শবে বরাত সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমানিত
এতদিন পর্যন্ত শবে বরাতকে কেন্দ্র করে একশ্রেণীর মানুষ বাড়াবাড়িতে লিপ্ত ছিল। তারা এ রাতকে উপলক্ষ বানিয়ে নানা অনুচিত কাজকর্ম ও রসম-রেওয়াজে লিপ্ত হচ্ছিল। উলামায়ে কেরাম সবসময়ই এসবের প্রতিবাদ করেছেন এবং এখনো করছেন।
ইদানিং আবার এক শ্রেণীর মানুষের মধ্যে দেখা যাচ্ছে ছাড়াছাড়ির প্রবণতা। তাদের দাবি হল,
"ইসলামে শবে বরাত বলে কিছু নেই। এ বিষয়ে যত রেওয়ায়াত আছে সব মওযু বা জয়ীফ। তাই এ সব রেওয়াত অনুযায়ী আমল করা এবং শবে বরাতকে বিশেষ ফজিলতপুর্ণ মনে করা শরিয়তের দৃষ্টিতে জায়েয নয়।"
তারা এসব বক্তব্য সম্বলিত ছোট ছোট পুস্তিকা ও লিফলেট তৈরি করে মানুষের মধ্যে বিলি করে থাকে।
বাস্তব কথা এই যে, আগের বাড়াবাড়িও যেমন সঠিক ছিল না, তেমনি এখনকার ছাড়াছাড়ি সঠিক নয়। ইসলাম ভারসাম্যপুর্ণ দ্বীন এবং এর সকল শিক্ষা সরল ও প্রান্তিকতা মুক্ত।
শবে বরাত সম্পর্কে সঠিক ও ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান হল, এ রাতের ফজিলত সহীহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। সম্মিলিত কোন রূপ না দিয়ে এবং এই রাত উদযাপনের বিশেষ কোনো পন্থা উদ্ভাবন না করে বেশী ইবাদত করাও নির্ভরযোগ্য রেওয়ায়াত দ্বারা প্রমানিত। এই রাতকে অন্য সব সাধারণ রাতের মত মনে করা এবং এ রাতের ফজিলত সম্পর্কে যত হাদিস এসেছে সবগুলোকে মওযু বা জয়ীফ মনে করা যেমন ভুল, তেমনি এ রাতকে শবে কদরের মতো বা তার চেয়েও বেশী ফজিলতপূর্ণ মনে করাও একটি ভিত্তিহীন ধারণা।
এখানে শবে বরাতের ( পনের শাবানের রাত) ফজিলত ও করণীয় বিষয়ক কিছু হাদীস যথাযথ উদ্ধৃিতি ও সনদের নির্ভরযোগ্যতার
বিবরণ উল্লেখ করা হল।
عن مالك بن يخامر، عن معاذ بن جبل، عن النبي صلى الله عليه وسلم، قال يطلع الله الى خلقه في ليلة النصف من شعبان، فيغفر لجميع خلقه الا لمشرك او مشاحن.
رواه ابن حبان وغيره، ورجاله ثقات، واسناده متصل على مذهب مسلم الذي هو مذهب الجمهور في المعنعن، ولم يجزم الذهبي بأن مكحولا لم يلق مالك بن يخامر كما زعم و انما قاله على سبيل الحسان.
راجع سير اعلام النبلاء ج 5 ص 156
মুয়াজ ইবনে জাবাল ( রা.) বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তায়ালা অর্ধ-শাবানের রাতে (শাবানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতে) সৃষ্টির দিকে (রহমতের) দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতিত সবাইকে ক্ষমা করে দেন।
এই হাদীস থেকে প্রমান হচ্ছে যে, এ রাতে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে রহমত ও মাগফিরাতের দ্বার ব্যাপকভাবে উন্মুক্ত হয়। কিন্তু শিরকী কাজ-কর্মে লিপ্ত ব্যক্তি এবং অন্যের ব্যাপারে হিংসা-বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যক্তি এই ব্যাপক রহমত ও সাধারণ ক্ষমা থেকেও মাহরুম ( বন্চিত) থাকে
যখন কোনো বিশেষ সময়ের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে রহমত ও মাগফিরাতের ঘোষণা হয় তখন তার অর্থই এই হয় যে, এই সময়ে এমন সব নেক আমলের ব্যাপারে যত্মবান হতে হবে, যার মাধ্যমে আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাতের উপযুক্ত হওয়া যায় আর ওই সব গোনাহ থেকে বিরত থাকতে হবে, যার কারণে মানুষ আল্লাহ তায়ালার রহমত ও মাগফিরাত থেকে বন্চিত হয়।
যেহেতু উপরোক্ত হাদীস এবং অন্যান্য হাদীসে অর্ধ-শাবানের রাতে ব্যাপক মাগফিরাতের ঘোষণা আছে, তাই এ রাতটি অনেক আগে থেকেই শবে বরাত তথা মুক্তির রজনী নামে প্রসিদ্ধ। কেননা, এ রাতে গোনাহ থেকে ও গোনাহর অশুভ পরিণাম থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
যদি শবে বরাতের ফজিলতের বিষয়ে দ্বিতীয় কোনো হাদিস না থাকত, তবে এই হাদিসটিই এ রাতের ফজিলত সাব্যস্ত হওয়ার জন্য এবং এ রাতে মাগফিরাতের উপযোগী নেক আমলের গুরুত্ব প্রমানিত হওয়ার জন্য যথেষ্ট হত। অথচ হাদিসের কিতাবসমূহে নির্ভরযোগ্য সনদে আরো একাধিক হাদিস বর্ণিত হয়েছে।
হাদীসটির সনদ বিষয়ক আলোচনাঃ-
উপরোক্ত হাদীসটি অনেক নির্ভরযোগ্য হাদীসের কিতাবে নির্ভরযোগ্য সনদে বর্ণিত হয়েছে। ইমাম ইবনে হিব্বান তার কিতাবুস সহীহ-এ, যা সহীহ ইবনে হিব্বান নামেই সমধিক প্রসিদ্ধ (১৩/৪৮১) এই হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন। এটি এই কিতাবের ৫৬৬৫ নং হাদিস। এ ছাড়া ইমাম বায়হাকী রহ. শুয়াবুল ঈমান গ্রন্থে (৩/৩৮২ হাদীসঃ ৩৮৩৩) ; ইমাম তবরানী আল-মুজামুল কাবীর ও আল-মুজামুল আওসাত গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। এ ছাড়া আরো বহু হাদীসের ইমাম নিজ নিজ কিতাবে হাদীসটি উল্লেখ করেছেন।
হদীসটির সনদ সহীহ। এজন্যেই ইমাম ইবনের হিব্বান একে কিতাবুস সহীহ এ বর্ণনা করেছেন। কেউ কেউ হাদীসটিকে পারিভাষিক দৃষ্টিকোণ থেকে হাসান বলেছেন; কিন্তু হাসান সহীহ হাদীস তথা নির্ভরযোগ্য হাদীসেরই একটি প্রকার।
ইমাম ইবনে মুনযিরী, ইবনে রজব, নুরুদ্দীন হাইসামী, কাসতাল্লানী, যুরকানী এবং অন্যান্য হাদীস- বিশারদ এই হাদিসটিকে আমলযোগ্য বলেছেন। দেখুন, আততারগীব ওয়াততারহীব ২/১১৮; ৩৪৫৯; লাতাইফুল মাআরিফ ১৫১; মাজমাউয যাওয়াইদ ৮/৬৫; শারহুল মাওয়াহিবিল লাদুন্নিয়া ১০/৫৬১
বর্তমান সময়ের প্রসিদ্ধ ব্যক্তি শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানী রহ . সিলসিলাতুল আহাদীসিস সাহীহা ৩/১৩৫-১৩৯ এ এই হাদিসের সমর্ধনে আরো আটটি হাদীস উল্লেখ করার পর লেখেন-
وجملة القول أن الحديث بمجموع هذه الطرق صحيح بلا ريب، والصحة تثبت بأقل منها عددا، ما دامت سالمة من الضعف الشديد، كما هو الشأن في هذا الحديث.
"এসব রেওয়ায়াত দ্বারা প্রমানিত হয় যে, এই হাদীস নিঃসন্দেহে সহীহ"
এরপর শায়খ আলবানী ওইসব লোকের বক্তব্য খন্ডন করেন, যারা কোন খোঁজ খবর ছাড়াই বলে দেন যে, শবে বরাতের ব্যাপারে কোনো সহীহ হাদীস নেই।
( নির্বাচিত প্রবন্ধ; মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক) মারকাজুদ্দাওয়া আলইসলামীয়া
এতদিন পর্যন্ত শবে বরাতকে কেন্দ্র করে একশ্রেণীর মানুষ বাড়াবাড়িতে লিপ্ত ছিল। তারা এ রাতকে উপলক্ষ বানিয়ে নানা অনুচিত কাজকর্ম ও রসম-রেওয়াজে লিপ্ত হচ্ছিল। উলামায়ে কেরাম সবসময়ই এসবের প্রতিবাদ করেছেন এবং এখনো করছেন।
ইদানিং আবার এক শ্রেণীর মানুষের মধ্যে দেখা যাচ্ছে ছাড়াছাড়ির প্রবণতা। তাদের দাবি হল,
"ইসলামে শবে বরাত বলে কিছু নেই। এ বিষয়ে যত রেওয়ায়াত আছে সব মওযু বা জয়ীফ। তাই এ সব রেওয়াত অনুযায়ী আমল করা এবং শবে বরাতকে বিশেষ ফজিলতপুর্ণ মনে করা শরিয়তের দৃষ্টিতে জায়েয নয়।"
তারা এসব বক্তব্য সম্বলিত ছোট ছোট পুস্তিকা ও লিফলেট তৈরি করে মানুষের মধ্যে বিলি করে থাকে।
বাস্তব কথা এই যে, আগের বাড়াবাড়িও যেমন সঠিক ছিল না, তেমনি এখনকার ছাড়াছাড়ি সঠিক নয়। ইসলাম ভারসাম্যপুর্ণ দ্বীন এবং এর সকল শিক্ষা সরল ও প্রান্তিকতা মুক্ত।
শবে বরাত সম্পর্কে সঠিক ও ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান হল, এ রাতের ফজিলত সহীহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। সম্মিলিত কোন রূপ না দিয়ে এবং এই রাত উদযাপনের বিশেষ কোনো পন্থা উদ্ভাবন না করে বেশী ইবাদত করাও নির্ভরযোগ্য রেওয়ায়াত দ্বারা প্রমানিত। এই রাতকে অন্য সব সাধারণ রাতের মত মনে করা এবং এ রাতের ফজিলত সম্পর্কে যত হাদিস এসেছে সবগুলোকে মওযু বা জয়ীফ মনে করা যেমন ভুল, তেমনি এ রাতকে শবে কদরের মতো বা তার চেয়েও বেশী ফজিলতপূর্ণ মনে করাও একটি ভিত্তিহীন ধারণা।
এখানে শবে বরাতের ( পনের শাবানের রাত) ফজিলত ও করণীয় বিষয়ক কিছু হাদীস যথাযথ উদ্ধৃিতি ও সনদের নির্ভরযোগ্যতার
বিবরণ উল্লেখ করা হল।
عن مالك بن يخامر، عن معاذ بن جبل، عن النبي صلى الله عليه وسلم، قال يطلع الله الى خلقه في ليلة النصف من شعبان، فيغفر لجميع خلقه الا لمشرك او مشاحن.
رواه ابن حبان وغيره، ورجاله ثقات، واسناده متصل على مذهب مسلم الذي هو مذهب الجمهور في المعنعن، ولم يجزم الذهبي بأن مكحولا لم يلق مالك بن يخامر كما زعم و انما قاله على سبيل الحسان.
راجع سير اعلام النبلاء ج 5 ص 156
মুয়াজ ইবনে জাবাল ( রা.) বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তায়ালা অর্ধ-শাবানের রাতে (শাবানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতে) সৃষ্টির দিকে (রহমতের) দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতিত সবাইকে ক্ষমা করে দেন।
এই হাদীস থেকে প্রমান হচ্ছে যে, এ রাতে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে রহমত ও মাগফিরাতের দ্বার ব্যাপকভাবে উন্মুক্ত হয়। কিন্তু শিরকী কাজ-কর্মে লিপ্ত ব্যক্তি এবং অন্যের ব্যাপারে হিংসা-বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যক্তি এই ব্যাপক রহমত ও সাধারণ ক্ষমা থেকেও মাহরুম ( বন্চিত) থাকে
যখন কোনো বিশেষ সময়ের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে রহমত ও মাগফিরাতের ঘোষণা হয় তখন তার অর্থই এই হয় যে, এই সময়ে এমন সব নেক আমলের ব্যাপারে যত্মবান হতে হবে, যার মাধ্যমে আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাতের উপযুক্ত হওয়া যায় আর ওই সব গোনাহ থেকে বিরত থাকতে হবে, যার কারণে মানুষ আল্লাহ তায়ালার রহমত ও মাগফিরাত থেকে বন্চিত হয়।
যেহেতু উপরোক্ত হাদীস এবং অন্যান্য হাদীসে অর্ধ-শাবানের রাতে ব্যাপক মাগফিরাতের ঘোষণা আছে, তাই এ রাতটি অনেক আগে থেকেই শবে বরাত তথা মুক্তির রজনী নামে প্রসিদ্ধ। কেননা, এ রাতে গোনাহ থেকে ও গোনাহর অশুভ পরিণাম থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
যদি শবে বরাতের ফজিলতের বিষয়ে দ্বিতীয় কোনো হাদিস না থাকত, তবে এই হাদিসটিই এ রাতের ফজিলত সাব্যস্ত হওয়ার জন্য এবং এ রাতে মাগফিরাতের উপযোগী নেক আমলের গুরুত্ব প্রমানিত হওয়ার জন্য যথেষ্ট হত। অথচ হাদিসের কিতাবসমূহে নির্ভরযোগ্য সনদে আরো একাধিক হাদিস বর্ণিত হয়েছে।
হাদীসটির সনদ বিষয়ক আলোচনাঃ-
উপরোক্ত হাদীসটি অনেক নির্ভরযোগ্য হাদীসের কিতাবে নির্ভরযোগ্য সনদে বর্ণিত হয়েছে। ইমাম ইবনে হিব্বান তার কিতাবুস সহীহ-এ, যা সহীহ ইবনে হিব্বান নামেই সমধিক প্রসিদ্ধ (১৩/৪৮১) এই হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন। এটি এই কিতাবের ৫৬৬৫ নং হাদিস। এ ছাড়া ইমাম বায়হাকী রহ. শুয়াবুল ঈমান গ্রন্থে (৩/৩৮২ হাদীসঃ ৩৮৩৩) ; ইমাম তবরানী আল-মুজামুল কাবীর ও আল-মুজামুল আওসাত গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। এ ছাড়া আরো বহু হাদীসের ইমাম নিজ নিজ কিতাবে হাদীসটি উল্লেখ করেছেন।
হদীসটির সনদ সহীহ। এজন্যেই ইমাম ইবনের হিব্বান একে কিতাবুস সহীহ এ বর্ণনা করেছেন। কেউ কেউ হাদীসটিকে পারিভাষিক দৃষ্টিকোণ থেকে হাসান বলেছেন; কিন্তু হাসান সহীহ হাদীস তথা নির্ভরযোগ্য হাদীসেরই একটি প্রকার।
ইমাম ইবনে মুনযিরী, ইবনে রজব, নুরুদ্দীন হাইসামী, কাসতাল্লানী, যুরকানী এবং অন্যান্য হাদীস- বিশারদ এই হাদিসটিকে আমলযোগ্য বলেছেন। দেখুন, আততারগীব ওয়াততারহীব ২/১১৮; ৩৪৫৯; লাতাইফুল মাআরিফ ১৫১; মাজমাউয যাওয়াইদ ৮/৬৫; শারহুল মাওয়াহিবিল লাদুন্নিয়া ১০/৫৬১
বর্তমান সময়ের প্রসিদ্ধ ব্যক্তি শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানী রহ . সিলসিলাতুল আহাদীসিস সাহীহা ৩/১৩৫-১৩৯ এ এই হাদিসের সমর্ধনে আরো আটটি হাদীস উল্লেখ করার পর লেখেন-
وجملة القول أن الحديث بمجموع هذه الطرق صحيح بلا ريب، والصحة تثبت بأقل منها عددا، ما دامت سالمة من الضعف الشديد، كما هو الشأن في هذا الحديث.
"এসব রেওয়ায়াত দ্বারা প্রমানিত হয় যে, এই হাদীস নিঃসন্দেহে সহীহ"
এরপর শায়খ আলবানী ওইসব লোকের বক্তব্য খন্ডন করেন, যারা কোন খোঁজ খবর ছাড়াই বলে দেন যে, শবে বরাতের ব্যাপারে কোনো সহীহ হাদীস নেই।
( নির্বাচিত প্রবন্ধ; মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক) মারকাজুদ্দাওয়া আলইসলামীয়া
Comment