আফগানিস্তানে ক্রুসেডার মার্কিন জোট বাহিনীর আগ্রাসনের ১৯ বছর এবং এর প্রকৃত কারণ
১৯ বছর আগে ২০০১ সালে ক্রুসেডার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র জোট বাহিনী নির্মম আগ্রাসন শুরু করে মধ্য এশিয়ার দরিদ্র দেশ আফগানিস্তানে। ক্রুসেডার মার্কিন-ন্যাটো জোটের আগ্রাসনের আগে শান্তিপূর্ণভাবে দেশ পরিচালনা করে আসছিল ইমারতে ইসলামিয়ার তালেবান সরকার।
তালেবান প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রের বুনিয়াদ ছিল ইসলাম। ইসলামবহির্ভূত কোনো কর্মকাণ্ড তারা সহ্য করতেন না। দেশটিকে পরিপূর্ণ ইসলামি জীবন-ব্যবস্থার আদলে ঢেলে সাজান, যেখানে ধনী-গরিব সবার জন্যই ছিল ন্যায় ও ইনসাফ। রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে শান্তি প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি বিদেশি দখলদার শক্তির ব্যাপারে তালেবান ছিল বরাবরই আপোষহীন মনভাবের। ফলে উঁচু-নিচু পাহাড় আর টিলায় ঢাকা আফগান ভূমি আগ্রাসী কুফফার দেশগুলোর জন্য সংকীর্ণ হয়ে উঠে। বিপরীতে মু’মিনদের জন্য এই ভূমি হয়ে উঠে প্রশস্ত। বিদেশি কোম্পানী ও সংস্থাগুলোকেও এখানে ইসলামি নিয়মনীতি মেনে বাণিজ্য করতে হতো।
সুদভিত্তিক অর্থনীতির পরিবর্তে শরিয়াহভিত্তিক অর্থনীতি-ব্যবস্থার পত্তন ঘটানো হয়। মানবরচিত কুফরি সংবিধানের পরিবর্তে রাষ্ট্র পরিচালনা করা হয় আল্লাহ্ তা’আলার নির্দেশিত শাশ্বত কুরআনিক নির্দেশ অনুযায়ী। এসবকিছু স্পষ্টই পশ্চিমাদের নোংরা অর্থনীতি ও কুফরি গণতন্ত্রের জন্য বড় এক চ্যালেঞ্জের বিষয়ে পরিণত হয়; কেননা ইসলামি রাষ্ট্রের সার্বিক সফলতা বিশ্ববাসীর সামনে পশ্চিমাদের মুখোশ উন্মোচন করে দেয়। আর এমনটা সহ্য করতে পারেনি ক্রুসেডার অক্ষের শক্তিগুলো।
আফগান ভূমিতে তেল ও গ্যাস লাইন স্থাপন নিয়ে তালেবান সরকারের সাথে পশ্চিমাদের শুরু হয় মতবিরোধ। আফগানিস্তানের তেল-গ্যাস ও অন্যান্য খনিজ সম্পদের বৃত্তান্ত লিখতে বসলেই খলিলজাদের নাম চলে আসে। এই খলিলজাদই হচ্ছে বর্তমান মার্কিন কূটনীতিক ব্যক্তি জালমে খলিলজাদ। আমরা অনেকেই তাকে শুধু একজন কূটনীতিক ব্যক্তি হিসাবেই চিনি। কিন্তু এর আড়ালেও তার আরেকটি পরিচয় হচ্ছে- মার্কিন রিপাবলিকান শিবিরের সবচেয়ে রক্ষণশীল অংশের ঘনিষ্ঠ লোক তিনি; ১৯৮৫ সালের পর থেকেই খালিলজাদ রিপাবলিকান শিবিরের হয়ে কাজ করে আসছে। যুক্তরাষ্ট্রের এই কূটনীতিক দীর্ঘ সময় যুক্ত ছিল তেল কোম্পানি ইউনিকলে। সেখানে তার দায়িত্ব ছিল ‘ঝুঁকি বিশ্লেষক’-এর। তালেবান ক্ষমতাকালীন ইউনিকলের হয়ে আফগানিস্তানের ওপর দিয়ে ৮২০ মাইল লম্বা পাকিস্তান-তুর্কমিনিস্তান গ্যাস পাইপলাইন বসানোর কাজটি (‘সেন্ট-গ্যাস’ প্রকল্প নামে পরিচিত) এগিয়ে নেওয়াই ছিল খলিলজাদের প্রধান দায়িত্ব। ইউনিকল ছাড়াও আরো ২টি কোম্পানি খনিজসম্পদ নিয়ে কাজ করছিল আফগানিস্তানে। সে সময় বছরে দেড়শত (১৫০) মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে ‘সেন্ট-গ্যাস’ প্রকল্পের অনুমোদন দিতে রাজি হয় তালেবান সরকার। তালেবান চাচ্ছিল এই তেল-গ্যাস লাইন থেকে যাতে প্রথমে আফগান জনগণ উপকৃত হন। কিন্তু পশ্চিমা সরকারদের ইশারায় তা মানেনি বিদেশী কোম্পানীগুলো।
তাই তালেবান সরকারও আফগান ভূমি ব্যবহার করতে দেননি পশ্চিমা এসব কোম্পানিকে। এর ফলে আফগানিস্তানে ধীরে ধীরে পশ্চিমা কোম্পানিগুলো দুর্বল হতে শুরু করে, ব্যর্থ হতে থাকে এশিয়া মায়নোর নিয়ে পশ্চিমাদের সাজানো ষড়যন্ত্রের সকল নীল-নকশা। তখন তাদের সামনে দুটি পথই খোলা থাকে, হয়তো তালেবানদের শর্ত মেনে এখানে কাজ করতে হবে নয়তো তালেবান সরকারকে উৎখাত করতে হবে। ক্ষমতা আর শক্তির অহংকারে নিমজ্জিত পশ্চিমারা দ্বিতীয় পথটিকেই বেছে নেয়। তারা ইমারতে ইসলামিয়ার আমির মোল্লা মোহম্মদ ওমর রহিমাহুল্লাহকে হত্যাচেষ্টায় ব্রত হয়। তাঁকে টার্গেট করে বেশ কয়েকবার মিসাইল ও বোমা হামলা চালায়। কিন্তু আল্লাহ্ তা’আলার ইচ্ছায় প্রতিবারই হামলা ব্যর্থ হয়।
সর্বশেষ ক্রুসেডার অ্যামেরিকা আফগানিস্তানে সরাসরি আগ্রসান চালানোর পূর্ণ প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। এদিকে তালেবান ও তাদের সবাচাইতে বড় মিত্র আল-কায়েদা চাচ্ছিল অ্যামেরিকাকে নিজ দেশে থেকে আফগান ভূমিতে এনে উচিৎ শিক্ষা দিতে। পৃথিবীজুড়ে মুসলিম-ভূমিগুলোতে আগ্রাসন চালানো অ্যামেরিকাকে সাপের মাথা বলে চিহ্নিত করেন তৎকালীন আল-কায়েদা প্রধান শাইখ উসামা বিন লাদেন রহিমাহুল্লাহ্।
সর্বশেষ বরকতময় ৯/১১ হামলার মধ্য দিয়ে সাপ (আমেরিকা) তার খোলস ছেড়ে গর্ত থেকে বেরিয়ে ময়দানে চলে আসে; ২০০১ সালের ০৭ অক্টোবর আফগানিস্তানে সামরিক অভিযান শুরু করে।
পশ্চিমা ক্রুসেডার ও ন্যাটো জোটের আগ্রাসন শুরুর পর আমিরুল মু’মিনিন মোল্লা মুহাম্মদ ওমর (রাহিমাহুল্লাহ্) তাঁর দেওয়া এক ভাষণে বলেছিলেন, আল্লাহ তাআ’লা আমাদের সাথে বিজয়ের অঙ্গীকার করেছেন; আর বুশ আমাদেরকে পরাজিত করার অঙ্গীকার করেছে। অচিরেই আমরা দেখতে পাবো এই দুটি ওয়াদার কোনটি সত্য !”
আল্লাহু আকবার! আজ ১৯ বছর পর আমাদের রব, আমাদের মালিক মহান আল্লাহ তা’আলার অঙ্গিকারই সত্য প্রমাণিত হয়েছে, ইতিহাসের আস্তকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে দাম্ভিক আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বুশের সেই অঙ্গীকার।
ক্রুসেডার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করে, হাজার হাজার প্রশিক্ষিত আর্মি হারিয়ে অবশেষে অসহায় আত্মসমর্পণ করেছে। চলতি বছরের ফেব্রুআরিতে পরাজয়ের আনুষ্ঠানিক স্বাক্ষর সম্পন্ন করেছে অ্যামেরিকা। লেজগুটিয়ে পালাচ্ছে আফগানিস্তানে থাকা মার্কিন সৈন্যরা।
-----
লেখক: ত্বহা আলী আদনান, প্রতিবেদক: আল ফিরদাউস নিউজ
১৯ বছর আগে ২০০১ সালে ক্রুসেডার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র জোট বাহিনী নির্মম আগ্রাসন শুরু করে মধ্য এশিয়ার দরিদ্র দেশ আফগানিস্তানে। ক্রুসেডার মার্কিন-ন্যাটো জোটের আগ্রাসনের আগে শান্তিপূর্ণভাবে দেশ পরিচালনা করে আসছিল ইমারতে ইসলামিয়ার তালেবান সরকার।
তালেবান প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রের বুনিয়াদ ছিল ইসলাম। ইসলামবহির্ভূত কোনো কর্মকাণ্ড তারা সহ্য করতেন না। দেশটিকে পরিপূর্ণ ইসলামি জীবন-ব্যবস্থার আদলে ঢেলে সাজান, যেখানে ধনী-গরিব সবার জন্যই ছিল ন্যায় ও ইনসাফ। রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে শান্তি প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি বিদেশি দখলদার শক্তির ব্যাপারে তালেবান ছিল বরাবরই আপোষহীন মনভাবের। ফলে উঁচু-নিচু পাহাড় আর টিলায় ঢাকা আফগান ভূমি আগ্রাসী কুফফার দেশগুলোর জন্য সংকীর্ণ হয়ে উঠে। বিপরীতে মু’মিনদের জন্য এই ভূমি হয়ে উঠে প্রশস্ত। বিদেশি কোম্পানী ও সংস্থাগুলোকেও এখানে ইসলামি নিয়মনীতি মেনে বাণিজ্য করতে হতো।
সুদভিত্তিক অর্থনীতির পরিবর্তে শরিয়াহভিত্তিক অর্থনীতি-ব্যবস্থার পত্তন ঘটানো হয়। মানবরচিত কুফরি সংবিধানের পরিবর্তে রাষ্ট্র পরিচালনা করা হয় আল্লাহ্ তা’আলার নির্দেশিত শাশ্বত কুরআনিক নির্দেশ অনুযায়ী। এসবকিছু স্পষ্টই পশ্চিমাদের নোংরা অর্থনীতি ও কুফরি গণতন্ত্রের জন্য বড় এক চ্যালেঞ্জের বিষয়ে পরিণত হয়; কেননা ইসলামি রাষ্ট্রের সার্বিক সফলতা বিশ্ববাসীর সামনে পশ্চিমাদের মুখোশ উন্মোচন করে দেয়। আর এমনটা সহ্য করতে পারেনি ক্রুসেডার অক্ষের শক্তিগুলো।
আফগান ভূমিতে তেল ও গ্যাস লাইন স্থাপন নিয়ে তালেবান সরকারের সাথে পশ্চিমাদের শুরু হয় মতবিরোধ। আফগানিস্তানের তেল-গ্যাস ও অন্যান্য খনিজ সম্পদের বৃত্তান্ত লিখতে বসলেই খলিলজাদের নাম চলে আসে। এই খলিলজাদই হচ্ছে বর্তমান মার্কিন কূটনীতিক ব্যক্তি জালমে খলিলজাদ। আমরা অনেকেই তাকে শুধু একজন কূটনীতিক ব্যক্তি হিসাবেই চিনি। কিন্তু এর আড়ালেও তার আরেকটি পরিচয় হচ্ছে- মার্কিন রিপাবলিকান শিবিরের সবচেয়ে রক্ষণশীল অংশের ঘনিষ্ঠ লোক তিনি; ১৯৮৫ সালের পর থেকেই খালিলজাদ রিপাবলিকান শিবিরের হয়ে কাজ করে আসছে। যুক্তরাষ্ট্রের এই কূটনীতিক দীর্ঘ সময় যুক্ত ছিল তেল কোম্পানি ইউনিকলে। সেখানে তার দায়িত্ব ছিল ‘ঝুঁকি বিশ্লেষক’-এর। তালেবান ক্ষমতাকালীন ইউনিকলের হয়ে আফগানিস্তানের ওপর দিয়ে ৮২০ মাইল লম্বা পাকিস্তান-তুর্কমিনিস্তান গ্যাস পাইপলাইন বসানোর কাজটি (‘সেন্ট-গ্যাস’ প্রকল্প নামে পরিচিত) এগিয়ে নেওয়াই ছিল খলিলজাদের প্রধান দায়িত্ব। ইউনিকল ছাড়াও আরো ২টি কোম্পানি খনিজসম্পদ নিয়ে কাজ করছিল আফগানিস্তানে। সে সময় বছরে দেড়শত (১৫০) মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে ‘সেন্ট-গ্যাস’ প্রকল্পের অনুমোদন দিতে রাজি হয় তালেবান সরকার। তালেবান চাচ্ছিল এই তেল-গ্যাস লাইন থেকে যাতে প্রথমে আফগান জনগণ উপকৃত হন। কিন্তু পশ্চিমা সরকারদের ইশারায় তা মানেনি বিদেশী কোম্পানীগুলো।
তাই তালেবান সরকারও আফগান ভূমি ব্যবহার করতে দেননি পশ্চিমা এসব কোম্পানিকে। এর ফলে আফগানিস্তানে ধীরে ধীরে পশ্চিমা কোম্পানিগুলো দুর্বল হতে শুরু করে, ব্যর্থ হতে থাকে এশিয়া মায়নোর নিয়ে পশ্চিমাদের সাজানো ষড়যন্ত্রের সকল নীল-নকশা। তখন তাদের সামনে দুটি পথই খোলা থাকে, হয়তো তালেবানদের শর্ত মেনে এখানে কাজ করতে হবে নয়তো তালেবান সরকারকে উৎখাত করতে হবে। ক্ষমতা আর শক্তির অহংকারে নিমজ্জিত পশ্চিমারা দ্বিতীয় পথটিকেই বেছে নেয়। তারা ইমারতে ইসলামিয়ার আমির মোল্লা মোহম্মদ ওমর রহিমাহুল্লাহকে হত্যাচেষ্টায় ব্রত হয়। তাঁকে টার্গেট করে বেশ কয়েকবার মিসাইল ও বোমা হামলা চালায়। কিন্তু আল্লাহ্ তা’আলার ইচ্ছায় প্রতিবারই হামলা ব্যর্থ হয়।
সর্বশেষ ক্রুসেডার অ্যামেরিকা আফগানিস্তানে সরাসরি আগ্রসান চালানোর পূর্ণ প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। এদিকে তালেবান ও তাদের সবাচাইতে বড় মিত্র আল-কায়েদা চাচ্ছিল অ্যামেরিকাকে নিজ দেশে থেকে আফগান ভূমিতে এনে উচিৎ শিক্ষা দিতে। পৃথিবীজুড়ে মুসলিম-ভূমিগুলোতে আগ্রাসন চালানো অ্যামেরিকাকে সাপের মাথা বলে চিহ্নিত করেন তৎকালীন আল-কায়েদা প্রধান শাইখ উসামা বিন লাদেন রহিমাহুল্লাহ্।
সর্বশেষ বরকতময় ৯/১১ হামলার মধ্য দিয়ে সাপ (আমেরিকা) তার খোলস ছেড়ে গর্ত থেকে বেরিয়ে ময়দানে চলে আসে; ২০০১ সালের ০৭ অক্টোবর আফগানিস্তানে সামরিক অভিযান শুরু করে।
পশ্চিমা ক্রুসেডার ও ন্যাটো জোটের আগ্রাসন শুরুর পর আমিরুল মু’মিনিন মোল্লা মুহাম্মদ ওমর (রাহিমাহুল্লাহ্) তাঁর দেওয়া এক ভাষণে বলেছিলেন, আল্লাহ তাআ’লা আমাদের সাথে বিজয়ের অঙ্গীকার করেছেন; আর বুশ আমাদেরকে পরাজিত করার অঙ্গীকার করেছে। অচিরেই আমরা দেখতে পাবো এই দুটি ওয়াদার কোনটি সত্য !”
আল্লাহু আকবার! আজ ১৯ বছর পর আমাদের রব, আমাদের মালিক মহান আল্লাহ তা’আলার অঙ্গিকারই সত্য প্রমাণিত হয়েছে, ইতিহাসের আস্তকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে দাম্ভিক আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বুশের সেই অঙ্গীকার।
ক্রুসেডার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করে, হাজার হাজার প্রশিক্ষিত আর্মি হারিয়ে অবশেষে অসহায় আত্মসমর্পণ করেছে। চলতি বছরের ফেব্রুআরিতে পরাজয়ের আনুষ্ঠানিক স্বাক্ষর সম্পন্ন করেছে অ্যামেরিকা। লেজগুটিয়ে পালাচ্ছে আফগানিস্তানে থাকা মার্কিন সৈন্যরা।
-----
লেখক: ত্বহা আলী আদনান, প্রতিবেদক: আল ফিরদাউস নিউজ
Comment