খ্রিস্টশক্তির সঙ্গে লড়াই করতে করতে সর্বশেষ শামেলীর সম্মুখযুদ্ধে পরাজিত হয়ে যে কাফেলাটি إِلَّا مُتَحَرِّفٗا لِّقِتَالٍ أَوۡ مُتَحَيِّزًا إِلَىٰ فِئَةٖ (যুদ্ধের কৌশল পরিবর্তন বা দলে স্থান লওয়া) এর আমল হিসেবে একটি দুর্গ তৈরি করেছিল, সে দুর্গটির নাম হচ্ছে “দারুল উলূম দেওবন্দ” এবং সে কাফেলাটির নাম হচ্ছে “দেওবন্দী”।
এ কাফেলা এবং এ দুর্গটি এ উপমহাদেশের জন্য এ জনগোষ্ঠীর জন্য কী করেছে? কী করতে চেয়েছে? যেমনটি আমি আগেও বলে এসেছি, “দারুল উলূম দেওবন্দ” -এর মূল্যায়নের ক্ষেত্রে এটি একান্তই আমার ব্যক্তিগত উপলব্ধি। আমার অনুভূতিটাই আমি তুলে ধরছি। এ মূল্যায়ন সবার মূল্যায়নের সঙ্গে হুবহু খাপ খাওয়ার তো প্রশ্নই আসে না, বরং দু'একজনের সঙ্গেও যদি মিলে যায় তবু গণিমত মনে করব। সে হিসাবেই বলছি- দারুল উলুম দেওবন্দের কাজ ছিল প্রধানত দু'টি: ১. সহীহ ইলমের চর্চার মাধ্যমে দ্বীনের সঠিক পরিচয়কে তুলে ধরা। ২. শক্তি অর্জনের মাধ্যমে শক্রর মোকাবেলা করার প্রস্ততি নেয়া। একজন মুমিন তার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌছার জন্য এ দু'টি বিষয় ছিল অপরিহার্য। এমনকি দ্বীনকে তার আপন অবয়ব ও শান শওকতে টিকিয়ে রাখার জন্য দু'টির কোনটিকে কোনটির উপর প্রাধান্য দেয়ার কোন সুযোগ নেই। এ দু'টি মৌলিক লক্ষ্য স্থির করে আহলে দেওবন্দ যা করেছেন এবং যা করতে চেয়েছেন তা নিম্নোক্ত কয়েকটি শিরোনামে তুলে ধরছি।
কয়েকটি লক্ষ্য
গোলামীর জীবন থেকে মুক্তিঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে দ্বীন নিয়ে এসেছেন সে দ্বীনের অতিক্ষুদ্র ও সাময়িক একটি পর্বই মাত্র কুফরী শক্তির অধীনস্থ ছিল, তাও তা মেনে নিয়ে নয়; বরং বিদ্রোহ করে, সত্য প্রকাশ করে, দ্বীনের উপর অটল থেকে। কিন্তু এ সূচনা পর্বের পর নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও পরবর্তীতে তাঁর উম্মত কখনো কুফরী শক্তির অধীনস্থতা মেনে নেয়নি এবং মেনে নেয়ার বৈধতাও শরীয়তের পক্ষ থেকে দেয়া হয়নি।
এ সত্যের উপলব্ধি থেকেই পূর্বসূরি ও উত্তরসূরিরা কখনো কুফরী বৃটিশ শক্তির কর্তৃত্ব মেনে নেননি। নিজেদের ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করেছেন। ইসলামের কেন্দ্রীয় খেলাফত উসমানী খেলাফতকে সাধ্য মাফিক সহযোগিতা করেছেন। সর্বশেষ শক্তিটুকু ব্যয় করেছেন কুফরী শক্তির অধীনস্থতা থেকে মুক্তির জন্য। একটি মুসলিম ভূখণ্ডের জন্য চেষ্টা করে গেছেন। হিন্দু প্রধান দেশেও মুসলমানদের কর্তৃত্ব বজায় রাখার সকল চেষ্টা করে গেছেন। তাঁরা চেয়েছেন রাজত্ব আল্লাহর হোক, মানুষের নয়।
আকাবিরে দেওবন্দ মনে করতেন, মুসলমান কখনো কুফুরী শক্তির অধীনে, কুফুরী শাসনের অধীনে বেঁচে থাকতে পারে না। সুচনা পর্বে মক্কা থেকে মদীনায় হিজরতের মাধ্যমেই সে পর্ব শেষ হয়ে গেছে। এর পুনরাবৃত্তির কোন বৈধতা নেই। তাই মদীনার পাহাড় ঘেরা ছোট্ট আয়তনের ক্ষুদ্র একটি শক্তি পৃথিবী জোড়া বৃহৎ শক্তির মোকাবেলায় লড়াই অব্যাহত রেখেছে। কখনো প্রকাশ্যে, কখনো গোপনে। আর সে লড়াই পরিচালিত হয়েছে এ দুর্গ থেকেই সরাসরি এবং নিয়মতান্ত্রিক সুনির্দিষ্ট ছকে এঁকে।
ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠাঃ
যতদিন ইসলামের কেন্দ্রীয় খেলাফত ছিল ততদিন সে খেলাফতকে টিকিয়ে রাখার সব ধরনের চেষ্টা করে গেছেন, সাধ্যমত সহযোগিতা করেছেন। কুফুরী শক্তির হাতে যখন সে খেলাফত ধ্বংস হয়ে গেল তখন এ ভারত উপমহাদেশে একটি স্বতন্ত্র ইসলামী রাষ্ট্র যেখানে আল্লাহর রাজত্ব চলবে, আল্লাহর বিধান বাস্তবায়ন করা যাবে -এমন রাষ্ট্র গঠনের জন্য এ কাফেলা এবং এ দুর্গের মহামনীষীরাই নিরলস চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। ভূখণ্ড, ভাষা ইত্যাদি সাম্প্রদায়িকতা থেকে ঊর্ধ্বে উঠে শুধুমাত্র ইসলামের পরিচয়ে একতাবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করেছেন। আকাবিরে দেওবন্দ কখনো ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা থেকে হাত গুটিয়ে বসে থাকেননি, বা এর প্রয়োজন নেই এমন মনোভাব ব্যক্ত করেননি, বা এটা আমাদের কাজ নয় এমনটি ভাবেননি।
অপরদিকে হিন্দু প্রধান দেশের মুসলমানরা যেন অধীনস্থতা গ্রহণ না করে পূর্ণাঙ্গ স্বকীয়তার সাথে দাপটের সঙ্গে দ্বীন ও শরীয়তের উপর আমল করে যেতে পারে সে প্রচেষ্টাতেও কোন প্রকার ত্রুটি করা হয়নি। পদ্ধতিগত মতবিরোধ থাকতে পারে, কিন্তু আল্লাহর বিধান বাস্তবায়ন করতে হবে, তার জন্য চেষ্টা করতে হবে এবং সে কাজ আমাদেরকেই করতে হবে -এ বিশ্বাস আকাবিরে দেওবন্দ সব সময়ই লালন করেছেন এবং সে অনুযায়ী কাজ করে গেছেন।
শিরক কুফর থেকে পবিত্র করাঃ
এ উপমহাদেশের অবস্থা এক পর্যায়ে এমন দাঁড়িয়েছে যখন ইসলাম ও মুসলমান শুধুমাত্র একটি বংশগত পরিচয় হিসেবে রয়ে গেছে। এছাড়া আচার আচরণ ও আকীদা বিশ্বাসে একজন মুসলমানকে একজন হিন্দু থেকে আলাদা করা দুষ্কর ছিল। .
হিন্দুরা বটগাছের পূজা করে থাকলে মুসলমানরা অন্য এক গাছের পূজা করত। হিন্দুরা গঙ্গায় প্রতিমা বিসর্জন দিত আর মুসলমানরা পানির অধিপতি (?) খিজিরের জন্য ভোগ-অর্থ বিসর্জন দিত। পৈতা, রাখি, উল্কি, ঝুটি, চুটি ইত্যাদিতে হিন্দু-মুসলমান কোন ভেদাভেদ ছিল না। তিথি, রাশি, লক্ষ্মী, অলক্ষ্মী বিশ্বাসে হিন্দু-মুসলমান সমান। পূজা পার্বনগুলো সবার জন্য সমান উপভোগ্য। প্রতিমা তৈরি, বিক্রয় ও সাজানোতে সবাই সমান সিদ্ধহস্ত। শুধু ব্যবধান এতটুকু যে, একজন মুসলমান গোষ্ঠীর আরেকজন অমুসলমান গোষ্ঠীর।
দারুল উলূম দেওবন্দের পূর্বসূরি-উত্তরসূরিগণ ইলমের এ কেন্দ্র থেকে রচনা-সংকলনের মাধ্যমে, সরাসরি দাওয়াতি কাফেলা প্রেরণ করে, ব্যাপক বয়ান ও মাহফিলের মাধ্যমে ইসলামের সঠিক পরিচয় তুলে ধরেছেন। এটি যে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ধর্ম তা প্রমাণ করেছেন। অন্য ধর্মের সঙ্গে তার পার্থক্যগুলো কোথায় তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন। মুসলমান দাবি করতে হলে তাকে কি করতে হবে এবং কোন কোন কাজ ও বিশ্বাস থেকে বেঁচে থাকতে হবে তা দেখিয়ে দিয়েছেন।
দেখুন, এ কাজগুলো ব্যক্তিগতভাবে সব যুগেই হয়েছে, একেকজন একেকটি দায়িত্ব পালন করে গেছেন। কিন্তু দারুল উলুম দেওবন্দ দ্বীনের একটি কেল্লা হিসেবে এ সবগুলো কাজেরই যিম্মাদারী গ্রহণ করেছে। আহলে দেওবন্দ দ্বীনের সঠিক পরিচয়মূলক কিতাব পত্রের প্রচারও করেছেন এবং নিজেরা তৈরিও করেছেন। আর ইলমী তত্ত্বাবধানে তা যত সঠিকভাবে করা সম্ভব, ব্যক্তিগত আবেগ দিয়ে ততটুকু সম্ভব নয়। সে হিসাবে বলা যায়, দারুল উলুম দেওবন্দ ঈমান ও কুফরের সঠিক সীমারেখা নির্ধারণ করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে।
দলিলভিত্তিক ইলম চর্চাঃ
বিভিন্ন পরিবেশ পরিস্থিতি যার কিছুর প্রতি ইতোপূর্বে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে, এ ধরনের আরো বহু কারণে ভারত উপমহাদেশে কুরআন-হাদীসভিত্তিক ইলম চর্চা মানুষ ভুলেই গিয়েছিল। প্রত্যেক মুসলমানের আকীদা, আমল ও লেনদেন সর্বক্ষেত্রে তার মাপকাঠি হিসেবে ছিল শুধুমাত্র ধর্মগুরু। এ ক্ষেত্রে যে যাকে পছন্দ করে বেছে নিয়েছে সেই তার মাপকাঠি। এর বাইরে কুরআনে কী আছে, হাদীসে কী আছে, ইজমা কি বলে, কেয়াসের আওতায় আসে কী না -এসকল প্রশ্ন ও ভাবনা ছিল অবান্তর। যে আকীদা আমলের উপর চলছি তার সঙ্গে আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের কোন সম্পর্ক আছে কি না এ নিয়ে সময় ব্যয় করা ছিল অপচয়। কেউ কখনো এমন প্রশ্ন উত্থাপন করলে সেটাই ছিল অবাক হওয়ার মত বিষয়।
“দারুল উলুম দেওবন্দ" এ ধ্যান-ধারণার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে।
পরবর্তী ইতিহাস প্রমাণ করেছে, ভারত উপমহাদেশে দলিল-প্রমাণ ভিত্তিক দ্বীন চর্চার সবচাইতে বড়, ব্যাপক ও দীর্ঘ মেয়াদী মাকতাবায়ে ফিকর- সভ্যতা কেন্দ্র হচ্ছে দারুল উলুম দেওবন্দ। এর সমকক্ষ দ্বিতীয়টি আর নেই।
কুরআন চর্চাঃ
ইসলামের এ দুর্গ তাঁর পাঠ্যসূচিতে সরাসরি কুরআন পাঠদানের ব্যবস্থা করেছে। এর পাশাপাশি কুরআন ব্যাখ্যার মূলনীতি শিক্ষার ব্যবস্থা করেছে। কুরআন পড়া, তাফসীর পড়া এবং উসূলে তাফসীর তথা কুরআন ব্যাখ্যার মূলনীতি শিক্ষার দ্বারা প্রত্যেক পাঠক মুফাসসির হয়ে যাবে যদিও বিষয়টি এমন নয়, কিন্তু একজন মুসলমান এ ইলম অর্জনের মাধ্যমে নিশ্চয়তা লাভ করতে পারবে যে, তার জীবন কুরআনের আলোকে চলছে। তার প্রচলিত জীবনের সঙ্গে কুরআনের যোগসুত্রতা আছে।
কুরআনের কেউ ভুল ব্যাখ্যা করলে তার কপালে ভাজ পড়বে। কেউ ইচ্ছাকৃত অপব্যাখ্যা করলে তার প্রতিরোধ করার মত শক্তি পাবে। অনিচ্ছাকৃত কেউ ভুল করলে তা এড়িয়ে যাওয়ার সাহস পাবে। ব্যক্তির প্রভাবের ঊর্ধ্বে উঠে এসে কুরআনকে কুরআনের মত করে বোঝার খোরাক পাবে। দৈনন্দিন জীবনে কুরআনের আহবান দ্বারা সরাসরি প্রভাবিত হবে, আপ্লুত হবে। তাফসীর ও উসূলে তাফসীরকে পাঠ্যসূচিভুক্ত করার এ উদ্দেশ্য ব্যতীত অন্য কোন উদ্দেশ্য আমার কাছে স্পষ্ট নয়।
হাদীস চর্চাঃ
“দারুল উলূম দেওবন্দ" হাদীস ও উসূলে হাদীসকে তার পাঠ্যসূচিতে সন্নিবেশিত করেছে। স্বল্প পরিসরে নয়, বৃহৎ পরিসরে হাদীস চর্চার আয়োজন করেছে। পাঠ্যসূচির একটি বড় অংশ জুড়ে আছে নির্বাচিত হাদীস, সনদবিহীন হাদীস, সনদসহ হাদীস। হাদীস সমগ্রের প্রসিদ্ধ প্রায় সবগুলো কিতাবই পাঠ্যসূচিভুক্ত করা হয়েছে।
এর দ্বারা উদ্দেশ্য ছিল, ইসলামী জীবন যেন হাদীস ও সুন্নাহর আলোকে পরিচালিত হয়। একজন মুসলমান যেন তার দৈনন্দিন আমলের ক্ষেত্রে নিশ্চয়তাবোধ করতে পারে যে, তার জীবন হাদীসের আলোকে চলছে।
এক্ষেত্রে আকাবিরে দেওবন্দের একটি উদার নীতিকে কখনো ভুলে যাওয়া যায় না। দারুল উলৃম দেওবন্দের প্রতিষ্ঠাতা ও কর্ণধারগণ সবাই ফিকহ ও ইস্তেমবাতের একটি বিশেষ ঘরানার সাথে যুক্ত। কিন্তু পাঠ্যসূচির জন্য হাদীসের কিতাব নির্বাচন করার ক্ষেত্রে তাঁদের ফিকহী সে বিশেষ চিন্তাধারা কোন প্রকারের প্রভাব বিস্তার করেনি ।
প্রসিদ্ধ ছয় কিতাবসহ শ্রেণীভিত্তিক বিভিন্ন স্তরে হাদীসের যে কিতাবগুলো মতপার্থক্য রয়েছে। কিন্তু মতপার্থক্যগুলো যেহেতু একান্তই ইজতেহাদী ও ইলমী তাই এর প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে যে কিতাবগুলো সবচাইতে উপকারী কিতাব হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করেছে সেগুলোকেই অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে।
অনুরূপভাবে উসূলে হাদীস ও রিজাল শাস্ত্রকেও এ পাঠ্যভুক্ত করা হয়েছে। একটি বক্তব্যকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বক্তব্য বলে দাবি করতে হলে কতগুলো পর্ব অতিক্রম করতে হবে, কী কী শর্ত এক্ষেত্রে রয়েছে, সে বিষয়ক বিস্তারিত জ্ঞান অর্জনের ব্যবস্থা পাঠ্যসূচিতে রাখা হয়েছে।
দেখুন, হাদীস ও উসূলে হাদীসের উপর বিস্তর পড়াশোনা করে প্রত্যেক পাঠক একজন স্বীকৃত মুহাদ্দিস হয়ে যাবে, বা সহীহ-যয়ীফের সিদ্ধান্ত দেয়ার যোগ্য হয়ে যাবে, হাদীস থেকে সরাসরি মাসআলা উদঘাটনে সক্ষম হয়ে যাবে, হাদিসের সমস্ত ভাণ্ডার তার নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে, হাদীসের নাসেখ-মানসুখ চিনে ফেলবে, বর্ণনাকারীদের মাঝে কে নির্ভরযোগ্য আর কে অনির্ভরযোগ্য তা বাছাই করে ফেলতে পারবে ইত্যাদি যদি নাও হয়, কিন্তু এতটুকু যোগ্যতা হবে বলে তো দাবি করাই যায় যে, একজন তালিবুল ইলম অনুধাবন করতে পারবে সে শরীয়তের বিধানগুলোকে সরাসরি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা, কাজ ও মৌন সমর্থনের মাঝে পাচ্ছে। সে আশ্বস্ত হচ্ছে যে, সে হাওয়ার উপর চলছে না। তার দৈনন্দিন প্রতিটি আমলে হাদীসের দিকনির্দেশনা পেয়ে সে আপ্লুত হচ্ছে। নববী নূরের ছোয়া সরাসরি পাচ্ছে।
উসূলে হাদীসের উপর মোটামুটি পর্যায়ের জ্ঞান অর্জন হওয়ার কারণে উত্থাপিত দলিলগুলোর প্রাথমিক পর্যায়ের অবস্থান নির্ণয় করে ফেলতে পারে। একটি সহীহ হাদীসকে খোঁড়া কোন অজুহাতে কেউ অস্বীকার করতে চাইলে মূলনীতির আলোকে সে তার প্রতিরোধ করতে পারে, আবার কেউ স্পষ্ট কোন জাল হাদীসকে সমাজে প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে তার প্রতিবাদ করার মত যোগ্যতা তার হয়ে যায়। রাসূলের উপর মিথ্যারোপ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে। রাসূলের হাদীসকে প্রত্যাখ্যান করার গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে পারে।
সংগৃহীত
এ কাফেলা এবং এ দুর্গটি এ উপমহাদেশের জন্য এ জনগোষ্ঠীর জন্য কী করেছে? কী করতে চেয়েছে? যেমনটি আমি আগেও বলে এসেছি, “দারুল উলূম দেওবন্দ” -এর মূল্যায়নের ক্ষেত্রে এটি একান্তই আমার ব্যক্তিগত উপলব্ধি। আমার অনুভূতিটাই আমি তুলে ধরছি। এ মূল্যায়ন সবার মূল্যায়নের সঙ্গে হুবহু খাপ খাওয়ার তো প্রশ্নই আসে না, বরং দু'একজনের সঙ্গেও যদি মিলে যায় তবু গণিমত মনে করব। সে হিসাবেই বলছি- দারুল উলুম দেওবন্দের কাজ ছিল প্রধানত দু'টি: ১. সহীহ ইলমের চর্চার মাধ্যমে দ্বীনের সঠিক পরিচয়কে তুলে ধরা। ২. শক্তি অর্জনের মাধ্যমে শক্রর মোকাবেলা করার প্রস্ততি নেয়া। একজন মুমিন তার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌছার জন্য এ দু'টি বিষয় ছিল অপরিহার্য। এমনকি দ্বীনকে তার আপন অবয়ব ও শান শওকতে টিকিয়ে রাখার জন্য দু'টির কোনটিকে কোনটির উপর প্রাধান্য দেয়ার কোন সুযোগ নেই। এ দু'টি মৌলিক লক্ষ্য স্থির করে আহলে দেওবন্দ যা করেছেন এবং যা করতে চেয়েছেন তা নিম্নোক্ত কয়েকটি শিরোনামে তুলে ধরছি।
কয়েকটি লক্ষ্য
গোলামীর জীবন থেকে মুক্তিঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে দ্বীন নিয়ে এসেছেন সে দ্বীনের অতিক্ষুদ্র ও সাময়িক একটি পর্বই মাত্র কুফরী শক্তির অধীনস্থ ছিল, তাও তা মেনে নিয়ে নয়; বরং বিদ্রোহ করে, সত্য প্রকাশ করে, দ্বীনের উপর অটল থেকে। কিন্তু এ সূচনা পর্বের পর নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও পরবর্তীতে তাঁর উম্মত কখনো কুফরী শক্তির অধীনস্থতা মেনে নেয়নি এবং মেনে নেয়ার বৈধতাও শরীয়তের পক্ষ থেকে দেয়া হয়নি।
এ সত্যের উপলব্ধি থেকেই পূর্বসূরি ও উত্তরসূরিরা কখনো কুফরী বৃটিশ শক্তির কর্তৃত্ব মেনে নেননি। নিজেদের ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করেছেন। ইসলামের কেন্দ্রীয় খেলাফত উসমানী খেলাফতকে সাধ্য মাফিক সহযোগিতা করেছেন। সর্বশেষ শক্তিটুকু ব্যয় করেছেন কুফরী শক্তির অধীনস্থতা থেকে মুক্তির জন্য। একটি মুসলিম ভূখণ্ডের জন্য চেষ্টা করে গেছেন। হিন্দু প্রধান দেশেও মুসলমানদের কর্তৃত্ব বজায় রাখার সকল চেষ্টা করে গেছেন। তাঁরা চেয়েছেন রাজত্ব আল্লাহর হোক, মানুষের নয়।
আকাবিরে দেওবন্দ মনে করতেন, মুসলমান কখনো কুফুরী শক্তির অধীনে, কুফুরী শাসনের অধীনে বেঁচে থাকতে পারে না। সুচনা পর্বে মক্কা থেকে মদীনায় হিজরতের মাধ্যমেই সে পর্ব শেষ হয়ে গেছে। এর পুনরাবৃত্তির কোন বৈধতা নেই। তাই মদীনার পাহাড় ঘেরা ছোট্ট আয়তনের ক্ষুদ্র একটি শক্তি পৃথিবী জোড়া বৃহৎ শক্তির মোকাবেলায় লড়াই অব্যাহত রেখেছে। কখনো প্রকাশ্যে, কখনো গোপনে। আর সে লড়াই পরিচালিত হয়েছে এ দুর্গ থেকেই সরাসরি এবং নিয়মতান্ত্রিক সুনির্দিষ্ট ছকে এঁকে।
ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠাঃ
যতদিন ইসলামের কেন্দ্রীয় খেলাফত ছিল ততদিন সে খেলাফতকে টিকিয়ে রাখার সব ধরনের চেষ্টা করে গেছেন, সাধ্যমত সহযোগিতা করেছেন। কুফুরী শক্তির হাতে যখন সে খেলাফত ধ্বংস হয়ে গেল তখন এ ভারত উপমহাদেশে একটি স্বতন্ত্র ইসলামী রাষ্ট্র যেখানে আল্লাহর রাজত্ব চলবে, আল্লাহর বিধান বাস্তবায়ন করা যাবে -এমন রাষ্ট্র গঠনের জন্য এ কাফেলা এবং এ দুর্গের মহামনীষীরাই নিরলস চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। ভূখণ্ড, ভাষা ইত্যাদি সাম্প্রদায়িকতা থেকে ঊর্ধ্বে উঠে শুধুমাত্র ইসলামের পরিচয়ে একতাবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করেছেন। আকাবিরে দেওবন্দ কখনো ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা থেকে হাত গুটিয়ে বসে থাকেননি, বা এর প্রয়োজন নেই এমন মনোভাব ব্যক্ত করেননি, বা এটা আমাদের কাজ নয় এমনটি ভাবেননি।
অপরদিকে হিন্দু প্রধান দেশের মুসলমানরা যেন অধীনস্থতা গ্রহণ না করে পূর্ণাঙ্গ স্বকীয়তার সাথে দাপটের সঙ্গে দ্বীন ও শরীয়তের উপর আমল করে যেতে পারে সে প্রচেষ্টাতেও কোন প্রকার ত্রুটি করা হয়নি। পদ্ধতিগত মতবিরোধ থাকতে পারে, কিন্তু আল্লাহর বিধান বাস্তবায়ন করতে হবে, তার জন্য চেষ্টা করতে হবে এবং সে কাজ আমাদেরকেই করতে হবে -এ বিশ্বাস আকাবিরে দেওবন্দ সব সময়ই লালন করেছেন এবং সে অনুযায়ী কাজ করে গেছেন।
শিরক কুফর থেকে পবিত্র করাঃ
এ উপমহাদেশের অবস্থা এক পর্যায়ে এমন দাঁড়িয়েছে যখন ইসলাম ও মুসলমান শুধুমাত্র একটি বংশগত পরিচয় হিসেবে রয়ে গেছে। এছাড়া আচার আচরণ ও আকীদা বিশ্বাসে একজন মুসলমানকে একজন হিন্দু থেকে আলাদা করা দুষ্কর ছিল। .
হিন্দুরা বটগাছের পূজা করে থাকলে মুসলমানরা অন্য এক গাছের পূজা করত। হিন্দুরা গঙ্গায় প্রতিমা বিসর্জন দিত আর মুসলমানরা পানির অধিপতি (?) খিজিরের জন্য ভোগ-অর্থ বিসর্জন দিত। পৈতা, রাখি, উল্কি, ঝুটি, চুটি ইত্যাদিতে হিন্দু-মুসলমান কোন ভেদাভেদ ছিল না। তিথি, রাশি, লক্ষ্মী, অলক্ষ্মী বিশ্বাসে হিন্দু-মুসলমান সমান। পূজা পার্বনগুলো সবার জন্য সমান উপভোগ্য। প্রতিমা তৈরি, বিক্রয় ও সাজানোতে সবাই সমান সিদ্ধহস্ত। শুধু ব্যবধান এতটুকু যে, একজন মুসলমান গোষ্ঠীর আরেকজন অমুসলমান গোষ্ঠীর।
দারুল উলূম দেওবন্দের পূর্বসূরি-উত্তরসূরিগণ ইলমের এ কেন্দ্র থেকে রচনা-সংকলনের মাধ্যমে, সরাসরি দাওয়াতি কাফেলা প্রেরণ করে, ব্যাপক বয়ান ও মাহফিলের মাধ্যমে ইসলামের সঠিক পরিচয় তুলে ধরেছেন। এটি যে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ধর্ম তা প্রমাণ করেছেন। অন্য ধর্মের সঙ্গে তার পার্থক্যগুলো কোথায় তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন। মুসলমান দাবি করতে হলে তাকে কি করতে হবে এবং কোন কোন কাজ ও বিশ্বাস থেকে বেঁচে থাকতে হবে তা দেখিয়ে দিয়েছেন।
দেখুন, এ কাজগুলো ব্যক্তিগতভাবে সব যুগেই হয়েছে, একেকজন একেকটি দায়িত্ব পালন করে গেছেন। কিন্তু দারুল উলুম দেওবন্দ দ্বীনের একটি কেল্লা হিসেবে এ সবগুলো কাজেরই যিম্মাদারী গ্রহণ করেছে। আহলে দেওবন্দ দ্বীনের সঠিক পরিচয়মূলক কিতাব পত্রের প্রচারও করেছেন এবং নিজেরা তৈরিও করেছেন। আর ইলমী তত্ত্বাবধানে তা যত সঠিকভাবে করা সম্ভব, ব্যক্তিগত আবেগ দিয়ে ততটুকু সম্ভব নয়। সে হিসাবে বলা যায়, দারুল উলুম দেওবন্দ ঈমান ও কুফরের সঠিক সীমারেখা নির্ধারণ করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে।
দলিলভিত্তিক ইলম চর্চাঃ
বিভিন্ন পরিবেশ পরিস্থিতি যার কিছুর প্রতি ইতোপূর্বে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে, এ ধরনের আরো বহু কারণে ভারত উপমহাদেশে কুরআন-হাদীসভিত্তিক ইলম চর্চা মানুষ ভুলেই গিয়েছিল। প্রত্যেক মুসলমানের আকীদা, আমল ও লেনদেন সর্বক্ষেত্রে তার মাপকাঠি হিসেবে ছিল শুধুমাত্র ধর্মগুরু। এ ক্ষেত্রে যে যাকে পছন্দ করে বেছে নিয়েছে সেই তার মাপকাঠি। এর বাইরে কুরআনে কী আছে, হাদীসে কী আছে, ইজমা কি বলে, কেয়াসের আওতায় আসে কী না -এসকল প্রশ্ন ও ভাবনা ছিল অবান্তর। যে আকীদা আমলের উপর চলছি তার সঙ্গে আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের কোন সম্পর্ক আছে কি না এ নিয়ে সময় ব্যয় করা ছিল অপচয়। কেউ কখনো এমন প্রশ্ন উত্থাপন করলে সেটাই ছিল অবাক হওয়ার মত বিষয়।
“দারুল উলুম দেওবন্দ" এ ধ্যান-ধারণার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে।
পরবর্তী ইতিহাস প্রমাণ করেছে, ভারত উপমহাদেশে দলিল-প্রমাণ ভিত্তিক দ্বীন চর্চার সবচাইতে বড়, ব্যাপক ও দীর্ঘ মেয়াদী মাকতাবায়ে ফিকর- সভ্যতা কেন্দ্র হচ্ছে দারুল উলুম দেওবন্দ। এর সমকক্ষ দ্বিতীয়টি আর নেই।
কুরআন চর্চাঃ
ইসলামের এ দুর্গ তাঁর পাঠ্যসূচিতে সরাসরি কুরআন পাঠদানের ব্যবস্থা করেছে। এর পাশাপাশি কুরআন ব্যাখ্যার মূলনীতি শিক্ষার ব্যবস্থা করেছে। কুরআন পড়া, তাফসীর পড়া এবং উসূলে তাফসীর তথা কুরআন ব্যাখ্যার মূলনীতি শিক্ষার দ্বারা প্রত্যেক পাঠক মুফাসসির হয়ে যাবে যদিও বিষয়টি এমন নয়, কিন্তু একজন মুসলমান এ ইলম অর্জনের মাধ্যমে নিশ্চয়তা লাভ করতে পারবে যে, তার জীবন কুরআনের আলোকে চলছে। তার প্রচলিত জীবনের সঙ্গে কুরআনের যোগসুত্রতা আছে।
কুরআনের কেউ ভুল ব্যাখ্যা করলে তার কপালে ভাজ পড়বে। কেউ ইচ্ছাকৃত অপব্যাখ্যা করলে তার প্রতিরোধ করার মত শক্তি পাবে। অনিচ্ছাকৃত কেউ ভুল করলে তা এড়িয়ে যাওয়ার সাহস পাবে। ব্যক্তির প্রভাবের ঊর্ধ্বে উঠে এসে কুরআনকে কুরআনের মত করে বোঝার খোরাক পাবে। দৈনন্দিন জীবনে কুরআনের আহবান দ্বারা সরাসরি প্রভাবিত হবে, আপ্লুত হবে। তাফসীর ও উসূলে তাফসীরকে পাঠ্যসূচিভুক্ত করার এ উদ্দেশ্য ব্যতীত অন্য কোন উদ্দেশ্য আমার কাছে স্পষ্ট নয়।
হাদীস চর্চাঃ
“দারুল উলূম দেওবন্দ" হাদীস ও উসূলে হাদীসকে তার পাঠ্যসূচিতে সন্নিবেশিত করেছে। স্বল্প পরিসরে নয়, বৃহৎ পরিসরে হাদীস চর্চার আয়োজন করেছে। পাঠ্যসূচির একটি বড় অংশ জুড়ে আছে নির্বাচিত হাদীস, সনদবিহীন হাদীস, সনদসহ হাদীস। হাদীস সমগ্রের প্রসিদ্ধ প্রায় সবগুলো কিতাবই পাঠ্যসূচিভুক্ত করা হয়েছে।
এর দ্বারা উদ্দেশ্য ছিল, ইসলামী জীবন যেন হাদীস ও সুন্নাহর আলোকে পরিচালিত হয়। একজন মুসলমান যেন তার দৈনন্দিন আমলের ক্ষেত্রে নিশ্চয়তাবোধ করতে পারে যে, তার জীবন হাদীসের আলোকে চলছে।
এক্ষেত্রে আকাবিরে দেওবন্দের একটি উদার নীতিকে কখনো ভুলে যাওয়া যায় না। দারুল উলৃম দেওবন্দের প্রতিষ্ঠাতা ও কর্ণধারগণ সবাই ফিকহ ও ইস্তেমবাতের একটি বিশেষ ঘরানার সাথে যুক্ত। কিন্তু পাঠ্যসূচির জন্য হাদীসের কিতাব নির্বাচন করার ক্ষেত্রে তাঁদের ফিকহী সে বিশেষ চিন্তাধারা কোন প্রকারের প্রভাব বিস্তার করেনি ।
প্রসিদ্ধ ছয় কিতাবসহ শ্রেণীভিত্তিক বিভিন্ন স্তরে হাদীসের যে কিতাবগুলো মতপার্থক্য রয়েছে। কিন্তু মতপার্থক্যগুলো যেহেতু একান্তই ইজতেহাদী ও ইলমী তাই এর প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে যে কিতাবগুলো সবচাইতে উপকারী কিতাব হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করেছে সেগুলোকেই অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে।
অনুরূপভাবে উসূলে হাদীস ও রিজাল শাস্ত্রকেও এ পাঠ্যভুক্ত করা হয়েছে। একটি বক্তব্যকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বক্তব্য বলে দাবি করতে হলে কতগুলো পর্ব অতিক্রম করতে হবে, কী কী শর্ত এক্ষেত্রে রয়েছে, সে বিষয়ক বিস্তারিত জ্ঞান অর্জনের ব্যবস্থা পাঠ্যসূচিতে রাখা হয়েছে।
দেখুন, হাদীস ও উসূলে হাদীসের উপর বিস্তর পড়াশোনা করে প্রত্যেক পাঠক একজন স্বীকৃত মুহাদ্দিস হয়ে যাবে, বা সহীহ-যয়ীফের সিদ্ধান্ত দেয়ার যোগ্য হয়ে যাবে, হাদীস থেকে সরাসরি মাসআলা উদঘাটনে সক্ষম হয়ে যাবে, হাদিসের সমস্ত ভাণ্ডার তার নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে, হাদীসের নাসেখ-মানসুখ চিনে ফেলবে, বর্ণনাকারীদের মাঝে কে নির্ভরযোগ্য আর কে অনির্ভরযোগ্য তা বাছাই করে ফেলতে পারবে ইত্যাদি যদি নাও হয়, কিন্তু এতটুকু যোগ্যতা হবে বলে তো দাবি করাই যায় যে, একজন তালিবুল ইলম অনুধাবন করতে পারবে সে শরীয়তের বিধানগুলোকে সরাসরি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা, কাজ ও মৌন সমর্থনের মাঝে পাচ্ছে। সে আশ্বস্ত হচ্ছে যে, সে হাওয়ার উপর চলছে না। তার দৈনন্দিন প্রতিটি আমলে হাদীসের দিকনির্দেশনা পেয়ে সে আপ্লুত হচ্ছে। নববী নূরের ছোয়া সরাসরি পাচ্ছে।
উসূলে হাদীসের উপর মোটামুটি পর্যায়ের জ্ঞান অর্জন হওয়ার কারণে উত্থাপিত দলিলগুলোর প্রাথমিক পর্যায়ের অবস্থান নির্ণয় করে ফেলতে পারে। একটি সহীহ হাদীসকে খোঁড়া কোন অজুহাতে কেউ অস্বীকার করতে চাইলে মূলনীতির আলোকে সে তার প্রতিরোধ করতে পারে, আবার কেউ স্পষ্ট কোন জাল হাদীসকে সমাজে প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে তার প্রতিবাদ করার মত যোগ্যতা তার হয়ে যায়। রাসূলের উপর মিথ্যারোপ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে। রাসূলের হাদীসকে প্রত্যাখ্যান করার গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে পারে।
সংগৃহীত
Comment