আল-কায়েদা সিরিয়ান শাখার একজন সিনিয়র আমির শাইখ সামি আল-উরাইদীর তথ্য পেতে এবং তাকে ধরতে নতুন করে প্রচারনা শুরু করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তাঁর সম্পর্কে তথ্যের জন্য ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে।
একটি বিবৃতিতে মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন শাইখ সামি আল-উরাইদি হাফিযাহুল্লাহকে তানযিম হুররাস আদ-দ্বীনের একজন নির্বাহী কর্মকর্তা বলে উল্লেখ করেছেন। শাইখকে ধরতে এবং তাঁর বিষয়ে তথ্য পেতে ঐ বিবৃতিতে ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রলোভন দেখানো হয়।
এই ঘোষণাটি এমন সময় এসেছে, যখন ধারণা করা হচ্ছে আল-কায়েদার নতুন নেতৃত্ব সিরিয়ায় ফের তাদের কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছেন। সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, আল-কায়েদার সাথে সম্পর্কে রাখে এমন জিহাদী দলগুলো নতুন করে মুক্ত অঞ্চলের বাহিরে গিয়ে অপারেশন পরিচালনা শুরু করেছেন।
সিরিয়ায় বিগত কয়েক বছর ধরেই আল-কায়েদার সিনিয়র উমারাদের টার্গেট করে ড্রোন হামলাসহ তাদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আসছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে এ ধরনের এক বিবৃতিতে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর হুররাস আদ-দ্বীনের ৩ জন আমীরকে কথিত কালো তালিকাভুক্ত করার ঘোষণা দেয়। ঐ বিবৃতিতেও শাইখ সামি আল-উরাইদী সহ শাইখ আব্দুল কারিম আল-মিসরি ও শাইখ ফারুক আস-সুরী হাফিজাহুমুল্লাহকে ধরতে ৫ মিলিয়ন করে মোট ১৫ মিলিয়ন ডলারের আর্থিক প্রলোভন দেখানো হয়। কিন্তু তারা সফল হতে পারেনি আলহামদুলিল্লাহ।
শাইখ সামি আল-উরাইদী হাফিযাহুল্লাহ এর সংক্ষিপ্ত পরিচয়:
শাইখ সামি আল-উরাইদি হাফিযাহুল্লাহ ১৯৭৩ সালে জর্ডানের রাজধানী আম্মানে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি আবু মাহমুদ আশ-শামি উপনামেও পরিচিত। তিনি ১৯৯৪ সালে শরিয়ার উপর স্নাতক এবং ১৯৯৭ সালে জর্ডান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হাদিসের উপর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর ২০০১ সালে তিনি বাগদাদ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হাদিসের উপর ডক্টরেট সম্পন্ন করেন।
সিরিয়ায় মুসলিমদের উপর শিয়া বাসার আল-আসাদ সরকারের লোমহর্ষক নিপীড়ন ও গণহত্যার বিরুদ্ধে মুসলিমদের প্রতিবাদ ২০১১ সালে গৃহযুদ্ধের রূপ নেয়। তখন শাইখ সামি আল-উরাইদী হাফিযাহুল্লাহ মুসলিমদের সাহায্যার্থে সিরিয়ায় হিজরত করেন। সেই সাথে যুবকদের ঐক্যবদ্ধ করতে থাকেন। এসময় আল-কায়েদা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশে সিরিয়ায় জাবহাতুন নুসরাহ গঠনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং সিরিয়ার জিহাদে নিজের ইলম ও সামরিক দক্ষতার বহিঃপ্রকাশ ঘটান।
এরপর ২০১৬-১৭ সালে জাবহাতুন নুসরাহ আল-কায়েদার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে। পরপর দুবার নাম পরিবর্তন করে দলটি বর্তমানে তাহরিরুশ-শাম (HTS) নামে পরিচিত।
এমন পরিস্থিতিতে শরিয়াহ্ বোর্ডের সিনিয়র আলেম শাইখ সামি আল-উরাইদিসহ নুসরাহর প্রাক্তন শরিয়াহ্ বোর্ডের আলেমরা সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন। কিন্তু লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়ে ২০১৮ সালে তারা HTS ত্যাগ করেন এবং কিছুদিন নিরপেক্ষ থাকেন। এই আলেমদের মাঝে শাইখ আব্দুল্লাহ আল-মুহাইসিনীও রয়েছেন।
এরপর ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারীতে প্রাক্তন জাবহাতুন নুসরাহর মুজাহিদগণ একটি বিবৃতির মাধ্যমে হুররাস আদ-দ্বীন নামে নতুন কাঠামোয় একীভূত হওয়ার ঘোষণা দেন। সেই সাথে আল-কায়েদার প্রতি নিজেদের বাইয়াতকে নবায়ন করেন। এসময় নতুন এই দলের নেতৃত্ব দেন শাইখ সামি আল-উরাইদী, আবু হাম্মাম আশ-শামী (ফারুক আস-সুরী) ও শহিদ শাইখ আবু জুলাইবিব রহিমাহুল্লাহ সহ প্রমুখ উমারাগণ।
শাইখ সামি আল-উরাইদি হাফিযাহুল্লাহ সিরিয়াসহ সকল মুজাহিদদের কাছে একজন পরিচিত ও গ্রহণযোগ্য আলেম ও মুজাহিদ। তিনি শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরির সাথেও ঘনিষ্ঠ ছিলেম। শাইখ আইমান তাঁর বিভিন্ন আলোচনায় আল-উরাইদি হাফিযাহুল্লাহর বক্তব্য উদ্ধৃতি হিসাবে উল্লেখ করতেন।
২০১৮ সালে, আল-কায়েদার কেন্দ্রীয় মিডিয়া আউটলেট আস-সাহাব ৯/১১ হামলা উপলক্ষে প্রাকাশিত একটি ভিডিওতে আল-উরাইদি হাফিযাহুল্লাহর বক্তব্য অন্তর্ভুক্ত করেছিল। ঐ বক্তব্যে শায়খ জোর দিয়ে বলেছিলেন যে, মুসলিম আলেমরা একমত যে, জিহাদ একটি ফরজ ইবাদত।
শাইখ সামি আল-উরাইদি হাফিযাহুল্লাহ সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিভিন্ন অডিও ও বিবৃতি দিয়ে থাকেন। সেগুলো সাহমুশ-শাম ও আস-সাহাব থেকে প্রকাশিত হচ্ছে। তাঁর লেখা একটি নিবন্ধ চলতি এপ্রিল মাসে প্রকাশিত ‘ওয়ান উম্মাহ’ ম্যাগাজিনের সর্বশেষ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে।
সুতরাং, বৈশ্বিক জিহাদের প্রচারে শাইখের বিভিন্ন অবদান ও কৃতিত্ব দ্বারা এটি স্পষ্ট যে, শাইখ আল-উরাইদি হাফিযাহুল্লাহ আল-কায়েদার সামগ্রিক বার্তা প্রচারে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করছেন। তিনি বর্তমানে সিরিয়ার অভ্যন্তরে কাজ সীমাবদ্ধ না রেখে, আল-কায়েদার সামগ্রিক লক্ষ্য বাস্তবায়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।
এ কারণেই আমেরিকা শায়খকে ধরতে পুনরায় ৫ মিলিয়ন ডলারের প্রলোভন দেখাচ্ছে। তারা অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে মুসলিমদের আদর্শকে কিনে নিতে চায়, জিহাদের আদর্শকে কলুষিত করতে চায়। আল্লাহ তা’আলা সকল পশ্চিমা ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করে দিন। আমিন।
Comment