Announcement

Collapse
No announcement yet.

ইমাম ছাড়া জিহাদ; ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে (দ্বিতীয় পর্ব, গাযওয়ায়ে যি- করদ)

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • ইমাম ছাড়া জিহাদ; ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে (দ্বিতীয় পর্ব, গাযওয়ায়ে যি- করদ)

    ইমাম ছাড়া জিহাদ; ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে (দ্বিতীয় পর্ব, গাযওয়ায়ে যি- করদ)

    ষষ্ঠ হিজরিতে মুসলিমরা হুদাইবিয়া থেকে ফিরে আসার পর গাতফান গোত্রের মুশরিকরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উটনী পাল লুট করার জন্য অতর্কিত আক্রমণ করে বসে এবং রাসূলের উটনীপাল নিয়ে পলায়ন করে। মহান সাহাবী সালামাহ বিন আকওয়া রাযি. এ আক্রমণের সংবাদ শুনে তাদের পিছু ধাওয়া করেন এবং একাই উটগুলো উদ্ধার করেন। সালামা ছিলেন দক্ষ তীরন্দাজ। তিনি তীর নিক্ষেপ করে করে মুশরিকদের বিপর্যস্ত করে ফেলেন। এরপর রাসূলের ঘোড়সওয়ার বাহিনী এসে মুশরিকদের উপর আক্রমণ করে। মুশরিকদের নেতা আব্দুর রহমান বিন উয়াইনাহ সহ আরো দুয়েকজন নিহত হয়। বাকী কাফেররা জিনিষপত্র ফেলে জান নিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। ইতিহাসে এ যুদ্ধ গাযওয়াতু যি-করদ নামে প্রসিদ্ধ। সহিহ বুখারী ও মুসলিমের হাদিসে এসেছে,

    عن سلمة بن الأكوع، قال: خرجت قبل أن يؤذن بالأولى، وكانت لقاح رسول الله صلى الله عليه وسلم ترعى بذي قرد، قال: فلقيني غلام لعبد الرحمن بن عوف، فقال: أخذت لقاح رسول الله صلى الله عليه وسلم، فقلت: من أخذها؟ قال: غطفان، قال: فصرخت ثلاث صرخات، يا صباحاه، قال: فأسمعت ما بين لابتي المدينة، ثم اندفعت على وجهي حتى أدركتهم بذي قرد، وقد أخذوا يسقون من الماء، فجعلت أرميهم بنبلي، وكنت راميا، وأقول:
    أنا ابن الأكوع ... واليوم يوم الرضع
    فأرتجز حتى استنقذت اللقاح منهم، واستلبت منهم ثلاثين بردة، قال: وجاء النبي صلى الله عليه وسلم والناس، فقلت: يا نبي الله، إني قد حميت القوم الماء وهم عطاش، فابعث إليهم الساعة، فقال: «يا ابن الأكوع ملكت فأسجح»، قال: ثم رجعنا ويردفني رسول الله صلى الله عليه وسلم على ناقته حتى دخلنا المدينة. صحيح البخاري(3041 ، 4194) صحيح مسلم (1806، 1807)

    সালামা ইবন আকওয়া (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ফজরের আযানের আগেই বের হয়ে পড়লাম। রাসুলুল্লাহ (সা) এর দুধেল উটনীগুলো তখন যু-কারদে (চারণ ভূমিতে) চরছিল। তখন আব্দুর রহমান ইবন আওফ (রা.) এর গোলাম আমার সামনে পড়লো। সে বললো, রাসুলুল্লাহ (সা) -এর দুধেল উটনী সমূহকে নিয়ে গেছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কে সেগুলো নিয়ে গেছে? সে বলল, গাতফান গোত্রের লোকেরা। সালামা বলেন, তখন আমি উচ্চস্বরে তিনবার হাঁক দিলাম, সাহায্য চাই, সাহায্য। মদীনার উভয় প্রান্তের মধ্যবর্তী সবাইকে আমি আমার সে হাঁক শোনালাম। তারপর সোজা বেরিয়ে পড়লাম এবং যু-কারদে গিয়ে তাদের (লুটেরাদের)-কে পেলাম। তারা তাদের পশুদেরকে পানি পান করাচ্ছিল। তখন আমি তীর নিক্ষেপ করতে শুরু করলাম। আমি ছিলাম একজন (দক্ষ) তীরন্দাজ। আমি বীরত্ব সূচক কবিতা আবৃতি করছিলাম, ‘আমি আকওয়ার পুত্র, আজ ইতরদের ধ্বংসের দিন (কিংবা আজ তার দিন, যে শৈশব থেকে যুদ্ধের স্তন্য পান করেছে)।

    আমি আমার তীর নিক্ষেপ ও বীরত্বব্যঞ্জক কবিতা আবৃতি করতে থাকলাম। অবশেষে আমি দুধেল উটনীগুলো মুক্ত করলাম। এমনকি আমি তাদের ত্রিশটি (বড়) চাদরও ছিনিয়ে নিলাম।
    এমন সময় রাসুলুল্লাহ (সা) ও লোকজন এসে পড়লেন। তখন আমি বললাম, “ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি তাদের পানির পথ রুদ্ধ করে রেখেছি, তাই তারা পিপাসার্ত। এবার আপনি একটি বাহিনী প্রেরণ করুন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সালামা! তুমি ওদের উপর বিজয়ী হয়েছো। এবার ওদের প্রতি দয়া করো। সালামা (রা.) বলেন, তারপর আমরা ফিরে এলাম। রাসুলুল্লাহ (সা) আমাকে তাঁরই উটনীর পিছনে বসিয়ে নিলেন। এভাবে আমরা মদীনায় পৌঁছলাম। -সহিহ বুখারী, ৩০৪১; ৪১৯৪ সহিহ মুসলিম, ১৮০৬ (ইফা, ৪/৩৪৫-৩৪৬)

    সহিহ মুসলিমের অপর বর্ণনায় এসেছে, সালামা বিন আকওয়া আক্রমণের কথা জানতে পেরে রাসূলের নিকট সংবাদ পাঠান এবং তিনবার ঘোষণা প্রদান করে মুশরিকদের পিছু ধাওয়া করেন। পরদিন ভোর হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমাদের আজকের উত্তম অশ্বারোহী ছিলো আবু কাতাদাহ্ এবং উত্তম পদাতিক ছিলো সালামা এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালামাহ বিন আকওয়াকে গনিমত হতে দুটি অংশ প্রদান করেন, ঘোড়সওয়ারের অংশ এবং পদাতিকের অংশ।” –সহিহ মুসলিম, ১৮০৭

    এ যুদ্ধ ইমামের অনুমতি ব্যতীত জিহাদ বৈধ হওয়ার সুস্পষ্ট দলিল। কেননা সালামা বিন আকওয়া রাযি. আক্রমণের সংবাদ পাওয়ার পর নবীজির অনুমতি নেওয়ার অপেক্ষা করেননি। বরং তিনি নবীজির কাছে সংবাদ প্রেরণ করেছেন। পাহাড়ে উঠে তিনবার হামলার ব্যাপারে সতর্ক করে ঘোষণা দিয়েছেন। এরপরই শত্রুর পিছে ধাওয়া শুরু করেছেন। কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এজন্য তার কোন নিন্দা করেননি। বরং তার বীরত্বমূলক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ নিজের পেছনে বসিয়ে মদীনায় নিয়ে এসেছেন। তার প্রশংসা করে বলেছেন, “আজকের যুদ্ধে আমাদের সর্বোত্তম পদাতিক সৈন্য হলো সালামাহ।” পুরস্কারস্বরূপ তাকে দিগুণ গনিমত প্রদান করেছেন। এজন্যই বিশিষ্ট আলেমগণের বোর্ড কর্তৃক সংকলিত ফিকহে ইসলামীর বে-নজির কিতাব ‘মওসুয়াহ ফিকহিয়্যাহ’য় শত্রু আক্রমণের সময় ইমামের অনুমতি ব্যতীত জিহাদ বৈধ হওয়ার দলিল স্বরূপ এ হাদিস পেশ করা হয়েছে, মওসুয়াহর ইবারত দেখুন,

    صرح الشافعية والحنابلة بأنه يكره الغزو من غير إذن الإمام أو الأمير المولى من قبله ؛ لأن الغزو على حسب حال الحاجة ، والإمام أو الأمير أعرف بذلك ، ولا يحرم ؛ لأنه ليس فيه أكثر من التغرير بالنفس ، والتغرير بالنفس يجوز في الجهاد .
    ولأن أمر الحرب موكول إلى الأمير ، وهو أعلم بكثرة العدو وقلتهم ، ومكامن العدو وكيدهم ، فينبغي أن يرجع إلى رأيه ؛ لأنه أحوط للمسلمين ؛ … إلا أن يفجأهم عدو يخافون تمكنه، فلا يمكنهم الاستئذان، فيسقط الإذن باقتضاء قتالهم، والخروج إليهم لحصول الفساد بتركهم انتظارا للإذن.
    ودليل ذلك أنه لما أغار الكفار على لقاح النبي صلى الله عليه وسلم صادفهم سلمة بن الأكوع خارجا من المدينة فتبعهم وقاتلهم من غير إذن، فمدحه النبي صلى الله عليه وسلم وقال: خير رجالتنا سلمة بن الأكوع ، وأعطاه سهم فارس وراجل الموسوعة الفقهية الكويتية (16/ 136 وزارة الأوقاف والشئون الإسلامية – الكويت الطبعة : من 1404 - 1427 هـ)

    “শাফেয়ী ও হাম্বলী মাযহাবের আলেমগণ সুস্পষ্টরূপে বলেছেন, ইমাম বা ইমামের প্রতিনিধির অনুমতি ব্যতীত জিহাদ করা মাকরুহ বা অপছন্দনীয়, হারাম নয়। কেননা জিহাদ করতে হয় প্রয়োজন অনুপাতে। আর এ ব্যাপারে ইমামই সম্যক অবগত। তবে তা হারামও হবে না। কেননা এতে বেশি থেকে বেশি নিজেকে বিপদে ফেলা হয়। আর জিহাদের ক্ষেত্রে নিজের জানকে বিপদের সম্মুখীন করা বৈধ। তাছাড়া যুদ্ধের বিষয়াদি আমিরের নিকট ন্যস্ত। শত্রুদের সংখ্যাধিক্য ও সংখ্যাসল্পতা, তাদের গোপন ঘাটি ও চক্রান্ত ইত্যাদি সম্পর্কে তিনিই ভালো জানেন। তাই তার মতানুযায়ী জিহাদ করা উত্তম এবং মুসলমানদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সহায়ক।
    তবে যদি এমন শত্রু হঠাৎ আক্রমণ করে বসে যাদের ঘাটি গেড়ে বসার আশংকা রয়েছে, বিধায় অনুমতি নেওয়া সম্ভব না হয়, তাহলে শত্রুদের যুদ্ধের কারণে অনুমতি নেওয়ার হুকুম রহিত হয়ে যাবে। এর দলিল হলো, যখন কাফেররা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উটনীর উপর আক্রমণ করে তখন সালামা বিন আকওয়া তাদের পিছু ধাওয়া করেন এবং ইমামের অনুমতি ব্যতীতই তাদের সাথে যুদ্ধ করেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার এ কাজের প্রশংসা করে বলেন, আজ আমার পদাতিক সৈন্যদের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম হলো সালামা বিন আকওয়া এবং তাকে ঘোড়সওয়ার ও পদাতিক সৈন্য উভয়ের সমান গনিমত প্রদান করেন। -মওসুয়্যাহ ফিকহিয়্যাহ, ১৬/১৩৬


    প্রথম পর্বের লিংক:-
    الجهاد محك الإيمان

    জিহাদ ইমানের কষ্টিপাথর

  • #2
    মাশাআল্লাহ। উত্তম দলিল। আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন, আরো অধিক খিদমত করার তাওফিক দান করুন!!

    Comment


    • #3
      মাশাআল্লাহ।
      আনেক সুন্দর আলোচনা।
      আল্লাহ কবুল করুন,আমিন।
      ’’হয়তো শরিয়াহ, নয়তো শাহাদাহ,,

      Comment


      • #4
        চমৎকার লিখেছেন ৷
        "জিহাদ ঈমানের একটি অংশ ৷"-ইমাম বোখারী রহিমাহুল্লাহ

        Comment


        • #5
          বেশি বেশি শেয়ার করতে হবে।।উত্তম দলিল।
          আসুক না যত বাধাঁ যত ঝর সাইক্লোন কিতালের পথে মোরা চলবোই

          Comment


          • #6
            আল্লাহ আমাদের অন্তরকে মুক্ত করে দিন যাতে আমরা সঠিক কথা সঠিক ভাবে বুঝতে ও মানতে পারি ... আমিন।

            Comment

            Working...
            X