Announcement

Collapse
No announcement yet.

খোরাসানের পথে হিজরত করা একজন পাকিস্তানি বোনের আত্মজীবনী, পর্ব-৪

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • খোরাসানের পথে হিজরত করা একজন পাকিস্তানি বোনের আত্মজীবনী, পর্ব-৪

    খোরাসানের পথে হিজরত করা একজন পাকিস্তানি বোনের আত্মজীবনী, পর্ব-৪
    খাওলা বিনতে আব্দুল আজিজ
    খুব দ্রুতই বহির্বিশ্বে চাকুরীর অফার পাচ্ছিলাম। ফিজিশন ট্রেনিংয়ে ঢুকার পর সফলতার সাথেই তাতে পাশ করেছি। আমার সবচেয়ে বেশী ট্রেনিং আমার অন্তরের রোগের উপর হচ্ছিল। শুরু থেকেই হৃদযন্ত্রের যাদুময়ী সৃষ্টি এবং পেঁচানো রগ-রেশা খুব আকৃষ্ট করছিল। আমি অপারেশন থিয়েটারে দাঁড়িয়ে হৃদযন্ত্র এবং তার সাথে জড়িত রোগের লক্ষণসমূহ দেখতে পেতাম। কিভাবে এক টুকরো গোস্ত পুরা শরীরের রক্ত সঞ্চালিত করে। আমি সব সময় অনিচ্ছা সত্বেও তার স্রষ্টা এবং সকল অঙ্গের স্রষ্টার মহত্ব ও বড়ত্ব নিয়ে চিন্তা করে কেঁপে উঠতাম। ঐ সময় আমি ইসলামে হৃদয়ের ওপর কার্যকরী বিষয়গুলো সম্পর্কে অজ্ঞ ছিলাম। কিন্তু এখন অধিকাংশ সময় ঐ গোস্তের টুকরার ব্যাপারে চিন্তা করি, যদি তা সুস্থ থাকে অর্থাৎ তাক্বওয়ার উপর থাকে তাহলে সমস্ত শরীর সুস্থ থাকে। আর উহা যদি খারাপ হয়ে যায় তাহলে সমস্ত শরীর খারাপ হয়ে যায়। আর এর নামই কলব। নিশ্চয় আধুনিক বিজ্ঞান কুরআন ও সুন্নাহ থেকে উদাসিন হওয়ার কারণে মানবাত্মার রোগ-ব্যাধি এবং তার সঠিক সমাধান বের করতে অক্ষম। তিনি কি উত্তম জানবেন না, যিনি সৃষ্টি করেছেন? এছাড়াও যখনই আমি কাফেরদের মৃত্যু শয্যায় দেখি তখনই আমার হৃদয় কেঁপে উঠে। তাদের নিরাশ, অন্ধকার চোখ, মৃত্যুর ভয়, দুনিয়া এবং ধন সম্পদ সর্বদার জন্য ছেড়ে যাওয়ার দুঃশ্চিন্তা এবং ঐ দুনিয়া যার জন্য সে পুরো জীবন ব্যয় করেছে, কিন্তু আজ তা সব তাকে এমন ভাবে ছেড়ে দিচ্ছে যে, মনে হয় সে তাকে চিনেই না। অতঃপর প্রিয়জনদের ছেড়ে যাওয়া। এসবই কাফেরের মৃত্যু শয্যায় জমা হয়েছিল।

    আমার ওয়ার্ডে ব্লাড ক্যান্সারের এক রোগী ছিল। আমি তাকে দুই সপ্তাহ সময় বেধে দিয়ে বলেছিলাম যে, তোমার জীবনের শেষ নিঃশ্বাস শেষ হয়ে যাবে। তারপর তোমার জীবন প্রদ্বীপ নেভে যাবে।আমি যখন প্রতিদিন তার কামরায় তাকে দেখার জন্য যেতাম তখন সে ঘাড় উঁচু করে আমাকে দেখত এবং বলত,‘ডাক্তার! আর দশ দিন বাকি’ এবং পরেরদিন যখন আবার যেতাম তখন বলত,‘ডাক্তার! নয় দিন বাকি’। অতঃপর কিছুদিন যাওয়ার পর সে মৃত্যুবরণ করল। সময়ে-অসময়ে তার নিরাশ ভীতসন্ত্রস্ত চোখগুলো ও ফ্যাকাসে চেহারা আমাকে ভীতসন্ত্রস্ত করে তুলে। রাতের বেলা যখন ড্রাইভিং করি তখন তখন অধিকাংশ সময় আমার সামনে সে-ই লোকটির নিরাশ চেহারা এবং ভীতিসন্ত্রস্ত চোখের চাহনি আমি দেখতে পাই; যা আমাকে নিজের জীবনের প্রতি নৈরাশ ও হতাশ করে তুলে।বিবেকের দংশনে কখনো কখনো নিজেকে গাড়িসহ সমুদ্রে ফেলে দেবার চিন্তাও আমার হৃদয়ে আস্ত। তখন আমি ভগ্ন হৃদয়ে আল্লাহকে স্মরণ করতাম এবং বিড় বিড় করে দোয়া করতে থাকতাম,“হে অন্তরযামী প্রভূ! আমাকে জুলুমের অন্ধকার থেকে তোমার হেদায়াতের আলোতে নিয়ে যাও। আমি ইহা থেকে পলায়নকারী, লোভী দুনিয়া কে ঘৃণাকারী।”

    কিন্তু দুনিয়া আমার দিকে চারপাশ থেকে অক্টোপাসের মতো ধেয়ে আসছিল। চারিদিকে শুধু অন্ধকার দেখতে পাচ্ছিলাম।আমি এক অজানা গন্তব্যের দিকে হাঁটছিলাম।আমি নিজের সঠিক গন্তব্য নির্ণয়ে বয্ররথ হচ্ছিলাম।

    মোট কথা, যে উদ্দেশ্যে আমি পাকিস্তান ছেড়েছি তার সবই পেয়েছি। তার সবই জীবনে এত পরিমাণে পেয়েছিলাম; যা ছিল কল্পনাতীত।কিন্তু তবুও যেন হৃদয় রাজ্যে মূল্যবান কোন জিনিসের শূন্যতা অনুভূত হচ্ছিল। দিন দিন আমি নিজেই নিজের প্রতি অস্থির ও অসন্তুষ্ট হয়ে উঠছিলাম। আমার অন্তরের অন্ধকার বেড়েই চলছিল। আমি এই চিন্তা করে পুরো বিশ্ব সফরের ইচ্ছা করেছিলাম যে, সেখানে আমার পিপাসা নিবারণের জিনিসটি পেয়ে যাবো। কিন্তু সবখানেই পলায়নপরতা, নৈতিক অধঃপতন এবং প্রবৃত্তি পূজাই দেখতে পাচ্ছিলাম।আমার কাছে মানুষকে জীব-জন্তু থেকে আরো নিকৃষ্ট মনে হচ্ছিল।
    আখেরাত ভুলে যাদের হৃদয় দুনিয়ার মহব্বতে আচ্ছাদিত, আশা করি তাদের জন্য আমার জীবন গল্পটি আধার রাতের আলোক মশাল স্বরূপ হবে। আমার কাছে বর্তমানে যে হাত ব্যাগটা আছে তার দাম দুই লক্ষ টাকা, লক্ষ টাকার জুতা ও এক লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকার সমমূল্যের পোশাক আমার পরিধানে আছে। বিমানের সফর আমার কাছে সাইকেলের সফর থেকেও সস্তা ছিল। হোটেলে এক বেলা খাবারের বিল আস্ত ত্রিশ-চল্লিশ হাজার টাকা। আমার প্রাইভেট চেম্বারের বাহিরে ইংরেজরা হাত জোড় করে খাদেমের মতো দাঁড়িয়ে থাকে।

    মোট কথা, দুনিয়ার জীবনই যদি সুখ-শান্তি ও আত্মিক সফলতার কারণ হতো তাহলে হয়তো আমি শান্তি ও সুখময় জীবন যাপনে শীর্ষে থাকতে পারতাম। কিন্তু বাস্তবতা ছিল তার পুর বিপরীত। আমার চেয়ে অধিক আন্তরিক প্রশান্তি শূন্য, চারিত্রিক দূরাবস্থা, রুহানী আধারে আচ্ছন্ন এবং মানষিক অস্থিরতার শিকার খুব কম লোকই ছিল। আর এটার কারণ ছিল আমার হৃদয়ে হক্ব আর বাতিলের চলমান লড়াই। আমার দিন কাটছিল হাসপাতালে কাফের রোগীদের খেদমতে এবং রাত অতিবাহিত হচ্ছিল কাফেরদের কোন ডিনারপার্টি বা ক্লাবে। কিন্তু বিশ্বাস করুন, প্রতিটি মূহুর্তে আমার ভিতর এই বিষয়টি কাজ করত যে, আমি এক মিথ্যা ছলনাময় জীবন অতিবাহিত করছি। যে জীবন সম্পুর্ণ উদ্দেশ্যহীন।আমার আশ-পাশের মানুষগুলো এই জীবনের প্রতি শুধু খুশিই নয়। বরং তারা এই জীবনটাকে ভোগ করার জন্য সর্বশক্তি ব্যয় করে চলছে। তাদের হৃদয়গুলোকে যেন শূন্য শুষ্ক এক বিরান মরুভূমি।
    পরিশেষে আমি ইসলামের দিকে ফিরে আসার চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিলাম এবং মসজিদকে হেদায়াতের প্রথম মাঞ্জিল বানালাম।
    সে-ই মুহুর্তে আমার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ কাজ ছিল একজন দরদী মুমিন বান্দাকে খুঁজে বের করা। যিনি আমার দ্বীনের জ্ঞান অর্জনের তীব্র পিপাসা নিবারিত করবেন।কিন্তু নবী করীম সাঃ আমাদেরকে যে হুঁশিয়ারী দিয়েছেন যে, শেষ যমানায় সবচেয়ে নিকৃষ্ট লোক হবে পথভ্রষ্টকারী আলেমরা। আমার কাছে এদেরকে আমার চেয়ে অধিক দুনিয়ালোভী এবং দ্বীনের বাস্তবতা বঞ্ছিত মনে হল । এখানে ব্যর্থ হয়ে আমি ইহুদী ও খৃষ্টান ধর্ম নিয়ে গবেষণা শুরু করলাম। কিন্তু তাদের শিক্ষা আমার কাছে সবচেয়ে অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য বলে মনে হল।

    এবার আমি সব দিক থেকে নিরাশ হয়ে সত্য দিলে আল্লাহর দিকে ফিরে এলাম।হে আল্লাহ!আমার অন্তর এই স্বাক্ষ্য দিচ্ছে যে, আপনিই সকল কিছুর খালিক এবং মালিক। আপনার কাছে প্রার্থনা করছি, আমাকে এমন জীবনের প্রতি পথ প্রদর্শন করুন যা আসল অর্থেই জীবন।
    চলবে
    একজন গেরিলা যুদ্ধা একজন কমান্ডোর মত, সে যে কোন পরিস্থিতির মোকাবেলায় সক্ষম

  • #2
    আলহামদুলিল্লাহ, পর্ব-৪ পেয়ে আনন্দিত অনুভব করছি।
    আল্লাহ তায়ালা আপনাকে উত্তম জাযা দান করুন!
    মুজাহিদীনকে ভালবাসুন, তাদের সাপোর্ট করুন!
    কেননা, তারাই একমাত্র সত্য ও সঠিক পথে অটল রয়েছেন।

    Comment


    • #3
      আল্লহ যেন প্রত্যেক মুমিনদের এরকম চিন্তাভাবনার অধিকারী হওয়ার তাওফিক দেন।

      Comment


      • #4
        ভাই,আপনি চালিয়ে যান ৷
        আমরা নিয়মিত আপনার লেখা পেতে অপেক্ষায় থাকি ৷
        আর সব পর্ব শেষ হলে পিডিএফ আকারে সাজিয়ে লিংক দিবেন ৷
        গোপনে আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে বেঁচে থাকার মধ্যেই রয়েছে প্রকৃত সফলতা ৷

        Comment


        • #5
          لست ٱبلی حین اقتل مسلما ، علی ای شق کان لله مصرعی
          وذالک فی ذات الاله وان یشٱ ٠یبارک علی اوصال شلو ممزع
          আল্লাহ আমাদের ঈমানী হালতে মৃত্যু দান করুন,আমিন।
          আল্লাহ আমাদের শহিদী মৃত্যু দান করুন,আমিন।

          Comment


          • #6
            মাশাআল্লাহ, এপর্বটি আমার খুব প্রিয় লেগেছে আলহামদুলিল্লাহ ।
            আখি! চালিয়ে যাবেন ইনশাআল্লাহ ।
            মুমিনদেরকে ক্বিতালের জন্য উদ্বুদ্ধ করুন।

            Comment


            • #7
              জাযাকাল্লাহ আহসানাল জাযা!
              ৪র্থ পর্বটি আমার জীবনকে বদলে দিচ্ছে আলহামদুলিল্লাহ ।
              যারা দুনিয়ার পাগল, দুনিয়া ছাড়ার ক্ষেত্রে তাদের কাছে খুবই মুগ্ধকর লাগবে ইনশাআল্লাহ ।
              যোদ্ধা হব, যুদ্ধ করব,
              ক্বিতালের জন্য দাওয়াত দিব, ইনশাআল্লাহ।

              Comment


              • #8
                আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ। বর্তমান সময়ে এধরণের পোস্ট খুবি গুরুত্বপূর্ণ।
                ان المتقین فی جنت ونعیم
                سورة الطور

                Comment


                • #9
                  ভাই আপনি চালিয়ে যান ৷ খুবই উপকারী ধারাবিক পোষ্ট ৷ আল্লাহ আপনাকে উত্তম বদলা দিক ৷ আমীন ৷
                  আমি জঙ্গি, আমি নির্ভীক ৷
                  আমি এক আল্লাহর সৈনিক ৷

                  Comment


                  • #10
                    মাশা'আল্লাহ। অসাধারণ হচ্ছে। আল্লাহ সুব. আপনার লেখনি শক্তি বাড়িয়ে দিন ও দ্বীনের খেদমত করে যাওয়ার তাওফীক দান করুন,আমীন।
                    বিবেক দিয়ে কোরআনকে নয়,
                    কোরআন দিয়ে বিবেক চালাতে চাই।

                    Comment


                    • #11
                      মুহতারাম ভাই- আপনার সামনে পর্বের অপেক্ষায় আছি।
                      আল্লাহ তা‘আলা আপনার লেখনিতে বারাকাহ দান করুন। আমীন
                      ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

                      Comment

                      Working...
                      X