Announcement

Collapse
No announcement yet.

খোরাসানের পথে হিজরত করা একজন পাকিস্তানী বোনের আত্মজীবনী—(পর্ব-৭, শেষ পর্ব)

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • খোরাসানের পথে হিজরত করা একজন পাকিস্তানী বোনের আত্মজীবনী—(পর্ব-৭, শেষ পর্ব)

    খোরাসানের পথে হিজরত করা একজন পাকিস্তানী বোনের আত্মজীবনী—(পর্ব-৭, শেষ পর্ব)
    ডা. খাওলা বিনতে আব্দুল আজিজ


    এয়ারপোর্ট থেকে গাড়ি বের হয়ে খুব দ্রত চলছিল। খুব দ্রতই এসে সেনা ক্যাম্পে প্রবেশ করলাম। ডানে-বামে স্বশস্ত্র প্রহরীরা সটান দাঁড়িয়ে আছে। সেনানিবাসের আবাসিক এলাকার মুর্চাগুলোতে আবদ্ধ সৈন্যদেরকে দেখলে মনে হয় গর্তের ভিতরে ইঁদুর ঢুকে আছে। মূল বিষয় হল আমার দেখা আগের এই ছাউনিগুলো এখন যুদ্ধের ফ্রন্ট লাইনে আছে। সবদিকে ভয়-ভীতি আর নিরাশার ছড়াছড়ি। বাবাকে বললাম,—“বাবা! আমরা এতদিন যাবত আল্লাহ তায়ালার বিধান কায়েম করিনি। আর তার শাস্তিস্বরুপ আল্লাহ তায়ালা নিরাপত্তা ছিনিয়ে নিয়ে আমাদের মাঝে ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছেন।” আমি মনে মনে তালেবানদের জন্য দুআ করছিলাম,“ হে আল্লাহ! আমার মুজাহিদীন ভাইদের কুরবানীকে কবুল করো এবং তাদেরকে শত্রুর মোকাবেলায় বিজয়ী করো!” আজ আমার কাছে নিজ বাড়ি আপন মনে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে, আমি এই ছাউনিতে বন্দী হয়ে আছি। শ্বাস নেওয়া অসম্ভব মনে হচ্ছিল। তাই খুব চেষ্টায় ছিলাম যে কোনভাবে নিজের মনযিল পর্যন্ত পৌঁছবো। পিতা-মাতার চেহারায় দুশ্চিন্তার ছাপ লক্ষ্য করছিলাম। তারা আমার ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত। শুরু থেকেই আমাকে ডাক্তারির জন্য তাকিদ দিচ্ছিল। আমিও প্রস্তুত ছিলাম যে, যদি শরীয়ত অনুযায়ী কোন কাজ পেয়ে যাই তাহলে তা করতে আমার কোন আপত্তি নেই। কিন্তু মুসলিম নামধারী এই রাষ্ট্রে এমন কোন হাসপাতাল বা ক্লিনিক আমি পাইনি যেখানে নারী-পুরুষ প্রকাশ্য মেলা-মেশা নেই। আলহামদুলিল্লাহ, আমার পিতা-মাতা আমার সঙ্গ দিয়েছেন এবং আমার দ্বীনের মহব্বত ও দৃঢ়তাকে মূল্যায়ণ করেছেন। কিন্তু সাথে সাথে এই বিষয়ে সর্তক করেছেন যে, এই রাস্তা খুবই কঠিন এবং যদি তুমি এতবড় পদক্ষেপ নিয়ে থাকো তাহলে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করবে না। আমাদের দুআ তোমার সঙ্গে আছে। আমি ইলমে দ্বীন হাসিল করার ইচ্ছা করলাম। বাবা আমাদের শহরের, বরং পুরো পাকিস্তানের প্রসিদ্ধ এক আলেমের সাথে যোগাযোগ করলেন। আমি তার সাথে দেখা করতে তার মাদরাসায় গেলাম। কামরায় একটি প্রদীপ ও তেপায়া পড়ে আছে। দেয়ালের তিন সাইডে কিতাবের স্তুপ পড়ে আছে। আমাকে বলা হলো যে, এগুলোর চেয়ে বেশী কিতাব এই আলেমের ব্রেনে সংরক্ষিত। আমি কামরার সাধারণ অবস্থা, আর কিতাবের স্তুপ দেখে প্রভাবিত না হয়ে পারলাম না। উনি আসার সাথে সাথে আমি তার কাছে আবেদন করলাম যে, “ আমি এমন মাদরাসায় ভর্তি হতে চাই যা শুধু কুরআন এবং সুন্নাহর শিক্ষা-ই দেবে। যারা এই ভূমিতে শরীয়তও কায়েম করতে চায় এবং সব ধরণের তাগুতদের সাথে টক্কর দেওয়ার জন্যও প্রস্তুত।” উনি ঠাট্রা করে আমার পিতার দিকে তাকিয়ে বললেন,“আমাদের সবার-ই উদ্দেশ্য এক। আর এজন্যই আমরা প্রতিদিন প্রশাসনের সাথে বিভিন্ন বৈঠক করছি। যাতে প্রশাসনকে তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সজাগ করতে পারি।” আমি চিন্তা করলাম যে, শুধু বৈঠকের মাধ্যমেই যদি ইসলামের বিজয় হতো তাহলে ক্বিতাল বিষয়ে এত আয়াত নাযিল হলো কেন? আর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও তো এরকম সহজ পথ গ্রহণ করে আবূ জাহল এবং আবূ লাহাবকে শুধু বৈঠকের মাধ্যমেই কাবু করে ফেলতে পারতেন?

    এই আলেমের অনেক তাকিদের কারণে আমি তার স্ত্রীর কাছে গেলাম। সে আমাকে অনেক আপ্যায়ন করল। অতঃপর আমাকে জিজ্ঞেস করে বসল যে,“তোমার কি অন্য কোন দেশের নাগরিত্ব আছে?” আমি তার এই প্রশ্নে হতভম্ব হয়ে গেলাম। বললাম, জি আছে। সে আনন্দে বলে উঠল, আমার ছেলে মাশাআল্লাহ অনেক দ্বীনদার । তোমার উচিত আমার ছেলের সাথে একত্রিত হয়ে কাজ করা। আমি তাদের মতলব বুঝতে পারলাম। সেখান থেকে উঠে চলে এলাম এবং বাবাকে পুরো ঘটনা খুলে বললাম। বাবা বললেন, আমাকেও আলেম সাহেব বলেছেন যে, তুমি মেয়েকে বুঝাও যে, এমন কোন কাজ না করে যার দ্বারা তার নাগরিকত্ব নষ্ট হয়ে যায়। এরপর আর কোন দিন বাবা আমাকে কোন আলেমের কাছে নিতে চাননি। তিনি অনেক আফসোস করে বলতেন,“আমরা কার উপর ভরসা করবো। যদি দ্বীনের এই রাহবাররাও এমন হন তাহলে আমাদেরকে কে পথ দেখাবে?”

    এখনো অনেক পরীক্ষা বাকি রয়ে গেল। আমাদের ঘরে বাবার বন্ধুদের আসা-যাওয়া ছিল। তাদের কেউ কেউ ওয়াজিরিস্তান অপারেশনে শামিল ছিল। আর কেউ কেউ গোয়েন্দা বিভাগে কাজ করছে। আমার জন্য এটি খুব কষ্টকর ছিল। আমি তাদের সাথে সাক্ষাত করতে সম্পূর্ণ অস্বীকার করে দিলাম এবং নিজেকে একটা কামরায় বন্দী করে নিলাম। আমার পিতা-মাতার কথা হল, আমি নিজেই নিজের ওপর কঠোরতা আরোপ করছি। সকলের সাথে মিলেমিশে চলা উচিত। আমি উত্তর দিলাম, “তাহলে আমার জন্য আপনাদের দুনিয়াতেই থাকা উচিত নয়।”

    জনৈক অফিসারের স্ত্রী সব সময় আমার সাথে দেখা করতে আসতো। সে সব সময় জামেয়া হাফসার বিষয়টি এড়িয়ে যেত। সে বলতো,“লাল মসজিদে আক্রমণ করে সন্ত্রাসীদের আড্ডা খতম করা হয়েছে। সেখানে দেশদ্রোহী অনেক সন্ত্রাসী ছিল এবং অস্ত্রও ছিল।” আমি বলতাম, তুমি কি নিজে ঐসব সন্ত্রাসীদের লাশ দেখেছ? যদি এত অস্ত্রই তাদের কাছে থাকে তাহলে তাদের পক্ষ থেকে কঠিন কোনো প্রতিরোধ দেখা গেল না কেন? আর এটিও স্পষ্ট যে, বিদেশী এবং নিরপেক্ষ মিডিয়াগুলো এটি ক্লিয়ার করেছে যে, সেখানে মা’সুম বাচ্চা এবং ছোট ছোট শিশুরাও ছিল। মাদরাসা পরিচালনা কমিটি প্রশাসনের কাছে বার বার এই দাবি করেছিল যে, উলামায়ে কেরামের নিরপেক্ষ কমিটি গঠন করুন; যারা মাদরাসার দেখা শুনা করবে। তারা জবাবে বলেছিল যে, আমাদের গোয়েন্দা বিভাগের রিপোর্ট ভুল হতে পারে না। মাদরাসার ছাত্রীরা সন্ত্রাসীদের সাহায্যকারী। এখানকার বাচ্চারাও ভবিষ্যতে সন্ত্রাসীদের সাহায্যকারী হবে। তার এই বিবেকহীন কথায় আমার রক্ত গরম হয়ে গিয়েছিল। ডাক্তার আফিয়াকেও তার বাচ্চাদেরসহ এই গোয়েন্দা বাহিনী শুধু সন্দেহের ভিত্তিতে জেলে ঢুকিয়েছিল। কোনো প্রমাণ ছাড়া আমেরিকার কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। যদি তোমার মেয়েকে এই গোয়েন্দা বাহিনী শুধু সন্দেহের ভিত্তিতে গ্রেফতার করে এবং আমেরিকার কাছে হস্তান্তর করে তাহলেও কি তুমি তাদের পক্ষে কথা বলবে?

    আমি এটি বুঝতে পারলাম যে, আগের তুলনায় সেনাবাহিনীর আগ্রহ-উদ্দীপনা অনেক কমে গেছে। তারা শুধু চাকরি বাঁচানোর জন্য লড়াই করছে। তালেবানদের ভয় তাদের এবং তাদের স্ত্রীদের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। যে উপত্যকা এক সময় তাদের ইজ্জত ও সম্মানের উপত্যকা ছিল। আজ তা লাঞ্ছনা ও অপদস্থতার ভূমিতে পরিণত হয়েছে। এমনকি সেনা অফিসারও এখন জনগণের সামনে সাধারণ পোশাক পরিধান করে বের হচ্ছে। নিজের গাড়ি থেকে সেনাদের পতাকা এবং নাম্বার প্লেট নামিয়ে রাখছে। প্রকাশ্যে কুফুরের মদদের কারণে জনগনের সামনে নিজেদের সম্মান হারিয়ে ফেলেছে। বিদেশ গমন আর ডলারের আশা তাদের নৈতিক অধঃপতন ঘটিয়েছে। আর নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালার শত্রুরা দুনিয়া ও আখেরাতে লাঞ্ছিত হবেই।

    এক আশ্চর্য ধরণের ভয় আমার মাঝে কাজ করছিল। এমন তো হবে না যে, আল্লাহ রব্বুল ইজ্জত আমার তাওবা কবুল করেননি এবং আমি নিজের গুনাহের কারণে জিহাদের ভূমিতে হিজরতের উপযুক্ত নই। আল্লাহ তায়ালা আমার দিলের অবস্থা খুব ভালো করেই জানেন। তিনি আমাকে বার বার পরীক্ষার সম্মুখীন করে আমাকে কষ্ট দিতে চাননি। বরং আমার দিলকে সকল খারাপি থেকে পবিত্র করতে চেয়েছেন। আমার তাওহীদকে শিরকের যাবতীয় নোংরামি থেকে পবিত্র করতে চেয়েছেন। আমাকে আখলাক ও সৎ চরিত্রের ঐ উঁচু স্তরে নিয়ে যেতে চেয়েছেন। যেন কাল যখন তিনি জমিনে আমাদেরকে খেলাফত দেবেন তখন আমরা শুধু এই “আমানাত” বহনের উপযুক্ত না হই; বরং মানবতার সকল বোঝা বহন করতেও সক্ষম হই। তারপর আমরা সঠিক অর্থে “উম্মতে ওয়াসেতা” বা মধ্যমপন্থী উম্মতের সঠিক লক্ষ্য হই। আমি আল্লাহ তায়ালার দরবারে হেদায়াত এবং দৃঢ়তার দোয়া জারি রেখেছিলাম।

    আলহামদুলিল্লাহ, অবশেষে এমন এক মুত্তাকি আলেমের সাথে সাক্ষাত হলো যিনি কয়েক বছর যাবত শরীয়ত প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে কাজ করছিলেন। তিনি আমার অনেক ভুল ধারণা দূর করে দিলেন। তার সাথে কথা বলে আমার এই বিষয়টি ক্লিয়ার হল যে, পাকিস্তানী সংবিধান অনৈসলামিক এবং এখানে উদ্দেশ্যপ্রণীতভাবে কিছু ধারা রাখা হয়েছে যেগুলোতে ইসলামী নাম ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হল প্রশাসন বা সেনাবাহিনী কিছুতেই ইসলামী সংবিধান বাস্তবায়িত হতে দেবে না। কারণ এগুলো তাদের স্বার্থের বিপরীত।

    আমি তাকে খোরাসানে হিজরতের ইচ্ছার কথা জানালাম। তিনি বুদ্ধিমত্তার সাথে বললেন,“প্রিয় বেটি! এই পথ অনেক কঠিন। সেখানে কাঁচা ঘর বা গুহা তোমার বাসস্থান হবে। গ্যাসতো দূরের কথা, লাকড়ি জ্বেলে রান্না করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা তোমাকে জীবিকার স্বল্পতা, জান ও মালের ক্ষতি, রোগ এবং ভয়ের মাধ্যমে পরীক্ষা করবেন। আর তুমি তো মাত্র প্রাথমিক অবস্থায় আছো। তোমার তালিম ও তারবিয়াতের অনেক কিছু শেখা জরুরি। এটা এমন এক পথ যে পথে একবার নামলে শরিয়ত প্রতিষ্ঠা বা শাহাদাতের সুধা পান না করে বের হতে পারবে না। আপন পর সবাই তোমার শত্রু হয়ে যাবে।” আমি সে রাতে অনেক সময় যাবত কেঁদে কেঁদে দুআ করেছিলাম। হে অন্তর পরিবর্তনকারী! আমাদের অন্তরকে দ্বীনের উপর অটল রাখো।

    একদিন আমার হুয়াটসঅ্যাপে বিদেশে থাকা আলেমা বোনের সাথে কথা হলো। তিনি আমার পেরেশানির কথা বুঝতে পেরে কুরআন ও হাদীস থেকে বিভিন্ন অবস্থা তুলে ধরলেন এবং আমার জযবা ও সাহসকে আরও বাড়িয়ে দিলেন। তারপর তিনি আমাকে তার একটি স্বপ্নের কথা জানালেন। তিনি বলেন,“ আমি তোমাকে আফগানি বোরকায় জাহাযে আরোহী অবস্থায় দেখেছি। তুমি তখন উচ্চ আওয়াজে না’রায়ে তাকবীর আল্লাহু আকবার শ্লোগান দিচ্ছিলে।” তখন আমার দৃঢ় বিশ্বাস জন্মালো যে, আমি অচিরেই খোরাসানের হিজরতে বের হবো।

    পাকিস্তান ছিল আমার জন্মভূমি এবং আমার সব কিছু। আজ তা আল্লাহর দুশমনদের চারণভূমি । আমি একাকী এখানে কোন পরিবর্তন আনতে পারবো না। একাকী নিজের ব্যাপারে অনেক বিপদের শঙ্কা করছিলাম। আমি জানতাম যে, এই দাজ্জালী সিস্টেমকে পরিবর্তন করা জরুরি। আর মিষ্টি দাওয়াতে কখনোই তা পরিবর্তিত হবে না। যদি এখনো কিতাল ফি সাবিলিল্লাহর সময় না আসে তাহলে আর কবে আসবে? আমি চিন্তা করলাম যে, শেষ পর্যন্ত আমার উদ্দেশ্য কী? এটা স্পষ্ট বিষয় যে, এসব পাপিষ্ঠ শাসকরা কখনই ইসলামকে বিজয়ী হতে দিবে না। অপারগ হয়ে সাধারণ মানুষ এই সিস্টেমের খাদেম হয়ে থাকবে এবং এই লাঞ্ছনার মাঝেই পঁচতে থাকবে। আমাদের উদ্দেশ্য এসকল পাপিষ্ঠ শাসক ও তাদের নেতাদেরকে খতম করে দেওয়া। যাতে মানুষ স্বাধীনভাবে ইসলামের ছায়াতলে জীবন যাপন করতে পারে। আর এভাবেই পুরো পৃথিবীতে ইসলাম বিজয়ী হবে। কারণ, এটি আল্লাহ তায়ালার পছন্দ করা দ্বীন এবং এতেই রয়েছে মানবতার মুক্তি। আর তাই, আমার মুজাহিদীন ভাই ও বোনেরা নিজেদের সবকিছু বিলিয়ে আল্লাহর দ্বীনের সাহায্যের জন্য বের হয়ে গেছেন। আমি মন্দ নিয়তে ডাক্তারি বিদ্যা অর্জন করেছি। কিন্তু এখন আমার তাওবার পর নতুনভাবে কাজ করতে চাচ্ছি। ডাক্তার হিসাবে মুজাহিদীনদের খেদমত করে নিজের তাওবার সত্যতা প্রমাণ করতে চাচ্ছি। সাথে সাথে কলমের মাধ্যমে সত্যের বাণী উঁচু করাও আমার মিশন। আর এর কিছুই যদি না হয় তাহলে তালেবানদের সাথী হয়ে তাদের সংখ্যা বৃদ্ধির কাজটাওতো করতে পারবো?

    হিজরতের পূর্বে শেষ বারের মতো পিতা-মাতার সাথে সাক্ষাতের ফয়সালা করলাম। বাবা অনেক আগ থেকেই আমার সাথে কথা বার্তা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। মায়ের মন সন্তানের মহব্বতে ভরপুর ছিল। আমি আম্মুকে বিভিন্ন ভিডিও দেখালাম এবং দলীল দিয়ে একথা বুঝালাম যে, আমি কেন সেনাবাহিনীর মোকাবেলায় তালেবানদেরকে গ্রহণ করেছি? এরা আল্লাহ তায়ালার পছন্দকৃত লোক। আম্মু বার বার জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, তুমি কি বাস্তবেই আমাদেরকে ছেড়ে চলে যাচ্ছ? বেটি! খোরাসানের হালত খুবই খারাপ। আমার ভাই-বোনরাও আমার ফয়সালাতে অসন্তুষ্ট ছিল। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ, হক্ব পথ এবং দাজ্জালি বাহিনী কর্তৃক ইসলামের সাথে শত্রুতা এত স্পষ্ট ছিল যে, কারও কিছু বলার হিম্মত হয়নি। সবাই এই দ্বিধায় ছিলেন যে, আমি কি তাহলে বাস্তবেই আমার ফয়সালার উপর আমল করবো? ঘর থেকে বের হয়ে গাড়িতে বসার আগ মূহুর্তেও আমি আব্বুকে সালাম দিয়েছিলাম। তার চোখগুলো রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছিল। আম্মু দরজা পর্যন্ত বিদায় দিতে এসে বললেন,“ তোমার আব্বু রাতে অনেক কেঁদেছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে, তুমি তার প্রাণের স্পন্দন ছিলে। যদি তুমি চলে যাও তাহলে তিনি বাঁচতে পারবেন না” আমার নিকাব অশ্রুতে ভিজে গিয়েছিল। আমি বললাম,“আম্মু! তাহলে আব্বু এবং আমার সকল ভাই-বোনকে বলেন, তারা যেন আমার সাথে হিজরত করে। আব্বুর হৃদয়ে আমার ভালোবাসা স্থান করেছিল, আর আমার হৃদয়ে আল্লাহ তায়ালার ভালোবাসা। কিয়ামতের দিন আব্বুকে তার সন্তানের মহব্বত বাঁচাতের পারবে না। আর আমার এই মহব্বত যার উপর আমি আমার সব কিছু কুরবান করে দিচ্ছি অবশ্যই আল্লাহ তায়ালার দরবারে আমার মাথা উঁচু করে দেবে।”

    আমার এখনো স্মরণ আছে, আব্বু অনেক্ষণ যাবত আমার গাড়ির পিছনে পিছনে এসেছিলেন। এক জায়গায় এসে তিনি আমাদেরকে (আমি এবং আমার ভাইকে) গাড়ি থামাতে ইশারা করলেন। নিকটে এসে বললেন, বেটা! আস্তে ড্রাইভিং করো। জি টি রোডে ভীড় আছে। তিনি হয়ত আরও কিছু বলতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু বলতে পারছিলেন না। তারপর উনার আর বাধা দেওয়ার হিম্মত হলো না। আমি চিন্তা করলাম যে, যখন আমি কাফেরদের ভূমিতে দুনিয়া কামানোর জন্য গিয়েছিলাম তখন আমাকে বাধা দেননি। আর এখন আমি মুজাহিদীনদের ভূমিতে আখেরাত কামাতে এবং আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করতে যাচ্ছি তখন কিভাবে আমাকে বাধা দিতে পারেন? আমিও দৃঢ় ইচ্ছা করলাম যে, যা কিছুই হোক আমি সিরাতে মুস্তাকিম থেকে হটবো না।

    রাত বারোটা বাজে আমি আমার এক বান্ধবীর সাথে বাসে হিজরতের সফরে রওয়ানা করি। ঠিক সেভাবে যেভাবে সাহাবায়ে কেরাম অনেক আগে পদব্রজে বা উটে আরোহন করে সব কিছু ছেড়ে মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করেছিলেন। কারণ তারা আল্লাহ তায়ালা এবং তার রসূল সাঃ কে নিজেদের প্রাণের চেয়ে বেশি মহব্বত করতেন। তারা নিজেদের ঈমান নিয়ে মক্কায় শঙ্কায় ছিলেন। তাদের আত্মমর্যাদাবোধ তাদেরকে কাফেরদের আশ্রয়ে জীবন যাবনের বৈধতা দেয়নি। তারা যেকোন ভাবে কাফেরদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের সাহায্য-সহযোগিতা করতে করতে চাচ্ছিলেন এবং এমন এক পবিত্র সমাজে জীবন যাপন করতে চাচ্ছিলেন; যেখানে তারা এবং তাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম শরিয়তের ছায়াতলে জীবন যাপন করে ধন্য হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
    وَالَّذِينَ جَاهَدُوا فِينَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا ۚ وَإِنَّ اللَّهَ لَمَعَ الْمُحْسِنِينَ [٢٩:٦٩]
    যারা আমার পথে সাধনায় আত্মনিয়োগ করেছে আমি অবশ্যই তাদরেকে আমার পথে পরচিালতি করবো। নিশ্চয় আল্লাহ সৎর্কমপরায়ণদরে সাথে আছেন।

    ইনশাল্লাহ, পুরো জীবনীটি পিডিএফ আকারে এই নামে প্রকাশিত হবে "পাপাচারের ভূমি থেকে খোরাসানের পথে"।
    একজন গেরিলা যুদ্ধা একজন কমান্ডোর মত, সে যে কোন পরিস্থিতির মোকাবেলায় সক্ষম

  • #2
    জাযাকাল্লাহ ভাই। অত্যন্ত মর্মস্পর্শী। এটা অনেক বোনদের হেদায়াতের কারণ হতে পারে ইনশআল্লাহ। বিশ্লেষণের চেয়ে গল্পচ্ছলে কথা অন্তরে গাথে বেশি। তাই জিহাদি গল্প-উপন্যাসগুলোও অনেক উপকারি। আল্লাহ আপনাদেরকে উত্তম জাযা দান করুন, দুনিয়া ও আখিরাতে!

    Comment


    • #3
      যখন আমি কাফেরদের ভূমিতে দুনিয়া কামানোর জন্য গিয়েছিলাম তখন আমাকে বাধা দেননি। আর এখন আমি মুজাহিদীনদের ভূমিতে আখেরাত কামাতে এবং আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করতে যাচ্ছি তখন কিভাবে আমাকে বাধা দিতে পারেন?

      সুবহানাল্লাহ! আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমদের সকলের পিতা-মাতাকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন,আমীন।
      বিবেক দিয়ে কোরআনকে নয়,
      কোরআন দিয়ে বিবেক চালাতে চাই।

      Comment


      • #4
        মাশা'আল্লাহ।
        অসাধারণ! জাযাকুমুল্লাহু খাইরান।
        প্রিয় ভাই! সব পর্ব একত্রে পিডিএফ ফাইল করে বানিয়ে আপলোড করলে ফায়দা আরো ব্যাপক হতো। শুকরান।
        জাযাকুমুল্লাহ।
        ইসলামের জন্যে এমন লোকদের প্রয়োজন, যারা এই দ্বীনকে আঁকড়ে ধরে থাকবে।
        =আল্লামা জুনাঈদ বাবুনগরী হাঃফিঃ

        Comment


        • #5
          মাশা আল্লাহ্ অনেক বোনদের উপকারে আসবে এই পোষ্টটি।

          Comment


          • #6
            যখন আমি কাফেরদের ভূমিতে দুনিয়া কামানোর জন্য গিয়েছিলাম তখন আমাকে বাধা দেননি। আর এখন আমি মুজাহিদীনদের ভূমিতে আখেরাত কামাতে এবং আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করতে যাচ্ছি তখন কিভাবে আমাকে বাধা দিতে পারেন?


            মাশা আল্লাহ্ আল্লাহ্ সবাইকে হিজরত করার তাওফীক দান করুন, আমিন🤲

            Comment


            • #7
              মাশাআল্লাহ, আপনি অনেক গুছালোভাবেই লেখার ইতি টানলেন ভাই..অনেক অনেক শুকরিয়া।
              এই বোনের ঈমানদীপ্ত কাহিনী আমাদের মা-বোনদের জন্য হিদায়াতের মশাল হোক...........!
              মুহতারাম ভাই- এই লেখার মূল উৎসটা বলে দিলে ভাল হত মনে হয়। শুকরান
              “ধৈর্যশীল সতর্ক ব্যক্তিরাই লড়াইয়ের জন্য উপযুক্ত।”-শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ.

              Comment


              • #8
                মা শা আল্লাহ !
                ১) প্রত্যেক পর্বের সাথে আগের পর্বগুলো কমেন্টে দিয়ে দিলে ভাল হত ।
                ২) আশা করি একসাথে সবগুলো পর্ব পিডিএফ ? ওয়ার্ড আকারে প্রকাশ করা হবে অচিরেই ।
                জাযাকুমুল্লাহু খাইরান

                Comment


                • #9
                  সবগুলো পর্ব একত্রে পিডিএফ চাই।
                  ولو ارادوا الخروج لاعدواله عدةولکن کره الله انبعاثهم فثبطهم وقیل اقعدوا مع القعدین.

                  Comment


                  • #10
                    Originally posted by Munshi Abdur Rahman View Post
                    মাশাআল্লাহ, আপনি অনেক গুছালোভাবেই লেখার ইতি টানলেন ভাই..অনেক অনেক শুকরিয়া।
                    এই বোনের ঈমানদীপ্ত কাহিনী আমাদের মা-বোনদের জন্য হিদায়াতের মশাল হোক...........!
                    মুহতারাম ভাই- এই লেখার মূল উৎসটা বলে দিলে ভাল হত মনে হয়। শুকরান
                    লেখাটি শুব্বানে শরিয়ত থেকে অনুবাদকৃত
                    একজন গেরিলা যুদ্ধা একজন কমান্ডোর মত, সে যে কোন পরিস্থিতির মোকাবেলায় সক্ষম

                    Comment


                    • #11
                      ইনশাল্লাহ, পুরো জীবনীটি পিডিএফ আকারে এই নামে প্রকাশিত হবে "পাপাচারের ভূমি থেকে খোরাসানের পথে"।
                      মাশাআল্লাহ মুহতারাম ভাই। বইয়ের নামের বিষয়ে আমার একটি মাশোয়ারা। বইটির নাম এমন দিতে পারেন : “পুণ্যভূমির সন্ধানে” বা “পুণ্যভূমির সন্ধানে খোরাসানের পথে”

                      বারাকাল্লাহু ফিক।

                      Comment


                      • #12
                        প্রিয় ভাই! আল্লাহ্ আপনাকে সাহায্য করুন,খুব ভালো লাগলো সব পর্ব পিডিএফ হবে শুনে,
                        মিডিয়ার মুজাহিদ ভাইদের সহ ময়দানের মুজাহিদ ভাইদের আল্লাহ্ সুস্থ ও নিরাপদ রাখুন, আমিন।

                        Comment


                        • #13
                          جزاك الله تعالي خيراكثيرا

                          Comment


                          • #14
                            আলহামদুলিল্লাহ, ছুম্মাহ আলহামদুলিল্লাহ খুবই সুন্দর আলোচনা।
                            আল্লাহ তায়ালা আপনার এই মেহনতকে কবুল করুন,আমিন।
                            জাজাকাল্লাহ খাইরান
                            ’’হয়তো শরিয়াহ, নয়তো শাহাদাহ,,

                            Comment


                            • #15
                              জাঝাকাল্লাহ ভাই। আল্লাহ আপনার মেহনত কবুল করুন। ইমান জাগানিয়া চমৎকার এক উপখ্যান।
                              আমরা গড়তে চাই, ধ্বংস নয়; আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে চাই, বিভক্তি নয়; আমরা সামনে এগিয়ে যেতে চাই, পিছনে নয়! শাইখুনা আবু মোহাম্মাদ আইমান হাফিঃ

                              Comment

                              Working...
                              X