ইসলামে গুপ্ত হত্যা (১ম পর্ব) ⚔️শাতিম আবু রাফে' হত্যা ও আমাদের শিক্ষা
আবু রাফে' এক কুলাঙ্গার বেয়াদবের নাম। জাহান্নামের এই কীট বসবাস করতো হেজাজের এক দুর্গে। সে ছিল বিরাট এক ব্যবসায়ী। সে রাসুলুল্লাহর শানে বেয়াদবি করতো। কটুক্তি করত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাতেমে রসূলকে হত্যা করার জন্য ছোট্ট একটি বাহিনী পাঠালেন। আমির বানালেন সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ বিন আতিক রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু কে। রাসুলের সরাসরি নির্দেশ ও নির্দেশনায় আব্দুল্লাহ ইবনে আতিক ও তার দল ছুটেছেন শাতিমদের পাওনা বুঝিয়ে দেবার আশায়। শাতিমকে হত্যা না করে ফিরবেন না এমন মনোভাব তাদের। দূর্গের কাছাকাছি গিয়ে আমির আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু সাথীদেরকে বললেনঃ তোমরা এখানে অবস্থান করো আমি কোন বাহানা করে দুর্গে ঢুকতে পারি কিনা। হত্যা করতে হবে গুপ্তভাবে তাই হাটি হাটি পা পা করে একাকী দুর্গের প্রধান ফটকের নিকটে চলে আসলেন। দিন পেরিয়ে সন্ধা নেমে আসলো। এমতাবস্থায় দুর্গের প্রহরী ফটক বন্ধ করতে যাচ্ছিল। আব্দুল্লাহ বিন আতিক রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হঠাৎ অন্ধকারের মধ্যে পেশাবের ভান করে বসে পড়লেন। চেহারা ও হাত পা ঢেকে রেখেছেন কাপড় দিয়ে (বর্তমান যুগের গেরিলা মুজাহিদরা সম্ভবত চেহারা ঢেকে রাখার আদর্শ গ্রহণ করেছেন এখান থেকেই) প্রহরী ডাক দিয়ে বলল ঢুকতে চাইলে দ্রুত ঢুকো এখনই ফটক বন্ধ করে দেওয়া হবে। তখনই সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ বিন আতিক রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু ঢুকে পড়লেন দুর্গে। সোজা চলে গেলেন বাথানে/আস্তাবলে। চুপটি মেরে বসে থাকলেন এক কোণে। সুকৌশলে পর্যবেক্ষণ করছেন প্রহরীদের গতিবেধি। দুর্গের সকলের ঘুমানোর অপেক্ষা করছেন। এদিকে চ্যালা চামুন্ডারা আড্ডা শেষ করে আবু রাফে র ঘর থেকে বের হলো। যার যার কামরায় গিয়ে দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়ল। প্রহরী আবু রাফের ঘরের দরজাগুলোতে তালা লাগিয়ে চাবিগুলো একটা খুটির উপর/কুলংগিতে ঝুলিয়ে রেখে ঘুমিয়ে পড়ল। রসুলের সাহাবী টিপ টিপ করে বের হয়ে চাবি গুলোর নিকটে গেলেন। মনে মনে বলছেন যদি কেউ টের পেয়ে যায় তাহলে আস্তে করে কেটে পড়বো। অতঃপর চাবি গুলো নিয়ে প্রথমে চ্যালাদের রুমে বাহির থেকে তালা লাগিয়ে দিলেন। যাতে আওয়াজ শুনে ও বের হতে না পারে। এরপর সোজা চলে গেলেন আবু রাফে'এর ঘরে। আবু রাফে' থাকতো উপরের চিলেকোঠায়। একেক দরজা খুলে ভিতর দিয়ে ছিটকানি লাগিয়ে দিলেন যাতে কেউ টের পেলেও যেন ভিতরে ঢোকার পূর্বেই কুলাঙ্গার বেয়াদবকে জাহান্নামে পাঠাতে পারেন। একপর্যায়ে ঢুকে পড়লেন আবু রাফের রুমে। ঘুটঘুটে অন্ধকার। নির্ণয় করা যাচ্ছিল না আবু রাফে' এর অবস্থান। তাই সাহাবী ডাক দিলেন আবু রাফে'!!!!! হতচকিয়ে উঠে বলল কে রে? আওয়াজের স্থান লক্ষ্য করে মেরে দিলেন এক কোপ। চেচিয়ে উঠলো রসুলের দুশমন। আব্দুল্লাহ বিন আতিক রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু একটু দেয়ালের আড়ালে অপেক্ষা করে আবার এসে (সুর পাল্টিয়ে) বললেন কি হয়েছে আবু রাফে'!!!! সে বললঃ তোর মা সর্বহারা হোক তোরা কই ছিলি? আমাকে মাত্র আঘাত করল একজন ব্যক্তি!!!এবার দ্বিতীয় কোপ দিয়ে জখম করলেন ভালো মত। কিন্তু তবুও মরেনি সে। (এক রেওয়াতে আছে আবার আড়ালে গিয়ে কিছুক্ষণ পর আবার এসে (সুর পাল্টিয়ে) বললেন কি হয়েছে আওয়াজ শুনলাম যে!!! এবার দেখলেন আবু রাফে' চিৎ হয়ে শুয়ে রয়েছে। কাছে গিয়ে তরবারির ধারাল আগা ঢুকিয়ে দিলেন তার পেটের মধ্যে। রসুলের দুশমনের ইহলীলা সাংগ হয়ে গেল। এবার আব্দুল্লাহ বিন আতিক রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু ফিরবেন সাথীদের নিকটে। সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামার সময় সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে পায়ের নলা ভেঙ্গে গেল। মাথার পাগড়ী টা খুলে পা টা কে বেঁধে নিলেন শক্ত করে। অতঃপর প্রধান ফটকের কাছে গিয়ে বসে রইলেন যতক্ষণ না আবু রাফে' এর মৃত্যুর ঘোষণা আসে ততক্ষণ পর্যন্ত দুর্গ ত্যাগ করবেন না। অতঃপর মোরগের ডাক শোনা গেল। লোকেরা ঘুম থেকে ওঠা শুরু করল। ঘোষণা আসলোঃ শোক সংবাদ, শোক সংবাদ, আবু রাফে' মৃত্যুবরণ করেছে। অতঃপর আব্দুল্লাহ বিন আতিক রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু নিশ্চিত হয়ে সাথীদের নিকট ফিরে গেলেন। (খুশি প্রকাশ করে) বললেন আরে,,,, চলো কাজ সেরে দিছি আলহামদুলিল্লাহ। অতঃপর রসুলের দরবারে গিয়ে ঘটনা খুলে বললেন। রাসূল ও শুনে খুশি হলেন। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। শুকরিয়া আদায় করলেন। অতঃপর বললেন তোমার পা ছড়িয়ে দাও। অতঃপর রসূল আব্দুল্লাহ বিন আতিক রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর পায়ে হাত মালিশ করে দিলেন ফলে পা এমন ভালো হয়ে গেল যেন পূর্বে কিছুই হয়নি।
গুপ্তহত্যা যে ইসলামে বৈধ সেটা এই ঘটনা থেকেই প্রমাণিত হয় যেটা স্বয়ং রাসূলুল্লাহর নির্দেশ ও নির্দেশনায় সংঘটিত হয়েছিল। অতএব এই জামানার জাহান্নামের কীটগুলোকে জাহান্নামে পৌঁছানোর জন্য গুপ্ত হত্যা করা বৈধ। এজন্য যে যেখান থেকেই পারেন শাতিমে রাসুল দের যোগ্য পাওনা বুঝিয়ে দিন। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে শাতিমে রাসূলদের পাওনা বুঝিয়ে দিয়ে নবী প্রেমিকদের কাতারে শামিল হওয়ার তৌফিক দান করেন আমিন।
বিজয়অতিসন্নিকটে,,,,,
Comment