১৪। মৌলভী মতিউল হক খালিস:
তাঁর পিতার নাম মৌলভি মুহাম্মদ ইউনূস খালিস; তিনি নেতৃস্থানীয় মুজাহিদ।
মৌলভি মতিউল হক ১৩৪০হিজরি সোলার সনে নাঙ্গাহার প্রদেশের খোগিয়ানি জেলার অন্তর্গত নাকারখেল গ্ৰামে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি প্রাথমিক ধর্মীয় শিক্ষা তাঁর পিতা এবং দুই চাচাতো ভাই মৌলভি মুহাম্মদ ইউসুফ ও মৌলভি মুহাম্মদ ইসহাক মুত্তাকির কাছ থেকে লাভ করেন। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা নিজ গ্রামের স্কুলে সমাপ্ত করেন।
কমিউনিস্টদের ডি’এতাত বিপ্লবের পর ১৩৫৭ হিজরি সোলার সনের ‘ক্যানসার’ (আফগানিস্তানে প্রচলিত মাসের নাম) মাসে পাকিস্তানে চলে যান। খাইবার পাখতুনখোয়ার বিভিন্ন মাদ্রাসায় অবশিষ্ট পড়াশোনা সমাপ্ত করেন। ১৪০৮ হিজরি সনে মদীনা ইউনিভার্সিটি থেকে ইসলামী আইনে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। লাহোরের পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটি থেকে ইসলামিক স্টাডিজ নিয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৯০ ও ১৯৯১ সনে পেশোয়ারের ইমদাদুল উলুম মাদ্রাসায় বিভিন্ন হাদীস গ্ৰন্থ অধ্যয়ন করেন। মৌলভি মতিউল হক একজন হাফেজে কুরআন। তিনি মাতৃভাষার পাশাপাশি দারি, উর্দু ও আরবি ভাষায় কথা বলতে পারেন।
১৪০৮ হিজরী থেকে তিনি আল হিজরাহ ওয়াল জিহাদ মাদ্রাসায় লেকচারার হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। পরে ইসলামী হিজব পার্টির শিক্ষা বিভাগের অধীনে লিএইজন অফিসার (মৈত্রী অফিসার) হিসেবে বিদেশি এনজিওর সাথে কাজ করেছেন। পরবর্তীতে ইসলামী ইমারাহর হয়ে নাঙ্গারহার প্রদেশের শিক্ষা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। মার্কিন আগ্ৰাসন শুরু হওয়ার পর তিনি তার পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলতে থাকেন। মুজাহিদদেরকে দিকনির্দেশনা দেয়া ও সাধারণ মানুষকে জিহাদের প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে থাকেন।
২০১৯ সালে মৌলভী মতিউল হককে আমেরিকার সাথে সংলাপের জন্য গঠিত টিমের সদস্য করা হয়। তিনি বর্তমানে পলিটিকেল অফিস ও সংলাপ দলের সদস্য।
১৫। মৌলভী খাইরুল্লাহ খাইরখোয়া:
তিনি মরহুম সৈয়দ ওয়ালির ছেলে। কান্দাহারের আর্ঘিস্তান জেলার অন্তর্গত গোহারি গ্ৰামে তাঁর জন্ম। কমিউনিস্ট বিপ্লবের পর অল্প বয়সে পিতা মাতার সাথে পাকিস্তানে চলে যান। সেখানে প্রথমে তিনি কোয়েটা সিটির বেলুচিস্তানের সারানানো ক্যাম্পে পড়াশোনা করেন, তারপর চারাট জামিয়া মুহাম্মদিয়া ও কোহাটে পড়াশোনা করেন।
মৌলভি খাইরুল্লাহ একজন হাফেজে কুরআন। মাতৃভাষার পাশাপাশি দারি, আরবি, ইংরেজি ও উর্দুতে কথা বলতে পারেন। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন বিরোধী লড়াইয়ে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। মরহুম আমীরুল মু’মিনীন মোল্লা মুহাম্মদ উমর মুজাহিদের নেতৃত্বে তালেবান আন্দোলনের সূচনালগ্নে তিনি দুর্নীতি দমন ও দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ শুরু করেন। কাবুল বিজয়ের প্রাক্কালে তিনি হরকতে তালেবানের মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
ইসলামী ইমারাহর শাসনকালে তিনি প্রথমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তারপর দক্ষিণাঞ্চলের মহাপরিচালক ও হেরাতের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
মার্কিন আগ্ৰাসন শুরু হওয়ার পর ২০০২ সালে তিনি প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানে গ্ৰেফতার হন। তাঁকে আমেরিকার হাতে তুলে দেয়া হয়। ১৩ বছর তিনি গুয়ান্তানামো বে কারাগারে কাটান। ০১/০৬/২০১৪ সালে আমেরিকার সাথে এক বন্দি বিনিময় চুক্তির অধীনে তাঁকে ও তাঁর চার সঙ্গীকে কাতারে আনা হয়। ২০১৮ সালে তাঁকে পলিটিকেল অফিস ও আমেরিকার সাথে সংলাপের জন্য গঠিত টিমের সদস্য করা হয়। বর্তমানে তিনি পলিটিকেল অফিস ও সংলাপ দলের সদস্য।
১৬। শায়খ মৌলভী শিহাবুদ্দীন দিলাওয়ার :
প্রয়াত মৌলভি সৈয়দ আকবর দিলাওয়ার তাঁর পিতা। ১৩৪১ হিজরি সোলার সনে লোগারের রাজধানী শহরে তাঁর জন্ম। তিনি প্রথমে তাঁর পিতার কাছ থেকে এবং তারপর লোগারের বিভিন্ন মাদ্রাসায় প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করেন। কমিউনিস্ট বিপ্লবের পর তিনি তাঁর পরিবারের সাথে পেশোয়ারে হিজরত করেন। ১৩৬২ সনে হাক্কানিয়া দারুল উলুম থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে তিনি পেশোয়ারের বিভিন্ন ধর্মীয় স্কুলে শিক্ষকতা করেন।
ইসলামী ইমারাহর শাসনকালে তিনি প্রথমে পেশোয়ারে এবং পরে ইসলামাবাদে কনসাল জেনারেল (মহাদূত) হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। তারপর সৌদি আরবে রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি চিফ জাস্টিস এবং কান্দাহার প্রদেশের প্রধান বিচারপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
মার্কিন আগ্ৰাসন শুরু হওয়ার পর তাঁকে পলিটিকেল কমিশনের সদস্য করা হয়। মৌলভি শিহাবুদ্দিন বর্তমানে মৈত্রীর দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন এবং তিনি সংলাপ দলের সদস্য।
[চলবে ইনশাআল্লাহ…]
আগের পর্বগুলো দেখুন-
পর্ব-১: https://dawahilallah.com/showthread.php?21233
পর্ব-২: https://dawahilallah.com/showthread.php?21254
পর্ব-৩: https://dawahilallah.com/showthread.php?21282
পর্ব-৪: https://dawahilallah.com/showthread.php?21300
পর্ব-৫: https://dawahilallah.com/showthread.php?21336
Comment