সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য।
বিরোধ সম্পর্কে হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) এর সতর্কীকরণ
হযরত আব্দুল্লহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) একবার বয়ান করিতে গিয়া বলেন, হে লোকসকল! তোমরা আমীরের কথা মান্য করা ও একতাবদ্ধ হইয়া থাকাকে জরুরী মনে করিও। কারণ ইহাই আল্লহ তায়া’লার সেই রশি যাহাকে মজবুত করিয়া ধরিয়া থাকার আল্লহ তায়া’লা নির্দেশ দিয়াছেন। পরস্পর একতাবদ্ধ হইয়া চলার মধ্যে তোমরা যে সকল অপছন্দীয় বিষয়ের সম্মুখীন হইবে তাহা ঐ সকল পছন্দনীয় বিষয় হইতে উত্তম হইবে, যাহা তোমাদের পরস্পর বিরোধিতার মধ্যে হাসিল হইবে। আল্লহ তায়া’লা যত জিনিস সৃষ্টি করিয়াছেন উহার প্রত্যেকটির জন্য একটি শেষ সীমাও নির্ধারণ করিয়া দিয়াছেন যেখান পর্যন্ত উহা পৌঁছিবে। বর্তমানে ইসলামের মজবুতি ও উন্নতির যুগ। অতিসত্বর উহা আপন শেষ সীমায় পৌঁছিয়া যাইবে। তারপর কিয়ামাত পর্যন্ত উহাতে হ্রাস-বৃদ্ধি হইতে থাকিবে। ইহার আলামত এই যে লোকজন অত্যন্ত অভাবগ্রস্থ হইয়া পড়িবে। এমনকি একজন অভাবগ্রস্থ লোক এমন কাহাকেও পাইবে না যে তাহার প্রতি অনুগ্রহ করিবে। আর একজন ধনী নিজের জন্য উহা যথেষ্ট মনে করিবে না যাহা তাহার নিকট রহিয়াছে। এমনকি একব্যক্তি তাহার আপন ভাই ও চাচতো ভাইয়ের নিকটে নিজের অভাবের কথা বলিবে কিন্তু তাহারাও তাহাকে কিছু দিবে না। এমনকি একজন অভাবগ্রস্থ ভিক্ষুক এক জুমআ হইতে দ্বিতীয় জুমআ পর্যন্ত ভিক্ষা করিয়া বেড়াইবে কিন্তু কেহই তাহার হাতে কিছু দিবে না। অবস্থা যখন এই পর্যায়ে পৌঁছিবে তখন জমিনের ভিতর হইতে এমন এক বিকট আওয়াজ বাহির হইবে যে, প্রত্যেক এলাকার লোকজন মনে করিবে যে, এই আওয়াজ তাহাদের এলাকা হইতে বাহির হইয়াছে। অতঃপর যতদিন আল্লহ তায়া’লা চাহিবেন জমিন নিস্তব্ধ থাকিবে। তারপর জমিন তাহার কলিজার টুকরাসমূহ বাহিরে নিক্ষেপ করিয়া দিবে। হযরত আব্দুল্লহ ইবনে মাসউদ রদিয়াল্লহু আ’নহুকে জিজ্ঞাসা করা হইল হে আবু আব্দুর রহমান, জমিনের টুকরাগুলি কি জিনিস? স্বর্ণরূপার স্তম্ভসমূহ। আর সেদিন থেকে কিয়ামাত পর্যন্ত স্বর্ণ-রূপার দ্বারা কোন প্রকার উপকার লাভ করা হইবে না।
মুজালিদ রহমাতুল্লহ আ’লাইহি ব্যতীত অন্যান্যদের রেওয়ায়াতে এইরূপ বর্ণিত হইয়াছে যে, আত্মীয়তার সম্পর্কসমূহ ছিন্ন করা হইবে। আর অবস্থা এই পর্যায়ে পৌঁছিবে যে, ধনীরা শুধু গরীব হইয়া যাওয়ার ভয় করিবে। আর গরীব এমন কাহাকেও পাইবে না, যে তাহার প্রতি অনুগ্রহ করিবে। একব্যক্তি যাহার চাচতো ভাই ধনী হইবে এবং সে তাহার নিকট নিজের অভাবের কথা বলিবে, কিন্তু সেই চাচতো ভাই তাহাকে কিছুই দিবে না। এই রেওয়ায়েতে উপরোক্ত হাদীসের পরর্বতী অংশ বর্ণিত হয়নাই।
বিরোধ সম্পর্কে হযরত আবুযার (রাঃ)এর উক্তি
এক ব্যক্তি বর্ণনা করেন যে, আমরা হযরত আবুযার (রাঃ)কে একটি জিনিস দেয়ার জন্য লইয়া চলিলাম। আমরা তাঁহার আবাসস্থল রাবাযাহতে পৌঁছিয়া জানিতে পারিলাম যে, তিনি সেখানে নাই। আমাদিগকে বলা হইল তিনি (আমীরুল মুমিনীনের নিকট) হাজ্জের অনুমতি চাহিয়া ছিলেন। তাঁহাকে অনুমতি দেয়া হইয়াছিল। (সুতরাং তিনি হাজ্জে গিয়াছেন।) আমরা সেখান হইতে রওয়ানা হইয়া মিনা শহরে তাঁহার নিকটে গেলাম। আমরা তাঁহার নিকটে বসিয়া ছিলাম এমন সময়ে কেহ তাঁহাকে বলিল, (আমীরুল মুমিনীন) হযরত উসমান (রাঃ)মিনাতে চার রাকাত নামায পড়াইয়াছেন। ইহাতে তিনি অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হইলেন এবং এই ব্যাপারে তিনি অত্যন্ত শক্ত কথা বলিলেন এবং বলিলেন, আমি রাসুল (সাঃ) এর (এই মিনাতে) নামায পড়িয়াছি। তিনি দুই রাকাত পড়াইয়াছিলেন।
আমি হযরত আবু বকর (রাঃ)ও হযরত উ’মার (রাঃ)এর সহিত (এইখানে) নামায পড়িয়াছি। (তাঁহারাও দুই রাকাত পড়াইয়া ছিলেন।) অতঃপর যখন নামাযের সময় হইল তখন হযরত আবুযার (রাঃ)উঠিয়া চার আদায় করিলেন। (কিন্তু হযরত উসমান (রাঃ)যেহেতু মক্কায় বিবাহ করিয়াছিলেন এবং সেখানে কিছুদিন অবস্থানের নিয়ত করিয়াছিলেন সেহেতু তিনি মুকীম ছিলেন বিধায় চার রাকাত পড়িয়াছিলেন।) কেহ আরজ করিল, আপনি আমীরুল মুমিনীনের উপর যে বিষয়ে আপত্তি করিলেন, নিজেই তাহা করিলেন? তিনি বলিলেন, আমীরের বিরোধিতা করা ইহা অপেক্ষা গুরুতর। রাসুল (সাঃ) একবার আমাদিগকে খুতবা দিয়াছেন এবং বলিয়াছেন, আমার পরে বাদশাহ হইবে, তোমরা তাহাদিগকে অপমান করিও না। কেননা যে ব্যক্তি তাহাদিগকে অপমান করার ইচ্ছা করিল সে ইসলামের রশিকে আপন গলা হইতে খুলিয়া ফেলিল। এই ব্যক্তির তওবা ঐ সময় পর্যন্ত কবুল হইবে না যতক্ষন না সে ঐ ছিদ্রকে বন্ধ করিবে যাহা সে সৃষ্টি করিয়াছে। (অর্থাৎ বাদশাহকে অপমান করিয়া সে ইসলামের যে ক্ষতি করিয়াছে তাহা পূরণ না করিবে।) — কিন্তু সে এই কাজ করিতে পারিবে না — এবং যতক্ষন না সে (তাহার পূর্বের আচরণ হইতে) ফিরিয়া আসিবে এবং বাদশাহর সম্মানকারীদের মধ্যে শামিল হইয়া যাইবে। রাসুল (সাঃ) আমাদিগকে এই নির্দেশ দিয়াছেন যে, তিন বিষয়ে যেন বাদশাহগন আমাদের উপর প্রবল হইতে না পারেন। (অর্থাৎ আমরা তাঁহাদেরকে সম্মান করিব কিন্তু তিনটি কাজ ছাড়িব না।) এক–আমরা সৎ কাজের আদেশ করিব, দুই–অসৎ কাজ হইতে নিষেধ করিতে থাকিব, তিন–লোকদের সুন্নাত শিক্ষা দিতে থাকব।
বিরোধ সম্পর্কে ইবনে মাসঊদ (রাঃ)এর উক্তি
হযরত কাতাদাহ (রাঃ)বলেন, রাসুল (সাঃ), হযরত আবু বকর (রাঃ)ও হযরত উ’মার (রাঃ)মিনাতে দুই রাকাত কসর পড়িতেন। এমনিভাবে হযরত উসমান রদিয়াল্লহু আ’নহুও তাঁহার খিলাফাতের প্রথম দিকে দুই রাকাতই পড়িয়াছেন। পরবর্তীতে তিনি চার রাকাত পড়িতে আরম্ভ করেন। হযরত আব্দুল্লহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ)যখন ইহা জানতে পারিলেন তখন বলিলেন ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাহে রজিউন, (কিন্তু যখন নামাযের সময় হইল তখন) আবার তিনি উঠিয়া চার রাকাত পড়িলেন। কেহ বলিল চার রাকাতের কথা শুনিয়া আপনি ইন্না লিল্লাহ …… পড়িলেন কিন্তু নিজেই আবার চার রাকাত পড়িলেন? তিনি বলিলেন আমীরের বিরোধিতা করা ইহা অপেক্ষা খারাপ জিনিস। (কানয)
হযরত আ’লী (রাঃ)এর উক্তি
হযরত আ’লী (রাঃ)একবার বলিলেন, তোমরা পূর্বে যেইভাবে ফয়সালা করিতে সেইভাবেই ফয়সালা কর। কেননা আমি বিরোধকে অত্যন্ত খারাপ মনে করি। হয় তোমরা এক জামাত থাকিবে নতুবা আমি মৃত্যুবরণ করিব যেমন আমার সঙ্গীগণ (অর্থাৎ আবু বকর রদিয়াল্লহু আ’নহু, উ’মার (রাঃ)ও উসমান (রাঃ)বিরোধহীন ভাবে) মৃত্যুবরণ করিয়াছেন। এই কারণেই হযরত ইবনে সীরীন রহমাতুল্লহ আ’লাইহি এর বিশ্বাস এই ছিল যে, লোকেরা হযরত আ’লী (রাঃ)হইতে যে সকল (বিরোধমূলক) রেওয়ায়েত বর্নণা করে তাহা অধিকাংশই মিথ্যা। (মুন্তাখাব)
বিদআত, একতা ও বিছিন্নতা সম্পর্কে হযরত আ’লী (রাঃ)এর উক্তি
ইবনে কাউয়া রহমাতুল্লহ আ’লাইহি হযরত আ’লী (রাঃ)কে সুন্নাত ও বিদআত এবং একতা ও বিছিন্নতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করিলে হযরত আ’লী (রাঃ)বলিলেন, হে ইবনে কাউয়া, তুমি প্রশ্ন স্মরণ রাখিয়াছ এখন উহার উত্তর বুঝিয়া লও। আল্লহর কসম, সুন্নাত হইল মুহাম্মাদ (সাঃ) এর তরীকা, আর বিদআত হইল যাহা সুন্নাত হইতে ভিন্ন। এবং আল্লহর কসম, একতা হইল আহলে হক (অর্থাৎ হকপন্থীদের) এক হওয়া যদিও তাহারা সংখ্যায় কম হয়, আর বিছিন্নতা হইল আহলে বাতেল (অর্থাৎ বাতেলপন্থীদের) এক হওয়া যদিও তাহারা সংখ্যায় অধিক হয়। (কানয) হায়াতুস সাহাবাহ ২য় খন্ড (দারুল কিতাব, ডিসেম্বর ২০০৫) পৃষ্ঠা ৩৬২
~~~~***~~~~
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে উল্লেখিত বিষয়ের উপর আমল করার তাওফিক দিন। আমীন
বিরোধ সম্পর্কে হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) এর সতর্কীকরণ
হযরত আব্দুল্লহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) একবার বয়ান করিতে গিয়া বলেন, হে লোকসকল! তোমরা আমীরের কথা মান্য করা ও একতাবদ্ধ হইয়া থাকাকে জরুরী মনে করিও। কারণ ইহাই আল্লহ তায়া’লার সেই রশি যাহাকে মজবুত করিয়া ধরিয়া থাকার আল্লহ তায়া’লা নির্দেশ দিয়াছেন। পরস্পর একতাবদ্ধ হইয়া চলার মধ্যে তোমরা যে সকল অপছন্দীয় বিষয়ের সম্মুখীন হইবে তাহা ঐ সকল পছন্দনীয় বিষয় হইতে উত্তম হইবে, যাহা তোমাদের পরস্পর বিরোধিতার মধ্যে হাসিল হইবে। আল্লহ তায়া’লা যত জিনিস সৃষ্টি করিয়াছেন উহার প্রত্যেকটির জন্য একটি শেষ সীমাও নির্ধারণ করিয়া দিয়াছেন যেখান পর্যন্ত উহা পৌঁছিবে। বর্তমানে ইসলামের মজবুতি ও উন্নতির যুগ। অতিসত্বর উহা আপন শেষ সীমায় পৌঁছিয়া যাইবে। তারপর কিয়ামাত পর্যন্ত উহাতে হ্রাস-বৃদ্ধি হইতে থাকিবে। ইহার আলামত এই যে লোকজন অত্যন্ত অভাবগ্রস্থ হইয়া পড়িবে। এমনকি একজন অভাবগ্রস্থ লোক এমন কাহাকেও পাইবে না যে তাহার প্রতি অনুগ্রহ করিবে। আর একজন ধনী নিজের জন্য উহা যথেষ্ট মনে করিবে না যাহা তাহার নিকট রহিয়াছে। এমনকি একব্যক্তি তাহার আপন ভাই ও চাচতো ভাইয়ের নিকটে নিজের অভাবের কথা বলিবে কিন্তু তাহারাও তাহাকে কিছু দিবে না। এমনকি একজন অভাবগ্রস্থ ভিক্ষুক এক জুমআ হইতে দ্বিতীয় জুমআ পর্যন্ত ভিক্ষা করিয়া বেড়াইবে কিন্তু কেহই তাহার হাতে কিছু দিবে না। অবস্থা যখন এই পর্যায়ে পৌঁছিবে তখন জমিনের ভিতর হইতে এমন এক বিকট আওয়াজ বাহির হইবে যে, প্রত্যেক এলাকার লোকজন মনে করিবে যে, এই আওয়াজ তাহাদের এলাকা হইতে বাহির হইয়াছে। অতঃপর যতদিন আল্লহ তায়া’লা চাহিবেন জমিন নিস্তব্ধ থাকিবে। তারপর জমিন তাহার কলিজার টুকরাসমূহ বাহিরে নিক্ষেপ করিয়া দিবে। হযরত আব্দুল্লহ ইবনে মাসউদ রদিয়াল্লহু আ’নহুকে জিজ্ঞাসা করা হইল হে আবু আব্দুর রহমান, জমিনের টুকরাগুলি কি জিনিস? স্বর্ণরূপার স্তম্ভসমূহ। আর সেদিন থেকে কিয়ামাত পর্যন্ত স্বর্ণ-রূপার দ্বারা কোন প্রকার উপকার লাভ করা হইবে না।
মুজালিদ রহমাতুল্লহ আ’লাইহি ব্যতীত অন্যান্যদের রেওয়ায়াতে এইরূপ বর্ণিত হইয়াছে যে, আত্মীয়তার সম্পর্কসমূহ ছিন্ন করা হইবে। আর অবস্থা এই পর্যায়ে পৌঁছিবে যে, ধনীরা শুধু গরীব হইয়া যাওয়ার ভয় করিবে। আর গরীব এমন কাহাকেও পাইবে না, যে তাহার প্রতি অনুগ্রহ করিবে। একব্যক্তি যাহার চাচতো ভাই ধনী হইবে এবং সে তাহার নিকট নিজের অভাবের কথা বলিবে, কিন্তু সেই চাচতো ভাই তাহাকে কিছুই দিবে না। এই রেওয়ায়েতে উপরোক্ত হাদীসের পরর্বতী অংশ বর্ণিত হয়নাই।
বিরোধ সম্পর্কে হযরত আবুযার (রাঃ)এর উক্তি
এক ব্যক্তি বর্ণনা করেন যে, আমরা হযরত আবুযার (রাঃ)কে একটি জিনিস দেয়ার জন্য লইয়া চলিলাম। আমরা তাঁহার আবাসস্থল রাবাযাহতে পৌঁছিয়া জানিতে পারিলাম যে, তিনি সেখানে নাই। আমাদিগকে বলা হইল তিনি (আমীরুল মুমিনীনের নিকট) হাজ্জের অনুমতি চাহিয়া ছিলেন। তাঁহাকে অনুমতি দেয়া হইয়াছিল। (সুতরাং তিনি হাজ্জে গিয়াছেন।) আমরা সেখান হইতে রওয়ানা হইয়া মিনা শহরে তাঁহার নিকটে গেলাম। আমরা তাঁহার নিকটে বসিয়া ছিলাম এমন সময়ে কেহ তাঁহাকে বলিল, (আমীরুল মুমিনীন) হযরত উসমান (রাঃ)মিনাতে চার রাকাত নামায পড়াইয়াছেন। ইহাতে তিনি অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হইলেন এবং এই ব্যাপারে তিনি অত্যন্ত শক্ত কথা বলিলেন এবং বলিলেন, আমি রাসুল (সাঃ) এর (এই মিনাতে) নামায পড়িয়াছি। তিনি দুই রাকাত পড়াইয়াছিলেন।
আমি হযরত আবু বকর (রাঃ)ও হযরত উ’মার (রাঃ)এর সহিত (এইখানে) নামায পড়িয়াছি। (তাঁহারাও দুই রাকাত পড়াইয়া ছিলেন।) অতঃপর যখন নামাযের সময় হইল তখন হযরত আবুযার (রাঃ)উঠিয়া চার আদায় করিলেন। (কিন্তু হযরত উসমান (রাঃ)যেহেতু মক্কায় বিবাহ করিয়াছিলেন এবং সেখানে কিছুদিন অবস্থানের নিয়ত করিয়াছিলেন সেহেতু তিনি মুকীম ছিলেন বিধায় চার রাকাত পড়িয়াছিলেন।) কেহ আরজ করিল, আপনি আমীরুল মুমিনীনের উপর যে বিষয়ে আপত্তি করিলেন, নিজেই তাহা করিলেন? তিনি বলিলেন, আমীরের বিরোধিতা করা ইহা অপেক্ষা গুরুতর। রাসুল (সাঃ) একবার আমাদিগকে খুতবা দিয়াছেন এবং বলিয়াছেন, আমার পরে বাদশাহ হইবে, তোমরা তাহাদিগকে অপমান করিও না। কেননা যে ব্যক্তি তাহাদিগকে অপমান করার ইচ্ছা করিল সে ইসলামের রশিকে আপন গলা হইতে খুলিয়া ফেলিল। এই ব্যক্তির তওবা ঐ সময় পর্যন্ত কবুল হইবে না যতক্ষন না সে ঐ ছিদ্রকে বন্ধ করিবে যাহা সে সৃষ্টি করিয়াছে। (অর্থাৎ বাদশাহকে অপমান করিয়া সে ইসলামের যে ক্ষতি করিয়াছে তাহা পূরণ না করিবে।) — কিন্তু সে এই কাজ করিতে পারিবে না — এবং যতক্ষন না সে (তাহার পূর্বের আচরণ হইতে) ফিরিয়া আসিবে এবং বাদশাহর সম্মানকারীদের মধ্যে শামিল হইয়া যাইবে। রাসুল (সাঃ) আমাদিগকে এই নির্দেশ দিয়াছেন যে, তিন বিষয়ে যেন বাদশাহগন আমাদের উপর প্রবল হইতে না পারেন। (অর্থাৎ আমরা তাঁহাদেরকে সম্মান করিব কিন্তু তিনটি কাজ ছাড়িব না।) এক–আমরা সৎ কাজের আদেশ করিব, দুই–অসৎ কাজ হইতে নিষেধ করিতে থাকিব, তিন–লোকদের সুন্নাত শিক্ষা দিতে থাকব।
বিরোধ সম্পর্কে ইবনে মাসঊদ (রাঃ)এর উক্তি
হযরত কাতাদাহ (রাঃ)বলেন, রাসুল (সাঃ), হযরত আবু বকর (রাঃ)ও হযরত উ’মার (রাঃ)মিনাতে দুই রাকাত কসর পড়িতেন। এমনিভাবে হযরত উসমান রদিয়াল্লহু আ’নহুও তাঁহার খিলাফাতের প্রথম দিকে দুই রাকাতই পড়িয়াছেন। পরবর্তীতে তিনি চার রাকাত পড়িতে আরম্ভ করেন। হযরত আব্দুল্লহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ)যখন ইহা জানতে পারিলেন তখন বলিলেন ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাহে রজিউন, (কিন্তু যখন নামাযের সময় হইল তখন) আবার তিনি উঠিয়া চার রাকাত পড়িলেন। কেহ বলিল চার রাকাতের কথা শুনিয়া আপনি ইন্না লিল্লাহ …… পড়িলেন কিন্তু নিজেই আবার চার রাকাত পড়িলেন? তিনি বলিলেন আমীরের বিরোধিতা করা ইহা অপেক্ষা খারাপ জিনিস। (কানয)
হযরত আ’লী (রাঃ)এর উক্তি
হযরত আ’লী (রাঃ)একবার বলিলেন, তোমরা পূর্বে যেইভাবে ফয়সালা করিতে সেইভাবেই ফয়সালা কর। কেননা আমি বিরোধকে অত্যন্ত খারাপ মনে করি। হয় তোমরা এক জামাত থাকিবে নতুবা আমি মৃত্যুবরণ করিব যেমন আমার সঙ্গীগণ (অর্থাৎ আবু বকর রদিয়াল্লহু আ’নহু, উ’মার (রাঃ)ও উসমান (রাঃ)বিরোধহীন ভাবে) মৃত্যুবরণ করিয়াছেন। এই কারণেই হযরত ইবনে সীরীন রহমাতুল্লহ আ’লাইহি এর বিশ্বাস এই ছিল যে, লোকেরা হযরত আ’লী (রাঃ)হইতে যে সকল (বিরোধমূলক) রেওয়ায়েত বর্নণা করে তাহা অধিকাংশই মিথ্যা। (মুন্তাখাব)
বিদআত, একতা ও বিছিন্নতা সম্পর্কে হযরত আ’লী (রাঃ)এর উক্তি
ইবনে কাউয়া রহমাতুল্লহ আ’লাইহি হযরত আ’লী (রাঃ)কে সুন্নাত ও বিদআত এবং একতা ও বিছিন্নতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করিলে হযরত আ’লী (রাঃ)বলিলেন, হে ইবনে কাউয়া, তুমি প্রশ্ন স্মরণ রাখিয়াছ এখন উহার উত্তর বুঝিয়া লও। আল্লহর কসম, সুন্নাত হইল মুহাম্মাদ (সাঃ) এর তরীকা, আর বিদআত হইল যাহা সুন্নাত হইতে ভিন্ন। এবং আল্লহর কসম, একতা হইল আহলে হক (অর্থাৎ হকপন্থীদের) এক হওয়া যদিও তাহারা সংখ্যায় কম হয়, আর বিছিন্নতা হইল আহলে বাতেল (অর্থাৎ বাতেলপন্থীদের) এক হওয়া যদিও তাহারা সংখ্যায় অধিক হয়। (কানয) হায়াতুস সাহাবাহ ২য় খন্ড (দারুল কিতাব, ডিসেম্বর ২০০৫) পৃষ্ঠা ৩৬২
~~~~***~~~~
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে উল্লেখিত বিষয়ের উপর আমল করার তাওফিক দিন। আমীন
Comment