Announcement

Collapse
No announcement yet.

উলামায়ে কেরাম ও জিহাদ

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • উলামায়ে কেরাম ও জিহাদ

    তোমাদের উপর জিহাদ (সশস্ত্র যুদ্ধ) ফরয করা হলো। অথচ তা তোমাদের নিকট অপছন্দনীয়। পক্ষান্তরে তোমাদের নিকট হয়তো কোন একটি বিষয় পছন্দনীয় নয়, অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর কোন একটি বিষয় হয়তো তোমাদের নিকট পছন্দনীয়, অথচ তা তোমাদের জন্য ক্ষতিকর। বস্তুতঃ আল্লাহ জানেন, তোমরা জানোনা।
    (সুরা বাকারা, ২১৬ আয়াত)



    ব্যাখ্যাঃ উল্লেখিত আয়াতে জিহাদ ফরয হওয়ার আদেশ নিম্নলিখিত শব্দগুলোর দ্বারা বর্ণনা করা হয়েছে “তোমাদের উপর জিহাদ ফরয করা হলো।” এ শব্দগুলোর দ্বারা পরিষ্কারভাবে বুঝা যাচ্ছে যে, প্রত্যেক মুসলমানের উপর সব সময়ই জিহাদ করা ফরয। তবে কুরআনের কোন কোন আয়াত ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীসের বর্ণনা মতে বুঝা যায় যে, জিহাদের এ ফরয, সবসময় সর্বাবস্থায় ফরযে আইনরূপে প্রত্যেক মুসলমানের উপর সাব্যস্ত হয় না। বরং এটা ফরযে কিফায়াহ। যদি মুসলমানদের কোন দল তা আদায় করে এবং শত্রুর মোকাবেলায় তাঁরা যথেষ্ট হয়, তাহলে সমস্ত মুসলমানই এ দায়িত্ব থেকে রেহাই পাবে। তবে যদি কোন দেশে বা কোন যুগে কোন দলই জিহাদের ফরয আদায় না করে, তবে এ দেশের বা এ যুগের সমস্ত মুসলমানই ফরয থেকে বিমুখতার দায়ে পাপী হবে।


    রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, কিয়ামত পর্যন্ত এমন একটি দল থাকা আবশ্যক, যারা জিহাদের দায়িত্ব পালন করবে।

    স্বাভাবিক অবস্থায় সাধারণভাবে জিহাদ ফরযে কিফায়াহ হলেও মুসলমানদের নেতা যদি প্রয়োজনে সবাইকে জিহাদে অংশগ্রহণ করার জন্য আহবান করেন, তখন সকল মুসলমানের উপর জিহাদ ফরযে আইন হয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে কুরআনে হাকীমের সূরা তাওবায় ইরশাদ হয়েছে, হে মুসলমানগণ! তোমাদের কি হয়েছে যে, যখন তোমাদেরকে বলা হয় যে, তোমরা আল্লাহর পথে (জিহাদের জন্য) বের হও, তখনই তোমরা মনমরা হয়ে পড়।’

    এ আয়াতে আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়ার সার্বজনীন আদেশ দেয়া হয়েছে। এমনিভাবে আল্লাহ না করুন, যদি কোন ইসলামী দেশ অমুসলমান দ্বারা আক্রান্ত হয় এবং সে দেশের লোকের পক্ষে এ আক্রমণ প্রতিহত করা সম্ভব না হয়, তবে পার্শ্ববর্তী মুসলিম দেশবাসীর উপরেও সে ফরয আপতিত হয়। তারাও যদি প্রতিহত করতে না পারে, তবে এর নিকটবর্তী মুসলিম দেশের উপর, এমনিভাবে সারা বিশ্বের প্রতিটি মুসলমানের উপর এ ফরয পরিব্যাপ্ত হয় এবং জিহাদ ফরযে আইন হয়ে যায়। আর যখন জিহাদ প্রয়োজনের তাকীদে ফরযে আইনে পরিণত হয়, তখন পিতা-মাতা, স্বামী-স্ত্রী অথবা ঋণদাতা কারোই অনুমতির অপেক্ষা রাখে না।

    আকীদায়ে জিহাদঃ জিহাদ সম্পর্কে একজন মুসলমানের আকীদা কি হওয়া উচিত? এ বিষয়টি ভালমতো জেনে বুঝে মনে রাখতে হবে এবং সেমতে নিজ নিজ আকীদা প্রয়োজন হলে সংশোধন করে নিতে হবে। জিহাদ অর্থাৎ আল্লাহর রাস্তায় সশস্ত্র লড়াই ইসলামের অলংঘনীয় ও অকাট্য ফরযসমূহের মধ্য হতে একটি ফরয। সুতরাং এই ফরয (জিহাদ) অস্বীকারকারী ব্যক্তি এরূপই কাফের, যেরূপ নামায-রোযা অস্বীকারকারী কাফের। জিহাদ ফরযে আইন হওয়ার পর বিনা উজরে
    জিহাদ ত্যাগ করা মারাত্মক গোনাহ এবং এ বিষয়ে অহেতুক বিতর্ক করা স্পষ্ট গোমরাহী। পূর্বোল্লেখিত আয়াত এবং নিম্নোক্ত হাদীসসহ একাধিক আয়াত ও অসংখ্য হাদীস এ বিষয়ের স্পষ্ট দলীল। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাললাম ইরশাদ করেনঃ

    আমাকে লোকদের সাথে সশস্ত্র লড়াই করতে নির্দেশ দেওয়া "হয়েছে যতক্ষণ পর্যস্ত না তারা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ -এর স্বীকৃতি দিবে (অর্থাৎ হয়তো তারা মুসলমান হয়ে যাবে অথবা ইসলামী হুকুমতের আনুগত্য স্বীকার করে জিযিয়া আদায় করবে) সুতরাং যে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বললো, সে স্বীয় জীবন এবং সম্পদকে আমার হাত থেকে সংরক্ষণ করে নিলো শরীঅতের হক ব্যতীত, এবং তার হিসাব আল্লাহর দায়িত্বে। (বুখারী ও মুসলিম)

    উপরোক্ত হাদীসে জিহাদ ফরয হওয়ার কথা স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। এখানে প্রতিরোধমূলক জিহাদ নয়, বরং আক্রমণাত্মক জিহাদের কথা বলা হয়েছে।




    উলামায়ে কেরাম ও জিহাদঃ আল্লাহ পাকের নির্দেশে স্বয়ং মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসংখ্য জিহাদে অংশগ্রহণ করেছেন। ফলে সাহাবায়ে কিরাম, তাবেঈন, তাঁবে তাবেঈন, আইম্মায়ে মুজতাহিদীন সহ সর্বস্তরের ও সর্বকালের উলামায়ে কিরাম-ই জিহাদকে জান্নাত লাভের সহজ উপায় মনে করে জান-মাল সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়ে জিহাদ করেছেন এবং অনেকে শাহাদাতের সৌভাগ্যও লাভ করেছেন।

    বেশী দূরের নয় নিকট অতীতের কথা। ইংরেজ বেনিয়া যখন উপমহাদেশের স্বাধীনতা হরণ করে মুসলমানের ঈমান ও আমলের মহান দৌলত কেড়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়, তখন তাদের অপবিত্র হাত থেকে এ দেশের মুসলমানের ঈমান-আমল ও স্বাধীনতা রক্ষা করার জন্য সাইয়্যেদূত তায়েফাহ হযরত হাজী এমদাদুল্লাহ মুহাজেরে মক্কী (রহঃ) কে আমীরুল মুমিনীন, হযরত মাওলানা রশীদ আহমাদ গাংগুহী (রহঃ) কে কাযিউল কুযাত (প্রধান বিচারপতি) এবং হযরত মাওলানা কাসেম নানুতুবী (রহঃ) কে সেনাপতি নির্ধারণ করে ইংরেজ বেনিয়াদের বিরুদ্ধে নিয়মতান্ত্রিক জিহাদ আরম্ভ করা হয়। তখন যদিও এই যুদ্ধে মুসলমানগণ বিজয়ী হতে পারেননি এবং পরবর্তীতে তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহীতার মামলা দায়ের করা হয় এবং তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী হয় ফলে হযরত হাজী এমদাদুল্লাহ মুহাজেরে মক্কী (রহঃ) হিজরত করেন। কিন্ত তাদের এই জিহাদই পরবর্তীতে হিন্দুস্তানের স্বাধীনতা এবং পাকিস্তান ও বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের কারণ হয়।

    পরবর্তীতে এই জিহাদী চেতনাকে লালন ও মুজাহিদ তৈরীর মানসেই দারুল উলুম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠা করা হয়।

    অধঃপতনের এই যুগেও পৃথিবীর যেখানেই জিহাদী জযবা সম্বলিত ইসলামী পুনর্জাগরণের বাতাস প্রবাহিত হতে দেখা যায়, সেখানে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দারুল উলুমের কোন না কোন রূহানী সন্তানের ভূমিকা অবশ্যই দেখা যায়।

    অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় যে, কতিপয় আলেম ক্ষমতা দখলের প্রচলিত নোংরা রাজনীতির শিকার হয়ে জিহাদের শাশ্বত সুন্দর এই পথকেই কেবল ত্যাগ করেছেন তা নয় বরং তারা আকাবিরদের জিহাদী তৎপরতার অপব্যাখ্যা করে “জিহাদ ছেড়ে আন্দোলনের পথে’ ইত্যাদি শিরোনামে নিবন্ধ ফাঁদার অপপ্রয়াসও চালাচ্ছে। আল্লাহ পাক আমাদেরকে এ সকল অপতৎপরতার মুখোশ উন্মোচন করার তাওফীক দান করুন। আমীন।

    আফগান জিহাদও মূলত দারুল উলুম দেওবন্দের 'জিহাদী চেতনারই ফসল। কারণ, আফগান জিহাদে যে সকল দেশী-বিদেশী মুজাহিদ উজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেছেন তাদের অধিকাংশই দারুল উলুম দেওবন্দের রূহানী সন্তান-- কওমী মাদ্রাসার উস্তাদ, ছাত্র ও তাদের অনুসারীগণ। এ সকল মুখলিস আলেম ও তালিবে ইলমের পদচারণার বরকতে আফগান জিহাদ চলাকালীন যারাই রণাঙ্গনে কিছু সময় অতিবাহিত করেছেন, তাদের প্রায় সকলেই হাদীস, সিয়ার ও মাগাযীর কিতাবসমূহে পড়া সাহাবায়ে কিরামের যুগের জিহাদের ময়দানের দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি সেখানে দেখেছেন।
    Last edited by Munshi Abdur Rahman; 07-25-2023, 04:56 PM.
    হে আল্লাহর পথের সৈনিক! ধৈর্যধারণ করুন ও হকের উপর অবিচল থাকুন। নিশ্চয়ই আল্লাহর ওয়াদা সত্য।

  • #2
    সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থার সেক্যুলারকরন, পাঠ্যক্রম থেকে ইসলামি শিক্ষাকে অপসারণের প্রচেষ্টার ফলে, এবং বেসরকারি ক্বওমী মাদ্রাসাগুলোর উপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অব্যাহত চাপের ফলে বর্তমান প্রজন্মের মাঝে জিহাদের সঠিক চেতনার উপলব্ধি প্রায় অনুপস্থিত বললেই চলে। আমাদের এই অবস্থা থেকে স্বল্প এবং দীর্ঘমেয়াদে কীভাবে উত্তরণ ঘটানো যায়, তা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করা উচিত।

    Comment


    • #3
      নিশ্চয়ই বন্দুকই সমাধান। আল্লাহ আমাদের সকলকে উপলব্ধি করার তৌফিক দান করুক। আমিন।

      Comment


      • #4
        আসলে আমরা এক ভয়ংকর ফিৎনায় পড়ে যাচ্ছি মনে হচ্ছে। আল্লাহ আপনি আমাদের জন্য দাওয়াত জিহাদকে সহজ করে দিন। যদি আসলেই আমরা ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চাই তাহলে তালিবান মুজাহিদ ভাইদের মতো চেইন অফ কমান্ড মেনে কাজে নেমে পড়তে হবে। বিপ্লবের জন্য অপরিহার্য হলো একটা গ্রুপকে ব্যক্তি কেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠা হওয়া ত্যাগ করতে হবে। যারা ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চাই অন্ততপক্ষে তাদেরকে সার্বক্ষণিক চিন্তাই ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য ব্যস্ত থাকতে হবে। ত্বাগুতকে অশান্ত করে পরাজিত করতে না পারলে চিরস্থায়ী শান্তি কখনোই আসবে না।

        Comment

        Working...
        X