কিয়ামত অত্যাসন্ন। ছোটবড় আলামতগুলোর ধারাবাহিক প্রকাশ ক্রমশ বেগবান হচ্ছে। ইতোমধ্যে কিয়ামতের বড় আলামতেরও কয়েকটা প্রকাশ পেয়ে গেছে। কল্পনা করুন; খলিফাতুল্লাহ আল-মাহদীর আবির্ভাব হয়ে গেছে। তিনি পৃথিবীতে তাঁর দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়ে ফেলেছেন। আল-মালহামাতুল কুবরা বা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে মুসলিমরা বিজয়ী হয়ে গেছে। দামেশকের সাদা মিনারে ফজরের সালাতের পূর্বমুহূর্তে দুজন ফেরেশতার পাখায় ভর করে অবতরণ করে ফেলেছেন মরিয়ম-তনয় হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম। নামায আদায়ান্তে তিনি বেরিয়েছেন দাজ্জালের খোঁজে।
ফিলিস্তিনের (বর্তমানের তেল আবিব) বাবে লুদ নামক স্থানে (১) পেয়েও গেছেন এই নরাধমকে। পানিতে লবণ যেভাবে গলতে শুরু করে, ঈসা আলাইহিস সালামকে দেখামাত্রই দাজ্জালও অনুরূপ গলতে শুরু করেছে। হাতে ধরা বর্শাটা নিক্ষেপ করেছেন হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম। দাজ্জালের গায়ে বিঁধতেই দাজ্জালের দাজ্জালী খতম হয়ে গেছে (২)— পৃথিবীর ঠিক এমন এক মুহূর্তে অভিশপ্ত ইহুদিদের সাথে মুসলমানদের ঐতিহাসিক এক যুদ্ধের সূচনা হবে। যুদ্ধে আল্লাহ্ তাআলা ইহুদিদের চূড়ান্তভাবে লাঞ্ছিত করবেন। এযুদ্ধ চলাকালীন ইহুদিরা না কোনো গাছের আড়ালে লুকিয়ে থাকতে পারবে আর না কোনো পাথর-টিলার আড়ালে। যেটার আড়ালেই তারা আশ্রয় নেবে সেটাই মুসলিমকে ডেকে ডেকে বলে দেবে: “হে আল্লাহর বান্দা! এই যে আমার পেছনে ইহুদি লুকিয়ে আছে, এসো তাকে হত্যা করো”। কী আশ্চর্য, তাই না! কিন্তু এটা বাস্তব। ভবিষ্যৎবাণীটি বর্ণিত হয়েছে সহীহ বুখারী ও মুসলিমে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন:
لا تَقُومُ السّاعَةُ حتّى يُقاتِلَ المُسْلِمُونَ اليَهُودَ، فَيَقْتُلُهُمُ المُسْلِمُونَ حتّى يَخْتَبِئَ اليَهُودِيُّ مِن وراءِ الحَجَرِ والشَّجَرِ، فيَقولُ الحَجَرُ أوِ الشَّجَرُ: يا مُسْلِمُ يا عَبْدَ اللهِ هذا يَهُودِيٌّ خَلْفِي، فَتَعالَ فاقْتُلْهُ، إلّا الغَرْقَدَ، فإنَّه مِن شَجَرِ اليَهُودِ.
অর্থাৎ, মুসলিমরা ইহুদিদের বিরুদ্ধে যতদিন যুদ্ধ না করবে, ততদিন কিয়ামত কায়েম হবে না। মুসলিমরা তাদের হত্যা করতে থাকবে, এমনকি ইহুদিরা আত্মরক্ষার জন্য বিভিন্ন গাছ ও পাথরের আড়ালে আশ্রয় নেবে। তখন গাছ বা পাথর বলতে থাকবে: হে মুসলিম! হে আব্দুল্লাহ! এই যে আমার পেছেনে ইহুদি আছে, এসো তাকে হত্যা করো, তবে গারক্বাদ বৃক্ষটি এর ব্যতিক্রম হবে। কারণ, এটি ইহুদিদের বৃক্ষ। (সহীহ মুসলিম, হাদীস: ২৯২২)
(গারকাদ বৃক্ষ)
এযুদ্ধের নেতৃত্ব থাকবে স্বয়ং ঈসা আলাইহিস সালামের হাতে। যুদ্ধের পর পৃথিবীর মানচিত্রে আর কোথাও কোনো একটি ইহুদির টিকির দেখাও মিলবে না; আর না মিলবে ফিলিস্তিনিদের রক্তের উপর নির্মিত তাদের স্বপ্নের ইসরায়েলের দেখা। ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে ইহুদিদের গ্রেটার ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার দিবাস্বপ্ন। পৃথিবীর সর্বত্রই থাকবে শুধু মুসলিম আর মুসলিম। সেসময় পৃথিবীর প্রতিটি কাঁচাপাকা ঘরে আল্লাহ্ তাআলা এই সত্য দীনকে পৌঁছে দেবেন। হাদীসের ভাষায়:
لَيَبْلُغَنَّ هذا الأمرُ ما بلَغَ اللَّيلُ والنَّهارُ، ولا يَترُكُ اللهُ بَيتَ مَدَرٍ ولا وَبَرٍ إلَّا أَدخَلَه اللهُ هذا الدِّينَ
অর্থাৎ, দিবস ও রজনীর ন্যায় আল্লাহ্ তাআলা এই দ্বীনকে অবশ্যই সর্বত্র পৌঁছে দেবেন। প্রতিটি মাটির ঘর কিংবা চামড়ার তৈরি তাবুতেও আল্লাহ্ তাআলা এই সত্য দীনকে প্রবেশ করাবেন। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস: ১৬৯৫৭)
যে জাতির অনিষ্টে অতিষ্ঠ হয়ে নির্বাক গাছ-পাথরও সবাক হয়ে তাদের ধরিয়ে দেবে এমন এক নিকৃষ্ট ও অভিশপ্ত জাতির উত্থান-কাহিনী কিন্তু এতটা লাঞ্ছনাময় ছিল না; ছিল ঈর্ষণীয় সম্মান ও গৌরবের। ইহুদিরা নবুওয়াতের দীপ্তিমান আকাশের এক সমুজ্জ্বল নক্ষত্র হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালামের ঔরশজাত, আরেক নক্ষত্র নবী ইউসুফ আলাইহিস সালামের সহোদর। প্রসিদ্ধ নবী হযরত ইসহাক আলাইহিস সালাম তাদের পিতামহ, আর নবী ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তাদের প্রপিতামহ।
শুধু কি তাই; হযরত মুসা, হারুন, ইয়াহয়াহ, দাউদ ও সুলাইমান আলাইহিমুস সালামের মতো বড়মাপের নবীদের আল্লাহ্ তাআলা এই ইহুদিদের মধ্যেই প্রেরণ করেছেন। ইতিহাসে এ জাতির আরো একটি নাম আছে— “বনী ইসরায়েল”। তৎকালীন পৃথিবীতে আল্লাহ্ তাআলা আর সকল জাতির উপর বনী ইসরায়েলকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছিলেন।(৩) পৃথিবীতে এদেরকে সম্মানের কোন স্থানটি দেননি তিনি? পৃথিবীর এরাই একমাত্র জাতি, যাদেরকে তিনি নশ্বর এ দুনিয়াতেই আসমানি খাবার খাইয়েছেন, মেঘমালার দ্বারা তাদের উপর ছায়া বিস্তার করেছেন (৪) পাথর ফেড়ে তাদের জন্য ঝর্ণা প্রবাহিত করে পানির প্রয়োজন মিটিয়েছেন,(৫) লোহিত সাগরকে দ্বিখণ্ডিত করে রাস্তা তৈরি করে দিয়েছেন এবং উদ্ধত ফেরাউনের কবল থেকে নিস্তার দিয়েছেন।(৬) কিন্তু এরা এতটাই নিমকহারাম আর অকৃতজ্ঞ জাতি যে, এতকিছুর পরেও আল্লাহর ক্রোধ আর গোস্বাই শুধু অর্জন করেছে। নাফরমানি আর অবাধ্যতায় আকণ্ঠ নিমজ্জিত থেকেছে প্রতিনিয়ত।
ফলে আল্লাহ্ তাআলা এদেরকে কিয়ামত অবধি অভিশপ্ত ও লাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন। সুরা বাকারার ৬১ নং আয়াতে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন:
﴿ وَضُرِبَتۡ عَلَیۡهِمُ ٱلذِّلَّةُ وَٱلۡمَسۡكَنَةُ وَبَاۤءُو بِغَضَبࣲ مِّنَ ٱللَّهِۗ ذَلِكَ بِأَنَّهُمۡ كَانُوا۟ یَكۡفُرُونَ بِـَٔایَـٰتِ ٱللَّهِ وَیَقۡتُلُونَ ٱلنَّبِیِّـۧنَ بِغَیۡرِ ٱلۡحَقِّۗ ذَ لِكَ بِمَا عَصَوا۟ وَّكَانُوا۟ یَعۡتَدُونَ﴾
অর্থাৎ, অপমান-লাঞ্ছনা আর নিঃস্বতা এদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হলো, আর তারা আল্লাহ্ তাআলার রোষাণলে পতিত হয়ে ঘুরতে থাকল। এটা একারণে যে, তারা আল্লাহ্ তাআলার বিধিনিষেধ মানত না এবং নবীগণকে অন্যায়ভাবে হত্যা করত।
নবীদের হত্যা করা কত মারাত্মক ধরনের অন্যায়? যেখানে একজন সাধারণ মুমিনকে হত্যা করা আল্লাহ্ তালার কাছে দুনিয়া ধ্বংসের চেয়েও বেশি মারাত্মক,(৭) সেখানে তারা কিনা নবীদের হত্যা করত, যারা ছিলেন পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানব, গুনাহ থেকে মুক্ত-নিষ্পাপ! মুফাসসিরগণ লিখেছেন, ইহুদিরা মাত্র একদিনেই ৩০০ নবীকে পর্যন্ত হত্যা করেছে। (৮) সুতরাং এর পরিণতি আল্লাহ্ তাআলার ক্রোধ আর গোস্বা ছাড়া আর কী হবে? ইহুদিদেরকে তিনি যত বেশি নেয়ামত দিয়েছেন, তারা তত বেশি নাফরমানি করেছে।
পৃথিবীর চিরাচরিত নিয়ম ভেঙে তিনি যাদের মুক্তির রাস্তা করে দিয়েছেন সাগর দ্বিখণ্ডিত করে, সেই তারাই কিনা কিছুদিন যেতে না যেতেই গোবৎসের পূজা করতে শুরু করেছে! এরচেয়ে বড় নিমকহারামি আর কী হতে পারে? একারণেই একসময় যে জাতিকে তিনি তৎকালীন বিশ্বে সবচেয়ে বেশি শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছিলেন, কালপরিক্রমায় একসময় আবার তাদের উপরেই কিয়ামত পর্যন্ত সময়ের জন্য চির লাঞ্ছনা ও অপদস্থতা চাপিয়ে দিয়েছেন। তিনিই তো সর্বাপেক্ষা বড় প্রজ্ঞাবান!
আসলে আপনি যাকে স্নেহ-মমতার সর্বশ্রেষ্ঠ আসনটি দান করবেন, সে যদি অনবরত আপনার বিরোধিতা করতেই থাকে, তাহলে একসময় আপনি হাঁপিয়ে উঠবেন, বিরক্ত-রাগান্বিত হবেন। স্বভাবতই আপনি তার উপর থেকে স্নেহ-মমতার সকল চাদর তুলে নিবেন। তবুও যদি তার নাফরমানি বন্ধ না হয় তাহলে আপনার ক্রোধকে তার উপর চাপিয়ে দিবেন। ইহুদিদের ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম কিছুই ঘটেনি।
রবের অবাধ্য, চিরঅভিশপ্ত এই ইহুদি জাতিকে নিয়ে আমাদের দু-চার কলম লেখার কোনো প্রয়োজন হত না, যদি না বর্তমান পৃথিবীতে তাদের দৌরাত্ম্য, নৈরাজ্য আর অরাজকতা মানবতার জন্য চরম পর্যায়ের হুমকি হয়ে দাঁড়াত। ফিলিস্তিনের নিরীহ মুসলিমদের উপর তাদের জুলুম-নিপীড়ন আজ এমন এক ভয়ঙ্কর মাত্রায় এসে উপনীত হয়েছে যে, চাইলেও আর চোখ বুজে থাকা যায় না। নিখিল পৃথিবী থেকে ধিক্কৃত ও বিতাড়িত হয়ে সবশেষে ফিলিস্তিনে নিজেদের ইসরায়েল রাষ্ট্র গড়বার স্বপ্ন পূরণের নির্মম পথ ধরে মুসলিম উম্মাহর উপর যে অমানবিক জুলুম-নির্যাতন এরা চালিয়েছে, একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের যে অভাবনীয় ক্ষতি এরা করেছে, মনুষ্যমন চাইলেই আর এদের ব্যাপারটি ভুলে থাকতে পারছে না। তাদের আদ্যোপান্ত ইতিহাস জানবার কৌতুহল বিশ্বমানুষের বিশেষত মুসলিমদের প্রধান আগ্রহের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এদের উত্থান কোত্থেকে হলো? কীভাবে হলো? ফিলিস্তিন নিয়ে এদের এমন সীমাহীন আগ্রহের হেতু কী? গ্রেটার ইসরায়েল মানে কী? জায়োনিজম আন্দোলন কীভাবে শুরু হলো? এ আন্দোলনের যাত্রা কী উদ্দেশ্যে? ঐতিহাসিকভাবে ফিলিস্তিন ভূমি মূলত কাদের: ইহুদীদের না মুসলিমদের? চারদিকে আরব রাষ্ট্রগুলোকে রেখে মাঝখানে ইসরায়েল রাষ্ট্রটির জন্ম কীভাবে সম্ভব হলো? ইহুদি জাতি ও তাদের এই ইসরায়েল রাষ্ট্রের ভবিষ্যত-ই বা কী? ইত্যাকার প্রশ্নগুলো থেকে থেকে হাল আমলের মানুষগুলোকে ভাবনার অথৈ সাগরে ডুবিয়ে দিচ্ছে। মানুষের এ কৌতুহল ক্রমশ বেড়েই চলেছে। একদম শুরু থেকে ইহুদিদের ধারাবাহিক ইতিহাস তুলে ধরা তাই সময়ের উপযুক্ত দাবি বলেই মনে হয়েছে। যদি আমাদের শ্রমে একটি তৃষিত হৃদের তৃষ্ণাও নিবারিত হয়, তাহলেও নিজেদের এই শ্রমকে স্বার্থক মনে হবে। আল্লাহ্ তাআলা আমাদের এ উদ্যোগকে ভরপুর কামিয়াব করেন, এবং স্বীয় দয়াগুণে এটিকে কবুল করে নিন। মৃত্যু অবধি সীরাতুল মুস্তাকীমের উপর কায়েম থাকার তাওফীক দান করেন, আমীন!
وصلى الله تعالى على محمد وعلى أله وأصحابه وبارك وسلم.
সিরিজটি সম্পর্কে কিছু কথা:
১। বাংলা ভাষায় ইহুদী জাতির ইতিহাস নিয়ে ইসলামিক মাইন্ড থেকে বড় ধরনের কোনো কাজ এখনো আমাদের চোখে পড়েনি। তাই ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে যারা এই জাতির নাড়ীনক্ষত্র জানতে চান তাদের জন্য আমাদের এই সিরিজ আশানুরূপ উপকার বয়ে আনবে বলে আশা করি।
২। উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য শিক্ষণীয় অনেক বিষয় আল্লাহ্ তাআলা এ জাতির ইতিহাসে গচ্ছিত রেখেছেন। সবচেয়ে উত্তম শিক্ষা তো এটাই যে, এরা রবের যেমন নাফরমানিতে লিপ্ত হয়েছে, উম্মতে মুহাম্মদী অনুরূপ হবে না। এদের ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে আমাদের জন্য গচ্ছিত উপদেশগুলোকে আমরা চিহ্নিত করার চেষ্টা করব, ইনশাআল্লাহ।
৩। আমাদের এই সিরিজটি তাদের শুধু অতীত-ইতিহাস পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং হাদীসের আলোকে এ জাতির শেষটা কোথায়? সবিস্তারে ওঠে আসবে সে বর্ণনাও, ইনশাআল্লাহ্। ইহুদিদের সাথে সংশ্লিষ্ট কিয়ামতের কিছু আলামত নিয়েও আলোচনা হবে, ইনশাআল্লাহ্।
৪। মুসলিম ঐতিহাসিকদের মৌলিক কিতাবগুলো থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে গ্রহণযোগ্যতার সর্বোচ্চ মানদণ্ডে উন্নীত করার সর্বাত্মক চেষ্টা করা হবে, ইনশাআল্লাহ্।
৫। এ জাতির বয়স কম করে হলেও চার হাজার বছর হবে। চার হাজার বছরের আদি-অন্ত সব ইতিহাস তোলে আনা প্রায় অসম্ভব না; পুরাই অসম্ভব। তাই আমরা বাছাই করে চুম্বকাংশটুকু তুলে আনব, যেটুকু না হলে ইতিহাসের ধারাবাহিকতা বিপন্ন হবে।
নোট:
(১) বাবে লুদ বর্তমান ইসরায়েলের রাজধানী তেলআবিব থেকে ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত একটি ছোট শহরের নাম। বেন গুরিয়ান বিমানবন্দরটিও এ শহরের একেবারে কাছেই অবস্থিত।
(২) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
فَيَنْزِلُ عِيسى ابنُ مَرْيَمَ ﷺ، فأمَّهُمْ، فإذا رَآهُ عَدُوُّ اللهِ، ذابَ كما يَذُوبُ المِلْحُ في الماءِ، فلوْ تَرَكَهُ لانْذابَ حتّى يَهْلِكَ، ولَكِنْ يَقْتُلُهُ اللَّهُ بيَدِهِ، فيُرِيهِمْ دَمَهُ في حَرْبَتِهِ.
অর্থ: … আর তখন ঈসা ইবনে মারয়াম অবতরণ করে তাদের সাথে জামাতে নামাজ আদায় করবেন। আল্লাহর শত্রু (দাজ্জাল) যখন তাঁকে দেখবে তখন সে এমনভাবে গলে যাবে পানিতে লবণ যেভাবে দ্রবীভূত হয়। যদি তিনি তাকে আঘাত না-ও করতেন তবুও সে গলতে গলতেই নিঃশেষ হয়ে যেত। কিন্তু আল্লাহ্ তাআলা তাকে তাঁর হাতেই হত্যা করাবেন। অতঃপর তিনি তাঁর বর্শায় লেগে থাকা দাজ্জালের রক্ত নিজ অনুসারীদের দেখাবেন। (দাজ্জালের নিহত হওয়ার বিষয়টি যেন তারা সহজেই বিশ্বাস করে নিতে পারে সে জন্যে।) (সহীহ মুসলিম, হাদীস: ২৮৯৭)
(৩) আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেন:
وَلَقَدۡ ءَاتَیۡنَا بَنِیۤ إِسۡرَا ءِیلَ ٱلۡكِتَـٰبَ وَٱلۡحُكۡمَ وَٱلنُّبُوَّةَ وَرَزَقۡنَـٰهُم مِّنَ ٱلطَّیِّبَـٰتِ وَفَضَّلۡنَـٰهُمۡ عَلَى ٱلۡعَـٰلَمِینَ
অর্থ: আর আমি তো বনী ইসরায়েলকে কিতাব, রাজত্ব ও নবুওয়ত দান করেছিলাম এবং তাদেরকে পরিচ্ছন্ন রিযিক দিয়েছিলাম এবং বিশ্ববাসীর উপর তাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছিলাম। (জাছিয়াহ, আয়াত: ১৬)
(৪) আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেন:
وَظَلَّلۡنَا عَلَیۡكُمُ ٱلۡغَمَامَ وَأَنزَلۡنَا عَلَیۡكُمُ ٱلۡمَنَّ وَٱلسَّلۡوَىٰۖ
আর আমি তোমাদের উপর ছায়া বিস্তার করেছিলাম মেঘমালার দ্বারা এবং তোমাদের জন্য খাবার পাঠিয়েছিলাম “মান্না ও সালওয়া”। (আল বাকারাহ, আয়াত: ৫৭)
(৫) আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেন:
وَإِذِ ٱسۡتَسۡقَىٰ مُوسَىٰ لِقَوۡمِهِۦ فَقُلۡنَا ٱضۡرِب بِّعَصَاكَ ٱلۡحَجَرَۖ فَٱنفَجَرَتۡ مِنۡهُ ٱثۡنَتَا عَشۡرَةَ عَیۡنࣰاۖ قَدۡ عَلِمَ كُلُّ أُنَاسࣲ مَّشۡرَبَهُمۡۖ
অর্থ: আর মুসা যখন নিজ জাতির জন্য (বনী ইসরায়েলের জন্য) পানি চাইল, আমি বললাম: তোমার লাঠি দিয়ে পাথরে আঘাত কর। অতঃপর তা থেকে বারোটি ঝর্ণা প্রবাহিত হলো। প্রত্যেক গোত্রই নিজ নিজ ঘাট চিনে নিলো। (আল বাকারাহ, আয়াত: ৬০)
(৬) আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেন:
وَإِذۡ فَرَقۡنَا بِكُمُ ٱلۡبَحۡرَ فَأَنجَیۡنَـٰكُمۡ وَأَغۡرَقۡنَاۤ ءَالَ فِرۡعَوۡنَ وَأَنتُمۡ تَنظُرُونَ
অর্থ: স্মরণ করো সেসময়ের কথা, যখন আমি তোমাদের জন্য সাগরকে দ্বিখণ্ডিত করেছিলাম। অতঃপর বাচিয়ে দিয়েছিলাম তোমাদেরকে আর ডুবিয়ে দিয়েছিলাম ফেরআউনের বাহিনীকে, তখন তোমরা তা প্রত্যক্ষ করছিলে। (আল বাকারাহ, আয়াত: ৫০ )
(৭) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
والَّذي نفسي بيدِهِ لقَتلُ مؤمنٍ أعظمُ عندَ اللَّهِ من زوالِ الدُّنيا
অর্থ: সেই সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ, একজন মুমিনকে (অন্যায়ভাবে) হত্যা করা আল্লাহ্ তাআলার কাছে সমগ্র দুনিয়া ধ্বংসের চেয়েও বেশি মারাত্মক (সুনানে নাসাঈ, হাদীস: ৩৯৮৬)
(৮) সুরা বাকারার ৬১ নং আয়াতের তাফসীরে ইবনে কাসিরের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য।
Comment