ঐতিহাসিকগণ মধ্যযুগে যেসকল ইসলাম প্রচারক পীর, সূফী-সাধক বাংলায় আগমন করেন নীতির ভিত্তিতে তাদেরকে দুভাগে ভাগ করেন। এক. আবেদ শ্রেণী অপরটি মুমিন শ্রেণী।
আবেদ শ্রেণির প্রচারকরা ছিলেন নীরব সাধক এবং আধ্যাতিক(আধ্যাত্মিক) ক্ষমতা সম্পন্ন আলেম।তারা অহিংস নীতির মাধ্যমে ইসলাম ধর্মের সৈন্দর্য্যের(সৌন্দর্য্যের) প্রতি লোকদের আকৃষ্ট করতেন।
কিন্তু, মুমিন শ্রেণির প্রচারকরা ছিলেন তাদের বিপরীত।তাঁরা প্রত্যেকে অভিজ্ঞ আলেম হয়েও ছিলেন অস্ত্রধারী যোদ্ধা। তারা প্রয়োজনে অমুসলিম কিংবা প্রতিক্রিয়াশীল শাসকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এদেশে ইসলামের বুনিয়াদ প্রতিষ্ঠা করতে কুন্ঠবোধ(কুণ্ঠাবোধ) করেন নি।আমাদের দেশে এ শ্রেণির প্রচারকগণ 'গাজী' হিসেবে অমর হয়ে আছেন।[১,২]
তেমনি একজন মধ্যযুগীয় ইসলাম প্রচারক হলেন শাহ ইসমাইল গাজী কাঁটাদুয়ারী।সতেরশো শতাব্দীতে ফারসি ভাষায় লিখিত "রিসালাতুশ শুহাদা" নামক পান্ডুলিপি(পাণ্ডুলিপি) হতে তার জীবনী জানা যায়। গ্রন্থখানি জি. এইচ. ডামান্ট্ কর্তৃক ১৮৭৪ সালে ইংরেজী অর্থসহ 'এশিয়াটিক সোসাইটি অব বেঙ্গল' জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
'রিসালাতুশ শুহাদা'য় বর্ণিত বিবরণ হতে জানা যায় যে, ইসমাইল গাজী মক্কার কুরাইশ বংশীয় এক আরব সন্তান। ছোটবেলা হতে তিনি অত্যন্ত পরহেজগার এবং ধর্মপরায়ণ ছিলেন।পবিত্র কোরআন অধ্যয়ন করে ছোটবেলাতেই তিনি জিহাদ এবং শাহাদাতের প্রতি অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।কথিত আছে যে, শাহাদাতের খোজেই তিনি পারস্য, ভারত হয়ে বাংলায় এসে উপস্থিত হউন।
তৎকালীন বাংলার সুলতান ছিলেন রুকনুদ্দীন রকবক শাহ।তখন প্রতিবছর বাংলার রাজধানী বন্যায় প্লাবিত হতো। সুলতান রুকনুদ্দীন বরবক শাহ বন্যা নিয়ন্ত্রণের উপায় বের করার জন্য তার সব প্রকৌশলী ও কারিগরকে নিয়োগ করেছিলেন। কিন্তু তার সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। শাহ ইসমাইল গাজী সুলতানকে রাজধানীর পার্শ্ববর্তী চুটিয়া-পুটিয়া বিলের উপর একটি সেতু নির্মাণের পরামর্শ দেন এবং শহরটিকে জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা করেন। এভাবে তিনি সুলতানের অনুগ্রহ লাভ করেন এবং সুলতান তাকে বিভিন্ন সীমান্তে যুদ্ধ পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োগ করেন।
শাহ ইসমাইল গাজীকে প্রথমে বাংলার দক্ষিণ সীমান্তে উড়িষ্যার রাজা গজপতির আগ্রাসী পরিকল্পনা মোকাবিলা করার জন্য নিযুক্ত করা হয়। তিনি গজপতিকে পরাজিত করে তার কাছ থেকে সীমান্ত-ফাঁড়ি মান্দারণ দখল করে নেন। সফল এই সেনানায়ককে এরপর কামরূপের রাজার বিরুদ্ধে অভিযানে পাঠানো হয়। কামরুপরাজ(কামরূপরাজ) যুদ্ধে পরাজিত হয়ে সুলতানকে করদানে বাধ্য হন।
শাহ ইসমাইল গাজীর রংপুর জেলার কাঁটাদুয়ারে খানকাহ এবং ঘাঁটি ছিল। এসময় গাজীর গৌরবে ঈর্ষান্বিত হয়ে ঘোড়াঘাটের সীমান্ত দুর্গের অধিনায়ক হিন্দু ভান্দুসি রায় সুলতানের নিকট অভিযোগ করেন যে, শাহ ইসমাইল কামরুপ(কামরূপ) রাজের সাথে চক্রান্ত করে সুলতানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন।এতে, সুলতানের আদেশে ৮৭৮ হিজরির ১৪ ই শাবান রোজ শুক্রবার তাকে শিরশ্ছেদ করা হয়।পরে, সুলতান যখন ভান্দুসী রায়ের চাতুরীর কথা জানতে পারেন তখন ক্ষোভের সীমা রইল না।
ইসমাইল গাজীর কবর নিয়ে ঐতিহাসিকদের মাঝে মতভেদ রয়েছে। বর্তমানে রংপুরের ইসমাইল গাজীর মাজারটি পাকিস্থান(পাকিস্তান) আমলের প্রথম দিকেও জঙ্গলে ঢাকা ছিল, স্থানীয় বাসিন্দারা জঙ্গল পরিস্কারকালে এই সমাধি দুটি দৃষ্টিগোচর হয় এবং দক্ষিণ দিকের সমাধিটি শাহ ইসমাইল গাজীর বলে অনুমান করা হয়।আবার, কোন কোন মতে সুলতানের নির্দেশে তার মস্তক কাঁটাদুয়ারে আর দেহ মান্দারনে সমাহিত বলে বলা হয়ে থাকে।
তবে, ইসমাঈল গাজী যে ঐতিহাসিক ব্যাক্তি এ বিষয়ে মতভেদ নাই।মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের কবি শেখ ফয়জুল্লাহ তাকে 'কাঁটাদুয়ারের পীর' বলে উল্লেখ করেছেন।
তথ্যসূত্র :-
১) বাংলাদেশের সূফী সাধক, ড. গোলাম সাকলায়েন।
২) পীর চিহিল গাজী, মেহরাব আলী।
৩) বঙ্গে সূফী প্রভাব। ড. এনামুল হক।
৪)উইকিপিডিয়া।
আবেদ শ্রেণির প্রচারকরা ছিলেন নীরব সাধক এবং আধ্যাতিক(আধ্যাত্মিক) ক্ষমতা সম্পন্ন আলেম।তারা অহিংস নীতির মাধ্যমে ইসলাম ধর্মের সৈন্দর্য্যের(সৌন্দর্য্যের) প্রতি লোকদের আকৃষ্ট করতেন।
কিন্তু, মুমিন শ্রেণির প্রচারকরা ছিলেন তাদের বিপরীত।তাঁরা প্রত্যেকে অভিজ্ঞ আলেম হয়েও ছিলেন অস্ত্রধারী যোদ্ধা। তারা প্রয়োজনে অমুসলিম কিংবা প্রতিক্রিয়াশীল শাসকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এদেশে ইসলামের বুনিয়াদ প্রতিষ্ঠা করতে কুন্ঠবোধ(কুণ্ঠাবোধ) করেন নি।আমাদের দেশে এ শ্রেণির প্রচারকগণ 'গাজী' হিসেবে অমর হয়ে আছেন।[১,২]
তেমনি একজন মধ্যযুগীয় ইসলাম প্রচারক হলেন শাহ ইসমাইল গাজী কাঁটাদুয়ারী।সতেরশো শতাব্দীতে ফারসি ভাষায় লিখিত "রিসালাতুশ শুহাদা" নামক পান্ডুলিপি(পাণ্ডুলিপি) হতে তার জীবনী জানা যায়। গ্রন্থখানি জি. এইচ. ডামান্ট্ কর্তৃক ১৮৭৪ সালে ইংরেজী অর্থসহ 'এশিয়াটিক সোসাইটি অব বেঙ্গল' জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
'রিসালাতুশ শুহাদা'য় বর্ণিত বিবরণ হতে জানা যায় যে, ইসমাইল গাজী মক্কার কুরাইশ বংশীয় এক আরব সন্তান। ছোটবেলা হতে তিনি অত্যন্ত পরহেজগার এবং ধর্মপরায়ণ ছিলেন।পবিত্র কোরআন অধ্যয়ন করে ছোটবেলাতেই তিনি জিহাদ এবং শাহাদাতের প্রতি অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।কথিত আছে যে, শাহাদাতের খোজেই তিনি পারস্য, ভারত হয়ে বাংলায় এসে উপস্থিত হউন।
তৎকালীন বাংলার সুলতান ছিলেন রুকনুদ্দীন রকবক শাহ।তখন প্রতিবছর বাংলার রাজধানী বন্যায় প্লাবিত হতো। সুলতান রুকনুদ্দীন বরবক শাহ বন্যা নিয়ন্ত্রণের উপায় বের করার জন্য তার সব প্রকৌশলী ও কারিগরকে নিয়োগ করেছিলেন। কিন্তু তার সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। শাহ ইসমাইল গাজী সুলতানকে রাজধানীর পার্শ্ববর্তী চুটিয়া-পুটিয়া বিলের উপর একটি সেতু নির্মাণের পরামর্শ দেন এবং শহরটিকে জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা করেন। এভাবে তিনি সুলতানের অনুগ্রহ লাভ করেন এবং সুলতান তাকে বিভিন্ন সীমান্তে যুদ্ধ পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োগ করেন।
শাহ ইসমাইল গাজীকে প্রথমে বাংলার দক্ষিণ সীমান্তে উড়িষ্যার রাজা গজপতির আগ্রাসী পরিকল্পনা মোকাবিলা করার জন্য নিযুক্ত করা হয়। তিনি গজপতিকে পরাজিত করে তার কাছ থেকে সীমান্ত-ফাঁড়ি মান্দারণ দখল করে নেন। সফল এই সেনানায়ককে এরপর কামরূপের রাজার বিরুদ্ধে অভিযানে পাঠানো হয়। কামরুপরাজ(কামরূপরাজ) যুদ্ধে পরাজিত হয়ে সুলতানকে করদানে বাধ্য হন।
শাহ ইসমাইল গাজীর রংপুর জেলার কাঁটাদুয়ারে খানকাহ এবং ঘাঁটি ছিল। এসময় গাজীর গৌরবে ঈর্ষান্বিত হয়ে ঘোড়াঘাটের সীমান্ত দুর্গের অধিনায়ক হিন্দু ভান্দুসি রায় সুলতানের নিকট অভিযোগ করেন যে, শাহ ইসমাইল কামরুপ(কামরূপ) রাজের সাথে চক্রান্ত করে সুলতানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন।এতে, সুলতানের আদেশে ৮৭৮ হিজরির ১৪ ই শাবান রোজ শুক্রবার তাকে শিরশ্ছেদ করা হয়।পরে, সুলতান যখন ভান্দুসী রায়ের চাতুরীর কথা জানতে পারেন তখন ক্ষোভের সীমা রইল না।
ইসমাইল গাজীর কবর নিয়ে ঐতিহাসিকদের মাঝে মতভেদ রয়েছে। বর্তমানে রংপুরের ইসমাইল গাজীর মাজারটি পাকিস্থান(পাকিস্তান) আমলের প্রথম দিকেও জঙ্গলে ঢাকা ছিল, স্থানীয় বাসিন্দারা জঙ্গল পরিস্কারকালে এই সমাধি দুটি দৃষ্টিগোচর হয় এবং দক্ষিণ দিকের সমাধিটি শাহ ইসমাইল গাজীর বলে অনুমান করা হয়।আবার, কোন কোন মতে সুলতানের নির্দেশে তার মস্তক কাঁটাদুয়ারে আর দেহ মান্দারনে সমাহিত বলে বলা হয়ে থাকে।
তবে, ইসমাঈল গাজী যে ঐতিহাসিক ব্যাক্তি এ বিষয়ে মতভেদ নাই।মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের কবি শেখ ফয়জুল্লাহ তাকে 'কাঁটাদুয়ারের পীর' বলে উল্লেখ করেছেন।
তথ্যসূত্র :-
১) বাংলাদেশের সূফী সাধক, ড. গোলাম সাকলায়েন।
২) পীর চিহিল গাজী, মেহরাব আলী।
৩) বঙ্গে সূফী প্রভাব। ড. এনামুল হক।
৪)উইকিপিডিয়া।
Comment