শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ স্নাইপারঃ বাগদাদ_স্নাইপার ’
.
.
জানতেন কি এখন পর্যন্ত একবিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ স্নাইপার মার্কসম্যান হলেন একজন মুসলিম, মুজাহিদ যিনি ছিলেন ইরাকে অ্যামেরিকান সৈন্যদের নিকট এক মূর্তিমান আতঙ্ক? অ্যামেরিকানরা এ অজানা স্নাইপারের নাম দিয়েছিল ‘জুবা’, যার অর্থ আফ্রিকার যম নৃত্য; অর্থাৎ জুবা এসে গেলে মৃত্যুর হাত থেকে তাদের রেহাই পাওয়া কঠিন।
.
.
বাংলা ভাষাভাষী মুসলিমদের মাঝে তিনি পুরোপুরি অপরিচিত হলেও আরব বিশ্বে তাকে নিয়ে নির্মিত হয়েছে শর্ট ফিল্ম, কমিক্স থেকে শুরু করে ভিডিও গেইম।
.
তার আবির্ভাব হয় ২০০৫ সালে, ইরাকে অ্যামেরিকার দখলদারিত্বের দ্বিতীয় বছরের শেষের দিকে। বোঝা যায় তিনি থাকতেন বাগদাদের দক্ষিণে সুন্নী অধ্যুষিত এলাকায়। পশ্চিমা মিডিয়ার মধ্যে প্রথম ব্রিটেনের গার্ডিয়ান ২০০৫ এর আগস্টে তার স্টোরি কভার করে।
.
.
এর শুরুটা হয়েছিল এভাবে-
.
.
১) “তারা কখনো জুবাকে দেখেনি। যখন তারা তাকে শুনতে পায় ততক্ষনে অনেক দেরী হয়ে গেছে; একটি গুলি বেরিয়ে যায় আর আরেকজন অ্যামেরিকান সৈন্য আহত বা নিহত হয়ে ধপ করে পড়ে যায়।
.
কখনো ফলো আপ শট হয়না, অ্যামেরিকান সৈন্যদের জন্য কখনো সুযোগ হয়না উৎস চিহ্নিত করে শিকারিকে শিকার করার। সে একবার গুলি করে, এরপর নাই হয়ে যায়।
জুবা ডাকনাম অ্যামেরিকান সৈন্যরা এক বিদ্রোহী স্নাইপারকে দিয়েছে যে বাগদাদের দক্ষিণে অপারেট করে। তারা তার চেহারা, জাতীয়তা বা আসল নাম জানেনা কিন্তু তার দক্ষতাকে জানে এবং ভয় করে।
.
“সে দক্ষ,” ক্যাম্প রুসতামিয়ায় ঘাঁটি গড়া ১-৬৪ ব্যাটালিয়নের ২২ বছর বয়সী স্নাইপার ও বিশেষজ্ঞ ট্র্যাভিস বিউরেস বলেন “যখনই আমরা (আরমার্ড পারসোনেল ভেহিকল বা হামভি থেকে) নামি, আমি নিশ্চিত আমাদের প্রত্যেকের মাথায় তার চিন্তা ঘুরে। সে আমাদের জন্য এক বিশাল হুমকি।”
.
.
( They have never seen Juba. They hear him, but by then it's too late: a shot rings out and another US soldier slumps dead or wounded.
.
There is never a follow-up shot, never a chance for US forces to identify the origin, to make the hunter the hunted. He fires once and vanishes.
.
Juba is the nickname given by American forces to an insurgent sniper operating in southern Baghdad. They do not know his appearance, nationality or real name, but they know and fear his skill.
.
"He's good," said Specialist Travis Burress, 22, a sniper with the 1-64 battalion based in Camp Rustamiyah. "Every time we dismount I'm sure everyone has got him in the back of their minds. He's a serious threat to us.")
.
.
কয়েক মাসের ব্যবধানে সে ব্যাটালিয়নেরই আটজন সৈন্য জুবার শিকারে পরিণত হন। এরপর সাংবাদিক ররি ক্যারোল লিখেনঃ “এ যুদ্ধ যা সাম্প্রদায়িক বোমাবাজি আর বেসামরিক হতাহতের জন্য চিহ্নিত, তাতে প্রথাবিরুদ্ধভাবে জুবা শুধুমাত্র কোয়ালিশন সেনাদেরই টার্গেট করে যা একটি কঠিন লক্ষ্যবস্তু তাদের আরমার্ড ভেহিকল, বডি আরমার আর হেলমেট দিয়ে সুরক্ষিত থাকার কারণে।
.
সে সৈন্যদের হামভির টারেটে দাঁড়ানো বা তা থেকে নামার জন্য অপেক্ষা করে; এরপর তাদের বডি আরমারের ফাঁকে, মেরুদণ্ডের নিম্নভাগে, পাঁজর বা বুকের উপরে টার্গেট করে। সে ২০০ মিটার দূর থেকেও হত্যা করেছে।
.
“এটা একদম নিখুঁত শট ছিল,” ব্যাটালিয়ন কমান্ডার লে কর্নেল কেভিন ফ্যারেল এক ঘটনার উল্লেখ করেন, “মেরুদন্ড একদম উড়িয়ে দিয়েছে।” “আমাদের বিভিন্ন কৌশল আছে তাকে টোপ দিয়ে বের করে নিয়ে আসার জন্য, কিন্তু সে খুবই ভালো প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং ধৈর্যশীল। সে দ্বিতীয় গুলি করেনা।”
.
দ্বিতীয়বার শট করলে স্নাইপারের অবস্থান কম্প্রোমাইজড হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে। দিন হলে শব্দের দিক নির্ণয়ের মাধ্যমে বা রাত হলে বন্দুকের ফুলকি দেখে। দুই বছর পর অবশ্য জুবা তার ট্যাকটিকস পরিবর্তন করেন। প্রথম শটে কোন অ্যামেরিকান সৈন্য মারা না গিয়ে আহত হলে তার সাহায্যে আসা দ্বিতীয় সৈন্যকেও ধরাশায়ী করে দেয়া হয়।
.
.
২) কিছুদিনের মধ্যে জুবার স্টাইলের উন্নতি ঘটে। গুলি করে চলে যাবার আগ দিয়ে তিনি ব্যাটম্যানের মত একটা গুলির খোসা ও চিরকুট রেখে যেতেন। পরে অ্যামেরিকান সৈন্যরা আশে পাশে খোঁজ করতে গিয়ে সেই চিরকুট পেত যাতে লেখা থাকতোঃ ﻗﻨﺎﺹ ﺑﻐﺪﺍﺩ ﻣﺮﺍ ﻣﻦ ﻫﻨﺎ ) ) অর্থাৎ বাগদাদ স্নাইপার এখান দিয়ে গিয়েছিল। অথবা লেখা থাকতো, “What has been taken in blood cannot be regained except by blood — The Baghdad Sniper.”
.
.
৩) উনি নিজেকে জুবা বলতেন না, নিজের ক্ষেত্রে ব্যবহার করতেন ‘বাগদাদ স্নাইপার’ আর দখলদার প্রতিরোধকারী মুজাহিদীনদের নিকট তার কুনিয়া ছিল আবু সালেহ, কেউ কেউ বলতো ‘Eagle Eye’। ইরাকের বিদ্রোহী মুজাহিদীন গ্রুপগুলোর সাথে সম্পর্ক ছিল এমন একজন লিখেন তার পরিবার জানতো না তার অপারেশনগুলোর ব্যাপারে। তিনি প্রতিদিন বাসা থেকে বের হতেন কাজে বের হবার নাম করে।
বাগদাদ স্নাইপারের প্রিয় ফিচার ছিল হেডশট, মাথায় গুলি খাবার পর অ্যামেরিকান সৈন্যরা মরার আগে একটু শব্দ করারও সময় পেতনা। আর অপারেশনের জন্য ব্যবহার করতেন ‘তাবুক’ স্নাইপার রাইফেল। এটি সোভিয়েত “ড্র্যাগোনোভ” রাইফেলের ইরাকী আপগ্রেড ছিল (যেমন বাংলাদেশ অ্যাসাল্ট রাইফেল হিসেবে এখন মূলত BD-08 ব্যবহার করে যার ডিজাইন একে-৪৭ থেকে নেয়া হয়েছে)।
পেন্টাগন মিডিয়ায় বাগদাদ স্নাইপারের অস্তিত্ব অস্বীকার করা শুরু করলে তিনি তার স্পটারকে দিয়ে তার অপারেশনের ভিডিও করা শুরু করেন। ২০০৫ এর নভেম্বরে বাগদাদ স্নাইপার নামে প্রথম তার অপারেশনের ভিডিও প্রকাশিত হয়। সে ভিডিও থেকে জানা যায় তিনি “জাইশুল ইসলামী ফিল ইরাক” এর সাথে কাজ করতেন, এক ইরাকী সালাফি ইনসার্জেন্ট দল। ভিডিও শুরু হয় একটি কন্ঠ দিয়ে- “আমার এ বন্দুকে নয়টা বুলেট আছে, সেই সাথে জর্জ বুশের জন্য আমার একটা উপহার আছে। এই নয় বুলেট দিয়ে আমি (তার) নয়জন সৈন্যকে মারতে যাচ্ছি।” এরপর বাগদাদের ভেতর নয়টি ভিন্ন ভিন্ন অপারেশনের ফুটেজ দেয়া হয় যেখানে নয়জন অ্যামেরিকানের সমাপ্তি দেখা যায়।
.
ভিডিওর কারণে পেন্টাগনের পক্ষে কঠিন হয়ে যায় এ নিয়ে মিথ্যা বলা। ইরাকের পুতুল সরকার দুই বার ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে মিথ্যা দাবী করে তারা বাগদাদ স্নাইপারকে গ্রেফতার করেছে...
.
.
৪) ২০০৬ সালের অক্টোবর মাসে দ্বিতীয় ভিডিও “বাগদাদ স্নাইপার ২” ইন্টারনেটে আসে। যেখানে একটি ক্যালেন্ডার দেখা যায়। আবু সালেহ/ জুবা যে সব দিনে শিকার করেছে সে সব দিনে ক্রস চিহ্ন দেয়া। ভিডিওতে মোট ৩৭ অ্যামেরিকান সৈন্যের ধরাশায়ী হবার ঘটনা দেখা যায়। ভিডিওর শেষে জাইশুল ইসলামী ফিল ইরাক জানায় আবু সালেহ তার অধীনে তরুণদের স্নাইপার প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। এও জানানো হয় যে এক বছরে আবু সালেহ ও তার স্নাইপার ব্রিগেড মোট ৬৩৪ অ্যামেরিকান সৈন্য, ২৩ অফিসার ও ১১ স্নাইপারকে হত্যা ও ২০৬ অ্যামেরিকান সৈন্যকে আহত করেছে। মজার বিষয় হল যে বইটি থেকে মূলত শিক্ষা দেয়া হচ্ছে তা সাবেক এক অ্যামেরিকান মেজরেরই লেখা- The Ultimate sniper. বইয়ের লেখক জন প্লাস্টার বাগদাদ স্নাইপারের ব্যাপারে এবিসির সাথে সাক্ষাৎকারে তার দক্ষতার প্রশংসা করে বলেনঃ “সে অবশ্যই ভালোভাবে অবগত একটি বন্দুক দিয়ে কি করতে হয়। তার বিবেচনা ও শৃঙ্খলা আছে একটি শট নেবার, বুদ্ধিমত্তার সাথে সরে যাবার পথ বেঁছে রাখার এবং শটের পরপরই গ্রেফতার এড়াতে সে স্থান ত্যাগ করার। সে উম্মক্ত কেউ না, সে একজন মাপা শুটার”।
.
.
এ ভিডিওগুলো অ্যামেরিকার PsyOps বা মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধে একটা বিশাল আঘাত হানে। কেননা পেন্টাগন বরাবর বিশ্ব মিডিয়ায় মিথ্যে দাবী করে আসছিলো যে ইরাক যুদ্ধে তাদের সৈন্যদের হতাহতের সংখ্যা খুবই কম। অ্যামেরিকান সৈন্যদের বিপুল সংখ্যায় এভাবে হতাহত হবার প্রমাণ ভিডিও আকারে আসায় আরব জনগণের নিকট “অ্যামেরিকান ইনভিন্সিবিলিটি”র জুরাজুরি খতম হয়ে যায়।
.
২০০৭ সালে বাগদাদ স্নাইপারের নিজস্ব ওয়েবসাইট খোলা হয় এবং সেখান থেকে তৃতীয় ও চতুর্থ ভিডিও আপলোড করা হয়।
.
২০০৭ সালে জাইশুল ইসলামী অ্যামেরিকার সাথে হাত মিলিয়ে সাহাওয়াতে পরিণত হলে জুবা সে দল ছেড়ে দেন। পরবর্তীতে সাহাওয়াতের খেয়ানতের ফলেই তিনি শাহাদাত (ইনশাআল্লাহ) লাভ করেন। তবে এখন পর্যন্ত তার জীবন-শাহাদাত পুরো বিষয়টিই গোপনীয়তাও রহস্যময়তায় ঢাকা; হয়তো আল্লাহর এ বান্দার নিকট মানুষের প্রশংসার চেয়ে আল্লাহর সন্তোষই বড় ছিল যেমন যুবাইর ইবনুল আওয়াম (রাঃ) ও আব্দুল্লাহ ইবন মুবারাক (রাঃ) এর ক্ষেত্রে দেখা গেছে। তিনি যাদের সাথে কাজ করেছেন সবাই তার ইচ্ছানুযায়ী তার আসল নাম-পরিচয় গোপন রেখেছে। তার আসল নাম কি, তার চেহারা ইত্যাদি এখন পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি।
.
ইরাকী পুলিশ আবু নিজার আল জাবুরীকে গ্রেফতার করে দাবী করেছিল সেই বাগদাদ স্নাইপার, যদিও এটি মিথ্যা হবার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।
.
.
৫) অনেকে দাবী করেন তিনি এককালে মসুল থেকে আসা সাদ্দামের বাহিনীতে ক্যাপ্টেন ছিলেন যার কুনিয়া ছিল আবু বারা। এ দাবীর কোন যৌক্তিকতা নেই। কেউ বলেছে তার নাম ছিল ওসমান, এ দাবীরও কোন ভিত্তি নেই।
.
২০১৪ সালে অ্যামেরিকার প্রোপ্যাগান্ডা মুভি “American Sniper” এ মুস্তাফা নামের একজন ইনসার্জেন্ট স্নাইপারকে দেখানো হয় যাকে ক্রিস কাইল হত্যা করে। যদিও বিষয়টি জুবার ভয় থেকে অনুপ্রাণিত, তবু বিষয় হলো এ ঘটনাসহ মুভিতে দেখানো অধিকাংশ বিষয়ই হলো মিথ্যা ও সাজানো যার কিছুটা ক্রিস কাইল সাজিয়েছে তার জীবনীতে আর বাকীটা ইস্টউড তার মুভিতে।
.
অ্যামেরিকার শ্রেষ্ঠ মার্কসম্যান হিসেবে খ্যাত ক্রিস কাইলের কনফার্মড কিল নাম্বারের দাবীর কোন শক্ত ভিত্তি নেই। তার ১৬০ কনফার্মড কিলের বিষয়টিও প্রশ্নবিদ্ধ। আর এখন পর্যন্ত বিশ্বের শ্রেষ্ঠ মার্কসম্যান ও রেকর্ড নম্বর কনফার্মড কিলের দাবীদার হলেন ফিনিশ স্নাইপার সিমো হাইহা যার কনফার্মড কিলের সংখ্যা ৫০৫ সোভিয়েত সৈন্য। কিন্তু জাইশুল ইসলামের দাবী আবু সালেহ ওরফে বাগদাদ স্নাইপারের কনফার্মড কিলের সংখ্যা হলো ৬৪৫ অ্যামেরিকান সৈন্য যার মধ্যে পাঁচ শতাধিক হলো হেডশট। যদি এ দাবী সত্য হয় তাহলে তা বাগদাদ স্নাইপার আবু সালেহকে শুধু মুসলিমদের মাঝে বা একাদশ শতাব্দীতেই শুধু শ্রেষ্ঠ স্নাইপার বানাবেনা বরং তিনি হবেন এখন পর্যন্ত সর্ব কালের সেরা স্নাইপার।
.
[ তার কিছু শিকারের কম্পাইলেশনের একটি ভিডিও এখনও ইন্টারনেটে আছে। যারা আগ্রহী তারা এখান থেকে সেটি নামাতে পারেন- https://archive.org/details/
JubaBaghdadSniper1-4Compilation ]
.
.
নোটঃ
.
.
১। ‘ Elusive sniper saps US morale in Baghdad’, The Guardian, 5 August 2005.
.
২। ‘Juba the Sniper Legend haunting troops in Iraq’, STARS AND STRIPES, April 22, 2007.
.
৩। পূর্বোক্ত
.
৪। ‘Juba The Sniper’ in Iraqi Police custody?’, Nibras kazimi, Talisman Gate, 29 November 2006.
.
৫। ‘Baghdad Sniper: Myth or Menace?’, ABC News, 10 Feb 2006
৬। kazimi, Ibid.
.
৭। ‘Famed ‘Baghdad Sniper’ Mourned by Jihadist Websites’, kazimi, Talisman Gate, 26 February 2006.
.
৮। ‘We Had American Sniper Chris Kyle. The Enemy Had Juba the Baghdad Sniper’, History Network, 27 March, 2015
.
৯। ‘American Sniper vs. Baghdad Sniper’, Sputnik News, 26 February, 2016
.
১০। ‘American Sniper: 10 burning questions’, The Telegraph (UK), 19 February, 2015
.
১১। পূর্বোক্ত
.
১২। ‘Conflict in Iraq: The sniper who shoots on video’, Independent (UK) ,9 November 2006
.
১৩। ﻗﻨﺎﺹ ﺑﻐﺪﺍﺩ .. ﺳﻬﺎﻡ ﺍﻟﻤﻮﺕ ﻟﺤﺼﺪ ﺃﺭﻭﺍﺡ ﺍﻟﻤﺤﺘﻠﻴﻦ ', , ﺭﺳﺎﻟﺔ ﺍﻹﺳﻼﻡ , ﻣﻌﺘﺰ ﺑﺎﻟﻠﻪ ﻣﺤﻤﺪ 13/02/2013
Juba Baghdad Sniper 1-4 Compilation : Islamic Army in Iraq, Abu Talha (clips from "dunya is passing by" : Free Download, Borrow, and Streaming : Internet Archive
archive.org
collected
মূল পোস্ট:: আহমাদ আব্দুল্লাহ
Comment