Announcement

Collapse
No announcement yet.

তাদের জীবন কেমন ছিল , আর আমাদের জীবন ?💔

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • তাদের জীবন কেমন ছিল , আর আমাদের জীবন ?💔

    খলিফা আমিরুল মুমিনীন উমার ইবনুল খাত্তাব (রা) সিরিয়ার নেতৃত্বস্থানীয় সাহাবী আবু দারদা (রা) এর সাথে সাক্ষাৎ করতে গেলেন। অন্ধকার রাত, দরজা বাহির থেকে নক করতেই ভেতর থেকে দরজা খুলে গেল। কেননা ভেতর থেকে খিল আটা ছিল না। আওয়াজ পেয়ে আবু দারদা (রা) এগিয়ে আসেন আর খলিফার সাথে কুশল বিনিময় করলেন। ঘরের ভেতরেও অন্ধকার, পরস্পরকে দেখাও যাচ্ছিল না। খলিফাকে আবু দারদা (রা) বিছানায় বসতে দিলেন। উমার (রা) লক্ষ্য করলেন বিছানাটি ছিল সামান্য খেজুর পাতার চাটাই। আবু দারদা (রা) যে বালিশে ঘুমাতেন, সেটা ছিল উটের জীন, যাতে আরোহীরা বসে। গায়ে দেওয়ার জন্য সামান্য পাতলা চাদর, যা দিয়ে সিরিয়ার তীব্র শীত নিবারনের জন্য যথেষ্ট না।

    অবস্থা দেখে খলিফা উমার (রা) ভীষণ আশ্চর্য হন এবং বললেন, "হে আবু দারদা। আল্লাহ আপনার প্রতি রহম করুন। আমি আপনার অবস্থা আরো সহজ করে দিতে চাই। আপনার জন্য প্রয়োজনীয় কিছু সামগ্রী পাঠাতে চাই।" শুনে আবু দারদা (রা) বললেন- "হে উমার। আপনার কি সেই কথা মনে পড়ে যা রাসূল (স) আমাদেরকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন? উমার (রা) জিজ্ঞাসা করলেন- "কোন কথাটির কথা বলছেন?"

    আবু দারদা (রা) বললেন- "রাসূল (স) কি বলেন নি? তোমাদের হাতে যেন দুনিয়ার উপকরণ কেবল এতটুকুই থাকে, যতটুকু থাকে সফরে বের হওয়া একজন পথচারীর নিকট। রাসূল (স) এর বিদায়ের পর আমাদের একি অবস্থা হে উমার!" এ কথা বলতে বলতে আবু দারদা কাঁদতে শুরু করেন। তাঁর কান্না দেখে উমার (রা) নিজের কান্না ধরে রাখতে পারেন না। এভাবেই রাসূল (স) এর স্মৃতিচারণ আর কান্না করতে করতে সকাল হয়ে যায়।

    সাহাবীদের পর কতটা সময় কেটে গেছে। আজ যদি উমার ও আবু দারদা এসে আমাদের অবস্থা দেখতেন, তবে কী ভাবতেন তারা? "রাসূলের চোখে দুনিয়া" বইটার অনেক অনেক হাদিস আমাকে গভীর ভাবে নাড়া দিয়েছে। রাসূল হেলান দিয়ে খাবার খেতেন না, তিনি বলতেন, "আমি সামান্য একজন দাস মাত্র। আর দাসরা কখনো হেলান দিয়ে বসে খাবার খায় না।" তাঁর সামনে যব, খেজুর, বাদাম ইত্যাদি মিশ্রিত পানীয় নিয়ে আসা হলে তিনি বলেছিলেন, "এটা আমার থেকে সরাও। এটা বিলাসী মানুষের খাবার। এটা আমি খাবো না।"

    রাসূলের কাছে ফেরেস্তা এসেছিলেন, এবং বললেন, "আপনি কি একজন রাজা রাসূল হতে চান নাকি একজন দাস রাসূল হতে চান?" জীবরাইল (রা) রাসূলকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, "দাস রাসূল হওয়াকে বেছে নিন।" রাসূল (স) বলতেন, "এ দুনিয়ার আমার উদাহরণ একজন অশ্বারোহীর ন্যায়, যে গ্রীষ্মের রোদে একটি গাছের নিচে সামান্য বিশ্রাম নিলো, এরপর আবার বেড়িয়ে পড়লো।"

    আপনার কি বদর, উহুদ, খন্দক, খাইবার, তাবুক সহ অন্যান্য সময়গুলোর কথা স্মরণ আছে? কীভাবে সাহাবীগণ ক্ষুধা পেটে নিয়ে প্রচন্ড শীতে সামান্য কিছু যন্ত্র আর হাত দিয়ে বিশাল খন্দক খুড়েছিল? যথেষ্ট খাবার পানি তাদের কাছে ছিল না। এরও পূর্বে মক্কার সেই কঠিন সময়গুলোর কথা মনে পড়ে? মনে পড়ে খুবায়েব (রা) এর কথা যাকে ক্রুশে ঝুলিয়ে একটা একটা করে অঙ্গ কেটে শহীদ করা হয়েছিল? কিংবা খাব্বাব (রা) এর কথা? যাকে গরম পাথরের উপর ফেলা হয়েছিল যার তাপে তাঁর পেটের ভুড়ি পোড়ার গন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল? কিংবা সুমাইয়া (রা) ও ইয়াসির (রা) এর কথা? আম্মার (রা) এর কথা? কিংবা মুসআব ইবনে উমায়ের (রা) এর কথা, যিনি মক্কার অন্যতম ধনীর নারীর এক মাত্র সন্তান হয়েও সব কিচু ত্যাগ করে কীভাবে মদিনায় চলে যায়, তাঁর মৃত্যুর শেষ পরিণতির কথা? সালমান ফারেসী (রা) এর কথা স্মরণ আছে, যিনি উঁচু পদ ছেড়ে সত্যের সন্ধ্যানে শেষ পর্যন্ত দাসত্বকে বরণ করেছিলেন? কিংবা বিলাল (রা) এর কথা, যাকে উত্তপ্ত মরুভূমিতে পাথর চাপা দিয়ে রাখা হয়েছিল।

    এরপর আরো জানুন আলী (রা) এবং ফাতিমা (রা) এর দারিদ্র মাখা জীবনের কথা। আরো জানবেন জুলাইবিব (রা) এর ব্যক্তি জীবনের দুর্দশার কথা। কিংবা জানবেন সাহাবীদের যুদ্ধে স্বজন হারানোর গল্প। আহত হয়ে অঙ্গহানীর গল্প এবং তা নিয়ে দীর্ঘ জীবন পাড়ি দেওয়ার গল্প। দারিদ্রতা, দুঃখ, কষ্ট, সংগ্রাম ছিল যাদের জীবনেরই অংশ। ক্ষুধা ও পরিশ্রম ছিল যাদের গায়ের পোশাক। যাদের মাঝে অনেকেরই সামর্থ্য থাকার পরেও বিলাসহীন দুঃখ কষ্টের জীবনকেই বেছে নিয়েছিলেন দ্বীনের জন্য।

    আল্লাহর কসম, তারা কেউই এসব নিয়ে দুশ্চিন্তিত ছিলেন না। তাদের অন্তরগুলো ছিল আখিরাতমুখী। তাদের অন্তরে কেবল ছিল দ্বীনের ফিকির। সালাত, সিয়াম, যিকির ছিল যাদের অভ্যাসের বিষয়। নিজেদের আমল, আখলাক আর আখিরাত নিয়ে যারা দুশ্চিন্তিত ছিলেন। যাদের সময়গুলো কেটেছে আল্লাহর জন্য উতসর্গ করতে করতে, যুদ্ধে এবং সংগ্রামে। আপনি কি তাদের জীবনীগুলো পড়েছেন? তাদের জীবনের সাথে নিজের জীবনকে জুড়তে পেরেছেন?

    আপনি কুরআন পড়তে থাকুন। আপনি বুঝবেন কুরআনের বিষয়বস্তুর ব্যাপারে। কুরআনের আলোকে নিজের জীবনের দৃষ্টিকোণ খুঁজে নিন। সমাজের দেখানো বোকা আর অদ্ভুত দৃষ্টিকোণে জীবনকে মেপে হায় হুতাশ করার মতো নির্বোধ আপনি হতে যাবেন না। নিজের দায়িত্ব আর লক্ষ্য উদ্দেশ্য বেছে নিন। আপনি তো এসেছেন ইতিহাসের নতুন অধ্যায় গড়তে। নাকি আপনি এমন সব বিষয় নিয়ে ভাবতে ব্যস্ত থাকবেন যা সামগ্রিক ভাবে উম্মাহর কোনো উপকারে আসবে না?

    আমি আপনাকে উত্তম পোশাক পরিধান করতে নিষেধ করছি না। আপনাকে আরাম আয়েশ করতেও না করছি না। ইসলাম এটাকে বৈধ করেছে। কিন্তু আমি ব্যক্তিগত ভাবে বিলাসহীনতাকেই বেশি পছন্দ করি। দুঃখ কষ্ট আমার অন্তরের খোরাক। শুনতে অদ্ভুত লাগছে হয়তো। সাহাবীদের সেই দৃষ্টিকোণই আমার কাছে উত্তম লেগেছে, "আমরা সম্পূর্ণ ভাবে কেবল আখিরাত চাই। দুনিয়ার প্রাপ্তিগুলো আমাদের সংশয়ে ফেলে দেয়, আখিরাতে কিছু কমে গেল কি না।" আমিও বলবো, "দুনিয়া হোক রমাদান, আর আখিরাত হোক আমার ঈদের দিন।" এই দুনিয়ার মূল্য তো আল্লাহর কাছে একটি মাছির ডানার থেকেও তুচ্ছ, আবর্জনার মাঝে পড়ে থাকা মরা গাধার মতো।

    আপনি যদি দুনিয়াকে কেন্দ্র করেই ব্যস্ত থাকেন, আপনার চিন্তা চেতনা যদি দুনিয়াতেই আটকে থাকে, তবে আপনি আমার থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে পারেন। যদি দ্বীনের ব্যাপারে ফিকির না থাকে, যদি উম্মাহর বৃহৎ উত্থানের ব্যাপারে আপনার ফিকির না থাকে, যদি দ্বীনের বিজয়ে আপনার ভূমিকা না থাকে। আপনি যদি আপনার কষ্টগুলোকে সমাজের দ্বীনহীন মানুষের মতোই অনুভব করেন তবে আমার থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে পারেন। আপনার কাছে "লাঞ্চিত" হওয়ার সংজ্ঞা হয়তো অভাব, অনাহার আর বিপদ। কিন্তু আমার কাছে "লাঞ্ছিত" হওয়ার সংজ্ঞা দ্বীনের পরিবর্তে গায়রে শরিয়াহ কোনো লাইফ লিড করা, কিংবা শরিয়াহহীন কোনো লোকের অনুগত হওয়া। আজ আপনি যদি আপনার দুঃখগুলোকে দ্বীনের সাহায্যে সমাধান করা না শিখেন, তবে আল্লাহর আযাবেই পতিত থাকুন। আমার কাছে দ্বীন শুধু মাত্র বাহিরের কিছু আচার কার্য নয়, বরং আমার দ্বীন আমাকে চিন্তা ভাবনাও শিখিয়েছে। আমি কবেই সেসব পচা-গলা মানসিকতা পায়ের নিচে পীষে ফেলেছি।

    আমি আপোসহীন হওয়া শিখেছি। মার খাবো এবং প্রয়োজনে না খেয়ে মারা যাবো, তবুও আপোস করতে রাজী নই। নিজের গন্তব্যস্থলে পৌছাতে আল্লাহ আমাকে দৃঢ় মানসিকতা দিয়েছেন। আশেপাশের লোকেদেরও আমি এটাই শেখাই, "আপোসহীন হও। তোমার অন্তরকে যখন কেবল দ্বীনের জন্য প্রস্তুত রাখবে, তখন দুনিয়ার কঠিন থেকে কঠিনতর বিষয়গুলোও তোমার গায়ে লাগবে না।"

    আল্লাহ আমাকে সেসব মানুষের মাঝে রাখুক, যারা অন্তরে তাকওয়া অবলম্বন করে, যাদের অন্তরগুলো আখিরাতমুখী। যারা অল্পই হাসে এবং অধিক কাঁদে। যারা নেক আমলে প্রতিযোগীতা করে এবং দুনিয়ার বুকে উম্মাহর অশ্রু মুছে দেওয়ার জন্য এবং দ্বীনকে বিজয়ী করার জন্য মশগুল। যাদের ব্যক্তি জীবন ঘাটলেও কেবল দ্বীনকেই খুঁজে পাওয়া যায়। যদি অন্তরকে আবাদ করা শিখে যান, তবে আপনাকে আল্লাহর দ্বীনের স্বাদ উপভোগ করার জন্য স্বাগতম। যেভাবে ইবনে তাইমিয়্যাহ (রহি) সারা জীবন দুঃখ কষ্ট, জুলুম, কারাগারে থাকার পরেও বলেন, "আমার অন্তরে যা আছে, তা যদি রাজা বাদশারা জানতো, তবে তারা আমার থেকে তা ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য যুদ্ধ করতো। আমার থেকে কিনে নেওয়ার জন্য সব সম্পদ দিয়ে দিতো।"
    Last edited by tahsin muhammad; 08-04-2023, 04:41 PM.

  • #2
    আল্লাহ আমাকে সেসব মানুষের মাঝে রাখুক, যারা অন্তরে তাকওয়া অবলম্বন করে, যাদের অন্তরগুলো আখিরাতমুখী। যারা অল্পই হাসে এবং অধিক কাঁদে। যারা নেক আমলে প্রতিযোগীতা করে এবং দুনিয়ার বুকে উম্মাহর অশ্রু মুছে দেওয়ার জন্য এবং দ্বীনকে বিজয়ী করার জন্য মশগুল। যাদের ব্যক্তি জীবন ঘাটলেও কেবল দ্বীনকেই খুঁজে পাওয়া যায়। যদি অন্তরকে আবাদ করা শিখে যান, তবে আপনাকে আল্লাহর দ্বীনের স্বাদ উপভোগ করার জন্য স্বাগতম। যেভাবে ইবনে তাইমিয়্যাহ (রহি) সারা জীবন দুঃখ কষ্ট, জুলুম, কারাগারে থাকার পরেও বলেন, "আমার অন্তরে যা আছে, তা যদি রাজা বাদশারা জানতো, তবে তারা আমার থেকে তা ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য যুদ্ধ করতো। আমার থেকে কিনে নেওয়ার জন্য সব সম্পদ দিয়ে দিতো।"
    আমিন ইয়া রব্বাল আলামীন!

    অনেক অনেক জাযা-কুমুল্ল-হু খইরন আহসানাল জাযা মুহতারাম
    হয় শাহাদাহ নাহয় বিজয়।

    Comment


    • #3
      ওয়া আংতুম জাযাকুমুল্লাহ খাইর 🌸🖤

      Comment


      • #4
        রাসূল হেলান দিয়ে খাবার খেতেন না, তিনি বলতেন, "আমি সামান্য একজন দাস মাত্র। আর দাসরা কখনো হেলান দিয়ে বসে খাবার খায় না।" তাঁর সামনে যব, খেজুর, বাদাম ইত্যাদি মিশ্রিত পানীয় নিয়ে আসা হলে তিনি বলেছিলেন, "এটা আমার থেকে সরাও। এটা বিলাসী মানুষের খাবার। এটা আমি খাবো না।"
        দুনিয়ার সাথে আমাদের সম্পর্ক হওয়া উচিত, সেই মুসাফিরের মত, যে চলতে চলতে একটা গাছের ছায়ায় কিচ্ছু সময় আশ্রয় নিয়ে আবার চলতে শুরু করেছে।

        Comment

        Working...
        X