Announcement

Collapse
No announcement yet.

পাঠচক্র- ০১ || কাব বিন মালিক (রাঃ) এর ঘটনা থেকে শিক্ষা || শায়খ আবু আব্দুল্লাহ উসামা রহ. || পর্ব- ০৯

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • পাঠচক্র- ০১ || কাব বিন মালিক (রাঃ) এর ঘটনা থেকে শিক্ষা || শায়খ আবু আব্দুল্লাহ উসামা রহ. || পর্ব- ০৯


    দারুল ইরফান কর্তৃক প্রকাশিত
    কা‘ব বিন মালেক রাযি. এর ঘটনা থেকে শিক্ষা
    শায়খ আবু আব্দুল্লাহ উসামা রহ.

    এর থেকে
    পর্ব-

    ==================================================
    ===============================






    স্ত্রীদের থেকে আলাদা হওয়ার নির্দেশ এবং হযরত কা‘ব রাযি. এর অনুপম আনুগত্য
    এরপর হযরত কা‘ব রাযি. বলেন, যখন আমাদের উপর এ বয়কট অবস্থার চল্লিশ দিন অতিবাহিত হয়ে গেল তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বার্তাবাহক এসে বলল, ‘আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তোমরা তোমাদের বিবিদের থেকে আলাদা হয়ে যাও! ’
    আল্লাহর বান্দাগণ! চিন্তা করুন! দুনিয়াবি দৃষ্টিকোণ থেকে মানুষের সবচেয়ে প্রিয় বস্তু তার ঘর এবং তার স্ত্রী হয়ে থাকে। এখন তাঁর জীবনসঙ্গিনী স্ত্রী কে ও আলাদা হওয়ার নির্দেশ এসে গেল। কিন্তু এ কঠিন নির্দেশের সামনে হযরত কা‘ব রাযি. এর মাথা ঝুঁকিয়ে দেয়া এ বাস্তবতা স্পষ্ট করে যে, জীবিত আত্মার উপর যদি কখনও উদাসীনতার পর্দাও পড়ে যায় তখন সাথে সাথে তার স্মৃতি জেগে উঠে এবং সে সত্যের দিকে ফিরে আসে। দ্বীনের সাহায্যকে পরিত্যাগের অপরাধবোধ তীব্রভাবে অনুভব করতে থাকে। সুতরাং হযরত কা‘ব রাযি. আগ বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলেন, তালাক দিয়ে দিব না কি করব? অর্থাৎ, তিনি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার সন্তুষ্টির জন্য নিজের স্ত্রীকে তালাক দেয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলেন। বার্তা বাহক জবাব দিল, ‘না! তার নিকটে যাওয়ার অনুমতি নেই।’
    সুতরাং হযরত কা‘ব রাযি তাঁর স্ত্রীকে বললেন, ‘তুমি তোমার পরিবারের নিকট চলে যাও, যতক্ষণ না আল্লাহ তাআলা আমাদের এ ব্যাপারে কোন ফায়সালা করে দেন।’
    আল্লাহ তাআলার কালাম এবং তাঁর রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুবারক সুন্নাতের ভিত্তিতেই আমরা নিজেদের স্ত্রীদেরকে হালাল জেনেছি। আমাদের রব তাদেরকে আমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন। যেমন মহান আল্লাহ তাআলার বাণী,
    وَمِنْ آَيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُمْ مِنْ أَنْفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُمْ مَوَدَّةً وَرَحْمَةً إِنَّ فِي ذَلِكَ لايَاتٍ لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ
    ‘এবং তাঁর নিদর্শনাবলী থেকে একটি এই যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন। যাতে তোমরা তাদের নিকট শান্তিতে থাকতে পারো।’ [1]
    এই স্ত্রী তোমার জন্য আল্লাহ তাআলার একটি বিশেষ অনুগ্রহ। কারণ তার গঠন-প্রকৃতি ও বন্ধনে রয়েছে একধরণের স্বস্তি প্রশান্তি ও ভালোবাসা। সুতরাং কিভাবে তুমি সে দ্বীনের সাহায্য ত্যাগ করতে পার যার মাধ্যমে তোমার উপর সব নেয়ামত বর্ষিত হয় এবং কিভাবে তোমার রবের দ্বীনের সাহায্য ত্যাগ করতে পার যিনি তোমাকে শূন্য থেকে অস্তিত্বে নিয়ে এসেছেন!

    বার্ধক্য সত্ত্বেও এত কঠিন পাকড়াও!
    হযরত কা‘ব রাযি. বলেন, তিন হাজারের মাঝে আমি সবচেয়ে জোয়ান ছিলাম, আমার অপর দুই সাথী তো একেবারে বেহাল হয়ে নিজের ঘরে বসে বসে ক্রন্দন করছিলেন।’
    জীবিত অন্তরাত্মা সম্পন্ন লোকদের যখন স্মরণ করিয়ে দেয়া হয় তখন তারা জাগ্রত হয়ে যায়। এ জন্যই তারা চল্লিশ দিন পর্যন্ত ক্রন্দন করেছেন। অতঃপর তাদের নিকট বার্তা পাঠানো হয় যে, স্ত্রীদের থেকে পৃথক হয়ে যাও।
    তখন হযরত হেলাল ইবনে উমাইয়্যা রাযি. এর স্ত্রী রাসূলাল্লাহ সা, এর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! হেলাল তো অত্যন্ত বৃদ্ধ মানুষ, আপনি কি অপছন্দ করবেন যদি আমি তার খেদমত করি?
    হে আল্লাহর বান্দারা! চিন্তা করুন, তিনি বয়োবৃদ্ধ ছিলেন এবং বয়সের ভারে ছিলেন দুর্বল। কিন্তু এই বার্ধক্য সত্ত্বেও যখন তিনি জিহাদের ময়দান থেকে পশ্চাতে ছিলেন তখন তাঁকে পরিপূর্ণ শাস্তি দেয়া হয়েছে। কেননা তিনি এই সক্ষমতা তো রাখতেন, ময়দানে বের হয়ে, ইসলামী বাহিনীর সংখ্যা বৃদ্ধি করবেন এবং মুজাহিদীনদের মাল-সামগ্রীর হেফাজত করবেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর স্ত্রীকে জবাবে বললেন, ‘খেদমত অপছন্দ করিনা, তবে সে যেন তোমার কাছে না আসে।’ তখন তিনি বললেন, ‘আল্লাহর কসম! তার মাঝে তো (বার্ধক্যের কারণে) পূর্ব থেকে এমন কোন চাহিদা নেই।’
    হে তরুণ ভায়েরা! একটু চিন্তা করুন। হে আল্লাহর বান্দাগণ! আপনাদের এমন কি উত্তর আছে, যার কারণে দ্বীনের সাহায্য ছেড়ে বসে আছেন? এখানে এত বয়োবৃদ্ধ আল্লাহর রাসূলের সাহাবীদেরকে কোন ছাড় দেয়া হয়নি। অথচ আল্লাহ আপনাদেরকে সুস্থতা, দৃষ্টিশক্তি, বিবেক এবং সম্পদ, সকল নিয়ামত দ্বারা ভরপুর করে রেখেছেন!
    আপনারা দুনিয়াবি ধান্ধার জন্য সারা দুনিয়া চষে বেড়াতে পারেন, তাহলে কি নিজের স্রষ্টা ও মালিকের সাহায্যের জন্য ঘর থেকে বের হতে পারবেন না? হঠাৎ মৃত্যু আসার আগেই নিজের সুস্থতা, সম্পদ এবং জীবনকে গনিমত মনে করুন।

    জিহাদ থেকে পশ্চাতে থেকে যাওয়ার কারণে অঝোর ধারায় কান্না
    এরপর হযরত কা‘ব রাযি. বলেন, হযরত হিলাল রাযি. এর স্ত্রী নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বললেন, ‘আল্লাহর কসম! হে আল্লাহর রাসূল! যেদিন থেকে তাঁর এ ঘটনা ঘটেছে, সেদিন থেকেই তিনি ঘরে বসে অনবরত ক্রন্দন করছেন।’
    অন্যায় ও পাপকর্ম পরিশুদ্ধ আত্মাকে হত্যা করে। আর চোখের পানি পাপ রাশিকে ধুয়ে ফেলে। তাবুক যুদ্ধের যাত্রাকালে কিছু গরীব সাহাবী রাসূলের কাছে আসলেন এবং যুদ্ধে যাবার জন্য বাহনের আবদার করলেন। কিন্তু রাসূলের কাছে এমন কোন বাহন ছিল না, যাতে তাদেরকে আরোহণ করাবেন। তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন তাদের কাছে ওজর পেশ করলেন, তখন তারা কাঁদতে কাঁদতে ফিরে গেলেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা তাঁর কিতাবে তাদের অবস্থা বর্ণনা করে বলেন,
    تَوَلَّوْا وَأَعْيُنُهُمْ تَفِيضُ مِنَ الدَّمْعِ حَزَنًا أَلَّا يَجِدُوا مَا يُنْفِقُونَ

    ‘উহারা অশ্রু বিগলিত চোখে ফিরে গেল এ দুঃখে যে তাদের কাছে আল্লাহর পথে খরচ করার জন্য কিছু ছিলনা।’

    শুধু এক যুদ্ধে চেষ্টা সত্ত্বেও যেতে না পেরে যদি সাহাবীদের এই অবস্থা সৃষ্টি হয়ে থাকে। তাহলে সে ব্যক্তির কত বেশী কাঁদা উচিৎ যার দুটি পা কবরে চলে গেছে। কিন্তু সে না কখনো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার পথে কোন যুদ্ধে শামিল হয়েছে, না মুসলমানদের বিপদ আপদে অশ্রু ঝরিয়েছে। না এসব বিপদ আপদের কারণে কখনো তার চেহারার রং পরিবর্তন হয়েছে! لا حولَ ولا قوَّةَ إلَّا باللهِ

    ধন্য হও হে কা’ব!

    হযরত কা‘ব রাযি. বলেন, আমি এই অবস্থায়ই ছিলাম, ইতোমধ্যে এক ব্যক্তিকে উচ্চ আওয়াজে বলতে শুনলাম, يَا كَعْبُ بْنَ مَالِكٍ أَبْشِرْ، হে কা‘ব! সুসংবাদ গ্রহণ কর।
    যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর তাঁদের তাওবা কবুলে আয়াত নাযিল হল তখন সাথে সাথে এক সাহাবী রাযি. সালা’ পাহাড়ে আরোহণ করলেন এবং সুউচ্চ কণ্ঠে হযরত কা‘ব রাযি. কে এই সুসংবাদ দিতে লাগলেন যে, আল্লাহ তাআলা তাঁর তওবা কবুল করে নিয়েছেন।

    তিনি বলেন, আমি তাওবা কবুলের আনন্দে অশ্রু বিগলিত হয়ে সেজদায় পড়ে গেলাম।’ অন্য এক সাহাবী রাযি. তাঁর দিকে ঘোড়া ছুটলেন এবং অন্যরা সুসংবাদ দেওয়ার জন্য দৌড়ে আসলেন। এই ছিল সাহাবায়ে কেরাম রাযি. এর নিজের ভাইয়ের তাওবা কবুল হওয়ার আনন্দের প্রকাশ!

    [1] সূরা রুম - ২১


    আরও পড়ুন
    ৮ম পর্ব-----------------------------------------------------------------------১০ম পর্ব
    Last edited by tahsin muhammad; 07-26-2023, 08:20 PM.

  • #2
    জিহাদ থেকে পশ্চাতে থেকে যাওয়ার কারণে অঝোর ধারায় কান্না
    এরপর হযরত কা‘ব রাযি. বলেন, হযরত হিলাল রাযি. এর স্ত্রী নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বললেন, ‘আল্লাহর কসম! হে আল্লাহর রাসূল! যেদিন থেকে তাঁর এ ঘটনা ঘটেছে, সেদিন থেকেই তিনি ঘরে বসে অনবরত ক্রন্দন করছেন।’
    হায়! জিহাদের আমল ছুটে যাওয়ার কারণে তাঁদের কেমন অবস্থা হতো? আর আমাদের মাঝে তো কোন প্রতিক্রিয়াই সৃষ্টি হয় না। হে আল্লাহ! তুমি আমাদের সাহাবাদের মতো ঈমান নসীব করো, আমীন।

    Comment


    • #3
      আল্লাহ তায়ালা আমাদের অন্তরগুলো পরিশুদ্ধ করে দিন, যেন পাপ আমাদের ভীত করে আর নেক কাজে প্রফুল্ল হয়। আমীন

      Comment

      Working...
      X