মাদরাসা-মকতবের ইতিহাস
ভূমিকা
বিগত দুই-তিন শতাব্দী যাবৎ মুসলিম উম্মাহ অব্যাহতভাবে অধঃপতনের শিকার। বিজাতীয়দের ষড়যন্ত্র ও নিজেদের উদাসিনতা কেবলই বস্তুগতভাবে নয়, বরং চিন্তাগতভাবেও উম্মাহর স্বতন্ত্র স্বকীয়তাকে বদলে ফেলার চূড়ান্ত তৎপরতা চালিয়েছে। ফলে প্রকৃত ইসলামী সংস্কৃতির প্রতি অনিহা ভাব ঝেঁকে বসেছে এবং নানা অদ্ভুত চিন্তায় প্রভাবিত হওয়ার কারণে ইসলামের আলোকময় চেহারা তাদের সামনে ঝাপসা হয়ে উঠেছে। পশ্চিমা কুফুরীব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে এবং এর স্থলে ইসলামী সংস্কৃতির অবকাঠামো নির্মাণের পথে যত বিপদ-আপদ আসছে, তা এমন বিভ্রান্তি ও আজেবাজে মিশ্রণেরই পরিণতি। অথচ উলামায়ে কিরাম, হকের পথে আহ্বানকারী দায়ীগণ ও মুজাহিদদের প্রচেষ্টা আজও পর্যন্ত প্রকৃত ইসলামী বৈশিষ্ট্যাবলীর উপর নিবদ্ধ রয়েছে। এই আসল কাঠামো আমাদের খুব নিকটেই আছে। আমাদের হাতের নাগালেই আছে। কিন্তু আমরা এর থেকে উদাসীন।
এই প্রবন্ধে এখানকার মুসলমানদের শিক্ষা-দীক্ষার পদ্ধতির উপর আলোকপাত করা হয়েছে। শিক্ষা-দীক্ষা একটি ব্যাপক বিষয়। যার অনেক শাখা-প্রশাখা রয়েছে। আমরা এখানে আমাদের লক্ষ্য অনুযায়ী শুধুমাত্র নিজেদের চিন্তা ও দর্শন, বিশেষভাবে "শিক্ষা-ব্যবস্থার ইতিহাস' নিয়ে আলোকপাত করবো। অবশ্য এর মধ্যেও সব শিক্ষা নয়, বরং সমাজের বিশেষ ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আলোচনা করবো। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর পদাঙ্ক অনুসারী সাহাবায়ে কিরাম শিক্ষা-দীক্ষার জন্য বিভিন্ন পথ ও পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিশেষত্ব তো এটাই যে, তাঁর বৈবাহিক জীবনকেও সকল মুসলমানের জন্য শিক্ষা-দীক্ষার একটি মাধ্যম মনে করা হয়। অন্যরা সবার আগে শিখে নেয় একজন ভালো মানুষের স্বভাব প্রকৃতিকে এবং প্রত্যেক ভালো মানুষের আদর্শই অন্যদের জন্য অনুসরণীয় হয়ে থাকে। আর তা যদি হয় সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষের সর্বোত্তম আদর্শ, তাহলে তো কথাই নেই! নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উঠা-বসা, পানাহার ও চলা-ফেরা এককথায়, প্রত্যেক কাজের মধ্যেই শিক্ষার উপকরণ নিহিত আছে। স্বয়ং নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
إنما بعثت معلما
নিশ্চয়ই আমি শিক্ষকরূপে প্রেরিত হয়েছি।
এবং তিনি আরও ইরশাদ করেছেন-
إنما بعثت لأتمم مكارم الأخلاق
আমাকে প্রেরণ করা হয়েছে উত্তম চরিত্রের পূর্ণাঙ্গতা প্রদানের জন্য।
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধু যে আচার ব্যবহারই শিক্ষা দেয়ার দায়িত্ব পালন করেছেন এমন কিন্তু নয়, বরং আপন সাহাবীগণের সঙ্গে বন্ধুসুলভ কথাবার্তা, মজলিসে নানা বিষয়ে আলোচনা, জুমআর খুতবা, প্রতিনিধি দলকে দাওয়াত এবং বিভিন্ন বিতর্কের অবসান; অর্থাৎ, তাঁর সকল অবস্থাতেই শিক্ষণীয় মূল্যবান মণি-মুক্তা থাকতো এবং তাঁর জীবনের প্রতিটি দিকই ছিলো প্রবাহিত ঝর্ণাধারা। কিন্তু এই প্রবন্ধে তাঁর সকল দিক নিয়ে আলোচনা করতে আমরা অপারগ। আর এই মুহূর্তে এতোসব বিষয় নিয়ে কথা বলা আমাদের উদ্দেশ্যও নয়। আমাদের উদ্দেশ্য, শিক্ষার ঐ সমস্ত পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা, যেগুলোকে রিওয়াইয়াতী বা বর্ণিত বলা যায়। পাশাপাশি ঐসব বিষয়ও, যেগুলোকে আমরা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বলতে পারি। আলোচনা শেষে পাঠকের সামনেই বিষয়টি নির্বাচনের কারণ স্পষ্ট হয়ে যাবে। যাই হোক, এবার মূলকথা শুরু করা যাক।
প্রথম অধ্যায়: কুরআনে কারীমে শিক্ষা বিষয়ক আলোচনা
আলোচনার আগে আমরা নববী যুগ তথা ইসলামের প্রারম্ভিক যুগে শিক্ষাদানের বর্ণিত কিছু পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করবো। কুরআনের এমন কিছু আয়াতের উপর দৃষ্টিপাত করবো, যেগুলোতে পাঠদান ও শিক্ষাগ্ৰহণের বিভিন্ন উপায় ও মাধ্যম সম্পর্কে আলোচনা রয়েছে। যাতে পাঠক অবহিত হতে পারে যে, হিদায়াতের ঝর্ণাধারা ঐশী কালামে এই বিষয়ে কী রয়েছে।
'ইলমে অহী'র লেখা-পড়া, বয়ান ও ব্যাখ্যা
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন-
اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ، خَلَقَ الْإِنسَانَ مِنْ عَلَقٍ، اقْرَأْ وَرَبُّكَ الْأَكْرَمُ، الَّذِي عَلَّمَ بِالْقَلَمِ، عَلَّمَ الْإِنسَانَ مَا لَمْ يَعْلَمْ ○
পড়ুন আপনি আপনার প্রতিপালকের নামে, যিনি (বিশ্বজগতকে) সৃষ্টি করেছেন। যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন জমাট রক্ত থেকে। পড়ুন এবং আপনার প্রতিপালক মহাসম্মানিত। যিনি কলমের মাধ্যমে শিক্ষা দান করেছেন। এবং মানুষকে শিখিয়েছেন ঐ জিনিস যা সে জানতো না। (সূরা আলাক: ১-৫)
কুরআনে কারীমের সর্বপ্রথম অবতীর্ণ এই আয়াত ক'টি থেকে বোঝা যায় যে, অহীর সঙ্গে শিক্ষাদানের গভীর একটা সম্পর্ক রয়েছে। চিন্তা করুন, এই আয়াতসমূহ থেকে আরও কতকিছু বুঝে আসে!
প্রথমত: মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষার ভিত্তিই হল অহী অর্থাৎ দ্বীন। আর এর উদ্দেশ্য হলো- মাখলুককে স্রষ্টার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া। এজন্যই 'তা‘লীম' এই শব্দটি শরীয়াতের জ্ঞানের জন্য ব্যবহৃত হয়।
'শরীয়াহ' জ্ঞানের সংজ্ঞায় উলামায়ে কেরাম লিখেন, এটা ঐ জ্ঞান যার মাধ্যমে রবের মারিফত তথা পরিচিতি লাভ হয়।
দ্বিতীয়ত: মুসলিমদের পাঠ্যক্রমে কুরআনে কারীম পড়তে পারা ছিল সবচে প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যাকে কেন্দ্র করে অন্যান্য শাস্ত্র ও জ্ঞান তৈরি হয়।
তৃতীয়ত: শিক্ষার নানারকম মাধ্যমের বিবেচনায় ইসলামে পড়া ও লেখার একটি বিশেষ অবস্থান রয়েছে। তাছাড়া এগুলোকেই ইসলামী সমাজে প্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ধরে কুরআনে কারীমের তিলাওয়াত ও লেখার ধারাবাহিকতা আরম্ভ হয়। তারপর এই অহীর শুধু তিলাওয়াতই নয়, বরং বিশদ বিবরণ, ব্যাখ্যা ও সুস্পষ্ট করার ব্যবস্থাও আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাধ্যমে করেছেন।
তিনি ইরশাদ করেন-
لَا تُحَرِّكْ بِهِ لِسَانَكَ لِتَعْجَلَ بِهِ، إِنَّ عَلَيْنَا جَمْعَهُ وَقُرْآنَهُ، فَإِذَا قَرَأْنَاهُ فَاتَّبِعْ قُرْآنَهُ، ثُمَّ إِنَّ عَلَيْنَا بَيَانَهُ
হে নবী! আপনি এই কুরআনকে তাড়াতাড়ি মুখস্থ করার জন্য আপনার জিহ্বাকে নাড়ানোর দরকার নেই। (আপনি বিশ্বাস রাখুন,) একে মুখস্থ করানো এবং পড়ার তাওফীক দান করা আমারই দায়িত্ব। অতঃপর যখন হযরত জিবরাঈল (আ.) এর মাধ্যমে আমি এটা পড়বো তখন আপনিও সাথে সাথে পড়বেন। অতঃপর এটাকে স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করাও আমারই দায়িত্ব। (সূরা ক্বিয়ামাহ: ১৬-১৯)
লিখনরীতি চালু হওয়ার আগে পুনঃপুন পড়া, তিলাওয়াত করা, ব্যাখ্যা ও বয়ান করার মতো গুরুত্বপূর্ণ অন্য কোন কিছু ছিল না।
লিখনরীতির অবস্থান ও তাৎপর্য তুলে ধরার পর কুরআনে কারীমে সেটার কসম খাওয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে-
ن وَالْقَلَمِ وَمَا يَسْطُرُونَ
নূন! শপথ কলমের, এবং তারা (লেখকরা) যা লেখে তার। (সূরা ক্বলম: ১)
অতঃপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর কিতাব শুধু নাযিলই হয়নি এবং তা হিফাজতের জন্য শুধু হিফজ, স্পষ্টভাবে বর্ণনা, ব্যাখ্যা ও লেখার প্রতিই নজর দেননি, বরং রিসালাত ও হিদায়াতের ধারক-বাহক হওয়ার সুবাদে এই কিতাব শিক্ষাদানের দায়িত্বও নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপর অর্পণ করা হয়েছে। এ বিষয়ের উপর প্রমাণ বহন করে এমন অনেক আয়াতই রয়েছে, যার মধ্য হতে একটি নিম্নে বর্ণিত হল:
لَقَدْ مَنَّ اللّهُ عَلَى الْمُؤمِنِينَ إِذْ بَعَثَ فِيهِمْ رَسُولاً مِّنْ أَنفُسِهِمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِن كَانُواْ مِن قَبْلُ لَفِي ضَلالٍ مُّبِينٍ
আল্লাহ তা‘আলা মুমিন বান্দাদের প্রতি খুবই অনুগ্রহ করেছেন যে, তিনি তাদের মধ্য থেকেই তাদের মাঝে একজন রাসূলকে প্রেরণ করেছেন। যিনি তাদেরকে আল্লাহর আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে শোনান। তাদের আত্মশুদ্ধি করেন। এবং তাদেরকে আল্লাহর কিতাব ও হিকমাহ তথা প্রজ্ঞা ও শিক্ষা দান করেন। যদিও তারা ইতোপূর্বে স্পষ্ট গোমরাহিতে নিমজ্জিত ছিল। (সূরা আলে-ইমরান: ১৬৪)
কিতাবীদের নিকট অহীর ইলম
কুরআনে কারীম থেকে আমরা এটাও জানতে পারি যে, আসমানী কিতাবের হিফাজত ও তার তা‘লীমের ধারাবাহিক দায়িত্ব কেবল মুসলমানদের উপরই ছিল না। বরং পূর্বপর্তী কওমদের উপরও আসমানী কিতাবের তিলাওয়াত, লেখা, শিখা এবং বয়ান করার দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছিল, যা থেকে তারা `মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। নিম্নে এ সংক্রান্ত কিছু আয়াতে কারীমাহ পেশ করা হল:
مَا كَانَ لِبَشَرٍ أَن يُؤْتِيَهُ اللّهُ الْكِتَابَ وَالْحُكْمَ وَالنُّبُوَّةَ ثُمَّ يَقُولَ لِلنَّاسِ كُونُواْ عِبَادًا لِّي مِن دُونِ اللّهِ وَلَـكِن كُونُواْ رَبَّانِيِّينَ بِمَا كُنتُمْ تُعَلِّمُونَ الْكِتَابَ وَبِمَا كُنتُمْ تَدْرُسُونَ
কোন ব্যক্তির জন্য এটা উচিত নয় যে, আল্লাহ তায়ালা তাকে কিতাব, শাসন ক্ষমতা, নবুওয়াত দান করবেন আর সে লোকদেরকে বলবেঃ তোমরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে আমার বান্দা হয়ে যাও, বরং (তার এটা বলা মানায় যে, হে কিতাবীরা!) তোমরা (উলামায়ে কিরামরা) আল্লাহওয়ালা হয়ে যাও, যেহেতু তোমরা (আল্লাহর) কিতাব পড় এবং শেখাও। (সূরা আলে-ইমরান:৭৯)
فَخَلَفَ مِن بَعْدِهِمْ خَلْفٌ وَرِثُواْ الْكِتَابَ يَأْخُذُونَ عَرَضَ هَـذَا الأدْنَى وَيَقُولُونَ سَيُغْفَرُ لَنَا وَإِن يَأْتِهِمْ عَرَضٌ مُّثْلُهُ يَأْخُذُوهُ أَلَمْ يُؤْخَذْ عَلَيْهِم مِّيثَاقُ الْكِتَابِ أَن لاَّ يِقُولُواْ عَلَى اللّهِ إِلاَّ الْحَقَّ وَدَرَسُواْ مَا فِيهِ وَالدَّارُ الآخِرَةُ خَيْرٌ لِّلَّذِينَ يَتَّقُونَ أَفَلاَ تَعْقِلُونَ
অতঃপর তাদের পর স্থলাবিষিক্ত হল এমন জাতি যারা কিতাবের উত্তরাধিকারী হল, তবে তাদের অবস্থা ছিল এমন যে, তারা এই অপদস্থ দুনিয়ার পারিশ্রমিক গ্রহণ করতো তার বিনিময়ে এবং বলতো, অবশ্যই আমাদেরকে ক্ষমা করে দেয়া হবে/(এটা) আমাদের প্রতিদান হিসেবে হয়ে যাবে। অথচ এর অনুরূপ বিনিময় যদি তাদের কাছে আবার আসে তাহলে আবারও তারা তা গ্রহণ করবে। তাদের কাছ থেকে কি এই প্রতিশ্রুতি নেয়া হয়নি যে, তারা আল্লাহর ব্যাপারে সত্য ছাড়া অন্য কিছু বলবে না? এবং এই কিতাবে যা কিছু আছে তা তারা হুবহু পড়বে? আর যারা তাকওয়া অবলম্বন করে তাদের জন্য আখিরাতের ঘরই কল্যাণকর। তবুও কি তোমরা বুঝবে না? (সূরা আ‘রাফ: ১৬৯)
فَوَيْلٌ لِّلَّذِينَ يَكْتُبُونَ الْكِتَابَ بِأَيْدِيهِمْ ثُمَّ يَقُولُونَ هَـذَا مِنْ عِندِ اللّهِ لِيَشْتَرُواْ بِهِ ثَمَناً قَلِيلاً فَوَيْلٌ لَّهُم مِّمَّا كَتَبَتْ أَيْدِيهِمْ وَوَيْلٌ لَّهُمْ مِّمَّا يَكْسِبُونَ
সুতরাং ধ্বংস তাদের জন্য যারা নিজ হতে কিতাব লেখে তারপর বলে এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে। যাতে এর বিনিময়ে তারা সামান্য মূল্য ক্রয় করতে পারে। সুতরাং ধ্বংস তাদের জন্য তারা যা লেখে সে কারণে এবং ধ্বংস তাদের জন্য তারা যা কামাই করে সে কারণে। (সূরা বাকারাহ: ৭৯)
وَمَا قَدَرُواْ اللّهَ حَقَّ قَدْرِهِ إِذْ قَالُواْ مَا أَنزَلَ اللّهُ عَلَى بَشَرٍ مِّن شَيْءٍ قُلْ مَنْ أَنزَلَ الْكِتَابَ الَّذِي جَاء بِهِ مُوسَى نُورًا وَهُدًى لِّلنَّاسِ تَجْعَلُونَهُ قَرَاطِيسَ تُبْدُونَهَا وَتُخْفُونَ كَثِيرًا وَعُلِّمْتُم مَّا لَمْ تَعْلَمُواْ أَنتُمْ وَلاَ آبَاؤُكُمْ قُلِ اللّهُ ثُمَّ ذَرْهُمْ فِي خَوْضِهِمْ يَلْعَبُونَ
তারা (কাফিররা) যখন এটা বলল যে, আল্লাহ কোন মানুষের উপর কোন কিছুই নাযিল করেননি, তখন আল্লাহ তা‘আলাকে তারা যথাযথ কদর করেনি। আপনি (তাদেরকে) বলুন, (নবী) মূসা (আঃ) যে কিতাব নিয়ে এসেছিলেন তা কে নাযিল করেছিল? যা ছিল লোকদের জন্য হিদায়াত ও নূর স্বরূপ। এবং যেটাকে তোমরা বিক্ষিপ্ত বিভিন্ন কাগজের আকৃতিতে রেখেছিলে, (যার মধ্য থেকে) কিছু তোমরা প্রকাশ করতে এবং অনেক অংশ গোপন করতে। এবং (যার মাধ্যমে) তোমাদেরকে শেখানো হয়েছে এমন সব কথা যা না তোমরা জানতে আর না তোমাদের বাপ-দাদারা/পূর্বপুরুষরা?
হে নবী! আপনি নিজে ঐ প্রশ্নের জবাবে) এতোটুকু বলে দিন যে, ঐ কিতাব আল্লাহই নাযিল করেছিলেন। অতঃপর তাদেরকে তাদের অবস্থার উপর ছেড়ে দিন, তারা তামাশা করতে থাকুক। (সূরা আন‘আম: ৯১)
নিরক্ষরতার আলোচনা
কুরআনে কারীমে নিরক্ষরতা তথা পড়ালেখা না জানাকেও আসমানী কিতাব না পড়ার সাথে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। কেননা প্রকৃত ইলম তো এই সকল কিতাবেই ছিল।
ইরশাদ হয়েছে-
وَمِنْهُمْ أُمِّيُّونَ لَا يَعْلَمُونَ الْكِتَابَ إِلَّا أَمَانِيَّ وَإِنْ هُمْ إِلَّا يَظُنُّونَ
তাদের (কিতাবীদের) মধ্য হতে কিছু লোক এমনও রয়েছে যারা (তাওরাত) কিতাবের কোন ইলম তো রাখেই না, উল্টো নানারকমের আকাঙ্খা পোষণ করে। আর তাদের অবস্থা তো এই যে, বিভিন্ন ধরনের অলীক ধ্যান-ধারণায় বিশ্বাস রাখে। (সূরা বাকারাহ: ৭৮)
وَمَا آتَيْنَاهُم مِّن كُتُبٍ يَدْرُسُونَهَا وَمَا أَرْسَلْنَا إِلَيْهِمْ قَبْلَكَ مِن نَّذِيرٍ
অথচ আমি তাদেরকে (আরবের মুশরিকদেরকে) ইতিপূর্বে না এমন কোন কিতাব দিয়েছি যা তারা পঠন-পাঠন করতো আর না আপনার পূর্বে (হে নবী) তাদের নিকট সতর্ককারী (কোন নবী) প্রেরণ করেছি। (সূরা সাবা: ৪৪)
লেখার উপকরণ (শ্লেট, কাগজ, কলম, কালি) এর আলোচনা
কুরআনে কারীম থেকে এই বিষয়টিও জানা যায় যে, লেখার জন্য শ্লেট এবং কাগজ ব্যবহৃত হত এবং কলম-কালিসহ শিক্ষা অর্জনের এই সকল মাধ্যম প্রাচীন কাল থেকেই পরিচিত এবং প্রসিদ্ধ ছিল।
পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-
وَلَمَّا سَكَتَ عَن مُّوسَى الْغَضَبُ أَخَذَ الأَلْوَاحَ وَفِي نُسْخَتِهَا هُدًى وَرَحْمَةٌ لِّلَّذِينَ هُمْ لِرَبِّهِمْ يَرْهَبُونَ
আর যখন মূসা (আ.) এর ক্রোধ প্রশমিত হল তখন তিনি শ্লেট/কাষ্ঠফলক তুলে নিলেন এবং তাতে যা লেখা ছিল তার মধ্য হতে ঐ লোকদের জন্য হিদায়াত এবং রহমতের উপাদান ছিল, যারা নিজ প্রতিপালককে ভয় করে। (সূরা আ‘রাফ: ১৫৪)
وَكَتَبْنَا لَهُ فِي الأَلْوَاحِ مِن كُلِّ شَيْءٍ مَّوْعِظَةً وَتَفْصِيلاً لِّكُلِّ شَيْءٍ فَخُذْهَا بِقُوَّةٍ وَأْمُرْ قَوْمَكَ يَأْخُذُواْ بِأَحْسَنِهَا سَأُرِيكُمْ دَارَ الْفَاسِقِينَ
এবং আমি তার জন্য শ্লেটে/ কাষ্ঠফলকে সবধরণের নসীহত এবং সবকিছুর ব্যাখ্যা লিখে দিয়েছি, এবং (এই আদেশ দিয়ে ছিলাম যে,) এখন তাতে (প্রদত্ত বিধানাবলী) দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধর। এবং স্বীয় সম্প্রদায়কে আদেশ দাও যে, যেন তারা তার উত্তম বিধানাবলীর উপর আমল করে।আমি অচিরেই তোমাদের পাপাচারীদের বাসস্থান দেখাবো।(সূরা আ‘রাফ: ১৪৫)
وَلَوْ نَزَّلْنَا عَلَيْكَ كِتَابًا فِي قِرْطَاسٍ فَلَمَسُوهُ بِأَيْدِيهِمْ لَقَالَ الَّذِينَ كَفَرُواْ إِنْ هَـذَا إِلاَّ سِحْرٌ مُّبِينٌ
আর (ঐ কাফিরদের অবস্থা এমন যে,) আমি যদি তোমার প্রতি এমন কোন কিতাব নাযিল করতাম যা কাগজের উপর লিখিত, তারপর তারা এটাকে নিজেদের হাত দিয়ে স্পর্শ করেও দেখতো তবুও যারা কুফরি করেছে তারা এই কথা বলতো যে, এটা সুস্পষ্ট যাদু ছাড়া অন্য কিছু নয়। (সূরা আন‘আম: ০৭)
وَلَوْ أَنَّمَا فِي الْأَرْضِ مِن شَجَرَةٍ أَقْلَامٌ وَالْبَحْرُ يَمُدُّهُ مِن بَعْدِهِ سَبْعَةُ أَبْحُرٍ مَّا نَفِدَتْ كَلِمَاتُ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ
আর জমীনে যত গাছ রয়েছে যদি সেগুলো কলম হয়ে যেত এবং এইযে সমুদ্র এটা ছাড়াও আরও সাতটি সমুদ্র যুক্ত করা হত (আর সেগুলো কালি বানিয়ে আল্লাহর গুণাবলী লেখা হত) তবুও আল্লাহর প্রশংসাবাক্য শেষ হবে না। বাস্তবতা হল এই যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী এবং মহাপ্রজ্ঞাময়। (সমস্ত ক্ষমতার মালিক, সমস্ত প্রজ্ঞারও মালিক) (সূরা লুকমান: ২৭)
قُل لَّوْ كَانَ الْبَحْرُ مِدَادًا لِّكَلِمَاتِ رَبِّي لَنَفِدَ الْبَحْرُ قَبْلَ أَن تَنفَدَ كَلِمَاتُ رَبِّي وَلَوْ جِئْنَا بِمِثْلِهِ مَدَدًا
হে নবী! আপনি লোকদেরকে বলে দিন যে, আমার প্রতিপালকের কথা লেখার জন্য যদি সমুদ্র কালি হয়ে যায় তবুও আমার রবের কথা শেষ হবে না। কেননা তার পূর্বেই সমুদ্র শুকিয়ে যাবে। যদিও আমরা ঐ সমুদ্রের অপূর্ণতাকে পূর্ণ করার জন্য উহার ন্যয় আরও একটি সমুদ্রকে নিয়ে আসি। (সূরা কাহফ: ১০৯)
وَمَا كُنتَ تَتْلُو مِن قَبْلِهِ مِن كِتَابٍ وَلَا تَخُطُّهُ بِيَمِينِكَ إِذًا لَّارْتَابَ الْمُبْطِلُونَ
আর তুমি ইতিপূর্বে না কোন কিতাব পড়তে পারতে আর না তুমি তা নিজ দক্ষিণ হস্তে লিখতে পারতে। যদি এমনটি হত তাহলে বাতিলপন্থীরা অবশ্যই সন্দেহ করতো। (সূরা আনকাবুত: ৪৮)
وَكِتَابٍ مَّسْطُورٍ، فِي رَقٍّ مَّنشُورٍ
আর ঐ কিতাবের কসম যা লেখা হয়েছে উন্মুক্ত পত্রে। (সূরা তূর: ২-৩)
كِتَابٌ مَّرْقُومٌ
একটি লিখিত কাগজ। (সূরা মুতাফফিফীন: ০৯)
কুরআনে কারীমের মধ্যে ঐশী বাণী ছাড়াও লেখালেখির আদেশ
যদিও কুরআনে কারীমের মধ্যে শিক্ষা সম্পর্কিত শব্দগুলো ঐশী বাণীর জন্য লেখা হয়েছে, তবে এটা (ঐশী বাণী) ছাড়াও লেখালেখির কথা উল্লেখ রয়েছে। তার মধ্য থেকে এক স্থানে ঋণ আদায় সম্পর্কিত এবং ক্রয়-বিক্রয় এর লেনদেন সম্পর্কিত এবং অন্য জায়গায় চিঠিপত্র সম্পর্কিত লেখালেখির কথা রয়েছে। আর্থিক লেনদেন সম্পর্কিত লিখিত আয়াত থেকেও লেখালেখির অনেক বিধি-বিধান বের হয়ে আসে, যার আলোচনা এখানে উদ্দেশ্য নয়। তবে সেগুলো থেকে লেখালেখি এবং লিখন শাস্ত্রের সাথে শরীয়তের গভীর সম্পর্ক সুস্পষ্টভাবে বোঝা যায়।
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ إِذَا تَدَايَنتُم بِدَيْنٍ إِلَى أَجَلٍ مُّسَمًّى فَاكْتُبُوهُ وَلْيَكْتُب بَّيْنَكُمْ كَاتِبٌ بِالْعَدْلِ وَلاَ يَأْبَ كَاتِبٌ أَنْ يَكْتُبَ كَمَا عَلَّمَهُ اللّهُ فَلْيَكْتُبْ وَلْيُمْلِلِ الَّذِي عَلَيْهِ الْحَقُّ وَلْيَتَّقِ اللّهَ رَبَّهُ وَلاَ يَبْخَسْ مِنْهُ شَيْئًا فَإن كَانَ الَّذِي عَلَيْهِ الْحَقُّ سَفِيهًا أَوْ ضَعِيفًا أَوْ لاَ يَسْتَطِيعُ أَن يُمِلَّ هُوَ فَلْيُمْلِلْ وَلِيُّهُ بِالْعَدْلِ وَاسْتَشْهِدُواْ شَهِيدَيْنِ من رِّجَالِكُمْ فَإِن لَّمْ يَكُونَا رَجُلَيْنِ فَرَجُلٌ وَامْرَأَتَانِ مِمَّن تَرْضَوْنَ مِنَ الشُّهَدَاء أَن تَضِلَّ إْحْدَاهُمَا فَتُذَكِّرَ إِحْدَاهُمَا الأُخْرَى وَلاَ يَأْبَ الشُّهَدَاء إِذَا مَا دُعُواْ وَلاَ تَسْأَمُوْاْ أَن تَكْتُبُوْهُ صَغِيرًا أَو كَبِيرًا إِلَى أَجَلِهِ ذَلِكُمْ أَقْسَطُ عِندَ اللّهِ وَأَقْومُ لِلشَّهَادَةِ وَأَدْنَى أَلاَّ تَرْتَابُواْ إِلاَّ أَن تَكُونَ تِجَارَةً حَاضِرَةً تُدِيرُونَهَا بَيْنَكُمْ فَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ أَلاَّ تَكْتُبُوهَا وَأَشْهِدُوْاْ إِذَا تَبَايَعْتُمْ وَلاَ يُضَآرَّ كَاتِبٌ وَلاَ شَهِيدٌ وَإِن تَفْعَلُواْ فَإِنَّهُ فُسُوقٌ بِكُمْ وَاتَّقُواْ اللّهَ وَيُعَلِّمُكُمُ اللّهُ وَاللّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ
হে ঈমানদারগণ, যখন তোমরা কোন নির্ধারিত মেয়াদের জন্য ঋণের লেনদেন কর তখন তা লিখে রাখো। আর তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি লিখতে জানে সে যেন ন্যয়সঙ্গত ভাবে পত্র লেখে। আর যে লিখতে জানে সে যেন লিখতে অস্বীকার না করে। যেহেতু আল্লাহ তাকে এই ইলম দিয়েছেন তাই তার জন্য লেখা উচিৎ। আর পত্র সেই ব্যক্তি লেখাবে যার উপর হক সাব্যস্ত হয়েছে। আর তার উচিৎ যেন সে আল্লাহকে ভয় করে, যিনি তার প্রতিপালক। এবং তাতে (হকের মধ্যে) কোন কমতি না করে। হ্যা, তবে যদি ঐ ব্যক্তি যার উপর হক সাব্যস্ত হয়েছে অবুঝ, দুর্বল অথবা (অন্য কোন কারণে) পত্র লেখতে না পারে তাহলে তার তত্ত্বাবধায়ক ন্যয়সঙ্গত ভাবে তা লিখিয়ে দিবে। এবং নিজেদের মধ্যে দুইজন পুরুষকে সাক্ষ্যী বানিয়ে নাও। হ্যাঁ, যদি দুইজন পুরুষ উপস্থিত না থাকে তাহলে একজন পুরুষ এবং দুইজন মহিলা ঐ সাক্ষীদের মধ্য হতে হবে, যাদেরকে তোমরা পছন্দ কর। যতে ঐ দুই মহিলার মধ্যে যদি একজন ভুলে যায় তাহলে অপরজন তাকে স্বরণ করিয়ে দেয়।
আর যখন সাক্ষীদেরকে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য ডাকা হবে তখন যেন তারা অস্বীকার না করে। আর যে লেনদেন নিজস্ব মেয়াদের সাথে সম্পর্কিত চাই সেটা ছোট হোক অথবা বড়, তা লিখতে বিরক্ত হয়ো না, এই বিষয়টি আল্লাহর নিকটে অধিক ন্যয়সঙ্গত। এবং সাক্ষীকে সঠিক রাখার জন্য উত্তম পন্থা, এবং ঐ বিষয়ের অধিক নিকটবর্তী যে, তোমরা ভবিষ্যতে সন্দেহে পতিত হবে না, হ্যাঁ, তবে যদি তোমাদের মধ্যে কোন নগদ লেনদেনের বেচা-কেনা হয় তাহলে তা না লেখার মাঝে তোমাদের জন্য কোন সমস্যা নেই। আর যখন ক্রয়-বিক্রয় কর তখন সাক্ষী বানিয়ে নাও। আর লেখকদের যে কোন কষ্ট দেয়া উচিৎ নয়, এবং সাক্ষীদেরকেও।
যদি এমনটা কর তাহলে তোমাদের পক্ষ থেকে অবাধ্যতা হবে। আর আল্লাহর ভয় অন্তরে রাখো, আল্লাহ তোমাদেরকে শিক্ষা দেন এবং আল্লাহ সমস্ত বিষয়ের জ্ঞান রাখেন। (সূরা বাকারাহ: ২৮২)
• হযরত সুলাইমান (আ.) সাবার রাণীর কাছে যে পত্র প্রেরণ করেছেন, সেই সম্পর্কে কুরআনে কারীমের ভাষ্য হল:
اذْهَب بِّكِتَابِي هَذَا فَأَلْقِهْ إِلَيْهِمْ ثُمَّ تَوَلَّ عَنْهُمْ فَانظُرْ مَاذَا يَرْجِعُونَ، قَالَتْ يَا أَيُّهَا المَلَأُ إِنِّي أُلْقِيَ إِلَيَّ كِتَابٌ كَرِيمٌ، إِنَّهُ مِن سُلَيْمَانَ وَإِنَّهُ بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ، أَلَّا تَعْلُوا عَلَيَّ وَأْتُونِي مُسْلِمِينَ
আমার এই চিঠি নিয়ে যাও এবং তার সামনে পেশ কর। অতঃপর আলাদা হয়ে যাবে এবং দেখবে যে, সে উত্তরে কী করে (বলে)। (সুতরাং হুদহুদ এমনটাই করলো) রাণী (নিজের সভাসদগণকে) বলল: হে গোত্রের নেতারা! আমার সামনে একটি মর্যাদাপূর্ণ পত্র পেশ করা হয়েছে। তা সুলাইমানের পক্ষ থেকে এসেছে এবং তা আল্লাহর নামে শুরু করা হয়েছে, যিনি পরম করুণাময় ও চিরদয়ালু। (তাতে লেখা আছে) যে, আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করো না। এবং অনুগত হয়ে আমার কাছে চলে আসো। (সূরা নামল: ২৮-৩১)
• কিয়ামতের দিন আসমান গুটিয়ে নেয়ার বিষয়টি বোঝাতে যেই উপমা ব্যবহার করা হয়েছে, তার সম্পর্কও লেখালেখির সাথে। বালাগাতের কায়দা অনুযায়ী مشبه এর চেয়ে مشبه به বেশি স্পষ্ট হয়ে থাকে। অর্থাৎ যেই বস্তুর সাথে تشبيه দেয়া হয়, সেটি মুখাতাবের স্মরণে উদ্দিষ্ট বস্তু থেকে বেশি স্পষ্ট থাকে। আর কুরআনে কারীমের প্রথম সম্বোধন আরবের কাফিরদেরকে করা হয়েছে।
ইরশাদ হয়েছে-
يَوْمَ نَطْوِي السَّمَاء كَطَيِّ السِّجِلِّ لِلْكُتُبِ كَمَا بَدَأْنَا أَوَّلَ خَلْقٍ نُّعِيدُهُ وَعْدًا عَلَيْنَا إِنَّا كُنَّا فَاعِلِينَ
যেদিন আকাশ গুটিয়ে নিবো লিখিত কাগজ গুটিয়ে ফেলার মতো। যেভাবে আমি প্রথম সৃষ্টির সূচনা করেছি সেভাবে পুনরায় সৃষ্টি করবো। এটা আমার প্রতিশ্রুতি, আমি তা অবশ্যই করবো। (সূরা আম্বিয়া: ১০৪)
সার কথা
চিন্তা করুন! উল্লিখিত আয়াতসমূহে শিক্ষা সম্পর্কে কতগুলো শব্দ এসেছে-
পঠন(درس) তালীম (تعليم) পাঠন (قراءة) পড়া (تلاوة) তিলাওয়াত করা (حفظ) মুখস্থ করা (كتابة) লেখা (خط) চিঠি (كاتب) লেখক (إملاء) লেখানো (لوح) শ্লেট (قرطاس) কাগজ (ورقة) নরম কাগজ (كتاب) কিতাব (سجل) পুস্তিকা (سطر) লাইন (مرقوم) ক্রমানুসারে লেখা (نسخة) নকল করে লেখা(قلم) কলম (مداد) কালি, (কালো কিংবা সাদা)
কুরআনে কারীমের অনেক স্থানে এ বিষয়ে গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা হওয়ায় ইসলামে ইলম শিক্ষা করা এবং শিক্ষা দেওয়ার গুরুত্ব বুঝে আসে। কিন্তু এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ কথা এই যে, এ সকল শব্দ এবং পূর্বাপর আলোচনা অহী ও ইলমে দ্বীন সম্পর্কিত।
এখান থেকে দ্বিতীয় আরেকটি বিষয় বুঝে আসে যে, ইসলামে ইলম দ্বারা মূলগতভাবে ইলমে শরীয়ত উদ্দেশ্য।
তৃতীয় কথা এই যে, কুরআন নাযিল হওয়া পর্যন্ত পঠন-পাঠন এবং তার উপকরণ যথেষ্ট পরিমাণ পরিচিত ও প্রসিদ্ধ ছিল। বিশেষতঃ উলূমে ইলাহিয়্যাহ সম্পর্কিত পড়াশোনা কোন অপরিচিত বিষয় ছিল না।
****************
চলবে...ইনশা আল্লাহ
সূত্র: নাওয়ায়ে গাজওয়ায়ে হিন্দ ম্যাগাজিন থেকে অনূদিত
অনুবাদক:
আবু দুজানা11, মেম্বার, দাওয়াহ ইলাল্লাহু ফোরাম
আইডি লিঙ্ক:https://82.221.139.217/member.php?4102-
অনুবাদক:
আবু দুজানা11, মেম্বার, দাওয়াহ ইলাল্লাহু ফোরাম
আইডি লিঙ্ক:https://82.221.139.217/member.php?4102-
Comment