রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৬ষ্ট হিজরীর শেষের দিকে হুদায়বিয়াহ থেকে প্রত্যাবর্তনের পর পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রসমূহের বাদশাহ ও সমাজপতিদেরকে ইসলামের প্রতি আহবান জানিয়ে তাদের নিকট পত্র প্রেরণ করার ব্যাপারে মনস্থির করেন। এ লক্ষ্যে প্রিয়নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিচক্ষণ, সুশিক্ষিত ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সাহাবীগণকে বার্তাবাহক হিসাবে মনোনীত করেন এবং খায়বার যাত্রার কয়েকদিন পূর্বে ১লা মুহররম ৭ম হিজরীতে এ সকল বার্তা বাহকদেরকে প্রেরণ করেন।
এরই ধারাবাহিকতায় পারস্য সম্রাট খসরু পারভেজের নিকটও একটি পত্র প্রেরণ করেন। এ পত্রের বিষয়বস্তু ছিল এমন-
(بسمِ اللهِ الرَّحمَنِ الرَّحيمِ،مِنْ مُحمَّدٍ رَسُولِ اللهِ إلى كِسْرَى عَظِيمِ فَارِسَ،سَلامُ اللهِ على مَنْ اتَّبَعَ الْهُدى وآمَنَ باللهِ ورَسُولِهِ وَشَهِدَ ألَّا إلهَ إلاَّ اللهَ وحْدَهُ لا شَرِيكَ لَهُ وأنَّ مُحَمَّدًا عَبدُهُ وَرَسُولُهُ،أَدْعُوكَ بِدِعَايَةِ اللهِ،فَإِنِّي أَنَا رسولُ اللهِ إلى النَّاسِ كَافَّةً،لِيُنْذِرَ مَنْ كانَ حَيَّاً ويَحِقَّ القَولُ على الكافرينَ، فَأَسْلِمْ تَسْلَمْ،فإنْ أَبَيْتَ فَإِنَّ إِثْمَ الْمَجُوسِ عَلَيكَ)
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
“আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পক্ষ থেকে পারস্য সম্রাট কিসরার প্রতি।
সে ব্যক্তির পর সালাম যে হিদায়াতের অনুসরণ করবে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং সাক্ষ্য প্রদান করবে যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ উপাসনার যোগ্য নেই। আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়। তাঁর কোন অংশীদার নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল। আমি আপনাদেরকে আল্লাহর দিকে আহবান করছি। কারণ, আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে মানবজাতির জন্য প্রেরিত, যাতে পাপাচারের খারাপ পরিণতি সম্পর্কে জীবিতদের সতর্ক করে দেয়া যায় এবং কাফিরদের নিকট সত্য প্রকাশিত হয়। অতঃপর তুমি ইসলাম গ্রহন কর, তাহলে নিরাপদ থাকবে। আর যদি অস্বীকার কর, তাহলে তোমার উপর অগ্নিপূজকদের পাপও বর্তিবে।”
“আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পক্ষ থেকে পারস্য সম্রাট কিসরার প্রতি।
সে ব্যক্তির পর সালাম যে হিদায়াতের অনুসরণ করবে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং সাক্ষ্য প্রদান করবে যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ উপাসনার যোগ্য নেই। আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়। তাঁর কোন অংশীদার নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল। আমি আপনাদেরকে আল্লাহর দিকে আহবান করছি। কারণ, আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে মানবজাতির জন্য প্রেরিত, যাতে পাপাচারের খারাপ পরিণতি সম্পর্কে জীবিতদের সতর্ক করে দেয়া যায় এবং কাফিরদের নিকট সত্য প্রকাশিত হয়। অতঃপর তুমি ইসলাম গ্রহন কর, তাহলে নিরাপদ থাকবে। আর যদি অস্বীকার কর, তাহলে তোমার উপর অগ্নিপূজকদের পাপও বর্তিবে।”
এ পত্রখানা বহনের জন্য দূত হিসাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আব্দুল্লাহ বিন হুযাইফা সাহমী রাযি.কে মনোনীত করেন।
পত্র প্রাপ্তির পর কিসরার প্রতিক্রিয়া:
যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পত্রখানা তাকে পড়ে শোনানো হয়, তখন সে রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে তা ছিঁড়ে ফেলে দিয়ে দাম্ভিকতার সাথে বলল: ‘আমার প্রজাদের অন্তর্ভুক্ত একজন নিকৃষ্ট দাস(নাউযুবিল্লাহ!) তার নিজ নাম আমার নামের পূর্বে লিখেছে।’
এমন আচরণের সংবাদ অবগত হওয়ার পর রাসূলুল্লাহর প্রতিক্রিয়া:
পরবর্তীতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন কিসরার এ ঔদ্ধত্যের কথা অবগত হলেন, তখন বললেন: “আল্লাহ যেন তার সাম্রাজ্যকে ছিন্ন ভিন্ন করে বিনষ্ট করে ফেলেন।” আর তিনি যা বললেন- বাস্তবক্ষেত্রে তাই কার্যকর হয়ে গেল।
কিসরার বেয়াদবি ও পরিণতি:
অতঃপর কিসরা দুইজন লোক মারফত এ মর্মে নির্দেশ জারি করেন যে, তিনি যেন কিসরার প্রাসাদে হাজির হন। তো প্রতিনিধিদ্বয় রাসূলের কাছে আসে ও কিসরার প্রাসাদে যেতে বলে এবং কথাবার্তার সময় উভয় দূত রাসূলের সাথে ধমকের সুরেও কথা বলে। তখন রাসূল শুধু এতটুকু বললেন: আগামীকাল সাক্ষাৎ কর।
এদিকে মদীনায় যখন এমন ঘটনা সংঘটিত হচ্ছিল, তখন কিসরার প্রাসাদে খসরু পারভেজের পরিবারে তার বিরুদ্ধে এক বিদ্রোহের অগ্নিশিখা প্রচণ্ডবেগে প্রজ্জ্বলিত হচ্ছিল। এর ফলশ্রুতিতে ক্বায়সারের সৈন্য দলের হাতে পারস্য সৈন্যদের পরপর পরাজয়ের পর খসরুর ছেলে শিরওয়াইহ পিতাকে হত্যা করে সিংহাসনে আরোহণ করে। এ ঘটনা সংঘটিত হয় ৭ম হিজরীর ১০ই জুমাদাল উলা মঙ্গলবার রাত্রে। ওহীর মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ঘটনা সম্পর্কে অবহিত হন।
পরবর্তী প্রভাতে যখন পারস্য প্রতিনিধিদ্বয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দরবারে উপস্থিত হল, তখন তিনি তাদেরকে এ ঘটনা সম্পর্কে অবহিত করেন। এতে তারা খুবই আশ্চার্যান্বিত বোধ করে ও বাদশাহকে জানাবে মর্মে হুমকি প্রদান করে।
তখন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন:
“হ্যাঁ, তাকে আমার এ সংবাদ জানাও এবং এ কথাও বলে দাও যে, আমার দ্বীন ও আমার শাসন ঐ পর্যন্ত পৌঁছবে, যেখানে কিসরা পৌঁছেছে, বরং তার চেয়েও অগ্রসর হয়ে ঐ জায়গায় গিয়ে থামবে, যার আগে উট এবং ঘোড়ার পা যাবে না। তোমরা উভয়ে তাকে এ কথাও বলে দিবে যে, যদি সে মুসলিম হয়ে যায়, তাহলে তার আয়ত্ত্বাধীনে যা কিছু আছে, সে সমস্তই তাকে দিয়ে দেয়া হবে এবং তাকে তোমাদের জাতির জন্য বাদশাহ করে দেয়া হবে।”
***************
***************
ওহে ক্রুসেডার ফ্রান্স! একটু সময় নিয়ে ভেবে দেখ! রাসূলের চিঠির সাথে বেয়াদবি করার পরিণাম যদি এই হয়, তাহলে তোরা যে স্বয়ং নবীকে নিয়েই এমন জঘন্য খেলায় (অবমাননা, কটূক্তি, ব্যাঙ্গাত্মক কার্টুন, ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন) মেতে উঠেছিস, তোদের জন্য কি ভয়াবহ পরিণতি অপেক্ষা করছে?!
তা কি তুই অনুভব করতে পারছিস?!
তুই কি ভুলে গেছিস যে, “ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হয়” একথা?
অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে- তোরও ধ্বংসের সময় ঘনিয়ে আসছে, তাই ঔদ্ধত্যের সীমা চরমভাবে অতিক্রম করছিস।
তোদের ধ্বংসকে ত্বরান্বিত করতে আমি/আমরা কিছু করতে পারি বা না পারি, অন্তত দু‘আ তো করতে পারি।
আমি/আমরা আমাদের দু‘আ কবুলের সময়গুলোতে তোদের বিরুদ্ধে আমাদের মহান রবের নিকট হাতজোড় করে, অশ্রুসিক্ত নয়নে প্রার্থনা করি-
হে আল্লাহ! আপনি ক্রুসেডার ফ্রান্সকে সমূলে ধ্বংস করে দিন। তারা আপনার হাবীবের শানে ও আমাদের প্রিয় নবীজির শানে যে ভয়াবহ ধৃষ্টতা, বেয়াদবি, হটকারিতা, স্পর্ধা ও ঔদ্ধত্যতা দেখিয়েছে, আপনি তাদেরকে এমন দৃষ্টান্তমূলক উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করে দিন, যা বাকি ক্রুসেডারদের জন্যও ইবরাত হাসিলের উপকরণ হবে।
হে আল্লাহ! এই উম্মাহর মাঝেও মুহাম্মাদ বিন মাসলামা রাযি. ও আব্দুল্লাহ ইবনে আতীক রাযি.দের চেতনায় উজ্জীবিত এক প্রজন্ম দান করুন। যারা শাতিমে রাসূলদের প্রাপ্ত বুঝেয়ে দিয়ে তবেই শান্ত হবে। আমীন ইয়া রব্বালা আলামীন।
দু‘আর সাথে সাথে আমরা আমাদের সাধ্যের সবটুকু তোদের ক্ষতি করার জন্য ব্যয় করব। তোদের শত্রুতায় আমরা কোন কমতি করব না, ইনশা আল্লাহ।
মন থেকে কামনা করি- ফ্রান্সের বুকেও নেমে আসুক আরো একটি নাইন ইলেভেন। যার মাধ্যমে ওদের সকল দাম্ভিকতার সলিল সমাধি রচিত হবে। আরো দু’চারটি বিমানও ঢুকে পড়ুক, যা ফ্রান্সের হৃৎপিণ্ড চিরে বের হবে।
প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ! ভালো করে কান খুলে শুনে রাখ! আমাদের রাসূল আমাদের কাছে আমাদের প্রাণাধিক প্রিয়। আমাদের হৃদস্পন্দন। যদি তোদের কাছ থেকে আমাদের প্রিয়তম রাসূলের প্রতিশোধ নিতে না পারি, তাহলে আমাদের এ জমিনে জীবিত থাকা অর্থহীন। তাই তোরা সারা বিশ্বে আমাদের টার্গেটে থাকবি, ছাড় পাবি না একটুও। তোদেরকে অশ্রু সাগরে না, রক্ত সাগরে ভাসাবো। তারপর অবশেষে আমরাই বিজয়ীর হাসি হাসব, আর তোমদের কোন নাম-নিশানা বাকি থাকবে না, বিইযনিল্লাহ।
ইনশা আল্লাহ, সেদিন বেশী দূরে নয়, যেদিন তোদেরকে তোদের প্রাপ্ত বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য উম্মাহর সিংহ শার্দুলেরা, আশিকে রাসূলরা, মুজাহিদরা আসছে…তোদের লাগামহীন বাক-স্বাধীনতা স্বাদ চিরতরে আস্বাদন করিয়ে ছাড়বে। আল্লাহর জমিনে আল্লাহর আইন বাস্তবায়ন করবে ও রাসূলুল্লাহর সুমহান মর্যাদাকে প্রতিষ্ঠা করবে।
ওহে ক্রুসেডার ফ্রান্স! অপেক্ষায় থাক, আমরা তোদের করুণ পরিণতি দেখার অপেক্ষায় আছি…!
*****************
বি:দ্র. প্রিয় পাঠক! আপনাদের দৃষ্টিতে কোন ভুল বা ভাষাগত কোন ক্রটি পরিলক্ষতি হলে জানানোর অনুরোধ করছি। আসলে লিখতে গিয়ে বারাবার আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ছি।
সবার কাছে বিনীতভাবে দু‘আর দরখাস্ত। আল্লাহ যেন আমাকে ও আপনাদেরকে দ্বীনের তরে ও রাসূলের সম্মান রক্ষার্থে জীবন বিলিয়ে দেওয়ার মত তাওফিক দান করেন। জাযাকুমুল্লাহ
সবার কাছে বিনীতভাবে দু‘আর দরখাস্ত। আল্লাহ যেন আমাকে ও আপনাদেরকে দ্বীনের তরে ও রাসূলের সম্মান রক্ষার্থে জীবন বিলিয়ে দেওয়ার মত তাওফিক দান করেন। জাযাকুমুল্লাহ
Comment