Announcement

Collapse
No announcement yet.

ঘন আঁধার কেটে কেটে আলোর কাছে যেতে হয় | আলো একবার পেয়ে গেলে আঁধার পালাতে বাধ্য হয়

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • ঘন আঁধার কেটে কেটে আলোর কাছে যেতে হয় | আলো একবার পেয়ে গেলে আঁধার পালাতে বাধ্য হয়

    প্রকৃত সত্যকে পেতে হলে সুখের পাহাড় ডিঙিয়ে বিপদসংকুল মহাসাগরে ঝাঁপ দিতে হয়। যাঁরা সত্যকে পেয়েছেন তাঁরা এভাবেই পেয়েছেন।
    সোনার চামচ মুখে নিয়েই জন্মেছিলেন হযরত মুস'আব বিন উমাইর রা.।

    তাঁর ইসলামপূর্ব জীবনের প্রতিটি বাঁকে ছিল আভিজাত্যের গাঢ় ছাপ। তিনি হেঁটে গেলে মনে হত রাজপুত্র শিকারে যাচ্ছেন। গতরে থাকত কালের সেরা সুতোয় বোনা সর্বশেষ নকশার সবচেয়ে দামী পোশাক। এক কাপড় দু'বার পরার অভ্যাস ছিল না তাঁর। পায়ে শোভা পেত ইয়েমেনী জুতা জোড়া। তখনকার সময়ে ইয়েমেনী জুতা পরিধান করার প্রবল শখ ছিল প্রত্যেক যুবকের। কিন্তু সামর্থ্যের অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে কেনা অনেকের পক্ষে সম্ভব হত না। শখটাকে চেপে রাখা ছাড়া তাদের আর উপায় থাকত না।

    মুস'আব বিন উমাইর রা. অসাধারণ ফ্লেভারের সুগন্ধি ব্যবহার করতেন। তিনি যে পথ ধরে হেঁটে যেতেন সেই পথের ধারেকাছের মানুষেরা তাঁকে না দেখেই তাঁর ব্যবহৃত আতরের সুঘ্রাণ শুঁকেই বলে দিতে পারতেন, কে যাচ্ছে এখন। এমন অপরিচিত ঘ্রাণ তাঁকে ছাড়া অন্যকেউ গায়ে মাখাত না। সুঘ্রাণ তাঁর গান গাইত।

    তাঁর আড়ম্বরপূর্ণ চালচলন, সৌষ্ঠবপূর্ণ দেহ এবং মেধার তীক্ষ্ণতা তাঁকে সবার থেকে আলাদা করে রেখেছিল। অন্য যুবকরা যখন বড়দের আশপাশে ভিড়ার সাহস পেত না তখন তিনি কুরায়শদের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে উপস্থিত থাকতেন নিয়মিত। বুদ্ধি দিয়ে করতেন ঋদ্ধ।

    আল্লাহ তাঁকে পছন্দ করলেন৷ মূর্তিময় মগজে উদিত করলেন সত্যের সূর্য। হঠাৎ ভাবনায় উঠে এল দারুল আরকামের কথা। দারুল আরকাম প্রসঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে শুনতেন। সেই শোনা থেকেই কৌতূহলের জন্ম।

    একদিন দারুল আরকামে চুপিচুপি গেলেন সেখানে কী হয়, দেখতে। দেখা হল রাসূল ﷺ-এর সাথে। আল্লাহর রাসূল ﷺ তাঁকে দেখে আনন্দিত হয়ে হাত বাড়িয়ে দিলেন। মুস'আব বিন উমাইর রা. নবীর অভাবিত কোমল হাতের ছোঁয়া পেয়ে কোথায় যেন হারিয়ে গেলেন। ডুব দিলেন সুখের দরিয়ায়। জেগে উঠলেন সত্যকে কুড়িয়ে। সেই বৈঠকেই তিনি ইসলাম কবুল করে ধন্য হলেন।

    ইসলাম কবুলের পর সবচেয়ে বেশি আতঙ্কে ছিলেন মা'কে নিয়ে। মা খুন্নাস বিনতে মালিক ছিল অত্যন্ত প্রতাপশালী মহিলা। তাকে সমীহ করে নি, এমন মানুষের সংখ্যা ছিল নিতান্ত অল্প৷ তিনি জানতেন, তাঁর মা কতটা প্রকুপিতা হবে এই সংবাদে। তাই তিনি ইসলাম কবুলের বিষয়টি গোপন রাখার চেষ্টা করলেন।

    মক্কার সেই দিনগুলোতে কোনো কিছু গোপন রাখা ছিল চরম দুঃসাধ্যের ব্যাপার। তাঁর ইসলাম কবুলের সংবাদটিও শেষপর্যন্ত গোপন থাকে নি৷ এক কান, দুই কান থেকে চলে যায় জেদি মা'র কানে। মা তা শুনে রেগেমেগে আগুন। পরম ভালোবাসার ছেলেকে শায়েস্তা করার সিদ্ধান্তও নিয়ে নেয় সে।

    মুস'আব বিন উমাইর রা. ঘরে ফিরতেই তাঁর মা খুব জোরে গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিল। ইসলাম কবুলের জন্য করল গালমন্দ। নতুন ধর্ম এবং মুহাম্মদ ﷺ-কে ছেড়ে বাপদাদার ধর্মে ফিরে আসার জন্য সৃষ্টি করল প্রচণ্ড চাপ। কিছুতেই কিছু হল না। মুস'আব রা. অনড়, অবিচল। সাফ জানিয়ে দিলেন, মেরে টুকরো টুকরো করলেও চিরসত্যকে ছেড়ে মিথ্যাকে গ্রহণ করবেন না।

    খুন্নাস বিনতে মালিকও হাল ছাড়ে নি৷ তার বিশ্বাস, ছেলে ফিরবেই। তবে সেজন্য একটু সময় লাগবে। ছেলেকে মুহাম্মাদ এবং তার দলবল থেকে দূরে রাখলেই ঘোর কেটে যাবে।

    সে তার ছেলেকে ধরে নিয়ে গেল ঘরের এক কোণে। খুঁটির সাথে রশি দিয়ে বেঁধে ফেলল৷ পাশেই তাঁকে নজরদারিতে রাখার জন্য একজন কারারক্ষী নিয়োগ দেওয়া হল৷ তিনি এখন নিজ ঘরে বন্দি।

    কিছুদিন পর জানতে পারলেন, কাফিরদের অত্যাচার থেকে নিস্তার পেতে একদল মুসলিম আবিসিনিয়ায় হিজর‍তে যাচ্ছেন। তিনি ব্যাকুল হয়ে গেলেন সেই দলে যুক্ত হতে। সেই চিন্তা থেকে রশি ছেঁড়ার কাজে মনোযোগী হলেন। কারারক্ষী যখন বাহিরে বের হল সেই ফাঁকে তিনি রশি ছিঁড়ে ঘর থেকে পালালেন। সোজা চলে গেলেন লোহিত সাগরের তীরে। হিজরতকারী দলকেও পেয়ে গেলেন। তাঁদের সাথে মিলে নৌকায় চড়ে লোহিত সাগর পাড়ি দিয়ে ভিড়লেন ইথিওপিয়ান নৌঘাটে। নাজ্জাসীর সান্নিধ্য তাঁদেরকে করল ভারমুক্ত।

    হঠাৎ আবিসিনিয়াতে উড়ো খবর আসল৷ কে জানি বলল, মক্কার পরিবেশ মুসলিমদের অনুকূলে। সেই খবর বিশ্বাস করে মুস'আব বিন উমাইর অন্যদের সাথে মক্কায় ফিরে আসেন। এসে দেখলেন, যা শুনেছিলেন তা ডাহা মিথ্যা। আবার সেই পুরনো বিপদের মুখোমুখি তিনি৷ দুর্ভাগ্যক্রমে মা খুন্নাসের হাতে পড়লেন৷ এবার তাঁর মা আরও বেপরোয়া। সে সিদ্ধান্ত নিল, ছেলে নতুন ধর্ম ত্যাগ না করলে ত্যাজ্যপুত্র বানাবে। ছেলেকে পরিষ্কার জানিয়ে দিল, "যদি তুমি ফিরে না আসো তাহলে আমাদের এক তোলা সম্পত্তি তুমি পাবে না। ঘর থেকে শূন্য হাতে বের হয়ে যেতে হবে।"

    মুস'আব বিন উমাইর রা. মা'র কাছাকাছি এসে আবেশপূর্ণ ভাষায় বললেন, "আপনি শুধু একবার শাহাদাহ বাক্য পাঠ করুন মা।"

    তাঁর মা খুন্নাস বিনতে মালিক তারকার কসম খেয়ে বলল, আমি কখনোই তোমার ধর্ম গ্রহণ করব না।

    মা'র জবাব শুনে মুস'আব বিন উমাইর রা. শূন্য হাতেই বের হয়ে গেলেন। পিছনে রেখে গেলেন অঢেল সম্পদ, চোখধাঁধানো বিলাসিতা, অনন্য আভিজাত্য এবং প্রবল সামাজিক প্রভাব। পারিবারিক সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য তাঁকে সত্য থেকে এক চুল নড়াতে পারে নি। বিত্তবৈভবের নেশায় পরে দ্বীনকে ভুলে যান নি একমুহূর্ত।

    শূন্য পকেটে এক কাপড়ে ঘর থেকে বের হয়ে ইলম অর্জনে মনোযোগী হলেন তিনি।

    বেশ কয়েকবছর বড় জমায়েত থেকে দূরে থাকেন। হঠাৎ একদিন এক সমাবেশে তিনি উপস্থিত। সেখানে আল্লাহর রাসূল ﷺ-ও ছিলেন। তাঁকে দেখে উপস্থিত সাহাবারা দৃষ্টি নামিয়ে ফেললেন। কেউকেউ তো কেঁদেই ফেললেন। এমন মুস'আবকে দেখতে তাঁরা প্রস্তুত ছিলেন না। যে মুস'আব এক কাপড় দু'বার পরিধান করতেন না সেই মুস'আবের গায়ে এখন এক টুকরো কুঁচকানো ছেঁড়া কাপড়। যে পা দুটোয় জড়িয়ে থাকত ইয়েমনী জুতো সেই কদমজোড়া এখন খালি। যে গা তেল-সুগন্ধীর পরশে থাকত সুরভিত সেই গায়ে এখন ধুলোবালি। এ কোন মুস'আব?

    আল্লাহর রাসূল ﷺ বললেন, "আমি মুস'আবকে তাঁর বাবা-মা'র সাথে মক্কায় দেখেছি। তারা তাঁকে উজাড় করা ভালোবাসা দিয়ে মাথায় তুলে রাখত। ধনধান্যে ভরে রাখত প্রতিটি মুহূর্ত। তাঁর মত অভিজাত যুবক কুরায়শে আমি দেখিনি। তারপর সে সত্যকে খুঁজে পেল। আল্লাহর সন্তুষ্টির অর্জনের উদ্দেশ্যে ত্যাগ করল পারিবারিক সহায়সম্পদ। বিলাসিতা ছেড়ে নিজেকে নিয়োজিত করল নবীর সান্নিধ্যে।"

    এই মহান সাহাবী উহুদ যুদ্ধে শহীদ হন। রেখে যান অনুপম শিক্ষা এবং যুগান্তকারী দৃষ্টান্ত।

    দ্বীনের অনুশাসন পালন করতে গিয়ে অগণিত ভাই-বোন বর্তমানে পারিবারিক বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। সবচেয়ে নিকট মানুষদের কাছ থেকে বিরূপ মন্তব্য পেয়ে অনেকেই হতাশ হচ্ছেন। যারা এমন পরিস্থিতির শিকার তাঁদের উচিত খুব বেশি বেশি মুস'আব বিন উমাইর রা.-এর জীবনী পড়া। আরও বিস্তারিতভাবে, আরও ব্যাপকহারে।

    প্রকৃত সত্যকে পেতে হলে সুখের পাহাড় ডিঙিয়ে বিপদসংকুল মহাসাগরে ঝাঁপ দিতে হয়। যাঁরা সত্যকে পেয়েছেন তাঁরা এভাবেই পেয়েছেন।


    দ্বীন যখন সবচেয়ে আপন।

    নজর বিন হারিস। মুশরিক যোদ্ধা। বদর যুদ্ধে তার দায়িত্ব ছিল পতাকা বহন করা। একসময় সে নিহত হয়। পতাকা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পরবর্তীতে নিশানা বহনের দায়িত্ব পড়ে আবু আজীজ বিন উমায়েরের কাঁধে। সে ছিল বিশিষ্ট সাহাবী মুস'আব বিন উমায়ের ভাই।

    যুদ্ধ শেষ হল। বিরোধী শক্তি লজ্জাজনক হার মেনে নিল। আবু আজীজকে করা হল গ্রেফতার। যুদ্ধবন্দি করে নিয়ে আসা হল মদীনায়। আল্লাহর রাসূল ﷺ তাকে আনসার সাহাবী আবু ইয়াসিরের জিম্মায় দিয়ে দেন।

    ভাই মুস'আবকে দেখে সে একটু আশ্বস্ত হয়েছিল এই ভেবে, অন্তত ভাই তার মুক্তির জন্য সুপারিশ করবে। বুকভরা আশা নিয়ে আবু আজীজ ভাইকে বলল, "ভাই মুস'আব, আমার মুক্তির ব্যবস্থা করো।"

    ভাইয়ের আবদার শুনে মুস'আব রা. আবু ইয়াসিরকে ডেকে বললেন, “একে মুক্তি দেবেন না। তার মা যথেষ্ট ধনাঢ্য মহিলা। পুত্রের মুক্তির জন্য আপনাকে সে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ দেবে।"

    ভাইয়ের এমন অদ্ভুত সুপারিশ শুনে আবু আজীজ বলল, “হে ভাই, আমার জন্য এ কেমন নিষ্ঠুর তোমার সুপারিশ?”

    হযরত মুস'আব বিন উমায়ের মাথা ঠান্ডা রেখে বললেন, “শোনো, সে (আবু ইয়াসির) আমার ভাই, তুমি নও।”

    [সংগৃহীত]


  • #2
    প্রকৃত সত্যকে পেতে হলে সুখের পাহাড় ডিঙিয়ে বিপদসংকুল মহাসাগরে ঝাঁপ দিতে হয়। যাঁরা সত্যকে পেয়েছেন তাঁরা এভাবেই পেয়েছেন।
    কিয়ামত অবধি মুসলিম যুবকদের আইডল হয়ে থাকবেন প্রিয় সাহাবী মুসআব ইবনে উমাইর রাযিয়াল্লাহু আনহু। দ্বীনের পথে কষ্ট-ক্লেশ সহ্য করতে অনুপ্রেরণা যোগাবে ইনশাআল্লাহ।
    জাযাকাল্লাহ ভাই আবদুল্লাহ গাজী

    ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

    Comment

    Working...
    X