পঁচিশ
উয়াইস আলকারানি আলইয়ামানি
খায়রুত তাবিয়িন। সর্বজন প্রসিদ্ধ বুযুর্গ। একজন বুযুর্গ হিসেবে মোটামুটি সকলে তাকে চেনেন। জনসাধারণ বিকৃত উচ্চারণে ‘ওয়াস করনি’ নামে চেনে। বিদআতি বক্তারা গজলও গেয়ে থাকে: ‘নবীর প্রেমে ওয়াস করনি দন্ত দেয় ফেলে ...।’ অবশ্য দন্ত ফেলে দেয়ার ঘটনা সহীহ নয়। দন্ত কারো বাপের সম্পত্তি নয়। আল্লাহর দেয়া নেয়ামত। নষ্ট করা হারাম। উয়াইস আলকারানি আলইয়ামানি
হাদিসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
إن خير التابعين رجل يقال له أويس وله والدة وكان به بياض فمروه فليستغفر لكم -صحيح مسلم، رقم: 6655؛ ط. دار الجيل بيروت + دار الأفاق الجديدة ـ بيروت
“সর্বশ্রেষ্ট তাবিয়ি হলো উয়াইস নামে এক ব্যক্তি। তার মা আছে। তার শরীরে শ্বেত রোগ ছিল। তোমরা তার কাছে আবেদন করবে, সে যেন তোমাদের জন্য মাগফিরাতের দোয়া করে।” –সহীহ মুসলিম ৬৬৫৫অন্য হাদিসে এসেছে,
يأتى عليكم أويس بن عامر مع أمداد أهل اليمن من مراد ثم من قرن كان به برص فبرأ منه إلا موضع درهم له والدة هو بها بر لو أقسم على الله لأبره فإن استطعت أن يستغفر لك فافعل-صحيح مسلم، رقم: 6656؛ ط. دار الجيل بيروت + دار الأفاق الجديدة ـ بيروت
“ইসলামের সাহায্যার্থে ইয়ামানের যে মুজাহিদ বাহিনি তোমাদের কাছে আসবে, তাদের সাথে আসবে উয়াইস ইবনু আমের। সে (ইয়ামানের) ‘মুরাদ’ গোত্রের ‘কার্ন’ গোত্রের লোক। তার শ্বেত রোগ ছিল। (দোয়ার বরকতে) তা থেকে সে সুস্থতা লাভ করেছে। তবে এক দিরহাম পরিমাণ স্থান বাকি রয়ে গেছে (যেন তা দেখে অতীত অসুস্থতার কথা মনে পড়ে এবং আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায় করতে পারে)। তার মা আছে। সে তার মায়ের সাথে সদাচারি ও হক আদায়কারী। যদি সে আল্লাহর কাছে কোনো বিষয়ে কসম করে, আল্লাহ তাআলা অবশ্যই তার কসম পূর্ণ করবেন। তোমরা যদি তাকে দিয়ে তোমাদের জন্য মাগফিরাতের দোয়া করাতে পার, তাহলে করিয়ে নিয়ো।” –সহীহ মুসলিম ৬৬৫৬হযরত উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুসহ অসংখ্য মানুষ তার থেকে দোয়া নিয়েছেন।
# হিন্দুস্তান দীর্ঘদিন শীয়াদের দ্বারা শাসিত হওয়ার কারণে এবং হিন্দুস্তানে সুফিবাদ প্রাধান্য বিস্তার করার কারণে আজ আমরা উয়াইস কারানিকে একজন বুযুর্গ হিসেবেই কেবল জানি। তিনিও যে একজন মুজাহিদ ছিলেন এবং জিহাদ করতে করতে যে তিনি শহীদ হয়েছেন এ কথাটি যেন ভাবতেও অবাক লাগে। কিন্তু বাস্তবতা এমনই।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাকে সর্বশ্রেষ্ঠ তাবিয়ি বলে গেছেন, তিনি যদি জিহাদের মতো শ্রেষ্ঠ আমলটি না করেন তাহলে করবে কে? এ আমলটি তো তার জন্যই মানায়। আর যে হাদিসে তাকে শ্রেষ্ঠ তাবিয়ি বলা হয়েছে, সেখানে এ কথাটিও আছে যে, তিনি ইয়ামানের মুজাহিদ বাহিনির সাথে আগমন করবেন। আর বাস্তবতাও এমনই হয়েছে। উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুর যামানায় ইয়ামানের মুজাহিদ বাহিনি উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছে আগমন করলে তিনি খোঁজ নেন যে, তাদের মাঝে উয়াইস নামের কেও আছে কি’না। খোঁজ নিয়ে দেখেন, তিনি তাদের মাঝে আছেন। এরপর তিনি তার কাছে মাগফিরাতের দোয়া চান। আরো অনেকে তার কাছ থেকে দোয়া নেন। পরে তিনি কূফায় চলে যান।
শাহাদাত
এ ব্যাপারে বিভিন্ন মত আছে।
এক বর্ণনা মতে,
إنه غزا أذربيجان، فمات. اهـ
“তিনি আজারবাইযানে জিহাদে যান এবং সেখানেই মারা যান।” –সিয়ারু আ’লামিন নুবালা ৪/৫২২অন্য বর্ণনা মতে,
ثم هام على وجهه، فلم يوقف له بعد ذلك على أثر دهرا، ثم عاد في أيام علي -رضي الله عنه، فاستشهد معه بصفين، فنظروا فإذا عليه نيف وأربعون جراحة. اهـ
“লোকজন তাকে চিনে ফেলার পর তিনি কোথায় জানি উধাও হয়ে যান। দীর্ঘদিন যাবৎ তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। এরপর আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর খিলাফতকালে আবার ফিরে আসেন। তার সাথে সিফফিনের যুদ্ধে শরীক হয়ে শহীদ হন। দেখা গেল, তার শরীরে চল্লিশটিরও বেশি জখম ছিল।” -সিয়ারু আ’লামিন নুবালা ৪/৫২৬***
Comment