Announcement

Collapse
No announcement yet.

শাইখ আবুল হাসান আলী নদভী রহ. এর দৃষ্টিতে শরীয়তের হুকুম প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • শাইখ আবুল হাসান আলী নদভী রহ. এর দৃষ্টিতে শরীয়তের হুকুম প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা

    শাইখ আবুল হাসান আলী নদভী রহ. এর দৃষ্টিতে শরয়ী হুকুমত প্রতিষ্ঠা

    মুফাক্কিরে ইসলাম সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ.-এর লেখনী ও বক্তৃতায় প্রায়ই সাইয়েদ আহমদ শহীদ রহ.-এর দাওয়াত ও জি-হা-দের আলোচনা স্থান পেত। উর্দু ও আরবি উভয় ভাষাতেই তিনি এ বিষয়ে ব্যাপক লিখেছেন। উর্দুতে তিনি দুই খণ্ডে সিরাতে সাইয়েদ আহমদ শহীদ রহ. লিখেছেন, যা প্রায় আট-নয় শ’ পৃষ্ঠার বিস্তৃত ঐতিহাসিক দলিল। আরবিতে লিখেছেন ইযা হাব্বাত রিহুল ঈমান, যা আজও পাঠকদের ঈমানি স্পন্দন জাগিয়ে তোলে।

    আলী নদভী রহ. কেন সাইয়েদ আহমদ শহীদ রহ.-এর জীবন ও সংগ্রামকে এভাবে প্রমোট করলেন? তাঁর গ্রন্থাবলি পাঠ করলে মনে হয়, এর পেছনে ছিল এক সুদূরপ্রসারী দৃষ্টিভঙ্গি। তিনি উপমহাদেশ ও আরববিশ্বের ইসলামি রাজনৈতিক দলগুলোর গতিপ্রকৃতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। জামায়াতে ইসলামী ও ইখওয়ানুল মুসলিমিনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড তাঁর চোখের সামনেই বিকশিত হয়েছিল। তিনি দেখেছিলেন, তাদের উত্থানের সূচনালগ্নে যে ঈমানি স্রোত প্রবাহিত ছিল, তা সময়ের সাথে সাথে প্রচলিত রাজনীতির মোহে ভিন্ন পথে মোড় নিয়েছে।

    আলী নদভী রহ. যেন এমন এক আদর্শ ব্যক্তিত্বের সন্ধান করছিলেন, যিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সিরাতের আলোকে শরয়ী হুকুমত কায়েম করেছেন। তাঁর অনুসন্ধানের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠেন সাইয়েদ আহমদ শহীদ রহ., যাঁর দাওয়াত ও জি-হা-দের মাধ্যমে নিকট অতীতে শরয়ী হুকুমতের বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছিল। সম্ভবত এ কারণেই আলী নদভী রহ. বারবার সাইয়েদ আহমদ শহীদ রহ.-এর সংগ্রাম ও দাওয়াতকে তুলে ধরেছেন, যেন তা আজকের পৃথিবীতে ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থার আদর্শ হয়ে ওঠে।

    আলী নদভী রহ.-এর এই প্রচেষ্টা তাঁর গভীর আধ্যাত্মিক প্রজ্ঞার প্রকাশ। তিনি হয়তো অনুভব করেছিলেন, ইতিহাসের এই মহামানবের জীবনচরিত মুসলিম উম্মাহকে তার হারানো গৌরব পুনরুদ্ধারে পথ দেখাতে পারে। সাইয়েদ আহমদ শহীদ রহ.-এর দাওয়াত, জিহাদ এবং শরয়ী হুকুমত প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম তাই আলী নদভী রহ.-এর লেখনী ও বক্তৃতাতে পরিণত হয় এক অনন্ত আলোকধারায়, যা যুগে যুগে উম্মাহর জন্য প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।

    সিরাতে সাইয়েদ আহমদ শহীদ রহ. প্রকাশের পর আলী নদভী রহ. এই মহৎ কাজের একটি কপি পাঠান হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভী রহ.-এর কাছে। চিঠি ও কিতাব পেয়ে থানভী রহ. যে জবাবী পত্র লিখেছিলেন, তা আলী নদভী রহ.-এর পুরানে চেরাগ থেকে তুলে ধরা হল:

    “এ উপহার থেকে, বিশেষ করে 'সিরাতে সাইয়েদ আহমদ শহীদ' থেকে মনের মধ্যে দু’টি প্রতিক্রিয়া হয়েছে—এক. আনন্দের, দুই. লজ্জার। লজ্জা এজন্য যে, গ্রন্থ দেখে নিজেকে অযোগ্য মনে হয়েছে। আমার মধ্যে না সাহস আছে, না অভিমান (ঈর্ষা)। পশু-প্রাণীর মতো জীবন-যাপন করছি। স্বপ্ন দেখা ও কল্পনা করা ব্যতীত আমাদের কোনো কাজ নেই। সুতরাং এসব যদি এমন কর্মঠদের কাছে দেওয়া যায়, যারা যথাযথভাবে কাজ করবে, তা হলে উপঢৌকন নষ্ট হবে না। এখন দু’আর আবেদন রেখে সমাপ্ত করছি। আল্লাহ তা’আলা বুযুর্গদের অনুসরণ ও অনুকরণের তাওফিক দিন!”
    থানভী রহ. যদিও ইসলাহি ধারার একজন পুরোধা, তবুও তিনি এই কাজকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য মনে করেছিলেন। থানভী রহ.-এর এই মন্তব্য ছিল এক গভীর আত্মসমালোচনা। এর মধ্যে ছিল এক অসীম দায়বদ্ধতার অনুভূতি। তিনি জানতেন যে, আলী নদভী রহ. যা করেছেন, তা শুধুই একটি গ্রন্থ রচনা নয়, এটি ছিল একটি বিপ্লবের সূচনা, যা মুসলিম উম্মাহর জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং অতি প্রয়োজনীয়। তাই যদিও তিনি নিজের আত্মবিশ্বাসের অভাব ও লজ্জার কথা বলছিলেন, তবুও তাঁর অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ওঠে এসেছিল সৎচিন্তা— এই কিতাবের বার্তা যেন কখনো হারিয়ে না যায়, এই আমানত যেন যথাযথ মানুষের কাছে পৌঁছায়।

    সিরাতে সাইয়েদ আহমদ শহীদ রহ.-এর ভূমিকায় আলী নদভী রহ. একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা লিখেছেন, যা আমাদের শরয়ী হুকুমতের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে গভীর চিন্তার আহ্বান জানায়। তিনি লিখেছেন—

    “অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কথা হল, শরয়ী হুকুমত ছাড়া শরীয়তের উপর পরিপূর্ণ আমল হতেই পারে না। ইসলামের কর্মব্যস্ততার একটি স্থায়ী অংশ এমনই, যা হুকুমতের সঙ্গে সম্পর্কিত। হুকুমত তথা রাষ্ট্রীয় শক্তি ব্যতিরেকে কুরআন মজিদের একটি গোটা অংশ আমলের বাইরে চলে যায়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় ইসলামের আর্থিক, দেওয়ানি ও ফৌজদারি আইন-বিধি অকেজো হয়ে পড়ে। এজন্যই কুরআনুল কারীম বিজয় ও প্রাধান্য লাভের উপর জোর দেয় আর এজন্যই ইসলামিক খিলাফতকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও পবিত্র বস্তু মনে করা হয়েছে এবং প্রবীণ ও বুযুর্গ সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দাফন-কাফনের উপরও একে অগ্রাধিকার দান করেছেন। অনেক অপরিণামদর্শী লোক এ বিষয়টি বোঝে না।”
    ফিকহ ও আকিদার কিতাবসমূহে 'নসবুল ইমাম' বা ইমাম নিয়োগ নিয়ে সুস্পষ্ট আলোচনা রয়েছে। এখানে ইমামের অর্থ নামাজের ইমাম নয়, বরং মুসলমানদের আমির বা খলিফা। সব ফকিহ ও আকিদা বিশেষজ্ঞ আলেম একমত যে, ইমাম নিয়োগ করা মুসলমানদের উপর ওয়াজিব। অর্থাৎ মুসলমানদের উপর ওয়াজিব হচ্ছে তারা নিজেদের উপর কাউকে ইমাম বানিয়ে নিবে। মোটকথা ‘নসবুল ইমাম’ এক পর্যায়ের ফরজে কেফায়া। এই ফরজে কেফায়ার আমল নিয়ে কি আমাদের কোনো ফিকির আছে? আমরা কি ভাবছি এদেশের মুসলমানদের ইমামকে নিয়ে? আমাদের কি কোনো শুরা আছে? আমরা কি কোনো শুরা গঠন করার চেষ্টা করেছি? প্রচলিত রাজনীতির মোহে আর কত বেহুদা সময় নষ্ট করব আমরা? মরিচীকার পিছনে আর কত দৌঁড়াব? এখনও কি সময় হয়নি ইমাম খোঁজার? আমাদের অভিভাবকপুরুষকে বের করে আনার?
    রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন—

    عَنْ مُعَاوِيَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " مَنْ مَاتَ بِغَيْرِ إِمَامٍ مَاتَ مِيتَةً جَاهِلِيَّةً".

    মুআবিয়া রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল ﷺ ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি এমন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করল, যে তার কোনো ইমাম নেই, তার মৃত্যু জাহিলিয়াতের ওপর হল।” (মুসনাদে আহমদ: ১৬৮৭৬)

    আমরা কি এই হাদিসের বার্তাকে যথাযথভাবে অনুধাবন করছি? আমরা কি বুঝতে পারছি, আমাদের এই অবহেলা কেবল দুনিয়ার জন্য নয়, আখিরাতের জন্যও কতটা ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনতে পারে?

    আমাদের নিজেদের প্রশ্ন করা উচিত— আমরা কি নিজেদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি ইসলামি শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছি নাকি আমরা এই জাহেলি শাসনব্যবস্থার সাথে আপস করেই জীবন পার করে দিচ্ছি?

    শরয়ী হুকুমত কেবল একটি তাত্ত্বিক ধারণা নয়; এটি একটি জীবন্ত বাস্তবতা, যা উম্মাহর ঐক্য, নিরাপত্তা এবং আখিরাতের মুক্তির পথ তৈরি করে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমাদের অন্তরে দীনের প্রতি সত্যিকারের ভালোবাসা সৃষ্টি করুন। আমাদের এমন একটি নেতৃত্ব দান করুন, যারা সত্য, ন্যায় ও ইনসাফের ভিত্তিতে এই জমিনে আল্লাহর বিধান কায়েম করতে সক্ষম। (কওমী উলামাগণের প্রতি আন্তরিক আহ্বান) শরয়ী হুকুমত প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আলী নদভী রহ.-এর প্রজ্ঞাপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি যদি আমরা হৃদয়ে ধারণ করি এবং তা বাস্তবায়নে একাগ্রচিত্তে প্রয়াস চালাই, তবে ভবিষ্যতের পথ হয়ে উঠবে আরও সুগম, আরও আলোকিত। তাঁর চিন্তা-চেতনার আলো আমাদেরকে ন্যায়, ইনসাফ ও ইসলামের পূর্ণাঙ্গ আদর্শ প্রতিষ্ঠার সঠিক দিশা দেখাবে, যা কেবল বর্তমানের সংকট নিরসনই নয়, বরং উম্মাহর জন্য এক উজ্জ্বল ভবিষ্যৎও গড়ে তুলবে।

    আসুন, আমরা নিজেদের সংশোধনের মাধ্যমে ঘর থেকে এই পরিবর্তনের সূচনা করি এবং আল্লাহর জমিনে আল্লাহর শরীয়ত প্রতিষ্ঠার জন্য দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হই। অন্যথায় দায়িত্বে অবহেলার জন্য আমাদের আখিরাতে কঠিন জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দিন, আমিন।
    [লেখা: সংগৃহীত]

  • #2
    আমাদের নিজেদের প্রশ্ন করা উচিত-
    আমরা কি নিজেদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি ইসলামি শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছি?
    নাকি আমরা এই জাহেলি শাসনব্যবস্থার সাথে আপস করেই জীবন পার করে দিচ্ছি?


    Comment


    • #3
      আল্লাহর জমিনে আল্লাহর শরীয়ত প্রতিষ্ঠার জন্য​ আল্লাহ আমাদেরও কবুল করুন। আমীন
      জাযাকাল্লাহ ভাই আবদুল্লাহ গাজী

      ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

      Comment

      Working...
      X