দশ.
ইমাম বুখারি রহ. (১৯৪-২৫৬ হি.)
ইমাম বুখারি রহ. (১৯৪-২৫৬ হি.)
আমাদের সালাফদের মধ্যে যাদের মূল ব্যস্ততা ছিল ইলম, তারাও সর্বদা জিহাদের জন্য নিজেকে প্রস্তুত রাখতেন, যেন প্রয়োজন হলেই ঝাঁপিয়ে পড়া যায়। এর দৃষ্টান্ত ইমাম বুখারি রহ.। যার সারা জীবন হাদিস সাধনায় নিমজ্জিত, তিনিও জিহাদের জন্য সদা প্রস্তুত। ইমাম বুখারি রহ. এর শাগরেদ আবু হাতিম আলওয়াররাক রহ. এর বরাতে খতীব বাগদাদি রহ. বর্ণনা করেন,
كان أبو عبد الله إذا كنت معه في سفر يجمعنا بيت واحد إلا في القيظ أحيانا ... ورأيته استلقى على قفاه يوما ونحن بفربر في تصنيف التفسير، وكان أتعب نفسه في ذلك اليوم في كثرة إخراج الحديث، فقت له: يا أبا عبد الله سمعتك تقول يوما إني ما أتيت شيئا بغير علم قط منذ عقلت، فأي علم في هذا الاستلقاء؟ فقال: أتعبنا أنفسنا في هذا اليوم، وهذا ثغر من الثغور خشيت أن يحدث حدث من أمر العدو فأحببت أن أستريح وآخذ أهبة ذلك، فإن غافصنا العدو كان بنا حراك. اهـ تاريخ بغداد، للخطيب البغدادي، 2/332-333
“যখন আবু আব্দুল্লাহ (বুখারি রহ.) এর সাথে সফরে থাকতাম, তখন আমি আর তিনি একই ঘরে থাকতাম। তবে বেশি গরম পড়লে মাঝে মাঝে ব্যতিক্রম হত। ... একদিন দেখলাম, তিনি উপর দিকে মুখ করে চিৎ হয়ে শুয়ে আছেন। এ সময় আমরা ফিরাবরাতে ছিলাম। আমাদের মগ্নতা ছিল কিতাবুত তাফসির রচনা। অত্যধিক পরিমাণে হাদিস তাখরিজ করার কারণে সেদিন তিনি ক্লান্ত ছিলেন। এভাবে শুয়ে থাকতে দেখে আমি জিজ্ঞেস করলাম, আবু আব্দুল্লাহ! একদিন শুনেছিলাম আপনি বলেছিলেন, ‘যে দিন থেকে আমার বুঝ হয়েছে, সেদিন থেকে কখনও না বুঝে ইলম ছাড়াই কোন কাজ করিনি’। আপনি যে এভাবে চিৎ হয়ে শুয়ে আছেন, এটা আপনি কি বুঝে করছেন? তিনি উত্তর দেন, আজ আমরা অনেক ক্লান্ত। আর এ এলাকাটা হচ্ছে সীমান্ত এলাকা। ভয় হচ্ছে, কাফেরদের থেকে কোন অঘটন ঘটতে পারে। এজন্য একটু বিশ্রাম নিয়ে মোকাবেলার প্রস্তুতি নিচ্ছি। যদি শত্রুর মুখোমুখি হতে হয়, তাহলে প্রফুল্লতার সাথে লড়তে পারবো।”- তারিখে বাগদাদ ২/৩৩২-৩৩৩
শাগরেদের প্রশ্ন জেগেছিল, এভাবে শুয়ে থাকা কি কোন কাজের কাজ? বুঝা গেল, এভাবে শুয়ে থাকা ইমাম বুখারির অভ্যাস ছিল না। তবে আজ যেহেতু কাফেরদের থেকে আক্রমণের আশঙ্কা ছিল, তাই শুয়ে একটু বিশ্রাম নিয়ে নিচ্ছেন, যেন লড়াইয়ের সময় ক্লান্তি না আসে।
এ হলেন ইমাম বুখারি। রিবাতের ভূমিতে বসে তিনি বুখারি শরীফ লিখেছেন। প্রয়োজনের সময় জিহাদের সংকল্পও করেছেন। আর স্পষ্ট যে, পূর্ব থেকে যথার্থ ট্রেনিং না থাকলে প্রথম দিনই যুদ্ধ করা যায় না। তাই স্পষ্ট এটাই যে, তিনি আগে থেকেই জিহাদের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। অশ্ব চালনা, তীরন্দাজি, বর্শা ও তলোয়ার চালনা: সব কিছুরই প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রেখেছেন, যেন প্রয়োজনের সময় ঝাঁপিয়ে পড়া যায়। এবার আমাদের সমাজে যারা বুখারি শরিফ পড়িয়ে শাইখুল হাদিস হচ্ছেন, বুখারি শরীফের জিহাদের হাদিসগুলোকে যারা অপব্যাখ্যা করে উম্মাহকে জিহাদ-বিমুখ করছেন, কিংবা অন্তত গোপন করে কিতমানে ইলম করছেন, চিন্তা করুন! এজন্যই কি ইমাম বুখারি কিতাব লিখেছেন রিবাতের ময়দানে বসে?
Comment