এই ফিলিস্তিনি ভদ্রলোকের নাম মোহাম্মদ দাহলান। এবং ইনি সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী আমেরিকান এবং ইসরায়েলি এজেন্ট।
দাহলানের জন্ম ফিলিস্তিনের খান ইউনুসে। আর দশজন ফিলিস্তিনি কিশোরের মতো তিনিও ইসরায়েলবিরোধী হিসেবেই বেড়ে উঠেছিলেন। ইনফ্যাক্ট তিনি গাজায় প্রথম ফাতাহ্'র যুব সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
প্রথম ইন্তিফাদার সময় তার বেশ সক্রিয় ভূমিকা ছিল। সে সময় ইসরায়েল তাকে অন্তত ১১ বার গ্রেপ্তার করে। তার জীবনের অন্তত ৫ বছর কাটে ইসরায়েলি জেলে বন্দী অবস্থায়।
মোহাম্মদ দাহলানকে ইসরায়েল আনুষ্ঠানিকভাবেই রিক্রুট করতে পেরেছে কি না, সেটা বলা মুশকিল। কিন্তু তার পরবর্তী জীবনের কার্যকলাপ সেদিকেই নির্দেশ করে। জেল থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি জর্ডানে যান, ইয়াসির আরাফাতের সাথে পরিচিত হন এবং ফাতাহ'র র*্যাঙ্কে ধীরে ধীরে উপরে উঠতে থাকেন। এক পর্যায়ে তিনি ফাতাহ'র একটা সিকিউরিটি সার্ভিসের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পান।
এই প্রিভেন্টিভ সিকিউরিটি ফোর্স পরিচালিত হতো আমেরিকানদের অর্থায়নে, সিআইএর ট্রেনিংয়ে। নব্বইয়ের দশকজুড়ে দাহলান গাজায় ২০,০০০ সদস্যের কুখ্যাত এই ফোর্স তৈরি করে, যাদের প্রধান কাজ ছিল প্রতিপক্ষ সংগঠন হামাসের উপর ক্র্যাকডাউন করা। তাদের সদস্যদেরকে তুলে নিয়ে যাওয়া, গুয়ান্তানামো-আবু গারিব স্টাইলে টর্চার করা, গুম করে ফেলা। দাহলানের কঠোর ভূমিকার কারণে সে সময় স্থানীয়ভাবে গাজার পরিচিতি ছিল "দাহলানিস্তান" নামে।
অত্যন্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষী দাহলান সব সময়ই চেয়েছেন ফাতাহর র*্যাঙ্কে নিজেকে আরো উপরের দিকে নিয়ে যাওয়ার - এবং খুব সম্ভবত আরাফাতের পরে, কিংবা অ্যাটলিস্ট মাহমুদ আব্বাসের পরে ফাতাহ্*র প্রধান হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার। আর এ ব্যাপারে তিনি ছিলেন আমেরিকার প্রিয়পাত্র। অ্যাকর্ডিং টু সাম রিপোর্টস, প্রেসিডেন্ট বুশ দাহলানের কথা বলতে গিয়ে তাকে "আওয়ার বয়" হিসেবে উল্লেখ করতেন।
২০০৬ সালে হামাস যখন ফিলিস্তিনে নির্বাচনে জয়লাভ করে, তখন আমেরিকা এবং ইসরায়েলের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। তারা মাহমুদ আব্বাসকে দিয়ে হামাসের উপর ক্র্যাকডাউনের চেষ্টা চালায়। কিন্তু আব্বাস আলোচনাতেই বেশি আগ্রহী ছিলেন। ফলে আমেরিকানরা শরনাপন্ন হয় দাহলানের। তাকে দিয়ে তারা শুরু করায় দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী ফাতাহ-হামাস গৃহযুদ্ধ।
পরবর্তীকালে ফাতাহ'র ভেতরে দালানের কর্মকাণ্ড বেপরোয়া হয়ে উঠলে এবং আব্বাসের সাথে তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা চরম পর্যায়ে পৌঁছলে তাকে ফাতাহ থেকে বহিষ্কার করা হয়, তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, ফিলিস্তিনি নেতাদেরকে হত্যাচেষ্টাসহ বিভিন্ন অভিযোগ তোলা হয়, এবং তার অনুপস্থিতিতে দুর্নীতির দায়ে তার বিচার করে তাকে কারাদন্ড দেওয়া হয়।
দাহলানের বিরুদ্ধে প্রচুর অভিযোগ আছে। ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে হামাসের প্রধান ইসমাইল হানিয়াকে হত্যাচেষ্টার দায়ে তাকে অভিযুক্ত করা হয়। ২০১০ সালে দুবাইর হোটেলে হামাসের তিন নেতাকে যারা হত্যা করেছিল, যে হত্যাকান্ডের সাথে মোসাদ জড়িত, সেই খুনীদের মধ্যে দুইজন দাহলানের কোম্পানীতে চাকরি করত বলে জানা গেছে। এবং ২০১১ সালে মাহমুদ আব্বাস অভিযোগ করেন, ইয়াসির আরাফাতকে বিষ প্রয়োগের ঘটনার পেছনেও মোহাম্মদ দাহলানই দায়ী।
বহিষ্কৃত হওয়ার পর থেকে দাহলান অবস্থান করছেন আরব আমিরাতে। সেখানে তিনি অত্যন্ত সফল এবং প্রভাবশালী একজন ব্যবসায়ী। আমিরাতের নাহিয়ান পরিবারের সাথে এবং মিসরের সিসির সরকারের সাথে তার বেশ সুসম্পর্ক আছে।
সর্বশেষ সংবাদ হচ্ছে, গতকাল তুরস্ক দাহলানকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ৭ লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছে। তুরস্কের অভিযোগ, প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের বিরুদ্ধ অভ্যুত্থানের পূর্বে দাহলান অভ্যুত্থানের সাথে জড়িত গুলেনিস্ট নেতাদের কাছে টাকা ট্রান্সফার করেছিলেন।
copyd