খোরাসানের পথে হিজরত করা একজন পাকিস্তানি বোনের আত্মজীবনী- পর্ব-১
খাওলা বিনতে আব্দুল আজিজ
এয়ারপোর্টে বিশাল জনস্রোত| সবাই নিজ নিজ গন্তব্যে পৌঁছার জন্য অস্থির| যতদূর পর্যন্ত দৃষ্টি যায় লাল, সাদা, রঙ্গিন, শুভ্র চুল এবং হলুদ চোখের মরা চেহারাগুলো এবং রোবটের ন্যায় দেহগুলো আমার সামনে ছিল। প্রত্যেকটা মূহুর্তই দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ হচ্ছিল। আমি কাফেরদের দেশকে সর্বদার জন্যই বিদায় জানাচ্ছিলাম। ভয় ছিল যে, প্রাণটা না আবার এই দারুল কুফরেই চলে যায়। আর এই আশংকাও হৃদয়ে ছিল যে, কোথাও এই কাফের সরকারের গোয়েন্দা বিভাগের নজরে এসে যাইনি তো?
আমার আলেমা (লেখিকার শিক্ষিকা) বোনের সতর্ক বাণীগুলো আমার সামনে ভাসছিল যে, ইমিগ্রেশন (ভিসা অনুমোদন সংক্রান্ত কার্যক্রম) থেকে বের হওয়ার সময় সতর্ক থেকো। কারণ, এই (গোয়েন্দা) কাফের পাগলরা কুত্তার মতো মুমিনদের পিছনে লেগে আছে। যেখানেই ঈমানের হালকা ঝলক দেখে সেখানেই ঝাঁপিয়ে পড়ে। আল হামদুলিল্লাহ ইমিগ্রেশন অতিক্রম করেছি। বিমানে চড়ে আমি আমার প্রিয় আলেমাকে শেষ মেসেজ দিলাম যে, আমি অচিরেই দারুল কুফর থেকে বের হয়ে যাচ্ছি। আল্লাহর কাছে দোয়া করি, যেন তিনি তার শান অনুযায়ী তোমাকে বিশাল প্রতিদান দেন। আল্লাহ তোমার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেন এবং আমি যেন দ্রুত জিহাদের ময়দানে যোগ দিতে পারি। আর দুনিয়াতে যদি না হয় তাহলে কিয়ামতের দ্বীন আরশের ছায়ার নিচে আমরা একত্রিত হবো।
বিমান ছাড়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। আমার দিলের ধরপাকড় বাড়ছিল। চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিল। মাথা নিজে নিজে আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের সামনে সেজদায় লুটিয়ে পড়ল। আমার রবকে আমি কি বলতে পারি, যিনি আমার মতো গুনাহগার বান্দীকে একাকী দারুল কুফর থেকে হিজরত করে, সম্মান ও বরকতের ভূমি “খোরাসানে” যাওয়ার তাওফিক দিচ্ছেন। আমি চোখ বন্ধ করে নিলাম। ভিতর,বাহির চতুর্দিকেই নিরবতা আর নিরবতা অনুভব করলাম। এই কাফের রাষ্ট্রে আমার জীবনের নয়টি বছর চোখের সামনে দ্রুত অতিক্রম করছিল।
পাকিস্তানে এম.বি.বি.এস করার পর আমি বহির্বিশ্বে চলে যাই। অন্যান্য যুবতীদের মতো আমিও পশ্চিমা সভ্যতা এবং তাদের মিথ্যা চাক্-চিক্যে মুগ্ধ হয়েছিলাম। তাই,দুনিয়ার একপ্রান্ত ছেড়ে অন্য প্রান্তে (ইউরোপে) একাকী চলে যাই। আমার উদ্দেশ্য ছিল, উচ্চ থেকে উচ্চ ডিগ্রি অর্জন করা। যাতে আমি খুব ভালোভাবে দুনিয়া কামাতে পারি এবং নিজ দেশ, বিশেষ করে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর খেদমত করতে পারি। আমার এই চিন্তা চেতনা বুঝতে হলে আপনাদের প্রথমেই আমার অতীত ইতিহাস জানতে হবে।
আমি এক সৈনিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করি। আমার পিতা পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর একজন অফিসার ছিলেন। আর পাকিস্তানী সেনাপরিবারের অধিকাংশই অনৈসলামিক এবং পশ্চিমা সভ্যতা অনুযায়ী জীবন যাপন করে। সুতরাং এটা কেনই বা হবে না, যখন তাদের শিক্ষা-দীক্ষাই কাফেরদের তৈরী করা ইসলাম। ইসলামের দুশমন এবং তাগুতদের বানানো শিক্ষা পাঠ্যসূচী অনুযায়ী তাদের শিক্ষা। আমিও ছোট বেলা থেকেই শুধু নামায, রোযা, বেশী বেশী হজ্ব করাকে ইসলাম মনে করতাম। আমি যখন মানুষের সাথে চলমান বেইনসাফী, জুলুম এবং রাষ্ট্রীয় ভাবে নির্ধারিত পদগুলোর মাঝে বৈপরিত্ব দেখতাম তখন এমন এক জীবন পদ্ধতির অনুসন্ধান করতাম যা মানুষকে এই লাঞ্ছনা থেকে বের করবে এবং সম্মনের যিন্দেগী দান করবে। দূর্ভাগ্যবশত: আমি ইসলামকে না জেনে, না বুঝে একটা অপরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা মনে করতাম এবং কিছু ইবাদত ও রিয়াজাতের সমষ্টি মনে করতাম। আমি এভাবে নিজের বরকত ও রহমতপূর্ণ দ্বীন থেকে উদাসীন থেকে যাই। আমি বিভিন্ন সভ্যতা নিয়ে ভাসা ভাসা পড়াশুনা করেছি । ফলে আমার দৃষ্টি পশ্চিমা সভ্যতার উপর আটকিয়ে যায়। আমি আমার প্রিয় ভূমি পাকিস্তান এবং অন্যান্য মুসলিম দেশ সমূহের সমস্যাবলীর সমাধান এই দাজ্জালী সভ্যতার মাঝে দেখতে পেলাম। আফসোস! শত আফসোস! যে, আমি ডাকাতকেই রাহবার ভাবতে লাগলাম। সম্ভবত: এটাই আমার বহির্বিশ্বে ভ্রমণের মূল কারণ ছিল। (চলবে)
খাওলা বিনতে আব্দুল আজিজ
এয়ারপোর্টে বিশাল জনস্রোত| সবাই নিজ নিজ গন্তব্যে পৌঁছার জন্য অস্থির| যতদূর পর্যন্ত দৃষ্টি যায় লাল, সাদা, রঙ্গিন, শুভ্র চুল এবং হলুদ চোখের মরা চেহারাগুলো এবং রোবটের ন্যায় দেহগুলো আমার সামনে ছিল। প্রত্যেকটা মূহুর্তই দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ হচ্ছিল। আমি কাফেরদের দেশকে সর্বদার জন্যই বিদায় জানাচ্ছিলাম। ভয় ছিল যে, প্রাণটা না আবার এই দারুল কুফরেই চলে যায়। আর এই আশংকাও হৃদয়ে ছিল যে, কোথাও এই কাফের সরকারের গোয়েন্দা বিভাগের নজরে এসে যাইনি তো?
আমার আলেমা (লেখিকার শিক্ষিকা) বোনের সতর্ক বাণীগুলো আমার সামনে ভাসছিল যে, ইমিগ্রেশন (ভিসা অনুমোদন সংক্রান্ত কার্যক্রম) থেকে বের হওয়ার সময় সতর্ক থেকো। কারণ, এই (গোয়েন্দা) কাফের পাগলরা কুত্তার মতো মুমিনদের পিছনে লেগে আছে। যেখানেই ঈমানের হালকা ঝলক দেখে সেখানেই ঝাঁপিয়ে পড়ে। আল হামদুলিল্লাহ ইমিগ্রেশন অতিক্রম করেছি। বিমানে চড়ে আমি আমার প্রিয় আলেমাকে শেষ মেসেজ দিলাম যে, আমি অচিরেই দারুল কুফর থেকে বের হয়ে যাচ্ছি। আল্লাহর কাছে দোয়া করি, যেন তিনি তার শান অনুযায়ী তোমাকে বিশাল প্রতিদান দেন। আল্লাহ তোমার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেন এবং আমি যেন দ্রুত জিহাদের ময়দানে যোগ দিতে পারি। আর দুনিয়াতে যদি না হয় তাহলে কিয়ামতের দ্বীন আরশের ছায়ার নিচে আমরা একত্রিত হবো।
বিমান ছাড়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। আমার দিলের ধরপাকড় বাড়ছিল। চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিল। মাথা নিজে নিজে আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের সামনে সেজদায় লুটিয়ে পড়ল। আমার রবকে আমি কি বলতে পারি, যিনি আমার মতো গুনাহগার বান্দীকে একাকী দারুল কুফর থেকে হিজরত করে, সম্মান ও বরকতের ভূমি “খোরাসানে” যাওয়ার তাওফিক দিচ্ছেন। আমি চোখ বন্ধ করে নিলাম। ভিতর,বাহির চতুর্দিকেই নিরবতা আর নিরবতা অনুভব করলাম। এই কাফের রাষ্ট্রে আমার জীবনের নয়টি বছর চোখের সামনে দ্রুত অতিক্রম করছিল।
পাকিস্তানে এম.বি.বি.এস করার পর আমি বহির্বিশ্বে চলে যাই। অন্যান্য যুবতীদের মতো আমিও পশ্চিমা সভ্যতা এবং তাদের মিথ্যা চাক্-চিক্যে মুগ্ধ হয়েছিলাম। তাই,দুনিয়ার একপ্রান্ত ছেড়ে অন্য প্রান্তে (ইউরোপে) একাকী চলে যাই। আমার উদ্দেশ্য ছিল, উচ্চ থেকে উচ্চ ডিগ্রি অর্জন করা। যাতে আমি খুব ভালোভাবে দুনিয়া কামাতে পারি এবং নিজ দেশ, বিশেষ করে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর খেদমত করতে পারি। আমার এই চিন্তা চেতনা বুঝতে হলে আপনাদের প্রথমেই আমার অতীত ইতিহাস জানতে হবে।
আমি এক সৈনিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করি। আমার পিতা পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর একজন অফিসার ছিলেন। আর পাকিস্তানী সেনাপরিবারের অধিকাংশই অনৈসলামিক এবং পশ্চিমা সভ্যতা অনুযায়ী জীবন যাপন করে। সুতরাং এটা কেনই বা হবে না, যখন তাদের শিক্ষা-দীক্ষাই কাফেরদের তৈরী করা ইসলাম। ইসলামের দুশমন এবং তাগুতদের বানানো শিক্ষা পাঠ্যসূচী অনুযায়ী তাদের শিক্ষা। আমিও ছোট বেলা থেকেই শুধু নামায, রোযা, বেশী বেশী হজ্ব করাকে ইসলাম মনে করতাম। আমি যখন মানুষের সাথে চলমান বেইনসাফী, জুলুম এবং রাষ্ট্রীয় ভাবে নির্ধারিত পদগুলোর মাঝে বৈপরিত্ব দেখতাম তখন এমন এক জীবন পদ্ধতির অনুসন্ধান করতাম যা মানুষকে এই লাঞ্ছনা থেকে বের করবে এবং সম্মনের যিন্দেগী দান করবে। দূর্ভাগ্যবশত: আমি ইসলামকে না জেনে, না বুঝে একটা অপরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা মনে করতাম এবং কিছু ইবাদত ও রিয়াজাতের সমষ্টি মনে করতাম। আমি এভাবে নিজের বরকত ও রহমতপূর্ণ দ্বীন থেকে উদাসীন থেকে যাই। আমি বিভিন্ন সভ্যতা নিয়ে ভাসা ভাসা পড়াশুনা করেছি । ফলে আমার দৃষ্টি পশ্চিমা সভ্যতার উপর আটকিয়ে যায়। আমি আমার প্রিয় ভূমি পাকিস্তান এবং অন্যান্য মুসলিম দেশ সমূহের সমস্যাবলীর সমাধান এই দাজ্জালী সভ্যতার মাঝে দেখতে পেলাম। আফসোস! শত আফসোস! যে, আমি ডাকাতকেই রাহবার ভাবতে লাগলাম। সম্ভবত: এটাই আমার বহির্বিশ্বে ভ্রমণের মূল কারণ ছিল। (চলবে)
Comment