Announcement

Collapse
No announcement yet.

যুগে যুগে শাসকের দরবারে নির্ভীক আলিম সমাজ

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • যুগে যুগে শাসকের দরবারে নির্ভীক আলিম সমাজ

    যুগে যুগে শাসকের দরবারে নির্ভীক আলিম সমাজ

    শাসক এবং আলিম সমাজ। প্রত্যেক যুগের আলোচিত এক অধ্যায়। পৃথিবীর ইতিহাসে কেমন ছিল শাসকদের সাথে আমাদের আসলাফের আচরণ? পাকিস্তানের প্রখ্যাত একজন সাংবাদিক তুলে ধরেছেন তার বিশেষ কলামের মাধ্যমে ইতিহাসের সেই সোনালী আখ্যান।
    প্রিয় পাঠক! চলুন এবার দেখা নেয়া যাক ইতিহাসের কতিপয় সাড়া জাগানো ঈমানদীপ্ত দাস্তান।
    ----------
    এক প্রবল দাপটধারী শাসক সে যুগের বিশিষ্ট আলিমকে রাষ্ট্রের প্রধান বিচারপতির পদ গ্রহনের প্রস্তাব দিলেন। কিন্তু সেই আলিম এই প্রস্তাব প্রত্যাক্ষান করলেন। ফলে সে আলিমকে কারাবন্দি হতে হল।
    সেই দুনিয়া বিমুখ আলিম ছিলেন ইমাম আবু হানিফা রহ.। তাঁকে কারাগারে নিক্ষেপ করা সেই শাসক ছিল দ্বিতীয় আব্বাসি খলীফা আবু জাফর আব্দুল্লাহ ইবনে মানসূর।
    ইমাম আবু হানিফা রহ. শাসকের দরবার থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করতেন। খলীফা মানসূর ইমাম আবু হানিফা রহ.কে নিজের প্রধান বিচারপতির পদ প্রস্তাব করলে ইমামে আজম রহ. নিজেকে সে পদের অযোগ্য বলে দাবি করলেন। এতে খলীফা ক্রোধে ফেটে পড়লেন। কারণ সে যুগে প্রধান বিচারপতিকে খলীফার নায়েবের মর্যাদা দেওয়া হতো।
    খলীফা ঔদ্ধত্য স্বরে বললেন, তুমি মিথ্যা বলছো। এ কথার প্রতি উত্তরে ইমাম আবু হানিফা রহ.- এর জবাব ছিল, আমার দাবি মিথ্যা হলে সত্যিই আমি এই পদের অনুপযোগী। কারণ, কোন মিথ্যাবাদী প্রধান বিচারপতি হতে পারে না। এই উত্তর ইমাম আজম রহ.-এর জেল জীবনের কারণ হয়ে দাঁড়াল। এরপর তাঁর ছাত্র আবু ইউসুফ রহ.কে প্রধান বিচারপতি বানানো হল।
    জেলে ইমাম আবু হানিফা রহ.- এর উপর নির্মম নির্যাতন করা হতো, যেন তিনি খলীফার প্রস্তাব মেনে নেন। কিন্তু তিনি সে যুগের শাসকের ইচ্ছার সামনে মাথা ঝুঁকাননি। ফলে জেল থেকে তাঁর জানাজা বের হয়েছিল। বাগদাদে তাঁর জানাজায় জনস্রোত নেমেছিল। আল- মানসূর ইমাম সাদেক রহ. কেও জোরপূর্বক নিজের আনুগত্য শিকার করতে বাধ্য করেছিল। তিনি এতে সায় না দিলে তাকেও কারাবন্দি করেছিলেন আল মানসূর। কেউ কেউ বলেন আল-মানসূরের নির্দেশে ইমাম জাফর সাদেক রহ.কে বিষ পান করানো হয়েছিল।
    ইমাম মালেক ইবনে আনাস রহ.ও এমন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। যখন মদীনায় খলীফা মানসূরের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হল, খলীফার আনুগত্যের শপথ নেওয়া সবার জন্য আবশ্যক। ইমাম মালেক রহ. নির্দ্বিধায় ফতোয়া দিয়েছিলেন, খলীফার আনুগত্যের উপর বাধ্য করা জায়েজ নেই। এই ফতোয়া তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়াল। এ কারণে তাকে গ্রেফতার করে জনসম্মুখে চাবুক মারা হল।
    [color="#ff0000"]যে সময় ইমাম আবু হানিফা, জাফর সাদেক, ইমাম মালেক রহ. স্বৈরাচারী শাসকের সামনে মাথা উঁচু করে সত্য বলছিলেন, তখন খলীফার দরবারে এমন আলিমও ছিলেন, যারা খলীফার তোষামোদি করে তার প্রিয় হিসেবে গণ্য হয়েছিলেন। (এটা সবযুগেই ছিল, বর্তমানেও আছে)/color]
    কিন্তু খলীফার তোষামোদি করা সেই আলিমদের ইতিহাস আজ উম্মাহ ভুলে গেছে। বাদশার সামনে উচ্চস্বরে সত্য বলে হাসি মুখে কারা বরণ করে নেওয়া, জনসম্মুখে চাবুকের বারি খাওয়া আলেমেরাই ইতিহাসে বরণীয় হয়ে আছেন।
    সত্যের কণ্ঠস্বর হয়ে ইতিহাসে ভাস্বর হয়ে থাকা আলিমদের কাতারে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ.ও অন্তর্ভূক্ত ছিলেন।
    আব্বাসি খলীফা আল মামুনের দরবারি কিছু আলিম কুরআনকে আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টি অভিহিত করাসহ আরো বেশ কিছু ভ্রান্ত মতবাদ উদ্ভাবন করেছিল। ইমাম আহমদ রহ. অপকটে তার বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, কুরআনকে আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টি মনে করা কুফর।
    খলীফা আল মামুন ইমাম আহমদ রহ.-এর কথাকে নিজের জন্য অপমান মনে করে তাকে জেলে বন্দি করলেন।
    কিছুদিন পর খলীফা ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ. ও তাঁর সাথী মুহাম্মদ ইবনে নূহ রহ.কে আবার দরবারে ডাকলেন। যখন তারা বেড়ি পরা অবস্থায় খলীফার কাছে যাচ্ছিলেন, তখন খলীফার এক কর্মচারি তাদের দেখে কেঁদে ফেললেন এবং বললেন, কুরআন আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টি খলীফার এই মতাদর্শ না মানলে আজ আপনাদের শিরচ্ছেদ করে ফেলবে।
    একথা শুনে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ. দু‘আ করলেন , হে আল্লাহ সত্যিই যদি কুরআন তোমার সৃষ্টি না হয়ে তোমার কালাম হয়ে থাকে, তাহলে এই স্বৈরাচারী মামুনের সাথে আমাদের যেন আর দেখা না হয়। ইমাম হাম্বল রহ.-এর এই দু‘আর পরে সে রাতেই খলীফা আল মামুন মারা যায়।
    আল মামুনের মৃত্যূর পরে তার ভাই মুতাসিম বিল্লাহ ক্ষমতায় বসেন। এ সময় মুহাম্মদ ইবনে নূহ রহ.-এর ইন্তেকাল হয়ে যায়। খলীফা মুতাসিম বিল্লাহ ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ. ও দরবারি আলিমদের মাঝে মুনাযারার ব্যবস্থা করেন।
    মুনাযারায় দরবারি আলেমেরা হেরে গেলে তারা খলীফাকে বলে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল শুধু আমাদের নয় মহিমান্বিত খলীফাকেও কাফের অভিহিত করেছেন।
    এতে খলীফা রাগান্বিত হয়ে ইমাম আমদ ইবনে হাম্বল রহ.কে বিবস্ত্র করে চাবুক মারেন। এই অত্যাচারের সামনে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলের অবিচলতা দেখে মুতাসিম বিল্লাহ দিশেহারা হয়ে যায়। চাবুকের আঘাতে আহমদ ইবনে হাম্বল রহ. অজ্ঞান হয়ে পড়েন।
    এ অবস্থায় না আবার তিনি ইন্তেকাল করেন এই ভয়ে খলীফা তাঁকে ছেড়ে দেন। এই সময়টা ছিল রমজান মাস। আহমদ ইবনে হাম্বল রহ. রোজা রেখেছিলেন তাঁকে অর্ধমৃত অবস্থায় ইসহাক ইবনে ইবরাহীমের ঘরে নিয়ে আসা হয়। জ্ঞান ফিরলে তাঁকে বলা হয় আপনার শরীর থেকে প্রচুর রক্ত ঝরছে, আপনি রোজা ভেঙ্গে ফেলুন। কিন্তু এ অবস্থায় আহমদ ইবনে হাম্বল রহ. জোহর নামায আদায় করেন এবং বলেন হযরত ওমর ফারুক রাযি. আহত অবস্থায় নামায পড়েছিলেন।
    তিনি সন্ধ্যায় ইফতার করেন এবং সেই জল্লাদদের ক্ষমা করে দেন, কিন্তু মানুষকে গোমরাহকারী দরবারি আলিমদের ক্ষমা করেননি। (আজকের যুগের এমন আলিমরাও ক্ষমার অযোগ্য বলে মনে করি।)
    ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ. ইন্তেকাল করার পর তাঁর জানাজায় লাখো মানুষের ঢল নামে। সে জানাজা দেখে হাজার হাজার খৃষ্টান মুসলমান হয়ে যায়।
    ইমাম শাফী রহ. থেকে নিয়ে ইমাম মূসা কাযিম রহ., আব্দুর রহিম মুহাদ্দেসে দেহলভী রহ., মুজাদ্দেদে আলফে সানী রহ. এবং যুগে যুগে অনেক মুজতাহিদ আলিম সত্যকে প্রতিষ্ঠিত রাখতে যুগের স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে গেছেন, নির্মম নির্যাতন সয়েছেন।
    এ কারণেই ইতিহাস এই আলিমদের কথা সোনালী অক্ষরে সংরক্ষণ করেছে। বিপরীতে দরবারি তোষামোদকারী আলিমরা ঘৃণাভরে উপেক্ষিত হয়েছে।

    একবার খলীফা হারুনুর রশিদ ইমাম মালেক রহ.কে তার সাথে সাক্ষাতের জন্য বার্তা পাঠালেন। ইমাম মালেক রহ. উত্তর পাঠালেন, “ইলমের সাক্ষাতে নিজেকে উপস্থিত হতে হয়, ইলম কারো কাছে যায় না।”
    শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দেসে দেহলভী রহ. তার ‘আনফাসুল আরেফীন’ নামক গ্রন্থে লিখেছেন, একবার মোগল বাদশা আলমগীর আব্দুর রহিম মুহাদ্দেসে দেহলভী রহ.- এর সাথে দেখা করতে চাইলেন। জবাবে তিনি লিখেছিলেন, “আল্লাহওয়ালারা এ ব্যাপারে একমত যে, যেই ভিখারি বাদশাদের দরবারে উপস্থিত হয় না সেই উত্তম।”
    ইতিহাস সেসব আলিমদেরই অনুসরণীয় বলে গ্রহণ করেছে, যারা ক্ষমতাসীনদের দরবারে তোষামোদী করেননি, বরং ক্ষমতাসীনরা নিজেই তাদের কাছে ভিড়েছেন।

    আজকের যুগের আলিম সমাজ ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিবেন কি? আজ যে উপমহাদেশের আলিম সমাজ নতুন ইতিহাস সৃষ্টির দ্বারপ্রান্তে উপনীত। তাই এখনই তাদেরকে শিক্ষা নিতে হবে যে, তিনি ইতিহাসে বরণীয় হয়ে থাকবেন, নাকি ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবেন? শাসকের কাছে নির্ভীক আলিম হবেন নাকি তোষামোদী দরবারী আলিম হবেন? এখন সিদ্ধান্ত আপনাদের হাতেই...আগত ভবিষ্যত-ই বলে দিবে আপনারা কি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন? আর মনে রাখবেন, “ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হয়” এই অমোঘ নীতিকে কখনো ভুলে যাবেন না।
    -------------------------------
    সংগ্রহীত ও পরিমার্জিত এবং ঈষৎ পরিবর্তিত
    ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

  • #2
    মাশাআল্লাহ,,,জাযাকাল্লাহ,,,
    অনেক সুন্দর ও উপকারী পোষ্ট করেছেন।
    আল্লাহ তায়া'লা আপনার মেহনতকে কবুল করুন,আমীন।
    ’’হয়তো শরিয়াহ, নয়তো শাহাদাহ,,

    Comment


    • #3
      Originally posted by abu ahmad View Post
      যে সময় ইমাম আবু হানিফা, জাফর সাদেক, ইমাম মালেক রহ. স্বৈরাচারী শাসকের সামনে মাথা উঁচু করে সত্য বলছিলেন, তখন খলীফার দরবারে এমন আলিমও ছিলেন, যারা খলীফার তোষামোদি করে তার প্রিয় হিসেবে গণ্য হয়েছিলেন। (এটা সবযুগেই ছিল, বর্তমানেও আছে)
      শিয়াদের এক কিতাবে দেখেছিলাম এই অসৎ আলেমদের কাতারে ইবনে ইসহাকের নাম এনেছে । অসৎ হওয়ার কারণ হিসেবে বলেছে,ওই সময় ভাল আলেমরা যেমন জাফর সাদেক ইমাম আবু হানিফা সহ ভাল এবং সৎ আলেমগণ শাসকদের নির্যাতন সহ্য করেছেন । সেখানে ইবনে ইসহাক শাসকের প্রিয় ব্যক্তি ছিলেন । নিশ্চয় তার মধ্যে কোন না কোন সমস্যা আছে । তা নাহলে কেন শাসকের প্রিয় ব্যক্তি হবেন?
      আর এজন্য তারা আহলুসসুন্নাহ ওয়াল জামাআর সমস্ত সীরাতকে অস্বিকার করে । যদি কোন ভাই ইবনে ইসহাক সম্পার্কে ভালভাবে জেনে থাকেন তবে কমেন্টে জানালে খুশি হব ।
      "জিহাদ ঈমানের একটি অংশ ৷"-ইমাম বোখারী রহিমাহুল্লাহ

      Comment


      • #4
        মাশা আল্লাহ! উপকারী পোস্ট।
        আসলেই যুগে যুগে হকপন্থী আলিম সমাজ তাগুত শাসকদের সাথে আপোষহীন ছিলেন। আর এমন আলিমরাই আমাদের আকাবির, আমাদের গর্বের ধন এবং মাথার তাজ।
        “ধৈর্যশীল সতর্ক ব্যক্তিরাই লড়াইয়ের জন্য উপযুক্ত।”-শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ.

        Comment


        • #5
          মাশাআল্লাহ,,,
          ভাই অনেক সুন্দর ও গুরুত্ব পূর্ণ পোষ্ট করেছেন।
          আল্লাহ তা'আলা আপনার মেহনতকে কবুল করুন।
          আমীন
          হয়তো শরীয়াহ নয়তো শাহাদাহ

          Comment


          • #6
            হে আল্লাহ্ হকপন্থি আলিমগনই আমাদের মাথার তাজ, আল্লাহ শায়েখদের হকের উপর সর্বদা অটল রাখুন,
            নিরাপদ ও সুস্থ রাখুন আমীন।

            Comment


            • #7
              আলহামদুলিল্লাহ অনেক সুন্দর হয়েছে।
              আল্লাহ ভাইদের কাজকে কবুল করুন। এরকম পোস্ট আরও বেশি বেশি করার তৌফিক দিন যা পড়ে মুসলমানদের গোমরাহী দূর হয়ে যায়।
              আমাদের সকলকে আল্লাহ হেফাজত করুন।
              فَقَاتِلُوْۤا اَوْلِيَآءَ الشَّيْطٰنِ

              Comment


              • #8
                যারা পোস্টটি পড়েছেন ও কমেন্ট করেছেন, সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও শুকরিয়া প্রকাশ করছি। জাযাকুমুল্লাহু খাইরান
                আপনাদের আগ্রহ ও উদ্দীপনা দ্বারা আমার মত ক্ষুদ্র মানুষদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা পাবে, ইনশা আল্লাহ
                ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

                Comment

                Working...
                X