা করে এ রাতে আত্মশুদ্ধির প্রত্যয় গ্রহণ করা এবং সেই অনুযায়ী সারাজিবন চলা আমাদের কর্তব্য।

    আল্লাহ তাআলা আমাদেরর সকলকে আমল করার তৌফিক দান করুন।

    Comment


    • #3
      দেখুন

      যদি শবে বরাতের ব্যাপারে অন্য কোন হাদীস নাও থাকত, তবুও এ হাদীসটিই এ রাতের ফজীলত ও মর্যাদা প্রমাণ করার জন্য এবং এ রাতে মাগফিরাতের উপযোগী নেক আমলের গুরুত্ব প্রমাণিত হওয়ার জন্য যথেষ্ট হত। তদুপরি দশজন সাহাবী থেকে শবে বরাতের ফজীলত, মর্যাদ ও আমল সম্পর্কে হাদীস বর্ণিত রয়েছে। অবশ্য এর কোন কোনটির সনদ দূর্বল। আর এই সনদগত দূর্বলতার কারণে কেউ কেউ বলে দিয়েছেন, এ রাতের ফজীলত ভিত্তিহীন। কিন্তু মুহাদ্দিসগণ ও ফকীহগণের ফয়সালা হল, কোন একটি হাদীস যদি সনদগতভাবে দূর্বল হয়, ত ==========

      মাশা আল্লাহ , খুব সুন্দর পোস্ট । কিন্তু ভাই পোস্টটা পূর্ণ করুন , ভালো হবে ইনশা আল্লাহ
      যারা ঈমানদার তারা যে, ক্বিতাল করে আল্লাহর রাহেই । আল-ক্বুরআনুল কারীম ।

      Comment


      • #4
        মাশা আল্লাহ
        যারা ঈমানদার তারা যে, ক্বিতাল করে আল্লাহর রাহেই । আল-ক্বুরআনুল কারীম ।

        Comment


        • #5
          Originally posted by tarek bin ziad View Post
          শবে বরাতের ফজীলত ও আমল


          বছরের একটি ফজীলতপূর্ণ রাত হচ্ছে লাইলাতুন মিন নিসাফি শা’বান তথা লাইলাতুল বারাআত বা শবে বারাআত। এ লাইলাতুল বারাআতে নিহিত রয়েছে মুমিন-মুসলিমের মুক্তি ও কল্যাণের বিভিন্ন উপকরণ। তাই এ রাতকে বলা হয়েছে লাইলাতুল বারাআত বা মুক্তির রাত। অন্যদিকে পবিত্র মাহে রমজানের পূর্বের মাস হওয়ার কারণে শাবান মাসকে বলা হয়েছে রমজান শরীফের প্রস্তুতির মাস।

          লাইলাতুল বারাআতের অনেক তাৎপর্য, ফযীলত ও বরকত রয়েছে। মহানবী ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) এরশাদ করেনঃ*শাবান মাস হল আমার মাস আর পবিত্র রমজান মাস হল মহান আল্লাহ তাআলার মাস। তিনি আরও বলেন, তোমরা শাবানের চাঁদ সঠিকভাবে হিসাব রাখ।*কেননা শাবানের চাঁদের হিসাব ঠিক হলে, রমজানের চাঁদের হিসাব সঠিক হতে সহায়ক হবে।**( মিশকাত শরীফ-১১৫পৃ )

          শা’বান মাসের ১৪তম তারিখের দিবাগত রাত হচ্ছে- লাইলাতুল বারাআত বা শবে বারাআত। লাইলাতুল বারাআত হচ্ছে-গুনাহ থেকে মুক্তি লাভের রাত্রি। অর্থাৎ, এ রাত্রে ইবাদত-বন্দেগী করার মাধ্যমে মুমিন-মুসলামনদের গুনাহ মাফ হয়ে থাকে এবং মর্যাদা বৃদ্ধি হয়ে থেকে।

          শা’বান এবং শবে বারাআতের করণীয় সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) এরশাদ করেন,*শাবান মাসের রোযা আমার নিকট অন্য মাসের তুলনায় অধিক প্রিয়। যখন তোমাদের নিকট শাবানের রাত্রি ( শবে বারাআত ) উপস্থিত হবে, তখন তোমরা সেই রাতটি জাগ্রত থাক ( নামাজ পড়ে, কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করে, তাসবীহ পড়ে, যিকির করে, দুআ করে ) এবং দিনের বেলা রোযা রাখ। কারণ, এ রাতে মহান আল্লাহ সূর্যাস্তের পর থেকে ফজর পর্যন্ত দুনিয়ার আসমানে তাশরীফ আনেন এবং তিনি ঘোষণা করেন- আছে কি এমন কোন ব্যক্তি যে, তার গুনাহ মাফীর জন্য আমার নিকট প্রার্থনা করবে? আমি তার গুনাহ সমূহ মাফ করে দিব। আছে কি এমন কোন রিযিক প্রার্থনাকারী, যে আমার নিকট রিযিক প্রার্থনা*করবে? আমি তার রিযিকের ব্যবস্থা করে দিব। আছে কি এমন কোন বিপদগ্রস্ত, যে আমার নিকট বিপদ থেকে মুক্তি চাইবে? আমি তাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করব। এভাবে পূর্ণ রাত মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে ঘোষণা হতে থাকে এবং বান্দাদের উপর রহমত বৃষ্টির ন্যায় নাজিল হতে থাকে।

          ************************************************** *******************************( ইবনে মাজাহ শরীফ )

          হযরত আয়েশা সিদ্দীক ( রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহা ) বর্ণনা করেন, মহানবী ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) আমাকে উদ্দেশ্য করে বলেন,*হে আয়েশা! তুমি কি জান? আজ রাত ( নিসাফে শাবান ) কী? হযরত আয়েশা ( রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহা ) বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি তো জানি না, দয়া করে বলুন।*মহানবী ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) বললেন, আজ রাতে আগামী বছরে যে সমস্ত বনী আদম জমীনের বুকে জন্মগ্রহণ করবে এবং আরা মৃত্যুবরণ করবে, তাদের তালিকা লিপিবদ্ধ করা হয়। বিশেষ করে বান্দাদের আমলনামা মহান আল্লাহর নিকট প্রকাশ করা হয়।

          হযরত আয়েশা ( রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহা ) থেকে বর্ণিত অপর একটি হাদীসে মহানবী ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) বলেন,*আমি এক রাতে মহানবী ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ঔয়া সাল্লাম )-কে বিছানায় পেলাম না। তাই আমি অত্যন্ত পেরেশান হয়ে খোঁজাখুঁজি আরম্ভ করলাম। খুঁজতে খুঁজতে দেখি, তিনি জান্নাতুল বাকীর মধ্যে মহান আল্লাহর প্রার্থনায় মগ্ন। তখন তিনি আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আয়েশা! আমার নিকট হযরত জিবরাইল ( আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) উপস্থিত হয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, আজ রাত হল নিসফে শাবান ( অর্থাৎ, লাইলাতুল বারাআত )। এ রাতে আল্লাহ তাআলা অধিক পরিমাণে জাহান্নামবাসী লোকদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। এমনকি কালব বংশের বকরীগুলোর লোম সমপরিমাণ গুনাহগার বান্দা হলেও।**( মিশকাত শরীফ-১১৫ পৃ )

          হযরত মুআয ইবনে জাবাল ( রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু ) বলেন, রাসূলে করীম ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) এরশাদ করেছেন,*আল্লাহ তাআলা অর্ধ শাবানের রাতে ( শাবানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতে ) সৃষ্টির দিকে ( রহমতের ) দৃষ্টি দেন এবংগ মুশরীক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত সবাইকে ক্ষমা করে দেন।

          উক্ত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে যে, এ রাতে আল্লাহর তাআলার পক্ষ থেকে মাগফিরাতের দ্বার ব্যাপকভাবে উন্মুক্ত করা হয়। কিন্তু শিরকী কর্মকান্ডে লিপ্ত ব্যক্তি এবং অন্যের ব্যাপারে হিংসা বিদ্বেষ পোষণকারী মানুষ এই ব্যাপক রহমত, মাগফিরাত ও সাধারণ ক্ষমা থেকে বঞ্চিত থাকে।

          যদি শবে বরাতের ব্যাপারে অন্য কোন হাদীস নাও থাকত, তবুও এ হাদীসটিই এ রাতের ফজীলত ও মর্যাদা প্রমাণ করার জন্য এবং এ রাতে মাগফিরাতের উপযোগী নেক আমলের গুরুত্ব প্রমাণিত হওয়ার জন্য যথেষ্ট হত। তদুপরি দশজন সাহাবী থেকে শবে বরাতের ফজীলত, মর্যাদ ও আমল সম্পর্কে হাদীস বর্ণিত রয়েছে। অবশ্য এর কোন কোনটির সনদ দূর্বল। আর এই সনদগত দূর্বলতার কারণে কেউ কেউ বলে দিয়েছেন, এ রাতের ফজীলত ভিত্তিহীন। কিন্তু মুহাদ্দিসগণ ও ফকীহগণের ফয়সালা হল, কোন একটি হাদীস যদি সনদগতভাবে দূর্বল হয়, ত


          যদি শবে বরাতের ব্যাপারে অন্য কোন হাদীস নাও থাকত, তবুও এ হাদীসটিই এ রাতের ফজীলত ও মর্যাদা প্রমাণ করার জন্য এবং এ রাতে মাগফিরাতের উপযোগী নেক আমলের গুরুত্ব প্রমাণিত হওয়ার জন্য যথেষ্ট হত। তদুপরি দশজন সাহাবী থেকে শবে বরাতের ফজীলত, মর্যাদ ও আমল সম্পর্কে হাদীস বর্ণিত রয়েছে। অবশ্য এর কোন কোনটির সনদ দূর্বল। আর এই সনদগত দূর্বলতার কারণে কেউ কেউ বলে দিয়েছেন, এ রাতের ফজীলত ভিত্তিহীন। কিন্তু মুহাদ্দিসগণ ও ফকীহগণের ফয়সালা হল, কোন একটি হাদীস যদি সনদগতভাবে দূর্বল হয়, ত ==========

          মাশা আল্লাহ , খুব সুন্দর পোস্ট । কিন্তু ভাই পোস্টটা পূর্ণ করুন , ভালো হবে ইনশা আল্লাহ
          যারা ঈমানদার তারা যে, ক্বিতাল করে আল্লাহর রাহেই । আল-ক্বুরআনুল কারীম ।

          Comment


          • #6
            শবে-বরাত নিয়ে শায়থুল হাদীস মুফতি জসিম উদ্দীন রাহমানীর বই ও লেকচার
            Sabe Barat An Innovation_ Superstition And Muslims Responsibility 20.2 MB

            লিংক:https://allahordikeahban.wordpress.com/
            ( গাজওয়া হিন্দের ট্রেনিং) https://dawahilallah.com/showthread.php?9883

            Comment


            • #7
              . পিডিএফ বই Shob-E-Borat 358.8 KB

              লিংক:-
              https://allahordikeahban.wordpress.c...7%80%e0%a6%b0/
              ( গাজওয়া হিন্দের ট্রেনিং) https://dawahilallah.com/showthread.php?9883

              Comment


              • #8

                আমাদের সামনে এসে গেছে অতি ফজিলতের একটি মাস মাহে শা’বান। প্রিয় নবীজী(সাঃ) এমাসেও দু’আ করতেন যেভাবে রজব মাসেও দু’আ করতেনঃ “আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফী রজব ওয়া শা’বান ওয়া বাল্লিগনা রামাযান।” অর্থঃ “হে আল্লাহ! আমাদের জন্য রজব ও শা’বান মাসকে বরকতময় করে দিন এবং আমাদেরকে রমজান মাস পর্যন্ত পৌছেঁ দিন। আমীন।” শা’বান মাসে তিনি অকনকগুলো নফল রোজা রাখতেন।
                আয়েশা (রাঃ) বর্ণনা করেনঃ “আমি প্রিয় নবী (সাঃ) কে রমজান ছাড়া আর কোন পূর্ণ মাসের রোজা রাখতে দেখিনি। আর শা’বান মাস ছাড়া আর কোন মাসে এত অধিক পরিমাণ নফল রোজা রাখতে দেখিনি।” (বোখারি ও মুসলিম)।
                গাহাবী উসামা বিন যায়েদ (রাঃ) বর্ণন করেনঃ আমি প্রিয় নবীজী (সাঃ) কে বললামঃ “ইয়া রাসুলাল্লাহ (সাঃ)! শা’বান মাসে আপনি যত নফল রোজা রাখেন অন্য কোন মাসে আপনাকে এত নফল রোযা রাখতে দেখিনা।” প্রিয় নবী (সাঃ) এরশাদ করলেনঃ “রজব ও রমজান – এ দুটো মাসের মঝখানের এ মাসটি সম্পর্কে অনেকেই আসলে গাফেল হয়ে থাকে। এ মাসে মানুষের আমল (-এর বার্ষিক রিপোর্ট) আল্লাহর কাছে পেশ করা হয়। আমি চাই আমার আমল যখন পেশ করা হয়, আমি যেন তখন রোযা অবস্থায় থকি।” (আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে খোযাইমা)।
                তবে শা’বান মাসের ১৫ তারিখে শুধু একটি রোযা রাখার ব্যাপারে কোন সহীহ হাদিস পাওয়া যায় না। আর আমাদের সামনে আসছে মধ্য শা’বানের রাতটি যা অনেক দেশে শবে বরাত নামে পরিচিত। এ রাতের ফজিলত ও আমল সম্পর্কে অন্যান্য বৎসরের মত এবারও আপনাদের খেদমতে কিছু বিস্তারিত আলোচনা পেশ করতে চাই। আল্লাহ আমাদেরকে তাওফিক দিন। আমীন।
                প্রত্যেক মুসলমানই অবগত আছেন, ইসলামী শরীয়তের মূল উৎস দু’টি – কুরআন ও হাদিস। কুরআন ও হাদিসে যে ইবাদতের যতটুকু গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, তার চেয়ে একটু বেশী বা কম গুরুত্ব দেয়ার অধিকার কেন মুসলিমের নেই। শবে বরাত নামক বিষয়টি কুরআন-হাদিসে আদৌ উল্লেখ করা হয়নি। এটাই হচ্ছে উম্মতের মুহাক্বিক আলিম ও ইমামদের মতামত।
                কেউ কেউ দাবী করে থাকেন সুরা আদ-দুখানে “লাইলাতুম মুবারাকাহ” অর্থাৎ বরকতময় রাত বলতে শবে বরাতকেই বোঝানো হয়েছে। এ ব্যাপারে তাফসীরে ইবনে কাসীর, কুরতুবী, ইত্যাদি রেফারেন্স দেয়া হয়। আসুন আমরা চেক করে দেখি নির্ভরযোগ্য তাফসীর গ্রন্থসমূহে এ ব্যাপারে কি বলা হয়েছে। লিখার কলেবর যাতে বৃদ্ধি না হয়ে যায়, সেজন্য যথাসম্ভব তাফসীরের সার-সংক্ষেপ পেশ করা হচ্ছে।
                ইমাম ইবনে কাসীর (রাহঃ)বলেনঃ বরকতময় রাত বলতে সুরা আদ-দুখানে শবে ক্বদর-কে বোঝানো হয়েছে। কারণ, এখানে কুরআন নাযিলের কথা বলা হয়েছে। আর সেটাতো সূরা ক্বদর-এ স্পস্ট করেই বলা আছে। আর কুরআন যে রমজান মাসেই নাযিল হয়েছে সেটাও সুস্পস্ট করে বলা হয়েছে সূরা বাক্বারায়।
                তিনি আরও বলেনঃ কেউ যদি বলে যে বরকতময় রাত বলতে মধ্য শা’বানের রাত-কে বোঝানে হয়েছে – যেমনটি ইকরামা কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে – তাহলে সে প্রকৃত সত্য থেকে অনেক দূরে অবস্থান করল। শবে বরাতে মনুষের হায়াত, মউত ও রিযকের বার্ষিক ফয়সালা হওয়া সংক্রান্ত যে হাদিসটি উসমান বিন মোহাম্মদ কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে, সে সম্পর্কে তিনি বলেছেন, হাদিসটি মুরসাল। অর্থাৎ, হাদিসের প্রথম বর্ণনাকারী হিসাবে যে সাহাবী রাসূলুল্লাহ (সাঃ) থেকে হাদিসটি শুনেছেন, তার কোন উল্লেখ নেই। ফলে এমন দূর্বল হাদিস দিয়ে কুরআন ও সহীহ হাদিসের অকাট্য বক্তব্যকে খণ্ডন করা যায়না। (বিস্তারিত জানার জন্য দেখুনঃ তাফসীর ইবনে কাসীর, খণ্ডঃ ৭, পৃষ্ঠা ৩১৬১)।
                ইমাম কুরতুবী বলেনঃ “বরকতময় রাত্রি বলতে ক্বুদরতের রাতকে বোঝানো হয়েছে, যদিও কেউবা বলেছেন সেটা মধ্য শা’বানের রাত। ইকরামাও বলেছেন সেটি হচ্ছে মধ্য শা’বানের রাত। তবে প্রথম মতটি অধিকতর শুদ্ধ। কেননা আল্লাহ বলেছেনঃ ‘আমি এই কুরআনকে লাইলাতুল ক্বদর-এ নাযিল করেছি।’” এ প্রসঙ্গে মানুষের হায়াত, মউত, রিযক, ইত্যাদির ফয়সালা শবে বরাতে সম্পন্ন হয় বলে যে রেওয়ায়েত এসেছে, সেটাকে তিনি অগ্রহণযোগ্য বলে বর্ণনা করেন। তিনি পূণরায় উল্লেখ করেনঃ “সহীহ-শুদ্ধ কথা হচ্ছে, এ রাতটি লাইলাতুল ক্বদর।”
                অতঃপর তিনি প্রখ্যাত ফকীহ কাযী আবু বকর ইবনুল আরাবীর উদ্ধৃতি পেশ করেনঃ জমহুর আলীমদের মতামত হচ্ছে, এ রাতটি লাইলাতুল ক্বদর। কেউ কেউ বলতে চেয়েছেন এটা মধ্য শা’বানের রাত। এ কথাটি একেবারেই বাতিল। কারণ, আল্লাহ স্বয়ং তাঁর অকাট্য বাণী কুরআনে বলেছেনঃ “রমজান হচ্ছে ঐ মাস যে মাসে কুরআন নাযিল করা হয়েছে।” এখানে তিনি মাস উল্লেখ করে দিয়েছেন। আর বরকতময় রাত বলে লাইলাতুল ক্বদরকে উল্লেখ করে দিয়েছেন। যে ব্যক্তি এ মাসটিকে রমজান থেকে সরিয়ে অন্য মাসে নিয়ে যায়, সে মূলতঃ আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে বসে। মধ্য শা’বানের রাতটির ফজিলত এবং এ রাতে হায়াত-মউতের ফয়সালা সংক্রান্ত কোন একটি হাদিসও সহীহ এবং নির্ভরযোগ্য নয়। কাজেই কেউ যেন সেগুলোর প্রতি দৃষ্টিপাত না করে। (বিস্তারিত জানার জন্য দেখুনঃ তাফসীরে কুরতুবী, খণ্ডঃ ১৬, পৃষ্ঠাঃ ১২৬-১২৮)।
                ইমাম তাবারী তাফসীরে তাবারীতে বরকতময় রাতের ব্যাখায় উল্লেখ করেনঃ কাতাদাহ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত এ রাতাট লাইলাতুল ক্বদর-এর রাত। প্রতি বৎসরের যাবতীয় কিছুর ফায়সালা এ রাতেই সম্পন্ন করা হয়। অতঃপর ইকরামা কর্তৃক বর্ণিত মধ্য শা’বানের মতামতটিও উল্লেখ করেন। পরিশেষে তিনি মন্তব্য করেনঃ লাইলাতুল ক্বদর-এর মতটাই সহীহ। কারণ, এখানে কুরআন নাযিলের কথা বলা হয়েছে।(বিস্তারিত জানার জন্য দেখুনঃ তাফসীরে তাবারী, খণ্ডঃ ১১, পৃষ্ঠা ২১২-২২৩)।
                আল্লামা মুহাম্মদ আল আমীন আশ-শিনকীতী (রাহঃ) সূরা আদ-দুখানের বরকতময় রাতের তাফসীরে বলেনঃ এটি হচ্ছে রমজান মাসের ক্বদরের রাত। মধ্য শা’বানের রাত হিসাবে সেটিকে বুঝানো হয়েছে মনে করা – যেমনটি ইকরামা কর্তৃক বর্ণিত রেওয়ায়েতে বলা হয়েছে – মিথ্যা দাবী ছাড়া আর কিছু নয়। এ দাবীটি কুরআনের সুস্পষ্ট বক্তব্যের বিরোধী । নিঃসন্দেহে হকের বিপরীত যে কোন কথাই বাতিল।
                কুরআনের সুস্পষ্ট বক্তব্যের বিরোধী যে হাদিসগুলো কেউ কেউ বর্ণনা করে থাকেন, যাতে বলা হয় এ রাতটি হচ্ছে মধ্য শা’বানের রাত, সেই হাদিসগুলোর কোন ভিত্তি নেই। সেগুলোর কোনটার সনদই সহীহ নয়। ইবনুল আরাবী সহ মুহাক্বীক আ’ইম্মায়ে কেরাম এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে বলেছেন, বরই আফসোস ঐসব মুসলমানদের জন্য যারা কুরআনের সুস্পষ্ট বিরোধিতা করে কুরআন ও সহীহ হাদিসের দলীল ছাড়াই।(বিস্তারিত দেখুনঃ আদওয়াউল বায়ান, খণ্ডঃ ৭, পৃষ্ঠাঃ ৩১৯)।
                উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম মুফতী শফী (রাহঃ) এ বিষয়ে মা’আরেফুল কুরআনে বলেনঃ বরকতময় রাত বলতে অধিকাংশ তাফসীরবিদের মতে এখানে শবে ক্বদর বুঝানো হয়েছে যা রমজান মাসের শেষ দশকে হয়। কেউ কেউ আলোচ্য আয়াতে বরকতের রাত্রির অর্থ নিয়েছেন শবে বরাত। কিন্তু এটা শুদ্ধ নয়। কেননা, এখানে সর্বাগ্রে কুরআন অবতরনের কথা বলা হয়েছে। আর কুরআন যে রমজান মাসে নাযিল হয়েছে, তা কুরআন দ্বারাই প্রমাণিত। (বিস্তারিত জানার জন্য দেখুনঃ মা’আরেফুল কুরআন, পৃষ্ঠা ১২৩৫)।
                প্রিয় পাঠক, লক্ষ্য করুন, প্রতিটি তাফসীরেই ইকরামা কর্তৃক বর্ণিত শবে বরাতের বর্ণনাটিকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। আর কুরআনের অন্যান্য আয়াত দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে, এটি হচ্ছে লাইলাতুল ক্বদর। কুরআন দিয়েই কুরআনের তাফসীর গ্রহণ করার সুযোগ থাকলে সেটাই গ্রহণ করতে হবে। এটাই উলামায়ে উম্মতের ইজমাহ। তারপর কি আর এ বিষয়ে কোন বিতর্কের অবকাশ থাকে?
                কুরআনে শবে বরাতের কোন উল্লেখ নেই, এ বক্তব্যটি সুস্পষ্টভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এবার আমরা দেখি হাদিস শরীফে কী আছে। শবে বরাত সম্পর্কে বর্ণিত হাদিসগুলো দু প্রকারঃ
                প্রথমত, শবে বরাতে কতো রাকাত নামায পড়তে হবে, সূরা ইখলাস, আয়াতুল কুরসী প্রতি রাকাতে কতবার করে পড়তে হবে, ইত্যাদি এবং সে আমলগুলোর বিস্তারিত সওয়াবের ফিরিস্তি সংক্রান্ত হাদিসগুলো একেবারেই জাল এবং বানোয়াট।
                আর দ্বিতীয় প্রকার হাদিসগুলো, এ রাতের ফযীলত, ইবাদতের গুরুত্ব, ইত্যাদি বিষয়ক। এ সব হাদিসের কোনটাই সহীহ হিসাবে প্রমাণিত হয়নি। বরং সবগুলোই যইফ (দুর্বল)। তবে, মউজু (জাল বা বানোয়াট)নয়। এখানে একটি বিষয় পরিস্কার হওয়া দরকার। সিহাহ সিত্তার (ছয়টি গ্রন্থের)সবগুলো হাদিসই কি সহীহ? হাদিস বিশারদগণ প্রায় একমত যে, বুখারী ও মসলিম – এ দুটো গ্রন্হের সবগুলো হাদিসই সহীহ পর্যায়ের। কোন যইফ (দুর্বল) হাদিসের অবকাশ নেই এ দুটো গ্রন্থে।
                আর বাকী ৪টি গ্রন্থের অধিকাংশ হাদিস সহীহ। তবে, বেশ কিছু সংখ্যক যইফ (দুর্বল) হাদিসও রয়েছে সেগুলোর মধ্যে। শবে বরাত সংক্রান্ত কোন একটি হাদিসও বুখারী ও মুসলিম গ্রন্থদ্বয়ে আসেনি। আর বাকি ৪টি গ্রন্থে বা অন্যান্য আরও কিছু গ্রন্থে এ সংক্রান্ত যে হাদিসগুলো এসেছে, তার একটিও সহীহ হাদিসের মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হতে পারেনি। শবে বরাত সংক্রান্ত কয়েকটি হাদিস, হাদিস বিশারদগণের মন্তব্য সহকারে উল্লেখ করা হলঃ
                ১. আলী (রাঃ)-এর বরাত দিয়ে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেছেনঃ “১৫ শা’বানের রাতে তোমরা বেশী বেশী করে ইবাদত কর, এবং দিনের বেলায় রোযা রাখ। এ রাতে আল্লাহ তা’আলা সূর্যাস্তের সাথে সাথেই দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন এবং বলতে থাকেনঃ ‘কে আছ আমার কাছে গুনাহ মাফ চাইতে? আমি তাকে মাফ করতে প্রস্তুত। কে আছ রিযক চাইতে? আমি তাকে রিযক দিতে প্রস্তুত। কে আছ বিপদগ্রস্ত? আমি তাকে বিপদমুক্ত করতে প্রস্তুত। কে আছ …’ এভাবে (বিভিন্ন প্রয়োজনের নাম নিয়ে) ডাকা হতে থাকে সুবহে সাদেক পর্যন্ত”। (ইবনে মাজাহ কর্তৃক হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে)।
                এ হাদিসটি যে আদৌ সহীহ নয়, সে ব্যাপারে মন্তব্য করতে গিয়ে প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ ইমাম হাফেজ শিহাব উদ্দিন তাঁর যাওয়ায়েদে ইবনে মাজাহ গ্রন্থে উল্লেখ করেন, হাদিসটির সনদ যইফ (দুর্বল), কারণ হাদিসটির সনদের মাঝখানে আবু বকর বিন আবু সাবরা নামে একজন রাবী (বর্ণনাকারী) অনির্ভরযোগ্য। এমনকি ইমাম আহমদ বিন হাম্বল এবং প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ ইবনু মাইন তার ব্যাপারে মন্তব্য করেছেনঃ “লোকটি মিথ্যা হাদিস রচনা করে থাকে।” (দেখুনঃ সুনান ইবনে মাজাহ, মন্তব্য ও সম্পাদনাঃ মুহাম্মদ ফুয়াদ আব্দুল বারী, পৃষ্ঠা ৪৪৪)।
                ২. আয়েশা (রাঃ)-এর বরাত দিয়ে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেনঃ “আমি এক রাতে দেখতে পাই যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমার পাশে নেই। আমি উনার সন্ধানে বের হলাম। দেখি যে তিনি জান্নাতুল বাকী (কবর স্থানে)অবস্থান করছেন। ঊর্ধ্বাকাশপানে তাঁর মস্তক ফেরানো। আমাকে দেখে বললেন, ‘আয়েশা, তুমি কি আশঙ্কা করেছিলে যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাঃ) তোমার প্রতি অবিচার করেছেন?’ আমি বললাম, ‘এমন ধারণা করিনি, তবে মনে করেছিলাম, আপনার অন্য কোন বিবির সান্নিধ্যে গিয়েছেন কিনা।’
                রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, ‘আল্লাহ তা’আলা ১৫ই শা’বানের রাতে দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন এবং কালব গোত্রের সমুদয় বকরীর সকল পশমের পরিমাণ মানুষকে মাফ করে দেন।’” (তিরমিজি ও ইবনে মাজাহ) ইমাম তিরমিজি হাদিসটি বর্ণনা করে নিজেই মন্তব্য করেছেনঃ আয়েশা (রাঃ)-এর বরাত দিয়ে বর্ণিত এই হাদিসটি হাজ্জাজ বিন আয়তাআহ্ ছাড়া আর কেউ বর্ণনা করেছেন বলে জানা নেই।
                ইমাম বোখারী বলেছেনঃ এ হাদিসটি যইফ (দুর্বল) হাজ্জাজ বিন আয়তাআহ্ বর্ণনা করেছেন ইয়াহ্ইয়া বিন আবি কাসির থেকে। অথচ হাজ্জাজ ইয়াহ্তইয়া থেকে আদৌ কোন হাদিস শুনেননি। ইমাম বোখারী আরও বলেছেনঃ এমনকি ইয়াহ্ইয়া বিন আবি কাসিরও রাবী ওরওয়া থেকে আদৌ কোন হাদিস শুনেননি। (দেখুনঃ জামে’ তিরমিজী, সাওম অধ্যায়, মধ্য শা’বানের রাত, পৃষ্ঠা ১৬৫-১৬৮)।
                ৩. আবু মুসা আশ’আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ)বলেছেন, “১৫-ই শা’বানের রাতে আল্লাহ তা’আলা নিচে নেমে আসেন এবং সকল মানুষকেই মাফ করে দেন। তবে মুশরিককে এবং মানুষের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টিকারীকে মাফ করেন না” (ইবনে মাজাহ)। এ হাদিসটির ব্যাপারে হাফেজ শিহাব উদ্দিন তাঁর যাওয়ায়েদে ইবনে মাজাহ গ্রন্থে উল্লেখ করেনঃ এর সনদ যইফ (দুর্বল)। একজন রাবী (বর্ণনাকারী) আব্দুল্লাহ বিন লাহইয়াহ্ নির্ভরযোগ্য নন। আরেকজন রাবী ওয়ালিদ বিন মুসলিম তাফলীসকারী (সনদের মাধ্যে হেরফের করেতে অভ্যস্ত) হিসেবে পরিচিত।
                প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ আসসিন্দী বলেছেনঃ আরেকজন রাবী আদদাহহাক কখনও আবু মুসা থেকে হাদিস শুনেননি। শবে বরাত সংক্রান্ত বর্ণিত সবগুলো হাদিসের সনদের মধ্যেই এ জাতীয় দুর্বলতা বিদ্যমান থাকার কারণে একটি হাদিসও সহীহ’র মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হতে পারেনি। লিখার কলেবর বৃদ্ধি হওয়ার আশংকায় আমরা বাকী হাদিসগুলো বা তদসংক্রান্ত মন্তব্য উল্লেখ করা থেকে বিরত থাকছি। এবার প্রশ্ন আসে যইফ (দুর্বল) হাদিসের ভিত্তিতে কোন আমল করা যায় কি-না। অধিকাংশ মুহাদ্দেসীনের মতে যইফ হাদিসের উপর কোন আমল করা শরীয়তে জায়েয নেই।
                অধিকাংশ ফুকাহা আইম্মায়ে কেরাম যইফ (দুর্বল) হাদিস দ্বারা শর্ত সাপেক্ষে আমল করা যেতে পারে বলে মত দিয়েছেন। শর্তগুলো নিম্নরূপঃ • ১.খুব বেশী যইফ (দুর্বল) পর্যায়ের না হওয়া। •২. শুধুমাত্র ফাযায়েল অধ্যায়ের হওয়া। অর্থাৎ ফাজায়েল অধ্যায় ব্যতীত অন্য কোন অধ্যায়ের যইফ হাদিসের ভিত্তিতে কোন প্রকার আমল করা যাবে না। •৩. আমল করার সময় সহীহভাবে প্রমাণীত হওয়ার ধারনা না রাখা। অর্থাৎ, এ ধারণা রাখতে হবে যে হাদিসটি সহীহভাবে প্রমাণীত নয়। • ৪. কুরআন ও সহীহ হাদিসের বক্তব্যের সাথে সাংঘর্ষিক না হওয়া। অর্থাৎ, সংশ্লিষ্ট যইফ হাদিসটি কুরআন বা সহীহ হাদিসের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। উক্ত মূলনীতিগুলোর আলোকে শবে বরাতের আমল করা যেতে পারে বলে অনেক ওলামায়ে কেরাম মতামত দিয়েছেন। এখন প্রশ্ন আসে আমল করতে হলে কিভাবে করা যাবে।
                প্রথমতঃ ব্যক্তিগতভাবে বিছু ইবাদত বন্দেগী করা যেতে পারে। সে জন্যে মসজিদে সমবেত হয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে পালন করার জন্য ওয়াজ নসীহত, যিকির ইত্যাদির আয়োজন করা যাবেনা। (দেখুনঃ ফাতাওয়া শামীয়া, ইমাম বিন আবেদীন, পৃষ্ঠা ৬৪২) কারণ, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এবং সাহাবায়ে কিরামগণ এমনটি করেননি। তাই সে ত্বরিকার বাইরে ইবাদতের আনুষ্ঠানিকতা আবিষ্কার করলে সেটা হয়ে যাবে বিদ’আত।
                দ্বিতীয়তঃ হায়াত, মউত, রিযক ইত্যাদির ফয়সালা এ রাতে হয়, এটা বিশ্বাস করা যাবে না। কারণ, এসব ফয়সালা যে লাইলাতুল ক্বদরে হয়, তা সুস্পষ্টভাবে কুরআন ও সহীহ হাদিস দ্বারা প্রমাণীত।
                তৃতীয়তঃ আমাদের দেশে (বাংলাদেশে) আলোকসজ্জা ও আতশবজির যে তামাশা করা হয়, তা প্রকাশ্যে বিদ’আত। সে ধারণা থেকে কোন এলাকায় এ রাতের নাম হচ্ছে বাতির রাত। এ সব ধারণা ইসলামী শরীয়তে হিন্দুদের দিওয়ালী অনুষ্ঠান থেকে এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন উপ-মহাদেশের প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (রাহঃ)। হালুয়া-রুটি বিলি-বণ্টনের কার্যক্রমও বিদ’আত। (দেখুনঃ ফাতাওয়া শামীয়া, ইমাম বিন আবেদীন, পৃষ্ঠা ৬৪২) ইবাদতের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। এসব অনেক আমল শিয়াদের কাছ থেকে উপ-মহাদেশের মুসলমানরা গ্রহণ করেছেন বলে মুফতী রশীদ আহমদ লুদিয়ানী উল্লেখ করেছেন। (দেখুনঃ সাত মাসায়েলঃ শবে বরাতে শিয়াদের ভ্রষ্টতা, পৃষ্ঠা ৩৯-৪২)।
                চতুর্থতঃ নফল ইবাদতের জন্য সারা রাত মসজিদে এসে জেগে থাকা রাসূল (সাঃ)-এর সুন্নত বিরোধী। তিনি নফল ইবাদত ঘরে করতে এবং ফরয ইবাদত জামা’আতের সাথে মসজিদে আদায় করতে তাগিদ করেছেন। আর সারা রাত জেগে থেকে ইবাদত করাটাও সুন্নত বিরোধী। প্রিয় নবীজী (সাঃ) সব রাতেরই কিছু অংশ ইবাদত করতেন, আর কিছু অংশ ঘুমাতেন। উনার জীবনে এমন কোন রাতের খবর পাওয়া যায়না, যাতে তিনি একদম না ঘুমিয়ে সারা রাত জেগে ইবাদত করেছেন।
                পঞ্চমতঃ শবে বরাতের দিনের বেলায় রোযা রাখার হাদিস একেবারেই দুর্বল। এর ভিত্তিতে আমল করা যায়না বলে পাকিস্তানের প্রখ্যাত আলেম ও ফকীহ মুফতী মাওলানা তাকী উসমানী সাহেবের সুস্টষ্ট ফাতাওয়া রয়েছে। শবে বরাত, কবর যিয়ারত, ইত্যাদি অনেক আমলেরই কোন সহীহ দলিল না থাকার কারণে উপমহাদেশর প্রখ্যাত আলেম ও ফকীহ মুফতী রশীদ আহমদ লুধিয়নবী, হাক্বীকুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (রাহঃ)-এর সাথে বহু বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেছেন। মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (রাহঃ) শেষের দিকে কিছু কিছু বিষয় অবশ্য প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
                ষষ্ঠতঃ শবে বরাতের রোযার পক্ষে যেহেতু কোন মজবুত দলিল নেই, তাই যারা নফল রোযা রাখতে চান, তারা আইয়ামে বীজের তিনটি রোযা – ১৩, ১৪, ১৫ – রাখতে পারেন। এর পক্ষে সহীহ হাদিসের দলিল রয়েছে। শুধু একটি না রেখে এ তিনটি বা তার চেয়েও বেশী রোযা রাখতে পারলে আরও ভাল। কারণ, শা’বান মাসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সবচেয়ে বেশী পরিমাণ নফল রোযা রেখেছেন।
                আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদিসের উপর আমল করার তাওফীক দান করুণ। আমীন।

                ( গাজওয়া হিন্দের ট্রেনিং) https://dawahilallah.com/showthread.php?9883

                Comment


                • #9

                  আমাদের সামনে এসে গেছে অতি ফজিলতের একটি মাস মাহে শা’বান। প্রিয় নবীজী(সাঃ) এমাসেও দু’আ করতেন যেভাবে রজব মাসেও দু’আ করতেনঃ “আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফী রজব ওয়া শা’বান ওয়া বাল্লিগনা রামাযান।” অর্থঃ “হে আল্লাহ! আমাদের জন্য রজব ও শা’বান মাসকে বরকতময় করে দিন এবং আমাদেরকে রমজান মাস পর্যন্ত পৌছেঁ দিন। আমীন।” শা’বান মাসে তিনি অকনকগুলো নফল রোজা রাখতেন।
                  আয়েশা (রাঃ) বর্ণনা করেনঃ “আমি প্রিয় নবী (সাঃ) কে রমজান ছাড়া আর কোন পূর্ণ মাসের রোজা রাখতে দেখিনি। আর শা’বান মাস ছাড়া আর কোন মাসে এত অধিক পরিমাণ নফল রোজা রাখতে দেখিনি।” (বোখারি ও মুসলিম)।
                  গাহাবী উসামা বিন যায়েদ (রাঃ) বর্ণন করেনঃ আমি প্রিয় নবীজী (সাঃ) কে বললামঃ “ইয়া রাসুলাল্লাহ (সাঃ)! শা’বান মাসে আপনি যত নফল রোজা রাখেন অন্য কোন মাসে আপনাকে এত নফল রোযা রাখতে দেখিনা।” প্রিয় নবী (সাঃ) এরশাদ করলেনঃ “রজব ও রমজান – এ দুটো মাসের মঝখানের এ মাসটি সম্পর্কে অনেকেই আসলে গাফেল হয়ে থাকে। এ মাসে মানুষের আমল (-এর বার্ষিক রিপোর্ট) আল্লাহর কাছে পেশ করা হয়। আমি চাই আমার আমল যখন পেশ করা হয়, আমি যেন তখন রোযা অবস্থায় থকি।” (আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে খোযাইমা)।
                  তবে শা’বান মাসের ১৫ তারিখে শুধু একটি রোযা রাখার ব্যাপারে কোন সহীহ হাদিস পাওয়া যায় না। আর আমাদের সামনে আসছে মধ্য শা’বানের রাতটি যা অনেক দেশে শবে বরাত নামে পরিচিত। এ রাতের ফজিলত ও আমল সম্পর্কে অন্যান্য বৎসরের মত এবারও আপনাদের খেদমতে কিছু বিস্তারিত আলোচনা পেশ করতে চাই। আল্লাহ আমাদেরকে তাওফিক দিন। আমীন।
                  প্রত্যেক মুসলমানই অবগত আছেন, ইসলামী শরীয়তের মূল উৎস দু’টি – কুরআন ও হাদিস। কুরআন ও হাদিসে যে ইবাদতের যতটুকু গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, তার চেয়ে একটু বেশী বা কম গুরুত্ব দেয়ার অধিকার কেন মুসলিমের নেই। শবে বরাত নামক বিষয়টি কুরআন-হাদিসে আদৌ উল্লেখ করা হয়নি। এটাই হচ্ছে উম্মতের মুহাক্বিক আলিম ও ইমামদের মতামত।
                  কেউ কেউ দাবী করে থাকেন সুরা আদ-দুখানে “লাইলাতুম মুবারাকাহ” অর্থাৎ বরকতময় রাত বলতে শবে বরাতকেই বোঝানো হয়েছে। এ ব্যাপারে তাফসীরে ইবনে কাসীর, কুরতুবী, ইত্যাদি রেফারেন্স দেয়া হয়। আসুন আমরা চেক করে দেখি নির্ভরযোগ্য তাফসীর গ্রন্থসমূহে এ ব্যাপারে কি বলা হয়েছে। লিখার কলেবর যাতে বৃদ্ধি না হয়ে যায়, সেজন্য যথাসম্ভব তাফসীরের সার-সংক্ষেপ পেশ করা হচ্ছে।
                  ইমাম ইবনে কাসীর (রাহঃ)বলেনঃ বরকতময় রাত বলতে সুরা আদ-দুখানে শবে ক্বদর-কে বোঝানো হয়েছে। কারণ, এখানে কুরআন নাযিলের কথা বলা হয়েছে। আর সেটাতো সূরা ক্বদর-এ স্পস্ট করেই বলা আছে। আর কুরআন যে রমজান মাসেই নাযিল হয়েছে সেটাও সুস্পস্ট করে বলা হয়েছে সূরা বাক্বারায়।
                  তিনি আরও বলেনঃ কেউ যদি বলে যে বরকতময় রাত বলতে মধ্য শা’বানের রাত-কে বোঝানে হয়েছে – যেমনটি ইকরামা কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে – তাহলে সে প্রকৃত সত্য থেকে অনেক দূরে অবস্থান করল। শবে বরাতে মনুষের হায়াত, মউত ও রিযকের বার্ষিক ফয়সালা হওয়া সংক্রান্ত যে হাদিসটি উসমান বিন মোহাম্মদ কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে, সে সম্পর্কে তিনি বলেছেন, হাদিসটি মুরসাল। অর্থাৎ, হাদিসের প্রথম বর্ণনাকারী হিসাবে যে সাহাবী রাসূলুল্লাহ (সাঃ) থেকে হাদিসটি শুনেছেন, তার কোন উল্লেখ নেই। ফলে এমন দূর্বল হাদিস দিয়ে কুরআন ও সহীহ হাদিসের অকাট্য বক্তব্যকে খণ্ডন করা যায়না। (বিস্তারিত জানার জন্য দেখুনঃ তাফসীর ইবনে কাসীর, খণ্ডঃ ৭, পৃষ্ঠা ৩১৬১)।
                  ইমাম কুরতুবী বলেনঃ “বরকতময় রাত্রি বলতে ক্বুদরতের রাতকে বোঝানো হয়েছে, যদিও কেউবা বলেছেন সেটা মধ্য শা’বানের রাত। ইকরামাও বলেছেন সেটি হচ্ছে মধ্য শা’বানের রাত। তবে প্রথম মতটি অধিকতর শুদ্ধ। কেননা আল্লাহ বলেছেনঃ ‘আমি এই কুরআনকে লাইলাতুল ক্বদর-এ নাযিল করেছি।’” এ প্রসঙ্গে মানুষের হায়াত, মউত, রিযক, ইত্যাদির ফয়সালা শবে বরাতে সম্পন্ন হয় বলে যে রেওয়ায়েত এসেছে, সেটাকে তিনি অগ্রহণযোগ্য বলে বর্ণনা করেন। তিনি পূণরায় উল্লেখ করেনঃ “সহীহ-শুদ্ধ কথা হচ্ছে, এ রাতটি লাইলাতুল ক্বদর।”
                  অতঃপর তিনি প্রখ্যাত ফকীহ কাযী আবু বকর ইবনুল আরাবীর উদ্ধৃতি পেশ করেনঃ জমহুর আলীমদের মতামত হচ্ছে, এ রাতটি লাইলাতুল ক্বদর। কেউ কেউ বলতে চেয়েছেন এটা মধ্য শা’বানের রাত। এ কথাটি একেবারেই বাতিল। কারণ, আল্লাহ স্বয়ং তাঁর অকাট্য বাণী কুরআনে বলেছেনঃ “রমজান হচ্ছে ঐ মাস যে মাসে কুরআন নাযিল করা হয়েছে।” এখানে তিনি মাস উল্লেখ করে দিয়েছেন। আর বরকতময় রাত বলে লাইলাতুল ক্বদরকে উল্লেখ করে দিয়েছেন। যে ব্যক্তি এ মাসটিকে রমজান থেকে সরিয়ে অন্য মাসে নিয়ে যায়, সে মূলতঃ আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে বসে। মধ্য শা’বানের রাতটির ফজিলত এবং এ রাতে হায়াত-মউতের ফয়সালা সংক্রান্ত কোন একটি হাদিসও সহীহ এবং নির্ভরযোগ্য নয়। কাজেই কেউ যেন সেগুলোর প্রতি দৃষ্টিপাত না করে। (বিস্তারিত জানার জন্য দেখুনঃ তাফসীরে কুরতুবী, খণ্ডঃ ১৬, পৃষ্ঠাঃ ১২৬-১২৮)।
                  ইমাম তাবারী তাফসীরে তাবারীতে বরকতময় রাতের ব্যাখায় উল্লেখ করেনঃ কাতাদাহ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত এ রাতাট লাইলাতুল ক্বদর-এর রাত। প্রতি বৎসরের যাবতীয় কিছুর ফায়সালা এ রাতেই সম্পন্ন করা হয়। অতঃপর ইকরামা কর্তৃক বর্ণিত মধ্য শা’বানের মতামতটিও উল্লেখ করেন। পরিশেষে তিনি মন্তব্য করেনঃ লাইলাতুল ক্বদর-এর মতটাই সহীহ। কারণ, এখানে কুরআন নাযিলের কথা বলা হয়েছে।(বিস্তারিত জানার জন্য দেখুনঃ তাফসীরে তাবারী, খণ্ডঃ ১১, পৃষ্ঠা ২১২-২২৩)।
                  আল্লামা মুহাম্মদ আল আমীন আশ-শিনকীতী (রাহঃ) সূরা আদ-দুখানের বরকতময় রাতের তাফসীরে বলেনঃ এটি হচ্ছে রমজান মাসের ক্বদরের রাত। মধ্য শা’বানের রাত হিসাবে সেটিকে বুঝানো হয়েছে মনে করা – যেমনটি ইকরামা কর্তৃক বর্ণিত রেওয়ায়েতে বলা হয়েছে – মিথ্যা দাবী ছাড়া আর কিছু নয়। এ দাবীটি কুরআনের সুস্পষ্ট বক্তব্যের বিরোধী । নিঃসন্দেহে হকের বিপরীত যে কোন কথাই বাতিল।
                  কুরআনের সুস্পষ্ট বক্তব্যের বিরোধী যে হাদিসগুলো কেউ কেউ বর্ণনা করে থাকেন, যাতে বলা হয় এ রাতটি হচ্ছে মধ্য শা’বানের রাত, সেই হাদিসগুলোর কোন ভিত্তি নেই। সেগুলোর কোনটার সনদই সহীহ নয়। ইবনুল আরাবী সহ মুহাক্বীক আ’ইম্মায়ে কেরাম এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে বলেছেন, বরই আফসোস ঐসব মুসলমানদের জন্য যারা কুরআনের সুস্পষ্ট বিরোধিতা করে কুরআন ও সহীহ হাদিসের দলীল ছাড়াই।(বিস্তারিত দেখুনঃ আদওয়াউল বায়ান, খণ্ডঃ ৭, পৃষ্ঠাঃ ৩১৯)।
                  উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম মুফতী শফী (রাহঃ) এ বিষয়ে মা’আরেফুল কুরআনে বলেনঃ বরকতময় রাত বলতে অধিকাংশ তাফসীরবিদের মতে এখানে শবে ক্বদর বুঝানো হয়েছে যা রমজান মাসের শেষ দশকে হয়। কেউ কেউ আলোচ্য আয়াতে বরকতের রাত্রির অর্থ নিয়েছেন শবে বরাত। কিন্তু এটা শুদ্ধ নয়। কেননা, এখানে সর্বাগ্রে কুরআন অবতরনের কথা বলা হয়েছে। আর কুরআন যে রমজান মাসে নাযিল হয়েছে, তা কুরআন দ্বারাই প্রমাণিত। (বিস্তারিত জানার জন্য দেখুনঃ মা’আরেফুল কুরআন, পৃষ্ঠা ১২৩৫)।
                  প্রিয় পাঠক, লক্ষ্য করুন, প্রতিটি তাফসীরেই ইকরামা কর্তৃক বর্ণিত শবে বরাতের বর্ণনাটিকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। আর কুরআনের অন্যান্য আয়াত দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে, এটি হচ্ছে লাইলাতুল ক্বদর। কুরআন দিয়েই কুরআনের তাফসীর গ্রহণ করার সুযোগ থাকলে সেটাই গ্রহণ করতে হবে। এটাই উলামায়ে উম্মতের ইজমাহ। তারপর কি আর এ বিষয়ে কোন বিতর্কের অবকাশ থাকে?
                  কুরআনে শবে বরাতের কোন উল্লেখ নেই, এ বক্তব্যটি সুস্পষ্টভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এবার আমরা দেখি হাদিস শরীফে কী আছে। শবে বরাত সম্পর্কে বর্ণিত হাদিসগুলো দু প্রকারঃ
                  প্রথমত, শবে বরাতে কতো রাকাত নামায পড়তে হবে, সূরা ইখলাস, আয়াতুল কুরসী প্রতি রাকাতে কতবার করে পড়তে হবে, ইত্যাদি এবং সে আমলগুলোর বিস্তারিত সওয়াবের ফিরিস্তি সংক্রান্ত হাদিসগুলো একেবারেই জাল এবং বানোয়াট।
                  আর দ্বিতীয় প্রকার হাদিসগুলো, এ রাতের ফযীলত, ইবাদতের গুরুত্ব, ইত্যাদি বিষয়ক। এ সব হাদিসের কোনটাই সহীহ হিসাবে প্রমাণিত হয়নি। বরং সবগুলোই যইফ (দুর্বল)। তবে, মউজু (জাল বা বানোয়াট)নয়। এখানে একটি বিষয় পরিস্কার হওয়া দরকার। সিহাহ সিত্তার (ছয়টি গ্রন্থের)সবগুলো হাদিসই কি সহীহ? হাদিস বিশারদগণ প্রায় একমত যে, বুখারী ও মসলিম – এ দুটো গ্রন্হের সবগুলো হাদিসই সহীহ পর্যায়ের। কোন যইফ (দুর্বল) হাদিসের অবকাশ নেই এ দুটো গ্রন্থে।
                  আর বাকী ৪টি গ্রন্থের অধিকাংশ হাদিস সহীহ। তবে, বেশ কিছু সংখ্যক যইফ (দুর্বল) হাদিসও রয়েছে সেগুলোর মধ্যে। শবে বরাত সংক্রান্ত কোন একটি হাদিসও বুখারী ও মুসলিম গ্রন্থদ্বয়ে আসেনি। আর বাকি ৪টি গ্রন্থে বা অন্যান্য আরও কিছু গ্রন্থে এ সংক্রান্ত যে হাদিসগুলো এসেছে, তার একটিও সহীহ হাদিসের মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হতে পারেনি। শবে বরাত সংক্রান্ত কয়েকটি হাদিস, হাদিস বিশারদগণের মন্তব্য সহকারে উল্লেখ করা হলঃ
                  ১. আলী (রাঃ)-এর বরাত দিয়ে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেছেনঃ “১৫ শা’বানের রাতে তোমরা বেশী বেশী করে ইবাদত কর, এবং দিনের বেলায় রোযা রাখ। এ রাতে আল্লাহ তা’আলা সূর্যাস্তের সাথে সাথেই দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন এবং বলতে থাকেনঃ ‘কে আছ আমার কাছে গুনাহ মাফ চাইতে? আমি তাকে মাফ করতে প্রস্তুত। কে আছ রিযক চাইতে? আমি তাকে রিযক দিতে প্রস্তুত। কে আছ বিপদগ্রস্ত? আমি তাকে বিপদমুক্ত করতে প্রস্তুত। কে আছ …’ এভাবে (বিভিন্ন প্রয়োজনের নাম নিয়ে) ডাকা হতে থাকে সুবহে সাদেক পর্যন্ত”। (ইবনে মাজাহ কর্তৃক হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে)।
                  এ হাদিসটি যে আদৌ সহীহ নয়, সে ব্যাপারে মন্তব্য করতে গিয়ে প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ ইমাম হাফেজ শিহাব উদ্দিন তাঁর যাওয়ায়েদে ইবনে মাজাহ গ্রন্থে উল্লেখ করেন, হাদিসটির সনদ যইফ (দুর্বল), কারণ হাদিসটির সনদের মাঝখানে আবু বকর বিন আবু সাবরা নামে একজন রাবী (বর্ণনাকারী) অনির্ভরযোগ্য। এমনকি ইমাম আহমদ বিন হাম্বল এবং প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ ইবনু মাইন তার ব্যাপারে মন্তব্য করেছেনঃ “লোকটি মিথ্যা হাদিস রচনা করে থাকে।” (দেখুনঃ সুনান ইবনে মাজাহ, মন্তব্য ও সম্পাদনাঃ মুহাম্মদ ফুয়াদ আব্দুল বারী, পৃষ্ঠা ৪৪৪)।
                  ২. আয়েশা (রাঃ)-এর বরাত দিয়ে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেনঃ “আমি এক রাতে দেখতে পাই যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমার পাশে নেই। আমি উনার সন্ধানে বের হলাম। দেখি যে তিনি জান্নাতুল বাকী (কবর স্থানে)অবস্থান করছেন। ঊর্ধ্বাকাশপানে তাঁর মস্তক ফেরানো। আমাকে দেখে বললেন, ‘আয়েশা, তুমি কি আশঙ্কা করেছিলে যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাঃ) তোমার প্রতি অবিচার করেছেন?’ আমি বললাম, ‘এমন ধারণা করিনি, তবে মনে করেছিলাম, আপনার অন্য কোন বিবির সান্নিধ্যে গিয়েছেন কিনা।’
                  রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, ‘আল্লাহ তা’আলা ১৫ই শা’বানের রাতে দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন এবং কালব গোত্রের সমুদয় বকরীর সকল পশমের পরিমাণ মানুষকে মাফ করে দেন।’” (তিরমিজি ও ইবনে মাজাহ) ইমাম তিরমিজি হাদিসটি বর্ণনা করে নিজেই মন্তব্য করেছেনঃ আয়েশা (রাঃ)-এর বরাত দিয়ে বর্ণিত এই হাদিসটি হাজ্জাজ বিন আয়তাআহ্ ছাড়া আর কেউ বর্ণনা করেছেন বলে জানা নেই।
                  ইমাম বোখারী বলেছেনঃ এ হাদিসটি যইফ (দুর্বল) হাজ্জাজ বিন আয়তাআহ্ বর্ণনা করেছেন ইয়াহ্ইয়া বিন আবি কাসির থেকে। অথচ হাজ্জাজ ইয়াহ্তইয়া থেকে আদৌ কোন হাদিস শুনেননি। ইমাম বোখারী আরও বলেছেনঃ এমনকি ইয়াহ্ইয়া বিন আবি কাসিরও রাবী ওরওয়া থেকে আদৌ কোন হাদিস শুনেননি। (দেখুনঃ জামে’ তিরমিজী, সাওম অধ্যায়, মধ্য শা’বানের রাত, পৃষ্ঠা ১৬৫-১৬৮)।
                  ৩. আবু মুসা আশ’আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ)বলেছেন, “১৫-ই শা’বানের রাতে আল্লাহ তা’আলা নিচে নেমে আসেন এবং সকল মানুষকেই মাফ করে দেন। তবে মুশরিককে এবং মানুষের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টিকারীকে মাফ করেন না” (ইবনে মাজাহ)। এ হাদিসটির ব্যাপারে হাফেজ শিহাব উদ্দিন তাঁর যাওয়ায়েদে ইবনে মাজাহ গ্রন্থে উল্লেখ করেনঃ এর সনদ যইফ (দুর্বল)। একজন রাবী (বর্ণনাকারী) আব্দুল্লাহ বিন লাহইয়াহ্ নির্ভরযোগ্য নন। আরেকজন রাবী ওয়ালিদ বিন মুসলিম তাফলীসকারী (সনদের মাধ্যে হেরফের করেতে অভ্যস্ত) হিসেবে পরিচিত।
                  প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ আসসিন্দী বলেছেনঃ আরেকজন রাবী আদদাহহাক কখনও আবু মুসা থেকে হাদিস শুনেননি। শবে বরাত সংক্রান্ত বর্ণিত সবগুলো হাদিসের সনদের মধ্যেই এ জাতীয় দুর্বলতা বিদ্যমান থাকার কারণে একটি হাদিসও সহীহ’র মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হতে পারেনি। লিখার কলেবর বৃদ্ধি হওয়ার আশংকায় আমরা বাকী হাদিসগুলো বা তদসংক্রান্ত মন্তব্য উল্লেখ করা থেকে বিরত থাকছি। এবার প্রশ্ন আসে যইফ (দুর্বল) হাদিসের ভিত্তিতে কোন আমল করা যায় কি-না। অধিকাংশ মুহাদ্দেসীনের মতে যইফ হাদিসের উপর কোন আমল করা শরীয়তে জায়েয নেই।
                  অধিকাংশ ফুকাহা আইম্মায়ে কেরাম যইফ (দুর্বল) হাদিস দ্বারা শর্ত সাপেক্ষে আমল করা যেতে পারে বলে মত দিয়েছেন। শর্তগুলো নিম্নরূপঃ • ১.খুব বেশী যইফ (দুর্বল) পর্যায়ের না হওয়া। •২. শুধুমাত্র ফাযায়েল অধ্যায়ের হওয়া। অর্থাৎ ফাজায়েল অধ্যায় ব্যতীত অন্য কোন অধ্যায়ের যইফ হাদিসের ভিত্তিতে কোন প্রকার আমল করা যাবে না। •৩. আমল করার সময় সহীহভাবে প্রমাণীত হওয়ার ধারনা না রাখা। অর্থাৎ, এ ধারণা রাখতে হবে যে হাদিসটি সহীহভাবে প্রমাণীত নয়। • ৪. কুরআন ও সহীহ হাদিসের বক্তব্যের সাথে সাংঘর্ষিক না হওয়া। অর্থাৎ, সংশ্লিষ্ট যইফ হাদিসটি কুরআন বা সহীহ হাদিসের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। উক্ত মূলনীতিগুলোর আলোকে শবে বরাতের আমল করা যেতে পারে বলে অনেক ওলামায়ে কেরাম মতামত দিয়েছেন। এখন প্রশ্ন আসে আমল করতে হলে কিভাবে করা যাবে।
                  প্রথমতঃ ব্যক্তিগতভাবে বিছু ইবাদত বন্দেগী করা যেতে পারে। সে জন্যে মসজিদে সমবেত হয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে পালন করার জন্য ওয়াজ নসীহত, যিকির ইত্যাদির আয়োজন করা যাবেনা। (দেখুনঃ ফাতাওয়া শামীয়া, ইমাম বিন আবেদীন, পৃষ্ঠা ৬৪২) কারণ, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এবং সাহাবায়ে কিরামগণ এমনটি করেননি। তাই সে ত্বরিকার বাইরে ইবাদতের আনুষ্ঠানিকতা আবিষ্কার করলে সেটা হয়ে যাবে বিদ’আত।
                  দ্বিতীয়তঃ হায়াত, মউত, রিযক ইত্যাদির ফয়সালা এ রাতে হয়, এটা বিশ্বাস করা যাবে না। কারণ, এসব ফয়সালা যে লাইলাতুল ক্বদরে হয়, তা সুস্পষ্টভাবে কুরআন ও সহীহ হাদিস দ্বারা প্রমাণীত।
                  তৃতীয়তঃ আমাদের দেশে (বাংলাদেশে) আলোকসজ্জা ও আতশবজির যে তামাশা করা হয়, তা প্রকাশ্যে বিদ’আত। সে ধারণা থেকে কোন এলাকায় এ রাতের নাম হচ্ছে বাতির রাত। এ সব ধারণা ইসলামী শরীয়তে হিন্দুদের দিওয়ালী অনুষ্ঠান থেকে এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন উপ-মহাদেশের প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (রাহঃ)। হালুয়া-রুটি বিলি-বণ্টনের কার্যক্রমও বিদ’আত। (দেখুনঃ ফাতাওয়া শামীয়া, ইমাম বিন আবেদীন, পৃষ্ঠা ৬৪২) ইবাদতের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। এসব অনেক আমল শিয়াদের কাছ থেকে উপ-মহাদেশের মুসলমানরা গ্রহণ করেছেন বলে মুফতী রশীদ আহমদ লুদিয়ানী উল্লেখ করেছেন। (দেখুনঃ সাত মাসায়েলঃ শবে বরাতে শিয়াদের ভ্রষ্টতা, পৃষ্ঠা ৩৯-৪২)।
                  চতুর্থতঃ নফল ইবাদতের জন্য সারা রাত মসজিদে এসে জেগে থাকা রাসূল (সাঃ)-এর সুন্নত বিরোধী। তিনি নফল ইবাদত ঘরে করতে এবং ফরয ইবাদত জামা’আতের সাথে মসজিদে আদায় করতে তাগিদ করেছেন। আর সারা রাত জেগে থেকে ইবাদত করাটাও সুন্নত বিরোধী। প্রিয় নবীজী (সাঃ) সব রাতেরই কিছু অংশ ইবাদত করতেন, আর কিছু অংশ ঘুমাতেন। উনার জীবনে এমন কোন রাতের খবর পাওয়া যায়না, যাতে তিনি একদম না ঘুমিয়ে সারা রাত জেগে ইবাদত করেছেন।
                  পঞ্চমতঃ শবে বরাতের দিনের বেলায় রোযা রাখার হাদিস একেবারেই দুর্বল। এর ভিত্তিতে আমল করা যায়না বলে পাকিস্তানের প্রখ্যাত আলেম ও ফকীহ মুফতী মাওলানা তাকী উসমানী সাহেবের সুস্টষ্ট ফাতাওয়া রয়েছে। শবে বরাত, কবর যিয়ারত, ইত্যাদি অনেক আমলেরই কোন সহীহ দলিল না থাকার কারণে উপমহাদেশর প্রখ্যাত আলেম ও ফকীহ মুফতী রশীদ আহমদ লুধিয়নবী, হাক্বীকুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (রাহঃ)-এর সাথে বহু বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেছেন। মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (রাহঃ) শেষের দিকে কিছু কিছু বিষয় অবশ্য প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
                  ষষ্ঠতঃ শবে বরাতের রোযার পক্ষে যেহেতু কোন মজবুত দলিল নেই, তাই যারা নফল রোযা রাখতে চান, তারা আইয়ামে বীজের তিনটি রোযা – ১৩, ১৪, ১৫ – রাখতে পারেন। এর পক্ষে সহীহ হাদিসের দলিল রয়েছে। শুধু একটি না রেখে এ তিনটি বা তার চেয়েও বেশী রোযা রাখতে পারলে আরও ভাল। কারণ, শা’বান মাসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সবচেয়ে বেশী পরিমাণ নফল রোযা রেখেছেন।
                  আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদিসের উপর আমল করার তাওফীক দান করুণ। আমীন।

                  ( গাজওয়া হিন্দের ট্রেনিং) https://dawahilallah.com/showthread.php?9883

                  Comment

                  Working...
                  X