দারুল ইরফান কর্তৃক প্রকাশিত
কা‘ব বিন মালেক রাযি. এর ঘটনা থেকে শিক্ষা
শায়খ আবু আব্দুল্লাহ উসামা রহ.
এর থেকে
পর্ব-১৪
==================================================
===============================
কা‘ব বিন মালেক রাযি. এর ঘটনা থেকে শিক্ষা
শায়খ আবু আব্দুল্লাহ উসামা রহ.
এর থেকে
পর্ব-১৪
==================================================
===============================
আগে জিহাদের ময়দানে আসুন পরে ফতওয়া দিন
আপনি বর্তমানে চলমান লড়াইসমূহে কখনো অংশগ্রহণ করেননি। আপনি জানেন না কিভাবে কাফেরদের দাপট চূর্ণ করতে হয়। কিভাবে পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়নকে কিছু হালকা অস্ত্র দিয়ে টুকরো টুকরো করে দিয়েছে অল্প সংখ্যক আল্লাহ বিশ্বাসী যারা আল্লাহর উপর ভরসা করে। আল্লাহর কাছে যা আছে তা সবকিছু থেকে শ্রেষ্ঠ বলে বিশ্বাস করে এবং তারা বিশ্বাস করে, আল্লাহর সাথে তাদের মিলিত হতে হবে।
সুতরাং এসকল লোক ফতোয়ার অত্যাবশ্যকীয় শর্তাবলীর পূর্ণতা ছাড়াই ফতোয়া দিয়ে যাচ্ছে। এরা আপনাকে বলবে, যুবকদের সংখ্যা কম। আমরা অস্ত্রের ব্যবহার ভালভাবে জানিনা। এবং আমাদের কাছে পর্যাপ্ত অস্ত্রও নেই। হে আল্লাহর বান্দারা! এসকল মাসআালায় তো আপনাদের মতামতের কোন গ্রহণযোগ্যতাই নেই! ফতওয়া দেওয়া তো অনেক ভারী দায়িত্ব। কিন্তু জিহাদের মূল রহস্য জানা ও কোন ধরনের কার্যত অভিজ্ঞতা ছাড়াই জিহাদের বিষয়ে ফতোয়া দিচ্ছেন?
সহীহ হাদিসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এক সাহাবী কোন এক সম্প্রদায়ের নিকট গেলেন। তাঁর মাথায় বড় ধরনের জখম ছিল এবং এ অবস্থায় তার স্বপ্নদোষ হয়। তিনি এই মাসআলার হুকুম জিজ্ঞাসা করলে ঐ লোকেরা বলল, তোমার জন্য গোসল করা আবশ্যক। তারা ফতওয়া দিল, অথচ এ বিষয়ে না তাদের শরয়ী জ্ঞান ছিল, না তারা অসুস্থের প্রতি লক্ষ্য করেছে। যখন সেই সাহাবী গোসল করলেন তখন সাথে সাথে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এ সংবাদ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট পৌঁছলে তিনি বললেন, ‘قتلوه, قتلهم الله’ ‘তারা তো তাকে হত্যা করেছে, আল্লাহ তাদের ধ্বংস করুন।’ [1]
ভুল ফতোয়া দিয়ে কে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তারা তাকে হত্যা করেছে, আল্লাহ তাদের ধ্বংস করুন। তবে সেই ব্যক্তির অবস্থা কেমন হবে, যে ফতোয়া দিচ্ছে জিহাদ ফরজে আইন হয়নি। অথচ বসনিয়া ও হার্জেগোভিনায় আমাদের লক্ষ লক্ষ মা বোনদের ইজ্জত-আব্রু লুণ্ঠিত হয়েছে। চেচনিয়ায় আমাদের শত সহস্র ভাইকে পিষে ফেলা হয়েছে ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান দিয়ে। ইন্দোনেশিয়ায় আমাদের ভাইদের মসজিদে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে। ফিলিস্তিনে আমাদের অসহায় নারী-শিশু ইহুদীদের হাতে নিকৃষ্ট মত নির্যাতনের শিকার আর সে বসে বসে ফতোয়া দিচ্ছে জিহাদের শর্ত পাওয়া যায়নি।
أنّ نظرت إلى الإسلام في بلد
تجـده كالطيـر مقصوصـا جناحـاه
আজ তুমি যে ভূখণ্ডেই ইসলামের খবর নেবে
সেখানেই পাবে তাকে ডানা কর্তিত পাখি রূপে।
تجـده كالطيـر مقصوصـا جناحـاه
আজ তুমি যে ভূখণ্ডেই ইসলামের খবর নেবে
সেখানেই পাবে তাকে ডানা কর্তিত পাখি রূপে।
জিহাদে গড়িমসি করার উপর আল্লাহর ভর্ৎসনা
আমি এ বরকতময় হাদিসের আলোচনা শেষ করব একটি আয়াত উল্লেখ করে। যেখানে আল্লাহ তাআলা কিছু সাহাবীদের ভর্ৎসনা করেছেন। যখন তারা জিহাদের ব্যাপারে গড়িমসি করছিলেন। অথচ মক্কায় নির্যাতিত অবস্থায় সাহাবায়ে কেরাম জিহাদের আবেদন করেছিলেন। কারণ, তারা ভালো করে জানতেন, কাফেরদের জবাব দিতে না পারলে তাদের নিঃস্ব করে ফেলবে।
তাদের আবেদন, এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে অপেক্ষা করতে বলেছেন এবং সংযত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। এবং তাদের বলেন, আমি এখনো যুদ্ধের আদেশপ্রাপ্ত হয়নি।
অতঃপর যখন তাদের উপর জিহাদ ফরজ করা হল। তখন কিছু সাহাবী গড়িমসি করতে লাগলেন। তাই আল্লাহ তাআলা তাদের সম্বন্ধে বলেন,
أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ قِيلَ لَهُمْ كُفُّوا أَيْدِيَكُمْ وَأَقِيمُوا الصَّلاةَ وَآَتُوا الزَّكَاةَ فَلَمَّا كُتِبَ عَلَيْهِمُ الْقِتَالُ إِذَا فَرِيقٌ مِنْهُمْ يَخْشَوْنَ النَّاسَ كَخَشْيَةِ اللَّهِ أَوْ أَشَدَّ خَشْيَةً وَقَالُوا رَبَّنَا لِمَ كَتَبْتَ عَلَيْنَا الْقِتَالَ لَوْلا أَخَّرْتَنَا إِلَى أَجَلٍ قَرِيبٍ قُلْ مَتَاعُ الدُّنْيَا قَلِيلٌ وَالْآَخِرَةُ خَيْرٌ لِمَنِ اتَّقَى وَلا تُظْلَمُونَ فَتِيلًا
“আপনি কি তাদের দেখেননি, যাদেরকে (জিহাদের আবেদন করার কারণে) বলা হয়েছিল, নিজেদের হস্ত সংযত রাখ। নামাজ কায়েম কর এবং যাকাত আদায় কর। পরবর্তীতে যখন তাদের উপর জিহাদ ফরজ করা হল। তখন তাদের একটি দল মানুষকে আল্লাহর মত ভয় করতে লাগল অথবা তার চেয়ে বেশী। আর বলতে লাগল, হে আমাদের রব! কেন আমাদের উপর জিহাদ ফরজ করলেন। কেন আমাদেরকে আরো কিছু কাল সময় দিলেন না।“ [2]
আল্লাহর বান্দাগণ! কিছু সাহাবায়ে কেরামের ব্যাপারে যদি এমন কঠিন তিরস্কার আসতে পারে, তাহলে আমাদের অবস্থা কেমন হবে? তাই আল্লাহকে ভয় করুন। নিজের হিসাব নিন। রাসূলের সোহবতপ্রাপ্ত লোকদের ব্যাপারে এমন ধমকি, তবে আমরা কিভাবে নিশ্চিন্তে বসে থাকতে পারি দ্বীনের সাহায্য ছেড়ে?
এটা নিশ্চিত নফসের ধোঁকা। পার্থিব জীবনের চাহিদা। তুমি কিসের আশা করছ। কিসের জন্যে বিলম্ব করছ। দুনিয়ার প্রয়োজন কখনো শেষ হয় না। বরং মানবীয় চাহিদা জীবনের চেয়েও দীর্ঘ হয়।
গড়িমসির কারণ দুনিয়ার ভালোবাসা ও মৃত্যুকে অপছন্দ করা
এরপর আল্লাহ তাআলা এই রোগের চিকিৎসা বর্ণনা করে বলেন,
قُلْ مَتَاعُ الدُّنْيَا قَلِيلٌ وَالْآخِرَةُ خَيْرٌ لِمَنِ اتَّقَى وَلَا تُظْلَمُونَ فَتِيلًا
“বলুন, পার্থিব ভোগ বিলাস অতি অল্প। আর যে তাকওয়া অবলম্বন করে তার জন্য পরকালই উত্তম। এবং তোমাদের প্রতি সামান্য জুলুম করা হবেনা।’
আল্লাহ তাআলা তাদের সামনে স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, জিহাদে গড়িমসির মূল কারণ হচ্ছে, নফসের কুমন্ত্রণা। যার সম্পর্ক এই নগণ্য ভোগ সামগ্রীর সাথে। এবং বলেন, এই ভোগ সামগ্রী বেশী নয়। অল্প কিছু মাত্র। এরপর তাদেরকে চিরস্থায়ী কল্যাণের দিক নির্দেশনা দিয়েছেন।
অতঃপর আল্লাহ তাআলা সিদ্ধান্তমূলক ভঙ্গিতে তাদেরকে সর্তক করে দিয়েছেন যে,
أَيْنَمَا تَكُونُوا يُدْرِكُكُمُ الْمَوْتُ وَلَوْ كُنْتُمْ فِي بُرُوجٍ مُشَيَّدَةٍ
‘তোমরা যেখানেই থাকনা কেন মৃত্যু তোমাদের আসবেই, যদিও তোমরা মজবুত দুর্গে অবস্থান কর না কেন।’ [3]
শয়তান তোমাকে ধোঁকা দিবে। তোমাকে তার বন্ধুদের ভয় দেখাবে। তোমাকে বলবে, জিহাদে গেলে মারা পড়বে। তাই বসে থাক। এর জবাবে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা যেখানেই থাকনা কেন মৃত্যু তোমাদের আসবেই, যদিও তোমরা মজবুত দুর্গে অবস্থান কর না কেন।’ আমরা আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করি, তিনি মুমিনদের বক্ষকে জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহর জন্য উন্মুক্ত করে দিন এবং আমাদের সকলকে সব বিষয়ে নবীয়ে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মানহাজে চলার এবং তাঁর সকল সুন্নাতের অনুসরণ করার তাওফিক দান করুন।
[1] আবু দাউদ
[2] সূরা নিসা: ৭৭
[3] সূরা নিসা: ৭৮
আরও পড়ুন
১৩ তম পর্ব -------------------------------------------------------------------- শেষ পর্ব
Comment