Announcement

Collapse
No announcement yet.

একাত্তরের ইতিহাস ; ভূমিকা

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • একাত্তরের ইতিহাস ; ভূমিকা

    বাংলাদেশের ইতিহাসে একাত্তরের গুরুত্ব অপরিসীম। ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসন অবসানের মাত্র ২৩ বছরে বাংলাদেশীরা দু’টি ভিন্ন পরিচয় পেয়েছে। এতো স্বল্প সময়ে এরূপ পরিচিতি পরিবর্তনের ইতিহাস মানব-ইতিহাসে বিরল। পূর্বের পরিচয়টি ছিল বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিক রূপে। আজকের বাংলাদেশ তখন পরিচিত ছিল পাকিস্তানের সর্ববৃহৎ প্রদেশ পূর্ব পাকিস্তান রূপে। ব্রিটিশের গোলামী থেকে স্বাধীনতা প্রাপ্তির দিনটি ছিল ১৪ই আগষ্ট, ১৯৪৭ সাল। বাংলাদেশ তার বর্তমান পরিচিতি পায় একাত্তরে; এবং সেটি পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে। তবে একাত্তরে বাংলাদেশীদের শুধু পরিচিতি ও মানচিত্র পাল্টে যায়নি, পাল্টে গেছে তাদের চিন্তা-চেতনা, ইতিহাস, মূল্যবোধ ও রাজনৈতিক রঙ্গমঞ্চের অনেক কিছুই। ১৯৪৭’য়ে স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল যোদ্ধা ছিলেন উপমহাদেশের মুসলিমগণ; প্রধান ভূমিকায় ছিল বাঙালী মুসলিমগণ। স্বাধীনতা অর্জনের সে লড়ায়ে অন্য ধর্ম ও অন্য দেশের লোকদের কোন দখলদারি ছিলনা। কিন্তু একাত্তরের পট পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ নায়ক রূপে আবির্ভুত হয়েছে ভারতীয় হিন্দুগণ –যারা প্রবল শত্রু ছিল ১৯৪৭’য়ের স্বাধীনতার। তাদের সাহায্য ছাড়া একাত্তরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধজয় অসম্ভব ছিল। বাংলাদেশের জন্মে এটি এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সে সুবাদে ভারত ছেয়ে আছে বাংলাদেশের রাজনীতি, শিক্ষা-সংস্কৃতি ও অর্থনীতিসহ নানা অঙ্গণে। কারণ, জন্মে যার হাত থাকে তাকে কি এতো সহজে অস্বীকার করা যায়? বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাসে এটি এক বিশাল বাস্তবতা। যারা নিজ সামর্থ্যে স্বাধীন হয়, বিদেশের প্রতি তাদের সে দায়বদ্ধতা থাকে না। স্বাধীনতার স্বাদ ও আনন্দটি তখন ভিন্নতর হয়।

    বাংলাদেশের ইতিহাসের আরেক বাস্তবতা হলো, ১৯৪৭ সালের স্বাধীনতা আন্দোলনে ভারতীয় হিন্দুদের অবস্থান ছিল শত্রু পক্ষে। তখন তাদের প্রচণ্ড প্রচেষ্টা ছিল আজকের বাংলাদেশকে অখণ্ড ভারতের পদতলে বন্দী রাখা। বাঙালী মুসলিমের স্মৃতি থেকে সে সত্যটি আদৌ বিলুপ্ত হবার নয়। সামান্য ২৩ বছর পর বাঙালী মুসলিমের জীবনে শুরু হয় রাজনীতির সম্পূর্ণ এক বিপরীত ধারা। চলন্ত গাড়ী হঠাৎ মোড় নিলে দুর্ঘটনা ঘটে; তেমনি দেশের রাজনীতিতে ত্বরিৎ মোড় পরিবর্তনেও দেখা দেয় প্রচণ্ড অস্থিরতা। বাংলাদেশের রাজনীতিতে আজ যে সংঘাত ও নির্মূলের সুর –সেটির মূল কারণতো একাত্তর। একাত্তরের ইতিহাস থেকে শিক্ষণীয় বিষয় যেমন অনেক, গবেষণার বিষয়ও অনেক। যুদ্ধ প্রতি দেশেই মৃত্যু ও ধ্বংস আনে। ঘরে আগুণ লাগলে কেন আগুণ লাগলো -সেটি অজানা থাকলে সে ঘরে বার বার আগুণ লাগে। তেমনি দেশে যুদ্ধ এলে জানতে হয়, কেন যুদ্ধ এল। নইলে মৃত্যু ও ধ্বংস নিয়ে সেদেশে যুদ্ধ বার বার আসে। তখন রাজনীতির উত্তাপও কমে না। সেরূপ একটি লাগাতর আত্মঘাত থেকে বাঁচার জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো সঠিক ইতিহাসচর্চা। বাংলাদেশে সে কাজটিই যথার্থ ভাবে হয়নি। ফলে একাত্তরের ইতিহাস থেকে শিক্ষালাভের কাজটিও হয়নি।

    ইতিহাস লেখার কাজটি মূলত আদালতে সাক্ষ্য দেয়ার কাজ। এবং আদালতের বিচারকদের মঞ্চে যাদের অবস্থান তারা হলো সাধারণ পাঠক ও জনগণ। ফলে ইতিহাস লেখার কাজে ঈমানের বড় পরীক্ষা হয় লেখকদের। আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়ার পাপটি ভয়ানক। ইসলামে এটি কবিরা গুনাহ। তেমনি ভয়ানক পাপ হলো ইতিহাসের বইয়ে মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া। নবীজী বলেছন, মিথ্যাই সকল পাপ বা সর্বপ্রকার দুর্বৃত্তির জননী। অথচ বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমের দেশে সে পাপটিই অধিক হয়েছে। ফলে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে ৩০ লাখ নিহতের মিথ্যার ন্যায় অসংখ্য মিথ্যা। মিথ্যা বর্জনের সাথে ইসলামে শ্রেষ্ঠ ইবাদতটি হলো সত্য কথা বলা এবং সর্বশক্তি দিয়ে মিথ্যার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো। সত্য সাক্ষ্য না পেলে অতি বিজ্ঞ ও অভিজ্ঞ বিচারগণও সুবিচার করতে ব্যর্থ হন। তখন ব্যর্থ হয় সমগ্র বিচার ব্যবস্থা। নিরপরাধ মানুষকেও তখন ফাঁসিতে ঝুলতে হয়। তেমনি ইতিহাসের বইয়ে সত্য বর্ণনা না থাকলে অবিচার হয় ইতিহাসের ন্যায়নিষ্ঠ নায়কদের মূল্যায়নে। তখন প্রকৃত বীরগণ নিন্দিত ও ঘৃনীত হয়; এবং শ্রেষ্ঠ মানুষ রূপে প্রতিষ্ঠা পায় অতি দুর্বৃত্তরা। ফিরাউন-নমরুদদের নেতা বা খোদা রূপে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার কারন তো সেটিই।

    মিথ্যাচারের বড় বিপদ, সেটি কেড়ে নয় সত্যকে চেনা ও সত্যের পক্ষে শক্ত ভাবে দাঁড়ানোর সামর্থ্য। পানাহারের সামর্থ্য পশু-পাখিরও থাকে। কিন্তু সত্যকে চেনার গুণটি একমাত্র বিবেকমান মানবের। এটিই মানব জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ গুণ। সে গুণটি বাড়ানোয় যে বিনিয়োগ –সেটিই ব্যক্তি ও রাষ্ট্রীয় জীবনে শ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ। মহান আল্লাহতায়ালা যুগে যুগে নবী-রাসূল ও আসমানি কিতাব পাঠিয়েছেন মূলত মানবের সে গুণটি বাড়াতে। নামায-রোযা, হজ-যাকাত ফরজ করার আগে ইসলামে তাই পবিত্র কোরআনের জ্ঞানর্জনকে ফরজ করা হয়েছে। নবী-রাসূলদের পর সে মিশন নিয়ে কাজ করার দায়ভার প্রতিটি ঈমানদারের। নব জীবনের সবচেয়ে বড় অযোগ্যতাটি হলো মিথ্যার ভিড় থেকে সত্যকে চেনার অযোগ্যতা। এ অযোগ্যতার কারণে মিথ্যাচারীগণ ব্যর্থ হয় মহান নবী-রাসূলদের চিনতে।এবং ব্যর্থ হয় তাদের প্রচারিত সত্য দ্বীনের পক্ষ নিতে। তখন মিথ্যাচারী ও স্বৈরাচারী দুর্বৃত্তদের সম্মান করাটিই সামাজিক রীতি ও সংস্কৃতিতে পরিণত হয়।এমন সমাজে হালাকু-চেঙ্গিজ-হিটলারের ন্যায় নৃশংস ব্যক্তিগণও বিশাল বিশাল রাজনৈতিক দল ও সেনাবাহিনী গড়ে তুলতে পারে। মানব জীবনে সে অযোগ্যতায় লাগাতর বৃ্দ্ধি ঘটানোই শয়তান ও তার পক্ষের শক্তির মূল মিশন। সে লক্ষ্য পূরণে তারা মানুষকে পবিত্র কোরআনের জ্ঞান চর্চা থেকে দূরে সরায়। বাংলাদেশের ন্যায় মুসলিম দেশগুলিতে সে কাজটি করছে ইসলামের শত্রুশক্তি। এবং দেশটিতে ইতিহাস রচনার নামে বেড়েছে প্রচণ্ড মিথ্যাচর্চা।

    মিথ্যার নির্মূলে ও সত্যের প্রতিষ্ঠায় ইতিহাসের বইয়ের কাজটি বিশাল। সেটি শুধু সত্য ঘটনাগুলি তুলে ধরা নয়; বরং ঘটনার আরো গভীরে যাওয়া। মানুষের কর্ম –তা যত সুকর্ম বা কুকর্মই হোক, তার পিছনে নানারূপ দর্শন বা চেতনা কাজ করে। সেগুলিও তাই ইতিহাসের অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। হিটলারের গ্যাস চেম্বার থেকে তার ফ্যাসিবাদী বর্বরতা এবং নাগাসাকি ও হিরোসীমায় আনবিক বোমার ধ্বংসযজ্ঞ থেকে মার্কিনী সাম্রাজ্যবাদকে আলাদা করা যায় না। একাত্তরেও বাংলাদেশে বহু যুদ্ধাপরাধ ও বহু নৃশংসতা ঘটেছে। সে নৃশংসতার সাথে শুধু ব্যক্তি বা সংগঠন জড়িত নয়, তাদের মনের ভূবনে জুড়ে বসা দর্শন ও চেতনাও জড়িত। এ বইয়ে আলোচিত হয়েছে সেসব দর্শন ও চেতনার বিষয়গুলিও।

    একাত্তরের ইতিহাস’য়ের প্রথম সংস্করণ লেখার পর ইন্টারনেট ওয়েব সাইট য়ে দেয়া হয়েছিল ২০০৬ সালে। এরপর বহু পাঠকের মনে নানারূপ প্রশ্ন এবং একাত্তরের বহু বিষয়ে জানবার গভীর আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়, বিশেষ করে একাত্তরের পর জন্ম নেয়া নতুন প্রজন্মের মনে। ফলে প্রয়োজন দেখা দেয় ঐসব বিষয় নিয়ে নতুন গবেষণার। বিগত প্রায় ১০ বছর ধরে লাগাতর সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে ইন্টারনেটের ই-বইকে। বইটির সর্বশেষ সংস্করণ উপরুক্ত ওয়েব সাইটে দেয়া আছে। তবে বই রূপে বাজারে পেশ করার দাবী ছিল অনেকের। সে প্রবল ইচ্ছাটি ছিল আমারও। সে ইচ্ছাটি পূরণ করতেই ২০১৬ সালের শুরুতে বই আকারে প্রকাশিত হতে যাচ্ছে। এ বইটি লেখার কাজে আমাকে প্রয়োজনীয় বই দিয়ে সাহায্য করেছেন মরহুম কবি আবুল হায়াত জালালাবাদী।এরূপ সহযোগিতার জন্য আমি তার কাছে কৃতজ্ঞ। মহান আল্লাহতায়ালার কাছে আকুল প্রার্থনা, তিনি যেন তাঁর এ নগন্য বান্দাকে আমৃত্যু নির্ভয়ে সত্যের পক্ষ্যে সাক্ষ্য দেয়ার সামর্থ্য দেন। যেন সামর্থ্য দেন, প্রতি পদে মিথ্যা থেকে বাঁচার। দয়াময় মহান আল্লাহতায়ালা যেন তাওফিক দেন, দুনিয়া থেকে তাঁর দরবারে মাগফিরাত লাভের যোগ্যতা নিয়ে বিদায় নেওয়ার। মহান রাব্বুল আ’লামীনের কাছে আকুল আকুতি, সত্যের পক্ষে সাক্ষী দেয়ার এ ক্ষুদ্র প্রয়াসটুকুকে তিনি যেন করুণা লাভের মাধ্যম রূপে কবুল করেন, এবং আমার ভূলত্রুটিকে যেন মাফ করে দেন। আন্তরিক দোয়া চাই হৃদয়বান পাঠকদের থেকেও।

  • #2
    নিয়মিত চাই । জানা যাবে নব্ব দাজ্জালরা কিভাবে জুলুমকে চেতনা বানিয়ে জনগনের উপর চাপিয়ে দিয়েছে ।
    আল্লাহ আমাদের ঈমানী হালতে মৃত্যু দান করুন,আমিন।
    আল্লাহ আমাদের শহিদী মৃত্যু দান করুন,আমিন।

    Comment


    • #3
      জাযাকাল্লাহ!

      Comment


      • #4
        লেখাগুলো ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।

        Comment


        • #5
          জাজাকাল্লাহ ভাই

          Comment

          Working...
          X