এক.
হাসান বসরী রহ. (১১০হি.)
হাসান বসরী রহ. (১১০হি.)
বিশিষ্ট তাবিয়ী। অনেক সাহাবি থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন। তাফসীর, হাদিস ও ফিকহে যামানার শ্রেষ্ঠ ইমাম। খলিফায়ে রাশেদ উমার ইবনু আব্দুল আজিজ রহ. এর খেলাফতকালে তিনি বসরার কাযি ছিলেন।
হযরত উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুর খেলাফতের দুই বছর বাকি থাকতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। হযরত উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর শাহাদাতের সময় তার বয়স ছিল চৌদ্দ।
তার পিতা-মাতা উভয়ই যুদ্ধবন্দী দাস ছিলেন। আল্লাহ তাআলা তাদেরই ঔরসে এ মহামানবের জন্ম দেন। তার মা উম্মুল মু’মিনীন উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহার ঘরে কাজ করতেন। অনেক সময় তিনি কাজের ব্যস্ততায় শিশু হাসান রহ.কে দুধ পান করাতে পারতেন না। তিনি যখন কাঁদতে থাকতেন, অনেক সময় উম্মুল মু’মিনীন উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা তাকে দুধ পান করাতেন। বলা হয়, সে দুধের বরকতেই এ ইলম ও হিকমতের দৌলত তিনি লাভ করেন। তাছাড়া তার মা তাকে সাহাবায়ে কেরামের কাছে নিয়ে যেতেন এবং দোয়া চাইতেন। তারা জন্য দোয়া করতেন। হযরত উমার ফারুক রাদিয়াল্লাহু আনহু তার জন্য দোয়া করেন,
اللهم فقهه في الدين، وحببه إلى الناس. اهـ
“হে আল্লাহ! তুমি তাকে দ্বীনের সমঝ দান কর এবং মানুষের কাছে তাকে প্রিয় বানিয়ে দাও।”- আলবিদায়া ওয়াননিহায়া ৯/২৯৫তার যামানায় তিনি সাহাবায়ে কেরামের সাথে সবচেয়ে বেশি সাদৃশ্যপূর্ণ ছিলেন। এমনকি এও বলা হয় যে, তিনি নবীগণের সাদৃশ্য রাখতেন।
তিনি অত্যন্ত সুদর্শন, শক্তিশালী ও বীরবাহাদুর সুপুরুষ ছিলেন। বীরত্বের জন্য সুখ্যাত ছিলেন। শুরু শুরুতে তিনি জিহাদ নিয়েই পড়ে থাকতেন। এমনকি খুরাসানের আমীর আর-রবি ইবনু যিয়াদের কাতেবে পরিণত হন। তার হাতের কব্জি এক বিঘত প্রশস্ত ছিল- যা খুবই বিরল। উমাইয়া শাসনামলে তিনি খুরাসানে জিহাদ করতেন। তিনি এমনই প্রসিদ্ধ বীর ছিলেন যে, আমীরুল মুজাহিদিন আলমুহাল্লাব ইবনু আবি সুফরা যখন মুশরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়াতেন, তখন হাসান বসরী রহ.কে সামনের কাতারে রাখতেন।
ইমাম যাহাবি রহ. (৭৪৮হি.) ‘সিয়ারু আ’লামিন নুবালা’ গ্রন্থে হিশাম ইবনু হাসসান রহ. থেকে বর্ণনা করেন (৪/৫৭৮),
كان الحسن أشجع أهل زمانه. اهـ
“হাসান রহ. যামানার সর্বশ্রেষ্ট বীর ছিলেন।”
“হাসান রহ. যামানার সর্বশ্রেষ্ট বীর ছিলেন।”
আছমায়ী রহ. এর সূত্রে তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন (৪/৫৭২),
ما رأيت زندا أعرض من زند الحسن البصري، كان عرضه شبرا. قلت: كان رجلا تام الشكل، مليح الصورة، بهيا، وكان من الشجعان الموصوفين. اهـ
“হাসান বসরীর কব্জির চেয়ে প্রশস্ত কোন কব্জি দেখিনি। তার কব্জি এক বিঘত প্রশস্ত ছিল। আমি বলি- অর্থাৎ যাহাবি রহ. বলেন- শারীরিকভাবে তিনি পূর্ণ গড়নবিশিষ্ট ব্যক্তি ছিলেন। সুদর্শন ও চক্ষুশীতলকারী ছিলেন। প্রসিদ্ধ বীরদের একজন ছিলেন।”আরো বলেন (৪/৫৭২),
لم يطلب الحديث في صباه، وكان كثير الجهاد، وصار كاتبا لأمير خراسان الربيع بن زياد
وقال سليمان التيمي: كان الحسن يغزو، وكان مفتي البصرة جابر بن زيد أبو الشعثاء، ثم جاء الحسن، فكان يفتي. اهـ
সুলাইমান আততাইমি রহ. বলেন, হাসান রহ. জিহাদ করতেন। তখন বসরার মুফতি ছিলেন, আবুশ শা’ছা জাবির ইবনু যায়দ রহ.। এরপর যখন হাসান রহ. আসলেন, তখন তিনিই ফতোয়া দিতেন।”
ইতিহাসবিদ ফাসাবি রহ. (২৭৭হি.) ‘আলমা’রিফাতু ওয়াততারিখ’ কিতাবে জা’ফর ইবনু সুলাইমান রহ. থেকে বর্ণনা করেন (২/৪৯),
كان الحسن من أشد الناس إذا حضر الناس ... وكان المهلب إذا قاتل المشركين فكان الحسن من الفرسان الذين يقدمون. اهـ
“যুদ্ধ যখন বেঁধে যেতো, তখন হাসান রহ. অতীব জানবাজ ব্যক্তি পরিগণিত হতেন। … (আমীর) মুহাল্লাব যখন মুশরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়াতেন, তখন হাসান রহ. ঐসকল বীর ঘোড়সওয়ারদের অন্তর্ভুক্ত থাকতেন, যাদেরকে অগ্রে রাখা হতো।”আব্দুল্লাহ ইবনু আউন রহ. থেকে বর্ণনা করেন (২/৪৯),
سألت محمدا عن شيء من أمر الطعام في الغزو. فقال: سل الحسن فإنه كان يغزو. اهـ
“আমি মুহাম্মাদ ইবনু সিরিন রহ. এর কাছে যুদ্ধের ময়দানে খাদ্য সংক্রান্ত একটি বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, ‘হাসানকে জিজ্ঞেস কর। কারণ, তিনি জিহাদ করতেন’।”আবু খালিদ মুহাজির রহ. থেকে বর্ণনা করেন (২/৫২),
ذكر لأبي العالية الحسن، فقال: رجل مسلم يأمر بالمعروف وينهى عن المنكر. اهـ
“আবুল আলিয়া রহ. এর কাছে হাসান রহ. এর আলোচনা উঠল। তিনি বললেন, তিনি এমন একজন মুসলিম ছিলেন, যিনি আমর বিল মা’রূফ ও নাহি আনিল মুনকার করতেন।”হাসান বসরী রহ. ১১০ হিজরীতে ইন্তেকাল করেন।
***
Comment