Announcement

Collapse
No announcement yet.

হযরত ওমর (রাযি.) এর ক্রোধ দমন এবং ক্রোধের সঠিক প্রয়োগ

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • হযরত ওমর (রাযি.) এর ক্রোধ দমন এবং ক্রোধের সঠিক প্রয়োগ

    হযরত ওমর (রাযি.) এর ক্রোধ দমন এবং ক্রোধের সঠিক প্রয়োগ




    আল্লাহ তায়ালা সকল মানুষকেই কম বেশি রাগ-ক্রোধ দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। এটা মানুষের সহজাত বৈশিষ্ট। ক্রোধহীন কোন মানুষ হতে পারে না। তবে মানুষের মাঝে শ্রেষ্ঠ তারাই যারা ক্রোধ দমন করে সঠিক স্থানে ব্যবহার করতে শিখে যায়। অন্যদিকে ক্রোধ দমন করতে না পারার কারণেই সম্মানিত মানুষ হয়ে যায় পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট।

    এই ক্রোধের কারণেই জাহেলিয়াতের যুগে লোকেরা পাপের সীমা অতিক্রম করে গিয়েছিলো। সামান্য বিষয়ে পরস্পরের যুদ্ধ আর হয়ে যেতো। অনেক সময় চল্লিশ বছর পর্যন্ত সে যুদ্ধ অব্যাহত থাকত। কিন্তু তারা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সোহবত প্রাপ্ত হওয়ার পর এমন মোমে পরিণত হন যে, এরপর তাঁদের ক্রোধ সঠিক জায়গায় উদ্রেক হতো এবং তা সীমার মধ্যে থাকতো।যতটুকু ক্রোধের উদ্রেক হওয়া উচিত ততটুকুই হতো। তার চেয়ে অধিক হতো না।

    জাহেলিয়াতের যুগে হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাযি.)-এর নাম শুনে মানুষ কেঁপে উঠতো। মানুষ মনে করতো, তাঁর ক্রোধের উদ্রেক হলে আমাদের কল্যাণ নেই।এই ক্রোধের অবস্থায় একবার নিজের ঘর থেকে বের হলেন। মুহাম্মাদ (ﷺ) নবুওয়াতের দাবি করেছে। ধর্ম নিয়ে এসেছে। পুরাতন ধর্মকে ভুল আখ্যা দিচ্ছে। তাই আমি তাঁর মাথা কেটে ফেলবো।

    লম্বা ঘটনা। রাসূলুল্লাহু (ﷺ) পর্যন্ত পৌঁছার পূর্বেই আল্লাহ তা’আলা তাঁর কানে কুরআন ঢেলে দিলেন। কুরআনের আয়াতকে তাঁর পরিবর্তনের মাধ্যম বানিয়ে দিলেন। এভাবে তাঁর অন্তরে ইসলাম জায়গা করে নিলো। তিনি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে হাজির হয়ে নিজের পুরো জীবনকে কুরবানী করে দিলেন।”হযরত উমর (রাযি.), রাসূলুল্লাহুর (ﷺ) খেদমতে তাশরীফ আনলেন। তাঁর সোহবত গ্রহণ করলেন।


    রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নিজ তারবিয়াত ও সোহবতের মাধ্যমে তাঁর সীমাতিরিক্ত ক্রোধকে এমন ভারসাম্যপূর্ণ করে দিলেন যে, যখন তিনি খলীফা এবং আমীরুল মুমিনীন হন, তখন একদিন তিনি মসজিদে নববীতে জুমার খুৎবা দিচ্ছিলেন। সামনে প্রজাদের বিরাট সমাবেশ।এমতাবস্থায় তিনি একটি প্রশ্ন করলেন, প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য এক বেদুঈন দাঁড়ালো। সে বললো, হে ওমর তুমি বাঁকা পথে চললে আমি এই তরবারী দিয়ে তোমাকে সোজা করে দেবো।

    এমন এক ব্যক্তিকে এ কথা বলা হচ্ছে, যিনি অর্ধেক দুনিয়ার বাদশাহ। পৃথিবীর যেই অংশ তখন তাঁর শাসনাধীন ছিলো আজ সেই অংশে পঁচিশটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত।কিন্তু সেই বেদুঈনের কথায় হযরত ওমর (রাযি.)-এর ক্রোধের উদ্রেক হয়নি। তিনি বলেছেন, “হে আল্লাহ! আমি আপনার শোকর আদায় করছি যে, এই উম্মতের মধ্যে আপনি এমন লোক সৃষ্টি করেছেন, আমি ভুল করলে যে আমাকে সোজা করে দিবে।”

    যাইহোক, হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাযি.)-এর যে ক্রোধ জাহেলিয়াতের যুগে প্রবাদতুল্য ছিলো। কিন্তু ইসলাম গ্রহণের পর তা ভারসাম্যের মধ্যে চলে আসে। আর যখন ক্রোধের সঠিক ক্ষেত্র আসতো, জালেম ও অত্যাচারী শাসকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় আসতো, তখন কাইসার ও কিসরার মতো পরাশক্তিসমূহ তাঁর নাম শুনে কেঁপে উঠতো। তিনিই কাইসার ও কিসরার রাজসিংহাসন ধুলোয় মিশিয়ে দেন।


    তো যেখানে ক্রোধ উদ্রেক হওয়ার সঠিক ক্ষেত্র ছিলো না, সেখানে ক্রোধের উদ্রেক হয়নি। যেখানে যে পরিমাণ ক্রোধের প্রয়জন ছিলো, সেখানে সেই পরিমাণ ক্রোধের উদ্রেক হয়েছে তাঁর। এর অতিরিক্ত হয়নি। তাঁর সম্পর্কেই বলা হয়েছেكان و فاقا عِنْدَ حُدُودِ اللَّهِঅর্থাৎ, হযরত ওমর রাযি, আল্লাহ তা’আলার বেঁধে দেওয়া সীমারেখার সামনে থেমে যেতেন।

    আমাদের জন্য শিক্ষাঃ

    হযরত ওমর (রাযি.) এর মধ্যে এমন চরিত্র কোত্থেকে এলো? তা অর্জনের মাধ্যম ছিল, তিনি রাসূলুল্লাহুর (ﷺ) এর আদর্শকে মনে প্রাণে মেনে নিয়েছিলেন। এমনিভাবে, কুরআনের শিক্ষাকে নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করেছেন। কারণ কুরআনুল কারীমের নির্দেশ হলো, মুমিনদের প্রতি সদয় হওয়া এবং কাফেরদের প্রতি কঠোর হওয়া।

    তাই আমরাও যদি আমাদের ক্রোধ দমন করে সঠিক স্থানে ব্যবহার করতে চাই তাহলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর আদর্শকে মনে প্রাণে মেনে নিতে হবে এবং কোরআনের শিক্ষাকে নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করতে হবে।


    লেখক ও সংকলক : উসামা মাহমুদ


    তথ্যসূত্র :
    ১. নির্বাচিত রচনা ও বয়ান সমগ্র: মুসলিম মনীষীগণের শিক্ষনীয় ঘটনাবলী-
    মূল: শায়খুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তাকী উসমানী
    অনুবাদ: মাওলানা মুহাম্মদ জালাল উদ্দিন
    ২. সিরাতে ইবনে হিশাম
    ৩. উসদুল গাবা, হযরত ওমর রাযি এর আলোচনা







    আপনাদের নেক দোয়ায় আমাদের ভুলবেন না। ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইট: alfirdaws.org

  • #2
    উত্তম পোস্ট, উক্ত পোস্ট থেকে আমাদের শেখার রয়েছে।

    আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আল কুরআনুল কারীমের সূরা ফাতহ 48:29
    বলছেন।

    مُحَمَّدٌ رَّسُوۡلُ اللّٰہِ ؕ وَ الَّذِیۡنَ مَعَہٗۤ اَشِدَّآءُ عَلَی الۡکُفَّارِ رُحَمَآءُ بَیۡنَہُمۡ تَرٰىہُمۡ رُکَّعًا سُجَّدًا یَّبۡتَغُوۡنَ فَضۡلًا مِّنَ اللّٰہِ وَ رِضۡوَانًا ۫ سِیۡمَاہُمۡ فِیۡ وُجُوۡہِہِمۡ مِّنۡ اَثَرِ السُّجُوۡدِ ؕ ذٰلِکَ مَثَلُہُمۡ فِی التَّوۡرٰىۃِ ۚۖۛ وَ مَثَلُہُمۡ فِی الۡاِنۡجِیۡلِ ۚ۟ۛ کَزَرۡعٍ اَخۡرَجَ شَطۡـَٔہٗ فَاٰزَرَہٗ فَاسۡتَغۡلَظَ فَاسۡتَوٰی عَلٰی سُوۡقِہٖ یُعۡجِبُ الزُّرَّاعَ لِیَغِیۡظَ بِہِمُ الۡکُفَّارَ ؕ وَعَدَ اللّٰہُ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ مِنۡہُمۡ مَّغۡفِرَۃً وَّ اَجۡرًا عَظِیۡمًا ﴿٪۲۹﴾

    মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল এবং তার সাথে যারা আছে তারা কাফিরদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর; পরস্পরের প্রতি সদয়, তুমি তাদেরকে রুকূকারী, সিজদাকারী অবস্থায় দেখতে পাবে। তারা আল্লাহর করুণা ও সন্তুষ্টি অনুসন্ধান করছে। তাদের আলামত হচ্ছে, তাদের চেহারায় সিজদার চি‎হ্ন থাকে। এটাই তাওরাতে তাদের দৃষ্টান্ত। আর ইনজীলে তাদের দৃষ্টান্ত হলো একটি চারাগাছের মত, যে তার কঁচিপাতা উদগত করেছে ও শক্ত করেছে, অতঃপর তা পুষ্ট হয়েছে ও স্বীয় কান্ডের উপর মজবুতভাবে দাঁড়িয়েছে, যা চাষীকে আনন্দ দেয়। যাতে তিনি তাদের দ্বারা কাফিরদেরকে ক্রোধান্বিত করতে পারেন। তাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের জন্য ক্ষমা ও মহাপ্রতিদানের ওয়াদা করেছেন
    সর্বোত্তম আমল হলো
    আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা এবং মহান মহীয়ান
    আল্লাহর পথে জিহাদ করা।নাসায়ী,শরীফ

    Comment


    • #3
      আর বর্তমানে আমাদের অবস্থা এমন,কোন বড় ভাই, নেতা বা উলামায়ে কেরামগণের যদি ছোট্ট একটি ভুলও ধরা হয় বা শোধরানোর চেষ্টা করা হয়,, তাহলে বেআদব উপাধি দিয়ে দিবে।। অথচ উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু কী শিক্ষা দিলেন উম্মাহকে,,

      আর নিজেও শুকরিয়া আদায় করলেন।।
      শাসক, আলেম, নেতা, ইমাম তো উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর মতোই হওয়া দরকার ছিলো।। তিনি বেদুইন কে ধমক দেননি, বরং আরও খুশী হয়েছেন।। উত্তম বন্ধু তো সেই যে তার ভাইয়ের ভুলগুলো ধরিয়ে দেয় এবং শোধরানোর চেষ্টা করে।।

      আল্লাহ কারীম আমাদের সকলকে বোঝার তাওফিক দান করুন।। আমিন
      Last edited by tahsin muhammad; 02-11-2023, 03:45 PM.
      যে ব্যক্তি নবীকে গালি দেয়,তাকে হত্যা কর।
      জামেউল আহাদীস হাদীস নং-২২৩৬৬

      Comment

      Working...
      X