"শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড"। দেশে বহুল প্রচলিত একটি প্রবাদ বাক্য। বোদ্ধা মহলের অনেকে শিক্ষার শুরুতে 'সু' সংযোজন করেন।
ভিন্নতার মূল কারণ চিন্তাশীলদের বিভিন্নতা। তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই। বিপত্তি অন্য জায়গায়। মূলত শিখা শিখানো থেকেই
শিক্ষার উৎপত্তি। স্রষ্টার সৃষ্টি অস্তিত্বে আসার পর থেকেই শুরু হয় শিক্ষার যাত্রা। তাই শিক্ষার ইতিহাস অনেক পুরোনো। এভাবে যুগের
পর যুগ অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে শিক্ষা আজকের সভ্যতায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে খ্রিষ্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দী থেকে
আজ পর্যন্ত আমরা তিন ধরণের শিক্ষা ব্যবস্থা দেখতে পাই। এটিই আজকের আলোচ্য বিষয়।
প্রথম শিক্ষা ব্যবস্থা রাসূল(স.)র নবুওয়ত প্রাপ্তির সময় থেকে নিয়ে ১৭'শ শতাব্দী পর্যন্ত। দ্বিতীয় প্রকার শিক্ষা ব্যবস্থার যাত্রা ১৭'শ
শতাব্দী থেকে। আরেকটি শিক্ষা ব্যবস্থার উদয় হয় ১৮'শ শতাব্দী থেকে। প্রথম প্রকার শিক্ষা ব্যবস্থার অবকাঠামো তৈরি হয় ধর্মীয় ও জাগতিক শিক্ষা পাঠদানের মাধ্যমে। ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া হতো একজন মানুষের মূল জরুরি বিষয় ধর্ম হওয়ার কারণে। জাগতিক শিক্ষা দেওয়া হতো এ ধর্ম পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠিত করতে ও সে অনুযায়ী পৃথিবী শাসন করতে। আদতে এটিই হলো সবদিক দিয়ে পরিপূর্ণ ও আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা। প্রকৃত অর্থে এ জ্ঞান অর্জনই মহান রবের নির্দেশ। এ শিক্ষার একদিকে রয়েছে ঈমান ও তাকওয়ার নূর। অপর
দিকে আছে সম্মান, গৌরব ও মর্যাদা। এ শিক্ষা অর্জন করেই একদিকে যেমন আবু বকর, উমর, উসমান ও আলীরা ইলমের সর্বোচ্ছ
আসন অলংকৃত করেছেন, অন্যদিকে ঠিক সেভাবেই পুরো অর্ধ দুনিয়ায় প্রতাপ ও দাপটের সাথে রাজত্ব কায়েম করেছেন। দাপিয়ে বেড়িয়েছেন এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত। যাদের সম্মুখে মাথা নোয়াতে হয়েছে সুপার পাওয়ার নামধারী কায়সার ও কিসরার হর্তাকর্তাদের। যাদের হুংকারে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে ত্বাগুতের সেই সাজানো মসনদ। ইতিহাসের পাতায় আজো যারা অমর হয়ে আছেন সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে। রাদিয়াল্লাহু আনহুম।
এ শিক্ষা অর্জন করেই একদিকে যেমন ইবনে কাসীর ইবনে কাসীর হয়েছেন, একই বিদ্যালয়ের একই শিক্ষা অর্জন করেই সুলতান
সালাহুদ্দীন সালাহুদ্দীন হয়েছেন। এ শিক্ষা একজনকে যেভাবে শায়খুল ইসলাম বানিয়েছে, ঠিক সেভাবেই সুলতান মুহাম্মদ ফাতিহকে পরিণত করেছে বীর সেনানয়কে। যে শিক্ষা সায়্যিদ আহমদকে হাজার বছরের মুজাদ্দিদ বানিয়েছে, সেভাবেই আওরঙ্গজেবকে বানিয়েছে ইসলামের এক অতন্দ্র প্রহরী। বারশত বছর পর্যন্ত যার অবদানে মুসলিমরা জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রতিটি শাখায় নিজেদের পান্ডিত্য ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন। আজকের ইউরোপ-আমেরিকার মতো সেদিন কর্ডোবা-আল হামরার প্রাসাদ ছিল ইউরোপসহ সমগ্র বিশ্বের জ্ঞান তালাশের
একমাত্র স্থান। ষোড়শ শতাব্দীর আগ পর্যন্ত এরা তো অন্ধকারেই ছিল।
সন্দেহ নেই এমন শিক্ষাই এনে দিতে পারে মুসলিমদের হারানো গৌরব। এমন শিক্ষায় হোয়াইট হাউসে, লালবাগে ও সংসদ ভবনে
কালেমা খচিত পতাকা উড়াতে পারে। বিগত সময়ে এ শিক্ষা ব্যবস্থা বিলুপ্ত হলেও সম্প্রতি এর নবজাগরণ শুরু হয়েছে। আশা করি
তৃতীয় বিশ্বের সতর্ক প্রহরিরা শিক্ষা ব্যবস্থায় এ থিউরিই ফলো করবে। যা কুফফারদের ঘুম হারাম করে দিতে বাধ্য।
দ্বিতীয় প্রকার শিক্ষা ব্যবস্থা হলো যা বৃটিশ প্রনোদিত। এ শিক্ষায় ধর্মীয় জ্ঞান উপেক্ষিত। জাগতিক শিক্ষাই এর মূল অবকাঠামো। ইতিহাসের নামে বিকৃত ইতিহাস উপস্থাপন, সংস্কৃতির নামে অপসংস্কৃতির প্রচার-প্রসার, অসাম্প্রদায়িক চেতনার নামে ইসলাম ধর্মকে
হেয় প্রতিপন্ন করণ, সহ শিক্ষার নামে নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশা, নারী-পুরুষ তত্ত্বের আড়ালে কোমলমতি শিশুদের মনে যৌনতার বিষবৃক্ষ রুপণ, নারীদের শিক্ষিতকরণ ও নারী-পুরুষ সমান অধিকারের নামে মা জাতিকে রাস্তায় নামিয়ে পণ্য সামগ্রীর ন্যায় প্রদর্শন, আধুনিক শিক্ষার আড়ালে মুসলিম শিক্ষার্থীদের হিন্দুত্ববাদ ও নাস্তিকতার পাঠ শিক্ষাদান, ডিজিটাল ও আধুনিক শিক্ষার নামে সভ্যতার
নামে বিলেতী ও পশ্চিমা সভ্যতার বিস্তার, সর্বোপরি আধুনিকায়নের নামে ইসলামকে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে
ইসলামের প্রতি জাতির বিতৃষ্ণা সৃষ্টি করণ ও পশ্চিমা সভ্যতার আদলে সমাজ ও রাষ্ট্র গঠন এ শিক্ষাব্যবস্তার মূল উদ্দেশ্য।
এ শিক্ষা মানবজাতিকে উন্নতি ও প্রযুক্তির সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌছে দিলেও তাদের চারিত্রিক অবনতিও ঠিক ততটা নিচে নেমে গেছে।
অপরাধ দমনের পরিবর্তে আরো নতুন ও কার্যকর পন্থাসমূহ আবিষ্কার করেছে। পূর্বে চোর-ডাকাতরা সমাজের নিকৃষ্টতম শ্রেণী পরিগণিত হলেও এখন এরাই সমাজের নেতৃত্ব দিচ্ছে। পূর্বে সমাজের উৎকৃষ্ট শ্রেণী সমাজের প্রতিনিধি হলেও এখন সমাজের প্রতিনিধি হচ্ছে সমাজের
সবচেয়ে বড় ডাকাতরা। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে এম পি ও মন্ত্রিত্বের পদে উপবেশনকারী আজকের সাংসদ ও মন্ত্রীরাই হলো
আজকের সমাজের সবচেয়ে বড় ডাকাত।
চুরি, ডাকাতি, সুদ, ঘুষ, দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, ধর্ষন, মিথ্যা, প্রতারণা, গুম, খুন, সম্পদ লুটপাট ও আত্মসাৎ, সার্চ, জুলুম, নির্যাতন, আত্মহত্যা, অবৈধ গ্রেফতার, পরকিয়া, চোরা কারবারি, সীমান্তে সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনীর ছত্রছায়ায় অবৈধ চালান ও পাচার,
মদ, গাঁজা, ইয়াবা ও মাদকের রমরমা বানিজ্য, নিজ হাতে মা বাবাকে হত্যা, মোটর সাইকেলের জন্য মা বারার গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া, বৃদ্ধ মা বাবার সাথে বৃদ্ধাশ্রমের নামে অমানবিক আচরণ , মিথ্যা ও প্রতারণাপূর্ণ নিউজ সরবরাহ, বিনোদনের নামে পত্রিকায় অবৈধ ও কুরুচিপূর্ণ বিজ্ঞাপন, বিনোদনের নামে অশ্লীল মুভি, নাটক ও সিনেমা তৈরি, প্রকাশ্যে বাদ্য-বাজনার মতো অনৈতিক কার্যকলাপের
আয়োজন, পর্নোগ্রাফির মতো নিকৃষ্ট শিল্পের মহড়া, ব্যাক্তি স্বাধীনতার নামে ধর্ম নিষিদ্ধকরণ, ধর্মীয় স্বাধীনতার আড়ালে মসজিদে-মন্দিরে সরব উপস্থিতি, বাক স্বাধীনতার আড়ালে রাসূল(স.)র কুৎসা রটনা, মত প্রকাশের স্বাধীনতার আড়ালে ইসলাম ধর্মের বিষোধগার, অবাধ ব্যক্তি মালিকানার নামে অবৈধ সম্পদ কুক্ষিগত করণ, সমাজের রন্ধেরন্ধে নাস্তিকতার অনুপ্রবেশ, অবৈধ বিচার-আদালত, আন্তর্জাতিক অপরাধ, অস্ত্র পরিক্ষার নামে নিহীহ নাগরিক হত্যা, সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলার নামে মা-বোনদের রক্ত ঝরানো, জঙ্গিবাদ দমনের নামে আল্লাহর শ্রেষ্ঠ বান্দাদের অকথ্য নির্যাতন, রিমান্ড, ক্রসফায়ার ও ফাঁসী, আল্লাহর পরিবর্তে সুপার পাওয়ারদের রব মানা, কাফিরদের বন্ধু ও অভিভাবকরূপে গ্রহন করা, এ ছাড়া আরো হাজারো রকমের অপরাধ এ শিক্ষা ব্যবস্থারই ফসল। ঈমান ও তাকওয়ার ছোঁয়া না থাকলে এ শিক্ষা মুসলিমদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে। তাই এ শিক্ষায় বাধ্যতামূলক ধর্মীয় শিক্ষা ও পাঠ্যসূচী পরিবর্তন সময়ের দাবী। তার জন্য এর মাথায় বসে থাকা থাবা বাবাদের ঘাড় ধাক্কা দিয়ে তদস্থলে বিচক্ষণ, বুদ্ধিমান, ইসলামপ্রিয়, চিন্তাশীল গবেষকদের বসানো প্রয়োজন।
আরেকটি শিক্ষা ব্যবস্থার উদয় হয় ১৮৬৬ সালে। এ শিক্ষা ব্যবস্থার স্বরূপ আমার সামনে উন্মোচিত থাকলেও অনেকের কাছে তা
স্পষ্ট নয়। তাই এর ব্যাপারে কোনো বিরূপ মন্তব্য করতে গেলে আমাকে প্রশ্নের সম্মোখীন হবে হবে। তবুও দু'টি কথা বলে যাই। আমিও
এ শিক্ষা ব্যবস্তার একজন নগন্য ছাত্র। তাই আশা করি আত্মসংশোধন দোষের হবে না। এ শিক্ষা ব্যবস্থা ধর্মীয় শিক্ষাকে যতটা না গুরুত্ব দিয়েছে, জাগতিক শিক্ষাকে তারচেয়েও বেশি অবহেলা করেছে। এটি মানুষের মাঝে ছড়িয়েছে ঈমান ও তাকওয়ার নূর, জাতিকে
উপহার দিয়েছে একদল সৎ ও চরিত্রবান লোক, কিন্তু জাতির সেই হারানো সম্মান ফিরিয়ে দিতে পারে নি। পারে নি জাতিকে মর্যাদার
উচ্ছ আসনে পৌছে দিতে, যেখানে বসে আমাদের পূর্বসূরিরা একদিন পৃথিবী শাসন করেছিলেন।
এ শিক্ষা ব্যবস্থা আলেমের ইলমকে পঙ্গু বানিয়েছে। তাই আজ ইলমগুলো কিতাবের মলাটেই আবদ্ধ। বাস্তব অনুশীলন অস্তিত্বে
আসেনি। এ কারণেই ১৯৪৭ সালে স্বাধীন রাষ্ট্র পাকিস্তান গঠন হলেও মুসলিমদের আবাসভূমি এ দেশ দারুল ইসলামের গৌরব অর্জন
করতে পারে নি। পারবে কিভাবে, আলেমরা দুনিয়া বলে সে স্থান বর্জন করে তুলে দিয়েছিলেন সেক্যুলারদের হাতে। দেশ চালানোর সে হিম্মতটা করতে পারেন নি। একি অবস্থা ১৯৭১ সালে জন্ম নেওয়া লাল-সবুজের এ দেশের। মুক্তিযুদ্ধের শেখদেরকে মুরীদ বানলেও
পারেন নি দেশকে ইসলামের আদলে সাজাতে। পারেন নি দেশকে সোনালী অতীতে ফিরিয়ে নিতে , মানবতার পরতে পরতে এ বিষ্ময়কর সভ্যতা ছড়িয়ে দিতে। তাই হাজারো-কোটি মুসলিম ও আলেম-ওলামা এ ভূমিতে অবস্থান করলেও দেশের মালিক পক্ষ ঠিকই মুরতাদ সেক্যুলার। কারণ দু'টি ১. এটি তাঁদের দৃষ্টিতে দুনিয়াদারী। দুনিয়ার পেছনে ছোটা। ২. আলেমরা চাইলেও পারবেন না, কারণ বিশ্বায়নের
এ পৃথিবীতে সুপার পাওয়ারদের সাথে টেক্কা দিয়ে রাষ্ট্র চালানোর নূন্যতম বা বাল্যশিক্ষাও তাঁদের কাছে নেই। এ সবের জন্য জাগতিক
শিক্ষায় পূর্ণ দক্ষতা প্রয়োজন যাকে আলেম সমাজ যুগ যুগ ধরে হেয় ও অবহেলা করে আসছেন। ফলাফলে আজ আলেম সমাজের
কর্মের ক্ষেত্র মসজিদ-মাদরাসাতেই সীমাবদ্ধ। বিশ্বাস না হলে আপনি ৮০% মাদরাসা ছাত্রকে জিজ্ঞেস করতে পারেন।
তাই এ মহান সমাজের প্রতি আমার জানার বিষয় হলো, রাসূল(স.)র ২৭ টি গযওয়া ও ৪৭ টি সারিয়্যার হাই কমান্ডিং কি ওহীর ইলম
ছিল না কি জাগতিক দক্ষতা? যুদ্ব প্রশিক্ষণ, তীর-তলোয়ার, বর্শা-নেযা, মিনজানিক, ঘোড়দৌড়, অবরোধ, পশ্চাৎদাবন, পরিখা খনন,
ইয়াহুদ, নাসারা ও মুশরিকদের সাথে লেনদেন ও বোঝাপড়া— এ গুলো কি ওহী ছিল না জাগতিক লাইনে অভিজ্ঞ একজন মহামানবের অনন্য বৈশিষ্ট্য? ছাত্রদের আধুনিক অস্ত্র প্রশিক্ষণ ও যু্দ্ধ প্রশিক্ষণ প্রদান যদি সমস্যা সৃষ্টিকারি ও জঙ্গিবাদ হয়, কেন হাদিসে নিক্ষেপ ও
প্রশিক্ষণের ফজিলত ও পরিত্যাগ করার ভয়াভহতা বর্ণিত হয়েছে? বাংলা ভাষায় দক্ষতা অর্জন যদি খারাপ হয়, কেন ফারসী ও উর্দু
ভাষায় দক্ষতা অর্জন? কোরআন কি মাতৃভাষা শিক্ষার নির্দেশ দেয় না? ইংরেজী ভাষায় দক্ষতা অর্জন যদি অবৈধ হয় কেন রাসূল (স.)
ইবনে সাবেত(রাযি.) কে এক বর্ণনায় হিব্রু ও এক বর্ণনায় সুরয়ানী ভাষা শিখতে বলেছিলেন? কেন আজকের প্রধানমন্ত্রী জাগতিক
শিক্ষায় শিক্ষিত হবে? কেন আজকের মন্ত্রী পরিষদ জাগতিক শিক্ষায় শিক্ষিত হবে? ইসলাম যদি অর্থব্যবস্থা সমর্থন করে, তাহলে কেন আজকের অর্থব্যবস্থা সেক্যুলারদের হাতে? জাগতিক শিক্ষা প্রয়োজন না হলে কেন মামলা-মোকদ্দমায় বৃটিশ প্রণোদিত শিক্ষাব্যবস্থার ধ্বজাধারীদের কাছে ধর্ণা দিতে হয়? জাগতিক শিক্ষা দুনিয়া দুনিয়া বলে গলা ফাটালেও কেন অসুস্থ হলে জাগতিক শিক্ষায় শিক্ষিত
ডাক্তারের কাছে দৌড়ান? পারেন না মাদরাসার গন্ডিতে আবদ্ধ থাকতে? চিকিৎসার জন্য ইন্ডিয়া-সিঙ্গাপুর কেন? জাগতিক শিক্ষা জরুরি
না হলে কেন কাফেরদের বানানো প্রযুক্তি ব্যবহার করেন? দেখুন না মোবাইল-বিদ্যুৎ ইউজ না করে, গাড়িতে না চড়ে, বিমানে না উড়ে
থাকতে পারেন কিনা? এ গুলো কিছুই ধর্মীয় শিক্ষা দিয়ে আসে নি। সব জাগতিক শিক্ষার ফসল। এ রকম আর কয়টি বলব? এমন
কোনো ডিপার্মেন্ট নাই, যেখানে আমরা জাগতিক শিক্ষায় শিক্ষিতদের সরনাপন্ন হচ্ছি না।
তাহলে কেন দুনিয়া দুনিয়া বলে এটিকে পিছনে ফেলে রাখা? কেন মুখের কথাকে কাজে পরিণত না করা? এড়িয়ে যেতে পারবেন
না। সম্ভব না। তাই সাথে নিয়ে চলুন। আমাদের একদল এমন তৈরি করুন। কলেজ-বিশ্ব বিদ্যালয়ের এ শিক্ষাকে নিজেদের আদলে
সাজিয়ে নিন। সব ধরণের আধুনিক ও অস্ত্র প্রশিক্ষণ দিয়ে আমাদের সজ্জিত করুন। দেখবেন, আপনাদের অধীনে আমরাই সাজাব
ইমাম মাহদীর প্রতীক্ষিত দুনিয়া। প্রশ্ন হলো আদৌ কি এ শিক্ষাব্যবস্তায় এমন বিপর্যয় বিদ্যমান? এর উত্তরে কে কী বলবে জানি না। তবে আমার সাফ কথা — আদৌ এ শিক্ষাব্যবস্থায় এমন বিপর্যয় বিদ্যমান। তারপরও প্রতিষ্ঠালগ্নের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় প্রতিষ্ঠাতাদের এমন উদ্দেশ্য ছিল না। তাই বাস্তববাদীরা বসে থাকেন নি। চালিয়ে গেছেন নিজেদের সাধনা। "এ উম্মাহকে দু'টি বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে
হবে— জিহাদ ও ইজতিহাদ"। জিহাদ মানে সবাই বুঝি। যাকে আমরা ছেড়ে দিয়েছি। আর ইজতিহাদ মানে শরয়ী না। আধুনিক ও
অত্যাধুনিক, প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের সকল শাখায় পান্ডিত্য অর্জন। আলী মিয়া নদবী(রহ.) র উক্তি। পরিশেষে ইমাম মালেক (রহ.) র উক্তি
স্বরণ করিয়ে দিতে চায়। "এ উম্মাহর সফলতা সে পথেই যে পথে সফল হয়েছেন পূর্বসূরিরা"।
ভিন্নতার মূল কারণ চিন্তাশীলদের বিভিন্নতা। তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই। বিপত্তি অন্য জায়গায়। মূলত শিখা শিখানো থেকেই
শিক্ষার উৎপত্তি। স্রষ্টার সৃষ্টি অস্তিত্বে আসার পর থেকেই শুরু হয় শিক্ষার যাত্রা। তাই শিক্ষার ইতিহাস অনেক পুরোনো। এভাবে যুগের
পর যুগ অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে শিক্ষা আজকের সভ্যতায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে খ্রিষ্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দী থেকে
আজ পর্যন্ত আমরা তিন ধরণের শিক্ষা ব্যবস্থা দেখতে পাই। এটিই আজকের আলোচ্য বিষয়।
প্রথম শিক্ষা ব্যবস্থা রাসূল(স.)র নবুওয়ত প্রাপ্তির সময় থেকে নিয়ে ১৭'শ শতাব্দী পর্যন্ত। দ্বিতীয় প্রকার শিক্ষা ব্যবস্থার যাত্রা ১৭'শ
শতাব্দী থেকে। আরেকটি শিক্ষা ব্যবস্থার উদয় হয় ১৮'শ শতাব্দী থেকে। প্রথম প্রকার শিক্ষা ব্যবস্থার অবকাঠামো তৈরি হয় ধর্মীয় ও জাগতিক শিক্ষা পাঠদানের মাধ্যমে। ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া হতো একজন মানুষের মূল জরুরি বিষয় ধর্ম হওয়ার কারণে। জাগতিক শিক্ষা দেওয়া হতো এ ধর্ম পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠিত করতে ও সে অনুযায়ী পৃথিবী শাসন করতে। আদতে এটিই হলো সবদিক দিয়ে পরিপূর্ণ ও আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা। প্রকৃত অর্থে এ জ্ঞান অর্জনই মহান রবের নির্দেশ। এ শিক্ষার একদিকে রয়েছে ঈমান ও তাকওয়ার নূর। অপর
দিকে আছে সম্মান, গৌরব ও মর্যাদা। এ শিক্ষা অর্জন করেই একদিকে যেমন আবু বকর, উমর, উসমান ও আলীরা ইলমের সর্বোচ্ছ
আসন অলংকৃত করেছেন, অন্যদিকে ঠিক সেভাবেই পুরো অর্ধ দুনিয়ায় প্রতাপ ও দাপটের সাথে রাজত্ব কায়েম করেছেন। দাপিয়ে বেড়িয়েছেন এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত। যাদের সম্মুখে মাথা নোয়াতে হয়েছে সুপার পাওয়ার নামধারী কায়সার ও কিসরার হর্তাকর্তাদের। যাদের হুংকারে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে ত্বাগুতের সেই সাজানো মসনদ। ইতিহাসের পাতায় আজো যারা অমর হয়ে আছেন সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে। রাদিয়াল্লাহু আনহুম।
এ শিক্ষা অর্জন করেই একদিকে যেমন ইবনে কাসীর ইবনে কাসীর হয়েছেন, একই বিদ্যালয়ের একই শিক্ষা অর্জন করেই সুলতান
সালাহুদ্দীন সালাহুদ্দীন হয়েছেন। এ শিক্ষা একজনকে যেভাবে শায়খুল ইসলাম বানিয়েছে, ঠিক সেভাবেই সুলতান মুহাম্মদ ফাতিহকে পরিণত করেছে বীর সেনানয়কে। যে শিক্ষা সায়্যিদ আহমদকে হাজার বছরের মুজাদ্দিদ বানিয়েছে, সেভাবেই আওরঙ্গজেবকে বানিয়েছে ইসলামের এক অতন্দ্র প্রহরী। বারশত বছর পর্যন্ত যার অবদানে মুসলিমরা জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রতিটি শাখায় নিজেদের পান্ডিত্য ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন। আজকের ইউরোপ-আমেরিকার মতো সেদিন কর্ডোবা-আল হামরার প্রাসাদ ছিল ইউরোপসহ সমগ্র বিশ্বের জ্ঞান তালাশের
একমাত্র স্থান। ষোড়শ শতাব্দীর আগ পর্যন্ত এরা তো অন্ধকারেই ছিল।
সন্দেহ নেই এমন শিক্ষাই এনে দিতে পারে মুসলিমদের হারানো গৌরব। এমন শিক্ষায় হোয়াইট হাউসে, লালবাগে ও সংসদ ভবনে
কালেমা খচিত পতাকা উড়াতে পারে। বিগত সময়ে এ শিক্ষা ব্যবস্থা বিলুপ্ত হলেও সম্প্রতি এর নবজাগরণ শুরু হয়েছে। আশা করি
তৃতীয় বিশ্বের সতর্ক প্রহরিরা শিক্ষা ব্যবস্থায় এ থিউরিই ফলো করবে। যা কুফফারদের ঘুম হারাম করে দিতে বাধ্য।
দ্বিতীয় প্রকার শিক্ষা ব্যবস্থা হলো যা বৃটিশ প্রনোদিত। এ শিক্ষায় ধর্মীয় জ্ঞান উপেক্ষিত। জাগতিক শিক্ষাই এর মূল অবকাঠামো। ইতিহাসের নামে বিকৃত ইতিহাস উপস্থাপন, সংস্কৃতির নামে অপসংস্কৃতির প্রচার-প্রসার, অসাম্প্রদায়িক চেতনার নামে ইসলাম ধর্মকে
হেয় প্রতিপন্ন করণ, সহ শিক্ষার নামে নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশা, নারী-পুরুষ তত্ত্বের আড়ালে কোমলমতি শিশুদের মনে যৌনতার বিষবৃক্ষ রুপণ, নারীদের শিক্ষিতকরণ ও নারী-পুরুষ সমান অধিকারের নামে মা জাতিকে রাস্তায় নামিয়ে পণ্য সামগ্রীর ন্যায় প্রদর্শন, আধুনিক শিক্ষার আড়ালে মুসলিম শিক্ষার্থীদের হিন্দুত্ববাদ ও নাস্তিকতার পাঠ শিক্ষাদান, ডিজিটাল ও আধুনিক শিক্ষার নামে সভ্যতার
নামে বিলেতী ও পশ্চিমা সভ্যতার বিস্তার, সর্বোপরি আধুনিকায়নের নামে ইসলামকে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে
ইসলামের প্রতি জাতির বিতৃষ্ণা সৃষ্টি করণ ও পশ্চিমা সভ্যতার আদলে সমাজ ও রাষ্ট্র গঠন এ শিক্ষাব্যবস্তার মূল উদ্দেশ্য।
এ শিক্ষা মানবজাতিকে উন্নতি ও প্রযুক্তির সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌছে দিলেও তাদের চারিত্রিক অবনতিও ঠিক ততটা নিচে নেমে গেছে।
অপরাধ দমনের পরিবর্তে আরো নতুন ও কার্যকর পন্থাসমূহ আবিষ্কার করেছে। পূর্বে চোর-ডাকাতরা সমাজের নিকৃষ্টতম শ্রেণী পরিগণিত হলেও এখন এরাই সমাজের নেতৃত্ব দিচ্ছে। পূর্বে সমাজের উৎকৃষ্ট শ্রেণী সমাজের প্রতিনিধি হলেও এখন সমাজের প্রতিনিধি হচ্ছে সমাজের
সবচেয়ে বড় ডাকাতরা। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে এম পি ও মন্ত্রিত্বের পদে উপবেশনকারী আজকের সাংসদ ও মন্ত্রীরাই হলো
আজকের সমাজের সবচেয়ে বড় ডাকাত।
চুরি, ডাকাতি, সুদ, ঘুষ, দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, ধর্ষন, মিথ্যা, প্রতারণা, গুম, খুন, সম্পদ লুটপাট ও আত্মসাৎ, সার্চ, জুলুম, নির্যাতন, আত্মহত্যা, অবৈধ গ্রেফতার, পরকিয়া, চোরা কারবারি, সীমান্তে সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনীর ছত্রছায়ায় অবৈধ চালান ও পাচার,
মদ, গাঁজা, ইয়াবা ও মাদকের রমরমা বানিজ্য, নিজ হাতে মা বাবাকে হত্যা, মোটর সাইকেলের জন্য মা বারার গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া, বৃদ্ধ মা বাবার সাথে বৃদ্ধাশ্রমের নামে অমানবিক আচরণ , মিথ্যা ও প্রতারণাপূর্ণ নিউজ সরবরাহ, বিনোদনের নামে পত্রিকায় অবৈধ ও কুরুচিপূর্ণ বিজ্ঞাপন, বিনোদনের নামে অশ্লীল মুভি, নাটক ও সিনেমা তৈরি, প্রকাশ্যে বাদ্য-বাজনার মতো অনৈতিক কার্যকলাপের
আয়োজন, পর্নোগ্রাফির মতো নিকৃষ্ট শিল্পের মহড়া, ব্যাক্তি স্বাধীনতার নামে ধর্ম নিষিদ্ধকরণ, ধর্মীয় স্বাধীনতার আড়ালে মসজিদে-মন্দিরে সরব উপস্থিতি, বাক স্বাধীনতার আড়ালে রাসূল(স.)র কুৎসা রটনা, মত প্রকাশের স্বাধীনতার আড়ালে ইসলাম ধর্মের বিষোধগার, অবাধ ব্যক্তি মালিকানার নামে অবৈধ সম্পদ কুক্ষিগত করণ, সমাজের রন্ধেরন্ধে নাস্তিকতার অনুপ্রবেশ, অবৈধ বিচার-আদালত, আন্তর্জাতিক অপরাধ, অস্ত্র পরিক্ষার নামে নিহীহ নাগরিক হত্যা, সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলার নামে মা-বোনদের রক্ত ঝরানো, জঙ্গিবাদ দমনের নামে আল্লাহর শ্রেষ্ঠ বান্দাদের অকথ্য নির্যাতন, রিমান্ড, ক্রসফায়ার ও ফাঁসী, আল্লাহর পরিবর্তে সুপার পাওয়ারদের রব মানা, কাফিরদের বন্ধু ও অভিভাবকরূপে গ্রহন করা, এ ছাড়া আরো হাজারো রকমের অপরাধ এ শিক্ষা ব্যবস্থারই ফসল। ঈমান ও তাকওয়ার ছোঁয়া না থাকলে এ শিক্ষা মুসলিমদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে। তাই এ শিক্ষায় বাধ্যতামূলক ধর্মীয় শিক্ষা ও পাঠ্যসূচী পরিবর্তন সময়ের দাবী। তার জন্য এর মাথায় বসে থাকা থাবা বাবাদের ঘাড় ধাক্কা দিয়ে তদস্থলে বিচক্ষণ, বুদ্ধিমান, ইসলামপ্রিয়, চিন্তাশীল গবেষকদের বসানো প্রয়োজন।
আরেকটি শিক্ষা ব্যবস্থার উদয় হয় ১৮৬৬ সালে। এ শিক্ষা ব্যবস্থার স্বরূপ আমার সামনে উন্মোচিত থাকলেও অনেকের কাছে তা
স্পষ্ট নয়। তাই এর ব্যাপারে কোনো বিরূপ মন্তব্য করতে গেলে আমাকে প্রশ্নের সম্মোখীন হবে হবে। তবুও দু'টি কথা বলে যাই। আমিও
এ শিক্ষা ব্যবস্তার একজন নগন্য ছাত্র। তাই আশা করি আত্মসংশোধন দোষের হবে না। এ শিক্ষা ব্যবস্থা ধর্মীয় শিক্ষাকে যতটা না গুরুত্ব দিয়েছে, জাগতিক শিক্ষাকে তারচেয়েও বেশি অবহেলা করেছে। এটি মানুষের মাঝে ছড়িয়েছে ঈমান ও তাকওয়ার নূর, জাতিকে
উপহার দিয়েছে একদল সৎ ও চরিত্রবান লোক, কিন্তু জাতির সেই হারানো সম্মান ফিরিয়ে দিতে পারে নি। পারে নি জাতিকে মর্যাদার
উচ্ছ আসনে পৌছে দিতে, যেখানে বসে আমাদের পূর্বসূরিরা একদিন পৃথিবী শাসন করেছিলেন।
এ শিক্ষা ব্যবস্থা আলেমের ইলমকে পঙ্গু বানিয়েছে। তাই আজ ইলমগুলো কিতাবের মলাটেই আবদ্ধ। বাস্তব অনুশীলন অস্তিত্বে
আসেনি। এ কারণেই ১৯৪৭ সালে স্বাধীন রাষ্ট্র পাকিস্তান গঠন হলেও মুসলিমদের আবাসভূমি এ দেশ দারুল ইসলামের গৌরব অর্জন
করতে পারে নি। পারবে কিভাবে, আলেমরা দুনিয়া বলে সে স্থান বর্জন করে তুলে দিয়েছিলেন সেক্যুলারদের হাতে। দেশ চালানোর সে হিম্মতটা করতে পারেন নি। একি অবস্থা ১৯৭১ সালে জন্ম নেওয়া লাল-সবুজের এ দেশের। মুক্তিযুদ্ধের শেখদেরকে মুরীদ বানলেও
পারেন নি দেশকে ইসলামের আদলে সাজাতে। পারেন নি দেশকে সোনালী অতীতে ফিরিয়ে নিতে , মানবতার পরতে পরতে এ বিষ্ময়কর সভ্যতা ছড়িয়ে দিতে। তাই হাজারো-কোটি মুসলিম ও আলেম-ওলামা এ ভূমিতে অবস্থান করলেও দেশের মালিক পক্ষ ঠিকই মুরতাদ সেক্যুলার। কারণ দু'টি ১. এটি তাঁদের দৃষ্টিতে দুনিয়াদারী। দুনিয়ার পেছনে ছোটা। ২. আলেমরা চাইলেও পারবেন না, কারণ বিশ্বায়নের
এ পৃথিবীতে সুপার পাওয়ারদের সাথে টেক্কা দিয়ে রাষ্ট্র চালানোর নূন্যতম বা বাল্যশিক্ষাও তাঁদের কাছে নেই। এ সবের জন্য জাগতিক
শিক্ষায় পূর্ণ দক্ষতা প্রয়োজন যাকে আলেম সমাজ যুগ যুগ ধরে হেয় ও অবহেলা করে আসছেন। ফলাফলে আজ আলেম সমাজের
কর্মের ক্ষেত্র মসজিদ-মাদরাসাতেই সীমাবদ্ধ। বিশ্বাস না হলে আপনি ৮০% মাদরাসা ছাত্রকে জিজ্ঞেস করতে পারেন।
তাই এ মহান সমাজের প্রতি আমার জানার বিষয় হলো, রাসূল(স.)র ২৭ টি গযওয়া ও ৪৭ টি সারিয়্যার হাই কমান্ডিং কি ওহীর ইলম
ছিল না কি জাগতিক দক্ষতা? যুদ্ব প্রশিক্ষণ, তীর-তলোয়ার, বর্শা-নেযা, মিনজানিক, ঘোড়দৌড়, অবরোধ, পশ্চাৎদাবন, পরিখা খনন,
ইয়াহুদ, নাসারা ও মুশরিকদের সাথে লেনদেন ও বোঝাপড়া— এ গুলো কি ওহী ছিল না জাগতিক লাইনে অভিজ্ঞ একজন মহামানবের অনন্য বৈশিষ্ট্য? ছাত্রদের আধুনিক অস্ত্র প্রশিক্ষণ ও যু্দ্ধ প্রশিক্ষণ প্রদান যদি সমস্যা সৃষ্টিকারি ও জঙ্গিবাদ হয়, কেন হাদিসে নিক্ষেপ ও
প্রশিক্ষণের ফজিলত ও পরিত্যাগ করার ভয়াভহতা বর্ণিত হয়েছে? বাংলা ভাষায় দক্ষতা অর্জন যদি খারাপ হয়, কেন ফারসী ও উর্দু
ভাষায় দক্ষতা অর্জন? কোরআন কি মাতৃভাষা শিক্ষার নির্দেশ দেয় না? ইংরেজী ভাষায় দক্ষতা অর্জন যদি অবৈধ হয় কেন রাসূল (স.)
ইবনে সাবেত(রাযি.) কে এক বর্ণনায় হিব্রু ও এক বর্ণনায় সুরয়ানী ভাষা শিখতে বলেছিলেন? কেন আজকের প্রধানমন্ত্রী জাগতিক
শিক্ষায় শিক্ষিত হবে? কেন আজকের মন্ত্রী পরিষদ জাগতিক শিক্ষায় শিক্ষিত হবে? ইসলাম যদি অর্থব্যবস্থা সমর্থন করে, তাহলে কেন আজকের অর্থব্যবস্থা সেক্যুলারদের হাতে? জাগতিক শিক্ষা প্রয়োজন না হলে কেন মামলা-মোকদ্দমায় বৃটিশ প্রণোদিত শিক্ষাব্যবস্থার ধ্বজাধারীদের কাছে ধর্ণা দিতে হয়? জাগতিক শিক্ষা দুনিয়া দুনিয়া বলে গলা ফাটালেও কেন অসুস্থ হলে জাগতিক শিক্ষায় শিক্ষিত
ডাক্তারের কাছে দৌড়ান? পারেন না মাদরাসার গন্ডিতে আবদ্ধ থাকতে? চিকিৎসার জন্য ইন্ডিয়া-সিঙ্গাপুর কেন? জাগতিক শিক্ষা জরুরি
না হলে কেন কাফেরদের বানানো প্রযুক্তি ব্যবহার করেন? দেখুন না মোবাইল-বিদ্যুৎ ইউজ না করে, গাড়িতে না চড়ে, বিমানে না উড়ে
থাকতে পারেন কিনা? এ গুলো কিছুই ধর্মীয় শিক্ষা দিয়ে আসে নি। সব জাগতিক শিক্ষার ফসল। এ রকম আর কয়টি বলব? এমন
কোনো ডিপার্মেন্ট নাই, যেখানে আমরা জাগতিক শিক্ষায় শিক্ষিতদের সরনাপন্ন হচ্ছি না।
তাহলে কেন দুনিয়া দুনিয়া বলে এটিকে পিছনে ফেলে রাখা? কেন মুখের কথাকে কাজে পরিণত না করা? এড়িয়ে যেতে পারবেন
না। সম্ভব না। তাই সাথে নিয়ে চলুন। আমাদের একদল এমন তৈরি করুন। কলেজ-বিশ্ব বিদ্যালয়ের এ শিক্ষাকে নিজেদের আদলে
সাজিয়ে নিন। সব ধরণের আধুনিক ও অস্ত্র প্রশিক্ষণ দিয়ে আমাদের সজ্জিত করুন। দেখবেন, আপনাদের অধীনে আমরাই সাজাব
ইমাম মাহদীর প্রতীক্ষিত দুনিয়া। প্রশ্ন হলো আদৌ কি এ শিক্ষাব্যবস্তায় এমন বিপর্যয় বিদ্যমান? এর উত্তরে কে কী বলবে জানি না। তবে আমার সাফ কথা — আদৌ এ শিক্ষাব্যবস্থায় এমন বিপর্যয় বিদ্যমান। তারপরও প্রতিষ্ঠালগ্নের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় প্রতিষ্ঠাতাদের এমন উদ্দেশ্য ছিল না। তাই বাস্তববাদীরা বসে থাকেন নি। চালিয়ে গেছেন নিজেদের সাধনা। "এ উম্মাহকে দু'টি বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে
হবে— জিহাদ ও ইজতিহাদ"। জিহাদ মানে সবাই বুঝি। যাকে আমরা ছেড়ে দিয়েছি। আর ইজতিহাদ মানে শরয়ী না। আধুনিক ও
অত্যাধুনিক, প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের সকল শাখায় পান্ডিত্য অর্জন। আলী মিয়া নদবী(রহ.) র উক্তি। পরিশেষে ইমাম মালেক (রহ.) র উক্তি
স্বরণ করিয়ে দিতে চায়। "এ উম্মাহর সফলতা সে পথেই যে পথে সফল হয়েছেন পূর্বসূরিরা"।
Comment