Announcement

Collapse
No announcement yet.

ইসলামের তারকাগণ | পর্ব:১২ | হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু – ০২

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • ইসলামের তারকাগণ | পর্ব:১২ | হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু – ০২

    ইসলামের তারকাগণ | পর্ব:১২ |
    হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু – ০২


    হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু ইসলাম গ্রহণের পর অষ্টম হিজরীর জুমাদাল ঊলা মাসে মূতার যুদ্ধে মুশরিকদের বিরুদ্ধে প্রথমবারের মতো অস্ত্রধারণ করেন। বুসরার শাসক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দূত হারেস ইবনে উমাইরকে হত্যা করেছিল। তাদের থেকে কেসাস গ্রহণের জন্য রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুসলিম যোদ্ধাদের এক বাহিনী মূতায় পাঠিয়েছিলেন।

    এই যুদ্ধে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুসলিম বাহিনীর জন্য পর্যায়ক্রমে তিনজন আমীরের নাম ঘোষণা করেন। তাঁরা হলেন যায়েদ ইবনে হারেসা, জাফর ইবনে আবু তালেব এবং আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা রাদিয়াল্লাহু আনহুম। তাঁদের ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্দেশনা ছিল, প্রথমজন শহীদ হলে দ্বিতীয়জন, আর দ্বিতীয়জনও শহীদ হলে তৃতীয়জন আমীরের দায়িত্ব পালন করবেন।

    রোমানদের সাথে যুদ্ধ চলাকালে একে একে তাঁরা তিনজনই শাহাদাতবরণ করেন। মুসলিমরা সেনাপতিশূন্য হয়ে পড়েন। যুদ্ধের ময়দানে মুসলিম চরম সংকটময় পরিস্থিতির মুখোমুখি হন। এ অবস্থায় তারা হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদকে নিজেদের আমীর মনোনীত করেন।

    হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু মুসলিম বাহিনীকে নতুনভাবে বিন্যস্ত করেন এবং মুসলিম যোদ্ধাদের মাঝে আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনেন। এই যুদ্ধে খালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু প্রচণ্ড লড়াই করেন। তাঁর হাতে কত সংখ্যক কাফের হতাহত হয়েছিল, তাঁর ব্যবহৃত তরবারির সংখ্যা থেকে তা কিছুটা অনুমান করা যায়। এই লড়াইয়ে তাঁর নয়টি তরবারি ভেঙ্গে গিয়েছিল।

    মূতার রণক্ষেত্রে একে একে তিনজন আমীরের শাহাদাতবরণের সংবাদ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় বসে সাহাবায়ে কেরামকে দিয়েছিলেন। তিনজনের পর খালিদ বিন ওয়ালিদ ঝাণ্ডা হাতে নিয়েছেন—এই সংবাদও মদীনাবাসীদের জানিয়ে দেন প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

    হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দোয়া করেছিলেন, হে আল্লাহ! খালিদ আপনার তরবারি সমূহের মধ্য হতে একটি তরবারি। আপনি তাঁকে সাহায্য করুন। এ থেকেই হযরত খালিদকে সাইফুল্লাহ বলা হয়।

    তিনি মাত্র ৩০০০ মুসলিম যোদ্ধা নিয়ে দুই লক্ষাধিক রোমান সেনার বিশাল বাহিনীতে আল্লাহর অনুগ্রহে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। কৌশলে মুসলিম সেনা সংখ্যা সম্পর্কে কাফেরদের মাঝে ধোঁয়াশা সৃষ্টি করেছিলেন। প্রতিটি হামলার পর তিনি যোদ্ধাদের বিন্যাসে পরিবর্তন আনতেন। ফলে রোমানরা মুসলিম সেনা সংখ্যা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তার মাঝে ছিল। এক পর্যায়ে রোমানরা মূতার যুদ্ধ থেকে পিছু হটতে বাধ্য হয়। আর হযরত খালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু মুসলিম সেনাদেরকে নিয়ে মদিনায় ফিরে আসেন।


    মক্কা বিজয় ও হযরত খালিদ:


    ৮ম হিজরীতে মক্কা বিজয়ের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দশ হাজার মুহাজির ও আনসারী সাহাবী নিয়ে মক্কার উদ্দেশ্যে বের হন। মুসলিম যোদ্ধাদের চারভাগে বিভক্ত করা হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত খালিদকে এক অংশের আমীর নিযুক্ত করেন এবং নিম্নাঞ্চল দিয়ে মক্কায় প্রবেশের আদেশ করেন। চারটি বাহিনীর মধ্যে হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদের বাহিনী প্রথমে মক্কায় প্রবেশ করে। মুশরিকরা তাঁকে বাধা দিয়েছিল, ফলে লড়াইয়ের সূত্রপাত হয়। এতে ১৩ মুশরিক নিহত হয় এবং তিনজন মুসলিম শাহাদত বরণ করেন। এই ঘটনার পর অবশিষ্ট তিন বাহিনী বিনা বাধায় মক্কায় প্রবেশ করে।

    মক্কা বিজয়ের পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহুকে 30 জন অশ্বারোহী দিয়ে বাতনে নাখলায় প্রেরণ করেন। তাঁদেরকে সেখানে পাঠানো হয় কুরাইশের সবচেয়ে বড় মূর্তি উযযাকে ধ্বংস করার জন্য।

    তারপর ইসলামের প্রতি আহবান করার জন্য হযরত খালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহুকে তিনশত লোকের এক বাহিনী দিয়ে বনু জুযাইমাতে পাঠানো হয়। গোত্রের লোকেরা ‘ইসলাম গ্রহণ করছি’ বলার পরিবর্তে ‘আমরা স্বধর্ম ত্যাগ করেছি’ বললো। এজন্য হযরত খালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু তাদেরকে হত্যা ও বন্দি করতে আদেশ দেন। বেশ কয়েকজনকে হত্যাও করা হয়। কিন্তু, ইবনু উমার ও তাঁর সঙ্গীগণ এ নির্দেশ পালনে অস্বীকৃতি জানান। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এ বিষয়টি উত্থাপন করা হয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন হাত তুলে দুবার বলেন, হে আল্লাহ খালিদ যা করেছে, তার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।

    এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিহতদের দিয়্যাত বা রক্তপণ প্রদানের জন্য হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে প্রেরণ করেন।

    বনু জুযায়মার ঘটনাকে অনেক ঐতিহাসিক হযরত খালিদের একটি ব্যর্থতা ও অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করেন। তবে তাঁদের সকলেই একমত যে, অন্যায় কিছু করার ইচ্ছা হযরত খালিদের ছিল না। তিনি যা করেছেন তার একটি ব্যাখ্যা তাঁর কাছে ছিল। অন্যায় কিছু করার ইচ্ছা যে হযরত খালিদের ছিল না, তাঁর সাথে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আচরণ থেকে তা প্রতীয়মান হয়। কারণ এই ঘটনার পরও তিনি ছিলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আস্থার পাত্র। এই ঘটনার পরও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে আমীর বানিয়ে কয়েকটি অভিযানে প্রেরণ করেন।

    হুনাইনের যুদ্ধে হযরত খালিদ বনু সুলাইমের একশত অশ্বারোহী নিয়ে অগ্রবাহিনীতে ছিলেন। অষ্টম হিজরীর শাওয়াল মাসে (ফেব্রুয়ারি 630) তাঁরা হাওয়াজেন গোত্রের প্রতিরোধে বের হয়েছিলেন। এ যুদ্ধে হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বীরত্বের সাথে লড়াই করেন। তাঁর সাথে থাকা সুলাইম গোত্রের যোদ্ধাদের প্রায় সকলে পিছু হটার পরও তিনি যুদ্ধের ময়দানে দাঁত কামড়ে অটল থাকেন। লড়াই করতে করতে তিনি গুরুতরভাবে আহত হয়ে পড়েন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর অবস্থা জানতে পেরে তাঁর চিকিৎসার আদেশ দেন।

    এমন গুরুতরভাবে আহত হওয়া সত্ত্বেও হযরত খালিদ সাকীফ ও হাওয়াজেনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে তায়েফের যুদ্ধে জোরালোভাবে অংশগ্রহণ করেন।

    নবম হিজরীতে (630ইং) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত খালেদ বিন ওয়ালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বনু মুসতালিক গোত্রে প্রেরণ করেন। এর কারণ হলো, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে সংবাদ এসেছিল যে, এই গোত্রের লোকেরা ইসলাম ত্যাগ করে মুরতাদ হয়ে গেছে। কয়েকজন বিচক্ষণ ব্যক্তিকে নিয়ে হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু রাতের বেলায় সেখানে অনুসন্ধান চালিয়ে জানতে পারেন যে, তাদের মুরতাদ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি সত্য নয়। তিনি ফিরে এসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করেন।

    নবম হিজরীর রজব মাসে (অক্টোবর 630) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চারশত সাহাবীর একটি বাহিনী হযরত খালিদের নেতৃত্বে দৌমাতুল জান্দালে প্রেরণ করেন। সে সময় সেখানকার শাসক ছিল উকাইদির ইবনে আব্দুল মালিক। উক্ত অভিযানে হযরত খালিদ উকাইদিরকে বন্দি করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে নিয়ে আসেন এবং সঙ্গে করে নিয়ে আসেন প্রচুর গনিমতের মাল।

    উকাইদির মুসলিমদের সাথে সন্ধি স্থাপন করে এবং পরাজয় স্বীকার করে নেয়। একই সাথে মুসলিমদেরকে জিযিয়া প্রদানের চুক্তি হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে লিখিত চুক্তিপত্র হস্তান্তর করেন।

    দশম হিজরীর জুমাদাল ঊলা মাসে (আগস্ট 631) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদকে চারশত যোদ্ধাসহ নাজরানের বনু হারেস ইবনে কাবের প্রতি এই বার্তা দিয়ে প্রেরণ করেন যে, ইসলাম গ্রহণ করো নয়তো যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হও। এই ঘোষণার পর তাদের অনেকেই ইসলাম গ্রহণ করেন। হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ তাদেরকে ধর্মীয় বিষয়াদি শেখানোর জন্য ছয় মাস সেখানে অবস্থান করেন। তারপর তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানান যে, তারা সকলেই ইসলাম গ্রহণ করেছে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নওমুসলিমদের একটি দলকে মদিনায় নিয়ে আসার আমন্ত্রণ জানিয়ে হযরত খালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছে পত্র লিখেন।

    তথ্যসূত্র:

    উজামাউল ইসলাম



    [চলবে ইনশাআল্লাহ…]
    আপনাদের নেক দোয়ায় আমাদের ভুলবেন না। ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইট: alfirdaws.org

  • #2
    আল্লাহ! আপনি আমাদের সাহাবিদের সম্মান বাড়িয়ে দিন, আমীন।
    আল্লাহ, আমাকে মুজাহিদ হিসেবে কবুল করুন আমীন।

    Comment


    • #3
      আল্লাহ তা‘আলা বর্তমান জামানায় এমন বীর দান করুন।
      আমাদের এমন বীরের মত কবুল করুন । আমিন
      গোপনে আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে বেঁচে থাকার মধ্যেই রয়েছে প্রকৃত সফলতা ৷

      Comment


      • #4
        সকল পর্বের পিডিএফ ও ওয়ার্ড লিংক

        https://archive.org/details/docx_20201121
        গোপনে আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে বেঁচে থাকার মধ্যেই রয়েছে প্রকৃত সফলতা ৷

        Comment


        • #5
          মক্কা বিজয়ের পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহুকে 30 জন অশ্বারোহী দিয়ে বাতনে নাখলায় প্রেরণ করেন। তাঁদেরকে সেখানে পাঠানো হয় কুরাইশের সবচেয়ে বড় মূর্তি উযযাকে ধ্বংস করার জন্য।
          মুসলিমদের কাজ-ই হচ্ছে মূর্তি-ভাস্কর্যকে ধ্বংস করে দেওয়া।
          ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

          Comment

          Working...
          X