দারুল ইরফান কর্তৃক প্রকাশিত
কা‘ব বিন মালেক রাযি. এর ঘটনা থেকে শিক্ষা
শায়খ আবু আব্দুল্লাহ উসামা রহ.
এর থেকে
পর্ব-১৩
==================================================
===============================
কা‘ব বিন মালেক রাযি. এর ঘটনা থেকে শিক্ষা
শায়খ আবু আব্দুল্লাহ উসামা রহ.
এর থেকে
পর্ব-১৩
==================================================
===============================
মানুষের দেখাদেখি নিজের আখেরাত নষ্ট করবেন না
আমি আমার সকল মুসলমান ভাইকে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এই হাদিস দ্বারা নসিহত করবো,
لا تكونوا إمَّعةً تقولون إن أحسَن النَّاسُ أحسنَّا وإن ظلموا ظلمنا
তোমরা অন্ধ অনুসারী হয়ে এমন বলা শুরু করনা, যদি মানুষ ভাল হয় তাহলে আমরাও ভাল হয়ে যাব আর যদি মানুষ মন্দ চরিত্রের অধিকারী হয় তাহলে আমরাও মন্দ চরিত্র গ্রহণ করবো।’ [1]
কেয়ামতের দিন আপনাকে একাকী উঠানো হবে। কবরে আপনি একাকী থাকবেন এবং আল্লাহর দরবারে হিসাবের জন্যও আপনাকে একাকী সম্মুখীন হতে হবে। ঐ সময় যখন আপনাকে দ্বীনের নুসরাতের জন্য জিজ্ঞাসা করা হবে তখন আপনি কি জবাব দিবেন?
আল্লাহ তাআলার বাণী,
إِنَّمَا السَّبِيلُ عَلَى الَّذِينَ يَسْتَأْذِنُونَكَ وَهُمْ أَغْنِيَاءُ رَضُوا بِأَنْ يَكُونُوا مَعَ الْخَوَالِفِ وَطَبَعَ اللَّهُ عَلَى قُلُوبِهِمْ فَهُمْ لا يَعْلَمُونَ
“তিরস্কার তো সেসব লোককে করা হবে যারা সম্পদশালী হয়েও আপনার কাছে অনুমতি চায়। তার এতে সন্তুষ্ট হয়ে গেছে যে, পশ্চাতে উপবিষ্টদের সাথে বসে থাকবে এবং আল্লাহ তাদের অন্তঃকরণে মহর এঁটে দিয়েছেন ফলে তারা বোধ শক্তি রাখে না।“ [2]
আজ উম্মাহর বিপদ হলো তারা আজ কয়েক দশক ধরে জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ ছেড়ে বসে আছে। হে আল্লাহর বান্দাগণ! আল্লাহর পথে বেরিয়ে পড়ুন। নেক ও পূণ্যের কাজে প্রতিযোগিতার সাথে এগিয়ে চলুন। অন্ধকার রাত্রির মত ফেতনা ছড়িয়ে পড়েছে। অতএব সুযোগকে গনিমত হিসাবে গ্রহণ করুন। জান্নাতের খোলা দরজার দিকে দ্রুত বেগে ছুটে চলুন। নবীজি কি চমৎকার করে বলেছেন,
إنَّ السيفَ محَّاءُ الخطايا،
‘নিশ্চয় তরবারি পাপসমুহ মুছে দেয়।’
‘নিশ্চয় তরবারি পাপসমুহ মুছে দেয়।’
শহীদের সব কিছু ক্ষমা করে দেওয়া হয় ঋণ ছাড়া। সুতরাং সেই মহা মানবের অনুসরণ করুন। যাকে প্রেরণ করা হয়েছে আমাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসার জন্যে। আমাদের ইলমের উৎস কি তাঁর ইলমের ঝরণা ধারা নয়? জিবরাইল আ. তাঁর কাছে কোন ভাষায় ওহী নিয়ে আসতেন? সুস্পষ্ট আরবি ভাষায়ই তো নিয়ে আসতেন। আল্লাহ কি আমাদেরকে আরবি বোঝার শক্তি দান করেন নি? তবে তাঁর কাছে আর কি ওজর পেশ করব।
সহীহাইনের হাদিসে চিরসত্য ও সত্যায়িত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কসম খেয়ে বলেছেন,
والَّذي نفسي بيدِه لولا أنْ أشُقَّ على المسلِمين ما قعَدْتُ خَلفَ سَريَّةٍ تغزو في سبيلِ اللهِ
ঐ সত্তার শপথ! যার হাতে মুহাম্মদের প্রাণ। যদি মুসলমানদের উপর (প্রতিটি যুদ্ধে যাওয়া) কষ্টকর মনে না করতাম। তবে আমি আল্লাহর রাস্তায় প্রেরিত কোন সেনাদল থেকে কখনই পিছে থাকতাম না। [3]
আপনি কি এই সুস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন কথা বোঝার যোগ্যতা রাখেন না? সর্বশ্রেষ্ঠ মানব মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তাআলার কসম করে বলেছেন যে, উম্মাহর জন্য কষ্ট মনে না করলে, তিনি কখনো আল্লাহর রাহে কোন যুদ্ধ থেকে পিছিয়ে থাকতেন না। অথচ আজ উম্মাহর অবস্থা হল, যেন তারা জিহাদের চেয়েও কোন শ্রেষ্ঠ কাজে ব্যস্ত রয়েছে!
অতীতে যখনই কোন রণক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছে উলামায়ে কেরাম জিহাদ ফরজ হওয়ার ফতওয়া প্রদান করেছেন। রাশিয়া যখন আফগানিস্তানে হামলা করে বসে, তখন উম্মাহর উলামাদের একটি বিরাট সংখ্যা জিহাদ ফরজ হওয়ার ফতওয়া প্রকাশ করেছে। এরপর আপনার নিকট বের না হওয়ার কি প্রমাণ রয়েছে? কি দলীল আপনার কাছে রয়েছে? এটা শুধু নফসের ধোঁকা! নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তো একথা বলেছেন যে, ‘ঐ সত্তার কসম যার হাতে মুহাম্মদের প্রাণ! যদি মুসলমানদের উপর প্রতিটি যুদ্ধে যাওয়া কষ্টকর মনে না করতাম, তাহলে আমি আল্লাহর পথে কোন যুদ্ধ থেকে পিছিয়ে থাকতাম না।’
এটা কিভাবে সম্ভব যে, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মুহব্বত-ভালবাসা এবং আনুগত্যের দাবী করবে কিন্তু আল্লাহর পথে জিহাদের জন্য কখনো বের হবেনা।
জিহাদের মাসআলা মুজাহিদ ওলামাগণকে জিজ্ঞাসা করা উচিৎ
এ যুগে যখন জিহাদ ফরজে আইন হয়ে রয়েছে। তখন কিভাবে আমরা এমন আলেম থেকে জিহাদের বুঝ পেতে পারি যে নিজেই হাত গুটিয়ে বসে আছে? শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ. একজন আলেমে রাব্বানী এবং মুজাহিদ ফী সাবীলিল্লাহ ছিলেন। তিনি স্বয়ং তাতারিদের বিরুদ্ধে জিহাদে অংশ গ্রহণ করেছেন। তিনি ফিকহুল জিহাদ (বা জিহাদের মাসআলা অনুধাবন) প্রসঙ্গে বলেন,
الواجب أن يُعتبر في أمور الجهاد برأي أهل الدين الصحيح الذين لهم خبرة بما عليه أهل الدنيا دون أهل الدنيا الذين يغلب عليهم النظر في ظاهر الدين؛ فلا يؤخذ برأيهم ولا برأي أهل الدين الذين لا خبرة لهم في الدنيا
‘আবশ্যকীয় কর্তব্য হল যে, জিহাদের বিষয়ে কেবল সেই সত্যিকার আলেমদের মতামতকে গ্রহণ করা হবে যারা দুনিয়াদারদের সমসাময়িক অবস্থা সম্পর্কে সম্যক অভিজ্ঞতা রাখে। সেই সকল দুনিয়াদার লোকদের (বুদ্ধিজীবী) মতামত গ্রহণ করা হবে না, যারা দ্বীনের ব্যাপারে ভাসাভাসা জ্ঞান রাখে এবং সেসব আলেমের মতামতও গ্রহণ করা হবে না। যারা দ্বীনের বুঝ রাখে। কিন্তু বিশ্ব পরিস্থিতি সম্পর্কে কোন ধারনা রাখে না।’ [4]
আপনাদের সামনে এর একটি সহজ উদাহরণ পেশ করছি, শুধু তর্কের খাতিরে কিছু তর্কবাজ আলেম বলে, ‘বর্তমানে আমরা আমেরিকা ও তার সেনাবাহিনীর সাথে মোকাবেলার সামর্থ্য রাখি না। তাই বর্তমানে জিহাদ ফরজ না।’ এমন ফতোয়া দেওয়ার কারণ হচ্ছে, সে মুফতি হওয়ার আবশ্যকীয় শর্তাবলীর ধারে কাছেও নেই। একজন মুফতির অপরিহার্য শর্ত হলো, দ্বীনের গভীর বুঝ থাকার সাথে সাথে সমসাময়িক পরিস্থিতি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনা রাখা। একথা বিজ্ঞ আলেমগণ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন। যেমন ইমাম ইবনুল কায়্যিম রহ. তার জগত বিখ্যাত গ্রন্থ "اعلام الموقعين " এ বলেন,
‘মুফতি এবং বিচারকদের জন্য আবশ্যক হলো, তারা প্রকৃত ঘটনা নিরীক্ষণ করবেন। ঘটনার বিভিন্ন আলামত ও লক্ষণ অনুসন্ধান, এরপর তা যাচাই করে ঘটনার ফলাফল বের করা। অতঃপর দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য হল, তার সেই অবস্থা ও ঘটনা প্রসঙ্গে ফিকহুল ওয়াজিব জানা থাকা, অর্থাৎ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার সেই বিধান সম্পর্কে জ্ঞান থাকা যা এই ঘটনার উপর প্রয়োগ হবে। মোটকথা, এসব বিষয়ের উপস্থিতির পরই তিনি ফতওয়া দিবেন।’
[1] সুনানুত তিরমিযী; কিতাবুল বির্রি ওয়াস সিলাতি. বাবু মাজাআ ফিল ইহসান ওয়াল আফও
[2] সূরা তাওবা - ৯৩
[3] সহীহুল বুখারী; কিতাবুল জিহাদ, মুসলিম; কিতাবুল ইমারাহ
[4] আল ফতওয়া আল কুবরা, কিতাবুল জিহাদ। খণ্ড ৮, পৃষ্ঠা ৪০
আরও পড়ুন
Comment