Announcement

Collapse
No announcement yet.

অধ্যায়ঃ ২২- একাত্তরে নারী ধর্ষণ। পর্ব ২

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • অধ্যায়ঃ ২২- একাত্তরে নারী ধর্ষণ। পর্ব ২

    বাংলাদেশী বইপুস্তকে একাত্তরের নারী ধর্ষণ

    একাত্তরের যুদ্ধের উপর বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারতে অনেকেই বই লিখেছেন। আত্মকথা মূলক বই লিখেছেন পাকিস্তানের কিছু উচ্চপদস্থ্ সামরিক অফিসার। তবে একাত্তরের উপর লেখালেখী বাংলাদেশে ভিন্ন রূপ নিয়েছে -পরিণত হয়েছে কুঠির শিল্পে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বাংলাভাষায় লেখা বইয়ের মান অতি নিম্ন মানের এবং বানোয়াট গল্পগুজবে পরিপূর্ণ। এসব বই পড়ে বিদেশী গবেষকদের হোঁচট খেতে হয়। তিরিশ লাখ নিহত এবং তিন লাখ ধর্ষিত হওয়ার মত তথ্য বাংলায় লেখা বইয়ে হাজার হাজার বার লেখা হয়েছে এবং সেটি কোন রূপ গবেষণা না করেই। ফলে একাত্তরে কি ঘটেছে সেটির উপর সঠিক ধারণা এসব বই থেকে পাওয়া অসম্ভব। এমনকি দরিদ্র জনগণের রাজস্বের অর্থে বাংলাদেশের সরকার কর্তৃক প্রকাশিত ইতিহাসের বই যে কতটা মিথ্যায় পরিপূর্ণ সে প্রমাণই কি কম? এমনকি ধর্ষণের ন্যায় গুরুতর বিষয়েও মিথ্যা কেচ্ছাকাহিনীর স্থান দেয়া হয়েছে এসব বইয়ে। তার কিছু নমুনা দেয়া যাকঃ বাংলাদেশের সরকার কর্তৃক প্রকাশিত স্বাধীনতার যুদ্ধের দলিলপত্র (১৯৯৯) গ্রন্থের অষ্টম খন্ডে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে জনৈক রাবেয়া খাতুনের কথা। বাঙালী মহিলাদের ধর্ষণের বিষয়ে সে যে কাহিনী বলেছে সেটিই বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে অধিক আলোচিত বিবরণ। পরীক্ষা করে দেখা যাক সে যা কিছু বলেছে তা কতটা ভুয়া এবং কতটা বিশ্বাসযোগ্য। সে একজন নিরক্ষর মহিলা। নিজের নাম স্বাক্ষরের সামর্থ্য তার ছিল না। তাই তাকে টিপসই দিতে হত। রাবেয়া খাতুনের নিজের ভাষ্য অনুযায়ী সে তখন রাজারবাগ পুলিশ লাইনে ঝাড়ুদারের কাজ করতো। সেখানে সে কাজ করেছে যুদ্ধকালীন পুরো সময়টিই ধরে। তার কথা, সে নিজে ধর্ষিতা হয়েছে ২৬শে মার্চে যখন রাজারবাগ পুলিশ লাইন পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যরা দখল করে নেয়। এবং ধর্ষণের পর একমাত্র তাকেই একাত্তরের বাকি সময়টা ঝাড়ুদারের কাজে রাখা হয়। প্রশ্ন হলো, যে মহিলা যাদের দ্বারা ধর্ষিতা হলো তাদের অফিসে দীর্ঘ নয় মাস লাগাতর ঝাড়ুদার রূপে কাজের প্রেরণা বা মনবল পায় কোত্থেকে? সেটি যদি ধর্ষণপুরিই হয়ে থাকে এবং সেখানে অবস্থানরত সৈনিকেরা যদি ধর্ষণে এতোটা বেপরোওয়া হয়ে থাকে তবে সেখানে বার বার ধর্ষিতা হওয়ার সম্ভাবনাই কি বেশী নয়? সেটি তো এক ভয়াবহ অবস্থা। যে কোন কাণ্ডজ্ঞান সম্পন্ন মহিলা কি সেখান থেকে যে কোন ভাবে পালাতো না? অথচ সেখানে সে দিনের পর দিন কাজ করেছে। তাছাড়া রাজারবাগ একটি বিশাল এলাকা। অনেকগুলি বিল্ডিং সেখানে। মাত্র একজন ঝাড়ুদার ৯ মাস সেখানে লাগাতর কাজ করলো সেটিইও কতটা বিশ্বাসযোগ্য?

    রাবেয়া খাতুনের দাবী, সে স্বচোখে দেখেছে, সেখানে ট্রাকভর্তি করে বাঙালী মহিলাদের আনা হতো, বন্দী রাখা হতো এবং মাসের পর মাস ধর্ষণ করা হতো। তবে তার এ বিবরণে কোন সংখ্যার উল্লেখ নাই এবং তারিখেরও উল্লেখ নাই। রাবেয়া খাতুনের মতে “পাঞ্জাবী সৈন্যরা মহিলাদের আনতো স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও অভিজাত আবাসিক এলাকা থেকে।” তাদের অধিকাংশের হাতে বই ও গায়ে অলংকার থাকতো। তার বিবরণ মতে, “পাক-সেনারা এসব মুহিলাদের চুম্বন করতো, উলঙ্গো করত, ধর্ষণ করতো এবং নানারূপ কুরুচীপূর্ণ আওয়াজ করতো এবং মাঝে মাঝে অট্রহাসীও দিত।” সে আরো বর্ণনা দিয়েছে,“তিন তলা বিল্ডিংয়ে সারিবদ্ধ ভাবে এসব মহিলাদের উলঙ্গ করে রাখা হত। মহিলাদের মাথার চুল বারান্দায় টানানো তার ও লোহার রডের সাথে বেঁধে উলঙ্গ-অবস্থায় সারিবদ্ধ ভাবে ঝুলিয়ে দেয়া হত। পাঞ্জাবী সৈন্যরা কাজে যাওয়ার সময় এবং কাজ থেকে ফেরার সময় তাদের উপর যৌন নিপীড়ন করতো। এসব মহিলাদের মধ্যে যারা মারা যেত তাদেরকে নীচে নামিয়ে নেয়া হত এবং উলঙ্গ মেয়েদের নতুন ব্যাচ আনা হত।” রাবেয়া খাতুনের কথা, সেখানে সব সময় পাহারাদারীর ব্যবস্থা ছিল। তবে সমস্যা হলো,সে যা বলেছে তা অন্য কাউকে দিয়ে যাচায় করার উপায় সে রাখেনি। তার কথা,সেখানে আর কোন বাঙালী ছিল না,অন্য কোন ঝাড়ুদারও ছিল না। অর্থাৎ এসবের সাক্ষী একমাত্র সেই। সে আরো বলেছে, “ডিসেম্বরে যখন ভারতীয় বিমান বাহিনী ঢাকার উপর বোমা বর্ষণ শুরু করে তখন পাঞ্জাবী সৈন্যরা সেখানে আনা জীবিত সকল মেয়েদেরকেই হত্যা করে।”

    রাবেয়া খাতুনের বিবরণ যে কতটা ভুয়া ও বানোয়াট সেটি বুঝতে কি বিদ্যাবুদ্ধি লাগে? তবে যারা বিবেক-বর্জিত, গুজবে ভেসে চলাই যাদের স্বভাব তাদেরকে ৩০ লাখ নিহতের মুজিব-কল্পিত মিথ্যা তথ্যে বিশ্বাস করানো অতি সহজ। এমন মানুষের সংখ্যাও তো উপমহাদেশে প্রায় শত কোটি যারা প্রানহীন মূর্তি বা সাপ-শকুনকেও দেবতা মানতে রাজী। মিথ্যাকে এভাবে গ্রহণ করার ক্ষেত্রে কোন সাক্ষী-প্রমাণ বা বিদ্যাবুদ্ধি লাগে না। অথচ প্রতিটি বিবেকবান ব্যক্তিই অপরাধীকে অপরাধী বলার আগে তার বিরুদ্ধে প্রমাণও খুঁজে। আর প্রতিটি অপরাধী সেটি রেখেও যায়। অপরাধ তা যত সাবধানতার সাথেই হোক না কেন, ঘটনাস্থলে সাক্ষী সে রেখে যাবেই। অপরাধ অনুসন্ধানকারিরা তো এ বিশ্বাস নিয়েই অনুসন্ধানে নামে। আর এটি প্রমাণিত সত্য। তাই কেউ খুন হলো বা ধর্ষিতা হলো অথচ তার প্রমাণ নেই -সেটি ভাবা যায় না। তাই প্রশ্ন হলো্, কোন বনে জঙ্গলে নয়, রাজধানীর কেন্দ্রে এক বিশাল পুলিশ কেন্দ্রে শত শত নারী ধর্ষিতা হলো, ধর্ষণের পর তারা নিহত হলো -তার প্রমাণ কি একমাত্র রাবেয়া খাতুন? কোথায় সে অসংখ্য উলঙ্গ মহিলাদের লাশ বা কোথায় তাদেরকে কবর? সে তথ্য রাবেয়া খাতুন তার জবানবন্দীতে দেয়নি। ১৬ই ডিসেম্বরে বা ১৬ই ডিসেম্বরের পর কোথাও রাবেয়া খাতুনের কথিত এরূপ শত শত ধর্ষিতা উলঙ্গ মহিলাদের লাশ ঢাকার কোথাও পাওয়া যায়নি। এমনকি পাওয়া যায়নি তাদের কংকালের স্তূপও। রাবেয়া খাতুনের এ বিবরণের মূল্যায়ন করতে গিয়ে শর্মিলা বোস লিখেছেন, “I asked an eminent Bangladeshi and a strong supporter of the liberation movement to read this account and tell me what he made of it. He opined that it was a “fabrication”, commenting that the parts about women hanging by their hair from iron rods for days “defied the laws of science”. That there are serious problems with this “testimony” would be obvious to any rational observer. The woman in whose name it is written was illiterate. Rajarbag was not in an isolated area but in the capital city. The descriptions of bejewelled girl students clutching books arriving by the truckloads to be stripped and raped in public, naked women lining the corridors and hanging by their hair along the verandahs, subjected to all manner of bestiality, smacks more of the perverted fantasies of a male mind than the testimony of a female eyewitness. The claim that this woman was the only Bengali and only one sweeper in Rajarbag police lines for a nine-month period is an absurdity.” অর্থঃ আমি প্রখ্যাত এক বাংলাদেশী এবং মুক্তিযুদ্ধের কঠোর সমর্থককে এ বিবরণটি পড়তে বলেছিলাম এবং তার অভিমত জানাতে বলেছিলাম। তিনি আমাকে বললেন, এটি মিথ্যা। তার অভিমত, মাথার চুল দিয়ে লোহার রডের সাথে মেয়েদেরকে দিনের পর দিন লটকিয়ে রাখার বিষয়টি বিজ্ঞানের স্বাভাবিক রীতিকেও অস্বীকার করে। তার জবানবন্দীতে যে মারাত্মক সমস্যা রয়েছে -সেটি যে কোন যুক্তিবাদী মানুষের কাছেই সুস্পষ্ট। এবং যার নামে এ কথাগুলো লেখা হয়েছে সে লিখতে-পড়তে পারেনা। রাজারবাগ কোন বিচ্ছিন্ন এলাকা নয়, রাজধানীর মধ্যে এর অবস্থান। হাতে বই,গায়ে গহনা -এমন স্কুল ছাত্রীদের ট্রাক ভর্তি করে নিয়ে আসা, তাদেরকে উলঙ্গ করা, প্রকাশ্যে ধর্ষণ করা, উলঙ্গ মেয়েদেরকে সারিবদ্ধ ভাবে বারান্দায় রাখা, মাথার চুল দিয়ে তাদেরকে লোহার রডের সাথে লটকিয়ে রাখা –এগুলো পশুবৎ। এ বর্ণনার মধ্য দিয়ে যা প্রকাশ পায় তা হলো কুৎসিত পুরুষ-মনের উদ্ভট কল্পনা, কোন নারীর স্বচোখে দেখা জবানবন্দী নয়। এবং রাজারবাগে ৯ মাস ধরে এই মহিলাটিই যে ছিল একমাত্র বাঙালী এবং একমাত্র ঝাড়ুদার ছিল -বিশ্বাস করা যায় না সে দাবীটিও।” একটি মিথ্যা বললে অনেকগুলি মিথ্যা বলতে হয় সেটি প্রমাণ করতে। সেটিই প্রকাণ্ড ভাবে হয়েছে বাংলাদেশের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে। তেমন মিথ্যাচার যেমন হয়েছে ৩০ লাখ মানুষ নিহত হওয়ার মিথ্যাটি প্রমাণ করতে, তেমনি হয়েছে তিন লাখ নারী ধর্ষিতার বিষয়টি প্রমাণ করতে। আর এভাবে ইতিহাসের বইতে স্তুপীকৃত করা হয়েছে বিশাল আবর্জনা। রাবেয়া খাতুনের সে অবিশ্বাস্য জবানবন্দীটি তাই ঐতিহাসিক দলিল রূপে স্থান পেয়েছে “বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস” নামক গ্রন্থে । এবং সেটি করা হয়েছে জনগণের কষ্টার্জিত রাজস্বের অর্থে।

    বাংলাদেশের ইতিহাসে ধর্ষণের আরেক প্রমাণ রূপে খাড়া করা হয়েছে ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিনীকে। শাহরিয়ার কবির তার সম্পাদিত “একাত্তরের দুঃসহ স্মৃতী” বইতে তার জবানবন্দীকে দলিল রূপে পেশ করেছেন। শর্মিলা বসুর গবেষণা থেকে সে বিষয়ে কিছু জানা যাক।” ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিনী একজন মধ্যবিত্ত শ্রেনীর শিক্ষিত মহিলা এবং পেশায় ভাস্কর। তার কাজের স্থান ছিল খুলনার এক জুটমিলের অফিসে। ফেরদৌসীর অভিযোগ তাকে প্রথমে তার আগাখানী জেনারেল ম্যানেজার ধর্ষণ করে। তারপর সে ১৫ জন পাকিস্তানী সামরিক অফিসারের নাম নেয় যাদের অবস্থান ছিল যশোর ও খুলনায়। তাদের মধ্য থেকে একমাত্র দুইজন বাদে সবার বিরুদ্ধে হয় ধর্ষণ অথবা ধর্ষণের চেষ্টা বা অন্য প্রকার যৌন নিপীড়নের অভিযোগ আনা হয়েছে -যা করা হয়েছে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে। তার নিজের ভাষ্য মতে সে একজন তালাকপ্রাপ্তা তিন সন্তানের মা। তার সন্তানেরা খুলনায় ফেরদৌসীর নানীর কাছে থাকতো; আর নিজের মা এবং ৭ জন ভাই-বোন নিয়ে সে খালিশপুরে থাকতো। যেখানে সে জুটমিলে কাজ করতো। আহসান উল্লাহ আহমেদ নামে ফেরদৌসীর একজন পুরুষ বন্ধু ছিল এবং সে ছিল পাশ্ববর্তী আরেকটি জুটমিলের লেবার অফিসার। মিলিটারি এ্যাকশনের পর আহসান উল্লাহ তার নিজের পরিবারের সদস্যদের নিরাপদ স্থানে চলে যেতে বলে। ফেরদৌসীর মা এবং তার ভাই-বোনেরাও চলে যায়। তখন ফেরদৌসী একা থেকে যায়, তবে মাঝে মধ্যে তার কোন ভাই বা বোন বেড়াতে আসতো। তখন তার পুরুষ প্রেমিকটি পাশেই কাজ করতো।

    ফেরদৌসীর যুক্তি হলো, সে ছিল পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারি তাই তাকে খালিশপুরে থাকতে হয়েছিল। তার মতে যেদিন সে প্রথম ধর্ষণের শিকার হয় সেদিন সে তার ম্যানেজারের সাথে দুপুরের খানা খেতে গিয়েছিল, কাজ শেষে সে তার সাথে তার এপার্টমেন্টেও গিয়েছিল। এবং সেখানেই সে ধর্ষণের শিকার হয়। পরের দিন সে আবার কাজে গিয়েছিল।” এখানে প্রশ্ন হলো, যে ধর্ষণ নিয়ে একাত্তরের পর সে এতোবড় জবানবন্দী পেশ করলো এবং ইতিহাসের বইযে প্রকাণ্ড সাক্ষীতে পরিণত হলো, যেদিন সে ধর্ষিতা হলো সেদিন তার নিজের আচরণটি কেমন ছিল? সে যখন ধর্ষিতা হওয়ার মুখে তখনও সে বাধা দেয়নি। প্রতিবাদও করেনি। ধাক্কাধাক্কি করে সে ধর্ষণ থেকে বাঁচবার বা পলায়নেরও চেষ্টা করেনি। যেখানে ধর্ষণকারি হলো স্বয়ং ম্যানেজার, সে স্থান কোন অবস্থাতেই তার জন্য নিরাপদ ছিল না। অথচ সে বিপদজনক স্থান থেকে সেদিন বা পরের দিন পলায়নও করেনি। পরবর্তী নয় মাসেও সে পলায়নের চেষ্টা করেনি। বরং পরের দিন আবার সে অফিসেই কাজে গেছে। অথচ কোন অবস্থাতেই এ বিশ্বাস করা যাবে না যে ফেরদৌসী বন্দী ছিল। নিরাপদ স্থানে সে চলে যেতে পারতো। ফেরদৌসী ধর্ষণের অভিযোগ এনেছে গুলজারিন নামে একজন ন্যাভাল কমান্ডারের বিরুদ্ধে। শর্মিলা বসু লিখেছেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অন্যান্য অফিসারগণও গুলজারিনকে চারিত্রিক দিকদিয়ে সন্দেহজনক মনে করতো। কিন্তু সে অফিসারটির সাথে ফেরদৌসী একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল এ মর্মে যে তার সাথে সে থাকবে না, তবে যখনই ডাকবে তখনই সে আসবে।

    ইতিহাসচর্চার নামে মিথ্যাচারের আরেক উদাহরণ দেয়া যাক জনৈক আখতারুজ্জামানের জবানবন্দী থেকে। তার সে জবানবন্দী দলিল রূপে স্থান পেয়েছে রশিদ হায়দারের সম্পাদিত “ভয়াবহ অভিজ্ঞতা” বইতে। (Rashid Haider, 71)। আখতারুজ্জামানের মতে সে ছিল একজন মুক্তিযোদ্ধা, সে ভারতীয় বাহিনীর সাথে ১৯৭১ সালের ১১ নভেম্বরে পূর্ব পাকিস্তানের উত্তর সীমান্তে ভুরুঙ্গমারিতে হামলায় অংশ নিয়েছিল। এখানে ভারত সরকারের মিথ্যাচারীতাও ধরে পড়ে। তাদের দাবী, ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তেসরা ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে -যখন পাকিস্তান সেনাবাহিনী ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে। একই বক্তব্য বাংলাদেশের ভারতপন্থীদেরও। এবিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের কোন গবেষক গবেষণা না করলেও অনুসন্ধান করেছেন দুইজন মার্কিনী গবেষক Sission and Rose। তারা তাদের গবেষণা মধ্য দিয়ে প্রমাণ করেছেন, পূর্ব পাকিস্তানের সকল সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় বাহিনীর অভিযান শুরু হয় ২১শে নভেম্বর। -(Sission and Rose, 1990)। তবে তার আগেও ভারতীয় বাহিনীর হামলা স্থানে স্থানে হত তার প্রমাণ অনেক। ১৯৭১ সালের ১১ নভেম্বরে ভুরুঙ্গমারিতে হামলা তারই এক উদাহরণ।

    আখতারুজ্জামানের বর্ণনায় প্রমাণিত হয়, এসব হামলা পরিচালিত হতো ভারতীয় সেনাবাহিনীর দ্বারা, মুক্তিবাহিনীর সদস্যারা থাকতো তাদের সাহায্যকারি রূপে। হামদুর রহমান কমিশনের রিপোর্টে বলা হয়, ভারতীয় বাহনীর কাছে ভুরঙ্গমারির পতন ঘটে ১৪ই নভেম্বর, ১৯৭১ সালে।– (Hamoodur Rehman Commission (HRC) Report of Inquiry into the 1971 War)। ভুরঙ্গমারির তিন দিকেই ভারত। আখতারুজ্জামান মন্ডলের ভাষ্য মতে ভারতীয় সেনাবাহিনী হামলা করে উত্তর,পূর্ব ও পশ্চিম দিক দিয়ে। হামলায় ব্যবহৃত হয় ভারি কামান, নেয়া হয় বিমান বাহিনীর সহযোগীতা। ১৪ই নভেম্বর ভুরঙ্গমারিতে পাকিস্তানি বাহিনী নিরব হয়ে যায়, মন্ডল এবং তার সাথীরা সেখানে প্রবেশ করে। এক বিধ্বস্ত বাংকারে সে দেখে পাকিস্তানী আর্মির ক্যাপ্টেন আতাউল্লাহ খানের লাশ। তার পাশেই দেখে ক্ষত-বিক্ষত এক বাঙালী মহিলার লাশ। তার কথায়, মদখোর সে পাশব ক্যাপ্টেনটি তার বাহু দিয়ে জড়িয়ে ধরে ছিল সে বাঙালী মহিলাকে। সে নিহত হয়েছিল এ অবস্থাতেই। মহিলাটিকে একজন কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী বা কোন শিক্ষিত গৃহবধু বলে মনে হচ্ছিল। তার সমগ্র দেহজুড়ে সে পাশবিক দানবের অত্যাচারের চিহ্ন ছিল। আকতারুজ্জামান মন্ডলের বক্তব্য কতটুকু বিশ্বাসযোগ্য তা নিয়ে শর্মিলা বোস অনুসন্ধান করেছেন। একাজে তিনি পাকিস্তানে গেছেন এবং সংশ্লিষ্ট সেনা অফিসারদের সাথে সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। শর্মিলা বসের গবেষণার ফলাফল ও সে সাথে তার নিজস্ব অভিমত হলো নিম্নরূপঃ “Mandal does not say that he had ever heard of Captain Ataullah Khan before his dead-body was discovered after the battle. Therefore, it is not clear on what basis he describes the dead officer as “alcoholic” or of “bad character”, nor how he makes suppositions about the dead woman’s profession or education, or of marks of “torment” on her body, especially as he says that both bodies were severely mutilated by the bombing. According to Mandal’s own account, the Pakistani captain and his men had been fighting a ferocious attack by the Indian army for two days and three nights. The captain had been killed in that battle. The insinuation that he was partying in a bunker at the same time beggars belief. -(Bose S, Economic and Political Weekly September 22, 2007).

    অনুবাদঃ “মন্ডল একথা বলে না যে, যুদ্ধের পর ক্যাপ্টেন আতাউল্লাহ খানের মৃত দেহ আবিস্কৃত হওয়ার পূর্বে সে কখনো তার নাম শুনেছে। সুতরাং বিষয়টি বোধগম্য নয়,কিসের ভিত্তিতে সে বলতে পারলো যে মৃত অফিসার মদ্যপায়ী বা বদ চরিত্রের ছিল। এটিও বোধগম্য নয়,কি করে সে মৃত মহিলার পেশা, শিক্ষা এবং তার দেহের অত্যাচারের চিহ্ন নিয়ে ধারণা পেল –বিশেষ করে যখন সে বলে উভয়ের দেহ বোমার আঘাতে দারুন ভাবে ক্ষতবিক্ষত ছিল। মন্ডলের নিজের বর্ণনা অনুযায়ী পাকিস্তানী ক্যাপ্টেন দুই দিন এবং তিন রাত ব্যাপী যুদ্ধ করছিল ভারতীয় সেনাবাহিনীর তীব্র হামলার প্রতিরোধে। ক্যাপ্টেন সে যুদ্ধে নিহত হয়েছে। এরূপ অবস্থায় সে বাংকারের আমোদে লিপ্ত ছিল এমন দোষারোপ নিতান্তই অবিশ্বাস্য কল্পনা।

    শর্মিলা বোস আরো লেখেন: “According to one his fellow officer, Captain Ataullah had not been in Bhurungamari before – he was based at Nageshwari. He had barely got there when he was faced with the Indian attack, which went on all night, the next day and the following night. Remnants of the company who were retreating towards Nageshwari reported that Captain Ataullah was dead. This fellow officer of 25 Punjab described Captain Ataullah as a six-foot plus Pathan officer known for being “humane”. He stated that he saw people in Nageshwari weep upon hearing of Captain Ataullah’s death. According to him, when the Pakistanis were POWs in India after the war, a senior Indian officer had expressed his respect, soldier-to-soldier, to the officers of 25 Punjab, and mentioned by name Ataullah, who had become a ‘shaheed’ (martyr).-(Bose S, Economic and Political Weekly September 22, 2007). অনুবাদঃ একজন সঙ্গি অফিসারের মতে কাপ্টেন আতাউল্লাহ এর পূর্বে কখনো ভূরুঙ্গমারীতে আসেননি, তিনি ছিলেন নাগেশ্বরীতে। তিনি ঐদিনই কেবল সেখানে এসেছিলেন, আর তখনই মুখোমুখি হন ভারতীয় হামলার। যা চলে সারা রাত ধরে; পরের দিন এবং পরের রাতও তা চলতে থাকে। সৈন্যদের বাঁকিরা যারা সেখান থেকে পিছু হঠে,তারা খবর দেয় ক্যাপ্টেন আতাউল্লাহ নিহত হয়েছেন। পাঞ্জাব ২৫’য়ের সঙ্গি অফিসারটি আরো বলেন, ক্যাপ্টেন আতাউল্লাহ ছিলেন ছয় ফিটের অধিক লম্বা এবং মানবিক গুণের অধিকারি। তিনি বলেন, আমি দেখেছি তার নিহত হওয়ার খবর শুনে নাগেশ্বরের মানুষ কেঁদেছে। তার মতে, পাকিস্তানি সৈন্যরা যখন ভারতে যুদ্ধবন্দী তখন দুই দেশের অফিসারদের পারস্পারিক মত বিনিময় কালে একজন সিনিয়র ভারতীয় সামরিক অফিসার পাঞ্জাব ২৫’য়ের অফিসারদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। তিনি বিশেষ করে ক্যাপ্টেন আতাউল্লাহর কথা স্মরণ করেন এবং বলেন যে তিনি শহীদ হয়েছেন।

    শর্মিলা বোস লিখেছেন, “The picture painted of Captain Ataullah by this fellow of*ficer, who knew him, completely contradicts the one given by Mandal, who appears to have only seen his dead body. Clearly, if Captain Ataullah had been based in Nageshwari and only gone up to Bhurungamari the day that the Indian attack started, he could not have been responsible for whatever might have been going on in Bhurungamari. Mandal offers no corroborat*ing evidence for his character assassination of an officer who had died defending his country, and therefore, cannot speak in his own defence. (Bose S, Economic and Political Weekly September 22, 2007). অনুবাদঃ ক্যাপ্টেন আতাউল্লাহর সঙ্গি অফিসারটি -যিনি তাকে জানতেন তার যে চরিত্র তুলে ধরেন সেটি মন্ডলের দেয়া বিবরণের পুরাপুরি বিপরীত।বুঝা যায়,মন্ডল শুধু তার মৃত দেহকেই দেখেছিল।এটি স্পষ্ট,ক্যাপ্টেন আতাউল্লাহর অবস্থান যদি নাগেশ্বরীতে হয়ে থাকে এবং তিনি শুধু ঐদিনই ভুরুঙ্গমারিতে গিয়েছিলেন যখন ভারতীয় হামলা শুরু হয়,তবে ভুরুঙ্গমারিতে যা কিছু হয়েছিল তার জন্য তাকে দায়ী করা যাবে না।একজন অফিসার যে তার দেশকে প্রতিরক্ষা দিতে নিহত হয়েছেন এবং নিজের স্বপক্ষে কথা বলা যার পক্ষে এখন অসম্ভব -তার চরিত্র হননে মন্ডল কোন সহায়ক দলিলই উপস্থাপন করেনি।



    পুরস্কৃত হয় যুদ্ধাপরাধীরা

    লক্ষণীয় হলো, একাত্তরের উপর বাংলাদেশীদের লেখালেখিতে বাঙালীদের অপরাধ কর্মের বিবরণ নেই। বরং যেটি নজরে পড়ে সেটি হলো, এ অপরাধীদের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী রূপে চিত্রিত করার প্রচেষ্টা। স্বাধীন বাংলাদেশে আওয়ামী ক্যাডারগণ হাজার হাজার জনতার উপস্থিতিতে ঢাকা স্টেডিয়ামে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নিরস্ত্র রাজাকার হত্যাকে উৎসবের কাজ মনে করে, “যেমনটি কাদের সিদ্দিকী ও সহযোগীরা করেছিল। এটি ছিল সুস্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ। অথচ সে যুদ্ধাপরাধী কাদের সিদ্দিকীকেই একজন বীর রূপে ভূষিত করা হয়েছে। যে আওয়ামী ক্যাডারগণ যাত্রীভর্তি বাসে আগুন দিতে পারে (যেমন ঢাকার রাজপথে ঘটেছিল নব্বইয়ের দশকে), যারা লগি-বৈঠা নিয়ে পিটিয়ে মুসল্লি হত্যা করতে পারে (যেমনটি ২০০৬ সালে ঢাকার বায়তুল মোকাররম মসজিদের পাশের রাস্তায় ঘটেছিল), তারা যে আটকে পড়া অসহায় অবাঙালী মহিলাদের উপরে বলাৎকারে ঝাপিয়ে পড়বে ও তাদেরকে হত্যা করবে সেটি কি স্বাভাবিক নয়? ড. নীলিমা ইব্রাহীম তার বইয়ে পাকিস্তান আর্মির বিরুদ্ধে যৌন অত্যাচারের অভিযোগ তুলেছেন। এ নিয়ে বিতর্ক নেই, একাত্তরে বহু বাঙালী যেমন নিহত হয়েছে, তেমনি বহু বাঙালী মহিলা ধর্ষিতাও হয়েছে। তবে এটুকু লেখা হলেই ইতিহাসের সবটুকু লেখা হয় না। একাত্তরের ইতিহাসের আরো অনেক সত্য ঘটনা আছে। অবাঙালীদের উপরও যে নির্যাতন হয়েছে, এবং অসংখ্য অবাঙ্গীলা মহিলাও যে বাঙালীদের হাতে ধর্ষণের শিকার হয়েছে -সেটিও তো ইতিহাসের অংশ। অথচ নীলিমা ইব্রাহীমের রচনায় সে বিবরণ নেই। অথচ তিনি মানবাধিকারের কথা বলেন। মানবাধিকার কি শুধু একটি বিশেষ বর্ণ ও একটি বিশেষ ভাষাভাষি মানুষের জন্য? ইজ্জত নিয়ে প্রাণে বাঁচার অধিকার তো সবার। যেমন বাঙালীদের,তেমন অবাঙালীদেরও। পাকিস্তান সেনাবাহিনী স্বীকার করে নিয়েছে যে তাদের দ্বারা হত্যা ও ধর্ষণ দু’টোই হয়েছে। কিন্তু বাঙালী বুদ্ধিজীবীদের লেখায় সে বুদ্ধিবৃত্তিক সততাটুকু কই? সভ্য ও সত্যনিষ্ঠ মানব রূপে বেড়ে উঠার জন্য এ বুদ্ধিবৃত্তিক সততাটুকুই কি নূন্যতম প্রয়োজন নয়? আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীগণই শুধু নয়, তাদের বুদ্ধিজীবী ও লেখকগণ অবাঙালীদের সে মানবিক অধিকার দিতে রাজি হয়নি। তাদেরও দিতে রাজী নয় যারা সেদিন অখণ্ড পাকিস্তানের সমর্থক ছিল। একাত্তরের মার্চের শুরু থেকে ২০শে এপ্রিল পর্যন্ত সমগ্র পূর্বপাকিস্তান ছিল তাদের দখলে। সে সময় মানবাধিকার আঁস্তাকুড়ে গিয়ে পড়েছিল;এবং হত্যা ও নারীধর্ষণ ঘটেছিল প্রচণ্ড বীভৎসতা নিয়ে।

    উদ্দেশ্য মানসিক বিচ্ছিন্নতা

    একাত্তরে প্রতিহিংসার যে বিষাক্ত বিষ বাঙালীর চেতনায় ঢুকানো হয়েছিল তা এখন বিশাল বিষবৃক্ষে পরিণত হয়েছে। আর সে বৃক্ষের গোড়ায় লাগাতর পানিও ঢালা হচ্ছে। ফলে অসম্ভব হয়েছে অবাঙালী মুসলমানদের সাথে মিলে অভিন্ন উম্মাহ গড়ার চেতনা। বরং দেশটি দিন দিন আরো গভীর ভাবে ভারতীয় কাফের শক্তির কোলে গিয়ে পড়ছে। একাত্তরে ভারতপন্থীদের লক্ষ্য বাঙালী মুসলিমদের শুধু ভৌগলিকভাবে অবাঙালী মুসলিমদের থেকে বিচ্ছিন্ন করা ছিল না,ছিল মানসিক ভাবে বিচ্ছিন্ন করাও। মুসলিম উম্মাহর বিভক্ত ভৌগলিক মানচিত্র তো এভাবেই স্থায়ীত্ব পায়। সমগ্র উপমহাদেশ জুড়ে আধিপত্য বিস্তারের স্বার্থে ভারতের জন্য সেটি অপরিহার্যও ছিল। ১৯৪৭ সালে তারা মুসলিমদের মাঝে সে তিক্ততা সৃষ্টিতে বিফল হয়েছিল। কিন্তু বিপুল সফলতা পেয়েছে একাত্তরে। ইসলামের শত্রুরা সে বিজয়টিকেই এখন ধরে রাখতে চায়। উপমহাদেশের অবাঙালী মুসলিম বলতে ৩০ লাখের খুনি ও ৩ লাখ নারীর ধর্ষণকারি -এ পরিচয়টি তারা বাঙালী মুসলিমদের মনে দৃঢ়মূল করতে চায়। ফলে যে মিথ্যাচর্চাকে তারা সত্তরের দশকে প্রচণ্ডতা দিয়েছিল এখনও সেটিই লাগাতর চলছে। ফলে অতীতের ন্যায় আজও প্রচণ্ডতা পাচ্ছে সত্যধর্ষণ এবং মিথ্যা ইতিহাসচর্চা। আর এমন মিথ্যাচর্চায় বাড়ছে নৈতিক বিপর্যয়।

    নয় মাসের যুদ্ধে কোন দেশ ধ্বংস হয় না। তলাহীন ভিক্ষার ঝুড়ি,দুর্ভিক্ষ-কবলিত বা দুর্নীতিতে বিশ্ব-শিরোপা পাওয়ার কথাও নয়।ইরান ৮ বছরের লাগাতর যুদ্ধেও দুর্বল হয়নি। তলাহীনঝুড়িও হয়নি। দুর্নীতিতে শিরোপাও পায়নি। পাকিস্তান তো ১৯৬৫ ও ১৯৭১য়ে দুটি প্রকাণ্ড যুদ্ধের পরও আণবিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। অথচ বাংলাদেশের নীচে নামা এখনও শেষ হলো না। গণতন্ত্র এখনো প্রতিষ্ঠা পেল না। বরং আজ থেকে ৬০ বছর আগে পঞ্চাশের দশকে দেশটিতে যে গণতন্ত্র ছিল এবং ১৯৫৪ তে যেরূপ অবাধ নির্বাচন হলো -এখন কি সেটুকুও ভাবা যায়? কথা হলো,মিথ্যাচর্চা যদি দেশে লাগাতর চলে, তাতে দেশবাসীর পক্ষে কি সঠিক পথে ও মানসিক সুস্থতা নিয়ে বেড়ে উঠা সম্ভব? নীচে নামা তথা সংকটের দিকে ধাবিত হওয়াই কি তখন স্বাভাবিক নয়? মহান আল্লাহতায়ালা বলেছেন,“জায়াল হাক্ব ওয়া জাহাকাল বাতিল,ইন্নাল বাতিলা কানা জাহুকা।” অর্থঃ সত্য আসলো এবং মিথ্যা দূরীভূত হলো। এবং নিশ্চয়ই মিথ্যা দূরীভূত হওয়ার জন্যই। পবিত্র কোরআনের এ আয়াতটি ঘোষিত হয়েছিল মুসলমানদের হাতে মক্কা বিজয়ের পর। এ আয়াতের মূল শিক্ষাটি হলো,ইসলাম আসলে মিথ্যা দূরীভূত হবেই। অর্থাৎ মিথ্যার আঁধার দূর করতে হলে সত্যের আলো লাগবেই। অর্থ দাঁড়ায়,মিথ্যার আবর্জনা সরাতে হলে সত্যকে বিজয়ী করতে হবেই। কিন্তু বাংলাদেশে হয়েছে তার উল্টোটি।

    দেশটি আজ মিথ্যার জনক এবং মিথ্যার প্রচারকদের হাতে অধিকৃত। সত্য এবং সত্যপন্থীরা আজ পরাজিত। শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশের আইন-আদালত,শিক্ষা-সংস্কৃতি ও অর্থনীতির ময়দানসহ রাষ্ট্রীয় জীবনের প্রতিক্ষেত্রে আজ দূরীভূত হওয়ার পথে ইসলামী শিক্ষা,বিধান ও মূল্যবোধ। রাতের আঁধার যেমন দিগন্ত জুড়ে ছেয়ে যায়,বাংলাদেশ জুড়ে তেমনি ছেয়ে আছে মিথ্যাচার। সে মিথ্যাচারের বিশাল অংশ জুড়ে বিরাজ করছে একাত্তর নিয়ে নানা ধরণের মিথ্যাচার। ইসলাম ও ইসলামপন্থীগণ আজ এদেশে সর্বার্থেই পরাজিত শক্তি। ইসলাম কোন রকমে অস্তিত্ব বাঁচিয়ে আছে মসজিদের চার দেয়ালের মাঝে। দেশটিতে বিজয়ী শক্তিহলো মিথ্যা ও মিথ্যার উপাসকগণ। ফলে দেশটিতে আজও প্রবল ভাবে বেঁচে আছে ৩০ লাখহত্যা ও ৩ লাখ ধর্ষণের মিথ্যাচার। কথা হলো,এমন মিথ্যাচারে ঈমান আনা এবং সে মিথ্যাটির উচ্চারণই যদি প্রতিদিনের অভ্যাসে পরিণত হয় তবে কি সে মিথ্যুকের মনে আল্লাহর উপর ঈমান ও তাঁর সত্যদ্বীন গ্রহণের সামর্থ্য বাঁচে? আলো ও আঁধার তো একসাথে চলতে পারে না। তেমনি একসাথে চলে না সত্যের প্রতিষ্ঠা ও মিথ্যাচর্চা। নানা মিথ্যার ন্যায় বাংলাদেশে ৩০ লাখ হত্যা ও ৩ লাখ ধর্ষণের মিথ্যাচারটি যেরূপ প্রকাণ্ড ভাবে বেঁচে আছে -সেটি তো সত্যের পরাজয় ও মিথ্যার বিজয়কেই প্রমাণিত করে। ১৬ কোটি মুসলিমের কি এটিই অর্জন? মিথ্যাকে এভাবে বাঁচিয়ে রেখে কি সত্যদ্বীনের বিজয়কে সুনিশ্চিত করা যায়? তাছাড়া মিথ্যার এরূপ বিজয় বাড়িয়ে কি মহান আল্লাহতায়ালার রহমত আশা করা যায়? কিন্তু সে ভাবনা কি বাঙালী মুসলিমদের আছে?

    গ্রন্থপঞ্জি

    Sisson, Richard and Leo Rose (1990): War and Secession: Pakistan, India and the Creation of Bangladesh, University of California; Berkeley.
    Niazi, Lt Gen AA K (2002); The Betrayal of East Pakistan, Oxford University Press, Karachi.
    Bose, Sarmila; “Problems of Locating Sexual Violence in the 1971 War:The Problem of Numbers,” Economic and Political Weekly September 22, 2007.
    Ferdousi Priyabhashini in Shahriar Kabir (ed) (1999); Ekattorer Duhsaha Smriti, Ekattorer Ghatok Dalal Nirmul Committee, Dhaka.
    Mitha, Major General A O (2003): Unlikely Beginnings: A Soldier’s Story, Oxford University Press; Karachi.
    Hamoodur Rehman Commission (HRC); Report of Inquiry into the 1971 War, Vanguard Books, Lahore, 513.
    Williams, L. Rushbrook. The East Pakistan Tragedy, London: Tom Stacy Ltd, 1972.
    এ.কে.খন্দকার, ১৯৭১ ভেতরে বাইরে, ঢাকা:প্রথমা প্রকাশন, ২০১৪।

  • #2
    জাযাকাল্লাহ!

    Comment


    • #3
      অাল্লাহ তায়ালা আপনার মেহনতকে কবুল করেন। আমিন।
      ফিরে এসো দ্বীনের পথে।

      Comment


      • #4
        অাল্লাহ তায়ালা আপনার মেহনতকে কবুল করেন। আমিন। somma ameen

        Comment

        Working...
        X