বিশ্ব ইতিহাসে বিস্ময়কর ও ঐতিহাসিক একটি দেশ আফগানিস্তান। ছোট বড় অসংখ্য ঘটনা রচিত হয়েছে দেশটির ইতিহাস। এ ইতিহাস আফগান জাতির জন্য সঠিক পথের আলোকবর্তিকা বা দিশাস্বরূপ। দেশটির ইতিহাসে রয়েছে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দিন ও মুহূর্ত। তন্মধ্যে কিছু দিন রয়েছে যা বিশেষভাবে স্মরণীয় এবং আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ। দিনগুলোর চেতনা দেশটির জনগণ যুগ যুগান্তর বহন করে যাবে। এই দিবসগুলোকে কেন্দ্র করে সংঘটিত ঘটনা আফগানবাসীর গৌরবের অনুভূতিকে বারবার জাগ্রত করে তুলে।
২০২০ সালের ২৯শে ফেব্রুয়ারি (সৌর হিজরি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ১০ই হুত, ১৩৯৮) আফগানিস্তানের ইতিহাসে একটি ঐতিহাসিক দিন। এই দিনে নির্যাতিত আফগান জাতির মাথার ওপর থেকে শত্রু বাহিনীর জবরদখলের কালো মেঘ দূরীভূত হয়েছিল। সেই দিন যুগের নিকৃষ্ট শিকারির কবল থেকে আফগান জাতি মুক্তি পেয়েছিল এবং আফগানিস্তানের আকাশে বাতাসে সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য বিচ্ছুরিত হয়েছিল।
পরাশক্তি দাবিদার আমেরিকা ও তার মিত্র দেশগুলো সেই দিনে ইমারতে ইসলামিয়ার মুজাহিদীন বাহিনীর কাছে মাথা নত হয়েছিল। তারা আফগান জাতির নিকট আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছিল, অথচ এর আগে এই মুজাহিদ বাহিনীকে অত্যন্ত নগণ্য মনে করত তারা। তাই সমগ্র পৃথিবী আজ দিবসটিকে স্বতন্ত্রভাবেই স্মরণ করছে।
তবে কিছু দেশ এখনও দিবসটিকে খুব বেশি গুরুত্ব দিতে চায় না, বিশেষ করে ঐসব দেশ যারা উন্নত অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে দেশটিতে আগ্রাসন চালিয়েছিল। তাদের সাথে ছিল সুসজ্জিত বিমান ও স্থল বাহিনী। তারা গর্ব ও অহংকার নিয়ে সেখানে পদার্পণ করেছিল, কিন্তু এটি ছিল তাদের জন্য অত্যন্ত কঠিন এবং চ্যালেঞ্জিং একটি অভিজ্ঞতা। তাদের ধারণা ছিল যুদ্ধের ময়দান কেবল তাদেরই নিয়ন্ত্রণাধীন। তাদের কথাবার্তায় ও আচরণে এমন অহংকার প্রকাশ পেত, আপাত দৃষ্টিতে মনে হতো যেন তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সাহস বুঝি কারোরই নেই।
কিন্তু দখলদারদের এই বোধশক্তি ছিল না যে আফগান জাতির পূর্বপুরুষগণ আপাতদৃষ্টিতে নিরস্ত্র এবং অত্যাধুনিক অস্ত্র ও গোলাবারুদের অভাব থাকা সত্ত্বেও ইতিপূর্বে ব্রিটেন এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো বড় বড় সাম্রাজ্যগুলিকে পদানত করেছিল। মার্কিন জোটের বিরুদ্ধেও তারা জেগে উঠেছিল এবং তাদের দৃঢ় বিশ্বাস, সাহস, উদ্যোগ ও অটল প্রত্যয় নিয়ে জিহাদের ময়দান ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।
২৯শে ফেব্রুয়ারি আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির মাধ্যমে আমেরিকা আফগান ভূমি থেকে এটির বিশ বছরের দখলদারিত্বের ইতিহাসের সমাপ্তি টানতে বাধ্য হয়েছিল। আর এভাবে তারা নিজেরাই নিজেদের পরাজয়ের খবর সারা বিশ্বের কাছে জানান দিয়েছিল।
নিপীড়িত আফগান জাতি ইতিহাসে একাধিক বার বহু দখলদার বাহিনী কর্তৃক জুলুম অত্যাচারের অভিজ্ঞতা লাভ করেছে। মহান এই দিনে আফগানিস্তান দখলদার বাহিনীকে বিতাড়নের মাধ্যমে তাদের স্বাধীনতা ফিরে পেয়েছিল। আমেরিকা ও তাদের সামরিক জোট বাহিনী একসময় মনে করত যুদ্ধের ময়দানে কেবল তাদেরই একচ্ছত্র ক্ষমতাই চলবে। তাই আফগান জনগণের উপর তারা নানা ধরনের জুলুম নিপীড়ন চাপিয়ে দিয়েছিল। তবে আমেরিকা শেষপর্যন্ত এমন একটি চুক্তিতে সম্মত হতে বাধ্য হবে তা তারা কখনও তা কল্পনাও করেনি। অবশেষে অপমানের সাথে তারা আফগান ভূমি থেকে বিদায় নিতে হয়েছে।
চুক্তিটি স্বাক্ষরের সাথে সাথে আফগানিস্তানে সেই সকল গাদ্দার শাসকের পতন ঘটে যারা স্বেচ্ছায় দেশকে আমেরিকার হাতে তুলে দিয়েছিল। তাই চুক্তি স্বাক্ষরের ঘটনায় তারা মনঃক্ষুণ্ণ ও হতাশ হয়ে পড়েছিল। কেননা আফগান জাতি ও জনগণের স্বার্থে কাজ করার পরিবর্তে নিজস্ব অবস্থান ও আসন মজবুত করাই ছিল তাদের একমাত্র আকাঙ্ক্ষা।
ইসলামী শরিয়াহর ছায়াতলে বসবাসের পরিবর্তে দখলদার কাফের শাসকদের অধীনে জীবন যাপন করাতেই তারা আত্মতৃপ্ত ছিল। প্রকৃতপক্ষে, একমাত্র ইসলামী শরিয়াহর মাঝেই নিহিত রয়েছে শান্তি ও পরিপূর্ণ আস্থার প্রতিশ্রুতি, এটা তারা কখনো অনুধাবন করতে চেষ্টা করেনি!
তথ্যসূত্র:
1. 10th of Hooth: A Commencement of Triumph and Conquest
– https://tinyurl.com/mpvzvfas
Comment