এক.
কী কারণে মুসলিমরা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জায়গা পরিত্যাগ করে আবিসিনিয়ায় এসেছিলেন?
কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁদের অনুমতি দিয়েছিলেন, তাঁদের উপর যে শারীরিক নির্যাতন হচ্ছিলো সেটা থেকে মুক্তি পেতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের হিজরতের অনুমতি দিয়েছিলেন। ইমাম হাজম বলেন, “যখন মুসলিমদের সংখ্যা আর তাঁদের উপর নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে গেল, তখন আল্লাহ তাঁদের হিজরতের অনুমতি দেন।”
দুই.
তাঁদের ঈমান রক্ষার জন্য। অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করার ক্ষমতা সবার থাকে না। চাপের মুখে কিছু মানুষ তাদের ঈমান ধরে রাখতে পারে না, বিলালের মত মানসিক শক্তি সবার থাকে না কিংবা খাব্বাব বিন আরাতের মতো পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে সবাই যেতেও পারে না। তাই কেউ যদি কোথাও তার দ্বীন নষ্ট হয়ে যাবার ব্যাপারে ভয় করে, তাহলে তাদের উচিত অন্য কোথাও চলে যাওয়া। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “একজন ঈমানদারের উচিত নয় সাধ্যাতীত কষ্ট নিজের উপর চাপিয়ে নেয়া, যার কারণে তাকে লাঞ্চিত হতে হয়।”
তাই যদি একজন মানুষের জন্য কোনো কিছুর ভার বহন করা অসম্ভব হয়ে থাকে, তখন তার উচিত নয় নিজেকে সেই পরিস্থিতির মধ্যে ঠেলে দেওয়া।
উদাহরণ স্বরূপ, একবার এক লোক ডিমের আকারের একটা খাঁটি সোনা নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দিয়ে বলল, “এটা আমার সাদাক্বাহ আর আমার কাছে সম্পদ হিসেবে শুধু এটাই আছে।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মন খারাপ করে বললেন,
“তোমাদের কেউ কেউ তাদের সমস্ত সম্পদ সাদাকাহ করে ফেলো এবং তারপর তারা আবার (বিপদে পড়ে) আমার কাছে সাহায্যের জন্য আসো।”
সুতরাং, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চান নি এই মানুষটা তার সমস্ত কিছু দান করে বিপদে পরুক। তারপর পুরো হাত খালি করে আবার সাহায্যের জন্য হাত পাতুক। অর্থাৎ সামর্থ্য বুঝে দান করা উচিত। কিন্তু আমরা এটাও জানি, আবু বকর সিদ্দীক্ব রাযি. একবার তাঁর সমস্ত সম্পত্তি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে দান করে দেন আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেই কাজের প্রশংসা করেন।
প্রশ্ন হচ্ছে দুটো একই রকম কাজের প্রতি তাঁর আচরণ ভিন্ন হওয়ার কারণ কী ছিলো? জবাব হলো এই, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানতেন যে, সবকিছু দান করে দিলেও আবু বকর রাযি. এর পরিস্থিতি সামাল দেয়ার ক্ষমতা আছে, যা ঐ লোকের ছিলো না। আবু বকর রাযি. তাঁর সমস্ত সম্পদ দান করে দেওয়ার পরেও তিনি কখনই ভিক্ষা চাওয়ার মত নিচে নামবেন না।
যাই হোক, সবাই আবু বকর রাযি. এর মতো না, তাই অন্যদের উচিত নয় নিজেদের এমন কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দেওয়া, যা সামাল দেওয়ার সামর্থ্য তারা রাখে না।
ইবনে ইসহাক্ব বলেন, “মুসলিমরা তাদের ঈমান ধ্বংসের ভয়ে মক্কা ছেড়ে আবিসিনিয়ায় হিজরত করলেন”, যা ছিলো এই পয়েন্টের সারকথা।
তিন.
সাইয়্যেদ কুতুবের একটা বাণী আছে। তিনি বলেন, “এটা বলা সমীচিন হবে না যে তাঁরা শুধুমাত্র ব্যক্তিগত নিরাপত্তার স্বার্থে হিজরত করেন। কেননা এই মুহাজিরীনদের মধ্যে ছিলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর এমন কিছু অনুসারী ও তাঁর কিছু স্বগোত্রীয় লোক, যাঁরা ছিলেন খুব প্রভাবশালী পরিবার থেকে আগত ও বিপুল সম্পদের মালিক।”
তাঁদের বেশির ভাগ ছিলেন কুরাইশ বংশের, জাফর বিন আবি তালিব তাঁদের একজন। তাঁদের কিছু সংখ্যক ছিলেন অল্পবয়স্ক যুবক, যাঁরা নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিরাপত্তা দিতেন। এঁদের কয়েকজন হলেন যুবাইর বিন আওয়াম, আবদুর রহমান বিন আউফ, উসমান বিন আফফান প্রমুখ।
মুহাজিরীনদের মধ্যে কুরাইশের অভিজাত পরিবারের কয়েকজন নারীও ছিলেন, যেমন উম্মে হাবিবা, তিনি ছিলেন আবু সুফিয়ানের মেয়ে। কুরাইশ নেতার কন্যা হিসেবে তিনি কখনও মক্কায় নির্যাতনের শিকার হন নি, কেউ তাঁর গায়ে স্পর্শ পর্যন্ত করার সাহস করে নি, তবু তিনি হিজরত করেছেন।
এই হিজরতের ঘটনা কুরাইশদের সম্ভ্রান্ত ও প্রভাবশালী পরিবারগুলোর ধর্মীয় ও সামাজিক ভিত্তিতে নাড়া দেয়। কুরাইশ রাজবংশের জন্য এর চেয়ে বড় অপমান বা হুমকির কিছু হতে পারে না, যখন তারা দেখল তাদের সবচেয়ে ক্ষমতাবান ও সম্ভ্রান্ত ছেলে মেয়েরা বিবেক ও ধর্মীয় কারণে আপন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য আর গোত্রীয় দেশকে পেছনে ফেলে চলে যাচ্ছে।
সায়্যিদ কুতুবের মতে, এই ঘটনার কারণে কুরাইশরা বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে পড়ে। আরবে কুরাইশদের উচুঁ অবস্থানের কারণ ছিলো তাদের উচ্চ মর্যাদা, মূল্যবোধ এবং কা’বার অভিভাবকত্ব; এ কারণে নয় যে তারা সামরিকভাবে শক্তিশালী। তাই মানুষ যখন দেখল সম্ভ্রান্ত লোকজন মক্কা ছেড়ে চলে যাচ্ছে, তাদের জান-মাল ও দ্বীনের নিরাপত্তার জন্য, তখন সেটা কুরাইশদের জন্য বিব্রতকর ছিলো।
চার.
আরেকজন গ্রন্থকার মুনির আল গাদওয়ানের মতে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কার বাইরে দ্বিতীয় আরেকটি ঘাঁটি বানাতে চেয়েছিলেন। কারণ, যদি মক্কায় কিছু ঘটে যায় তাহলে যেন অন্য কোথাও হলেও তাদের ধর্ম টিকে থাকতে পারে। এরপর যখন মুসলিমদের সংখ্যা বেড়ে যায়, তখন থেকে মুসলিমরা দু’টো দলে আলাদা থাকতে শুরু করে, এক দল মক্কায় থেকে যায় এবং আরেক দল হিজরত করে আবিসিনিয়ায়।
From: The life of Muhammad (sw) by anwar al awlaqi رحيم هالله
কী কারণে মুসলিমরা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জায়গা পরিত্যাগ করে আবিসিনিয়ায় এসেছিলেন?
কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁদের অনুমতি দিয়েছিলেন, তাঁদের উপর যে শারীরিক নির্যাতন হচ্ছিলো সেটা থেকে মুক্তি পেতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের হিজরতের অনুমতি দিয়েছিলেন। ইমাম হাজম বলেন, “যখন মুসলিমদের সংখ্যা আর তাঁদের উপর নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে গেল, তখন আল্লাহ তাঁদের হিজরতের অনুমতি দেন।”
দুই.
তাঁদের ঈমান রক্ষার জন্য। অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করার ক্ষমতা সবার থাকে না। চাপের মুখে কিছু মানুষ তাদের ঈমান ধরে রাখতে পারে না, বিলালের মত মানসিক শক্তি সবার থাকে না কিংবা খাব্বাব বিন আরাতের মতো পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে সবাই যেতেও পারে না। তাই কেউ যদি কোথাও তার দ্বীন নষ্ট হয়ে যাবার ব্যাপারে ভয় করে, তাহলে তাদের উচিত অন্য কোথাও চলে যাওয়া। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “একজন ঈমানদারের উচিত নয় সাধ্যাতীত কষ্ট নিজের উপর চাপিয়ে নেয়া, যার কারণে তাকে লাঞ্চিত হতে হয়।”
তাই যদি একজন মানুষের জন্য কোনো কিছুর ভার বহন করা অসম্ভব হয়ে থাকে, তখন তার উচিত নয় নিজেকে সেই পরিস্থিতির মধ্যে ঠেলে দেওয়া।
উদাহরণ স্বরূপ, একবার এক লোক ডিমের আকারের একটা খাঁটি সোনা নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দিয়ে বলল, “এটা আমার সাদাক্বাহ আর আমার কাছে সম্পদ হিসেবে শুধু এটাই আছে।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মন খারাপ করে বললেন,
“তোমাদের কেউ কেউ তাদের সমস্ত সম্পদ সাদাকাহ করে ফেলো এবং তারপর তারা আবার (বিপদে পড়ে) আমার কাছে সাহায্যের জন্য আসো।”
সুতরাং, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চান নি এই মানুষটা তার সমস্ত কিছু দান করে বিপদে পরুক। তারপর পুরো হাত খালি করে আবার সাহায্যের জন্য হাত পাতুক। অর্থাৎ সামর্থ্য বুঝে দান করা উচিত। কিন্তু আমরা এটাও জানি, আবু বকর সিদ্দীক্ব রাযি. একবার তাঁর সমস্ত সম্পত্তি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে দান করে দেন আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেই কাজের প্রশংসা করেন।
প্রশ্ন হচ্ছে দুটো একই রকম কাজের প্রতি তাঁর আচরণ ভিন্ন হওয়ার কারণ কী ছিলো? জবাব হলো এই, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানতেন যে, সবকিছু দান করে দিলেও আবু বকর রাযি. এর পরিস্থিতি সামাল দেয়ার ক্ষমতা আছে, যা ঐ লোকের ছিলো না। আবু বকর রাযি. তাঁর সমস্ত সম্পদ দান করে দেওয়ার পরেও তিনি কখনই ভিক্ষা চাওয়ার মত নিচে নামবেন না।
যাই হোক, সবাই আবু বকর রাযি. এর মতো না, তাই অন্যদের উচিত নয় নিজেদের এমন কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দেওয়া, যা সামাল দেওয়ার সামর্থ্য তারা রাখে না।
ইবনে ইসহাক্ব বলেন, “মুসলিমরা তাদের ঈমান ধ্বংসের ভয়ে মক্কা ছেড়ে আবিসিনিয়ায় হিজরত করলেন”, যা ছিলো এই পয়েন্টের সারকথা।
তিন.
সাইয়্যেদ কুতুবের একটা বাণী আছে। তিনি বলেন, “এটা বলা সমীচিন হবে না যে তাঁরা শুধুমাত্র ব্যক্তিগত নিরাপত্তার স্বার্থে হিজরত করেন। কেননা এই মুহাজিরীনদের মধ্যে ছিলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর এমন কিছু অনুসারী ও তাঁর কিছু স্বগোত্রীয় লোক, যাঁরা ছিলেন খুব প্রভাবশালী পরিবার থেকে আগত ও বিপুল সম্পদের মালিক।”
তাঁদের বেশির ভাগ ছিলেন কুরাইশ বংশের, জাফর বিন আবি তালিব তাঁদের একজন। তাঁদের কিছু সংখ্যক ছিলেন অল্পবয়স্ক যুবক, যাঁরা নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিরাপত্তা দিতেন। এঁদের কয়েকজন হলেন যুবাইর বিন আওয়াম, আবদুর রহমান বিন আউফ, উসমান বিন আফফান প্রমুখ।
মুহাজিরীনদের মধ্যে কুরাইশের অভিজাত পরিবারের কয়েকজন নারীও ছিলেন, যেমন উম্মে হাবিবা, তিনি ছিলেন আবু সুফিয়ানের মেয়ে। কুরাইশ নেতার কন্যা হিসেবে তিনি কখনও মক্কায় নির্যাতনের শিকার হন নি, কেউ তাঁর গায়ে স্পর্শ পর্যন্ত করার সাহস করে নি, তবু তিনি হিজরত করেছেন।
এই হিজরতের ঘটনা কুরাইশদের সম্ভ্রান্ত ও প্রভাবশালী পরিবারগুলোর ধর্মীয় ও সামাজিক ভিত্তিতে নাড়া দেয়। কুরাইশ রাজবংশের জন্য এর চেয়ে বড় অপমান বা হুমকির কিছু হতে পারে না, যখন তারা দেখল তাদের সবচেয়ে ক্ষমতাবান ও সম্ভ্রান্ত ছেলে মেয়েরা বিবেক ও ধর্মীয় কারণে আপন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য আর গোত্রীয় দেশকে পেছনে ফেলে চলে যাচ্ছে।
সায়্যিদ কুতুবের মতে, এই ঘটনার কারণে কুরাইশরা বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে পড়ে। আরবে কুরাইশদের উচুঁ অবস্থানের কারণ ছিলো তাদের উচ্চ মর্যাদা, মূল্যবোধ এবং কা’বার অভিভাবকত্ব; এ কারণে নয় যে তারা সামরিকভাবে শক্তিশালী। তাই মানুষ যখন দেখল সম্ভ্রান্ত লোকজন মক্কা ছেড়ে চলে যাচ্ছে, তাদের জান-মাল ও দ্বীনের নিরাপত্তার জন্য, তখন সেটা কুরাইশদের জন্য বিব্রতকর ছিলো।
চার.
আরেকজন গ্রন্থকার মুনির আল গাদওয়ানের মতে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কার বাইরে দ্বিতীয় আরেকটি ঘাঁটি বানাতে চেয়েছিলেন। কারণ, যদি মক্কায় কিছু ঘটে যায় তাহলে যেন অন্য কোথাও হলেও তাদের ধর্ম টিকে থাকতে পারে। এরপর যখন মুসলিমদের সংখ্যা বেড়ে যায়, তখন থেকে মুসলিমরা দু’টো দলে আলাদা থাকতে শুরু করে, এক দল মক্কায় থেকে যায় এবং আরেক দল হিজরত করে আবিসিনিয়ায়।
From: The life of Muhammad (sw) by anwar al awlaqi رحيم هالله
Comment