কখনো কি শিরকাসিয়া (Circassia) নামটি শুনেছেন? গত ২১ মে পার হয়ে গেল শিরকাসিয়ান গণহত্যা ও গণনির্বাসন দিবস। শিরকাসিয়া ককেশাসের (চেচনিয়া-দাগেস্তান-জর্জিয়া) উত্তর-পশ্চিমাংশে কৃষ্ণ সাগরের উপকূলবর্তী অঞ্চল। অধিকাংশ শিরকাসিয়ানই হলেন হানাফি মাজহাবের সুন্নী মুসলিম। শিরকাসিয়ানরা চেচেন, উসমানীয় তুর্কি আর ক্রিমিয়ান তাতারদের দাওয়াতে মুসলিম হয়।
শিরকাসিয়ার অবস্থান উনবিংশ শতাব্দীতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তাদের অবস্থান ছিল তিনটি বিশাল সাম্রাজ্যঃ উসমানী, পারস্য আর রাশিয়ানদের মাঝে। কিন্তু স্বাধীনচেতা হওয়ায় তারা একরকম স্বাধীন ছিল। যদিও তাদের উসমানীয় খিলাফতের প্রতি বায়াহ ছিল, তবুও সেখানে উসমানীয়রা কোন ওয়ালি (গভর্নর) নিয়োগ দেননি। সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন স্থানীয় গোত্রপতিরা। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগে এসে সাম্রাজ্যবাদী রাশিয়া এ অঞ্চলকে দখল করার তোড়জোড় শুরু করে, এ অঞ্চল দখল করতে পারলে কৃষ্ণ সাগরের একটা বড় অংশের নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে চলে যেত। রাশিয়া-শিরকাসিয়ান যুদ্ধ তৎকালীন কনভেনশনাল ওয়্যারফেয়ারের মতো ছিলোনা। রাশিয়ার লক্ষাধিক সৈন্যকে খোলা ময়দানে মোকাবেলার মতো জনবল শিরকাসিয়ানদের ছিলোনা। গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে তারা রাশিয়ানদের পরাস্ত করে। এর বিপরীতে রাশিয়ানরা একস্থানে দুর্গ তুলতো; আর দুর্গে কোনরূপ গেরিলা হামলা হলে পাশের কোন গ্রামে গিয়ে সবাইকে হত্যা করে পুরো গ্রামে আগুন লাগিয়ে ধ্বংস করে দিতো। ১৮১০ সালে এরুপ ২০০ গ্রাম ধ্বংস করে দেয়া হয়। শিরকাসিয়ানদের ব্যর্থতার অন্যতম মূল কারণ ছিল তাদের মধ্যে অনৈক্য ও বিভিন্ন গোত্রের মাঝে সদ্ভাবের অভাব। উসমানীয়রা একবার একজনকে প্রেরণ করেছিল ওয়ালি হিসেবে; সেই ব্যক্তি চেষ্টা করেছিলেন বিভিন্ন গোত্রকে উসমানীয় খিলাফার ব্যানারে একত্র করে রাশিয়ার বিরুদ্ধে একটা সুসংবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার। কিন্তু তিনি ব্যর্থ হন।
১৮২৮-২৯ সালের যুদ্ধে উসমানীয়রা রাশিয়ার নিকট পরাজিত হলে কৃষ্ণ সাগরে শিরকাসিয়ার সকল বন্দর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। শিরকাসিয়ানরা রাশিয়ার মোকাবেলায় একা হয়ে যায়। তারপরও তারা দাগেস্তানের ইমাম শামিল (রঃ) এর সহযোগিতায় অনেক বছর রাশিয়ানদের আটকে রাখতে সক্ষম হন। সর্বশেষ ২১ মে ১৮৬৪ সালে তাদের চূড়ান্ত পরাজয় হয়। হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়। রাশিয়ার অফিশিয়াল জারিস্ট ডকুমেন্টে উল্লেখ করা হয় যে প্রায় ৪ লাখ শিরকাসিয়ান নিহত হন। ২০১৪ সালে শীতকালীন অলিম্পিকের আয়োজক ছিল রাশিয়া। সোচি অলিম্পিক নামে খ্যাত শিরকাসিয়ার সোচিতে তারা যে অলিম্পিক ভিলেজ নির্মাণ করেছিল তা ছিল সেই গণহত্যার গণকবরের উপর।
জীবিতদের ক্ষেত্রে রাশিয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের বসবাস অনুপোযোগী সাইবেরিয়ায় গণনির্বাসন দেয়া। আরও গণহত্যা থামাতে উসমানীয়রা রাশিয়াকে অনুরোধ করে তাদের যেন উসমানীয় খিলাফায় মাইগ্রেট করার সুযোগ দেয়া হয়। জারকে তার সেনাপতিরা বলে, “এসব লোকেরা মৃত্যুর জন্য মাথা পেতে দিবে তবু রাশিয়ার প্রতি আনুগত্য স্বীকার করবেনা”, জার রাজি হয়। উসমানীয়রা নৌযান সরবরাহ করে। কিন্তু তার সংখ্যা ছিল অপ্রতুল। কোন কোন জাহাজে ১৮০০ মানুষ পর্যন্ত একসাথে ওঠে। গাদাগাদি করে অমানবিক পরিস্থিতে তারা কৃষ্ণ সাগর পাড়ি দেয়, অভারলোড হয়ে অনেক নৌকা সাগরেই ডুবে যায়। অনেকটা আমাদের সময়ের রোহিঙ্গা বা ইউরোপে ম্যাস মাইগ্রেশনের মত। রাশিয়ার ডকুমেন্ট অনুযায়ী ৪ লাখ ৯৭ হাজার শিরকাসিয়ান আনাতোলিয়ায় (তুরস্ক) নির্বাসিত হয় আর মাত্র আশি হাজার সেখানে বাকী থাকে। এসব মুহাজিররা কসভো, সিরিয়া, ইরাক,জর্ডানসহ উসমানীয় খিলাফতের বিভিন্ন স্থানে সেটেল্ড হয়। জর্ডানের রাজধানী আম্মানের গোড়াপত্তন হয় এই শিরকাসিয়ান মুহাজিরদের হাত ধরে। অনেক শিরকাসিয়ান পরবর্তীতে তুরস্কে বড় বড় পদে আসীন হন।
বর্তমানে শিরকাসিয়ান জনসংখ্যার প্রায় ৯০ ভাগ বসবাস করেন তুরস্কে, মাত্র কয়েক লাখ এখন রাশিয়ার অধীনে থাকেন। রাশিয়া সে এলাকায় অনুগত আর্মেনীয়/জর্জিয়ান খ্রিষ্টানদের নিকট জমি বন্টন করে দেয়। যে ভূমিতে মুসলিমেরা ছিল প্রবল , প্রতাপ সে এলাকায় তারা আজ সংখ্যালঘু। তাদের সে রাষ্ট্রকে আনুগত্য করতে বাধ্য করা হয় যে তাদের লক্ষ লক্ষ পূর্বপুরুষকে হত্যা করেছে। ঋণের খাতায় অনেক নাম; সেই আন্দালুসিয়া থেকে মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্র।
source: https://www.facebook.com/beroshik13/...04682656826013
শিরকাসিয়ার অবস্থান উনবিংশ শতাব্দীতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তাদের অবস্থান ছিল তিনটি বিশাল সাম্রাজ্যঃ উসমানী, পারস্য আর রাশিয়ানদের মাঝে। কিন্তু স্বাধীনচেতা হওয়ায় তারা একরকম স্বাধীন ছিল। যদিও তাদের উসমানীয় খিলাফতের প্রতি বায়াহ ছিল, তবুও সেখানে উসমানীয়রা কোন ওয়ালি (গভর্নর) নিয়োগ দেননি। সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন স্থানীয় গোত্রপতিরা। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগে এসে সাম্রাজ্যবাদী রাশিয়া এ অঞ্চলকে দখল করার তোড়জোড় শুরু করে, এ অঞ্চল দখল করতে পারলে কৃষ্ণ সাগরের একটা বড় অংশের নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে চলে যেত। রাশিয়া-শিরকাসিয়ান যুদ্ধ তৎকালীন কনভেনশনাল ওয়্যারফেয়ারের মতো ছিলোনা। রাশিয়ার লক্ষাধিক সৈন্যকে খোলা ময়দানে মোকাবেলার মতো জনবল শিরকাসিয়ানদের ছিলোনা। গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে তারা রাশিয়ানদের পরাস্ত করে। এর বিপরীতে রাশিয়ানরা একস্থানে দুর্গ তুলতো; আর দুর্গে কোনরূপ গেরিলা হামলা হলে পাশের কোন গ্রামে গিয়ে সবাইকে হত্যা করে পুরো গ্রামে আগুন লাগিয়ে ধ্বংস করে দিতো। ১৮১০ সালে এরুপ ২০০ গ্রাম ধ্বংস করে দেয়া হয়। শিরকাসিয়ানদের ব্যর্থতার অন্যতম মূল কারণ ছিল তাদের মধ্যে অনৈক্য ও বিভিন্ন গোত্রের মাঝে সদ্ভাবের অভাব। উসমানীয়রা একবার একজনকে প্রেরণ করেছিল ওয়ালি হিসেবে; সেই ব্যক্তি চেষ্টা করেছিলেন বিভিন্ন গোত্রকে উসমানীয় খিলাফার ব্যানারে একত্র করে রাশিয়ার বিরুদ্ধে একটা সুসংবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার। কিন্তু তিনি ব্যর্থ হন।
১৮২৮-২৯ সালের যুদ্ধে উসমানীয়রা রাশিয়ার নিকট পরাজিত হলে কৃষ্ণ সাগরে শিরকাসিয়ার সকল বন্দর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। শিরকাসিয়ানরা রাশিয়ার মোকাবেলায় একা হয়ে যায়। তারপরও তারা দাগেস্তানের ইমাম শামিল (রঃ) এর সহযোগিতায় অনেক বছর রাশিয়ানদের আটকে রাখতে সক্ষম হন। সর্বশেষ ২১ মে ১৮৬৪ সালে তাদের চূড়ান্ত পরাজয় হয়। হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়। রাশিয়ার অফিশিয়াল জারিস্ট ডকুমেন্টে উল্লেখ করা হয় যে প্রায় ৪ লাখ শিরকাসিয়ান নিহত হন। ২০১৪ সালে শীতকালীন অলিম্পিকের আয়োজক ছিল রাশিয়া। সোচি অলিম্পিক নামে খ্যাত শিরকাসিয়ার সোচিতে তারা যে অলিম্পিক ভিলেজ নির্মাণ করেছিল তা ছিল সেই গণহত্যার গণকবরের উপর।
জীবিতদের ক্ষেত্রে রাশিয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের বসবাস অনুপোযোগী সাইবেরিয়ায় গণনির্বাসন দেয়া। আরও গণহত্যা থামাতে উসমানীয়রা রাশিয়াকে অনুরোধ করে তাদের যেন উসমানীয় খিলাফায় মাইগ্রেট করার সুযোগ দেয়া হয়। জারকে তার সেনাপতিরা বলে, “এসব লোকেরা মৃত্যুর জন্য মাথা পেতে দিবে তবু রাশিয়ার প্রতি আনুগত্য স্বীকার করবেনা”, জার রাজি হয়। উসমানীয়রা নৌযান সরবরাহ করে। কিন্তু তার সংখ্যা ছিল অপ্রতুল। কোন কোন জাহাজে ১৮০০ মানুষ পর্যন্ত একসাথে ওঠে। গাদাগাদি করে অমানবিক পরিস্থিতে তারা কৃষ্ণ সাগর পাড়ি দেয়, অভারলোড হয়ে অনেক নৌকা সাগরেই ডুবে যায়। অনেকটা আমাদের সময়ের রোহিঙ্গা বা ইউরোপে ম্যাস মাইগ্রেশনের মত। রাশিয়ার ডকুমেন্ট অনুযায়ী ৪ লাখ ৯৭ হাজার শিরকাসিয়ান আনাতোলিয়ায় (তুরস্ক) নির্বাসিত হয় আর মাত্র আশি হাজার সেখানে বাকী থাকে। এসব মুহাজিররা কসভো, সিরিয়া, ইরাক,জর্ডানসহ উসমানীয় খিলাফতের বিভিন্ন স্থানে সেটেল্ড হয়। জর্ডানের রাজধানী আম্মানের গোড়াপত্তন হয় এই শিরকাসিয়ান মুহাজিরদের হাত ধরে। অনেক শিরকাসিয়ান পরবর্তীতে তুরস্কে বড় বড় পদে আসীন হন।
বর্তমানে শিরকাসিয়ান জনসংখ্যার প্রায় ৯০ ভাগ বসবাস করেন তুরস্কে, মাত্র কয়েক লাখ এখন রাশিয়ার অধীনে থাকেন। রাশিয়া সে এলাকায় অনুগত আর্মেনীয়/জর্জিয়ান খ্রিষ্টানদের নিকট জমি বন্টন করে দেয়। যে ভূমিতে মুসলিমেরা ছিল প্রবল , প্রতাপ সে এলাকায় তারা আজ সংখ্যালঘু। তাদের সে রাষ্ট্রকে আনুগত্য করতে বাধ্য করা হয় যে তাদের লক্ষ লক্ষ পূর্বপুরুষকে হত্যা করেছে। ঋণের খাতায় অনেক নাম; সেই আন্দালুসিয়া থেকে মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্র।
source: https://www.facebook.com/beroshik13/...04682656826013
Comment