Announcement

Collapse
No announcement yet.

দ্বীন প্রতিষ্ঠায় সমসাময়িক আকাবিরদের সংগ্রাম (দ্বিতীয় পর্ব)

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • দ্বীন প্রতিষ্ঠায় সমসাময়িক আকাবিরদের সংগ্রাম (দ্বিতীয় পর্ব)

    আমীরে শরীয়ত হযরত মাওলানা
    সাইয়্যেদ আতাউল্লাহ শাহ বুখারী (রহঃ)




    এমন কে আছে যে মুসলিম ইতিহাসের এই শ্রেষ্ঠ মুজাহিদ সম্পর্কে অবগত নয়, যিনি ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে কথা বলে ১১ বৎসর কারা বরণ করেছেন। যাকে পৃথিবী থেকে চির বিদায় করার হীন ষড়যন্ত্রে দুশমনরা একে একে তিন বার তার খাদ্যে বিষ মিশিয়েছিল। এখানেই শেষ নয়, বৃটিশ শাসনাবসানের সক্রিয়কর্মী হওয়ায় তিন তিন বার তার ফাঁসীর আদেশও দেয়া হয়েছিল। খোদা প্রেমিক, আবেদ ও দ্বীনের জন্য আত্মোৎসর্গী মুজাহিদদের প্রাণের স্পন্দন এই মনীষী উর্দূভাষার শ্রেষ্ঠতম খ্যাতিমান ও অনলবর্ষী বক্তা ছিলেন।

    ইংরেজ দুঃশাসনের করাল গ্রাস থেকে মুসলিম জাতিসত্তাকে রক্ষা করা ছিল হযরত আতাউল্লাহ শাহ বুখারী (রহঃ) -এর সার্বক্ষণিক চিন্তা-ফিকির। কাদিয়ানী মিথ্যা মতবাদের ফণাকে ধূলোয় মিশিয়ে দেওয়া ছিল তাঁর মিশনের উৎস। আল্লাহ তায়ালা তাকে এমন বিত্ত-বৈভব দান করেছিলেন যে, তিনি ইচ্ছে করলে স্বর্ণ দিয়ে অট্টালিকা নির্মাণ করতে পারতেন কিন্তু নির্মম সত্য হল, তার লাশ জানাযার জন্য ভাড়ার একটি জীর্ণ কুঠির থেকে বের করা হয়। এটাই হযরত আতাউল্লাহ শাহ বুখারীর মত মনীষীর পরিচিতি।

    যখন হযরত আতাউল্লাহ শাহ বুখারী (রহঃ) রাজনৈতিক অঙ্গণে পদার্পণ করেন তখনই তার উপর শুরু হয় জালিম বৃটিশ শাসকের নির্যাতনের অব্যাহত ধারা। তার ভাগ্যাকাশে নেমে আসে কালো মেঘের ঘনঘটা। বিপদের হাতছানি দেখা দেয় জীবনের প্রতিটি পদে পদে। ফাঁসীর কাষ্ঠে ঝুলার হুংকার তাকে তাড়িত করে ক্ষণে ক্ষণে। বন্দীশীলার অবরুদ্ধ জীবন তাঁকে পিছু নেয়। এ ছিল তার দুর্বিসহ জীবনের এক ঝটিকা প্রবাহ।

    এমন প্রতিকূল ও বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতে দেশ ও জাতির জন্য লড়াই করা কোন চরম পরাকাষ্ঠার পরিচয় দাতা ব্যক্তির জন্যও দুঃসাধ্য ছিল। তখন দ্বীনের নামী-দামী ও সক্রিয় অনেক কর্মীরাও গৃহের নিভৃত কোনে প্রশান্তিতে দিন কাটাচ্ছিলেন।কিন্তু তখনও তিনি বীর-দর্পে মাঠে কাজ করে যাচ্ছিলেন। তিনি গোটা ভারতে ইংরেজ বিদ্রোহের বীজ বপন করে দিলেন। হযরত সাইয়্যেদ আতাউল্লাহ শাহ বুখারী সে সব মুজাহিদদের অন্তর্ভুক্ত যারা নিজেদের বুকের তাজা রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা আন্দোলনের ঘোষণা লিপিবদ্ধ করেছিলেন।

    খদ্দরের মোটা কাপড় ছিল তার পোষাক। যবের রুটি ছিল আহার্য। রাত্রি জাগরণ ছিল নিত্য অভ্যাস। দারিদ্রের কষাঘাত, ভ্রমণের সহজাত ক্লেশ সবই ছিল তার জন্য মামুলিব্যাপার। একে একে পাঁচটি বৎসর নির্যাতনের ভয়ংকর ষ্টীমমরোলার চালিয়েও তাকে এক তিল পিছপা করতে পারেনি ইংরেজ বেনিয়া অপশক্তি।

    সাইয়্যেদ আতাউল্লাহ শাহ বুখারী (রহঃ) মজলিসে ইহরারে ইসলামের (ইসলামী স্বাধীনতা আন্দোলনের) প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। এক সময় গোটা পা বে তার আন্দোলনের এমন বাহিনী ছিল যে, ইংরেজ প্রশাসন সর্বক্ষণ তাদের ভয়ে সন্ত্রস্ত থাকত৷ তার বক্তৃতায় আল্লাহ প্রদত্ত এমন প্রভাব ছিল যে, অমুসলিমরাও তাতে প্রভাবিত না হয়ে পারত না। সেকালে বক্তৃতার জগতে তিনিই ছিলেন একমাত্র অনলবর্ষী ও মর্মস্পর্শী বক্তা। চরিত্র গুণে হযরত সাইয়্যেদ আতাউল্লাহ শাহ বুখারী (রহঃ) ছিলেন মোহনীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী। স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের সেবায় ও সহমর্মিতায় অনেক সময় তিনি (শারিরীক ভাবে) ক্লান্ত হয়ে পড়তেন। তার প্রতিটি কাজ ছিল জামা'আত ভিত্তিক, সুশৃংখল ও নিয়মতান্ত্রিক৷

    হযরত আতাউল্লাহ শাহ বুখারী (রহঃ) উপমহাদেশের আনাচে-কানাচে, পথে-প্রান্তরে, মাঠে-ঘাটে সর্বত্র ঘুরে ঘুরে ইসলামের সার্বজনীন সত্যতা, অকৃত্রিমতা, এবং অবিনশ্বরতা সম্পর্কে মানুষকে বোঝাতেন। এমন শত শত জনপদে তিনি অসংখ্য অগণিত সমাবেশ করে মানুষকে ইসলামের দাওয়াত দেন যেখানকার মানুষ ইসলাম সম্পর্কে নূন্যতম ধারণাটুকুও রাখত না। তার অনলবর্ষী ও মর্মস্পর্শী বক্তৃতা শুধু মুসলমানরাই শুনত তা নয়, বরং অমুসমিলমরাও তা অতীব আগ্রহের সাথে শ্রবণ করত। তার বক্তৃতায় এমন প্রভাব বিরাজ করত যে, তিনি কখনো এশা'র পর বক্তৃতা শুরু করে একটানা ফজর পর্যন্ত বয়ান চালিয়ে যেতেন, ওদিকে ফজরের আজানও হয়ে যেত কিন্তু তবুও একজন শ্রোতা ও সমাবেশ থেকে উঠত না। এমনকি অন্যমনস্কও হত না। এ জন্যই মাওলানা মুহাম্মাদ আলী জাওহার রসিকতা করে বলেছিলেন, ''যদি আমার ক্ষমতা থাকতো তাহলে আমি শাহ সাহেবকে বক্তৃতা করতে দিতাম না। কারণ তিনি তো বক্তৃতা করেন না! যাদু দিয়ে শ্রোতাদের বশ করেন!''

    আতাউল্লাহ শাহ বুখারী (রহঃ) একা কেবল বক্তৃতার মাধ্যমে ইসলামের যে কাজ করতেন তা অনেক বড় বড় দল বা সংগঠনের পক্ষেও করা সম্ভব হত না। সাইয়্যেদ আতাউল্লাহ শাহ বুখারী (রহঃ) যখন জানতে পারলেন যে, ডেরা গাজীখান নামক জায়গায় এবং মুজাফফরনগর এলাকার অজ্ঞ মুসলমানরা নিজের মেয়েকে নিজেই বিয়ে করে (যা একান্তই হারাম) এবং দ্বীন-ধর্মের ব্যাপারে তাদের মৌলিক প্রয়োজনীয় জ্ঞানটুকুও নেই। তখন তিনি সংগঠন থেকে অবসর নিয়ে সেসব এলাকায় মাসের পর মাস সময় সফর করে অতিবাহিত করেন। পাড়ায়-পাড়ায়, মহল্লায়-মহল্লায় এবং গ্রামে-গ্রামে গিয়ে কুরআন না জানা লোকদেরকে কুরআন শুনান। একেক এলাকায় কয়েকদিন পর্যন্ত আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে মানুষের অন্তরে ইসলামের আলো প্রজ্জলিত করেন। কুরআন-হাদীসের আলোকে উদ্ভাসিত করেন। ফলে দেশের একটা বিরাট অংশ ইসলামের উপর আমল করতে শুরু করে।

    সাইয়্যেদ আতাউল্লাহ শাহ বুখারী (রহঃ) দেশ বিভক্তির বিরোধীদের কাতারে ছিলেন। তার নীতি ছিল আমরা এমন বিভক্তি মেনে নেব না, যা ইংরেজদের হাতে সম্পাদিত হবে। একবার তিনি দিল্লীর জামে মসজিদে বক্তৃতা করতে গিয়ে এক পর্যায়ে ইংরেজদের বিভক্তিকে লক্ষ্য করে বলেন, ''এমন এক সময় আসবে যখন পূর্ব কিংবা পশ্চিমাঞ্চলের মুসলমানদের উপর কোন বিপদ এলে পরস্পরের সাহায্য-সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে পারবে না। কারণ মাঝে দীর্ঘ এক হাজার মাইল বিস্তৃত এলাকা জুড়ে বাস করবে আমাদের শক্র হিন্দুগোষ্ঠী।'' জাতি আজ অপলক নেত্রে অবলোকন করছে যে একজন আল্লাহওয়ালা দরবেশের কথা আজ অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়িত হচ্ছে।

    সাইয়্যেদ আতাউল্লাহ শাহ বুখারী (রহঃ) কখনো ইংরেজ বণিকদের সাথে আপোষ করেননি । বড় বড় নবাবরাও তার সান্নিধ্য অর্জনের জন্য সর্বদা ব্যতি-ব্যস্ত থাকত।কিন্তু তিনি কারো কাছে ধরা দিতেন না। তার জীবনের অধিকাংশ সময়ই কাটে জেলে এবং রেলে (রেল গাড়ীতে ভ্রমণ করে)। তিনি নিজেই বলেন, ''আমি সকালে কোথায়, বিকেলে কোথায়, দিনে কোথায় এবং রাত্রে কোথায় যাব, কোথায় থাকবো, কোথায় বক্তৃতা করব তা আমি নিজেও জানি না। (আমি বাহিরে থাকলে) লোকেরা বলতো, সাবাশ শাহজী। জেলে চলে গেলে বলতো হায়! শাহজী আফসোস এই সাবাশ আর আফসোসের মধ্যে জীবনটা শেষ হয়ে গেল।'' মহান আল্লাহ তাকে জান্নাতের সুউচ্চ মাকামে সমাসীন করুন।
    হে আল্লাহর পথের সৈনিক! ধৈর্যধারণ করুন ও হকের উপর অবিচল থাকুন। নিশ্চয়ই আল্লাহর ওয়াদা সত্য।

  • #2
    হায় আফসোস,, আমাদের সময় চলে যাচ্ছে গার্জিয়ান ছাড়া। শাইখ রাহমানি হাফি : এর কথা মানুষ ভুলেই গেছে। মাঝেমধ্যে নিজেকে বড়ই অসহায় লাগে।

    Comment


    • #3
      আল্লাহ শায়খকে মুক্তির ব্যাবস্থা করুন। আমিন।
      হে আল্লাহর পথের সৈনিক! ধৈর্যধারণ করুন ও হকের উপর অবিচল থাকুন। নিশ্চয়ই আল্লাহর ওয়াদা সত্য।

      Comment


      • #4
        পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম ভাই। জাযাকাল্লাহু খাইরান।
        ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

        Comment


        • #5
          দোয়া করবেন ভাই। পরবর্তী পর্ব খুব শীঘ্রই আসবে ইনশাআল্লাহ।
          হে আল্লাহর পথের সৈনিক! ধৈর্যধারণ করুন ও হকের উপর অবিচল থাকুন। নিশ্চয়ই আল্লাহর ওয়াদা সত্য।

          Comment


          • #6
            আবু যুবাইর ভাই তৃতীয় পর্বের লিংক
            https://dawahilallah.com/forum/%E0%A...A7%8D%E0%A6%AC

            Last edited by Munshi Abdur Rahman; 06-11-2023, 03:02 PM.
            হে আল্লাহর পথের সৈনিক! ধৈর্যধারণ করুন ও হকের উপর অবিচল থাকুন। নিশ্চয়ই আল্লাহর ওয়াদা সত্য।

            Comment

            Working...
            X