Announcement

Collapse
No announcement yet.

দ্বীন কায়েমে সমসাময়িক আকাবিরদের সংগ্রাম (পঞ্চম পর্ব)

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • দ্বীন কায়েমে সমসাময়িক আকাবিরদের সংগ্রাম (পঞ্চম পর্ব)

    হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত
    মাওলানা মুহাম্মদ কাসেম নানুতভী (রহঃ)

    জন্মঃ ১২৪৮ হিজরী - মৃত্যুঃ ১২৯৭ হিজরী




    ইংরেজ স্বৈরাচারীদের হিংস্র থাবা ও অকথ্য নির্যাতনে ভারতবর্ষের নির্যাতিত, নিপীড়িত, নিস্পেষিত, নিগৃহীত ও নিরীহ মুসলিম জনগোষ্ঠী অতিষ্ঠ হয়ে যখন প্রায় নিরাশ হয়ে পড়েছিল। ক্রমবর্ধমান নিপীড়নে যখন মুসলমানদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গিয়েছিল। যখন প্রায় গোটা বিশ্ব জুড়ে তাদের একক কর্তৃত্ব কায়েম করে মুসলমানদের ধনসম্পদ, ইজ্জত আব্রু এমন কি জীবন নিয়েও হোলি খেলায় মেতে উঠেছিল। যখন দৃষ্টি সীমা জুড়ে শুধু মুসলিম নির্যাতন ও মুসলিম নিধনের ভয়াল চিত্রই ফুটে উঠছিল। ইতিহাসের এহেন সন্ধিক্ষণে ভারতবর্ষের প্রতিটি বনি আদমের মনোজগতে জেগে ওঠেছিল স্বাধীনতা লাভ করে সুদীর্ঘ গোলামীর দুঃসহ জীবন থেকে মুক্তির এক অদম্য স্পৃহা। গা ঝাড়া দিয়ে ওঠেছিল নিদ্রা বিভোর জাতি তাদের অঘোর ঘুম থেকে। চোখ কচলাতে কচলাতে ঘুম থেকে জেগে তারা হতবাক হয়ে পড়েছিল। অবাক চাহনিতে সবাই অপলক নেত্রে এক ভয়াল পরিস্থিতি অবলোকন করছিল। সুগভীর ষড়যন্ত্র এবং সুদীর্ঘ গোলামীর পাতা ফাঁদ তাদেরকে চতুর্দিক থেকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেছিল।


    বৃটিশ বেনিয়াদের এত সব সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের কথা সরলমনা মুসলিম জনগোষ্ঠী এতদিন তেমন করে ভাবেনি! সবকিছু উপলদ্ধি করে এবার মুসলিম জনগোষ্ঠী কাফেরদের গোলামীর শৃংখল ছিন্ন করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হল। কারণ পূর্বেই ইংরেজ বিরোধী আন্দোলনের অনির্বাণ মশাল প্রজ্জলিত করেছেন সফল বিপ্লবী নেতা হযরত সুলতান টিপু (রহঃ)! পরাধীনতার শৃংখল ভেঙ্গে বেরিয়ে আসার শ্লোগান তিনিই নিজের তাজা রক্তের হরফে লিখে গেছেন। আর আজো সে চেতনার আগুন নিভে যায়নি। হ্যাঁ, এখন প্রয়োজন সামান্য কিছু খড়কুটোই দিয়ে তা পুনপ্রজ্জলিত করে দেওয়া। তাই দেশ ও জাতির এই ক্রান্তি লগ্নে অতীব প্রয়োজন ছিল মুহাম্মদ কাসিম নানতুভী (রহঃ) -এর মত একজন বীর বাহাদুরের। আর সত্যিই সবাই যেন তার অপেক্ষায় ছিল। এরই সূত্র ধরে তৎকালীন শীর্ষস্থানীয় ওলামা-মাশায়েখগণ এক জরুরী কনভেশন আহ্বান করেন। সেই কনফারেন্সে উপস্থিত সুধীবৃন্দ সুদীর্ঘ ইংরেজ দুঃশাসনের লোমহর্ষক ফিরিস্তি জাতির সামনে তুলে ধরেন। পেশ করেন ইংরেজদের সুদূর প্রসারী ষড়যন্ত্রের নীলনকশা, তার ভয়াবহতা ও অনিবার্য পরিণতির চিত্র। এই কনফারেন্সে ইংরেজদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মকভাবে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয় এবং পরাধীনতার জীবন নিয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে শাহাদাত বরণ করে আল্লাহর সান্নিধ্যে গমন করাকে শ্রেয় বলে ব্যক্ত করা হয়। উক্ত পরামর্শ সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে, এখন থেকে নিয়মিত সশস্ত্র জিহাদ পরিচালিত হবে এবং অত্যন্ত গোপনে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।


    জিহাদের প্রাণকেন্দ্র শামেলী রণক্ষেত্রে বিজ্ঞ আলেম, বীর বাহাদুর, সাহসী ও দৃঢ়চেতা যুবকদের একটি বিশাল বাহিনীকে নিয়োগ করা হয়। কারণ এখানেই যে কোন মুহুর্তে ইংরেজদের পক্ষ থেকে হামলার সম্ভাবনা ছিল প্রবল। শামেলী রণ ক্ষেত্রের এই সুবিশাল ও বিশেষ বাহিনীর অধিনায়ক হিসেবে যিনি নির্বাচিত হন তিনি ছিলেন নন্দিত সিপাহসালার হযরত মাওলানা কাসেম নানতুভী (রহঃ)। প্রকৃত ইতিহাস বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, বীর মুক্তিযোদ্ধা হযরত মাওলানা কাসেম নানুতভী (রহঃ) তার অনলবর্ষী বক্তৃতা, জিহাদী ভাষণ, সুনিপুণ যুক্তিমালা ও অকাট্য প্রমাণাদীর মাধ্যমেই উপারোক্ত পরামর্শ সভায় অংশ গ্রহণকারীগণ ইংরেজ দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হন। তার ঈমানী শক্তির সামনে নিজেদের অস্ত্র ও সৈন্যের অপ্রতুলতার অজুহাত টিকেনি। তিনি উল্টো তাদেরকে প্রশ্ন করেন, আমরা কি সংখ্যায় “বদরের” মুজাহিদদের চেয়েও কম? (রুমুজে-কাওসার-২২৩)


    হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত মাওলানা কাসেম নানুতভী (রহঃ) -এর ঈমানী চেতনা ও জিহাদী স্প্রীটে অবগাহন করে সকল নবী প্রেমিকদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে জিহাদী জযবা উথলে উঠলো। গোটা কনভেনশন ইংরেজদের বিরুদ্ধে সংগ্রামী চেতনায় উজ্জীবিত ও জিহাদী প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে টগবগ করতে লাগল। মুক্তি পাগল মুজাহিদগণ দলে দলে জিহাদী অভিযানে যাত্রা করলো। আর এই শামেলীই ছিল ইংরেজদের প্রধান ও শক্তিশালী ঘাঁটি । এখানে মুসলিম সেনাদের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন কালজয়ী সাধক, আধ্যাত্মিকতার মহান নেতা হযরত হাজী এমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মাক্কী (রহঃ)। তার অপরিসীম দূরদর্শিতা, সার্বক্ষণিক বিচক্ষণতা এবং রূহানী তাওয়াজজুহর পাশাপাশি উঁচু-স্তরের আধ্যাত্মিক শক্তির বদৌলতে মুসলিম সৈন্যদের কোন জিনিসের অপ্রতুলতা অনুভূত হয়নি।


    হযরত মাওলানা কাসেম নানুতভী (রহঃ) যে দিন এ ধরায় আগমন করেন সে দিনটি ছিল রাসূল প্রেমের পাগল, আধ্যাত্মিকতায় শ্রেষ্ঠ মনীষী, বীর সেনানী হযরত সাইয়্যেদ আহমদ ব্রেলভী (রহঃ) -এর শাহাদাতের দিন। হযরত মাওলানা কাসেম নানুতভী (রহঃ) সকল বিষয়ে অগাধ পাপ্তিত্যের অধিকারী ছিলেন। শুধু এখানেই শেষ নয়। বরং তিনি ছিলেন ইসলামের একজন সফল, স্বার্থক ও অতুলনীয় দার্শনিক।


    হযরত মাওলানা সাইয়্যেদ সাইন আহমদ মাদানী (রহঃ) হযরত মাওলানা কাসেম নানুতভী (রহঃ) সম্পর্কে লিখতে গিয়ে তার স্বীয় কিতাব “নকশে হায়াত” এ লেখেন, শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী (রহঃ) -এর ইলমী গভীরতা অনস্বীকার্য কিন্তু হযরত মাওলানা কাসেম নানুতভী (রহঃ) -এর লেখা কিতাবে ইলম ও প্রজ্ঞার যে গভীরতা পরিদৃষ্ট হয়, তা হযরত শাহ ওয়ালীউল্লাহ (রহঃ) -এর কিতাবেও নেই।


    স্যার সাইয়েদ আহমদ ছাহেব সুদীর্ঘ সময় পর্যন্ত হজরত মাওলানা কাসেম নানুতভী (রহঃ) -এর সহপাঠী ছিলেন। চিন্তা-চেতনায় ভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও
    তিনি হযরত নানুতভী (রহঃ) সম্পর্কে এক জায়গায় লিখেছেন,

    “সর্বশ্রেষ্ঠ দার্শনিক হযরত ইমাম গাযযালী (রহঃ) -এর তিরোধানের পর ইসলামের ইতিহাসে হযরত মাওলানা কাসেম নানুতভী (রহঃ) -এর মত বড় দার্শনিক আজ পর্যন্ত আর দেখা যায়নি।”

    ভাবতে অবাক লাগে! যাঁর দিগন্ত প্রসারী পান্ডিত্যের খ্যাতি, ধার ইলমের সামনে সমথ বিশ্ব অবনত। এমন এক বিশ্ব-নন্দিত ও জগত-খ্যাত ব্যক্তিত্ব কিভাবে নিজের আরাম-আয়েশকে জলাঞ্জলী দিয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণার্থে ১৮৫৭ সালের সুকঠিন, বিপদসংকুল ও সংগ্রামী জীবন কাটানোর কন্টকাকীর্ণ পথ বেছে নিলেন। নিজের একটু আরাম-আয়েশের চিন্তাও তিনি করলেন না। নিপীড়িত জাতির চরম দুর্দশায় দারুণভাবে ক্লিষ্ট হয়ে তিনি নিজের সকল বিলাসী উপকরণ সমূহ পরিত্যাগ করে নিরলস ভাবে আজীবন সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন জাতিকে পরাধীনতার জিঞ্জির থেকে মুক্ত করার সুমহান বাসনা নিয়ে।


    ১৮৫৭ সালের সংগ্রামের পর যখন কুফরী শক্তির মুখোশ খুলে গেল, তখন তের হাজার আলেম-উলামাকে ফাঁসির কাষ্টে ঝুলিয়ে অভিশপ্ত ইংরেজগোষ্ঠী মহা তৃপ্তির ঢেকুর তুলছিল, যখন কুফুরী ও খোদাদ্রোহীতার বিষাক্ত ছোবল গোটা দেশকে গ্রাস করে ফেলেছিল, কোথাও হিদায়েতের কোন আলোক-রশ্মি পরিলক্ষিত হচ্ছিল না, যখন পথ হারা জাতিকে সঠিক দিশা দেয়ার মত কোন দিশারী খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না, যখন ফিৎনা-ফাসাদের ঘোর অমানিশায় চারদিক অন্ধকারাছন্ন। সর্বোপরি যখন আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের বিশাল-বিস্তীর্ণ আকাশেও যেন রহমতের কোন তারকা দৃষ্টিগোচর হচ্ছিল না- জাতির ঠিক এমন এক ক্রান্তিলগ্নে, ইতিহাসের এমনই এক সন্ধিক্ষণে হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত মাওলানা কাসেম নানুতভী (রহঃ) ইসলামের আলোকোজ্জ্বল মশাল ও অনির্বাণ প্রদীপকে এই উপমহাদেশে চিরদিন প্রজ্বলিত রাখার সুমহান বাসনা নিয়ে ভারতের ছোট একটি বসতি এলাকায় একটি দ্বীনি মাদ্রাসার ভিত্তি স্থাপন করেন। এই মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যাবলীর মধ্যে এও ছিল যে, এর মাধ্যমে বিশ্বময় ইসলামের জাগরণ সৃষ্টি হবে। এমন লক্ষ লক্ষ সংগ্রামী আলেম সৃষ্টি হবেন, যাঁরা ইসলামের সুমহান ঝান্ডাকে চিরদিন সমুন্নত রাখবেন। ইংরেজদের অত্যাচার-ক্লিষ্ট মানবতাকে জিহাদী প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ করবেন। ফলে ইংরেজ হায়নাদের জুলুম-নির্যাতন ও অত্যাচার-অনাচারের চির অবসান ঘটবে।


    বর্তমান সময়ে মুসলিম বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ মযাদার আসনে আসীন দেওবন্দের ছোট্ট পল্লীতে অবস্থিত এই ইসলামী ইউনিভার্সিটিটি হযরত মাওলানা কাসেম নানুতভী (রহঃ) -এর শিক্ষা জীবনের একটি স্বপ্নেরই বাস্তবায়ন। হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত মাওলানা কাসেম নানতুবী (রহঃ) এর জীবনী গ্রন্থে উল্লেখ আছে যে, ছাত্র জীবনে তিনি একবার স্বপ্ন দেখেন যে, তিনি কাবা শরীফের ছাদে দন্ডায়মান। ইত্যবসরে তার দেহ থেকে পানি নিসৃত হয়ে হাজার হাজার নদী-নালা বয়ে যাচ্ছে। বিস্ময়কর এই স্বপ্নটি তাকে বিস্ময়াভিভূত করে তোলে। পরে তিনি স্বপ্নের এই বৃত্তান্ত তার সম্মানিত ও সুযোগ্য পিতার নিকট বর্ণনা করেন৷ উত্তরে তার পিতা বলেন, এর ফলাফল হল তোমার মাধ্যমে দ্বীনি ইলমের আলো সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে! তুমি হবে এর উৎস।


    হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত মাওলানা কাসেম নানুতভী (রহঃ) ছিলেন সুন্নাতে নববীর অত্যন্ত সযত্ন পাবন্দ। সুন্নাতের প্রতি তার এতই অনুরাগ ছিল এবং সুন্নাতের উপর চলতে তিনি এতটাই অভ্যস্ত ছিলেন যে, ১৮৫৭ সালের যুদ্ধের পর যখন তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরওয়ানা জারী হয় তখন তিনি তিন দিন আত্মগোপন করে থাকেন। তিন দিন পর তিনি বেরিয়ে এলে তার সাথী-সঙ্গীরা তাকে পুনরায় আত্মগোপন করার পরামর্শ দিলেন। উত্তরে তিনি বললেন, আমার প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত কালে মাত্র তিন দিন পর্বত গুহায় আত্মগোপন করেছিলেন। তাই আমিও মাত্র তিন দিনই আত্মগোপন করেছি। এর বেশী এক মুহূর্ত ও আত্মগোপন করে থাকা আমার জন্য আদৌ শোভনীয় নয়। আমার লজ্জা বোধ হয় যে, কি করে আমি প্রিয়নবী হযরত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেয়ে বেশী সময় আত্মগোপন করে থাকি!


    হজ্জাতুল ইসলাম হযরত মাওলানা কাসেম নানুতভী (রহঃ) ছিলেন একজন খালেস, নিঃস্বার্থ ও দুনিয়া বিমুখ আলেম। নিম্নের ঘটনাটি এরই জলন্ত প্রমীণ - একবার হায়দ্রাবাদের নবাব তার নিকট চিঠি লিখল যে, আপনি আমার দরবারে আসুন। এখানে আপনি প্রত্যহ মাত্র এক ঘন্টা করে পড়াবেন। সম্মানী হিসেবে আপনাকে প্রতি মাসে সাত শ' টাকা প্রদান করা হবে

    নবাবের চিঠির উত্তরে মাওলানা কাসেম নানুতভী (রহঃ) লিখলেন, নবাব সাহেব! আমি মাদ্রাসা থেকে দশ টাকা বেতন পেয়ে থাকি। এর ছয় টাকায় আমার যাবতীয় প্রয়োজনাদী পুরণ হয়ে যায়। দু' টাকা পিতার জন্য পাঠিয়ে দেই। আর দু' টাকা আমার নিকট অবশিষ্ট থেকে যায়। এই দু' টাকা আমি কোথায় খরচ করবো সে জায়গা খুঁজে পাচ্ছি না। আর আপনি যে আমাকে এত টাকা দিতে চাচ্ছেন, তা আমি কোথায় খরচ করবো?

    হযরত মাওলানা কাসেম নানুতভী (রহঃ) -এর দুনিয়া বিমুখ এ উত্তর পেয়ে নবাব এত বেশী প্রভাবিত হন যে, নবাব সাহেব হযরতের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য চলে আসেন। নবাব সাহেব ফিরে যাওয়ার সময় এক থলে রৌপ্য মুদ্রা হযরতের সমীপে হাদীয়া স্বরূপ পেশ করেন। হযরত মাওলানা কাসেম নানুতভী (রহঃ) তা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান। এবং পূর্বোক্ত উজর পেশ করেন। ফলে নবাব সাহেব ফেরার সময় এ টাকাগুলো হযরতের পাদুকাযুগলের মধ্যে ঢেলে দিয়ে চলে যান। পরে মাওলানা কাসেম নানুতভী (রহঃ) জুতা পরিধান করতে গিয়ে দেখেন জুতার মধ্যে টাকার ঢের পড়ে আছে। এ অবস্থা দেখে জুতা ঝেড়ে টাকাগুলো ফেলতে ফেলতে বললেন, এই দেখ! আমরা দুনিয়াকে এত উপেক্ষা ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করি কিন্তু তবুও তা শেষ পর্যন্ত আমাদের জুতায় এসে পড়ে থাকে। এ বলে তিনি গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা করলেন। আর একটি বারও তিনি এ টাকাগুলোর দিকে ফিরে তাকালেন না।


    প্রকৃতপক্ষে এ আন্দোলন তথা ইংরেজ বেনিয়ার মোকাবেলা করা, তাদের ইসলাম বিধ্বংসী কর্ম-কাণ্ড ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এবং ভারতবর্ষ থেকে তাদেরকে বিতাড়িত করার জন্য দুর্বার ও সফল আন্দোলন পরিচালনা করার মত দুঃসাহস হযরত মাওলানা কাসেম নানুতভী (রহঃ) -এর ছিল। শুধু তাই নয়, তার তিরোধানের পরও এ দুর্বার আন্দোলন যেন চিরকাল অব্যাহত থাকে সেজন্য তিনি সংগ্রামী আলেম তৈরীর কারখানা ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ “দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসা” রেখে যান। যে বিদ্যাপীঠ যুগ যুগ ধরে শিক্ষা, চরিত্র, রাজনীতি, আধ্যাত্মিকতা ও জিহাদের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী অবদান রেখে চলছে।


    হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত মাওলানা কাসেম নানুতভী (রহঃ) দরস ও তাদরীসের পাশাপাশি লিখনির জগতেও বিরাট অবদান রেখে যান। তার রচিত গ্রন্থাবলীর সংখ্যা ত্রিশ (৩০) এর অধিক।

    এ মহা মনীষীর সংগ্রামী জীবন সত্যিই আমাদের জন্য একটি অনুসরণীয় আদর্শ, চেতনার অগ্নিমশাল।
    হে আল্লাহর পথের সৈনিক! ধৈর্যধারণ করুন ও হকের উপর অবিচল থাকুন। নিশ্চয়ই আল্লাহর ওয়াদা সত্য।

  • #2
    আল্লাহ্‌ তায়ালা দুনিয়া এবং আখিরাতে উনার মর্যাদা বৃদ্ধি করুন, আমীন

    Comment


    • #3
      মাশাআল্লাহ। আল্লাহ আপনার কলমে বারাকাহ দান করুন। আমীন
      ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

      Comment


      • #4
        আমার ইচ্ছা যে, দারুল উলুম দেওবন্দের প্রতিটি
        ছাত্রই ইংরেজদের অবস্থানে আঘাত হানবে এবং এই
        মাদ্রাসার কল্যাণপ্রাপ্ত সকলেই ইংরেজদের জন্য প্রাণ
        সংহারক বিষতুল্য হবে। ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের
        অপরাধে যদি দারুল উলুম দেওবন্দের প্রতিটি ইট খুলে
        নেওয়া হয় তবুও তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ অব্যাহত থাকবে।
        - মাওলানা মুহাম্মদ কাসেম নানুতভী (রহঃ)
        প্রতিষ্ঠাতা, দারুল উলুম দেওবন্দ
        হে আল্লাহর পথের সৈনিক! ধৈর্যধারণ করুন ও হকের উপর অবিচল থাকুন। নিশ্চয়ই আল্লাহর ওয়াদা সত্য।

        Comment


        • #5
          "আমার ইচ্ছা যে, দারুল উলুম দেওবন্দের প্রতিটি ছাত্রই ইংরেজদের অবস্থানে আঘাত হানবে এবং এই মাদ্রাসার কল্যাণপ্রাপ্ত সকলেই ইংরেজদের জন্য প্রাণ সংহারক বিষতুল্য হবে। ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের অপরাধে যদি দারুল উলুম দেওবন্দের প্রতিটি ইট খুলে নেওয়া হয় তবুও তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ অব্যাহত থাকবে।"

          এটিই হলো প্রকৃত দেওবন্দী মানহাজ। আল্লাহ আমাদেরকে আকাবিরদের মানহাজে চলার তৌফিক দান করুক। আমিন।

          Comment

          Working...
          X