৮। মোল্লা নুরুল্লাহ নূরী:
মোল্লা নুরুল্লাহ নূরীর পিতার নাম মৌলভী গোলাম উমরুদ্দিন। ১৩৫০ হিজরি সোলার সনে জাবুল প্রদেশের শাজঈ জেলার অন্তর্গত চেজমা বাহরাম খেল গ্ৰামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি দেশের বিভিন্ন মাদ্রাসা ও মসজিদে প্রাথমিক ও উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন। গোয়ান্তানামোবেতে বন্দি থাকাকালে কুরআন শরীফের বিশ পারা হিফজ করেন। তিনি মাতৃভাষার পাশাপাশি ফার্সি ও আরবিতে অনর্গল কথা বলতে পারেন।
শুরু জীবনেই তিনি সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে জিহাদে অংশগ্রহণ করেন। হরকতে ইনকিলাবে ইসলামী দলের সাথে যুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন।
আফগানিস্তানে সোভিয়েত ইউনিয়নের হামলা শুরু হওয়ার পর মোল্লা নুরুল্লাহ নূরী তার স্থানীয় মাদ্রাসায় তালেবানের সাথে একটি মিটিং করেন। অনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রতিহত করতে তালেবানের সাথে মিলে তিনি নিজ এলাকায় একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি ছিলেন সংগঠনটির ডেপুটি।
উক্ত তালেবান সংঘ পাঁচ বছর টিকে ছিল। এ সময় সংগঠনটি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদন করেছিল।
যখন মরহুম আমীরুল মু’মিনীন মোল্লা মুহাম্মদ উমর কান্দাহারে হরকতে তালেবানের সূচনা করেন এবং এক পর্যায়ে বোলদাক জয় করেন তখন মোল্লা নূরী তাঁর প্রদেশের তালেবানের একটি দল নিয়ে মরহুম আমীরুল মু’মিনীনের সাথে সাক্ষাৎ করে হরকতে তালেবানে যোগ দেন। মরহুম আমীরুল মু’মিনীন মোল্লা মুহাম্মদ উমর মুজাহিদ তখনই তাঁকে এবং তাঁর সঙ্গীদেরকে সেনা দলের অন্তর্ভুক্ত করে নেন এবং তাঁরা কাজে নেমে পড়েন।
কাবুল বিজয়ের পূর্বে তিনি খোস্ত প্রদেশের সহকারী পুলিশ প্রধান এবং মাইদান ওয়ারদাক প্রদেশের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কাবুল বিজয়ের পর দুই বছর তিনি লাঘমান প্রদেশের গভর্নর ছিলেন। বাগরাম প্রদেশের গভর্নর ছিলেন এক বছর। ইসলামী ইমারাহর শাসন কালের শেষ দিকের বছর গুলোতে উক্ত প্রদেশের গভর্নর এবং উত্তরাঞ্চলের ডিরেক্টর জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
আফগানিস্তানে মার্কিনীদের আগ্ৰাসন শুরু হওয়ার পর তাঁকে বন্দি করে গুয়ান্তানামো বে কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। তিনি সেখানে তের বছর বন্দি ছিলেন। তালেবান ও আমেরিকার মধ্যকার বন্দি বিনিময় চুক্তির অধীনে তাঁকে এবং তাঁর অপর চার সঙ্গীকে কাতারে আনা হয়।
২০১৮ সালে তাকে ইসলামী ইমারাহর পলিটিকেল অফিসের সদস্য করা হয়। ২০১৯ সালে আমেরিকার সাথে অনুষ্ঠিত সংলাপে সদস্য হিসেবে তিনি উপস্থিত ছিলেন। বর্তমানে তিনি নেতৃত্ব পরিষদ, পলিটিকেল কমিশন ও আন্ত-আফগান সংলাপ দলের সদস্য।
৯। ক্বারী দ্বীন মুহাম্মদ হানিফ:
তাঁর পিতার নাম মরহুম ক্বারী মুহাম্মদ নাজির। ১৩৪২ হিজরি সোলার সনে বদখশান প্রদেশের ইয়াফতাল জেলার অন্তর্গত স্পিন আরজাঞ্চি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৫ বছর বয়সে তিনি হিফজুল কোরআন সমাপ্ত করেন। তারপর নিজ পিতার কাছে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। অখ্যাত হাফত সৌর অভ্যুত্থান চলাকালে তিনি একাডেমিক পড়াশোনাতেই ছিলেন।
কমিউনিস্টদের উত্থানের পর এই অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে জিহাদ ও সশস্ত্র প্রতিরোধ শুরু হলে কমিউনিস্টরা ধর্মীয় স্কুল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ হয় ধ্বংস করে দিয়েছিল নয়তো বন্ধ করে দিয়েছিল।
১৯৮৫ ইং সালে তিনি প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানে পাড়ি জমান। সীমান্তবর্তী খাইবার পাখতুনখোয়ার বিভিন্ন স্কুলে পড়াশোনা করেন। ইসলামিক সায়েন্স নিয়ে তাঁর পড়াশোনা শেষ হতে যখন আর মাত্র এক বছর বাকি তখন আফগানিস্তানে তালেবানের যাত্রা শুরু হয়। ক্বারী দ্বীন মুহাম্মদ হানিফ বদখশান প্রদেশের আরো কতিপয় ছাত্র নিয়ে হরকতে তালেবানে যোগ দেন। কাবুল বিজয়ের পর থেকে নিয়ে ইসলামী ইমারাহর শাসনের অবসান পর্যন্ত তিনি শিক্ষা ও পরিকল্পনা মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন।
২০০৩ সালে দেশ যখন দখলদারদের দখলে চলে যায় এবং তাদের বিরুদ্ধে যুগপৎ জিহাদ শুরু হয় তখন থেকে বদখশান প্রদেশে জিহাদী তৎপরতা চালানোর জন্য ক্বারী দ্বীন মুহাম্মদ হানিফকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
২০০৪ সালে মরহুম আমীরুল মু’মিনীন মোল্লা মুহাম্মদ উমর মুজাহিদের নির্দেশে তাঁকে পলিটিকেল কমিশন ও নেতৃত্ব পরিষদের সদস্য করা হয়। তিনি বর্তমানে পলিটিকেল অফিসের মধ্য এশিয়া ডিপার্টমেন্টের প্রধান, নেতৃত্ব পরিষদ ও সংলাপ দলের সদস্য।
১০। মোল্লা আব্দুল লতিফ মানসূর:
মোল্লা আব্দুল লতিফ মানসূর ১৩৪৬ হিজরি সোলার সনে জন্মগ্ৰহণ করেন। তাঁর জন্ম পাকতিয়া প্রদেশের জুরমাত জেলার অন্তর্গত সাহাক অঞ্চলের হাইবাত খেল্ গ্ৰামে। তাঁর পিতার নাম শহীদ আলহাজ্ব ইয়ার মাহমুদ। পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত জেনারেল শিক্ষা লাভ করেছেন তিনি। এরপর দীর্ঘ সময় ধর্মীয় বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন।
হরকতে ইনকিলাবে ইসলামী আফগানিস্তানের দাওয়াহ বিভাগের প্রধান নিযুক্ত হবার মধ্য দিয়ে মোল্লা আব্দুল লতিফ মানসূর তার ক্যারিয়ার শুরু করেন। ১৩৭১ হিজরি সোলার সনে যখন মুজাহিদদের বিজয় হয় এবং মুজাহিদ নেতা মৌলভী নাসরুল্লাহ মানসূর শহীদ হয়ে যান তখন পাকতিয়া প্রদেশের গভর্নর হিসেবে মোল্লা আব্দুল লতিফ মানসূর তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন।
১৩৭৩ হিজরি সোলার সনের শুরুর দিকে তিনি হরকতে তালেবানে যোগ দেন। ইসলামী ইমারাহর বিভিন্ন পোস্টে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। একই বছর তিনি হেলমান্দ প্রদেশের গভর্নর হিসেবে এবং সীমিত সময়ের জন্য কান্দাহার প্রদেশের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৩৭৫ হিজরি সোলার সনে তিনি কৃষি ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। মার্কিন আগ্ৰাসন শুরু হওয়ার পর তাকে পাকতিয়া প্রদেশের মুজাহিদ সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। দীর্ঘ নয় বছর তিনি এ দায়িত্বে ছিলেন। নাংগাহার ও লোগার প্রদেশের সেনাপ্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৮ সালে স্বল্প মেয়াদে পলিটিকেল কমিশনের প্রধান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন।
কাতারে আসার পূর্বে মুহতারাম মানসূর নেতৃত্ব অফিস এবং কৃষি ও প্রাণিসম্পদ কমিশনের প্রধান হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। ২০১৯ এর ফেব্রুয়ারিতে আমেরিকার সাথে সংলাপের জন্য গঠিত টিমের সদস্য ছিলেন। বর্তমানে তিনি নেতৃত্ব পরিষদ ও সংলাপ দলের সদস্য।
[চলবে ইনশাআল্লাহ…]
আগের পর্বগুলো দেখুন-
পর্ব-১: https://dawahilallah.com/showthread.php?21233
পর্ব-২: https://dawahilallah.com/showthread.php?21254
পর্ব-৩: https://dawahilallah.com/showthread.php?21282
Comment