Announcement

Collapse
No announcement yet.

খিলাফত বিহীন শতবর্ষ পার: কিছু কথা ও কিছু ব্যথা

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • খিলাফত বিহীন শতবর্ষ পার: কিছু কথা ও কিছু ব্যথা

    খিলাফত বিহীন শতবর্ষ পার: কিছু কথা ও কিছু ব্যথা

    ২০২৪ সাল চলছে। পৃথিবী থেকে খিলাফত বিলুপ্তির শতবর্ষ পূরণ হয়ে গেল। এখন থেকে একশ বছর পূর্বে ১৯২৪ সালের ৩রা মার্চ সর্বশেষ উসমানি খলিফা দ্বিতীয় আবদুল মাজিদকে নির্বাসিত করে আনুষ্ঠানিকভাবে খিলাফতকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। সেই থেকে আজ সুদীর্ঘ এক শতাব্দীকাল মুসলিম উম্মাহ খিলাফতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত। মুসলিমদের মাথার ওপর থেকে খিলাফতের কল্যাণকর ছায়া সরিয়ে তাদেরকে বাধ্য করা হয়েছে বিভিন্ন শিরকি তন্ত্র ও বাতিল মতাদর্শের কোলে আশ্রয় নিতে। প্রথমদিকে মুসলিম উম্মাহ এসব মানবরচিত তন্ত্রমন্ত্র ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করলেও সময়ের আবর্তনে অনেকের স্বর আজ নিচু হয়ে এসেছে, দ্বীনের ব্যাপারে তারা আপোষ করে জীবন বাঁচাতে শিখে গেছে। ফলে কুফর-শিরকের বাঁধন আরও শক্তিশালী হচ্ছে, ইসলামি বিধি-বিধানের সম্মান ধূলোয় লুটোপুটি খাচ্ছে এবং বিশ্বজুড়ে মুসলিম উম্মাহর লাঞ্ছনা-গঞ্জনা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
    যুগটা আধুনিক। সময়টা বড়ই সঙীন। আধুনিকতার যাতাকলে নিষ্পেষিত উম্মাহ শিকড় ভুলে আজ শাখা-প্রশাখা নিয়ে ব্যতিব্যস্ত। ইমানের নুর ছেড়ে দুনিয়ার আলোকসজ্জা নিয়েই তারা আনন্দিত। সত্যকে মাটিচাপা দিয়ে মিথ্যার প্রাসাদে বসবাস করেই তারা অধিক উচ্ছ্বসিত। এ যেন নিজেদের অস্তিত্ব ভুলার মিশনে অসীম প্রতিযোগিতার সূচনা। কে কত আগে নিজেদের মুসলিম পরিচয় মুছে পশ্চিমা সভ্যতাকে আপন করে নিতে পারে, সেটা নিয়েই চলছে পারস্পরিক গর্ববোধ। ইসলামকে তো রাষ্টীয় পর্যায় থেকে অনেক আগেই বিদায় করা হয়েছে। ইসলামের টুটাফাটা যা বাকি ছিল, তা কেবল সামাজিক ও পারিবারিক জীবনেই দেখা যেত। কিন্তু ফিতনার স্রোত এবার সরাসরি মুসলিমদের সমাজ ও পরিবারব্যবস্থায় আঘাত হানতে যাচ্ছে। খুব দ্রুতই প্রতিটি সেক্টরে ইসলাম পালনকে কঠিন করা তোলা হচ্ছে; এমনকি পূর্ণাঙ্গ মুসলিম পরিচয়ে বেঁচে থাকাই দায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
    মানবেতিহাসের সূচনা থেকেই চলে আসছে হক-বাতিলের লড়াই। সত্য-মিথ্যার এ সংঘর্ষ অনিবার্য। আলো-অন্ধকারের এ দ্বন্দ্ব চিরন্তন। তাই এ লড়াই ততদিন পর্যন্ত থামবে না; যতদিন না হক পরিপূর্ণভাবে বাতিলের ওপর বিজয় অর্জন করে এবং পুরো বিশ্বে ইনসাফ ও মানবতা প্রতিষ্ঠা লাভ করে। হক-বাতিলের এ লড়াই অনেক আগেই শুরু হয়ে গেছে। এ লড়াই কেবল অস্ত্রেরই নয়; বরং শিক্ষা, তাহযিব-তামাদ্দুন ও নীতি-নৈতিকতার লড়াইটাই এখন মূখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইতিহাস সাক্ষী যে, সম্মুখ সমরের লড়াইয়ে সর্বদা হক বিজয়ী হয়েছে। এজন্যই বর্তমানে সময়ে বৈশ্বিক কুফফার সম্প্রদায় সম্মুখ সমরে লড়ার চেয়ে অন্যান্য অঙ্গনে লড়াই করার দিকেই অধিক মনোযোগ দিয়েছে। তারা মুসলিমদের জন্য সীমিত কিছু ইবাদতের সুযোগ রেখে অন্যান্য সকল বিধি-বিধানের ওপর ক্রমশ কঠোরতা আরোপ করছে এবং প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তা পালনে বাধা সৃষ্টি করছে।
    এ লড়াইয়ে আমরা খুব দ্রুতই হেরে যাচ্ছি। আমাদের বর্তমান প্রজন্মের অবস্থা অত্যন্ত করুণ। এদের ভবিষ্যৎ পুরোটাই অন্ধকারাচ্ছন্ন। না আছে লেখাপড়া, না আছে নীতি-নৈতিকতা, না আছে দ্বীনি শিক্ষা, আর না আছে বিশেষ কর্মদক্ষতা। এদের অধিকাংশই মেতে আছে প্রেম-ভালোবাসা, ফেসবুক-ইউটিউব, গেমস-মুভি, গান-মিউজিক, অনর্থক আড্ডা-আসর ও অর্থহীন দলাদলি নিয়ে। এগুলোর পাশাপাশি বর্তমানে ব্যাপকভাবে শুরু হয়েছে সমকামিতা, হিজড়া সাজার প্রবণতা, বিকৃত যৌনাচার ও অশ্লীলতার প্রচারসহ নানা ফিতনা। ফিতনাগুলো এমন দ্রুততার সাথে আসছে, যেভাবে তাসবিহের সুতো ছিড়ার পর তার দানাগুলো একের পর এক পড়তে থাকে। সামনের দিনগুলোতে নিজেদের ইমান টিকিয়ে রাখাটা অনেক কঠিন হতে যাচ্ছে। তাই ইমান-আমলে শক্তভাবে শান দিতে হবে। দ্বীনকে পুরোপুরি জানতে হবে। এক্ষেত্রে উদাসীন থাকার কোনো সুযোগ নেই। নয়তো দ্বীন ও দুনিয়া সবই ধ্বংস হবে।

    গত ৩রা মার্চ। আনুষ্ঠানিকভাবে খিলাফত বিলুপ্ত ঘোষণার শতবর্ষ পূর্ণ হয়েছে। ১৯২৪ সালের এই দিনে পুরো পৃথিবী থেকে খিলাফত বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। এরপর উম্মাহর ওপর দিয়ে একশ বছর অতিবাহিত হয়ে গেল। এ দীর্ঘ সময়ে উম্মাহর চিন্তাশীলরা নানাভাবে খিলাফত ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছেন এবং এখনো করে যাচ্ছেন, কিন্তু আফসোস যে, তাদের বেশির ভাগের প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। একশ বছর পার হয়ে গেল, এত এত রক্ত ও কুরবানি গেল, কিন্তু কাঙিক্ষত ফলাফল ও চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জন থেকে উম্মাহ বঞ্চিতই থেকে গেল।
    অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, উম্মাহ আজ হতাশা, ক্লান্তির ভারে ব্যর্থতা মেনে নিয়ে জাহিলি জীবনব্যবস্থায় চলতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। তাদের না আছে খিলাফতের চিন্তা, আর না আছে কুরবানি-ত্যাগের মানসিকতা। এখন কোনোমতে গোলামি করে রুটি-রোজগারের ব্যবস্থা করতে পারলেই খুশী। কেমন যেন গা-ছাড়া এক ভাব সবার মধ্যে! একে একে হাল ছেড়ে দিচ্ছে সবাই। নিজেদের পরিকল্পিত পথ ও পন্থা ছেড়ে ধীরে ধীরে সবাই জুলুমি ব্যবস্থার অংশ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। পুরো উম্মাহকে বিক্ষুব্ধ দরিয়ায় ছেড়ে সবাই একাই কিনারে ওঠার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে।
    গত শতাব্দীতে উম্মাহর সবচেয়ে মারাত্মক ভুল ছিল, খিলাফত প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়ায় নিজেদের শত্রুদের নীতি-পলিসি অনুসরণ এবং কুফরি সিস্টেমে ভর করে ইসলাম প্রতিষ্ঠার দিবাস্বপ্ন দর্শন। এ ভুল পদ্ধতি অনুসরণের কারণেই উম্মাহর মাঝে নানা কুফরি মতাদর্শ প্রবেশ করেছে। ফলে দ্বীনের নামে অনর্থক রক্ত ঝরেছে, ভাইয়ে ভাইয়ে বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে এবং উম্মাহ আজ শতধা বিভক্ত হয়েছে। নিজেদের প্রথম ও প্রধান কর্তব্য ভুলে উম্মাহ গৌণ বিষয়েই অধিক মনোযোগ দিচ্ছে এবং প্রত্যেকে নিজের পাণ্ডিত্য জাহির করে অন্যকে হেয়জ্ঞান করছে। এই হলো উম্মাহর হাল।
    এই যে কঠিন ও ভয়ংকর এক মুহূর্ত পার করছে সমগ্র উম্মাহ, সম্ভবত সে অনুভূতিটুকুও হারিয়ে গেছে বর্তমান প্রজন্মের মন-মানসিকতা থেকে। পরাধীনতার শেকলে দীর্ঘকাল আবদ্ধ থাকায় স্বাধীনতা এখন তিতা লাগতে শুরু করেছে। বিদ্যমান জাহিলি সিস্টেমে বেঁচে থাকতেই তারা অধিক স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে। মোটকথা, দ্বীনের স্পিরিট, বিপ্লবের চেতনা, ত্যাগের মানসিকতা হারিয়ে সবাই এখন পঙ্গুপ্রায়। তাই সময় এসেছে এখন ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়ার। সময় এসেছে এখন হিসাব করার যে, গত শতাব্দীতে কী করণীয় ছিল, আর আমরা কী করেছি। আল্লাহ আমাদের সঠিক উপলব্ধি দান করুন। আমীন

    ✍️
    সংগ্রহীত ও ঈষৎ পরিবর্তিত
    আল্লাহ মূল লেখককে জাযায়ে খাইর দান করুন। আমীন

    ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

  • #2
    আল্লাহ মূল লেখককে জাযায়ে খাইর দান করুন। আল্লাহ সংগ্রাহক ভাইকেও জাযায়ে খাইর দান করুন। আমীন

    Comment


    • #3
      ইয়া রব্ব ! আমাদের আবার খিলাফাহ আর রাশিদাহ'র সেই স্বর্ণালী যুগ নিয়ামত হিসেবে দান করুন

      Comment


      • #4
        Originally posted by Omor Faruk View Post
        আল্লাহ মূল লেখককে জাযায়ে খাইর দান করুন। আল্লাহ সংগ্রাহক ভাইকেও জাযায়ে খাইর দান করুন। আমীন
        Originally posted by Mohammad Ali Hossain View Post
        ইয়া রব্ব ! আমাদের আবার খিলাফাহ আর রাশিদাহ'র সেই স্বর্ণালী যুগ নিয়ামত হিসেবে দান করুন
        আমীন ইয়া রব্বাল আলামিন

        Comment


        • #5
          খিলাফাহর গুরত্ব, প্রয়োজনীয়তা ও প্রতিষ্ঠার পদ্ধতি নিয়ে আজও কেউ কেউ সংশয় ছড়ানোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, আল্লাহ্‌ তাআলা তাদের চক্রান্ত থেকে আমাদের তরুণ প্রজন্মকে হিফাজত করুন, আমীন।

          Comment


          • #6
            আমিন।
            প্রিয় ভাই আমার আপনাদের লিখাগুলু হৃদয় কে পুনরজ্জিবিত করে।
            আল্লাহ আপনাদের উত্তম বদলা দিন, আমিন।

            Comment

            Working...
            X