আগের যুগের পীর-আওলিয়া, সূফী-সাধক, ইসলাম প্রচারকদের নিকট তরবারি ছিল দায়েমি সুন্নত। আর ইদাদ, সেতো তারা তালিবুল ইলম থাকাবস্থায় গ্রহণ করতো। যাদুঘরে আগেকার দিনের যুদ্ধে ব্যাবহৃত তরবারিগুলো দেখে যতটুকু মনে হয়েছে, যথাযত প্রশিক্ষণ আর যথেষ্ট শক্তিশালী না হলে আমার মত সাধারণ লোকের পক্ষে যুদ্ধে ৫-৬ কেজি ওজনের তরবারি চালানো কখনোই সম্ভব নই।সর্বশেষ, পলাশী যুদ্ধের পরবর্তী কয়েক বছরের মধ্যে এদেশের পীর-ফকিররা ইংরেজদের বিরুদ্ধে ব্যাপক সশস্ত্র গণ-আন্দোলন গড়ে তুলে যা ইতিহাসে ফকির বিদ্রোহ নামে পরিচিত। সেসময় পর্যন্ত এদেশের সূফী সাধকরা সবসময় নিজেদের সাথে তরবারি, খঞ্জর, বর্শা ইত্যাদি হাতিয়ার বহন করে চলতো। আঠারো শতকের মাঝামাঝি সময় হতে উনিশ শতকের শুরুরদিক পর্যন্ত এ আন্দোলন চলমান ছিল। যদিও জাতীয় পাঠ্যপুস্কক ও পাঠ্যসূচি বোর্ডের প্রণীত বইয়ে এ আন্দোলনকে সূফীদের ভ্রমনের উপর ইংরেজদের কর-আরোপের প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখানো হয়েছে, কিন্তু তাদের এ আন্দোলনের উদ্দেশ্য যে ঈমানের তাগিদে জিহাদের ফরজিয়্যাত পালন করা ছিল, তা এ ধারাবাহিকের সামনের পর্বগুলোতে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। [৩,৪]
তবে, আজ আমরা বাংলার ইব্রাহিম ইবনু আদহাম সম্পর্কে আলোচনা করব । তিনি আর কেউ নন, বগুড়ার মহাস্থানগড়ে শায়িত বাংলার প্রখ্যাত সূফী সাধক এবং বীর মুজাহিদ শাহ সুলতান মুহাম্মদ বলখী রহ.।
মধ্য এশিয়ার বলখের রাজপুত্র ছিলেন শাহ সুলতান মুহাম্মদ। পিতা শাহ আসগর আলী ছিলেন বলখের সুলতান। পিতার মৃত্যুর পর তিনিও সুলতান হন। কিন্তু, দুনিয়াবি জীবন ত্যাগ করে আখিরাতকে প্রাধান্য দিয়ে, দ্বীনের প্রকৃত স্বাদ অনুভব করতে শ্বাসন ক্ষমতা ত্যাগ করে দামেশকে গিয়ে শেখ তৌফিক নামক এক দরবেশের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। দীর্ঘদিন সেখানে অবস্থান করে তার কাছ থেকে দীক্ষিত হন।পরে, পীরের নির্দেশে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে বাংলা অভিমুখে যাত্রা করেন।
কোন কোন মতে তিনি বখতিয়ার খলজির বাংলা জয়ের বহু পূর্বে এগারশ শতাব্দীর মাঝামাঝিতে বাংলায় আগমন করেছিলেন।[ ১,৩,৬] আবার, কোন কোন মতে তিনি বখতিয়ার খলজির পরে চৌদ্দশ শতাব্দীর শুরুর দিকে বাংলায় আগমন করেন।মৎস্য আকৃতির নৌকায় করে এসেছিলেন বলে তাকে মহীসওয়ারও বলা হয়।[২]
তিনি সমুদ্রপথে এবং গঙ্গা নদীর মোহনায় অবস্থিত সন্দ্বীপে পৌঁছেন। সেখান থেকে তিনি হরিরামনগরে আসেন। জায়গাটি সম্ভবত সমুদ্র উপকূলে অবস্থিত ছিল এবং কালী উপাসক রাজা বলরাম তখন স্থানটি শাসন করছিলেন। সম্ভবত, বর্তমান মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর তখনকার হরিরামনগর ছিল। হিন্দু রাজা বলরাম তার রাজ্যে একজন মুসলিম মুবাল্লিগের উপস্থিতি বরদাস্ত করলেন না। রাজা শাহ সুলতানের বিরুদ্ধে এক বিশাল সেনাবাহিনী প্রেরণ করে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। শাহ সুলতানের সঙ্গী-সাথীরাও আত্মরক্ষার্থে তরবারি দিয়ে রাজার বাহিনীকে প্রতিহত করতে লাগলেন। এ যুদ্ধে রাজা বলরাম শাহ সুলতানের ক্ষুদ্র বাহিনীর হাতে পরাজয় বরন করেন এবং রাজা নিজে নিহত হন। যুদ্ধ শেষে তার মন্ত্রী ইসলাম ধর্ম গ্রহন করলে শাহ সুলতান এই নওমুসলিমকেই সিংহাসনে বসান।
এরপর, তিনি রাজা পরশুরামের রাজ্য পুণ্ড্রবর্ধনে (বর্তমানে, বগুড়ার মহাস্থানগড়) আসেন। রাজা পরশুরামের বোন শিলাদেবী ছিলো কালো যাদুবিদ্যায় পারদর্শী। কথিত আছে যে, তিনি তার কালো যাদুর সাহায্যে তার ভাই রাজা পরশুরামকে রাজ্য পরিচালনা করতে সাহায্য করতেন। কিন্তু, তিনি শাহ সুলতানের উপর অনেক তন্ত্র-মন্ত্র প্রয়োগ করেও ব্যর্থ হন। বোনের ব্যর্থতায় রাজা পরশুরাম শাহ সুলতানের উপর একদল সেনাবাহিনী নিয়ে করে সশস্ত্র আক্রমণ করেন। শাহ সুলতানের বাহিনীও আত্মরক্ষার্থে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েন। এ যুদ্ধে রাজা পরশুরাম নিহত হলে তার মন্ত্রী যুদ্ধ চালিয়ে যান।কিন্তু, তিনিও রাজার পরিণতি বরণ করেন। শিলাদেবী কালী মন্দিরে আশ্রয় নেন। পরে, যুদ্ধের পরাজয়ের গ্লানি সইতে না পেরে করতোয়া নদীতে ঝাপ দিয়ে আত্মাহত্যা করেন। বর্তমানে, শিলাদেবীর আত্মহত্যা করার জয়গাটি এবং আশেপাশের অঞ্চলটি শিলাদেবীর ঘাট নামে পরিচিত।
রাজকুমারী রত্নাদেবী মুসলমানদের হাতে বন্ধী হন। পরে, মুসলমানদের কথা এবং আচরণে মুগ্ধ হয়ে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন। নিহত রাজা পরশুরামের সেনাপতি সুরখাবও ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন। পরে, শাহ সুলতানের তত্ত্বাবধানে সেনাপতি সুরখাবের সাথে রাজকুমারী রত্নাদেবীর বিয়ে হয়।
এরপর, বাকী জীবনে তিনি মহাস্থানগড়ে মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মাণ করে আশেপাশের অঞ্চলে ইসলাম প্রচার করতে থাকেন। [১,২,৩,৬,৭]
শাহ সুলতান কীভাবে এবং কখন মারা গিয়েছিল তা অজানা। ১৬৮৫ সালে মোঘল সম্রাট*আওরঙ্গজেবের শ্বাসনকালে শাহ সুলতানের দরগা লাখেরাজ জমি ছিল এবং সৈয়দ মুহাম্মদ তাহির, সৈয়দ আবদুর রহমান এবং সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাকে সনদ জারি করা হয়েছিল। বালখীর মাজারে গেট প্রবেশের নাম বুড়ি কা দরজা যা মুঘলরা তৈরি করে। ১৭১৯ সালে সম্রাট ফররুখসিয়রের রাজত্বকালে মাজারের নিকটে একটি বৃহৎ একক গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন যা আজও বিদ্যমান।[৬]
তত্ত্বসূত্র:
১)বাংলাদেশে ইসলাম। ড. এ কে এম নাজির আহমেদ। পৃ:২৩-২৪
২) বগুড়ায় ইসলাম। খন্দকার আব্দর রশীদ। পৃ:৮০-৮৩
৩) এ হিস্ট্রি অব সুফিজম ইন বেঙ্গল। ড. এনামুল হক।পৃ: ২০৮
৪)বাঙলার ফকীর বিদ্রোহ। চৌধুরী শামসুর রহমান।
৫)পলাশী যুদ্ধোত্তর আযাদী সংগ্রামের পাদপীঠ। হায়দার আলী চৌধুরী।
৬)উইকিপিডিয়া
৭)বাংলাপিডিয়া
তবে, আজ আমরা বাংলার ইব্রাহিম ইবনু আদহাম সম্পর্কে আলোচনা করব । তিনি আর কেউ নন, বগুড়ার মহাস্থানগড়ে শায়িত বাংলার প্রখ্যাত সূফী সাধক এবং বীর মুজাহিদ শাহ সুলতান মুহাম্মদ বলখী রহ.।
মধ্য এশিয়ার বলখের রাজপুত্র ছিলেন শাহ সুলতান মুহাম্মদ। পিতা শাহ আসগর আলী ছিলেন বলখের সুলতান। পিতার মৃত্যুর পর তিনিও সুলতান হন। কিন্তু, দুনিয়াবি জীবন ত্যাগ করে আখিরাতকে প্রাধান্য দিয়ে, দ্বীনের প্রকৃত স্বাদ অনুভব করতে শ্বাসন ক্ষমতা ত্যাগ করে দামেশকে গিয়ে শেখ তৌফিক নামক এক দরবেশের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। দীর্ঘদিন সেখানে অবস্থান করে তার কাছ থেকে দীক্ষিত হন।পরে, পীরের নির্দেশে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে বাংলা অভিমুখে যাত্রা করেন।
কোন কোন মতে তিনি বখতিয়ার খলজির বাংলা জয়ের বহু পূর্বে এগারশ শতাব্দীর মাঝামাঝিতে বাংলায় আগমন করেছিলেন।[ ১,৩,৬] আবার, কোন কোন মতে তিনি বখতিয়ার খলজির পরে চৌদ্দশ শতাব্দীর শুরুর দিকে বাংলায় আগমন করেন।মৎস্য আকৃতির নৌকায় করে এসেছিলেন বলে তাকে মহীসওয়ারও বলা হয়।[২]
তিনি সমুদ্রপথে এবং গঙ্গা নদীর মোহনায় অবস্থিত সন্দ্বীপে পৌঁছেন। সেখান থেকে তিনি হরিরামনগরে আসেন। জায়গাটি সম্ভবত সমুদ্র উপকূলে অবস্থিত ছিল এবং কালী উপাসক রাজা বলরাম তখন স্থানটি শাসন করছিলেন। সম্ভবত, বর্তমান মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর তখনকার হরিরামনগর ছিল। হিন্দু রাজা বলরাম তার রাজ্যে একজন মুসলিম মুবাল্লিগের উপস্থিতি বরদাস্ত করলেন না। রাজা শাহ সুলতানের বিরুদ্ধে এক বিশাল সেনাবাহিনী প্রেরণ করে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। শাহ সুলতানের সঙ্গী-সাথীরাও আত্মরক্ষার্থে তরবারি দিয়ে রাজার বাহিনীকে প্রতিহত করতে লাগলেন। এ যুদ্ধে রাজা বলরাম শাহ সুলতানের ক্ষুদ্র বাহিনীর হাতে পরাজয় বরন করেন এবং রাজা নিজে নিহত হন। যুদ্ধ শেষে তার মন্ত্রী ইসলাম ধর্ম গ্রহন করলে শাহ সুলতান এই নওমুসলিমকেই সিংহাসনে বসান।
এরপর, তিনি রাজা পরশুরামের রাজ্য পুণ্ড্রবর্ধনে (বর্তমানে, বগুড়ার মহাস্থানগড়) আসেন। রাজা পরশুরামের বোন শিলাদেবী ছিলো কালো যাদুবিদ্যায় পারদর্শী। কথিত আছে যে, তিনি তার কালো যাদুর সাহায্যে তার ভাই রাজা পরশুরামকে রাজ্য পরিচালনা করতে সাহায্য করতেন। কিন্তু, তিনি শাহ সুলতানের উপর অনেক তন্ত্র-মন্ত্র প্রয়োগ করেও ব্যর্থ হন। বোনের ব্যর্থতায় রাজা পরশুরাম শাহ সুলতানের উপর একদল সেনাবাহিনী নিয়ে করে সশস্ত্র আক্রমণ করেন। শাহ সুলতানের বাহিনীও আত্মরক্ষার্থে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েন। এ যুদ্ধে রাজা পরশুরাম নিহত হলে তার মন্ত্রী যুদ্ধ চালিয়ে যান।কিন্তু, তিনিও রাজার পরিণতি বরণ করেন। শিলাদেবী কালী মন্দিরে আশ্রয় নেন। পরে, যুদ্ধের পরাজয়ের গ্লানি সইতে না পেরে করতোয়া নদীতে ঝাপ দিয়ে আত্মাহত্যা করেন। বর্তমানে, শিলাদেবীর আত্মহত্যা করার জয়গাটি এবং আশেপাশের অঞ্চলটি শিলাদেবীর ঘাট নামে পরিচিত।
রাজকুমারী রত্নাদেবী মুসলমানদের হাতে বন্ধী হন। পরে, মুসলমানদের কথা এবং আচরণে মুগ্ধ হয়ে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন। নিহত রাজা পরশুরামের সেনাপতি সুরখাবও ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন। পরে, শাহ সুলতানের তত্ত্বাবধানে সেনাপতি সুরখাবের সাথে রাজকুমারী রত্নাদেবীর বিয়ে হয়।
এরপর, বাকী জীবনে তিনি মহাস্থানগড়ে মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মাণ করে আশেপাশের অঞ্চলে ইসলাম প্রচার করতে থাকেন। [১,২,৩,৬,৭]
শাহ সুলতান কীভাবে এবং কখন মারা গিয়েছিল তা অজানা। ১৬৮৫ সালে মোঘল সম্রাট*আওরঙ্গজেবের শ্বাসনকালে শাহ সুলতানের দরগা লাখেরাজ জমি ছিল এবং সৈয়দ মুহাম্মদ তাহির, সৈয়দ আবদুর রহমান এবং সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাকে সনদ জারি করা হয়েছিল। বালখীর মাজারে গেট প্রবেশের নাম বুড়ি কা দরজা যা মুঘলরা তৈরি করে। ১৭১৯ সালে সম্রাট ফররুখসিয়রের রাজত্বকালে মাজারের নিকটে একটি বৃহৎ একক গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন যা আজও বিদ্যমান।[৬]
তত্ত্বসূত্র:
১)বাংলাদেশে ইসলাম। ড. এ কে এম নাজির আহমেদ। পৃ:২৩-২৪
২) বগুড়ায় ইসলাম। খন্দকার আব্দর রশীদ। পৃ:৮০-৮৩
৩) এ হিস্ট্রি অব সুফিজম ইন বেঙ্গল। ড. এনামুল হক।পৃ: ২০৮
৪)বাঙলার ফকীর বিদ্রোহ। চৌধুরী শামসুর রহমান।
৫)পলাশী যুদ্ধোত্তর আযাদী সংগ্রামের পাদপীঠ। হায়দার আলী চৌধুরী।
৬)উইকিপিডিয়া
৭)বাংলাপিডিয়া
Comment