( বাস্তবতার নিরিখে রচিত একটি গল্প )
পর্ব : ১
ধড়ফড় করে উঠে বসলেন আবু বাসির । ভয়ঙ্কর একটা স্বপ্ন দেখেছেন তিনি । বিড়বিড় করে আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইত্বনির রজিম পড়লেন । ঘামে গেঞ্জিটা ভিজে একাকার হয়ে গেছে । পাথুরে বিছানাতেও ঘামের আর্দ্রতা । প্রচণ্ড পিপাসা লেগেছে তার । একটু পানি খাওয়া দরকার । আশেপাশে কি পানি পাওয়া যাবে? বসা থেকে উঠে দাঁড়ালেন তিনি । হালকা চাঁদের আলো আসছে ঘরে । এটাকে ঘর বলা চলে না । মাটির নীচে কি ঘর হয় ? তা হয় না । এটা একটা বাংকারের মত । আবার পুরোপুরি বাংকারও না । মাটি খুঁড়ে নীচের দিকে কক্ষের মত বানানো হয়েছে । একটি কক্ষে সর্বোচ্চ দুইজন আরাম করে শোয়া যায় । কিন্তু সেখানে ঠাসাঠাসি করে পাঁচজন শুয়েছেন । চার পাচ ধাপ সিড়ি ভেঙে উঠলেই মাটির মুখে দেড় ফুট মতো চওড়া বের হবার জায়গা । দিনের বেলায় কাঠ বিছিয়ে তার উপর বিল্ডিঙের ভগ্নাবশেষ ছড়িয়ে রাখা হয় । যেন কেউ বুঝতে না পারে সে জন্যই এই ব্যবস্থা । সেখান দিয়েই হালকা আলো আসছে ভেতরে । আলো আধারির আবছা লুকোচুরিতে ভেতরটা রহস্যময় ঠেকছে আবু বাসিরের কাছে । তিনি সাবধানে পা ফেলে সিঁড়ির কাছে এলেন । ধীরে ধীরে উপরে উঠলেন । বাংকার থেকে বের হয়ে একপাশে দাঁড়ালেন । রাতের আকাশের তারা দেখলেন কিছুক্ষণ । যুদ্ধবিধ্বস্ত এই শহরের আকাশটা কিন্তু আগের মতোই আছে । এই তো চাঁদটা হাসছে । তারাগুলো তার দিকে মিটিমিটি তাকিয়ে আছে । তিনি মন্ত্রমুগ্ধের মতো আল্লাহর সৃষ্টি দেখতে লাগলেন । মুখ দিয়ে বের হলো কুরআনের আয়াত । و لقد زينا السماء الدنيا بمصابيح আর আমি দুনিয়ার আকাশকে উজ্জ্বল প্রদীপ দ্বারা সজ্জিত করেছি । কিছু একটার আওয়াজে ধাতস্থ হলেন তিনি । পিপাসাটা আবার জেগে উঠেছে । পাশের একটা বিধ্বস্ত বাড়ির দিকে রওনা দিলেন । বাড়িটিকে এখন আনসারুদ দ্বীনের সাব হেড কোয়ার্টার বানানো হয়েছে । সেখানে পানি পাওয়া যেতে পারে । সদর দরজায় প্রহরারত মুজাহিদ থামালেন তাকে ।
- আসসালামু আলাইকুম ।
- ওয়া আলাইকুমুস সালাম ।
- মুহতারামের নাম ?
- আবু বাসির ।
- কোন মাজমুআর ?
- মাজমুআ বিন খালিদ ।
- বাংকার নং ?
- জিম বারো ।
- কী জন্য এসেছেন ?
- পানির পিপাসা লেগেছে । তাছাড়া একটু ওযুও করব
- ঠিক আছে । সামনের দিকে গিয়ে বাঁ দিক থেকে দ্বিতীয় রুমটিতে ব্যবস্থা আছে ।
- আচ্ছা ভাই এখন কয়টা বাজে একটু বলতে পারবেন ?
- দুইটা পঁচিশ ।
- জাযাকুমুল্লাহ ।
- ওয়া ইয়্যাকা ।
প্রহরী মুজাহিদের দেখানো পথে এগিয়ে গেলেন আবু বাসির । রুমটিতে অসংখ্য গ্যালন ভর্তি পানি । এই পানি দিয়েই পুরো ব্যাটালিয়নের সব প্রয়োজন মিটাতে হয় । নুসাইরী যালিমরা এলাকা ধ্বংস করার সাথে সাথে সব ধরনের লাইন বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে । পানি আনতে হয় সেই হামা থেকে । সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে একটি পাত্রে সামান্য পানি ঢাললেন । আঁজলা ভরে পানি পান করলেন । আহ কী প্রশান্তি । আলহামদুলিল্লাহ । ধীরে ধীরে অজু করলেন । পাত্রটি নির্দিষ্ট স্থানে রেখে রুম থেকে বের হলেন । প্রহরী মুজাহিদটি একটি চেয়ারে বসে হাতের একে ৪৭ টি দেখছিলেন । আবু বাসির কিছু না বলে বাড়ি থেকে বের হলেন । বাংকারের কাছে এসে কিবলামুখী হয়ে তাহাজ্জুদের জন্য দাঁড়ালেন । নামাযে ভিন্ন এক স্বাদ উপভোগ করছেন । তিনি লক্ষ্য করেছেন , যেদিন থেকে অস্ত্র হাতে জিহাদের বাইআত নিয়েছেন সেদিন থেকে নামাযে ভিন্ন এক স্বাদ পেতে আরম্ভ করেছেন তিনি । এ স্বাদ অমৃত । না , ভুল হলো । অমৃতের চেয়েও বেশি কিছু । নামায শেষ করে দু হাত তুলে মুনাজাত করলেন । বিড়বিড় করে কী যেন বলতে লাগলেন আবু বাসির । তার দু চোখ বেয়ে অশ্রুর ধারা বইতে লাগল । তিনি এক প্রাপ্তির প্রশান্তি অনুভব করতে লাগলেন ।
চলবে........
ইনশাআল্লাহ ।
পর্ব : ১
ধড়ফড় করে উঠে বসলেন আবু বাসির । ভয়ঙ্কর একটা স্বপ্ন দেখেছেন তিনি । বিড়বিড় করে আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইত্বনির রজিম পড়লেন । ঘামে গেঞ্জিটা ভিজে একাকার হয়ে গেছে । পাথুরে বিছানাতেও ঘামের আর্দ্রতা । প্রচণ্ড পিপাসা লেগেছে তার । একটু পানি খাওয়া দরকার । আশেপাশে কি পানি পাওয়া যাবে? বসা থেকে উঠে দাঁড়ালেন তিনি । হালকা চাঁদের আলো আসছে ঘরে । এটাকে ঘর বলা চলে না । মাটির নীচে কি ঘর হয় ? তা হয় না । এটা একটা বাংকারের মত । আবার পুরোপুরি বাংকারও না । মাটি খুঁড়ে নীচের দিকে কক্ষের মত বানানো হয়েছে । একটি কক্ষে সর্বোচ্চ দুইজন আরাম করে শোয়া যায় । কিন্তু সেখানে ঠাসাঠাসি করে পাঁচজন শুয়েছেন । চার পাচ ধাপ সিড়ি ভেঙে উঠলেই মাটির মুখে দেড় ফুট মতো চওড়া বের হবার জায়গা । দিনের বেলায় কাঠ বিছিয়ে তার উপর বিল্ডিঙের ভগ্নাবশেষ ছড়িয়ে রাখা হয় । যেন কেউ বুঝতে না পারে সে জন্যই এই ব্যবস্থা । সেখান দিয়েই হালকা আলো আসছে ভেতরে । আলো আধারির আবছা লুকোচুরিতে ভেতরটা রহস্যময় ঠেকছে আবু বাসিরের কাছে । তিনি সাবধানে পা ফেলে সিঁড়ির কাছে এলেন । ধীরে ধীরে উপরে উঠলেন । বাংকার থেকে বের হয়ে একপাশে দাঁড়ালেন । রাতের আকাশের তারা দেখলেন কিছুক্ষণ । যুদ্ধবিধ্বস্ত এই শহরের আকাশটা কিন্তু আগের মতোই আছে । এই তো চাঁদটা হাসছে । তারাগুলো তার দিকে মিটিমিটি তাকিয়ে আছে । তিনি মন্ত্রমুগ্ধের মতো আল্লাহর সৃষ্টি দেখতে লাগলেন । মুখ দিয়ে বের হলো কুরআনের আয়াত । و لقد زينا السماء الدنيا بمصابيح আর আমি দুনিয়ার আকাশকে উজ্জ্বল প্রদীপ দ্বারা সজ্জিত করেছি । কিছু একটার আওয়াজে ধাতস্থ হলেন তিনি । পিপাসাটা আবার জেগে উঠেছে । পাশের একটা বিধ্বস্ত বাড়ির দিকে রওনা দিলেন । বাড়িটিকে এখন আনসারুদ দ্বীনের সাব হেড কোয়ার্টার বানানো হয়েছে । সেখানে পানি পাওয়া যেতে পারে । সদর দরজায় প্রহরারত মুজাহিদ থামালেন তাকে ।
- আসসালামু আলাইকুম ।
- ওয়া আলাইকুমুস সালাম ।
- মুহতারামের নাম ?
- আবু বাসির ।
- কোন মাজমুআর ?
- মাজমুআ বিন খালিদ ।
- বাংকার নং ?
- জিম বারো ।
- কী জন্য এসেছেন ?
- পানির পিপাসা লেগেছে । তাছাড়া একটু ওযুও করব
- ঠিক আছে । সামনের দিকে গিয়ে বাঁ দিক থেকে দ্বিতীয় রুমটিতে ব্যবস্থা আছে ।
- আচ্ছা ভাই এখন কয়টা বাজে একটু বলতে পারবেন ?
- দুইটা পঁচিশ ।
- জাযাকুমুল্লাহ ।
- ওয়া ইয়্যাকা ।
প্রহরী মুজাহিদের দেখানো পথে এগিয়ে গেলেন আবু বাসির । রুমটিতে অসংখ্য গ্যালন ভর্তি পানি । এই পানি দিয়েই পুরো ব্যাটালিয়নের সব প্রয়োজন মিটাতে হয় । নুসাইরী যালিমরা এলাকা ধ্বংস করার সাথে সাথে সব ধরনের লাইন বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে । পানি আনতে হয় সেই হামা থেকে । সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে একটি পাত্রে সামান্য পানি ঢাললেন । আঁজলা ভরে পানি পান করলেন । আহ কী প্রশান্তি । আলহামদুলিল্লাহ । ধীরে ধীরে অজু করলেন । পাত্রটি নির্দিষ্ট স্থানে রেখে রুম থেকে বের হলেন । প্রহরী মুজাহিদটি একটি চেয়ারে বসে হাতের একে ৪৭ টি দেখছিলেন । আবু বাসির কিছু না বলে বাড়ি থেকে বের হলেন । বাংকারের কাছে এসে কিবলামুখী হয়ে তাহাজ্জুদের জন্য দাঁড়ালেন । নামাযে ভিন্ন এক স্বাদ উপভোগ করছেন । তিনি লক্ষ্য করেছেন , যেদিন থেকে অস্ত্র হাতে জিহাদের বাইআত নিয়েছেন সেদিন থেকে নামাযে ভিন্ন এক স্বাদ পেতে আরম্ভ করেছেন তিনি । এ স্বাদ অমৃত । না , ভুল হলো । অমৃতের চেয়েও বেশি কিছু । নামায শেষ করে দু হাত তুলে মুনাজাত করলেন । বিড়বিড় করে কী যেন বলতে লাগলেন আবু বাসির । তার দু চোখ বেয়ে অশ্রুর ধারা বইতে লাগল । তিনি এক প্রাপ্তির প্রশান্তি অনুভব করতে লাগলেন ।
চলবে........
ইনশাআল্লাহ ।
Comment