ইসলামে ধর্ম থেকে রাজনীতিকে আলাদা করে দেখার কোন সুযোগ নেই:
ইসলাম ধর্ম থেকে রাজনীতিকে আলাদা করণ সমর্থন করে না। ইসলাম আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে এসেছে মানুষের বাহ্যিক-অভ্যন্তরিন- সকল বিষয়ে সঠিক পথ প্রদর্শন করার জন্য। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর পুরো জীবনে এর বাস্তব অনুশীলন করে দেখিয়ে গেছেন। ইসলামে এ ধরনের ধ্যান-ধারণা বাহির থেকে আমদানী করা হয়েছে যে, দ্বীনের অভ্যন্তরীন ও আত্মীক বিষয়গুলো শিক্ষাদানে একদল লোক কাজ করবে আর রাজনীতি, বিচারব্যবস্থা এবং বাহ্যিক বিষয়গুলো ভিন্নদল দেখা-শুনা করবে। এ কারণেই দেখা যায়; রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর পরবর্তী খুলাফায়ে রাশেদ্বীন একদিকে মুসলমানদের রাষ্ট্র পরিচালক ছিলেন অন্যদিকে দ্বীনের রাস্তায় পথপ্রর্দশক এবং মসজিদের ইমামও ছিলেন।
ইসলামের ইতিহাসে রাজনৈতিক বিবেচনায় যখনই মানব জীবনের বিষয়গুলো মসজিদ ও মেহরাব থেকে নেতৃত্ব ও দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তখনই মুসলমান ক্ষমতার জৌলুস উজ্জল হয়েছে এবং মাথা উঁচু করে বিজয় অর্জন হয়েছে। পক্ষান্তরে যখন মুসলমানের রাজনৈতিক নেতৃত্ব সমাজপতিরা করেছে তখন মুসলমান লাঞ্ছনা ও ভ্রাতৃযুদ্ধের শিকার হয়ে ক্ষমতা ও শাসন খুয়ে বসেছে।
ধর্ম ও রাজনীতির মধ্যে ভিন্নতার দৃষ্টিভঙ্গিকে পশ্চিমাদের পরিভাষায় ‘সেক্যুলারেজম’ ও বলে। যা মূলত গীর্জাগুলোর বিকৃত ধর্মের বিরুদ্ধে ইউরোপের নাস্তিক্যবাদী আন্দোলনের ফসল। এ দৃষ্টিভঙ্গি একদিকে যেমন ইউরোপীয়দের গীর্জার স্বেচ্ছাচারীতার বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়েছে অন্যদিকে ইউরোপী ঔপনিবেশবাদীরা ইসলামী বিশ্বে তাদের মতাদর্শ ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য মুসলমানদেরকে ইসলামী শাসন থেকে বঞ্চিত করেছে।
ধর্ম থেকে রাজনীতিকে আলাদা করার কারণে মুসলিম বিশ্বে যে ক্ষতি হয়েছে:
উসমানী খেলাফতের শেষদিকে সুলতান আব্দুল হামীদ খান এবং আরো কিছু ব্যক্তি বাদে যখন শাসন ব্যবস্থা ও সমরনীতির নেতৃত্ব পশ্চিমা সেক্যুলার মতাদর্শে প্রভাবিত লোকদের হাতে চলে যায় তখন ইসলামী বিশ্বে ইউরোপী মতাদর্শ প্রচারের রাস্তা সুগম হয়। যার ফল স্বরূপ শরীয়তের ক্ষমতা এবং খেলাফত ব্যবস্থা শেষ হয়ে যায় এবং ইউরোপের দেশগুলো মুসলিম দেশগুলোকে তাদের আগ্রাসনের শিকার বানায়। অবশেষে পুরো ইসলামী বিশ্বে এমন পশ্চিমা মতাদর্শ অস্তিত্ব লাভ করে যা শরীয়তের শাসন ব্যব্স্থার পথে বাধা এবং ধর্ম থেকে রাজনীতিকে আলাদা করার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ইসলামী বিশ্বে চাপানো পশ্চিমা রাজনীতি শুধু শরীয়ত বাস্তবায়নের পথ রুদ্ধ করেই ক্ষ্যন্ত হয়নি বরং সাধারণ মুসলমানদের কমিউনিজম, লেবারেজম, আমেরিকার গণতন্ত্রের সহযোগী ইউরোপীয় মুনাফেকী মিকাইলিজমের সকল অপকর্মের পরীক্ষার ক্ষেত্র বানিয়েছে। ইসলামী দেশগুলোর বৈশিষ্ট নিঃশেষ করে দিয়ে রাজনীতি, সমরনীতি, অর্থনীতি, দর্শন, সাংস্কৃতি এবং সামাজিক দিক থেকে আমেরিকা এবং ইউরোপের গোলাম বানিয়ে দেয়া হয়েছে।
আফগানিস্তানে সেক্যুলারেজম আমদানীকারক:
ধর্ম থেকে রাজনীতিকে আলাদা করনের কূট-কৌশল থেকে আফগানিস্তানও নিস্তারও পায়নি। সর্বপ্রথম বৈদেশিক এ শাসন ও মতাদর্শ নিয়ে আসে মাহমুদ তরযী। যে নিজে সেক্যুলার কামালইজম এবং ইউরোপী চিন্তা-দর্শন দ্বারা অত্যাধিক প্রভাবিত ছিল। এরপর আমানুল্লাহ খান ক্ষমতা, জনবল, চিন্তগত দুর্বলতা ও স্বেচ্ছাচারিতার সুযোগে এ মতাদর্শের বাস্তবায়নের জন্য আদ-জল খেয়ে নামে। পশ্চিমা ধ্যান-ধারণায় নিমজ্জিত মাহমুদ তরযীকে আফগানিস্তানে সেকুলারের জনক মনে করা হয়। এ বিষবৃক্ষের শিকড় আফগানিস্তানে দিন দিন গভীরে যেতে শুরু করে। যার ফলাফল হল, আমানুল্লাহ খানের ‘সংশোধন’ শিরোনামে বিশৃঙ্খলাপর্ণ কাজ, যাহের শাহের নিকৃষ্টতম ব্যবস্থাপনা এবং দাউদ খানের গণতন্ত্রে কমিউনিস্টদের বৈপ্লবিক আক্রমন এবং বর্তমানে আমেরিকার গণতান্ত্রিক পুতুল সরকারের রূপে আত্মপ্রকাশ করে। আসলে আফগানিস্তানে আমানুল্লাহর আকৃতিতে তুরস্কের মুস্তফা কামাল আতাতুর্কের জন্ম হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে এ মতাদর্শই দেশকে রাশিয়াদের হাতে তুলে দিয়েছে। বর্তমানে চলছে তার তৃতীয় প্রজন্ম- যা এ দেশকে আমেরিকা ও তার দোসরদের হাতে তুলে দিয়েছে। আফগান জনগণ পশ্চিমা সেক্যুলারপন্থি সরকারদের অন্যায়ের কাফ্ফারা সর্বদা হাজার নয় বরং লাখো শহীদের রক্ত দিয়ে আদায় করেছেন। তারা এখনো নিজ সমাজকে ধর্মহীন শাসন ও নিষিদ্ধ প্রভাব থেকে পবিত্র করতে ব্যস্ত।
সেক্যুলারপন্থি মুসলমান:
ইসলামী বিশ্বে সেক্যুলার শাসকদের পক্ষ থেকে ধর্মহীনতা প্রচারের ফলে লক্ষ নয় বরং কোটি কোটি এমন লোক জন্ম গ্রহণ করেছেন যারা নামে শুধু মুসলমান, বাকী তাদের জীবনের মধ্যে সামান্যতম ইসলামের ছিঁটে ফোঁটাও নেই। তাদের জীবনের সকল আচরণ দ্বীনি শিক্ষার একদম বিপরীত। তারা সেক্যুলারেজম, কমিউনিজম, লিবারেজম এবং ব্যক্তি স্বাধীনতার আইনে চলাফেরা করে। এই সেক্যুলার লোকগুলো ইসলামের পরিবর্তে নিজেদের পশ্চিমা প্রভুদের সাথে মিল রেখে তাদের কাতারেই দাঁড়িয়ে থাকে। বিগত এক যুগে ইসলামী বিশ্বের অনেক দেশ যেমন ভারত উপমহাদেশ, তুরস্ক, আরব বিশ্ব এবং আফগানিস্তানের অনেক স্কলারগন সেক্যুলার শাসন ব্যবস্থা নিঃশেষ করে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন মত ও পুস্তিকা প্রকাশ করেছেন এবং ইসলামী শাসনের দাবী ও জয়-ধ্বনী দিয়েছেন। কিন্তু যখন বাস্তবে ইসলামী রাজনীতি ও শাসনের অন্তর্ভূক্ত হতে বলা হয়েছে তখন তারা সেক্যুলারের সঙ্গই দিয়েছে। বাস্তবে তাদের রাজনীতি ও শাসন তৈরি হয়েছে কেবলমাত্র সেক্যুলার-নীতির উপর। নিজেদের রাজনীতি ও দর্শনের বিচ্যুতিকে বিশুদ্ধতা প্রমাণের লক্ষ্যে ইসলামী বিধি-বিধানের মধ্যে অপব্যাখ্যা করে। এর ধারাবাহিকতা এখনো চলমান। শুধু এতটুকুতেই তারা ক্ষ্যান্ত হয়নি বরং কয়েক ধাপ এগিয়ে লোকগুলো অনেক স্থানে মুজাহিদদের বিরুদ্ধে পশ্চিমা ক্রসেডার সেনাদের অংশীদার হয়েছে।
সেক্যুলার মতাদর্শের বিরুদ্ধে মোল্লা মুহাম্মদ ওমর মুজাহিদ রহ. এর যুদ্ধ:
উল্লেখিত পরিস্থিতির বিপরীতে মোল্লা মুহাম্মদ ওমর মুজাহিদ একমাত্র অনন্য মুসলমান ব্যক্তিত্ব ও পথ-নির্দেশক ছিলেন- যিনি মিম্বর ও মেহরাব থেকে উঠে নিজ শাসন ব্যবস্থাকে পূর্ণ ইসলামী নীতিমালার আলোকে দাঁড় করিয়েছেন। তিনি রাজনীতিকে শুরু থেকে ইসলামী বানিয়েছেন। রাজনীতি ও শাসন ব্যবস্থায় সেকুলারেজম বা অন্য কোন দর্শনের অনুগামীতা তিনি মেনে নেন নি। তিনি প্রমান করে দিয়েছেন যে, মুসলমান নিজ ব্যক্তি জীবনকেও ইসলামী বানাতে পারে এবং কুফুরী দর্শন ও নীতিমালা থেকে মুক্ত হয়ে নিজ শাসন ব্যবস্থাকেও ইসলামী বানাতে পারে।
মোল্লা মুহাম্মদ ওমর মুজাহিদ একজন সত্যিকারি মুসলমান পথ-প্রদর্শক হিসেবে না কখনো কাফের সেনাদের ভয় করেছেন, না কখনো বিশ্ব মোড়লদের আদেশের ভয় করেছেন। তিনি সম্মেলিত ন্যাটো বাহিনীর নীতির পূজারীও হননি। না তিনি কারো সাথে সমরনীতি বা রাজনৈতিক চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছেন, না তিনি পশ্চিমা ও ইউরোপীয় প্রভুদের নিকট নিজেকে গ্রহনযোগ্য বানানোর উদ্দেশ্যে নিজ শাসনে অন্যদের তৈরি করা নীতিমালার অনুসরণের চিন্তা করেছেন। বরং তিনি রাজনীতি, অর্থনীতি এবং সমরনীতির চুক্তি ও ধমকের মুখে অস্ত্র রেখে দিয়েছেন। তাঁর আকীদা ও বিশ্বাস ছিল যে, মুসলমানের রাজনীতি ও শাসন হবে ইসলামী।
কিছু নব্য বুদ্ধিজীবি তাঁর এ অবস্থানকে বোকামি অথবা হাল যামানার দুনিয়া সম্পর্কে অজ্ঞতা মনে করে। কিন্তু বাস্তবতা হল, তিনি বোকা বা দুনিয়া সম্পর্কে অজ্ঞ নন বরং তিনি ইসলামের মৌলিক বিষয় নিয়ে চিন্তা করেছেন। তিনি আত্মমর্যাদা সম্পন্ন দৃঢ় ঈমানের একজন খাঁটি মুসলমান ছিলেন। আমি তাকে খুব কাছে থেকে দেখেছি।
মোল্লা মুহাম্মদ ওমর মুজাহিদ রহ. এর চিন্তা ও রাজনীতির মূল ভেদ ছিল, তিনি সমসাময়িক অন্যান্য রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবিদের মত বর্তমানের পশ্চিমা রাজনীতির দর্শন না পাঠ করতেন এবং না তিনি সেগুলোর উপর ভরসা রাখতেন। তাঁর বিশ্বাস ও রাজনৈতিক ধারণাগুলির উত্স জন জ্যাক রুশো, মন্টেস্কিউইউ, হব্স, জন লুক, স্পিনোজা, মীরাবাউ, ডারউইন, ক্যান্ট, সারটার, ম্যাকোলে, ফ্রেড, মার্কস, নীচ, চার্চিল এবং ফুকুয়ামা ছিল না। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত সিদ্দিকে আকবর, ফারূকে আযম, উসমান গনী, সাইফুল্লাহ আলী , সালমান ফারসী, আবু যর গিফারী, বেলাল হাবশী, খালেদ বিন ওয়ালিদ এবং ওমর ইবনে আব্দুল আযীয রাযিয়াল্লাহু আনহুমের কাহিনী শুনে বড় হয়েছেন। তাদের সরলতাপূর্ণ নিখাদ, পরিপক্ক চিন্তা-গবেষণাগুলোই তার কৌশল ছিল। এ কারণেই জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত শরীয়তের অনুগামিতাকেই পৃথিবী ও পৃথিবীর ধমকের বিপরীতে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। ইসলামী বিশ্বে তিনি ইসলামী চিন্তা ও রাজনীতির জন্য বড় গভীর পদচিহ্ন রেখে গেছেন। সময় অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে তা আরো স্পষ্ট হবে।
কেউ কেউ হয়ত এ লেখাকে চূড়ান্ত গবেষণাপত্র মনে করে বলতে পারে যে, আমি মোল্লা মুহাম্মদ ওমর মুজাহিদ রহ. এর চিন্ত-চেতনা ও পদক্ষেপগুলোর প্রভাবকে ফুঁটিয়ে তুলতে বাস্তবতার চেয়েও অতিরিক্ত করেছি। তাদের উদ্দেশ্যে আমি বলতে চাই যে, তারা তো সাইয়্যেদ কুতুব শহীদ রহ., ড. আব্দুল্লাহ আযযাম রহ. ও উসামা বিন লাদেন রহ. এর মত ব্যক্তিদেরও কেবল সাধারণ মানুষই মনে করে থাকেন এবং তাদের গবেষণা, রাজনৈতিক ও সামরিক পদক্ষেপগুলোকে হালকা মনে করে বলে থাকে যে, সেগুলোর প্রভাবের পরিধি খুবই সীমিত। কিন্তু পরবর্তীতে পৃথিবী দেখেছে যে, এই সামান্য কয়েকজন ব্যক্তির গবেষণা ও পদক্ষেপের ফলে পুরো দুনিয়াতে এমন কিছু মুজাহিদ প্রজন্ম জন্ম নিয়েছে এবং রাজনৈতিক ও জিহাদী দর্শন অস্তিত্ব লাভ করেছে- যারা পুরো কুফুরী শক্তিকে নিজেদের কড়তলে রেখেছে। এবং তারা এমন বিশাল সামরিক শক্তি, দাপট ও ক্ষমতার অধিকারী হয়েছে যার মুকাবিলা করতে পুরো পৃথিবী আজ মুখ থুবড়ে পড়েছে।
মোল্লা মুহাম্মদ ওমর মুজাহিদ রহ. এর রাজনৈতিক ও গবেষণামূলক পদক্ষেপসমূহ:
১. রাশিয়া ও কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে জিহাদের ফসল নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা করা।
রাশিয়া ও কমিউনিস্টদের বিপরীতে আফগানিস্তানের জিহাদ- যার মধ্যে অন্যান্য মুসলিম রাষ্টের হাজারো লোক কেবল এ জন্য নিজেদের জীবন কোরবানী দিয়েছে যেন আফগানিস্তানকে রাশিয়া ও কমিউনিস্টদের দখল মুক্ত করে সেখানে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা হয়। কিন্তু বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল, বিভিন্ন সংঘটন ছাড়াও অনেক জিহাদী নেতৃবর্গের ভুল সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপের কারণে কেবলমাত্র তাৎক্ষণিক আশা অপূর্ণ থেকে যায়নি বরং সকল কুরবানী একদম জ্বলে ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল এবং আফগানভূমীর অস্তিত্ব বিলিন হয়ে যাওয়ার দাঁড় প্রান্তে পৌঁছেছিল।
সেই সময়ের যুদ্ধের ময়দানে জিহাদী দলসমূহের বিচ্যুতির কারণে আফগানিস্তানের উপর এমন এক বিভিষিকাময় যুলুম চেপে বসেছিল যা মানুষকে চেঙ্গিস খানের যুলুমের কথাও স্মরণ করিয়ে দিত। ময়দানে এ মতবিরোধের কারণে তখন আফগানিস্তান বড় ধ্বংসের মুখে পতিত হচ্ছিল এবং মুজাহিদদের দুর্ণাম ছড়িয়ে যাচ্ছিল।
উপরোল্লিখিত প্রতিকূল পরিস্থিতি সত্ত্বেও মোল্লা মুহাম্মদ ওমর মুজাহিদ রহ. নিজস্ব সংশোধিত জিহাদী আন্দোলনর মাধ্যমে শুধুমাত্র আফগানিস্তানকে ধ্বংস দাঁড় প্রান্ত থেকে রক্ষা করেনি বরং একটি অনুসরণীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং জিহাদকে পুণরায় এক সম্মানজনক আসনে আসীন করেছেন। তাঁর হাতে এ সব অবস্থা হঠাৎ করে সৃষ্টি হয়নি বরং পরিশ্রমের দ্বারা হয়েছে, তারও পূর্বে ছিল তাঁর দৃঢ় সংকল্প।
একদিন ইমারাতে ইসলামিয়ার “সৎ কাজের আদেশ-অসৎ কাজের নিষেধ” বিভাগের প্রধান দায়িত্বপ্রাপ্ত মৌলভী মুহাম্মদ ওলী সাহেব শহীদ রহ. মোল্লা মুহাম্মদ ওমর মুজাহিদ রহ. এর সংকল্পগুলো শুনাতে গিয়ে বলেন-
“আন্দোলনের দ্বিতীয় বা তৃতীয় সপ্তাহের কথা– তখন তিনি না পথ প্রদর্শক ছিলেন না তিনি আমীরুল মুমিনীন ছিলেন। আমি মোল্লা মুহাম্মদ ওমর মুজাহিদ রহ. এর মাদরাসা থেকে কিছু দূরে একটি মসজিদে কিছু ছাত্রদের পড়াচ্ছিলাম, কান্দাহার, হেরাতের বিশ্বরোডগুলোর সীমান্ত থেকে লড়াই ও ফায়ারিংয়ের আওয়াজ শুনা যাচ্ছিলাম। আমি আওয়াজের কারণ জিজ্ঞাসা করার পর উত্তরে বলা হয়, মোল্লা মুহাম্মদ ওমর মুজাহিদ স্বশস্ত্র ডাকাত ও চোরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছে। তখন আমিও কিতাব বন্ধ করে ছাত্রদের নিয়ে তাদের সাথে যুক্ত হই। একদিন আমাদের লড়াই পশ্চিম দিক থেকে কান্দাহার শহরের কাছাকাছি এলাকা পর্যন্ত পৌঁছে। আরেকদিন সকাল থেকে নিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের বাহিনীর সাথে আমাদের এমন এক জায়গায় যুদ্ধ হয় যেখানে তাদের ও আমাদের মাঝে শুধু একটি ব্রিজের ব্যবধান ছিল। সন্ধ্যায় যুদ্ধ শেষ হয়, তখন আমি ও মোল্লা মুহাম্মদ ওমর রহ. একটি মোড়ে বসে ছিলাম। আমরা কি দু’জন সকাল পর্যন্ত সফলতার সাথে যুদ্ধ করতে পারব, না রাতের মধ্যেই শত্রুরা আমাদের গ্রেফতার করে নিয়ে যাবে– এ ব্যাপারে দ্বিধাগ্রস্থ ছিলাম । আমার মাথায় তো কেবল এই চিন্তাই ঘুরপাক খাচ্ছিল; অথচ তখন মোল্লা সাহেব অন্য কিছু ভাবছিলেন। তিনি দুশ্চিন্তা ও পেরেশানীর বিষয় আমাকে বললেন যে,
“মৌলভী সাহেব! এ যুদ্ধ দু-চার দিন বা সামান্য কিছু সময়ের নয় এবং কেবল কান্দাহার দখল পর্যন্তই চলবে বরং আমরা ইনশা-আল্লাহ অবিরাম জিহাদ করতে থাকব। কান্দাহার দখল করার পর পুরো আফগানিস্তানকে অনিষ্টকারীদের থেকে মুক্ত করব এবং ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা করবো। এটা অনেক দীর্ঘ রাস্তা, ভয় ও দুশ্চিন্তাকে অন্তরে জায়গা দেওয়া যাবে না।”
মৌলভী মুহাম্মদ নবী সাহেব আরো বলেন–
“ঐ বিভিষিকাময় অন্ধকার রাতে মোল্লা মুহাম্মদ ওমর মুজাহিদ রহ. এর কথা বাহ্যিক দৃষ্টিতেই অনেক কঠিন ও অসম্ভব সংকল্প ছিল। আমি শুনছিলাম কিন্তু আমার নিকট এমন অসম্ভব মনে হচ্ছিল- যেন তিনি বলেই আকাশে উড়ছেন। কিন্তু আজ আমি দেখছি যে, মোল্লা সাহেব রহ. আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহ ও সাহায্যে তার সকল ইচ্ছাগুলো পূর্ণ করেছেন। বিশৃঙ্খলা ও যুদ্ধের সমাপ্তি হয়ে গেছে এবং ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা হয়ে গেছে।”
বাস্তবতা হল, যদি আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহ, দয়া এবং মোল্লা মুহাম্মদ ওমর মুজাহিদ রহ. এর আন্দোলন না হত তাহলে আজ না আফগানিস্তান হত, না এখানকার মুজাহিদদের অস্তিত্ব থাকত; না আমেরিকা ও ন্যাটোর পরাজয় হত, না সাধারণ জনগনের মাঝে স্বাধীনতার আগ্রহ জেগে উঠত। আর কমিউনিস্টদের সেই কথাও সত্য হয়ে যেত যে*– জিহাদ ও মুজাহিদ মূলত আমেরিকার এজেন্ডা এবং এ প্রোগ্রাম আমেরিকা (কমিউনিস্টদের) বিপ্লবের বিপরীতে শুরু করেছে।
২. মোল্লা-মৌলভীদের রাজনীতিবিদ বানানো এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা পর্যন্ত পৌঁছানো।
বিগত দীর্ঘ সময় যাবত ইসলামী বিশ্ব ও আফগানিস্তান এর উলামায়ে কেরাম এবং দ্বীনদার জনগন রাজনীতি ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বাহিরে ছিল। সমাজের রাজনীতি, সামরনীতি ও সামাজিক নেতৃত্বের বিষয়গুলো দ্বীন সম্পর্কে বে-খবর, ধর্মদ্রোহী রাজনীতিবিদ ও অত্যাচারী শাসকদের হাতে ছিল। ধর্মদ্রোহী শাসকরা ইসলামের পক্ষে যারা কাজ করত তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ও বল প্রয়োগের মাধ্যমে কাজ সমাধা করত। তাদের উপর অবরোধ আরোপ করে সকল রাস্তা বন্ধ করার সকল পন্থাই অবলম্বন করত। হত্যা, ফাঁসি, কারগার, প্রোপাগান্ডা ও অত্যাধুনিক সমরাস্ত্রসহ সকল প্রকার কৌশলই গ্রহণ করত। এ অবস্থা আফগানিস্তানসহ পুরো ইসলামী বিশ্বের ছিল। অথচ উচিৎ ছিল– এর বিপরীতে ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল ও প্রতিষ্ঠানগুলো জিহাদী কৌশলের মাধ্যমে পরিস্থিতি পরিবর্তন এবং এ লক্ষ্যে জনগণের মন তৈরি করার জন্য বিশুদ্ধ বিপ্লবী ব্যবস্থা গ্রহণ করার। কিন্তু আফসোস! এমনটি তো হয়নি-ই বরং ঐ সকল দল গণতন্ত্রের রশি আকড়ে ধরে।
সমকালিন সকল ইসলামী রাজনৈতিক দলসমূহ ও আন্দোলনের বিপরীতে গিয়ে মোল্লা মুহাম্মদ ওমর মুজাহিদ রহ. দ্বীন বিরোধী সকল মানদন্ডগুলো পরিপূর্ণ উপেক্ষা করেন এবং প্রাকৃতিক পদ্ধতীতে রাজনীতি ও শাসন ব্যবস্থার লাগাম টেনে ধরে পুণরায় উলামায়ে কেরাম ও মুজাহিদদের হাতে দিয়ে তাদেঁরকে আবার রাজনৈতিক বানিয়ে দেন। মোল্লাকে আবার আমির, মন্ত্রী, কূটনীতিক, গভর্নর, সামরিক প্রধান, পুলিশ প্রধান, প্রশাসন প্রধান, বিচারক, ব্যবস্থাপক, জেলা গভর্নর, শিক্ষক, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, লেখক এবং পর্যবেক্ষক বানানো হয়। উলামা এবং সমাজের মধ্যে ভেঙ্গে যাওয়া সম্পর্ককে পুণরায় এমন মজবুতভাবে জুড়ে দেন- যেটাকে ভাঙ্গতে সেক্যুলার ক্ষমতার সকল প্রচেষ্টা ভেস্তে যায়। মোল্লাকে রাজনীতি ও যুদ্ধের ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। রাজনীতি, মেধা ও সামরিক দিক থেকে আমেরিকার স্বার্থ রক্ষার্তে এক মেরু হওয়া পুরো পৃথিবীকে আবার দুই মেরুতে রূপান্তর করে দেন।
তবে মোল্লা মুহাম্মদ ওমর মুজাহিদ রহ. এর পক্ষ থেকে উলামা ও ছাত্রদের রাজনৈতিক ব্যক্তিতে রূপান্তর করার ক্ষেত্রে একটি বাণী রয়েছে যা অনেক গুরুত্ব রাখে। সেটি হল, তালেবানের আন্দোলনে মোল্লারা বাস্তবেই রাজনীতির ময়দানে এসেছে– তো ঠিক আছে, কিন্তু আফসোসের বিষয় হল, ইসলামী রাজনীতির যুগোপযোগী জ্ঞান, কুফুর ও গোমরাহীর সমকালীন শক্তিকে শনাক্ত করন, সমাজের সাথে ইসলামী আচরণের জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা এবং বৈশ্বিক শক্তিকে সম্বোধন করে কথা বলার সাহিত্য- মোল্লা ও ছাত্রদের শিক্ষা ব্যবস্থায় আজো পর্যন্ত অন্তর্ভূক্তির সুযোগ পায়নি। যদি মোল্লাদের শিক্ষা, পাঠ্যক্রম এবং মাদরাসার অবস্থা এমনি থেকে যায় তাহলে আশংকা রয়েছে যে, মোল্লা মুহাম্মদ ওমর মুজাহিদ রহ. এর চিন্তা ও তার দেখানো পথ ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি কাল্পনিক গবেষণা নয় বরং আফগানি ইতিহাসের পাতায় শুধুমাত্র এক চিত্তাকর্ষক ও সাময়িক দুর্ঘটনা হিসেবে রয়ে যাবে। এ জন্য তালেবানের রাজনৈতিক ও জিহাদী আন্দোলনের বুদ্ধিজীবি ও শিক্ষা ব্যবস্থাপকগন এই উত্তরাধিকার সম্পদকে রক্ষা করার জন্য নিজ গন্ডি থেকে বের হয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
৩. তালেবে ইলেমদের (ছাত্রদের) মধ্যে জিহাদী আগ্রহ সৃষ্টি করা এবং দ্বীনের প্রতিরক্ষায় তাদের দাঁড় করা।
পাশ্চাত্য শিক্ষা ব্যবস্থা মুসলিম বিশ্বের জনগনকে জ্ঞান দ্বারা তো উপকৃত করেছে, কিন্তু দ্বীনদারী এবং রূহানীয়াত থেকে বঞ্চিত করেছে। মুসলমানদের অস্ত্র তৈরি করা এবং যুদ্ধের সরঞ্জাম প্রস্তুত করা দক্ষতা তো শিখিয়েছে, কিন্তু ইসলাম ও নিজ ভূমির প্রতিরক্ষার জন্য অস্ত্র ব্যবহারের আগ্রহ ও মনোবল তাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে। মুসলিম বিশ্বে তারা এমন কিছু বিশ্বস্ত চতুর গোলাম বানিয়েছে রেখেছে যারা পশ্চিমাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য খোদ পশ্চিমাদের থেকেও অধিক অগ্রগামী। এ জন্যই পশ্চিমা বিষয়ে মহান দার্শনিক আল্লামা মুহাম্মদ ইকবাল পৃথিবীতে পশ্চিমা শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান এবং তাদের শিক্ষার্থীদের ভূমিকা এভাবে ব্যক্ত করেছেন-
مکتب از تدبیر او گیرد نظام تا بہ کام خواجہ اندیشد غلام
পাশ্চাত্যের কুট-কৌশল এবং অভিসন্ধির দ্বারা এমন শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে,
যে শিক্ষার অশুভতায় মুনিব হয় চৈতন্য দাস।
এই পশ্চিমা ধ্যান-ধারণা লালনকারী লোকগুলো কখনও প্রগতিশীল, কখনও আলোকিত চেতনা, কখনও উদারতা, কখনও কমিউনিস্ট, আবার কখনও নিরপেক্ষ রূপ ধারণ করে সর্বদা শত্রুদের কাতারে অবস্থান নিত । পশ্চিমা শিক্ষা-ব্যবস্থা তাদেরকে আত্মমর্যাদা ও প্রতিরোধের জন্মগত অনুভূতি থেকে চেতনাহীন করে ফেলেছে। এ কারণেই তো আল্লামা ইকবাল ঐ শিক্ষা কে এভাবে মূল্যায়ন করেছেন-
من آں علم و فراست با پر کاہی نہ می گیرم کہ از تیغ و سپر بیگانہ سازد مرد غازی را
আমি ঐ জ্ঞান-বিজ্ঞানকে তুচ্ছ খড়কুটোর বিনিময়েও গ্রহণ করব না
যা একজন যোদ্ধাকে অসি, ঢাল থেকে মুক্ত করে কাপুরুষ বানায়।
আমি ঐ বিবেক ও চাতুরতা দিয়ে সামান্য একটি খড়কুটাও ক্রয় করিনি যা গাজীদের তরবারী ও ঢাল থেকে আলাদা করে দিয়েছে। মোল্লা মুহাম্মদ ওমর মুজাহিদ এমন এক যৌথ সামরিক বাহিনীর উপর বিজয় লাভ করেছে যাতে পঞ্চাশেরও অধিক দেশ শরীক ছিল। তিনি মুসলিম বিশ্বের যুবকদের মাঝে জিহাদ এবং স্বাধীনতার এমন চেতানা তৈরি করে দিয়েছেন যাকে ধ্বংস করতে আজ পৃথিবীর সকল রাজনৈতিক ও বুদ্ধিজীবি জাদুকররা অপারগ! এর ধারাবাহিকতা আরো বাড়তে থাকবে ইনশাআল্লাহ।
৪. আদর্শবান একজন মুসলিম শাসকের দৃষ্টান্ত পেশ করা।
মুসলমানরা দীর্ঘ সময় যাবৎ একজন আদর্শবান মুসলিম শাসকের উদাহারণ দেখতে পায়নি। এর কারণ হল, বিংশ ও একবিংশ শতাব্দিতে মুসলিম বিশ্বে প্রায় সকল শাসক এমন লোক ছিল- যারা ইউরোপ, রাশিয়া অথবা আমেরিকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেছে। ইসলামী বিশ্বে পশ্চিমা ও খ্রিষ্টান মিশনারীদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রাজ্যুয়েশন ডিগ্রি লাভ করেছে। তারা ধর্মের কোন চিন্তা লালন করে না। আবার ধার্মিকতার এতটুকু বহিপ্রকাশ করে যা দ্বারা সাধারণ জনগনকে ধোঁকা দেওয়া যায়। মুসলিম বিশ্বের বর্তমান শাসকরা আদর্শগতভাবে ধর্মনিরপেক্ষ, রাজনৈতিকভাবে মিকাউলের অনুসারী; যারা নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য সব কিছুকে বৈধ মনে করে। উদ্দেশ্য ও অভিপ্রায়ের বিচারে তারা ঐ কাফের দেশগুলির নগর ও আকৃতির দিক দিয়ে হুবহু পশ্চিমাদের ফটোকপি। জনসাধারণের সাথে তাদের চোরাকারবারী, যুলুম ও মিথ্যাচারিতার সম্পর্ক। সংস্কৃতির দিক থেকে তারা নিজ ধর্মের শত্রু এবং অন্য ধর্মের প্রতিনিধি। তারা বংশগত উত্তরাধিকার বা সেনা বিদ্রোহ এবং পশ্চিমা গণতন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসে। যেখানে ভোটারের মেধা, বিচক্ষণতা, অভিজ্ঞতা ও অন্যান্য যোগ্যতা দেখা হয় না।
তবে মোল্লা মুহাম্মদ ওমর মুজাহিদ হাল যামানার শাসকদের বিপরীতে একজন আদর্শবান মুসলমান শাসকের দৃষ্টান্ত ছিল। তিনি উম্মতের মধ্যে মসজিদ ও মেহরাব থেকে উঠে আসা একজন ধর্মভীরু ব্যক্তি ছিলেন। ধর্মের চাওয়া এবং অন্তরের খোরাক সম্পর্কে অবগত ছিলেন। তিনি শরীয়ত সম্পর্কেও ওয়াকিফহাল ছিলেন। অধিকাংশ সময় এমন কাপড় ও পাগড়ী পরিধান করতেন– খুব বেশি পরিমানে ধোয়ার কারণে যেগুলোর রং জ্বলে যেত। শেষ পর্যন্ত না তাঁর কোন ঘর ছিল, না তিনি কোন পৌত্তিক সম্পত্তি পেয়েছিলেন। তিনি নিজে শাসক ছিলেন কিন্তু সর্বদা নিজ ইচ্ছা-পরিকল্পনা সম্পর্কে উলামায়ে কেরাম ও সঙ্গীদের নিকট জিজ্ঞাসা করে পদক্ষেপ নিতেন। ক্ষমতাকালীন সময়ে প্রত্যেক বুধবার তিনি নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ ও দায়িত্ত্বশীলদের নিয়ে পরামর্শ করতেন।
মোল্লা মুহাম্মদ ওমর মুজাহিদ রহ. একজন ক্ষমতাধর শাসক ছিলেন কিন্তু তাঁর জীবন ছিল অপচয় ও অপব্যয় মুক্ত। সবর্দা উলামা, মুজাহিদ ও আন্দোলনের দায়িত্ত্বশীলদের মত সাধারণ জীবন যাপন করতেন। তাঁর মতে তাঁর শাসন ব্যবস্থা শক্তিশালী হওয়ার পিছনে চালিকা শক্তি ছিল শরীয়তের বাস্তবায়ন ও সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা প্রদানের মধ্যে। তিনি সাধ্যানুযায়ী উম্মতের ঐক্যের জন্য চেষ্টা করে গেছেন। তিনি উম্মতের বড় বড় মুজাহিদদের নিজ শাসনাধীন এলাকায় জায়গা দিয়েছেন, অস্ত্র ও সরাঞ্জমেরও যোগান দিয়েছেন, মুহাজিরদের জন্য তিনি সম্মানজনক জীবন ব্যবস্থা করেছেন। তিনি শাসন ব্যবস্থায় উম্মতের ঐক্যের জন্য মুসলমান মুজাহিদ এবং মুহাজিরদের নিকট পাসপোর্ট তলব করতেন না। কারণ, তিনি মুসলিম উম্মার ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের বিপরীতে এ গুলোকে কোন গুরুত্ব দিতেন না। আর এ কারণেই দুনিয়ার একনিষ্ট মুসলমানগণও তাঁকে নিজের আমীর ও পথিকৃৎ মনে করতেন। যদি তার ব্যক্তিগত কোন ঝামেলা না থাকত তাহলে তিনি এ ময়দানে মুসলমানদের জন্য আরো খেদমত করে যেতে পারতেন।
আজ আমীরুল মুমিনীনের মৃত্যুর অষ্টম বৎসর অতিক্রম হচ্ছে। দয়াময়, ক্ষমাশীল আল্লাহ তায়ালার নিকট তাঁর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আমি ইসলামী চিন্তাবিদ এবং নেতৃস্থানীয় মুজাহিদ ব্যক্তিবর্গের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখে বলছি- তাঁরা যেন এই মহান ব্যক্তিত্বের জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে কাজ করে, রাজনীতিতে তার প্রভাব তুলে ধরার দায়িত্বটুকু পালন করেন। পৃথিবীর সামনে পশ্চিমা ঘৃণ্য রাজনীতির বিদ্বেশী লেখক ও গবেষকদের দ্বারা এই মহান ব্যক্তিত্বের ব্যাপারে বিকৃত ইতিহাস রচনার পূর্বেই তারা যেন নিজেরাই তাঁর জীবনের সবদিক রচনা করে দুনিয়াবাসীকে আশ্বস্ত করেন।
post: Collected
Comment