"শহীদ মুহাম্মাদ ফারুক"
কারকুক প্রদেশের কুফরা অঞ্চলে হতদরিদ্র এক ছোট্ট পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। বিভিন্ন বাধা প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে তিনি লেখাপড়া চালিয়ে গিয়েছেন। আল্লাহর পথের দাঈ হিসাবেই তিনি বেড়ে উঠেছেন। এবং এ ক্ষেত্রে তিনি কিছু পরীক্ষার সম্মুখীন ও হয়েছিলেন, যা আসলে প্রত্যেক দায়ীর ক্ষেত্রেই ঘটে।
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
মানুষ কি ভেবেছে যে, তারা বলবে 'আমরা ঈমান এনেছি। আর তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হবে, কোন পরীক্ষা ও করা হবে না?(সূরা আনকাবূত, আয়াত-২)
প্রায় এক বছর তিনি জেলের অন্ধকারে কাটিয়েছেন, সে সময় তিনি দশ পারা কোরআন হেফজ করেছেন। জেলের মধ্যেই তিনি সোম ও বৃহস্পতিবার রোযা রাখতেন। আরো যারা তার সাথে এই পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছেন, তাদের প্রতি ইহসান ও কোরবানির অপূর্ব দৃষ্টান্ত পেশ করেছিলেন। তাদের একজনের ভাষ্য অনুযায়ী-' যখনই গভীর রাতে আমার ঘুম ভাঙ্গতো, দেখতাম হয় তিনি বসে বসে কোরআন তেলাওয়াত করছেন অথবা দাড়িয়ে দাড়িয়ে নামাজ আদায় করছেন।
জিহাদের প্রতি ছিল তার হৃদয়ের টান তাই তিনি ইরাকের মাটি ছেড়ে এমন কোথাও যাওয়ার সংকল্প গ্রহন করেছিলেন যেখানে জান্নাতের ঘ্রাণে আর তরবারির ঝংকারে তার দিন রাত কেটে যাবে। তিনি ডাক্তারি পড়াশোনা করেছিলেন। কিন্তু মন তার পড়ে থাকতো জিহাদের ময়দানে। তবে সাথীদের পীড়াপীড়িতে অবশ্য ডাক্তারী শেষ করেছিলেন। যাতে জিহাদের ময়দানে তা কাজে আসে। একসময় তিনি সব ফেলে জিহাদের ময়দানে চলে এলেন। তিনি যেই দলে ছিলেন, সেই দলের আমীর একদিন ঘোষনা করলেন যে, তাদের হাতে থাকা সকল অর্থ ফুরিয়ে গেছে। সুতরাং যে কোন একজনকে ঝুকি নিতে হবে। মুজাহিদদের কেন্দ্র থেকে অর্থ আনার ব্যবস্থা করতে হবে। তো কে প্রস্তুত আছো? কিন্তু কেউই দাড়ালো না, কেননা রাস্তার প্রতিটি মোড়ে, প্রতিটি বাকে মৃত্যু ওঁৎ পেতে আছে। আর কারো কাছেই এমন কোন কাগজ পত্র নেই, যা রাস্তার চেকপোস্ট গুলোতে পুলিশদের রোষানল থেকে তাদের রক্ষা করবে; বরং তাদের প্রায় প্রত্যেকেই সরকারের কাছে পূর্ব পরিচিত, যা তাদেরকে সর্বদা তাড়িয়ে বেড়ায়। সুতরাং রাস্তায় বের হওয়া মানেই মৃত্যুর দিকে অগ্রসর হওয়া। সেই মুহুর্তে তিনি দাড়িয়ে গেলেন এবং সাথীদের রক্ষার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিলেন। আমীরের আদেশ বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তুত হয়ে গেলেন। তার এই ঘটনা খন্দকযুদ্ধের রাতে হযরত হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান রাদিআল্লাহু আনহুর কথা স্বরণ করিয়ে দেয়। রাসুলুল্লাহ (ﷺ) কাফেরদের অবস্থা জানার জন্য সাহাবাদের থেকে একজনের বের হওয়া কামনা করেছিলেন। কিন্ত তিনি ছাড়া কেউই বের হওয়ার জন্য প্রস্তুত হননি। তো শহীদ ফারুক যখন প্রস্তুত হচ্ছিলেন তখন তার হৃদয়ে ছিল শহীদী মওতের তামান্না। তার এক সঙ্গী বলেছে - আমি গাড়ীতে তার সাথে ছিলাম। যখন গুরুত্বপূর্ণ কোন চেকপোস্টের কাছে এসে পৌছাতাম, তখনই আমি তাকে জিঙ্গাসা করতাম, ওদেরকে দেখানোর মত আপনার কাছে কি আছে? তিনি বললেন- রাব্বুল আলামিনের উপর ভরসার পাথেয় ছাড়া আর কিছুই নেই। আল্লাহ আমাদেরকে প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। তাই আমরা যথাসম্ভব প্রস্তুতি নিয়েছি। কিন্তু জাগতিক কোন প্রস্তুতি নিতে পারিনি, তাই আমার কাছে শুধু রাব্বুল আলামীনের প্রতি ঈমানের পাথেয়টুকুই আছে। এ কথাগুলো আমার হৃদয়ের গভীরে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। এমনিতে এই চেকপোস্টে খুব কঠিনভাবে চেক করা হত। কিন্তু সেদিন মুহুর্ত কয়েক অতিক্রম না করতেই দায়িত্বশীল অফিসার সব গাড়ীকে চেক করা ছাড়াই চলে যাওয়ার জন্য ইশারা করলো। তো এটা ছিল মহান আল্লাহ পাকের কালামের বাস্তব প্রমান।
যেমন তিনি বলেছেন - “ যে আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তার সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করে দেন। এবং তাকে তার কল্পনাতীত স্থান থেকে রিজিক দান করেন। যে আল্লাহর উপর ভরসা করে, তিনি তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান। নিশ্চয়ই আল্লাহ যা ইচ্ছা করতে পারেন। আল্লাহ সকল কিছুর জন্য তাকদীর নির্ধারন করে দিয়েছেন।”
পরবর্তীতে তিনি ইরানে গিয়েছিলেন, সেখান থেকে পৌছে গেলেন আফগানিস্তানে। যেখানে মুজাহিদ বীর পুরুষরা রক্ত আর অসত্যের মাঝে মিশে যায়। হারাত অঞ্চলে পৌছে তিনি পরবর্তীতে রণাঙ্গনে তার চিকিৎসা কাজে লাগালেন। পরবর্তীতে সেখানেই তিনি শাহাদাতের সৌভাগ্য অর্জন করলেন। আল্লাহর কি ইচ্ছা! শাহাদাতের জন্য তাকে ময়দানে ছুটে যেতে হয়নি ; বরং শাহাদাত তাকে এসে আলিঙ্গন করেছে তার কর্মস্থলে। এভাবেই তিনি আল্লাহর নিকট পৌছে গেলেন এবং আল্লাহর পথের পথিক সেই মহান দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেলেন। যাদের কবর ছড়িয়ে আছে আফগানিস্তানের সুবিস্তৃত পর্বতভূমির নিচে। আর ইতিহাসের পাতায় সাক্ষ্য দিয়ে গেলেন যে এই জিহাদ আন্তর্জাতিক ইসলামি জিহাদ ; কোন জাতীয়তাবাদী লড়াই নয়। যদিও তাতে কোরবানি ও ইচ্ছার এবং সবর ও মর্যাদার ক্ষেত্রে আফগানিস্তানের সন্তানদের জন্যই থাকবে সর্বোচ্চ স্থান। হে আল্লাহ আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। আর আপনার প্রশংসা সহ সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং আপনার কাছেই তওবা করছি।
(কারা জান্নাতী কুমারীদের ভালবাসে পৃ: ২০৯)
Comment