কওমে ফিরআঊন ও আমরা
কোনো জাতি যখন আল্লাহর অবাধ্যতা করতে করতে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায়, তখন আল্লাহ সুব. তাদেরকে ধ্বংস করার আগে কয়েকবার সতর্ক করেন এবং আরো কিছুদিন সুযোগ দেন, যেন তারা ফিরে আসে।
কওমে ফিরআঊন অবাধ্যতার শেষ সীমায় পৌঁছালে আল্লাহ সুব. তাদের ধ্বংস করার আগে বেশ কয়েকবার সতর্ক করেছিলেন, যেন তারা ফিরে আসে। কিন্তু তারা তাদের অবাধ্যতার মধ্যেই অটল থাকলো; ফলে তাদের শেষ সমাধি হলো নীল নদের অতল গহবরে। আল্লাহ সুব. সূরাতুল আ’রাফের ১৩৩ নম্বর আয়াতে বিষয়টি এভাবে বলছেন-
فَأَرْسَلْنَا عَلَيْهِمُ الطُّوفَانَ وَالْجَرَادَ وَالْقُمَّلَ وَالضَّفَادِعَ وَالدَّمَ آيَاتٍ مُّفَصَّلاَتٍ فَاسْتَكْبَرُواْ وَكَانُواْ قَوْمًا مُّجْرِمِينَ
আমি তাদের উপর পাঠিয়ে দিলাম তুফান, পঙ্গপাল, উকুন, ব্যাঙ ও রক্ত প্রভৃতি বহুবিধ নিদর্শন একের পর এক। তারপরেও তারা গর্ব করতে থাকল। বস্তুতঃ তারা ছিল অপরাধপ্রবণ।
হযরত মূসা আ. তাদেরকে বহুবার সত্যের পথে দাওয়াত দিয়েছিলেন, আল্লাহর অবাধ্যতা ছেড়ে আল্লাহর পথে চলে আসার আহ্বান জানিয়েছিলেন, কিন্তু তারা বারবারই মূসা. এর দাওয়াতকে প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং তাদের অবাধ্যতা দিনদিন বেড়েই চলছিল। তাই আল্লাহ সুব. তাদেরকে ধ্বংস করার আগে কয়েকবার সতর্ক করেছিলেন। প্রথমে তাদের উপর তুফানের আজাব পাঠানো হলো। তারা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে মূসা আ. কে গিয়ে বললো-
يَا مُوسَى ادْعُ لَنَا رَبَّكَ بِمَا عَهِدَ عِندَكَ لَئِن كَشَفْتَ عَنَّا الرِّجْزَ لَنُؤْمِنَنَّ لَكَ
হে মূসা! আমাদের জন্য তোমার প্রভুর নিকট সে বিষয়ে দোয়া কর, যা তিনি তোমার সাথে ওয়াদা করে রেখেছেন। যদি তুমি আমাদের উপর থেকে এই আজাব সরিয়ে দাও, তবে অবশ্যই আমরা তোমার উপর ঈমান আনবো। -সূরা আ’রাফ। আয়াত ১৩৪
তাদের এই আকুতি দেখে আল্লাহ সুব. তাদের উপর থেকে এই আজাব উঠিয়ে নিলেন। কিন্তু না! আজাব উঠিয়ে নেওয়ার পর তারা আবার সেই আগের মতো আল্লাহর অবাধ্যতা করতে শুরু করলো। এরপর তাদের উপর পঙ্গপালের আজাব পাঠানো হলো। পঙ্গপাল তাদের সব ফসল নষ্ট করতে শুরু করলা, ফলে তারা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে আবার মূসা আ. এর কাছে গিয়ে পূর্বের মতোই অনুনয়-বিনয় করে ক্ষমা চাইতে শুরু করলো এবং আজাব থেকে মুক্তি পেলে ঈমান আনবে বলে ওয়াদা দিল। আল্লাহ সুব. তাদের উপর থেকে এই আজাবও তুলে নিলেন। কিন্তু তারা এবারও আগের মতোই ওয়াদা ভঙ্গ করে আল্লাহর অবাধ্যতায় লিপ্ত হলো। এরপর তাদের উপর উকুনের আজাব পাঠানো হলো। খেতে গেলেও উকুন, ঘুমাতে গেলেও উকুন, সব জায়গায় শুধু উকুন আর উকুন। উপায়-অন্ত না দেখে তারা পূর্বের মতো আবারও মূসা আ.-এর কাছে গেল এবং ঈমান আনার ওয়াদা দিল। আল্লাহ সুব. এই আজাবও তুলে নিলেন। তারা আবারও ওয়াদা ভঙ্গ করলো। এরপর তাদের উপর ব্যাঙের আজাব পাঠানো হলো। খাবারের ভিতরে ব্যাঙ, হা করলে মুখে ঢুকে পড়ে ব্যাঙ, শুধু ব্যাঙ আর ব্যাঙ। পূর্বের মতো ওয়াদা করার কারণে আল্লাহ সুব. এই আজাবও তুলে নিলেন। কিন্তু কে রাখে কার কথা! এরপর পাঠানো হলো রক্তের আজাব। যেখানে যায় সেখানেই রক্ত। পানি পান করতে গেলে দেখতো রক্ত, কোথাও থেকে পানি আনতে গেলে সেখানেও রক্ত। সবখানেই রক্ত আর রক্ত। এই আজাব তুলে নেওয়ার জন্য লোকগুলো শেষবারের মতো মূসা. এর কাছে আবেদন করলো এবং বললো এইবারই শেষ। শেষবারের মতো তুমি তোমার প্রভুকে বলে আমাদেকে এই আজাব থেকে মুক্তি দাও, ওয়াদা দিচ্ছি আমরা আর আল্লাহর অবাধ্যতা করবো না এবং তোমার প্রতি ঈমান আনয়ন করবো। আল্লাহ সুব. আজাব তুলে নিলে তারা সেই আগের মতোই অবাধ্যতায় লিপ্ত হয়ে পড়লো।
এতগুলো সতর্কবার্তা পেয়েও তারা সতর্ক হয়নি, আল্লাহর দেওয়া সুযোগগুলো তারা কাজে লাগায়নি, তাই আল্লাহ সুব. তাদের চূড়ান্ত পাওনা তাদের বুঝিয়ে দিলেন। আল্লাহ সুব. বলছেন-
فَانتَقَمْنَا مِنْهُمْ فَأَغْرَقْنَاهُمْ فِي الْيَمِّ بِأَنَّهُمْ كَذَّبُواْ بِآيَاتِنَا وَكَانُواْ عَنْهَا غَافِلِينَ
সুতরাং আমি তাদের থেকে প্রতিশোধ নিয়ে নিলাম, তাদেরকে সাগরের অতল গহবরে নিক্ষেপ করলাম। কারণ তারা আমার নিদর্শনাবলীকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল। আর সে সম্পর্কে তারা ছিল অসচেতন। -সূরা আ’রাফ, আয়াত ১৩৬
আল্লাহ সুব. বিভিন্ন আজাব দিয়ে আমাদেরকে সতর্ক করছেন, যেন আমরা সতর্ক হই, যেন আমরা সচেতন হই।
কিছুদিন আমরা চারদিকে শুধু আগুনের লেলিহান শিখা দেখেছিলাম। একেরপর এক বড় বড় বিল্ডিং গুলোতে ধাউ ধাউ করে আগুন জ্বলেছিল, এরপর আমরা চিকনগুনিয়ায় আক্রান্ত হলাম, আবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলাম; তখন দেখা গেল মসজিদগুলো মুসুল্লি দ্বারা ভরপুর, যখনি এই বিপদ কেটে গেলো তখনি আবার মসজিদগুলো খালি হয়ে গেল।
এখন যখন চারদিকে করোনা ভাইরাস ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, অসংখ্য লোকের প্রাণহানি ঘটছে তাই আমরা সবাই মসজিদমুখী হয়ে পড়েছি, বিভিন্ন দোয়া-দরূদ পড়ছি, তাওবা-ইস্তিগফার করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি, আরো কত কি করছি। কিন্তু এতসব আমল কি করোনা ভাইরাসের সাথে সাথেই বিদায় নিয়ে নিবে? মানে করোনা ভাইরাসও শেষ, আমাদের তাওবা-ইস্তিগফার আর সব দোয়া-দরূদ সবই শেষ—এমনটাই হবে কি?
ঠিক এমনটাই করেছিল কওমে ফিরআঊন। তাই আল্লাহ সুব. তাদের থেকে প্রতিশোধ নিয়েছেন, তাদেরকে সাগরের অতল গহবরে নিক্ষেপ করেছেন।
আসুন, আমরা সতর্ক হই। আমরা সচেতন হই। কওমে ফিরআঊন থেকে শিক্ষা নিই, ওদের অভ্যাস যেন আমাদেরকে পেয়ে না বসে। আল্লাহর চূড়ান্ত শাস্তি যেন আমরা নিজেদের উপর টেনে না আনি।
কোনো জাতি যখন আল্লাহর অবাধ্যতা করতে করতে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায়, তখন আল্লাহ সুব. তাদেরকে ধ্বংস করার আগে কয়েকবার সতর্ক করেন এবং আরো কিছুদিন সুযোগ দেন, যেন তারা ফিরে আসে।
কওমে ফিরআঊন অবাধ্যতার শেষ সীমায় পৌঁছালে আল্লাহ সুব. তাদের ধ্বংস করার আগে বেশ কয়েকবার সতর্ক করেছিলেন, যেন তারা ফিরে আসে। কিন্তু তারা তাদের অবাধ্যতার মধ্যেই অটল থাকলো; ফলে তাদের শেষ সমাধি হলো নীল নদের অতল গহবরে। আল্লাহ সুব. সূরাতুল আ’রাফের ১৩৩ নম্বর আয়াতে বিষয়টি এভাবে বলছেন-
فَأَرْسَلْنَا عَلَيْهِمُ الطُّوفَانَ وَالْجَرَادَ وَالْقُمَّلَ وَالضَّفَادِعَ وَالدَّمَ آيَاتٍ مُّفَصَّلاَتٍ فَاسْتَكْبَرُواْ وَكَانُواْ قَوْمًا مُّجْرِمِينَ
আমি তাদের উপর পাঠিয়ে দিলাম তুফান, পঙ্গপাল, উকুন, ব্যাঙ ও রক্ত প্রভৃতি বহুবিধ নিদর্শন একের পর এক। তারপরেও তারা গর্ব করতে থাকল। বস্তুতঃ তারা ছিল অপরাধপ্রবণ।
হযরত মূসা আ. তাদেরকে বহুবার সত্যের পথে দাওয়াত দিয়েছিলেন, আল্লাহর অবাধ্যতা ছেড়ে আল্লাহর পথে চলে আসার আহ্বান জানিয়েছিলেন, কিন্তু তারা বারবারই মূসা. এর দাওয়াতকে প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং তাদের অবাধ্যতা দিনদিন বেড়েই চলছিল। তাই আল্লাহ সুব. তাদেরকে ধ্বংস করার আগে কয়েকবার সতর্ক করেছিলেন। প্রথমে তাদের উপর তুফানের আজাব পাঠানো হলো। তারা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে মূসা আ. কে গিয়ে বললো-
يَا مُوسَى ادْعُ لَنَا رَبَّكَ بِمَا عَهِدَ عِندَكَ لَئِن كَشَفْتَ عَنَّا الرِّجْزَ لَنُؤْمِنَنَّ لَكَ
হে মূসা! আমাদের জন্য তোমার প্রভুর নিকট সে বিষয়ে দোয়া কর, যা তিনি তোমার সাথে ওয়াদা করে রেখেছেন। যদি তুমি আমাদের উপর থেকে এই আজাব সরিয়ে দাও, তবে অবশ্যই আমরা তোমার উপর ঈমান আনবো। -সূরা আ’রাফ। আয়াত ১৩৪
তাদের এই আকুতি দেখে আল্লাহ সুব. তাদের উপর থেকে এই আজাব উঠিয়ে নিলেন। কিন্তু না! আজাব উঠিয়ে নেওয়ার পর তারা আবার সেই আগের মতো আল্লাহর অবাধ্যতা করতে শুরু করলো। এরপর তাদের উপর পঙ্গপালের আজাব পাঠানো হলো। পঙ্গপাল তাদের সব ফসল নষ্ট করতে শুরু করলা, ফলে তারা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে আবার মূসা আ. এর কাছে গিয়ে পূর্বের মতোই অনুনয়-বিনয় করে ক্ষমা চাইতে শুরু করলো এবং আজাব থেকে মুক্তি পেলে ঈমান আনবে বলে ওয়াদা দিল। আল্লাহ সুব. তাদের উপর থেকে এই আজাবও তুলে নিলেন। কিন্তু তারা এবারও আগের মতোই ওয়াদা ভঙ্গ করে আল্লাহর অবাধ্যতায় লিপ্ত হলো। এরপর তাদের উপর উকুনের আজাব পাঠানো হলো। খেতে গেলেও উকুন, ঘুমাতে গেলেও উকুন, সব জায়গায় শুধু উকুন আর উকুন। উপায়-অন্ত না দেখে তারা পূর্বের মতো আবারও মূসা আ.-এর কাছে গেল এবং ঈমান আনার ওয়াদা দিল। আল্লাহ সুব. এই আজাবও তুলে নিলেন। তারা আবারও ওয়াদা ভঙ্গ করলো। এরপর তাদের উপর ব্যাঙের আজাব পাঠানো হলো। খাবারের ভিতরে ব্যাঙ, হা করলে মুখে ঢুকে পড়ে ব্যাঙ, শুধু ব্যাঙ আর ব্যাঙ। পূর্বের মতো ওয়াদা করার কারণে আল্লাহ সুব. এই আজাবও তুলে নিলেন। কিন্তু কে রাখে কার কথা! এরপর পাঠানো হলো রক্তের আজাব। যেখানে যায় সেখানেই রক্ত। পানি পান করতে গেলে দেখতো রক্ত, কোথাও থেকে পানি আনতে গেলে সেখানেও রক্ত। সবখানেই রক্ত আর রক্ত। এই আজাব তুলে নেওয়ার জন্য লোকগুলো শেষবারের মতো মূসা. এর কাছে আবেদন করলো এবং বললো এইবারই শেষ। শেষবারের মতো তুমি তোমার প্রভুকে বলে আমাদেকে এই আজাব থেকে মুক্তি দাও, ওয়াদা দিচ্ছি আমরা আর আল্লাহর অবাধ্যতা করবো না এবং তোমার প্রতি ঈমান আনয়ন করবো। আল্লাহ সুব. আজাব তুলে নিলে তারা সেই আগের মতোই অবাধ্যতায় লিপ্ত হয়ে পড়লো।
এতগুলো সতর্কবার্তা পেয়েও তারা সতর্ক হয়নি, আল্লাহর দেওয়া সুযোগগুলো তারা কাজে লাগায়নি, তাই আল্লাহ সুব. তাদের চূড়ান্ত পাওনা তাদের বুঝিয়ে দিলেন। আল্লাহ সুব. বলছেন-
فَانتَقَمْنَا مِنْهُمْ فَأَغْرَقْنَاهُمْ فِي الْيَمِّ بِأَنَّهُمْ كَذَّبُواْ بِآيَاتِنَا وَكَانُواْ عَنْهَا غَافِلِينَ
সুতরাং আমি তাদের থেকে প্রতিশোধ নিয়ে নিলাম, তাদেরকে সাগরের অতল গহবরে নিক্ষেপ করলাম। কারণ তারা আমার নিদর্শনাবলীকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল। আর সে সম্পর্কে তারা ছিল অসচেতন। -সূরা আ’রাফ, আয়াত ১৩৬
আল্লাহ সুব. বিভিন্ন আজাব দিয়ে আমাদেরকে সতর্ক করছেন, যেন আমরা সতর্ক হই, যেন আমরা সচেতন হই।
কিছুদিন আমরা চারদিকে শুধু আগুনের লেলিহান শিখা দেখেছিলাম। একেরপর এক বড় বড় বিল্ডিং গুলোতে ধাউ ধাউ করে আগুন জ্বলেছিল, এরপর আমরা চিকনগুনিয়ায় আক্রান্ত হলাম, আবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলাম; তখন দেখা গেল মসজিদগুলো মুসুল্লি দ্বারা ভরপুর, যখনি এই বিপদ কেটে গেলো তখনি আবার মসজিদগুলো খালি হয়ে গেল।
এখন যখন চারদিকে করোনা ভাইরাস ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, অসংখ্য লোকের প্রাণহানি ঘটছে তাই আমরা সবাই মসজিদমুখী হয়ে পড়েছি, বিভিন্ন দোয়া-দরূদ পড়ছি, তাওবা-ইস্তিগফার করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি, আরো কত কি করছি। কিন্তু এতসব আমল কি করোনা ভাইরাসের সাথে সাথেই বিদায় নিয়ে নিবে? মানে করোনা ভাইরাসও শেষ, আমাদের তাওবা-ইস্তিগফার আর সব দোয়া-দরূদ সবই শেষ—এমনটাই হবে কি?
ঠিক এমনটাই করেছিল কওমে ফিরআঊন। তাই আল্লাহ সুব. তাদের থেকে প্রতিশোধ নিয়েছেন, তাদেরকে সাগরের অতল গহবরে নিক্ষেপ করেছেন।
আসুন, আমরা সতর্ক হই। আমরা সচেতন হই। কওমে ফিরআঊন থেকে শিক্ষা নিই, ওদের অভ্যাস যেন আমাদেরকে পেয়ে না বসে। আল্লাহর চূড়ান্ত শাস্তি যেন আমরা নিজেদের উপর টেনে না আনি।
Comment