-"না কিছুতেই আমি নিকাব খুলব না!"
মেয়েটি এক কথাতেই অনড়। যা বলেছে তাই। খুলবে না তো খুলবেই না!
চেকপোস্টে থাকা সৈন্যরা বার বার আদেশ করছে তাকে নিকাব খোলার জন্য। কিন্তু, তেজস্বিনী ফিলিস্তিনি এই তরুণী তাদের কোনো কথা পাত্তাই দিচ্ছে না।
-"কেন তোমরা আমাদের বিরক্ত করো? কি অধিকার তোমাদের? তোমরা দখলদার; কি অধিকার আছে তোমাদের এখানে চেকপোস্ট বসানোর?"
এসব কথা উপেক্ষা করে, পুনরায় নিকাব সরানোর জন্য আদেশ দিল দখলদার ইসরাইলী সৈন্যরা।
-"না আমি হিজাব খুলব না, এমনকি আমাকে যদি শহীদও করা হয় তবুও না! তোমাদের মত দখলদারদের কাছে আমরা ফিলিস্তিনিরা কখনই মাথা নুয়াবো না।"
চৌকির সৈন্যরা রাগে খিটমিট করছে... তারা আবার কড়া ভাষায় নিকাব সরানোর নির্দেশ দিল।
তেজস্বিনী তরুণী এবার আগুনের মতো জ্বলে উঠল এবং বলল- "তোমাদের মতো হিংস্র হায়েনাদের আমি ভয় পাই না। তোমরা দখল করে নিয়েছো। এই দেশটি আমাদের। কি অধিকার আছে আমাদের উপর তোমাদের প্রভাব খাটানোর? এখন তো আবার আমাদের ব্যক্তিগত বিষয়েও হস্তক্ষেপ করছ। আমাদের ধর্মীয় বিষয়ে প্রভাব খাটানোর কোনো অধিকার কি তোমাদের আছে?"
ঠাস ঠাস! প্রথমে দুইবার, তারপর একটানা চলতেই লাগলো.....
মাত্র কয়েক মিটার দূর থেকে মেয়েটিকে গুলি করল বর্বর ইসরাইলী সৈন্যরা।
একটা দুইটা নয়, মোট পনেরটা গুলি চালিয়েছিল হিংস্র সৈন্যরা! যেন তারা রক্তের পিপাসা মেটাতে চায়। এতটাই পৈশাচিক আচরণ করলো তারা যে শুধু হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি। গায়ের ঝাল মিটাতে গিয়ে পনেরটা গুলি করেছে!
লড়াকু বীরাঙ্গনা মেয়েটি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েই ছিল প্রথমে। আস্তে আস্তে নুইয়ে পড়ল মাটিতে। অবিরাম রক্তে ভেসে যাচ্ছে। আপাদমস্তক এখনও কালো কাপড় দ্বারা আবৃত করা। কালো কাপড়ে বোধহয় লাল রং দেখা যায় না....
মেয়েটার মুখ থেকে অস্ফুট স্বরে এখনও বের হচ্ছে- "তোমরা দখলদার, তোমরা হিংস্র! আমাদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার তোমাদের কোনো অধিকার নাই! লজ্জা করে না তোমাদের.........?!"
-------------------------
মেয়েটির নাম হাদিল সালাহ আল-হাশলামুন। ভার্সিটিতে পড়ুয়া মাত্র ১৮ বছরের এক ফিলিস্তিনি তেজস্বিনী তরুণী। ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সালের ঘটনা এটি। কোরবানির ঈদের মাত্র দুইদিন আগে সংগঠিত হয়।
ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের আল-খালিল শহরে ছিল হাদিলের আত্মীয়র বাসা। সে সেদিন সকালেই গিয়েছিল সেখানে। ফেরার সময় বিকেলে হাদিলকে আটকানো হয় দখলদার ইসরাইলী সেনা চৌকিতে। তারপর সেখানেই তৈরি হয় এই গৌরবময় ইতিহাস...
গুলি করার পর হাদিল চেকপোস্টের সামনে রক্তাক্ত অবস্থায় আধা ঘন্টা পড়ে ছিল। তেজস্বিনী এই তরুণীর হুংকার ইসরাইলী সৈন্যদের গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল। এতটাই হিংস্র হয়ে উঠেছিল যে শুধু পনেরটা গুলি করেই দমে যায়নি, বরং কাউকেই ভিড়তে দেয়নি হাদিলের কাছে। একাধিক সংস্থার লোক এসেছিল, রেড ক্রিসেন্টের অ্যাম্বুলেন্স এসেছিল, কিন্তু সবাইকে থেমে যেতে হয়েছিল ইসরাইলী সৈন্যদের বর্বরতার কাছে।
আধা ঘন্টা পড়ে থাকার পড়ে হাদিলে নিথর দেহটা যখন নিস্তেজ হয়ে হয়ে যায়, তখন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। কিন্তু ততক্ষনে এই শহীদি আত্মা তার প্রভুর দরবারে হাজিরা দিচ্ছে!
সেদিনে পুরো বিশ্ববাসী অবাক হয়েছিল হাদিলের সাহসিকতা আর বীরত্বপূর্ণ অবিচলতা দেখে। অবাক হয়েছিল একজন ১৮ বছরের তরুণীর দেশপ্রেম আর ধর্মের জন্য অগাধ ত্যাগ দেখে। একজন মুসলিম তরুণী তার ধর্মের অনুশাসন মানতে কতটা ত্যাগ করতে পারে, তা সারা বিশ্ববাসীকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে গিয়েছে।
আর মুসলিম যুবকদের নিঃশ্বব্দে বলে গিয়েছে- "দেখো, তোমরা যখন থেমে যাও, তোমরা যখন ঘুমিয়ে পড়, তোমরা যখন বন্দুকের নলে মৃত্যু দেখ, তোমাদের রক্ত যখন হিম শিতল হয়ে যায়, তখন আমরা মুসলিম মেয়েরা নিজেদের অধিকার রক্ষায় পিছপা হই না। বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে নিজেদের ইজ্জত আবরু রক্ষা করতে পারি। নিজের সম্ভ্রম রক্ষার জন্য নিজেরাই লড়াই করতে পারি। যে দায়িত্ব প্রভু তোমাদের দিয়েছিল!"
*******************
-(সংগৃহীত)
-(সংগৃহীত)
প্রিয় পাঠক, এই ঘটনাটি নিজের কানে বাজিয়ে বাজিয়ে আবার একবার পড়ুন তো! নিজের চোখ বন্ধ করে একটু ভাবুন তো....নিজের চিন্তা জগতে এমন একটি কাল্পনিক দৃশ্যের অবতারণা করুন তো... নিজের আপন বোনের সাথে এমনটা হলে আপনি কি করতেন?
সে কি আপনার/আমার বোন নয়? এ রকম আরো কত হাজার ভাই-বোনের জীবন বিলীন হয়ে যাচ্ছে? ভেবেছেন কখনো? আপনার মনের আয়নায় এ জাতীয় হৃদয় বিদারক ঘটনাগুলো কি কোনই রেখাপাত করে না!
আরো গভীরভাবে ভাবুন! নিজের বিবেককে জিজ্ঞাসা করুন! তখন দেখুন আপনার অবস্থা কি হয়?! কি মনের অজান্তেই নোনা অশ্রুতে চোখের পাতা ভিজে আসছে? গাল বেয়ে টপটপ পানি বেয়ে পড়ছে? মনে হচ্ছে কি এমন জীবন রেখে লাভ কি, যদি না আমি আমার বোনকে হিফাযত করতে পারি? শরীরের পশমগুলো কি কাঁটা দিয়ে উঠছে? হৃদয় ব্যথায় ভারাক্রান্ত হয়ে যাচ্ছে....? আত্মচিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে? যদি এমন হয় তাহলে আপনি মু’মিন, এটা মু’মিনের আলামত। নতুবা ...........!
পরিশেষে মহান রবের নিকট ফরিয়াদ- আমাদের এই ফিলিস্তিনি বোনসহ সকল বোনের শাহাদাতকে কবুল করুন ও মুসলিম ভূখণ্ডগুলোকে দখলদার মুক্ত করুন এবং আমাদেরকে নির্যাতিত উম্মাহর পাশে দাঁড়ানোর তাওফীক দান করুন। আমীন
Comment