Announcement

Collapse
No announcement yet.

সীরাত থেকে শিক্ষা- ০৩ হকের বিজয় আসা অবধি অনেকে হক বুঝতে পারে না ০২

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • সীরাত থেকে শিক্ষা- ০৩ হকের বিজয় আসা অবধি অনেকে হক বুঝতে পারে না ০২

    সীরাত থেকে শিক্ষা- ০৩ হকের বিজয় আসা অবধি অনেকে হক বুঝতে পারে না ০২

    রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কার মানুষ নবী হওয়ার পূর্বে মক্কায় তিনি চল্লিশ বৎসর অবস্থান করেছেন তিনি সর্বোত্তম চরিত্রের মানুষ সর্বশ্রেষ্ঠ সবচেয়ে সম্মানী বংশের মানুষ তিনি কখনও মিথ্যা বলেননি মক্কাবাসী নিজেরাই তাঁর আমানদারি বিশ্বস্ততা দেখে তাঁকে আল-আমীনতথা বিশ্বস্ত উপাধি দেয়
    এই মানুষটিই যখন নিজেকে নবী বললেন, লোকজন তাঁর কথা বিশ্বাস করলো না একে একে তিনি তেরোটি বছর দাওয়াত দিলেন নিজের সর্বোচ্চ সুন্দর আখলাক প্রদর্শন করলেন কিন্তু অল্প কিছু মানুষই তাঁকে স্বীকৃতি দিলো আর বাকিরা শুধু বিশ্বাস করেনি এতটুকুই নয়, তাঁর তাঁর অনুসারীদের জানের দুশমনে পরিণত হল বিভিন্নভাবে নির্যাতন করলো শেষে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করলো আল্লাহ তাআলা নিজ কুদরতে তাঁকে রক্ষা করলেন এবং মদীনায় আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে দিলেন


    কেন এমনটি হলো? এখানে কি রাসূলের কোনো কমতি ছিল? নিশ্চয়ই না তারপরও লোকজন মানলো না কেনো? কারণ, তিনি যে হক নিয়ে এসেছেন, তা ছিল তখন পরাজিত

    পক্ষান্তরে তিনি এবং তাঁর অনুসারীরা যখন মদীনায় হিজরত করলেন হাতে তরবারি নেয়ার অনুমতি পেলেন হক বাতিলের বোঝাপড়া তরবারি দিয়ে শুরু হয়ে গেল বাতিল একের পর এক মার খেতে লাগলো হকের সামরিক বিজয় আসতে শুরু করলো তখন লোকজনের মাথা খুলতে লাগলো হকের দাওয়াত নিয়ে নতুন করে ফিকির করার চিন্তা উদয় হলো যেখানে মক্কার পরাজিত সময়টাতে তেরো বছরে মাত্র হাতে গোনা কিছু মানুষ ঈমান কবুল করেছিল, সেখানে মদীনার বিজয়ের সময়টাতে মাত্র /১০ বছরে হাজারো হাজার মানুষ ঈমান কবুল করে নিলো এই হচ্ছে বিজয়ের সুফল আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা সূরা নাসরে এই রহস্যটির দিকে ইঙ্গিত করেছেন

    তো হক যখন পরাজিত, তখন হক নিয়ে মানুষ ফিকির কমই করে হক পরাজিত থাকা তাদের সামনে একটি বাধার প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে হক পরাজিত থাকা একটি ভয়ানক ফিতনা, যা মানুষকে হক থেকে দূরে সরিয়ে দেয় এটি একটি চিরন্তন সত্য কথা পূর্ববর্তী ঈমানদারগণ আল্লাহ তাআলার কাছে থেকে আশ্রয় চাইতেন

    আমাদের পিতা ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এবং তাঁর অনুসারীরা আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করেন,
    {رَبَّنَا لَا تَجْعَلْنَا فِتْنَةً لِلَّذِينَ كَفَرُوا (5) } [الممتحنة: 5]
    হে আমাদের রব, আপনি আমাদেরকে কাফেরদের ফিতনার কারণ বানাবেন না” –মুমতাহিনা:

    একইভাবে মূসা আলাইহিস সালামের উপর ঈমান আনয়নকারী মুমিনরা এই দোয়া করেছিলেন,
    {رَبَّنَا لَا تَجْعَلْنَا فِتْنَةً لِلْقَوْمِ الظَّالِمِينَ (85)} [يونس: 85]
    হে আমাদের রব, আপনি আমাদেরকে জালেম কওমের ফিতনার কারণ বানাবেন না” –ইউনুস: ৮৫

    মুফাসসিরিনে কেরাম বলেন, মুমিনরা কাফেরদের হাতে নির্যাতিত থাকা কাফেরদের দ্বীন থেকে সরে যাওয়ার কারণ তারা মনে করে, এসব লোক যদি হকের উপর থাকতো, আমরা তাদের উপর বিজয়ী হতে পারতাম না, তারা আমাদের হাতে নির্যাতিত হতো না যুগে যুগেমুমিনরা এই দোয়া করেছে: হে আল্লাহ, আমাদের উপর কাফেরদের চাপিয়ে দিয়ে আমাদেরকে তাদের ফিতনার কারণ বানাবেন না বরং আপনি আমাদের নুসরত করুন আমাদের বিজয় দান করুন তাদের উপর আযাব গজব নাযিল করুন তাদের পরাজিত করুন যার ফলে তারা বুঝতে পারবে তারা মিথ্যার উপর আছে, আমরা আছি সত্যের উপর[1]
    {رَبَّنَا أَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا وَثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ (250)} [البقرة: 250]
    {رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَإِسْرَافَنَا فِي أَمْرِنَا وَثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ (147)} [آل عمران: 147]
    {وَاعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا أَنْتَ مَوْلَانَا فَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ (286) } [البقرة: 286]
    ***

    শিক্ষা: প্রিয় ভাই, আপনি আশাকরি বুঝতে পারছেন আল্লাহ তাআলার নাযিলকৃত হকের জীবন ব্যবস্থা দুনিয়াতে প্রতিষ্ঠার পদ্ধতি কি হবে? আপনি কি শুধু দাওয়াতের মাধ্যমে হক বিজয়ী করতে চান তরবারি ছাড়া? তাহলে আপনি নিশ্চিত ভুলের উপর আছেন।

    তাহলে আপনি বুঝতে পারেননি: কেন রাসূল ও সাহাবাদের উপর নির্যাতন এসেছিল।

    বুঝতে পারেননি কেন তারা আপনভূমি ত্যাগ করে ভিনদেশে হিজরত করতে বাধ্য হলেন।

    বুঝতে পারেননি কেন তারা আপন কাওমের বিরুদ্ধে, আপন বাপ-দাদাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে তুলে নিলেন।

    আপনার আখলাক অবশ্যই রাসূল ও সাহাবাদের চেয়ে সুন্দর নয়। আপনার দরদ অবশ্যই তাদের থেকে বেশি নয়। আপনার দাওয়াত অবশ্যই তাদের চেয়ে বেশি প্রভাব সৃষ্টিকারী নয়। তারাও যতদিন অস্ত্রের রাস্তা অবলম্বন করেননি- লোকজন হক বুঝেনি, কবুল করেনি।

    আজ আপনি কাফেরদের অধীন, তাদের দয়ার পাত্র, করুণার পাত্র। তারা আপনাকে নিয়ে হাসে। আপনার দ্বীনকে পশ্চাদপদতা মনে করে। আপনার দাওয়াত তারা গ্রহণ করবে না। বরং তারা আপনাকে শোষণ করবে। সাথে একটু করুণা করে সুনাম কুড়াতে চেষ্টা করবে। আপনি যতদিন অস্ত্র হাতে না নিবেন, বুলেটের মুকাবেলা বুলেট দিয়ে না করবেন, হত্যার বদলে হত্যা আর ধ্বংসের বদলে ধ্বংস না করবেন- ততদিন আপনাকে এবং আপনার দ্বীনকে নিয়ে ভাবার চিন্তা তাদের মাথায় উদয় হবে না। আপনি তাদের মাথায় আঘাত করুন- মাথা খুলতে শুরু করবে বিইযনিল্লাহ।

    শিক্ষা: প্রিয় ভাই, আপনি আশাকরি বুঝতে পারছেন: আল্লাহর দ্বীন বাস্তবায়নের পথে আপনি নিজেই একটা বাধা হয়ে আছেন। আপনি ভাবছেন আপনি দ্বীনের জন্য কত কী করছেন!! কিন্তু আসলে আপনি কাফেরদের ফিতনার কারণ হয়ে বসে আছেন, যা থেকে পিতা ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তার অনুসারীদের সহ আশ্রয় চেয়েছেন। যা থেকে আশ্রয় চেয়েছেন মূসা আলাইহিস সালামের সত্য অনুসারী মুমিনরা।

    আপনি আপনার পরাজিত হাল থেকে ফিরে আসুন। পরাজিত মানসিকতা থেকে তাওবা করুন। আপনার আখলাককে নববী আখলাকে সুসজ্জিত করুন। রাসূল ও সাহাবাদের মতো রক্তাক্ত পথের পথিক হোন। অস্ত্রের মাধ্যমে মাধ্যমে আল্লাহর দ্বীনের সাহায্যকারী হোন। আপনার এক হাতে হোক কুরআন আরেক হাতে হোক তরবারি।
    {لَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلَنَا بِالْبَيِّنَاتِ وَأَنْزَلْنَا مَعَهُمُ الْكِتَابَ وَالْمِيزَانَ لِيَقُومَ النَّاسُ بِالْقِسْطِ وَأَنْزَلْنَا الْحَدِيدَ فِيهِ بَأْسٌ شَدِيدٌ وَمَنَافِعُ لِلنَّاسِ وَلِيَعْلَمَ اللَّهُ مَنْ يَنْصُرُهُ وَرُسُلَهُ بِالْغَيْبِ إِنَّ اللَّهَ قَوِيٌّ عَزِيزٌ (25)} [الحديد: 25]
    ***


    [1] تفسير ابن كثير ت سلامة (4/ 288): فَقَالُوا: {عَلَى اللَّهِ تَوَكَّلْنَا رَبَّنَا لَا تَجْعَلْنَا فِتْنَةً لِلْقَوْمِ الظَّالِمِينَ} أَيْ: لَا تُظْفِرْهُمْ بِنَا، وَتُسَلِّطْهُمْ (7) عَلَيْنَا، فَيَظُنُّوا أَنَّهُمْ إِنَّمَا سُلِّطُوا لِأَنَّهُمْ على الحق ونحن على الباطل، فَيُفْتَنُوا (1) بِذَلِكَ. هَكَذَا رُوِيَ عَنْ أَبِي مِجْلَز، وأبي الضُّحى. وقال ابن أبي نَجِيح وغيره وَاحِدٍ، عَنْ مُجَاهِدٍ: لَا تُعَذِّبْنَا بِأَيْدِي قَوْمِ فِرْعَوْنَ، وَلَا بِعَذَابٍ مِنْ عِنْدِكَ، فَيَقُولُ قَوْمُ فِرْعَوْنَ: لَوْ كَانُوا عَلَى حَقٍّ مَا عُذِّبُوا، وَلَا سُلِّطنا عَلَيْهِمْ، فَيُفْتَنُوا (2) بِنَا. اهـ
    تفسير ابن كثير ت سلامة (8/ 88): {رَبَّنَا لَا تَجْعَلْنَا فِتْنَةً لِلَّذِينَ كَفَرُوا} قَالَ مُجَاهِدٌ: مَعْنَاهُ: لَا تُعَذِّبْنَا بِأَيْدِيهِمْ، وَلَا بِعَذَابٍ مِنْ عِنْدِكَ، فَيَقُولُوا: لَوْ كَانَ هَؤُلَاءِ عَلَى حَقٍّ مَا أَصَابَهُمْ هَذَا. وَكَذَا قَالَ الضَّحَّاكُ. وَقَالَ قَتَادَةُ لَا تُظْهِرهم عَلَيْنَا فَيَفْتَتِنُوا بِذَلِكَ، يَرَوْنَ أَنَّهُمْ إِنَّمَا ظَهَرُوا عَلَيْنَا لِحَقٍّ هُمْ عَلَيْهِ. وَاخْتَارَهُ ابْنُ جَرِيرٍ. اهـ
    تفسير الماتريدي = تأويلات أهل السنة (9/ 612): وقوله - عَزَّ وَجَلَّ -: (رَبَّنَا لَا تَجْعَلْنَا فِتْنَةً لِلَّذِينَ كَفَرُوا وَاغْفِرْ لَنَا رَبَّنَا إِنَّكَ أَنْتَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ (5). ذكر أهل التفسير أن تأويل هذه الآية يخرج على ثلاثة أوجه:
    أحدها: أي: لا تسلط علينا أعداءنا؛ فيظنوا أنهم على حق ونحن على باطل.
    أو لا تنزل علينا العذاب دونهم؛ فيظنوا أنهم على حق ونحن على باطل.
    أو لا توسع عليهم الدنيا وتضيق علينا؛ فيظنوا أنهم على حق ونحن على باطل.
    ولو كان التأويل هو الثاني لكان يجيء على هذا أن يكون الواجب على العدول من هذه الأمة أن يسألوا اللَّه - تعالى - العافية؛ لئلا يتوهم فساقهم أنهم على الحق.
    ولكن الجواب عن هذا أن الفساق من هذه الأمة قد علموا أن الذي هم فيه من الفسق محظور، وأما الكفرة فإن عندهم أن ما يدينون به من الكفر حق؛ فإذا سلطوا على المؤمنين توهموا أن الذي حسبوه حقًّا: حق، وأما الفسقة من هذه الأمة إذ علموا أن الفسق منهي عنه محظور، لا يقع لهم هذا الحسبان، واللَّه أعلم. اهـ





  • #2
    প্রিয় ইলম ও জিহাদ ভাই, আয়াতের সাথে তরজমা যুক্ত করে দিলে আমাদের মত সাধারণ মানুষদের বুঝতে সুবিধা হয়। জাযাকাল্লাহু খাইরান
    ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

    Comment


    • #3
      আগের পর্বগুলোর লিংকঃ-

      সীরাত থেকে শিক্ষা -ভূমিকা
      https://dawahilallah.com/forum/মূল-ফোরাম/ইসলামের-ইতিহাস/197485

      সীরাত থেকে শিক্ষা- ০১ অনেকে হক বুঝেও কবুল করে না, বরং বিরোধিতা করে
      https://dawahilallah.com/forum/মূল-ফোরাম/ইসলামের-ইতিহাস/197586

      সীরাত থেকে শিক্ষা- ০২ হকের বিজয় আসা অবধি অনেকে হক বুঝতে পারে না
      https://dawahilallah.com/forum/মূল-ফোরাম/ইসলামের-ইতিহাস/197818

      Comment


      • #4
        জাযাকাল্লাহ খাইরান ইলম ও জিহাদ ভাই
        আল্লাহ্‌ তাআলা আমাদের রসুলুল্লাহ সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সিরাত বুঝার এবং সে অনুযায়ী নিজ নিজ জীবন গড়ার তাওফিক দিন, আমীন

        Comment

        Working...
        X