Announcement

Collapse
No announcement yet.

খোরাসানের পথে হিজরত করা একজন পাকিস্তানি বোনের আত্মজীবনী (পর্ব-৫)

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • খোরাসানের পথে হিজরত করা একজন পাকিস্তানি বোনের আত্মজীবনী (পর্ব-৫)

    খোরাসানের পথে হিজরত করা এক পাকিস্তানি বোনের আত্মজীবনী (পর্ব-৫)

    ডা. খাওলা বিনতে আব্দুল আজিজ

    আমি এখানে আমার তওবার পিছনে কারণ হয়েছে এমন আরও কিছু ঘটনা বর্ণনা করতে চাই।
    একদা জনৈক মহিলা আমার ক্লিনিকে আসল। সে ব্লাড ক্যান্সারের রোগী ছিল। তার চেহারা ছিল অন্ধকারাচ্ছন্ন। চেহারায় সুস্পষ্ট ভয়-ভীতির ছাপ ছিল। আমার দেওয়া সময় অনুযায়ী সে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছিল। একদিন আমি তাকে দেখার জন্য তার কামরায় গেলাম। তার চক্ষুদ্বয় ভয়ে ফুলে গিয়েছিল এবং সে কাঁপছিল। আমি তাকে কারণ জিজ্ঞাসা করলে সে বলল, “ঐ লোকটি আমাকে নিয়ে যেতে এসেছে। আমার মৃত্যুর সময় এসে গেছে। আমি পেরেশান হয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, তোমাকে কে নিয়ে যেতে এসেছে? তোমার কামরায় তো সারাদিনে কেউ আসেনি। আমি বললাম, রিপোর্ট অনুযায়ী তুমি এখন পূর্ণ সুস্থ। সে ভয়ের সাথে বলল, কখনো নয়! এখন আমাকে কেউ বাঁচাতে পারবে না।” আমি তাকে শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করলাম। অবশেষে ঘুমের ট্যাবলেট খাওয়ালাম। দ্বিতীয় দিন ডিউটিতে এসে যখন তার কামরায় গেলাম তখন তাকে দেখে মনে হল যে, সে অনেক কষ্টের সাথে মৃত্যুবরণ করেছে। মৃত্যুর সময় তার মুখ দিয়ে ফেনা বের হয়ে পড়েছিল। সে কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত মৃত্যুর যন্ত্রণা ভোগ করেছিল।
    আমি এই চিন্তা করতে করতে অস্থির হয়ে গেলাম যে, তাহলে তার কামরায় কে প্রবেশ করেছিল? কিভাবে সে মৃত্যুর ব্যাপারে এতটা নিশ্চিত হতে পারল? আমার কাছে এসবের কোনো উত্তর ছিল না। কিন্তু তার এই মৃত্যুর ভয় ও যন্ত্রণা এবং জীবনের ব্যাপারে নৈরাশ হওয়া আমার মাঝে এক আলোড়ন সৃষ্টি করল। আল্লাহ তাআলা এর মাধ্যমে আমার মাঝে অনেক পরিবর্তন ঘটালেন। এখন আমি নিয়মতান্ত্রিক মৃত্যুর ভয়ে ভীত। এই বিষয়টি লক্ষ্য করেছি যে, কাফির মৃত্যুবরণ করার সাথে সাথে পঁচা দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। যা শুধু আমার জন্য নয়; বরং রোগীর আত্মীয়-স্বজনদের জন্যও অসহ্যনীয়। কাফিরদের এই মৃত্যু যন্ত্রণা অনেক সময় সপ্তাহ খানেক পর্যন্ত গড়ায়।

    আমি আমার পেশায় নিয়মিত ডিউটি করে যাচ্ছিলাম। কাফিরদের মাঝে আত্মহত্যা প্রবণতা অনেক বেশি। মানসিক রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। আমার কাছে যখন এসব মানসিক রোগীরা আসত তখন তাদের বাস্তবতা উপলব্ধি করতে পারতাম। তারা পাপাচারে লিপ্ত হয়ে বিভিন্ন অস্থিরতা ও পেরেশানির শিকার হয়ে আছে। তাদের জীবনাচার বন্য প্রাণীদের জীবনাচারের ন্যায়। জীবনের কোনো উদ্দেশ্য নেই। চাকচিক্য এই আধুনিক সভ্যতাকে আমি তার প্রকৃত চেহারায় দেখেছি। দাজ্জালের অনুসারীদের তৈরি করা আধুনিক এই জীবনব্যবস্থা মূলত একটি শ্রেণিকে নেতা থেকে নেতায় রূপান্তরিত করে এবং জীবনোপকরণগুলোকে তাদের হস্তগত করে দেয়। মানবতাকে তাদের গোলামে পরিণত করে। গণতন্ত্র মূলত এদেরই তৈরি করা একটি মূর্তি যা এই শয়তানদেরকে পূজনীয় করে রাখে। গণতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হল সংবিধান, যাকে সবচেয়ে পবিত্র মনে করা হয়; এটি মূলত অত্যাচারী শাসকদের মানবতার দুশমনিকে আড়াল করে রাখার একটি মাধ্যম। মনে মনে চিন্তা করলাম যে, আমি ডাক্তারি বিদ্যা অর্জনের জন্য এত এত কিতাব পাঠ করলাম, কিন্তু আমার হেদায়াতের জন্য যে কুরআন নাজিল হয়েছে তা পাঠ করছি না। কুরআন আমার নিজেরই পড়া উচিত। নিশ্চয় এতে আমার জীবনের সকল বিষয়ের সমাধান রয়েছে। আর শুধু আল্লাহ তাআলাই মানুষকে এমন জীবন বিধানের দিকে পথ প্রদর্শন করতে পারেন যা মানুষকে মানুষের গোলামি থেকে বের করে সম্মানের সাথে জীবন যাপনের ব্যবস্থা করবে। এখানে আমি একটি বিষয় উল্লেখ করছি যে, (আল্লাহ তাআলা আমার পিতা-মাতাকে হিদায়াত দান করুন) স্টুডেন্ট লাইফে আমার পিতা-মাতা আমাকে কুরআন তেলাওয়াতের জন্য নসিহত করতেন। কিন্তু আমার বিকৃত মন-মানসিকতা তা গ্রহণ করতে পারেনি। আল্লাহ তাআলা যখন কাউকে হিদায়াত দান করেন তখন তাকে মাঝ পথে ছেড়ে দেন না। বরং আল্লাহ তাআলা তার সামনে সঠিক পথটি পরিপূর্ণভাবে তার সামনে তুলে ধরেন। যেন যে ব্যক্তি বাস্তবেই সঠিক পথের অনুসন্ধানী সে তার নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে যেতে পারে। আর যার অন্তরে নিফাকি লুকিয়ে আছে তার নিফাকিও প্রকাশ হয়ে যায় এবং তার উপর দলীল প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। আমি ছোট একটি স্কার্প এবং আধুনিক একটা বোরকা পরে মনে করেছিলাম এটাই আসল দ্বীন। হসপিটালের কাজ চালু রাখার সাথে সাথে কাফেরদের সাথে উঠা-বসাও অব্যাহত রাখলাম। হাসপাতালের ছোট একটি মসজিদে কখনো নামাজ পড়তে ভুলিনি। আমি মনে করছিলাম, কাফেরদেরকে নিজের কাজ ও আখলাকের মাধ্যমে দাওয়াত দেওয়াই যথেষ্ট। আর অচিরেই পুরো দুনিয়া ইসলাম কবুল করে নেবে।

    পাকিস্তান গিয়ে যখন সেনা অফিসারদের সাথে সাক্ষাত করতাম তখন তারা আমাকে নিজেদের মতোই মনে করতো। তারা মনে করতো ইসলাম একটি পুরাতন ধর্ম। আমরা কঠোরতা অবলম্বন করে তরবারীর মাধ্যমে কাফেরদেকে মুসলমান বানাতে পারবো না। নবী করীম সাঃ এর মতো আখলাক এবং ধৈর্যের মাধ্যমে মানুষকে দ্বীনের প্রতি আকৃষ্ট করতে হবে। আমরা এখনো মক্কী যিন্দেগীতে আছি। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও প্রয়োজনের সময় কখনো কখনো বিভিন্ন গোত্রের সাথে শান্তি চুক্তি করেছেন। আমেরিকার সাথে আমাদের চুক্তি উপমহাদেশের মুসলমানদের কল্যাণার্থেই। তালেবানরা রাষ্ট্রদ্রোহী। তারা হিন্দু ও ইদীদের এজেন্ট এবং শরীয়তকে ব্যবহার করে নিজেদের নিকৃষ্ট স্বার্থ হাসিল করতে চাচ্ছে।

    আমি তালেবান নারীদের ব্যাপারেও সংবাদপত্রের মাধ্যমে নেতিবাচক প্রভাবের শিকার হই। দেশী-বিদেশী মিডিয়া এবং সেনাদের বিভিন্ন মজলিসে এই কথা প্রসিদ্ধ ছিল যে, তালেবানরা তাদের নারীদের সাথে বন্য প্রাণীদের চেয়ে নিকৃষ্ট আচরণ করে। তালেবানদের স্ত্রীরা অজ্ঞ । তারা বাধ্য হয়ে স্বামীদের সাথে জিহাদে অংশ গ্রহণ করে। তাদের স্ত্রীদের গোলামি চুলা থেকে শুরু হয়ে চুলাতেই শেষ হয়ে যায়। সেনাদের বিভিন্ন পার্টিতে তালেবান কর্তৃক হত্যার বিভিন্ন মিথ্যা কাহিনী খুব জোরে শোরে প্রচার করা হতো। এসব শুনে আমিও তালেবানদেরকে ঘৃণা করতে থাকি। তাদেরকে ধ্বংস করার জন্য আমিও বিভিন্ন চেষ্টা-প্রচেষ্টা শুরু করি। তখন আমার কাছে সেনাবাহিনীকে পবিত্র বাহিনী মনে হতো। তাদের সব কিছুই যথাযথ এবং সঠিক মনে হতো। এত কিছু সত্তেও আমার মনে তাদের ব্যাপারে কিছু সন্দেহ রয়েই গেল।

    কুরআন এবং সুন্নাহর যে সাধারণ নলেজ আমার ছিল তাতে আমি বুঝতে পারছিলাম যে, আমি না পুরো মুসলমান হয়েছি আর না পুরো কাফের। বরং মনে হচ্ছিল আমি মুনাফেক। আমি খুব কাছ থেকেই সেনাবাহিনীর অনৈসলামিক কার্যকলাপ দেখেছি। আমার কাছে এগুলো শরীয়তের খেলাফ মনে হলো। বিষয়টি নিয়ে আমি খুব পেরেশানিতে ছিলাম যে, তালেবানরা সংখ্যায় স্বল্পতা এবং অস্ত্র কম হওয়া সত্তেও কিভাবে দুনিয়ার ছোট বড় সব ধরণের সেনাবাহিনীর মোকাবেলা করতে প্রস্তুত এবং এত বছর পর্যন্ত হাজার হাজার অপারেশন চালানোর পরও সেনাবাহিনী তাদেরকে নির্মূল করতে ব্যর্থ হয়েছে। সুতরাং তাদের পিছনে এমন কী শক্তি আছে এবং তাদের এমন কী উদ্দেশ্য আছে যা তাদের এত উচ্চাকাঙ্খার কারণ হতে পারে?
    আমি ইন্টারনেটে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর কাবায়েলী এলাগুলোতে জনসাধারণের উপর যে আক্রমণগুলো করেছে তার রিপোর্ট নিরপেক্ষ কিছু মিডিয়াতে দেখেছি। যেখানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ড্রোন বিমানগুলো বোম্বিং করে মৃত্যুর ঘুম এনে দিয়েছে। আমি অনুভব করলাম যে, পাকিস্তানী সেনাবাহিনী এবং তার বুদ্ধিজীবিরা মূলত সরাসরি গনতন্ত্রের গোলামীতে লিপ্ত এবং শরীয়ত প্রতিষ্ঠা কখনই তাদের উদ্দেশ্য নয়। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সেনা অফিসার এবং তাদের প্রতিনিধিরা অধিকাংশ সময়ই এই কথাটি বলে যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামÑ এর শরীয়ত (আল্লাহর পানাহ) পুরান হয়ে গেছে এবং তাতে এখন নতুন কিছু বিষয় প্রবেশ করানো উচিৎ যাতে আমাদের মাঝে এবং পশ্চিমাদের মাঝে সৃষ্ট দূরত্ব মিটানো যায়। অর্থাৎ আমাদের উদ্দেশ্য আল্লাহকে খুশি করা নয় বরং কাফেরদেরকে খুশি উদ্দেশ্য। আমি বিস্ময়কর এক টানাটানির মাঝে ছিলাম। পুনরায় আল্লাহ রব্বুল ইজ্জতের দরবারে লুটিয়ে পড়লাম এবং দোয়া করলাম,“হে পথহারাকে পথপ্রদর্শনকারী! হে প্রকাশ্য এবং গোপন সবকিছু জ্ঞাত সত্তা! আমাকে সঠিক পথের দিশা দিন। ঐ পথের দিশা দিন যে পথের অনুসারীদেরকে আপনি অনুগ্রহের পুরুস্কার দিয়েছেন। আর যাদের উপর আপনার গযব নাযিল হয়েছে তাদের পথে নয়।”
    আল্লাহ তায়ালা আমার হেদায়েতের জন্য একজন মুত্তাকী এবং হৃদয়বান আলেমাকে পাঠালেন। যাকে আমি সর্বদা শরীয়তের অনুসারী, শরীয়ত কায়েম এবং আল্লাহ তায়ালার দ্বীনের প্রচারক হিসেবে পেয়েছি। সে আমাকে ইস্তেঞ্জা থেকে শুরু করে জিহাদ পর্যন্ত, মোট কথা ছোট বড় সকল আহকাম শিক্ষা দিয়েছে। দুই বছর যাবত দিন রাত আমি তার সাথে কুরআন ও হাদীস শুধু পড়িই নি। বরং এই আলেমা বোনের মাঝে আমি তার কথা ও কাজের বাস্তব প্রয়োগও পেয়েছি। আসল বিষয় হলো যে, এই আলেমা বোনের স্বাক্ষাত হওয়ার আগেই আমি দ্বীনের পথে এসেছিলাম। কিন্তু পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করিনি। নিকাব পরার ‘অপরাধে’ আমাকে ডাক্তারি প্রাকটিস থেকে হাত গুটিয়ে নিতে হয়েছে। বহুবার আমার কদম টলটলায়মান হয়েছে। নফসে আম্মারা এবং শয়তান গুনাহের দিকে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য অনেক শক্তি ব্যয় করেছে। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা আমার আলেমা বোনকে মহান প্রতিদান দান করুন যে, তিনি ধৈর্য এবং কৌশলের সাথে আমাকে সঠিক পথের সাথে লাগিয়ে রেখেছেন।

    দ্বীন শিখার সাথে সাথে আমি আলেমা বোনের সাথে লোকাল কমিউনিটিতে; বিশেষ করে মেয়েদেরকে দাওয়া এবং তাবলীগ সহ কল্যাণকর অনেক কাজে লিপ্ত ছিলাম। আমি সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ হয়েছি ইসলামে নারীদের অধিকার দেখে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের খালেক এবং তিনিই ভালো জানেন আমাদের জন্য কোনটা উত্তম। পুরুষদেরকে নারীদের উপর কর্তৃত্ব দিয়েছেন। পুরুষ তার বংশের যিম্মাদার হওয়ার ভিত্তিতে আল্লাহ তায়ালার দরবারে জবাবদিহিতা করতে হবে। তার বিপরীত নারীরা হলো তাদের প্রতিনিধির ন্যায়। তাদের কাঁধ থেকে যিম্মাদারীর বোঝা উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। তাদেরকে ফরজ বিধান দেওয়া হয়েছে কম। আর তাই তাদের অধিকারগুলোও ফরজ বিধানের সমান রাখা হয়েছে। মহিলাদেরকে দেওয়া হয়েছে সহজ বিধি-বিধান। বিবাহের আগে সে পিতার অধীনে আরামে থাকতে পারে। বিবাহের পর স্বামীর মজবুত বন্ধন তার জন্য প্রশান্তির কারণ হয়। মোট কথা, এই কোমল স্বভাবের মানুষের ভাগ্যে নিরাপত্তা ও মহব্বত অংশ রয়েছে। আখেরাতে নর-নারী প্রত্যেককে তাদের নিজেদের কর্মের হিসাব নেওয়া হবে। যে নেক আমাল করবে সে তার প্রতিদান পাবে এবং যে বদ আমল করবে সে তার শাস্তি পাবে। সুতরাং যে সকল নারীরা নিজেদের স্বামীদের অনুগামী হয়ে গুনাহের পথে চলছে তাদের স্মরণ রাখা উচিত যে, তাদের হিসাব তাদের স্বামীদের থেকে নেওয়া হবে না। বরং সে নিজেই নিজের আমলের যিম্মাদার।

    পশ্চিমা জীবনব্যবস্থায় নারীদেরকে গাড়ী এবং বাজারে বক বক করার একটা মেশিনের মতো বানিয়ে রাখা হয়েছে। আমি অনেক বছর যাবত “নারী স্বাধীনতার” শ্লোগান দিয়ে ছিলাম। কিন্তু পশ্চিমা সভ্যতার স্বাদ আস্বাদনের পর আমি অনুভব করলাম যে, স্বাধীন নারীরা মূলত লাঞ্ছিত নারী। পশ্চিমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে নারীদেরকে বিভিন্ন ব্যবসার চাহিদা অনুযায়ী গড়ে তোলা। তাদের পূঁজিবাদী ব্যবস্থার একটা ভিত্তি হিসাবে নারীদেরকে গড়ে তোলা যা বেশী বেশী সম্পদ বৃদ্ধির কারণ হবে। বহির্বিশ্বে কাজ করে আমি বার বার এই বিষয়টি উপলব্ধি করতে পেরেছি যে, আমাকে পুরুষদের সমান কাজ করতে হবে। আর নিজের কোমল স্বভাবকে তার জন্য প্রতিবন্ধক বানানো যাবে না। নারীরা ঘর এবং বাহিরের যিন্দেগীতে পাষাণ হয়ে গেছে। নিজের দুর্বলতা ও কোমলতাকে পুঁজি করে দাজ্জালী মিডিয়ার ষড়যন্ত্রে পা বাড়িয়েছে। আর পরিণতিতে নিজেদের সতিত্ব হারিয়েছে। পশ্চিমা সভ্যতায় আমি তাদের উচ্চ ডিগ্রি অর্জন করে শিক্ষিত শ্রেণীর অন্তর্ভূক্ত হয়েছি। কিন্তু তারপরেও আমার কাছে নিজেকে কখনো সম্মানিত মনে হয়নি। ধণ-সম্পদের উচ্চাকাঙ্খী চক্ষুগুলো আমার পিছনে লেগেই ছিল। শুধু একটি নিকাব আমাকে কাফের ও মুসলমানদের দৃষ্টিতে সেই ইজ্জত দিয়েছে যা পূর্বে কখনো পাইনি।

    যেখানে আমি কাফেরদের নোংরা ও অন্তঃসারশূন্য সভ্যতাকে দেখেছি সেখানেই আমার সাথে কৃত তাদের অসভ্য, ঘৃণ্য আচরণও দেখেছি যা তারা আমার নেকাব ব্যবহারের পর শুরু করেছে। শপিং সেন্টারে আমাকে প্রকাশ্যে এমন কথা বলা হয়েছে যে, উসামার বোন! তুমি কেন আমাদের রাষ্ট্রে আসলে? তুমি তোমার দেশে চলে যাও! তুমি তালেবানদের এজেন্ট! কখনো কখনো আমার গাড়ীর পিছু নিত এবং আমাকে ভয়-ভীতি দেখাতো। এই অমানবিক আচরণ আমার সাথে পাকিস্তান এয়ারপোর্ট এবং মালেশিয়ান এয়ারপোর্টেও করা হয়। যেখানে আমাকে নিরাপত্তা যাচাইয়ের নামে নেকাব খুলতে বলা হলে আমি নেকাব খুলিনি। আর এ অপরাধে আমাকে লাঞ্ছিত করা হয়। আমি খুব তাড়াতাড়িই বুঝতে পারলাম যে, দারুল কুফরে অবস্থান করে কোন ভাবেই ইসলামকে প্রকৃত অর্থে মানতে পারবো না। আমি সৌদি আরব হিজরতের প্রোগ্রাম করলাম। যেন সেখানে শুধু ইসলামী জীবনব্যবস্থাই গ্রহন করবো না; বরং নিজের ডাক্তারি বিদ্যাকে কাজে লাগিয়ে মুসলিমদের খেদমত আঞ্জাম দেব। শুধু তাই নয়, ইসলামী জীবন ব্যবস্থার বরকতে থেকে নিজেও অনেক উপকৃত হবো। কিন্তু এটা ছিল আমার খাম খেয়ালীপূর্ণ। বর্তমানে মুসলিম বিশ্বে সৌদি আরবের মুনাফেকির চেহারা প্রকাশ হয়ে গেছে। সৌদি সংবিধানের ভিত্তি অত্যাচারি রাজতন্ত্রের উপর। সেখানের অনেক ধারায় শরয়ী বিধানের ওপর হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। আমি নিজের সকল চেষ্টা সৌদি আরব হিজরতে উদ্দেশ্যে ব্যয় করেছি। আমি ঘন্টা ঘন্টা দোয়া করেছি সৌদি হিজরতের তামান্না করে। মানুষ যে তাড়াহুড়াপ্রিয় এবং সংকীর্ণ চিন্তাধারার অধিকারী তাই আমার ব্যাপারে ঘটল। আমার আলেমা বোন আমাকে সব সময় এই বিষয়টি বলতেন যে, মানুষ তাড়াহুড়াপ্রিয় এবং সংকীর্ণ চিন্তার অধিকারী হওয়ার কারণে দুনিয়া ও আখেরাতে সামান্য সামান্য কল্যাণকর বিষয়গুলো প্রার্থনা করে, যখন আল্লাহ তায়ালা তাকে সীমাহীন কল্যাণ দান করার ইচ্ছা করেন। আমার কি আর জানা ছিল যে, আল্লাহ রব্বুল ইজ্জত আমাকে ঈমানের চুড়া তথা জিহাদের পথে পরিচালিত করতে চান? যে পথে আসার জন্য মানুষ বছরের পর বছর সাধনা করেও পৌঁছতে পারে না! আমার দয়াশীল,করুণাময় এবং আরশে আজীমের মালিক আমাকে নির্ধারিত একটি সময়ে ওখানে পৌঁছাতে চান। তিনি মহান সম্রাট। তারই ইচ্ছায় এক ইহুদীকে তিনি এমন হেদায়াত দিলেন যে, সে কালিমা পড়েই যুদ্ধের ময়দানে ঝাপিয়ে পড়ল এবং শাহাদাত অর্জন করল। ফেরআউনের যাদুকররা যারা সামান্য পূর্বে হযরত মূসা আঃ এর মোকাবেলা করার জন্য ময়দানে প্রস্তুত ছিল তারা লাঠিকে সাপ হতে দেখে এরকম প্রভাবিত হলো যে, সাথে সাথে মূসা ও হারুন আঃ এর রবের দরবারে সেজদায় পড়ে গেল। বাস্তবতা হলো সত্য তওবার একফোঁটা চোখের পানি মানুষকে জান্নাতের প্রশস্ততা পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। আমিতো শুধু সৌদি আরব হিজরতে ইচ্ছা করেছিলাম যখন আসমানে আমার জন্য জিহাদের ভূমিতে হিজরতের ফয়সালা হয়ে গেছে। সূরায়ে আহযাবের শেষ দুই আয়াত আমার জীবনকে পাল্টিয়ে দিয়েছে।

    আল্লাহ তাআলা বলেন,
    “আমি আকাশ, পৃথিবী ও পবর্তমালার সামনে এই আমানত পেশ করেছিলাম, অতঃপর তারা একে বহন করতে অস্বীকার করল এবং এতে ভীত হল; কিন্তু মানুষ তা বহন করল। নিশ্চয় সে জালেম, অজ্ঞ।”
    “যেন আল্লাহ মুনাফিক পুরুষ, মুনাফিক নারী, মুশরিক পুরুষ, মুশরিক নারীদেরকে শাস্তি দেন এবং মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে ক্ষমা করেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” এখানে “আমানাত” দ্বারা উদ্দেশ্য শরীয়ত। আর শরীয়তকে সর্ব প্রথম নিজের ভিতর, তারপর আল্লাহর যমীনে বাস্তবায়ন করতে হয়। এটা এমন আমানাত যে পাহাড় তা বহণ করার সাহস করেনি এবং মানুষ অজ্ঞতার কারণে অর্থাৎ এর উপর আমাল করার প্রতিদান দেখেই এবং তার উপর আমাল না করার শাস্তির প্রতি লক্ষ্য না করেই এই আমানত নিজ কাঁধে উঠিয়ে নিল। এই “ আমানাত” মুনাফিকদের জন্য আযাবের কারণ এবং মুমিনদের জন্য রহমতের কারণ।

    আমার ভিতর কম্পন শুরু হল। হে আল্লাহ! এত ভারী আমানত আমি উঠিয়ে নিয়েছি! আমাকে আখেরাতে জিজ্ঞেস করা হবে না যে, আমি কোন ধরণে ডাক্তারি ডিগ্রি নিয়েছি। বরং এই আমানতের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হবে যা বহন করার কথা শুনে পাহাড়ও কেঁপে উঠেছিল। আমি আল্লাহর সামনে ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে হাত বেধে দাঁড়িয়ে গেলাম এবং পুনরায় তাওবাহ করতে শুরু করলাম। আমার চোখ দিয়ে অনবরত অশ্রæ গড়িয়ে পড়ছিল,“ হে আল্লাহ! আমি স্বীকার করছি যে, আমি এই আমানতের খেয়ানত করেছি। হে আমার ইলাহ! আমি তোমার আশ্রয় চাচ্ছি ঐ আযাব থেকে যে আযাব মুনাফেকদের উপর আসবে”। আমি তখন অঙ্গিকার করেছিলাম যে, জীবনের শেষ অবধি আমি এই আমানতকে উত্তম পদ্ধতিতে বহন করবো। হাদীস মোতাবেক “সাহায্য প্রাপ্ত একটি দল” সর্বদা বিদ্যমান থাকবে যারা কিয়ামত পর্যন্ত এই “আমানত” বহন করবে।

    এটি জানা কথা যে, এই দলটি কোথায় আছে তা বের করা কোন কঠিন বিষয় ছিলনা (কেননা হাদীসে সাহায্যপ্রাপ্ত দলের যে সিফাতগুলো বলে দেওয়া হয়েছে,তা যে কেউ পড়লেই বুঝতে পারবে যে, কোন দলটি সাহায্যপ্রাপ্ত দল)। মিডিয়া পর্যন্ত তাদেরকে কাফেরদের প্রথম শত্রু নির্ধারণ করে দিয়েছে। আমি তাদের কাতারে শামিল হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। ওদিকে ফোনের রিং বেজে উঠল এবং অপরপাশ থেকে সৌদি আরবের ব্যাপারে ভিসা অফিস থেকে কথা বলছিল এবং খুব আনন্দের সাথে আমাকে খুশির সংবাদ শুনাচ্ছিল যে, আমার ভিসা মঞ্জুর হয়েছে এবং খুব দ্রুতই আমার জন্য অনেক উচ্চমানের চাকরি খুব সহজেই ঠিক হয়ে যাবে। আমি অত্যন্ত শান্তভাবে উত্তর দিলাম যে, আমি সৌদি আরব যাবো না। অপরপাশ থেকে আওয়াজ আসলো,“ আপনিতো সৌদি আরব আসা এবং সেখানে চাকরির জন্য দিন-রাত মেহনত করেছেন”। আমি উত্তর দিলাম,“আমার যে কাজ তা সৌদি আরব গিয়ে হবে না।”

    আমি খোরাসানে হিজরতের দৃঢ় সংকল্প করে নিলাম। আল্লাহর কাছে দোয়া করলাম,“ হে আল্লাহ! আমাকে তায়েফায়ে মানসুরাহ বা সাহায্যপ্রাপ্ত দলে শামিল করো।” আমার এতে কোন সন্দেহ ছিল না যে, পাকিস্তানী ফৌজ মূলত আমেরিকারই ফৌজ। পার্থক্য শুধু বেতন আর পোশাকে। আর তালেবান আল্লাহর সৈনিক যারা ইসলামের কালিমাকে বুলন্দ করার জন্য নিজেদের দেহ,মন ও ধন কুরবান করার জন্য বের হয়েছে। আমি খুবই চিন্তিত ছিলাম যে, শেষ পর্যন্ত আমি একাকী কিভাবে এই হিজরত করবো? পাকিস্তান ছেড়েছি আজ এত বছর। আমার তো বাডির পথই ভালো করে মনে নেই। আমি খোরাসানেই বা যাবো কিভাবে এবং তালেবানদের কাতারে কিভাবে শামিল হবো? এসব চিন্তা আমাকে অস্থির করে রেখেছিল। অতঃপর আমার আলেমা বোন আমাকে একটি আয়াতের তাফসীর শেখালেন। তাবুক যুদ্ধে যখন কিছু সাহাবীর বাহন ছিল না তখন তারা ক্রন্দন করতে করতে ঘরে চলে গেলেন। কিন্তু আল্লাহ তাদেরকে প্রতিদান দিয়ে দিয়েছেন। এখন যদি আমি গন্তব্যে পৌঁছতে নাও পারি তাহলেও ইনশাআল্লাহ আমার বিনিময় আল্লাহ তায়ালার কাছে লেখা থাকবে। আর আরেকটি বিষয় হলো যে, আল্লাহ যদি আমাকে এই কুফুরীর ভিতরেও ঈমান দান করতে পারেন তাহলে এই হিজরত পূর্ণ করতে কিসের বাধা-বিপত্তি?

    চলবে.....
    একজন গেরিলা যুদ্ধা একজন কমান্ডোর মত, সে যে কোন পরিস্থিতির মোকাবেলায় সক্ষম

  • #2
    প্রিয় ভাই! আগের পর্ব গুলোর লিংক কমেন্টে দিয়ার অনুরোধ,আর সব পর্ব শেষ হলে একত্রে পিডিএফ করে দেবেন ভাইজান!
    আল্লাহ্ আপনাকে নিরাপদ ও সুস্থ রাখুন, সম্মানীত মিডিয়ার ভাইদের সাহায্য করুন আমিন।

    Comment


    • #3
      মাশাআল্লাহ, উপকারী আত্মজীবনী।
      আল্লাহ তা‘আলা আপনার কলমে আরো বারাকাহ দান করুন। আমীন
      সামনের পর্বগুলো সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার তাওফীক দান করুন। আমীন
      “ধৈর্যশীল সতর্ক ব্যক্তিরাই লড়াইয়ের জন্য উপযুক্ত।”-শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ.

      Comment

      Working...
      X